13-11-2020, 02:49 PM
বক্ষলগ্না
এই বছরটার সব ই যেন বিচ্ছিরি... কিচ্ছু ভালো হচ্ছে না...দেখতে দেখতে এগারোটা মাস কেটে গেল, তাও... কফির কাপ হাতে জানলা দিয়ে তাকিয়ে ভাবছিল সুমেধা।
রবিবারের সকাল। বেশ সোনাঝরা রোদ্দুর উঠেছে। এইবছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে সুমেধা, তবে কলেজ এখনও শুরু হয়নি, পড়াশুনাও না.. তাই সকাল থেকে রাত অবধি গড়িমসি করে আর ওয়েব সিরিজ দেখেই সময় কেটে যায় ওর। মা অবশ্য রাগ করেন। ওকে বলেন "এই এক হয়েছে মোবাইল... কাল রাত দুটোয় বাথরুমে যাবার জন্য উঠে দেখি মোবাইল খুলে বসে আছিস...চোখের বারোটা না, চোদ্দটা বাজল বলে তোর..."। কখনও আবার বাবাকেই বকে দেন "মেয়ে নতুন মোবাইল চাইল, তো উনি দিয়ে দিলেন। এখন মেয়ের চোখটা যখন গোল্লায় যাবে, বুঝবে!" শুনে বাবা আর ও হাসে। তবে, বাবাও ওকে বারন করেন এত বেশি মোবাইল ঘাঁটতে...। ও রোজই ভাবে, এবার কম ইউজ করবে, একটা অ্যাপ ও ঘটা করে ডাউনলোড করে রেখেছে যেখানে বোঝা যায় সারাদিনে কতক্ষণ মোবাইলে খুটুরখাটুর করছে ও...কিন্তু রোজ ভাবা সত্ত্বেও কোনোদিন ই সাড়ে সাত - আট ঘন্টার নিচে হয়না ব্যবহার। এত ভালো ভালো ওয়েব সিরিজ - সিনেমা - অরিজিনালস আছে যে দেখতে তো হয় ই।
আর, শুধু এসব ই তো নয়...অন্য একটা জিনিস ও আছে...যেটা আজকাল দেখতে খুব ভালো লাগে ওর। আসলে, এর আগে স্মার্টফোন থাকলেও সেটা ফোর জি ছিল না, আর ও সাইটগুলোর নাম ও জানত না। তাই এক দুবার দেখার চেষ্টা করলেও এত বেশি সময় লাগত ভিডিও খুলতে যে ইচ্ছেটাই চলে যেত। কিন্তু এই নতুন মোবাইলে বেশি সমস্যা হয় নি। প্রথম প্রথম কৌতুহল নিয়েই দেখতে শুরু করেছিল, কিন্তু তারপর... নেশা হয়ে গেছিল প্রায়। রোজ রাতেই একটু সময়ের জন্য হলেও একটা না একটা সাইটে যাওয়া চাই ই ওর... আর এভাবেই কিছুদিন ধরে একটা অদ্ভুত চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। একটা অদ্ভুত অনিশ্চয়তা...হীনমন্যতা...ক্লান্তি... অথচ এই কথাটা যে মা কে বা অন্য কাউকে বলবে, সেটাও যে সম্ভব না!
"এই মুনিয়া, আয়, ব্রেকফাস্ট করে নে! উফ, আমার হয়েছে যত জ্বালা! বাবা এই এগারোটার সময় মাটন নিয়ে এলো! কোনো মানে হয়! " টেবিলে খাবার দিয়ে গজগজ করছিলেন মা। এখন না উঠলেই বকা খেতে হবে! ভেবে উঠে এলো সুমেধা। আর টেবিলের কাছে এসেই ভুরুটা কুঁচকে গেল ওর! লুচি! ওফ! কতবার মাকে বলেছে এত তেল ভালো লাগে না ওর। কিন্তু বাবার আবার রবিবার মানেই লুচি বা পরোটা লাগবেই। মা দুজনকে দুরকমের খাবার করে দেবেন না। আর কিছু বললেই বলেন " প্যাঁকাটির মতো চেহারা, হাড় গুলো গোনা যায় পারলে, আর তার কিনা এটা খাব না, ওটা খাব না!"
