19-11-2020, 08:35 PM
৫১ পর্ব
শহরের রাজনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ।ভোটের আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর খুন হওয়াটা মোটেও কাম্য নয়।দিকে দিকে মিটিং মিছিল।প্রতাপ হাজরা মনে মনে খুব খুশি কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে থানার সামনে,রাস্তার মোড়ে দিয়ে চলেছে স্লোগান মুখ্যমন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁর খুনের বিচার চাই!বিচার চাই!!বলে। কেউ কেউ বলছে খুন কা বদলা খুন। প্রতাপ হাজরা বলে চলেছে, ২ দিন পার হয়ে গেল বুঝতে পারছিনা আমার পুলিশ ভাইয়েরা কি করছে। এটা যে বিরোধী দলের কাজ সেটা স্পষ্ট। তবুও তারা কেন চুপ এটা আমাদের বোধ্যগম্য হচ্ছেনা। মিডিয়া পুলিশের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের এক কথা কেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ন তাই মেডিকেল রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোন মন্তব্য করতে চাই না।কিন্তু তাই বলে আমরা বসে নেই তদন্ত চলছে শীঘ্রই অপরাধী ধরা পরবে।
সরকারী দলের লোক জনের মিটিং মিছিল দেখে বিরোধীদলের নেতা কমলেশ মুখার্জীকে মনে মনে ভীতো হতে দেখা গেল।আসলে তিনি ভাবছেন এমনিতে এতো বারেও পাশ করতে পারেননি তিনি তার দল থেকে এটাই তার শেষ সুযোগ ছিলো। কিন্তু যা একটু আস্থা অর্জন করেছিলো সেটাও এই মন্ত্রী খুন হওয়াতে হারাতে বসেছে। কারণ সরকারী দল এক তরফা তাদের দোষ দিয়ে চলেছে। আর পুলিশ সে তো ক্ষমতার কাছে বাঁধা। তাছাড়া রাজ্যের মানুষ গুলাও তেমন সরকারী দলের মন্ত্রী খুন হয়েছে বলে ভাবছে এটা বিরোধী দলের কাজ। ধুর শালা সব শেষ হয়ে গেল। এই ইসুতেই আবারও সরকারী দল বাজিমাত করবে।
ঠিক এমন সময় কমলেশ মুখার্জীর ফোনে একটা কল এলো,নং টা দেখে একটু অবাক হলো কমলেশ বাবু। এতো দিন পরে সেই মহিলা,নামটাও বলেনি। এই ঝামেলার ভিতর তার আবার কি দরকার ! তারপর ভাবলো এই মহিলাই তাকে মন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলো তবে কি !!!এতো টুকু ভাবতেই কমলেশ বাবু ঘেমে উঠলো তরীঘরি করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে হ্যালো বলতেই।ওপাশ থেকে মহিলা কষ্ঠ বলে উঠলো,
-কি ব্যাপার কমলেশ বাবু স্ক্রিপ্ট রেডি তো ?
-কিসের স্ক্রিপ্ট?
-আরে বাবা!আপনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন।কতো ভাষণ টাষণ দিতে হবে আপনার।বলে মহিলাটি হাসতে লাগলো।
- এই আসলে কে আপনি?এই বিপদের সময় আমার সাথে মশকারা করছেন? জানেন না রাজ্যোর কি খবর?
