16-03-2019, 04:41 PM
(This post was last modified: 30-04-2022, 12:29 PM by Uttam4004. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
১
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতেই রীনার মনে হচ্ছিল সোম অপেক্ষা করে আছে নিশ্চই। খাওয়ার পরেই কি সব কাজ শেষ হয়! বাটিতে ভরে খাবারদাবার ফ্রিজে তুলে টেবিল মুছে তারপরে ঘরে আসতে পারল ও।
কম্পিউটারটা অন করেও যেন অপেক্ষার আর শেষ নেই – কতক্ষণ যে বুট হতে সময় নেয়! এবারে ও ছুটির সময়ে বাড়ি এলে একটা ল্যাপটপ কেনাতে হবে ভেবে রেখেছে রীনা। সব সময়ে টেবিল চেয়ারে বসে কম্পিউটার চালাতে ভাল লাগে নাকি! তার ওপরে আদ্দিকালের একটা মেশিন – চালু হতেই কত সময় নিয়ে নেয়।
দেরী হচ্ছে দেখে সোম আবার চলে গেল না তো!
মেশিনটা বুট হতে হতে এই সব ভাবছিল রীনা।
‘যা ভেবেছি। অপেক্ষা করে আছে!!’ ঠোঁট টিপে হেসে নিজের মনেই বলল রীণা।
‘হাই’ লিখতে যাবে, তখনই ডাক এল, ‘বৌমাআআআআ’।
একান্তে, দাঁতটা কিড়মিড় করেই বলল, ‘ধুর বাবা, আবার কী চাই! এই তো সবে এলাম!’
ততক্ষণে সোমও লিখেছে ‘কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি বল তো!’
এমনিতেই দেরী হয়েছে আসতে, তার ওপরে আবার ডাক পড়ল ও ঘর থেকে। রীনার মাথাটা গরম হয়ে গেল।
তবুও বাধ্য হয়েই সাড়া দিতে হল – ‘যাআআআআইই’, আর সোমকে লজ্জার মাথা খেয়ে লিখতে হল ‘এই শোনো, সবে এলাম, আবার মা ডাকছেন। আসছি দুমিনিটে।‘
উত্তর এল চটজলদি, ‘নো প্রবলেম! আমি আছি.. দেখ কেন ডাকছে। নিশ্চই কোনও দরকার।‘
সোমের এই কেয়ারিং ভাবটা বেশ পছন্দ রীনার।
আগেও লক্ষ্য করেছে ব্যাপারটা – বাড়ির কোনও সমস্যা হয়েছে, বা রান্না করতে দেরী হয়েছে – ও সব মন দিয়ে শোনে – সাজেশান দেয়।
শাশুড়ীর ঘরে ঢুকে জিগ্যেস করল, ‘বলুন। কী হল!’
‘আমার দুপুরের ওষুধটা শেষ হয়ে গেছে খেয়াল করি নি তো!’
‘ওহ,’ বলেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এখন কি আর শিবেনের ওষুধের দোকান খোলা পাব! যাচ্ছি। বড় রাস্তা থেকেই নিয়ে আসি। আর কোনও ওষুধ লাগবে? দেখে নিন একবার।‘
মুখটা ভার করে শাশুড়ীর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রীণা।
কম্পিউটারটা অন করাই ছিল।
সোমকে একটা ম্যাসেজ দিয়ে দিল, ‘একটু বেরতে হবে। মায়ের ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। থেকো প্লিজ।‘
ও বোধহয় খেয়াল করল না ম্যাসেজটা।
রীণা নাইটি পড়ে তো আর বাইরে বেরতে পারবে না, তাই আলনা থেকে একটা লেগিংস আর কুর্তি নামিয়ে নিল ঝট করে পড়ে নেওয়ার জন্য।
কী মনে হল, পাশের টেবিলে মোবাইলটা দাড় করিয়ে রেখে চাপ দিল ছোট্ট একটা বোতামে।
দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁটটা হাল্কা করে চেপে ধরেই ঝটপট চেঞ্জ করে নিল পোষাকটা। তারপরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কম্পিউটারের স্ক্রীণটা লক করে বেরোনোর আগে দেখে নিল সোম তখনও ম্যাসেজটা দেখে নি!