কথাটা মনে পড়তেই মুখটা ম্লান হয়ে গেল সুমেধার।
প্যাঁকাটি! হ্যাঁ, ভীষণ রোগা ও... আর হয়ত সেইজন্যই...ওর চেহারাটা এত অন্যরকম। এতদিন মনে হয়নি...উলটে স্মল সাইজের জামাকাপড় সুন্দরভাবে ওকে ফিট করে যায় বলে মজা হতো ওর। আর এখন...কষ্ট হয় বড্ড। নিজেকে একদম ভালো লাগে না ওর।
এরকম হলে কি শৌনকের ওকে পছন্দ হবে?
শৌনক ওর ক্লাসমেট, আগে ওরা শুধুই বন্ধু ছিল, মানে এখনও আছে...কিন্তু কলেজের শেষদিনে কেমন একটা মনখারাপ ছিল শৌনকের জন্য। আর যদি না দেখা হয়! আর সেটা ভাবতে গিয়েই চোখে জল এসেছিল ওর। আর...এতগুলো মাস তো দেখা হলোই না... তখন কে ভেবেছিল যে ওদের পরীক্ষা গুলোও সব দিতে পারবে না ওরা...।
তবে ওদের ব্যাচের হোয়াটসএপে দুটো গ্রুপ আছে। একটায় ক্লাসের সবাই, আর একটায় ওরা, যারা বেশি ক্লোজ বন্ধু, তারা। সেখানে শৌনক ও আছে। আর ওরা মাঝেমাঝে নিজেরাও চ্যাট করে। কিন্তু...ক'দিন ধরেই সুমেধার মনে হচ্ছে...ওকে যদি ওর চেহারার জন্য শৌনকের পছন্দ না হয়! ওকে যদি রিজেক্ট করে দেয়...। ভিডিওগুলোর ছেলেদের মতো!
যতবার এটা ভাবে নিজেকে ঘেন্না করতে শুরু করে। কেন ও একটু মোটাসোটা হলো না? তাহলে তো 'বি' না, 'সি' বা 'ডি' হতো ওর সাইজ!
ভাবতে ভাবতেই তারস্বরে 'টুম্পা' গান টা বেজে উঠল। এই গানটা ওর হোয়াটসএপের কলার টিউন। ওখানে আবার কে ফোন করল!
লুচি প্লেটে রেখে উঠতে যাবে, মা ঘর থেকে ওর মোবাইল টা নিয়ে বেরোলেন...টেবিলে রেখে বললেন "কিসব গান... সত্যি!" মায়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের 'কলেজ ফ্রেন্ডস', মানে কয়েকজন বন্ধুর যে গ্রুপ টা আছে, সেখান থেকে গ্রুপ কল।
"বল রে" বলল ও। সাথে সাথেই ঝুমুরের গলা "এই সুমেধা, আজ বিকেলে ফ্রি আছিস? প্লিজ আয় না...আমাদের সল্টলেকের মলটায়? সবাই রাজি...একটু ফুডকোর্টে খেয়ে আর আড্ডা মেরে চলে আসব.."
আড্ডা! কত্তদিন পরে!
খুব মজা হবে!
"কে কে আসবে রে?"
"আমরা সবাই রে গাধী! ঝুমুর বলল না!" সুমনের গলা।
সবাই! তারমানে শৌনক ও থাকবে!
"প্লিজ আয়, এক্ষুণি ঠিক হলো...এটা বেশ আমাদের বিজয়া সন্মিলনী!" কোরকের গলা।
"না রে, আমার আজ বিকেলে হবে না। একজন রিলেটিভ আসবেন। তোরা এঞ্জয় কর!"
