19-11-2020, 09:08 PM
৫৩ পর্ব
এগুলা যেখান থেকে এনেছিস আমাকে সেখানে নিয়ে চল। বাকি কাজ ওখানে গিয়ে বললো।তারপর দুজনে সুব্রতর জীপে উঠে বসলো।সুব্রত একজনকে দায়িত্ব দিয়ে গেল গাড়ি দুটাতে যা মাল আছে পুড়িয়ে ফেলতে।আর এই কথা যেন বড় বাবুর কানে না যায় এটাও সাবধাণ করে দিলো।যথা সময়ে সুব্রতর জীপ থামলো রায় টেক্সটাইলের পিছনের গেটে।সুব্রতকে দুজনে ভিতরে নিয়ে গিয়ে একটা তালা বদ্ধ ঘর দেখালো।তালা খোল মেজাজী কন্ঠে বললো সুব্রত।স্যার আমাদের কাছে চাবী নেই।সুব্রতও জানে এরা চুনোপুটি তাই বেশি না ঘাটিয়ে বললো ভেঙ্গে ফেল।দুজনে একবার সুব্রতর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো এটা স্যারের পার্সোনাল অপারেশন তাই আর কোন কথা না বলে কাজে লেগে গেল।কিছুক্ষণ পর তালা ভাঙ্গা শেষ হলে ভিতরে প্রবেশ করে সুব্রতর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।এ তো ড্রাগের সাম্রাজ্য!!সুব্রতকে চুপ থাকতে দেখে কনস্টেবলটা বললো স্যার এখন কি করবো? সুব্রত কিছুক্ষণ ভেবে বললো এদের সাথে করে সব গাড়িতে লোড করো।সুব্রতর কথা মতো সব গাড়িতে লোড করা হলো। তারপর আবার গাড়িতে উঠে গাড়ি ছোটালো শহর থেকে দূরে নির্জন বনের দিকে।ওদিকে যেতে দেখে হেলপার আর ডাইভারটা ভয়ে ভয়ে বললো স্যার এদিকে কোথায় যাচ্ছেন। চুপচাপ বসে থাক।আমার কথা মত চললে ভয় নেই।জীপ গিয়ে থামলো একটা নির্জন জায়গায় সুব্রতর নির্দেশে ওরা ওসব ড্রাগ সব নিচে নামালো।তারপর পকেট থেকে ম্যাচ বের করে আগুন জালিয়ে দিলো।সুব্রতর কার্যকলাপ দেখে সবাই অবাক। কোটি কোটি টাকার মাল অন্য অফিসার হলে এগুলো নিয়ে অনেক কামাতো।স্যার আমরা কি করবো?হেলপার আর ড্রাইভারটা বললো।যা ভাগ এখান থেকে।আর এই ঘটনাটা হজম করে ফেল।কোন ভাবে যদি এটা ফ্লাস হয়,তাহলে বুঝতেই পারছিস আমি কিন্তু অফিসের বাইরেও কাজ করতে পছন্দ করি।যা এখন ভাগ!! সুব্রত কথা শুনেও দুজন দাঁড়িয়ে রইলো।কিরে কি হলো??ভাগ সুব্রত বললো!দুজন ভয়ে ভয়ে বললো না স্যার আপনি পিছন থেকে ঠুকে দিবেন!সুব্রত ক্রু হেসে বললো ভয় নেই,আমি কথা দিলে কথা রাখি।এখন যা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যা। সুব্রত বলা মাএ দুজন ছুটে পালালো। সব কাজ মেটার পর সুব্রতর মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ,চালান কপিতে অমিত স্যারের সই কিভাবে এলো!?