-হা সবই জানি! আর এটাও জানি আপনি একটা ভীতুর ডিম। শুনুন সরকারী দলের মত আপনিও তাদের উপর দোষ চাপান আর মন্ত্রী মহাশয়ের খুনের বিচার চান। তারপর কখন কি করতে হবে সেটা আমার উপর ছেড়ে দেন কিন্তু আমিও আপনার কাছে যা চেয়েছি সেটা দেবার জন্য ও প্রস্তুত থেকে। ধরে নিন আপনি এবার ভোটে জিতছেন।বলে ফোনটা কেটে দিলো মহিলাটি।
-কমলেশ বাবু হ্যালো হ্যালো করেও পেলোনা।
রোহিতের মন টা আজ ভালো নেই হয়ত,মঞ্জু সেটা অনুমান করলো,দুদিন ধরে দেখছে রোহিত খুব চিন্তিত। সকালে অফিস গেল মুখ ভার করে। বিন্দুর শরীর ভালোই আছে। অঞ্জলীর কাছে সব দোষ স্বীকার করার পর থেকে মনি শংকরের মনটা অনেকটা ফুরফুরে। সিধু আছে তার ধান্দায় কিন্তু ইদানিং তারও মেজাজ ঠিক নেই হঠাৎ তার বস ডেকে পাঠিয়েছে। কি কারণে সে তা জানেনা।এভাবে বস কখনো সরাসরি কথা বা দেখা করেনা। বলেছে খুব দরকার হয়ত বড় একটা দান মারতে হবে। রোহিত কে অফিস থেকে ফিরে ব্যাগ পএ গোছাতে দেখে মঞ্জু বললো কোথায় যাচ্ছো?আর বলো না অফিসে খুব ঝামেলায় পরেছি আমাকে দুবাই যেতে হবে তাড়াতাড়ি আজ রাতে ফ্লাইট এখন অফিস যাবো গোছগাছ করে তারপর ওখান থেকে সোজা এয়ারপোর্ট। রোহিতের কথা শুনে মঞ্জু বললো কই আগে বলোনি তো?মঞ্জুর কথায় এবার রোহিত রেগে গিয়ে বললো সব কি তোমাকে বলে করতে হবে। ব্যাবসার কাজ হঠাৎ যেতে হবে দিন দশেক থাকতে হবে ওখানে।মঞ্জু আর কোন কথা বললো না। এতো বছরের বিবাহিত জীবনে রোহিত তার সাথে এভাবে কথা বলেনি। যাবার সময় রোহিত মঞ্জুকে জড়িয়ে ধরে সরি বলে বেড়িয়ে গেল। রোহিত চলে গেলে মঞ্জু ঢুকরে কেঁদে উঠলো। নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছিলো তার,তাই অঞ্জলী কে ফোন দিলো,হয়ত বোনের সাথে কথা বলে নিজেকে হালকা করবে। অঞ্জলী ফোন ধরতেই মঞ্জুকে কাঁদতে দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলে। একটু আগে রোহিত আর তার ভিতর ঘটে যাওয়া সব বলতে অঞ্জলী দিদি কে সান্তনা দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
তার নিজের রুমে পাইচারী করতে করতে কিসের একটা হিসেব কষতে লাগলো অঞ্জলী। কিছুক্ষণ পর নিজেই কেঁপে উঠলো নিজের হিসাবের ফলাফলে। সাথে সাথে কালো কোটটা গায়ে চড়িয়ে নিজের পছন্দের ব্লু কালারের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।
ভদ্র মহিলার ফোন পাবার পর থেকে চিন্তায় আছেন কমলেশ মুখার্জী। এক নাগারে ভেবে চলেছেন।কারো সাথে কোন কথা বলছেন না। তার আশেপাশে বসে থাকা মানুষ গুলাও চিন্তিত যে তাদের নেতা কি ভাবছে। তারাও অধীর আগ্রহে বসে আছে,যে চিন্তা ভাবনার পর তাদের নেতা কি নির্দেশ দেবেন তাদের।