"প্লিজ আয় সুমেধা" শৌনকের গলা এটা।
শৌনক!
এবার আর কিছু না বলে ফোন টা কেটে দিল ও।
আর, চোখ ভরে গেল জলে।
ধ্যাত, কতদিন পরে একটু সুযোগ এসেছিল, কিন্তু হলো না...। ওর জন্য... ওর জন্য...
"মুনিয়া কী হয়েছে রে? বন্ধুরা কোথাও দেখা করতে বলছিল? 'না' করে দিলি কেন? যা, ঘুরে আয়, এসে জামাকাপড় ছেড়ে ভালো করে হাত পা ধুয়ে নিবি, মাস্ক পরে যাবি, এক্সট্রা একটা মাস্ক ক্যারি করবি, স্যানিটাইজার নিয়ে যাবি... ব্যাস তাহলেই হলো..." মা বললেন।
মায়ের কথা শুনে চোখের জল গাল বেয়ে নামল ওর।
কিভাবে বোঝায় মা কে, ওর কষ্ট?
"ওসব কারণ না মা...তুমি বুঝবে না.." বলে উঠে গেল ও। ওর প্রিয় আলুর সাদা সাদা তরকারিও এখন বিস্বাদ!
"মুনিয়া, মা, কি হয়েছে, আমাকে বল?" মা একদম ই ছাড়ার পাত্রী না। মাঝে মাঝে মনে হয় অধ্যাপক না হয়ে গোয়েন্দা হলে ভালো হত মায়ের!
জলভরা চোখে মায়ের দিকে ফিরে বুকে মুখ গুঁজে দেয় কাঁদতে কাঁদতে সুমেধা। তারপর বলে "মা, আমি এত বাজে আর বিচ্ছিরি কেন? সব এত ছোট ছোট কেন আমার?"
"ছোট ছোট! মানে!" অবাক হয়ে বলেন মা।
একটু চুপ করে থাকেন। বোধহয় বোঝার চেষ্টা করেন মেয়ে কি বলতে চাইছে। তারপর বলেন "শরীরের গঠন এক একজনের একেকরকম হয় মা! সে যেমনি হোক, আমাদের সেটাকে মেনে নিতে হয়, ভালোবাসতে হয়! আর তোরাই তো বলিস কাউকে রোগা বা মোটা না বলতে, বডি শেমিং না করতে। তাহলে, এইজন্য নিজেকে বাজে আর বিচ্ছিরি ভাবা টা কি? সেটা সেল্ফ শেমিং না...?"
"কিন্তু মা..."
"কোনো কিন্তু নয়, মুনিয়া। এই চিন্তার বা ফোবিয়ার একটা গালভরা নাম আছে - ম্যাস্ট্রোফোবিয়া। তবে, আমার মনে হয়, নিজেকে অ্যাকসেপ্ট করার মতো, নিজেকে নিজের মতো করে ভালোবাসার মতো আর কিচ্ছু হয় না... আর নিজেকে ভালোবাসলে তবেই না অন্যরাও আমাদের ভালোবাসবে?" হাসতে হাসতে, ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন মা।
শুনে একটু হাসে সুমেধা।
সত্যিই তো... ওর প্রিয় গানের মধ্যে একটা 'নিজেকে ভালবাসো তুমি এবার'... আর ও কিনা কিছু বানানো ভিডিও দেখে, হীনমন্যতায় ভুগছিল? নিজেকে, নিজের বাহ্যিক রূপটাকে ঘেন্না করছিল? ধ্যাত!
মনস্থির করে আবার খাবার টেবিলের কাছে চলে এলো সুমেধা। ঝুমুরকে বলে দিতে হবে আসছে ও...
শৌনককে কিচ্ছু বলবে না...
ওটা সারপ্রাইজ থাক বরং...