‘যাহ বাবা, গেল কোথায়!’ মনে মনে বলল রীণা।
তারপরে শাশড়ীর ঘরে আবার ঢুকে জিগ্যেস করল, ‘আর কোনও ওষুধ লাগবে না তো? আসছি আমি তাহলে।‘
সদর দরজাটা বাইরে থেকেই টেনে লক করে দিয়ে রাস্তায় যখন নামল রীণা, তখন ভর দুপুর।
শ্বশুরবাড়িটা বেশ পুরণো, তাই ঘর থেকে বাইরের রোদটা টের পাওয়া যায় না।
চোখটা ধাঁধিয়ে গেল রীণার অত রোদে। কপাল থেকে সানগ্লাসটা টেনে চোখে নামিয়ে নিয়ে ছাতাটা খুলে রাস্তায় পা দিল।
একটু এগিয়েই একটা ওষুধের দোকান আছে, কিন্তু যা ভেবেছিল, তাই, বন্ধ হয়ে গেছে শিবেনের দোকান। এখন হেঁটে হেঁটে চল বড় রাস্তায়।
২
এই যে ওর হাঁটার সময়ে গোল নিতম্ব দুটোতে সামান্য ঢেউ খেলে যায়, এটা ওকে বেশ প্র্যাকটিস করে পারফেক্ট করতে হয়েছে।
যখন ওর শরীর বেশ প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে, তখনই ওর এক মাসতুতো দিদি – যে সেই বয়সেই বেশ নাম করেছিল পাড়ায় আর কোচিং ক্লাসে, সে-ই একদিন রীণাকে বলেছিল কথাটা।
মাসির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল রীণা পরীক্ষার পরে। দিদির ঘরেই ঘুমোতো – আর দুপুরে আর রাতে বাকিরা ঘুমিয়ে পড়ার পরে চলত ওদের নানা দুষ্টুমির গল্প।
শোয়ার আগে লম্বা একঢাল চুল আঁচড়ানো রীণার অনেকদিনের অভ্যেস। সেদিনও সেটাই করছিল। ওর দিদি বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইলে কারও সঙ্গে এস এম এসে গল্প করছিল।
সেটা হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে চ্যাট করার আগের যুগ। তাই এস এম এসই ছেলেমেয়েদের প্রেম করার নতুন হাতে আসা সুযোগ ছিল সেটা।
আয়না দিয়ে সেটা দেখেই রীণা বুঝেছিল নিশ্চই কোনও ছেলের সঙ্গে লাইন মারছে।
একটা এস এম এস পাঠানোর ফাঁকে ফাঁকে রীণার দিকে তাকাচ্ছিল ওর দিদি অর্চনা।
হঠাৎই তার দিদি বলেছিল, ‘শোন, তোর পেছনটা বেশ গোল গোল। একটু ঠিক মতো হাঁটলে কিন্তু বেশ লাগবে পেছন থেকে। ছেলেরা চোখ ফেরাতে পারবে না।‘
হিহি করে হাসতে হাসতে বলেছিল কথাগুলো অর্চনা।
রীণা হাতে চিরুনিটা ধরে রেখেই ভুরুটা কুঁচকে দিদির দিকে তাকিয়েছিল আয়নার মধ্যে দিয়েই।
‘ইশশ. তোমার মুখে কিছু আটকায় না নাকি গো!’
‘যাহ বাল। তোকে সাজেশান দিতে গেলাম আর আমার মুখ খারাপ হয়ে গেল!’