ভোটের আর দেরি নেই আগামী সপ্তাহে নমিনেশন জমা দিতে হবে। জন সমক্ষীয় এখনো তারা অনেক পিছনে,তারপর এই খুনের ব্যাপারে তাদের পক্ষে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তুলছে সরকারী দল আর তাদের নেত্রীত্ব দিচ্ছে সরকারী দলের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ হাজরা।না মহিলা ভুল কিছু বলেনি এভাবে ভীত হয়ে বসে থাকলে চলবেনা। কমলেশ বাবু নিজের ধ্যান ভঙ্গ করে তার চেলাদের উদ্দেশ্য বললেন শোন তোমরা কাল থেকে আমাদের ভোটের কর্মসূচি শুরু। আমাদের সব সংগঠন গুলাকে একএে করো আর সরকারী দলের মিথ্যা প্রচারনার জবাব দেও। বসে থাকার আর সময় নেই।পাশে থাকা চেলা ছোট বড় নেতাদের ভিতর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা খেলো ,এসব শুনে কারণ পর পর কয়েক বার দলের মাথায় বসেও দলকে ক্ষমতার আসনে বসাতে পারেনি কমলেশ মুখার্জী,তাই অনেকেই আর তাকে সামনে চান না। তবুও দলের কথা ভেবে ,এই বারটা তার কথা শুনতেই হবে। ছোট পরিসরে মিটিং শেষে সবাই বেড়িয়ে গেল।
অঞ্জলী নিজের গাড়িটা একটা অফিসের থেকে কিছুটা দুরে পার্ক করে নিজেকে অন্ধকারের সাথে মিশিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর অফিসের ভিতর থেকে একটা লোক বের হলো সারা শরীর তার কালো কোটে ঢাকা। মাথায় টুপি।অন্ধকারে লোকটার মুখ দেখতে পেলনা অঞ্জলী।লোকটা গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়িটা স্টার্ট নিলো। সাথে সাথে অঞ্জলী ও দৌড়ে নিজের গাড়ির কাছে যেয়ে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে দুরুত্ব বজায় রেখে সামনের গাড়িটা ফলো করতে লাগলো। সামনের গাড়িটা যেখানে থামলো সেটা দেখে অঞ্জলী একটু অবাকই হলো। ৫১ বাকি
কারণ গাড়িটা থামলো অমিতের মিলের সামনে,তারপর সেই কালো কোট পরা লোকটা গাড়ি থেকে নেমে হন হন করে ভিতরে প্রবেশ করলেন। অঞ্জলী তাড়াতাড়ি নিজের গাড়িটা একটু দুরে সাইড করে আগের বারের মত মিলের পিছের সাইডে চলে গেল। অঞ্জলী যাওয়া মাএই শুনতে গেল।কি ব্যাপার সিধু,তোমার মনি শংকর স্যার তো পুরো মেয়ে মানুষ হয়ে গেছে। তার দিয়ে তো মনে হয় আর কোন কাজই হবেনা। অঞ্জলী বুঝতে পেল তারমানে এখানে সিধু আছে,কিন্তু অপর ব্যক্তিটা কে?কথা শুনে মনে হচ্ছে কন্ঠ একটু বিকৃত করে বলার চেষ্টা করছে।সাথে সাথে অঞ্জলী নিজের মোবাইলের অডিও রেকর্ডিং টা চালু করে দিয়ে কান পাতলো ভালো করে। আসলে স্যার ঠিকই বলেছেন মনি শংকর স্যার কে দিয়ে আর কিছু হবেনা। আহ! বিরক্তি প্রকাশ করে তথাকথিত স্যার বলে উঠলো ওসব শুনে আমার লাভ কি? মাসে মাসে তোমাকে বড় বান্ডিল গুলা কিসের জন্য দিয়? আমি অতো কিছু বুঝি না শহরের রাজনীতির অবস্থাও ভালো না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু করতে হবে। এবার আর কাঁচা কাজ না,সরাসরি অমিতের রেপুটেশনে হিট করতে হবে। আর তাতেও কাজ না হলে একে বারে শেষ করে দিতে হবে। বস গোছের লোকটার কথা শুনে অঞ্জলীর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। তো কি করতে হবে স্যার আমাকে?সিধু বলে উঠলো।