সিধুর মুখ থেকে কিছুই বের করা যায়নি,অঞ্জলী খুবই বিরক্ত।থাক ওভাবেই শালা কাল আবার দেখবো।দু দিন পেটে কিছু না পরলে কাল ঠিকই সব বলে দিবে।আগে যে রুমটাতে ঠাকুমা থাকতো সেখানেই রেখেছে সিধুকে,এটাই সব থেকে নিরাপদ।তারপর বিরক্তি নিয়েই শুয়ে পরলো অঞ্জলী।রাত আনুমানিক দুইটা কি আড়াইটে হবে,একটা শব্দে অঞ্জলীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। মনের ভিতর কু ডাকলো অঞ্জলীর,তড়িঘড়ি করে উঠে দৌড়ে গেল সিধু যে রুমে আছে সেদিকে।রুমের কাছে যেয়ে দেখলো রুম তালা বদ্ধই আছে,কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেল অঞ্জলী।সাথে সাথে ছুটে গেল ভাঙ্গা জানালার দিকে,তারপর বাইরে দিকে তাকিয়ে দেখতেই রাস্তার রোড লাইটের আলোয় দেখতে পেল কালো কোর্টে ঢাকা একজন ছুটে চলেছে।সব ফেলে দ্রুত নিচে নেমে এলো অঞ্জলী গেটে এসে দেখলো রামলাল বসে আছে। অঞ্জলী কে দেখে বললো কে? অঞ্জলী বললো আমি গেট খোলো তাড়াতাড়ি রামলাল তাড়াতাড়ি গেট খুললো অঞ্জলী ছুটে রাস্তায় যেয়ে এদিক ওদিক দেখেও কোথাও কিছু দেখতে পেলনা। হতাশ হয়ে অঞ্জলী ফিরে এলো।অঞ্জলীকে ফিরে আসতে দেখে রামলাল বললো কি হয়েছে মা জননী?অঞ্জলীর তখন কথা বলার মত পরিস্থি নেই।কারণ সিধুর ঘরে ঢুকে অঞ্জলী যেটা দেখেছে এমনটা ঘটবে সে কল্পনাও করেনি। সিধুর শরীরটা চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে,আর মেঝেটা রক্তে ভেষে যাচ্ছে। তারপর অঞ্জলীর চোখ যায় জানালার কাঁচ ভাঙ্গার দিকে।সেখান থেকেই দেখলো কেউ পালিয়ে যাচ্ছে,অর্থাৎ ওটাই খুনি।রামলালের কথা শুনেও চুপ করে রইলো। রামলাল আবার জিজ্ঞেস করলো।অঞ্জলী নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো কিছুনা,আচ্ছা একটু আগে কি কেউ এসেছিলো?হা মা জননী মনি শংকর এসেছিলো,আমি বললাম এতো রাতে!!ও বললো তোমার সাথে বিশেষ দরকার তুমিই নাকি তাকে ডেকে পাঁঠিয়েছো। রামলালের কথা শুনে অঞ্জলী আরো অবাক হলো! তুমি ঠিক ভাবে দেখেছো?অঞ্জলী প্রশ্ন করলো।তুমি তো জানো মা আমি রাতে এখন আর তেমন দেখতে পাইনা। এই একটু আগেই তো তোমার আসা দেখে জানতে চাইলাম কে? রামলালের কথা শুনে অঞ্জলী বুঝলো রামলালকে দোষ দিয়ে লাভ নেই বয়স হয়েছে,চোখে কম দেখে। অঞ্জলী কে চুপ দেখে রামলাল বললো কিছু কি খারাপ হয়েছে মা?না না সব ঠিক আছে তুমি শুয়ে পরো,আর গেটের চাবিটা আমার কাছে দেও। রামলাল অঞ্জলীর হাতে চাবি দিয়ে শুতে চলে গেল।
চাবির গোছা হাতে নিয়ে অঞ্জলী নিজের রুমে ফিরে এলো।কে করলো এমন?মনি শংকর !!!না হিসাব মিলছেনা মনিদা এমন কেন করবে?এসব ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিয়ে বিন্দুকে কল দিলো অঞ্জলী।এতো রাতে একটু অবাক হয়েই কল ধরলো বিন্দু ,কি রে অঞ্জু কি হয়েছে? এতো রাতে কল করলি? ঘুম জড়ানো কষ্ঠে বললো বিন্দু। আরে তেমন কিছু না গো বৌদি। আসলে ঘুমের ভিতর তোমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখলাম তো তাই। তো তুমি কেমন আছো?আর পেটের ভিতরের পুচকেটার কি খবর? অঞ্জলীর কথা শুনে বিন্দু হেসে বললো সব ঠিক আছে রে। তোর মনি দা কি আমাকে এখন কিছু করতে দেয় না কাছ ছাড়া করে ,এই দেখ কেমন বাচ্চাদের মত জড়িয়ে শুয়ে আছি। এতো ভালবাসাতেও কেউ খারাপ থাকতে পারে। মনি শংকর বৌদির কাছেই আছে।তাহলে কে !!! অঞ্জলী চুপ করে একটু ভাবলো। তারপর বললো হুম তাহলে তো কোন চিন্তাই নেই।আমি শুধু শুধু চিন্তা করছিলাম। সরি গো তোমার ঘুম নষ্ট করলাম। ওকে গুড নাইট!!