দিদির এই ছোটখাটো খিস্তিগুলো কিন্তু দিনের অন্য সময়ে শুনতে পাওয়া যায় না। বন্ধুদের সঙ্গে নিশ্চই বলে আর এখন মাসতুতো বোন বাড়িতে থাকায় দুপুরে আর রাতে প্রতিটা কথাতেই দু অক্ষর চার অক্ষর।
‘উফ তুমি যে কী না! ধ্যাত।‘ ছোট্ট জবাব দিয়েছিল রীনা।
‘শোন বাঁড়া। যা গাঁড় না তোর, সত্যি বলছি মাইরি, ছেলে হলে এতক্ষণে দুবার খিঁচে মাল ফেলে দিতাম। একটু খেলিয়ে হাটবি, দেখবি কত ছেলে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে।‘
‘উফফ.. কী যা তা! বাথরুমে পা পিছলোবে কেন ছেলেরা?’ জানতে চাইল রীনা।
‘কিছুই বুঝিস না তুই নাকি ঢ্যামনামি করিস রে? বাথরুমে মাল ফেলে তাতে পা পিছলোবে রে বাল! তবে সত্যি বোন, তুই গাঁড়টা হাল্কা দুলিয়ে হাঁট। দেখিস কী ম্যাজিক হয়। হাট তো দেখি একটু,’ অর্ডার করল দিদি।
দুই বোনের এই সব অসভ্য কথাবার্তা চলছিল রীণার মাসির বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে। সেটাই অর্চনার পড়ার আর শোয়ার ঘর। কলেজে ওঠার পরে যখন থেকে ওর পাখা গজিয়েছে, তখনই বাবা-মাকে ম্যানেজ করে এই ঘরটা দখল করেছিল অর্চনা।
রাতে সেখানে পড়াশোনা কতটা হয় আর এস এম এস বা মোবাইলে প্রেম পিড়িত কতটা হয়, সেটা ওর মোবাইলের কলরেকর্ড দেখলেই বোঝা যায়!
ওই কথাবার্তার মধ্যেই আরও একটা এস এম এস করে আয়নার কাছে যেখানে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছিল রীণা, সেখানে উঠে এল অর্চনা।
রীণার নাইটি ঢাকা পেছনে একটা আলতো করে চাঁটি মেরে ওর মাসতুতো দিদি বলল, ‘চল ছাদে। হাটা প্র্যাকটিস করবি।‘
‘ধুর কী শুরু করলে বলো তো অনুদিদি!’
অর্চনাকে অনুদিদি বলেই ডাকে রীণা।
মুখে হাল্কা আপত্তি করলেও রীণা ভালই জানত যে দিদির কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া কঠিন।
তারপরের বেশ কিছুক্ষণ ছাদের অন্ধকারে পেছনে ঢেউ খেলিয়ে হাটা প্র্যাকটিস চলেছিল দুই বোনের।
তার মধ্যেই কখনও কোমরে, কখনও পেছনে হাত দিয়ে বোনের হাটার স্টাইলটা পারফেক্ট করার চেষ্টা করছিল অর্চনা।
প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি হচ্ছিল পেছনে বার বার দিদির হাতের ছোয়ায়। কিন্তু তারপরে কখন যেন ভাল লাগতে শুরু করেছিল ওর। শরীরটা শিরশির করতে শুরু করেছিল।
সেই শিরশিরানির অন্তিম পর্যায়টা হয়েছিল অর্চনার চিলেকোঠার ঘরের বিছানায় – বড় আলোটা নিবিয়ে দিয়ে হাল্কা একটা সবুজ রাত-বাতির আলোয় – তখন না অর্চনা, না রীণা – কারও গায়েই একটা সুতোও ছিল না।
মাসির বাড়িতে শেখা সেই পেছনে ঢেউ খেলিয়ে হাটাটা ওখান থেকে ফিরে আসার পরেও নিয়মিতই চালু রেখেছিল রীণা।
তা দেখে কত ছেলে বাথরুমে পা পিছলে পড়েছিল, সেটা রীণা জানে না, তবে কলেজের বন্ধুরাও ওর হাটার স্টাইল দেখে হিংসা করছে দেখে বুঝতে পেরেছিল যে অনুদিদির ট্রেনিংটা বিফলে যায় নি।
সেই থেকেই হাঁটার সময়ে কোমরটা সামান্য খেলিয়ে দেয় রীণা।
৩
এই ভরদুপুরে মফস্বল শহরে যদিও ওর সেই দোলা লাগানো হাঁটা দেখার লোক যে বিশেষ থাকবে না রাস্তায়, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, তবুও ওটাই ওর স্টাইল।
তবে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে ওর ওই সামান্য পেছনে ঢেউ তোলা হাটা দেখে মফস্বল শহরটায় ওর বরের বন্ধুরা বা পাড়ার কমবয়সী ছেলেরা যে তাকিয়ে থাকত, সেটা ও নিজের কানেই শুনেছে।
পাড়ার বয়স্ক মহিলারা ওর হাটার স্টাইল দেখে ব্যাপারটা জানিয়েছিলেন ওর শাশুড়িকে। তিনিই বউমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘ওই সব কলকাতার স্টাইল এখানে চলে না বউমা!’