শোন তুমি আগামীকাল রাতেই একটা বড় মাপের ড্রাগ সাপ্লাই করো ,আর সেটা অমিতের কোম্পানী প্রোডাক্টের ভিতর। কিন্তু স্যার পুলিশের ঝামেলা?! সিধু সংসয় প্রকাশ করলো। আরে আমি তো চায়ই পুলিশে ধরুক ! বস গোছের লোকটি বললো। কি বলছেন স্যার!!? তাহলে আমার কি হবে। আরে তোমার কোন সমস্যা হবেনা। বিরক্ত হয়ে বললো বস।শোন তুমি সব গুলা গাড়ির অনেক পিছে থেকে ফলো করে যাবে। ওহ!বলে সিধু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।তারপর কি যেন ভেবে বললো কিন্তু স্যার ,কোম্পনীর দায়িত্বে তো অমিত নেই।তাহলে পুলিশে ধরলেও তো ওনার কোন সমস্যা হবে না। তার উপর উনি একজন মোষ্ট রেপুটেশন প্যারসন। হুম ! তুমি ঠিকই বলছো সিধু,এটা আমার আরো ভাবার দরকার ছিলো। আচ্ছা আমি ব্যাপারটা দেখছি ,তুমি বাকি সব ব্যবস্থা করো। আমি এখন যাচ্ছি বলে ঠক ঠক জুতার শব্দ গেটের দিকে যেতেই। অঞ্জলী আস্তে আস্তে সরে পরলো ওখান থেকে।
আজকের বেকিং নিউজ, প্রাক্তন মন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁ হত্যা কান্ডে এক নয়া তথ্য দিয়েছেন বিশেষ ভাবে গঠিত মেডিক্যাল টিম ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। মেডিক্যাল টিমের বক্তব্য উনি হার্ট আ্যটাক না, বিষ পানে মারা গেছে। তাছাড়া উনি মারা যাবার আগে অল্প মাএায় মদ পান ও করেছিলেন। কিন্তু পেটে সেভাবে বিষের প্রভাব পাওয়া যায়নি। সব চেয়ে যেটা ভাবার বিষয় উনি সরাসরি বিষ পান করেননি ,আবার কেউ জোর করে বিষ পান ও করাননি। উনার শরীরে কোন ধস্তাধস্তির চিন্থ পাওয়া যায়নি। বিষটা অতি অল্প মাএায় প্রয়োগ করা হয়েছি কিন্তু অত্যন্ত তীব্র বিষ।যেটা ধীরে ধীরে ব্যাক্তিকে অচেতন করে একেবারে শেষ ঘুম পারিয়ে দিতে সক্ষম। আর এই বিষটা চেটে চেটে মধুর সাথে প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ উনার ঠোটে বিষ,মধু পাওয়া গেছে। আর সব থেকে বড় ব্যাপার উনার ঠোঁটে আর একটা জিনিস পাওয়া গেছে। সেটা হলো কোন মহিলার যৌনি রষ !! তাই পুলিশের ধারনা। এই পুরো ব্যাপারটায় এক জন মহিলার যোগসূএ আছে। আপাতত পুলিশ তাকে খোঁজার চেষ্টা করছে।
সাংবাদিকদের ভীর চলে যেতেই একজন সিপাই গোছের পুলিশ তার উচ্চ পদস্ত অফিসারের সাথে যেতে যেতে বললো স্যার আসলে কেসটা কি ? অফিসারটি সাধারণ ভাবেই বললো,আরে তুমি তো পুলিশে নতুন তাই বুঝতে পারছো না। আরে এই মন্ত্রী শালা হয়ত এক মাগীর কাছে গেছিলো। কিন্তু মাগীটার প্লান ছিলো ভিন্ন গুদের মুখে মধুর সাথে বিষ মাখিয়ে খেলে দিয়েছে। এখন কি হবে স্যার ? আরে ইয়ার কি আর হবে। এই কয়দিন লাফ ঝাফ তারপর এমনি ঠিক হয়ে যাবে সামনে নির্বাচন এসব তারই আলামত। এই মন্ত্রী বলে একটু চাপে থাকতে হবে কয়দিন। কিন্তু মাগীটার ক্ষমতা আছে বলতে হবে। কি খেলটা দেখালো।