ফোন রাখার পর অঞ্জলী গভীর চিন্তায় পরে গেল।কি থেকে কি হয়ে গেল,শেষে না পুলিশের ঝামেলা হয়। না কে খুন করেছে সেটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। সকাল হতে বেশি দেরি নেই আগে লাশটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।একবার ভাবলো সুব্রতকে বিষয়টা জানাবে কিনা? তারপর দেখলো উল্টো বেশি ঝামেলা হবে।তাছাড়া সিধুকে নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামাবেনা।আর খুনিরও হয়ত এটা নিয়ে ঝামেলা করার ইচ্ছা নাই।সে যাই হোক যা হবার হবে।তার থেকে গুম করে দেওয়াই ভালো। যেই ভাবা সেই কাজ একটা বড় ব্যাগ জোগার করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সিধুর লাশটা ব্যাগে ভরলো। তারপর যতোটা সম্ভব রুমটা পরিস্কার করলো। রক্তের দাগও ভালো করে খুজে খুজে
খুঁজে পরিস্কার করলো তারপর গাড়ির চাবি আর ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
মোবাইলটা নিতে যেয়েও নিলো না। আস্তে নিচে নেমে গাড়ির ডেক্সে ব্যাগটা রেখে গাড়ি ছুটালো। রাস্তাঘাট শুন শান অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলেছে গাড়ি ,প্রায় আধা ঘন্টা গাড়ি চালানোর পর অঞ্জলী থামলো। এলাকাটা মেইন শহর থেকে একটু দুরে, আর কিছুদুর গেলেই একটা ঘন জঙ্গল। অঞ্জলী গাড়িটা মেইন রাস্তাতেই দাঁড় করালো আর এর পরের রাস্তার আঁধা পাঁকা কোথাও কাঁচা,গাড়ি নিয়ে গেলে চাকায় কিছু লাগতে পারে । অনেক ভেবে কাজটা করতে হচ্ছে অঞ্জলী কে। পিছনের ঢেকি খুলে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে অন্ধকারেই হেঁটে পথ চলা শুরু করলো অঞ্জলী, প্রায় পনেরো মিনিট হাঁটার পর বুঝতে পেল জঙ্গলের অনেক কাছে চলে এসেছে,পাশের একটা উঁচু ঢিবি মত কি দেখা যাচ্ছে,চারিদিক অন্ধকার তাই ঠিক মত দেখতে পাচ্ছেনা। অঞ্জলী ঢিবিটার কাছে যেয়ে দেখলো নিচে জঙ্গল এখান থেকে ফেলে দিলে সোজা ওখানে যেয়ে পরবে,এতো রাতে তাহলে আর ভিতরে যেয়ে লাভ নেই। তারপর ব্যাগটা অঞ্জলী ফেলতে যাবে তখনি একটা কথা মনে হতেই ওহ শিট!! বলে বসে পরলো অঞ্জলী । তারপর তাড়াতাড়ি ব্যাগটার মুখ খুলে সিধুর পকেট সার্চ করে কি যেন খুজতে লাগলো। না পেয়ে হতাশ হতে বসে রইলো। এ আমি কি করলাম এতো বড়ো একটা ভুল করলাম। সব প্লান এই ভুলের জন্য ভেস্তে না যায়। অঞ্জলী বির বির করে বলতে লাগলো। সব অপরাধী কিছুনা কিছু ভুল করে ,তাহলে কি আমি অপধারী তাই এই ভুলটা করলাম। আমার উচিত ছিলো সবার আগে সিধুর মোবাইলটা নিয়ে নেওয়া। কারণ ওটা থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেত। তাছাড়া ও সর্বশেষ কার সাথে কথা বলেছে,এর পিছে কে