‘কোন স্টাইল মা?’
‘ওই যে ভাবে কোমর দুলিয়ে হাটো তুমি তা পাড়া প্রতিবেশীরা কেউ ভাল চোখে দেখছে না। কয়েকজন বলেওছে আমাকে।‘
‘মানে? আমি আবার স্টাইল করে হাটলাম কবে? আর আমি কীভাবে হাটব, কী পড়ব, সেসবও যদি পাড়া প্রতিবেশীই বলে দেন, তাহলে তো খুব মুশ্কিল।‘
আর কথা না বাড়িয়ে শাশুড়ির সামনে থেকে চলে গিয়েছিল তখনকার মতো।
রাতে বরের কাছে আদর খাওয়ার পরে কথাটা তার কানেও তুলেছিল রীণা।
নতুন বিয়ে করা বউয়ের শরীরটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে রীণার বর বলেছিল, ‘আমার বন্ধু বান্ধবরাও তোমার হাঁটার কথা বলেছে – আমিও লক্ষ্য করেছি – হেব্বি সেক্সি লাগে কিন্তু তোমার হাঁটা.’
বরের বুকে একটা হাল্কা কিল মেরেছিল রীণা।
তার মানে অনুদিদির শেখানো কায়দা এই মফস্বল শহরেও কাজে দিচ্ছে! মনে মনে মিচকি হেসে ভেবেছিল রীণা।
এখন অবশ্য তার ওইসব ভাবনার সময় নেই। যত তাড়াতাড়ি পারে ওষুধটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সোম অপেক্ষা করছে কম্পিউটারের ওপ্রান্তে।
গরমের দুপুরে লেগিংস আর কুর্তি পড়ে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে একটা যুবতী মেয়েকে দেখার মতো বিশেষ কেউ ছিল না তখন বড় রাস্তায়।
ওষুধের দোকানটা খোলাই ছিল। রোদের হাত থেকে বাচার জন্য সামনে একটা অর্দ্ধেক ত্রিপল ফেলা।
ভেতরে ঢুকে রীণা দেখল দোকানের কম বয়সী কর্মচারী ছেলেটা টিভি দেখছে। ওকে চেনে রীণা, পাশের পাড়াতেই থাকে। মাঝে মাঝে ওষুধপত্র দরকার হলে দোকানে ফোন করে দিলে এই ছেলেটাই বাড়িতে দিয়ে যায়। টিঙ্কু বোধহয় নাম ছেলেটার।
ভরদুপুরে ভরন্তযৌবনা বৌদিটিকে দেখে একগাল হেসে সে বলল, “এই রোদে কষ্ট করে এলেন বৌদি। ফোন করে দিলেই পারতেন!”