এই বছরটার সব ই যেন বিচ্ছিরি... কিচ্ছু ভালো হচ্ছে না...দেখতে দেখতে এগারোটা মাস কেটে গেল, তাও... কফির কাপ হাতে জানলা দিয়ে তাকিয়ে ভাবছিল সুমেধা।
রবিবারের সকাল। বেশ সোনাঝরা রোদ্দুর উঠেছে। এইবছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে সুমেধা, তবে কলেজ এখনও শুরু হয়নি, পড়াশুনাও না.. তাই সকাল থেকে রাত অবধি গড়িমসি করে আর ওয়েব সিরিজ দেখেই সময় কেটে যায় ওর। মা অবশ্য রাগ করেন। ওকে বলেন "এই এক হয়েছে মোবাইল... কাল রাত দুটোয় বাথরুমে যাবার জন্য উঠে দেখি মোবাইল খুলে বসে আছিস...চোখের বারোটা না, চোদ্দটা বাজল বলে তোর..."। কখনও আবার বাবাকেই বকে দেন "মেয়ে নতুন মোবাইল চাইল, তো উনি দিয়ে দিলেন। এখন মেয়ের চোখটা যখন গোল্লায় যাবে, বুঝবে!" শুনে বাবা আর ও হাসে। তবে, বাবাও ওকে বারন করেন এত বেশি মোবাইল ঘাঁটতে...। ও রোজই ভাবে, এবার কম ইউজ করবে, একটা অ্যাপ ও ঘটা করে ডাউনলোড করে রেখেছে যেখানে বোঝা যায় সারাদিনে কতক্ষণ মোবাইলে খুটুরখাটুর করছে ও...কিন্তু রোজ ভাবা সত্ত্বেও কোনোদিন ই সাড়ে সাত - আট ঘন্টার নিচে হয়না ব্যবহার। এত ভালো ভালো ওয়েব সিরিজ - সিনেমা - অরিজিনালস আছে যে দেখতে তো হয় ই।
আর, শুধু এসব ই তো নয়...অন্য একটা জিনিস ও আছে...যেটা আজকাল দেখতে খুব ভালো লাগে ওর। আসলে, এর আগে স্মার্টফোন থাকলেও সেটা ফোর জি ছিল না, আর ও সাইটগুলোর নাম ও জানত না। তাই এক দুবার দেখার চেষ্টা করলেও এত বেশি সময় লাগত ভিডিও খুলতে যে ইচ্ছেটাই চলে যেত। কিন্তু এই নতুন মোবাইলে বেশি সমস্যা হয় নি। প্রথম প্রথম কৌতুহল নিয়েই দেখতে শুরু করেছিল, কিন্তু তারপর... নেশা হয়ে গেছিল প্রায়। রোজ রাতেই একটু সময়ের জন্য হলেও একটা না একটা সাইটে যাওয়া চাই ই ওর... আর এভাবেই কিছুদিন ধরে একটা অদ্ভুত চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওকে। একটা অদ্ভুত অনিশ্চয়তা...হীনমন্যতা...ক্লান্তি... অথচ এই কথাটা যে মা কে বা অন্য কাউকে বলবে, সেটাও যে সম্ভব না!
"এই মুনিয়া, আয়, ব্রেকফাস্ট করে নে! উফ, আমার হয়েছে যত জ্বালা! বাবা এই এগারোটার সময় মাটন নিয়ে এলো! কোনো মানে হয়! " টেবিলে খাবার দিয়ে গজগজ করছিলেন মা। এখন না উঠলেই বকা খেতে হবে! ভেবে উঠে এলো সুমেধা। আর টেবিলের কাছে এসেই ভুরুটা কুঁচকে গেল ওর! লুচি! ওফ! কতবার মাকে বলেছে এত তেল ভালো লাগে না ওর। কিন্তু বাবার আবার রবিবার মানেই লুচি বা পরোটা লাগবেই। মা দুজনকে দুরকমের খাবার করে দেবেন না। আর কিছু বললেই বলেন " প্যাঁকাটির মতো চেহারা, হাড় গুলো গোনা যায় পারলে, আর তার কিনা এটা খাব না, ওটা খাব না!"