আছে সব পরিস্কার হয়ে যেত। এসব ভাবতে ভাবতে অঞ্জলী ভুলতেই বসেছে সকাল হয়ে যাবে একটু পরই। নিজের হুশে ফিরতেই বললো যা হবার হয়ে গেছে আগে এই কাজটা শেষ করে,ব্যাগের দিকে তাকাতে সিধুর মুখে নজর পরতেই,এতোক্ষণ পর অঞ্জলীর এবার ভয় করছে। সে এতো সময় ধরে একা একা একটা লাশের সাথে আছে ভাবতেই শিউরে উঠলো। তারাতাড়ি করে ব্যাগটা ঢিবির উপর থেকে নিচের দিকে ছুড়ে দিলো। ব্যাগ সহ সিধুর লাশটা পরে গেল গহীন জঙ্গলে। আর অঞ্জলী ছুটলো গাড়ির দিকে,পনেরো মিনিটের রাস্তা হেঁটে এসেছে আর এখন দৌড়িও মনে হচ্ছে আধা ঘন্টায় ও রাস্তা শেষ হচ্ছেনা। অঞ্জলী যখন গাড়ির কাছে পৌছালো দুর থেকে আজানের সুর ভেষে এলো। অঞ্জলী গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুড়িয়ে টার্ন দিলো শহরের দিকে । এখন ভয় কিছুটা কম করছে। নিজেকে একজন প্রোফেশনাল কিলারের মত মনে হচ্ছে তার এখন যেন মিশন শেষ করে ফিরছে। অঞ্জলী একটু বাঁকা হাসলো কিছু সময়ের জন্য নিজের সব বিপদ ভুলে গেল,ভালবাসা মানুষকে কি না তৈরি করতে পারে।
এগুলা যেখান থেকে এনেছিস আমাকে সেখানে নিয়ে চল। বাকি কাজ ওখানে গিয়ে বললো।তারপর দুজনে সুব্রতর জীপে উঠে বসলো।সুব্রত একজনকে দায়িত্ব দিয়ে গেল গাড়ি দুটাতে যা মাল আছে পুড়িয়ে ফেলতে।আর এই কথা যেন বড় বাবুর কানে না যায় এটাও সাবধাণ করে দিলো।যথা সময়ে সুব্রতর জীপ থামলো রায় টেক্সটাইলের পিছনের গেটে।সুব্রতকে দুজনে ভিতরে নিয়ে গিয়ে একটা তালা বদ্ধ ঘর দেখালো।তালা খোল মেজাজী কন্ঠে বললো সুব্রত।স্যার আমাদের কাছে চাবী নেই।সুব্রতও জানে এরা চুনোপুটি তাই বেশি না ঘাটিয়ে বললো ভেঙ্গে ফেল।দুজনে একবার সুব্রতর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো এটা স্যারের পার্সোনাল অপারেশন তাই আর কোন কথা না বলে কাজে লেগে গেল।কিছুক্ষণ পর তালা ভাঙ্গা শেষ হলে ভিতরে প্রবেশ করে সুব্রতর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।এ তো ড্রাগের সাম্রাজ্য!!সুব্রতকে চুপ থাকতে দেখে কনস্টেবলটা বললো স্যার এখন কি করবো? সুব্রত কিছুক্ষণ ভেবে বললো এদের সাথে করে সব গাড়িতে লোড করো।সুব্রতর কথা মতো সব গাড়িতে লোড করা হলো। তারপর আবার গাড়িতে উঠে গাড়ি ছোটালো শহর থেকে দূরে নির্জন বনের দিকে।ওদিকে যেতে দেখে হেলপার আর ডাইভারটা ভয়ে ভয়ে বললো স্যার এদিকে কোথায় যাচ্ছেন। চুপচাপ বসে থাক।আমার কথা মত চললে ভয় নেই।জীপ গিয়ে থামলো একটা নির্জন জায়গায় সুব্রতর নির্দেশে ওরা ওসব ড্রাগ সব নিচে নামালো।তারপর পকেট থেকে ম্যাচ বের করে আগুন জালিয়ে দিলো।সুব্রতর কার্যকলাপ দেখে সবাই অবাক। কোটি কোটি টাকার মাল অন্য অফিসার হলে এগুলো নিয়ে অনেক কামাতো।