শহরের রাজনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ।ভোটের আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর খুন হওয়াটা মোটেও কাম্য নয়।দিকে দিকে মিটিং মিছিল।প্রতাপ হাজরা মনে মনে খুব খুশি কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে থানার সামনে,রাস্তার মোড়ে দিয়ে চলেছে স্লোগান মুখ্যমন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁর খুনের বিচার চাই!বিচার চাই!!বলে। কেউ কেউ বলছে খুন কা বদলা খুন। প্রতাপ হাজরা বলে চলেছে, ২ দিন পার হয়ে গেল বুঝতে পারছিনা আমার পুলিশ ভাইয়েরা কি করছে। এটা যে বিরোধী দলের কাজ সেটা স্পষ্ট। তবুও তারা কেন চুপ এটা আমাদের বোধ্যগম্য হচ্ছেনা। মিডিয়া পুলিশের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের এক কথা কেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ন তাই মেডিকেল রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোন মন্তব্য করতে চাই না।কিন্তু তাই বলে আমরা বসে নেই তদন্ত চলছে শীঘ্রই অপরাধী ধরা পরবে।
সরকারী দলের লোক জনের মিটিং মিছিল দেখে বিরোধীদলের নেতা কমলেশ মুখার্জীকে মনে মনে ভীতো হতে দেখা গেল।আসলে তিনি ভাবছেন এমনিতে এতো বারেও পাশ করতে পারেননি তিনি তার দল থেকে এটাই তার শেষ সুযোগ ছিলো। কিন্তু যা একটু আস্থা অর্জন করেছিলো সেটাও এই মন্ত্রী খুন হওয়াতে হারাতে বসেছে। কারণ সরকারী দল এক তরফা তাদের দোষ দিয়ে চলেছে। আর পুলিশ সে তো ক্ষমতার কাছে বাঁধা। তাছাড়া রাজ্যের মানুষ গুলাও তেমন সরকারী দলের মন্ত্রী খুন হয়েছে বলে ভাবছে এটা বিরোধী দলের কাজ। ধুর শালা সব শেষ হয়ে গেল। এই ইসুতেই আবারও সরকারী দল বাজিমাত করবে।
ঠিক এমন সময় কমলেশ মুখার্জীর ফোনে একটা কল এলো,নং টা দেখে একটু অবাক হলো কমলেশ বাবু। এতো দিন পরে সেই মহিলা,নামটাও বলেনি। এই ঝামেলার ভিতর তার আবার কি দরকার ! তারপর ভাবলো এই মহিলাই তাকে মন্ত্রী হবার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলো তবে কি !!!এতো টুকু ভাবতেই কমলেশ বাবু ঘেমে উঠলো তরীঘরি করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে হ্যালো বলতেই।ওপাশ থেকে মহিলা কষ্ঠ বলে উঠলো,
-কি ব্যাপার কমলেশ বাবু স্ক্রিপ্ট রেডি তো ?
-কিসের স্ক্রিপ্ট?
-আরে বাবা!আপনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন।কতো ভাষণ টাষণ দিতে হবে আপনার।বলে মহিলাটি হাসতে লাগলো।
- এই আসলে কে আপনি?এই বিপদের সময় আমার সাথে মশকারা করছেন? জানেন না রাজ্যোর কি খবর?