কথাটা মনে পড়তেই মুখটা ম্লান হয়ে গেল সুমেধার।
প্যাঁকাটি! হ্যাঁ, ভীষণ রোগা ও... আর হয়ত সেইজন্যই...ওর চেহারাটা এত অন্যরকম। এতদিন মনে হয়নি...উলটে স্মল সাইজের জামাকাপড় সুন্দরভাবে ওকে ফিট করে যায় বলে মজা হতো ওর। আর এখন...কষ্ট হয় বড্ড। নিজেকে একদম ভালো লাগে না ওর।
এরকম হলে কি শৌনকের ওকে পছন্দ হবে?
শৌনক ওর ক্লাসমেট, আগে ওরা শুধুই বন্ধু ছিল, মানে এখনও আছে...কিন্তু কলেজের শেষদিনে কেমন একটা মনখারাপ ছিল শৌনকের জন্য। আর যদি না দেখা হয়! আর সেটা ভাবতে গিয়েই চোখে জল এসেছিল ওর। আর...এতগুলো মাস তো দেখা হলোই না... তখন কে ভেবেছিল যে ওদের পরীক্ষা গুলোও সব দিতে পারবে না ওরা...।
তবে ওদের ব্যাচের হোয়াটসএপে দুটো গ্রুপ আছে। একটায় ক্লাসের সবাই, আর একটায় ওরা, যারা বেশি ক্লোজ বন্ধু, তারা। সেখানে শৌনক ও আছে। আর ওরা মাঝেমাঝে নিজেরাও চ্যাট করে। কিন্তু...ক'দিন ধরেই সুমেধার মনে হচ্ছে...ওকে যদি ওর চেহারার জন্য শৌনকের পছন্দ না হয়! ওকে যদি রিজেক্ট করে দেয়...। ভিডিওগুলোর ছেলেদের মতো!
যতবার এটা ভাবে নিজেকে ঘেন্না করতে শুরু করে। কেন ও একটু মোটাসোটা হলো না? তাহলে তো 'বি' না, 'সি' বা 'ডি' হতো ওর সাইজ!
ভাবতে ভাবতেই তারস্বরে 'টুম্পা' গান টা বেজে উঠল। এই গানটা ওর হোয়াটসএপের কলার টিউন। ওখানে আবার কে ফোন করল!
লুচি প্লেটে রেখে উঠতে যাবে, মা ঘর থেকে ওর মোবাইল টা নিয়ে বেরোলেন...টেবিলে রেখে বললেন "কিসব গান... সত্যি!" মায়ের কথা শুনে ফিক করে হেসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওদের 'কলেজ ফ্রেন্ডস', মানে কয়েকজন বন্ধুর যে গ্রুপ টা আছে, সেখান থেকে গ্রুপ কল।
"বল রে" বলল ও। সাথে সাথেই ঝুমুরের গলা "এই সুমেধা, আজ বিকেলে ফ্রি আছিস? প্লিজ আয় না...আমাদের সল্টলেকের মলটায়? সবাই রাজি...একটু ফুডকোর্টে খেয়ে আর আড্ডা মেরে চলে আসব.."
আড্ডা! কত্তদিন পরে!
খুব মজা হবে!
"কে কে আসবে রে?"
"আমরা সবাই রে গাধী! ঝুমুর বলল না!" সুমনের গলা।
সবাই! তারমানে শৌনক ও থাকবে!
"প্লিজ আয়, এক্ষুণি ঠিক হলো...এটা বেশ আমাদের বিজয়া সন্মিলনী!" কোরকের গলা।
"না রে, আমার আজ বিকেলে হবে না। একজন রিলেটিভ আসবেন। তোরা এঞ্জয় কর!"