স্যার আমরা কি করবো?হেলপার আর ড্রাইভারটা বললো।যা ভাগ এখান থেকে।আর এই ঘটনাটা হজম করে ফেল।কোন ভাবে যদি এটা ফ্লাস হয়,তাহলে বুঝতেই পারছিস আমি কিন্তু অফিসের বাইরেও কাজ করতে পছন্দ করি।যা এখন ভাগ!! সুব্রত কথা শুনেও দুজন দাঁড়িয়ে রইলো।কিরে কি হলো??ভাগ সুব্রত বললো!দুজন ভয়ে ভয়ে বললো না স্যার আপনি পিছন থেকে ঠুকে দিবেন!সুব্রত ক্রু হেসে বললো ভয় নেই,আমি কথা দিলে কথা রাখি।এখন যা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যা। সুব্রত বলা মাএ দুজন ছুটে পালালো। সব কাজ মেটার পর সুব্রতর মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ,চালান কপিতে অমিত স্যারের সই কিভাবে এলো!?
সিধুর মুখ থেকে কিছুই বের করা যায়নি,অঞ্জলী খুবই বিরক্ত।থাক ওভাবেই শালা কাল আবার দেখবো।দু দিন পেটে কিছু না পরলে কাল ঠিকই সব বলে দিবে।আগে যে রুমটাতে ঠাকুমা থাকতো সেখানেই রেখেছে সিধুকে,এটাই সব থেকে নিরাপদ।তারপর বিরক্তি নিয়েই শুয়ে পরলো অঞ্জলী।রাত আনুমানিক দুইটা কি আড়াইটে হবে,একটা শব্দে অঞ্জলীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। মনের ভিতর কু ডাকলো অঞ্জলীর,তড়িঘড়ি করে উঠে দৌড়ে গেল সিধু যে রুমে আছে সেদিকে।রুমের কাছে যেয়ে দেখলো রুম তালা বদ্ধই আছে,কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেল অঞ্জলী।সাথে সাথে ছুটে গেল ভাঙ্গা জানালার দিকে,তারপর বাইরে দিকে তাকিয়ে দেখতেই রাস্তার রোড লাইটের আলোয় দেখতে পেল কালো কোর্টে ঢাকা একজন ছুটে চলেছে।সব ফেলে দ্রুত নিচে নেমে এলো অঞ্জলী গেটে এসে দেখলো রামলাল বসে আছে। অঞ্জলী কে দেখে বললো কে? অঞ্জলী বললো আমি গেট খোলো তাড়াতাড়ি রামলাল তাড়াতাড়ি গেট খুললো অঞ্জলী ছুটে রাস্তায় যেয়ে এদিক ওদিক দেখেও কোথাও কিছু দেখতে পেলনা। হতাশ হয়ে অঞ্জলী ফিরে এলো।অঞ্জলীকে ফিরে আসতে দেখে রামলাল বললো কি হয়েছে মা জননী?অঞ্জলীর তখন কথা বলার মত পরিস্থি নেই।কারণ সিধুর ঘরে ঢুকে অঞ্জলী যেটা দেখেছে এমনটা ঘটবে সে কল্পনাও করেনি। সিধুর শরীরটা চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে,আর মেঝেটা রক্তে ভেষে যাচ্ছে। তারপর অঞ্জলীর চোখ যায় জানালার কাঁচ ভাঙ্গার দিকে।সেখান থেকেই দেখলো কেউ পালিয়ে যাচ্ছে,অর্থাৎ ওটাই খুনি।রামলালের কথা শুনেও চুপ করে রইলো। রামলাল আবার জিজ্ঞেস করলো।অঞ্জলী নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো কিছুনা,আচ্ছা একটু আগে কি কেউ এসেছিলো?হা মা জননী মনি শংকর এসেছিলো,আমি বললাম এতো রাতে!!ও বললো তোমার সাথে বিশেষ দরকার তুমিই নাকি তাকে ডেকে পাঁঠিয়েছো। রামলালের কথা শুনে অঞ্জলী আরো অবাক হলো! তুমি ঠিক ভাবে দেখেছো?