-হা সবই জানি! আর এটাও জানি আপনি একটা ভীতুর ডিম। শুনুন সরকারী দলের মত আপনিও তাদের উপর দোষ চাপান আর মন্ত্রী মহাশয়ের খুনের বিচার চান। তারপর কখন কি করতে হবে সেটা আমার উপর ছেড়ে দেন কিন্তু আমিও আপনার কাছে যা চেয়েছি সেটা দেবার জন্য ও প্রস্তুত থেকে। ধরে নিন আপনি এবার ভোটে জিতছেন।বলে ফোনটা কেটে দিলো মহিলাটি।
-কমলেশ বাবু হ্যালো হ্যালো করেও পেলোনা।
রোহিতের মন টা আজ ভালো নেই হয়ত,মঞ্জু সেটা অনুমান করলো,দুদিন ধরে দেখছে রোহিত খুব চিন্তিত। সকালে অফিস গেল মুখ ভার করে। বিন্দুর শরীর ভালোই আছে। অঞ্জলীর কাছে সব দোষ স্বীকার করার পর থেকে মনি শংকরের মনটা অনেকটা ফুরফুরে। সিধু আছে তার ধান্দায় কিন্তু ইদানিং তারও মেজাজ ঠিক নেই হঠাৎ তার বস ডেকে পাঠিয়েছে। কি কারণে সে তা জানেনা।এভাবে বস কখনো সরাসরি কথা বা দেখা করেনা। বলেছে খুব দরকার হয়ত বড় একটা দান মারতে হবে। রোহিত কে অফিস থেকে ফিরে ব্যাগ পএ গোছাতে দেখে মঞ্জু বললো কোথায় যাচ্ছো?আর বলো না অফিসে খুব ঝামেলায় পরেছি আমাকে দুবাই যেতে হবে তাড়াতাড়ি আজ রাতে ফ্লাইট এখন অফিস যাবো গোছগাছ করে তারপর ওখান থেকে সোজা এয়ারপোর্ট। রোহিতের কথা শুনে মঞ্জু বললো কই আগে বলোনি তো?মঞ্জুর কথায় এবার রোহিত রেগে গিয়ে বললো সব কি তোমাকে বলে করতে হবে। ব্যাবসার কাজ হঠাৎ যেতে হবে দিন দশেক থাকতে হবে ওখানে।মঞ্জু আর কোন কথা বললো না। এতো বছরের বিবাহিত জীবনে রোহিত তার সাথে এভাবে কথা বলেনি। যাবার সময় রোহিত মঞ্জুকে জড়িয়ে ধরে সরি বলে বেড়িয়ে গেল। রোহিত চলে গেলে মঞ্জু ঢুকরে কেঁদে উঠলো। নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছিলো তার,তাই অঞ্জলী কে ফোন দিলো,হয়ত বোনের সাথে কথা বলে নিজেকে হালকা করবে। অঞ্জলী ফোন ধরতেই মঞ্জুকে কাঁদতে দেখে কি হয়েছে জানতে চাইলে। একটু আগে রোহিত আর তার ভিতর ঘটে যাওয়া সব বলতে অঞ্জলী দিদি কে সান্তনা দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
তার নিজের রুমে পাইচারী করতে করতে কিসের একটা হিসেব কষতে লাগলো অঞ্জলী। কিছুক্ষণ পর নিজেই কেঁপে উঠলো নিজের হিসাবের ফলাফলে। সাথে সাথে কালো কোটটা গায়ে চড়িয়ে নিজের পছন্দের ব্লু কালারের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।
ভদ্র মহিলার ফোন পাবার পর থেকে চিন্তায় আছেন কমলেশ মুখার্জী। এক নাগারে ভেবে চলেছেন।কারো সাথে কোন কথা বলছেন না। তার আশেপাশে বসে থাকা মানুষ গুলাও চিন্তিত যে তাদের নেতা কি ভাবছে। তারাও অধীর আগ্রহে বসে আছে,যে চিন্তা ভাবনার পর তাদের নেতা কি নির্দেশ দেবেন তাদের।ভোটের আর দেরি নেই আগামী সপ্তাহে নমিনেশন জমা দিতে হবে। জন সমক্ষীয় এখনো তারা অনেক পিছনে,তারপর এই খুনের ব্যাপারে তাদের পক্ষে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তুলছে সরকারী দল আর তাদের নেত্রীত্ব দিচ্ছে সরকারী দলের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ হাজরা।