19-11-2020, 12:54 PM
#অন্য_রূপকথা
আজ সন্ধ্যেবেলার কথা। সারাদিনের বাড়ির কাজ এবং বাড়ি থেকে কাজ সামলে একটু বাড়ির কাছের বাজারে গেছিলাম, কিছু অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কেনার জন্য। তা, ভিড় বাঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ শুনি খুব মৃদু কন্ঠে একটা বাক্য -"চা লাগবে, মা?"
চমকে উঠে, তাকিয়ে দেখি, তুঁতে নীল রঙা সার্জিক্যাল মাস্কের আড়ালে চেনা চোখ... ভুল বললাম...চেনা চশমা। মোটা, কালো ফ্রেমের...হরলিক্সের কাঁচের মতো চশমা। সাথে এই অবয়ব...মাথা জোড়া বাদামী টাক..আধময়লা সাদাটে ফতুয়া...
এক হাতে একটি স্টিলের কেটলি... অন্য হাতে ক'টা কাগজের কাপ...
বড্ড চেনা...বড্ড চেনা...
আমার চোখেও বোধহয় বিষ্ময়, বা পরিচিতির ভাব ফুটে উঠেছিল, তাই মাস্ক টা একটু খুলে বললেন "ভালো আছ তো? অনেকদিন দেখি না..."
এক লহমায় চিনতে পেরে গেলাম। এই জ্যেঠু আর জ্যেঠিমা, মানে ওনার স্ত্রী মিলে একটা চপের দোকান মতো চালান...দোকান মানে রাস্তার ধারে বসে। জ্যেঠিমা তৈরি করেন, আর এই জ্যেঠু ভাজেন।
কিন্তু আজ চা নিয়ে?
মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। আর তার উত্তরে বিষন্ন ভাবে মাথা নেড়ে বললেন "আজকাল চপের বিক্কিরি নেই মা। সারা সন্ধ্যে বসেও পঞ্চাশ -ষাট টাকার বেশি হয় না, খরচা দিয়ে থুয়ে। তাতে দুজনের খাওয়া, ওষুধ...আর চলে না। পেটের দায় বড় দায়! তাই চা বিক্কিরি করছি। দোকান তো দিতে পারব না, অনেক খরচা! ...এইভাবে ঘুরে ঘুরে বেচি...তোমার জ্যেঠিমা বানিয়ে দেন...সকাল আর বিকেল দু'বেলাতেই বেরোই... বাঁচতে তো হবে...হার তো মানতে পারব না! কিছুতেই না!" বলে একমুখ হেসে, পা টা টানতে টানতে চলে গেলেন উনি।
বাঁচতে হবে!
হার মানতে পারব না।
কিছুতেই না!
কী অপরূপ শব্দবন্ধ, তাই না?
অদ্ভুত এক ক্ষয়াটে সময় আর সমাজের মাঝে দাঁড়িয়ে আমরা। মাঝেমাঝে দিশাহারা হয়ে পড়ি। অবসাদ আর "ভাল্লাগছে না" নিত্যসঙ্গী আমাদের। পালিয়ে যেতেও কি ইচ্ছে করে না, মাঝে মাঝেই!
আর সেই সবকিছুর মাঝে এমনি এক একজন মানুষ সামনে আসেন...একেবারে সেই ছোটবেলায় পড়া রবার্ট ব্রুসের গল্পের মতো করে বুঝিয়ে দেন বুক চিতিয়ে, ফাটিয়ে 'ফাইট' করার নাম ই জীবন!
পর পর দু'কাপ লেবু চা আর ভরে যাওয়া মন - এই তো... এইটুকু ই তো প্রাপ্তি আজ জীবনের কাছে আমার, আজকের জন্য, আগামীর জন্য।
চরৈবতি
আজ সন্ধ্যেবেলার কথা। সারাদিনের বাড়ির কাজ এবং বাড়ি থেকে কাজ সামলে একটু বাড়ির কাছের বাজারে গেছিলাম, কিছু অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কেনার জন্য। তা, ভিড় বাঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ শুনি খুব মৃদু কন্ঠে একটা বাক্য -"চা লাগবে, মা?"
চমকে উঠে, তাকিয়ে দেখি, তুঁতে নীল রঙা সার্জিক্যাল মাস্কের আড়ালে চেনা চোখ... ভুল বললাম...চেনা চশমা। মোটা, কালো ফ্রেমের...হরলিক্সের কাঁচের মতো চশমা। সাথে এই অবয়ব...মাথা জোড়া বাদামী টাক..আধময়লা সাদাটে ফতুয়া...
এক হাতে একটি স্টিলের কেটলি... অন্য হাতে ক'টা কাগজের কাপ...
বড্ড চেনা...বড্ড চেনা...
আমার চোখেও বোধহয় বিষ্ময়, বা পরিচিতির ভাব ফুটে উঠেছিল, তাই মাস্ক টা একটু খুলে বললেন "ভালো আছ তো? অনেকদিন দেখি না..."
এক লহমায় চিনতে পেরে গেলাম। এই জ্যেঠু আর জ্যেঠিমা, মানে ওনার স্ত্রী মিলে একটা চপের দোকান মতো চালান...দোকান মানে রাস্তার ধারে বসে। জ্যেঠিমা তৈরি করেন, আর এই জ্যেঠু ভাজেন।
কিন্তু আজ চা নিয়ে?
মুখ ফুটে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। আর তার উত্তরে বিষন্ন ভাবে মাথা নেড়ে বললেন "আজকাল চপের বিক্কিরি নেই মা। সারা সন্ধ্যে বসেও পঞ্চাশ -ষাট টাকার বেশি হয় না, খরচা দিয়ে থুয়ে। তাতে দুজনের খাওয়া, ওষুধ...আর চলে না। পেটের দায় বড় দায়! তাই চা বিক্কিরি করছি। দোকান তো দিতে পারব না, অনেক খরচা! ...এইভাবে ঘুরে ঘুরে বেচি...তোমার জ্যেঠিমা বানিয়ে দেন...সকাল আর বিকেল দু'বেলাতেই বেরোই... বাঁচতে তো হবে...হার তো মানতে পারব না! কিছুতেই না!" বলে একমুখ হেসে, পা টা টানতে টানতে চলে গেলেন উনি।
বাঁচতে হবে!
হার মানতে পারব না।
কিছুতেই না!
কী অপরূপ শব্দবন্ধ, তাই না?
অদ্ভুত এক ক্ষয়াটে সময় আর সমাজের মাঝে দাঁড়িয়ে আমরা। মাঝেমাঝে দিশাহারা হয়ে পড়ি। অবসাদ আর "ভাল্লাগছে না" নিত্যসঙ্গী আমাদের। পালিয়ে যেতেও কি ইচ্ছে করে না, মাঝে মাঝেই!
আর সেই সবকিছুর মাঝে এমনি এক একজন মানুষ সামনে আসেন...একেবারে সেই ছোটবেলায় পড়া রবার্ট ব্রুসের গল্পের মতো করে বুঝিয়ে দেন বুক চিতিয়ে, ফাটিয়ে 'ফাইট' করার নাম ই জীবন!
পর পর দু'কাপ লেবু চা আর ভরে যাওয়া মন - এই তো... এইটুকু ই তো প্রাপ্তি আজ জীবনের কাছে আমার, আজকের জন্য, আগামীর জন্য।
চরৈবতি