অঞ্জলী প্রশ্ন করলো।তুমি তো জানো মা আমি রাতে এখন আর তেমন দেখতে পাইনা। এই একটু আগেই তো তোমার আসা দেখে জানতে চাইলাম কে? রামলালের কথা শুনে অঞ্জলী বুঝলো রামলালকে দোষ দিয়ে লাভ নেই বয়স হয়েছে,চোখে কম দেখে। অঞ্জলী কে চুপ দেখে রামলাল বললো কিছু কি খারাপ হয়েছে মা?না না সব ঠিক আছে তুমি শুয়ে পরো,আর গেটের চাবিটা আমার কাছে দেও। রামলাল অঞ্জলীর হাতে চাবি দিয়ে শুতে চলে গেল।
চাবির গোছা হাতে নিয়ে অঞ্জলী নিজের রুমে ফিরে এলো।কে করলো এমন?মনি শংকর !!!না হিসাব মিলছেনা মনিদা এমন কেন করবে?এসব ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিয়ে বিন্দুকে কল দিলো অঞ্জলী।এতো রাতে একটু অবাক হয়েই কল ধরলো বিন্দু ,কি রে অঞ্জু কি হয়েছে? এতো রাতে কল করলি? ঘুম জড়ানো কষ্ঠে বললো বিন্দু। আরে তেমন কিছু না গো বৌদি। আসলে ঘুমের ভিতর তোমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখলাম তো তাই। তো তুমি কেমন আছো?আর পেটের ভিতরের পুচকেটার কি খবর? অঞ্জলীর কথা শুনে বিন্দু হেসে বললো সব ঠিক আছে রে। তোর মনি দা কি আমাকে এখন কিছু করতে দেয় না কাছ ছাড়া করে ,এই দেখ কেমন বাচ্চাদের মত জড়িয়ে শুয়ে আছি। এতো ভালবাসাতেও কেউ খারাপ থাকতে পারে। মনি শংকর বৌদির কাছেই আছে।তাহলে কে !!! অঞ্জলী চুপ করে একটু ভাবলো। তারপর বললো হুম তাহলে তো কোন চিন্তাই নেই।আমি শুধু শুধু চিন্তা করছিলাম। সরি গো তোমার ঘুম নষ্ট করলাম। ওকে গুড নাইট!!
ফোন রাখার পর অঞ্জলী গভীর চিন্তায় পরে গেল।কি থেকে কি হয়ে গেল,শেষে না পুলিশের ঝামেলা হয়। না কে খুন করেছে সেটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। সকাল হতে বেশি দেরি নেই আগে লাশটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।একবার ভাবলো সুব্রতকে বিষয়টা জানাবে কিনা? তারপর দেখলো উল্টো বেশি ঝামেলা হবে।তাছাড়া সিধুকে নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামাবেনা।আর খুনিরও হয়ত এটা নিয়ে ঝামেলা করার ইচ্ছা নাই।সে যাই হোক যা হবার হবে।তার থেকে গুম করে দেওয়াই ভালো। যেই ভাবা সেই কাজ একটা বড় ব্যাগ জোগার করে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সিধুর লাশটা ব্যাগে ভরলো। তারপর যতোটা সম্ভব রুমটা পরিস্কার করলো। রক্তের দাগও ভালো করে খুজে খুজে
খুঁজে পরিস্কার করলো তারপর গাড়ির চাবি আর ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