না মহিলা ভুল কিছু বলেনি এভাবে ভীত হয়ে বসে থাকলে চলবেনা। কমলেশ বাবু নিজের ধ্যান ভঙ্গ করে তার চেলাদের উদ্দেশ্য বললেন শোন তোমরা কাল থেকে আমাদের ভোটের কর্মসূচি শুরু। আমাদের সব সংগঠন গুলাকে একএে করো আর সরকারী দলের মিথ্যা প্রচারনার জবাব দেও। বসে থাকার আর সময় নেই।পাশে থাকা চেলা ছোট বড় নেতাদের ভিতর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা খেলো ,এসব শুনে কারণ পর পর কয়েক বার দলের মাথায় বসেও দলকে ক্ষমতার আসনে বসাতে পারেনি কমলেশ মুখার্জী,তাই অনেকেই আর তাকে সামনে চান না। তবুও দলের কথা ভেবে ,এই বারটা তার কথা শুনতেই হবে। ছোট পরিসরে মিটিং শেষে সবাই বেড়িয়ে গেল।
অঞ্জলী নিজের গাড়িটা একটা অফিসের থেকে কিছুটা দুরে পার্ক করে নিজেকে অন্ধকারের সাথে মিশিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর অফিসের ভিতর থেকে একটা লোক বের হলো সারা শরীর তার কালো কোটে ঢাকা। মাথায় টুপি।অন্ধকারে লোকটার মুখ দেখতে পেলনা অঞ্জলী।লোকটা গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়িটা স্টার্ট নিলো। সাথে সাথে অঞ্জলী ও দৌড়ে নিজের গাড়ির কাছে যেয়ে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে দুরুত্ব বজায় রেখে সামনের গাড়িটা ফলো করতে লাগলো। সামনের গাড়িটা যেখানে থামলো সেটা দেখে অঞ্জলী একটু অবাকই হলো। ৫১ বাকি
কারণ গাড়িটা থামলো অমিতের মিলের সামনে,তারপর সেই কালো কোট পরা লোকটা গাড়ি থেকে নেমে হন হন করে ভিতরে প্রবেশ করলেন। অঞ্জলী তাড়াতাড়ি নিজের গাড়িটা একটু দুরে সাইড করে আগের বারের মত মিলের পিছের সাইডে চলে গেল। অঞ্জলী যাওয়া মাএই শুনতে গেল।কি ব্যাপার সিধু,তোমার মনি শংকর স্যার তো পুরো মেয়ে মানুষ হয়ে গেছে। তার দিয়ে তো মনে হয় আর কোন কাজই হবেনা। অঞ্জলী বুঝতে পেল তারমানে এখানে সিধু আছে,কিন্তু অপর ব্যক্তিটা কে?কথা শুনে মনে হচ্ছে কন্ঠ একটু বিকৃত করে বলার চেষ্টা করছে।সাথে সাথে অঞ্জলী নিজের মোবাইলের অডিও রেকর্ডিং টা চালু করে দিয়ে কান পাতলো ভালো করে। আসলে স্যার ঠিকই বলেছেন মনি শংকর স্যার কে দিয়ে আর কিছু হবেনা। আহ! বিরক্তি প্রকাশ করে তথাকথিত স্যার বলে উঠলো ওসব শুনে আমার লাভ কি? মাসে মাসে তোমাকে বড় বান্ডিল গুলা কিসের জন্য দিয়? আমি অতো কিছু বুঝি না শহরের রাজনীতির অবস্থাও ভালো না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু করতে হবে। এবার আর কাঁচা কাজ না,সরাসরি অমিতের রেপুটেশনে হিট করতে হবে। আর তাতেও কাজ না হলে একে বারে শেষ করে দিতে হবে। বস গোছের লোকটার কথা শুনে অঞ্জলীর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। তো কি করতে হবে স্যার আমাকে?সিধু বলে উঠলো।