"প্লিজ আয় সুমেধা" শৌনকের গলা এটা।
শৌনক!
এবার আর কিছু না বলে ফোন টা কেটে দিল ও।
আর, চোখ ভরে গেল জলে।
ধ্যাত, কতদিন পরে একটু সুযোগ এসেছিল, কিন্তু হলো না...। ওর জন্য... ওর জন্য...
"মুনিয়া কী হয়েছে রে? বন্ধুরা কোথাও দেখা করতে বলছিল? 'না' করে দিলি কেন? যা, ঘুরে আয়, এসে জামাকাপড় ছেড়ে ভালো করে হাত পা ধুয়ে নিবি, মাস্ক পরে যাবি, এক্সট্রা একটা মাস্ক ক্যারি করবি, স্যানিটাইজার নিয়ে যাবি... ব্যাস তাহলেই হলো..." মা বললেন।
মায়ের কথা শুনে চোখের জল গাল বেয়ে নামল ওর।
কিভাবে বোঝায় মা কে, ওর কষ্ট?
"ওসব কারণ না মা...তুমি বুঝবে না.." বলে উঠে গেল ও। ওর প্রিয় আলুর সাদা সাদা তরকারিও এখন বিস্বাদ!
"মুনিয়া, মা, কি হয়েছে, আমাকে বল?" মা একদম ই ছাড়ার পাত্রী না। মাঝে মাঝে মনে হয় অধ্যাপক না হয়ে গোয়েন্দা হলে ভালো হত মায়ের!
জলভরা চোখে মায়ের দিকে ফিরে বুকে মুখ গুঁজে দেয় কাঁদতে কাঁদতে সুমেধা। তারপর বলে "মা, আমি এত বাজে আর বিচ্ছিরি কেন? সব এত ছোট ছোট কেন আমার?"
"ছোট ছোট! মানে!" অবাক হয়ে বলেন মা।
একটু চুপ করে থাকেন। বোধহয় বোঝার চেষ্টা করেন মেয়ে কি বলতে চাইছে। তারপর বলেন "শরীরের গঠন এক একজনের একেকরকম হয় মা! সে যেমনি হোক, আমাদের সেটাকে মেনে নিতে হয়, ভালোবাসতে হয়! আর তোরাই তো বলিস কাউকে রোগা বা মোটা না বলতে, বডি শেমিং না করতে। তাহলে, এইজন্য নিজেকে বাজে আর বিচ্ছিরি ভাবা টা কি? সেটা সেল্ফ শেমিং না...?"
"কিন্তু মা..."
"কোনো কিন্তু নয়, মুনিয়া। এই চিন্তার বা ফোবিয়ার একটা গালভরা নাম আছে - ম্যাস্ট্রোফোবিয়া। তবে, আমার মনে হয়, নিজেকে অ্যাকসেপ্ট করার মতো, নিজেকে নিজের মতো করে ভালোবাসার মতো আর কিচ্ছু হয় না... আর নিজেকে ভালোবাসলে তবেই না অন্যরাও আমাদের ভালোবাসবে?" হাসতে হাসতে, ওর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলেন মা।
শুনে একটু হাসে সুমেধা।
সত্যিই তো... ওর প্রিয় গানের মধ্যে একটা 'নিজেকে ভালবাসো তুমি এবার'... আর ও কিনা কিছু বানানো ভিডিও দেখে, হীনমন্যতায় ভুগছিল? নিজেকে, নিজের বাহ্যিক রূপটাকে ঘেন্না করছিল? ধ্যাত!
মনস্থির করে আবার খাবার টেবিলের কাছে চলে এলো সুমেধা। ঝুমুরকে বলে দিতে হবে আসছে ও...
শৌনককে কিচ্ছু বলবে না...
ওটা সারপ্রাইজ থাক বরং...