মোবাইলটা নিতে যেয়েও নিলো না। আস্তে নিচে নেমে গাড়ির ডেক্সে ব্যাগটা রেখে গাড়ি ছুটালো। রাস্তাঘাট শুন শান অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলেছে গাড়ি ,প্রায় আধা ঘন্টা গাড়ি চালানোর পর অঞ্জলী থামলো। এলাকাটা মেইন শহর থেকে একটু দুরে, আর কিছুদুর গেলেই একটা ঘন জঙ্গল। অঞ্জলী গাড়িটা মেইন রাস্তাতেই দাঁড় করালো আর এর পরের রাস্তার আঁধা পাঁকা কোথাও কাঁচা,গাড়ি নিয়ে গেলে চাকায় কিছু লাগতে পারে । অনেক ভেবে কাজটা করতে হচ্ছে অঞ্জলী কে। পিছনের ঢেকি খুলে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে অন্ধকারেই হেঁটে পথ চলা শুরু করলো অঞ্জলী, প্রায় পনেরো মিনিট হাঁটার পর বুঝতে পেল জঙ্গলের অনেক কাছে চলে এসেছে,পাশের একটা উঁচু ঢিবি মত কি দেখা যাচ্ছে,চারিদিক অন্ধকার তাই ঠিক মত দেখতে পাচ্ছেনা। অঞ্জলী ঢিবিটার কাছে যেয়ে দেখলো নিচে জঙ্গল এখান থেকে ফেলে দিলে সোজা ওখানে যেয়ে পরবে,এতো রাতে তাহলে আর ভিতরে যেয়ে লাভ নেই। তারপর ব্যাগটা অঞ্জলী ফেলতে যাবে তখনি একটা কথা মনে হতেই ওহ শিট!! বলে বসে পরলো অঞ্জলী । তারপর তাড়াতাড়ি ব্যাগটার মুখ খুলে সিধুর পকেট সার্চ করে কি যেন খুজতে লাগলো। না পেয়ে হতাশ হতে বসে রইলো। এ আমি কি করলাম এতো বড়ো একটা ভুল করলাম। সব প্লান এই ভুলের জন্য ভেস্তে না যায়। অঞ্জলী বির বির করে বলতে লাগলো। সব অপরাধী কিছুনা কিছু ভুল করে ,তাহলে কি আমি অপধারী তাই এই ভুলটা করলাম। আমার উচিত ছিলো সবার আগে সিধুর মোবাইলটা নিয়ে নেওয়া। কারণ ওটা থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেত। তাছাড়া ও সর্বশেষ কার সাথে কথা বলেছে,এর পিছে কে আছে সব পরিস্কার হয়ে যেত। এসব ভাবতে ভাবতে অঞ্জলী ভুলতেই বসেছে সকাল হয়ে যাবে একটু পরই। নিজের হুশে ফিরতেই বললো যা হবার হয়ে গেছে আগে এই কাজটা শেষ করে,ব্যাগের দিকে তাকাতে সিধুর মুখে নজর পরতেই,এতোক্ষণ পর অঞ্জলীর এবার ভয় করছে। সে এতো সময় ধরে একা একা একটা লাশের সাথে আছে ভাবতেই শিউরে উঠলো। তারাতাড়ি করে ব্যাগটা ঢিবির উপর থেকে নিচের দিকে ছুড়ে দিলো। ব্যাগ সহ সিধুর লাশটা পরে গেল গহীন জঙ্গলে। আর অঞ্জলী ছুটলো গাড়ির দিকে,পনেরো মিনিটের রাস্তা হেঁটে এসেছে আর এখন দৌড়িও মনে হচ্ছে আধা ঘন্টায় ও রাস্তা শেষ হচ্ছেনা। অঞ্জলী যখন গাড়ির কাছে পৌছালো দুর থেকে আজানের সুর ভেষে এলো। অঞ্জলী গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুড়িয়ে টার্ন দিলো শহরের দিকে । এখন ভয় কিছুটা কম করছে। নিজেকে একজন প্রোফেশনাল কিলারের মত মনে হচ্ছে তার এখন যেন মিশন শেষ করে ফিরছে। অঞ্জলী একটু বাঁকা হাসলো কিছু সময়ের জন্য নিজের সব বিপদ ভুলে গেল,ভালবাসা মানুষকে কি না তৈরি করতে পারে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!