শোন তুমি আগামীকাল রাতেই একটা বড় মাপের ড্রাগ সাপ্লাই করো ,আর সেটা অমিতের কোম্পানী প্রোডাক্টের ভিতর। কিন্তু স্যার পুলিশের ঝামেলা?! সিধু সংসয় প্রকাশ করলো। আরে আমি তো চায়ই পুলিশে ধরুক ! বস গোছের লোকটি বললো। কি বলছেন স্যার!!? তাহলে আমার কি হবে। আরে তোমার কোন সমস্যা হবেনা। বিরক্ত হয়ে বললো বস।শোন তুমি সব গুলা গাড়ির অনেক পিছে থেকে ফলো করে যাবে। ওহ!বলে সিধু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।তারপর কি যেন ভেবে বললো কিন্তু স্যার ,কোম্পনীর দায়িত্বে তো অমিত নেই।তাহলে পুলিশে ধরলেও তো ওনার কোন সমস্যা হবে না। তার উপর উনি একজন মোষ্ট রেপুটেশন প্যারসন। হুম ! তুমি ঠিকই বলছো সিধু,এটা আমার আরো ভাবার দরকার ছিলো। আচ্ছা আমি ব্যাপারটা দেখছি ,তুমি বাকি সব ব্যবস্থা করো। আমি এখন যাচ্ছি বলে ঠক ঠক জুতার শব্দ গেটের দিকে যেতেই। অঞ্জলী আস্তে আস্তে সরে পরলো ওখান থেকে।
আজকের বেকিং নিউজ, প্রাক্তন মন্ত্রী বালেশ্বর ঝাঁ হত্যা কান্ডে এক নয়া তথ্য দিয়েছেন বিশেষ ভাবে গঠিত মেডিক্যাল টিম ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। মেডিক্যাল টিমের বক্তব্য উনি হার্ট আ্যটাক না, বিষ পানে মারা গেছে। তাছাড়া উনি মারা যাবার আগে অল্প মাএায় মদ পান ও করেছিলেন। কিন্তু পেটে সেভাবে বিষের প্রভাব পাওয়া যায়নি। সব চেয়ে যেটা ভাবার বিষয় উনি সরাসরি বিষ পান করেননি ,আবার কেউ জোর করে বিষ পান ও করাননি। উনার শরীরে কোন ধস্তাধস্তির চিন্থ পাওয়া যায়নি। বিষটা অতি অল্প মাএায় প্রয়োগ করা হয়েছি কিন্তু অত্যন্ত তীব্র বিষ।যেটা ধীরে ধীরে ব্যাক্তিকে অচেতন করে একেবারে শেষ ঘুম পারিয়ে দিতে সক্ষম। আর এই বিষটা চেটে চেটে মধুর সাথে প্রয়োগ করা হয়েছে। কারণ উনার ঠোটে বিষ,মধু পাওয়া গেছে। আর সব থেকে বড় ব্যাপার উনার ঠোঁটে আর একটা জিনিস পাওয়া গেছে। সেটা হলো কোন মহিলার যৌনি রষ !! তাই পুলিশের ধারনা। এই পুরো ব্যাপারটায় এক জন মহিলার যোগসূএ আছে। আপাতত পুলিশ তাকে খোঁজার চেষ্টা করছে।
সাংবাদিকদের ভীর চলে যেতেই একজন সিপাই গোছের পুলিশ তার উচ্চ পদস্ত অফিসারের সাথে যেতে যেতে বললো স্যার আসলে কেসটা কি ? অফিসারটি সাধারণ ভাবেই বললো,আরে তুমি তো পুলিশে নতুন তাই বুঝতে পারছো না। আরে এই মন্ত্রী শালা হয়ত এক মাগীর কাছে গেছিলো। কিন্তু মাগীটার প্লান ছিলো ভিন্ন গুদের মুখে মধুর সাথে বিষ মাখিয়ে খেলে দিয়েছে। এখন কি হবে স্যার ? আরে ইয়ার কি আর হবে। এই কয়দিন লাফ ঝাফ তারপর এমনি ঠিক হয়ে যাবে সামনে নির্বাচন এসব তারই আলামত। এই মন্ত্রী বলে একটু চাপে থাকতে হবে কয়দিন। কিন্তু মাগীটার ক্ষমতা আছে বলতে হবে। কি খেলটা দেখালো।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!