“ফোনটা নিয়ে বেরই নি রে ভাই। শিবেনের দোকান বন্ধ দেখে এতটা আসতে হল। শাশুড়ির ওষুধ নেই, এই দুপুরে খেয়াল হয়েছে তার,” জবাবটা দিতে দিতে প্রেসক্রিপশানটা ব্যাগ থেকে বার করেই রীণা খেয়াল ওই টিঙ্কু না কি যেন নাম ছেলেটার, তার চোখের দৃষ্টিটা কোন দিকে।
সানগ্লাসের সুবিধা এটাই যে চোখ কোন দিকে ঘুরছে, সেটা অন্য লোকে বুঝতে পারে না কিন্তু অন্যের চোখের দৃষ্টি কোন দিকে, সেটা সহজেই দেখে ফেলা যায়।
কেউ তার বুকের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে, অথচ সে বুঝতে পারছে না যে ধরা পড়ে গেছে – এটা ভেবে মনে মনে সামান্য হাসল রীণা।
অন্যদিন হলে এই দুপুরে একা ছেলেটাকে পেয়ে একটু ফ্লার্ট করতে রীণার মন্দ লাগত না। তবে আজ তাড়া আছে বাড়ি ফেরার।
প্রেসক্রিপশানটা বাড়িয়ে ধরেছে রীণা, এটা কয়েক সেকেন্ড পরে খেয়াল করে ওই টিঙ্কু না কি, সে চটজলদি বলল, ‘দিন বৌদি। কোন ওষুধটা লাগবে!’
রীণা দেখিয়ে দিল আঙ্গুল বাড়িয়ে কোনটা চাই। তারপরে কাউন্টারের ওপরে সামান্য ভর দিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়াল কোমরটা তিরিশ ডিগ্রি মতো বেঁকিয়ে।
টিঙ্কু তাক থেকে ওষুধটা নামিয়ে কোন দিকে তাকাবে, সেটা একেবারে হিসেব কষে ফেলেছে রীণা মুহুর্তের মধ্যে।
অঙ্কে ও চিরকালই কাঁচা ছিল, তাই হায়ার সেকেন্ডারী থেকে আর্টস নিয়েই পড়েছে। তবে এইসব হিসেব কষতে ওর মুহুর্তও দেরী হয় না।
কাউন্টারের ওপরে ঠিক কতটা ঝুঁকলে কুর্তির বুকে কাটা জায়গাটা দিয়ে ঠিক কতটা ক্লিভেজ দেখা দেবে, সেই হিসেবও করে ফেলেছে রীণা।
এই ছোটখাটো উত্তেজনাগুলো ছেলেদের মধ্যে তৈরী করতে ওর ভাল লাগে। বদলে কিছুই চাই না ওর, কিন্তু ওই যে ছেলেগুলোর তাকানো, এটাই উপভোগ করে ও।
তবে ছেলেগুলোকে বুঝতে দেয় না যে অঙ্কের উত্তরটা ওর ভাল করে জানা আছে! তাই এইসব ছোটখাটো উত্তেজনা তৈরী করে ছেলেদের চোখের দিকে তাকাতে পারে না। টিঙ্কুর দিক থেকে অন্যদিকে তাকাতে গিয়ে সামনেই চোখে পড়ল নানা ব্র্যান্ডের কন্ডোম সাজিয়ে রাখা আছে।
কয়েক বছর আগেও ওষুধের দোকানে কন্ডোম এত সাজিয়ে গুজিয়ে রাখা থাকত না। যাদের দরকার তারা দোকানদারের কানের কাছে প্রায় চুপিচুপি ব্র্যান্ডের নামটা বলে দিত। আর দোকানদার অন্য কাস্টমারদের একটু লুকিয়ে টুক করে সেটা কাগজের প্যাকেটে ভরে এগিয়ে দিত।
যেভাবে এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি হয়। ছেলেদের সামনে মেয়েদের ওই অতি প্রয়োজনীয় জিনিষটা লুকিয়ে বিক্রি করার কী আছে, সেটা রীণার মাথায় আসে না।
কন্ডোমের প্যাকেটগুলো দেখতে দেখতে রীণার বুক থেকে একটা গভীর চাপা নিশ্বাস বেরিয়ে এল। মনে মনে ভাবল, কতদিন হয়ে গেল ওই জিনিষটা আর দরকার হয় না ওর। আবার কবে দরকার হবে কে জানে।
টিঙ্কু ওষুধটা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ততক্ষণে।
টাকা মিটিয়ে ওষুধটা ব্যাগে ভরে দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ওই ছেলেটিকে বলল, ‘তোমার নাম তো টিঙ্কু? ফোন নাম্বারটা লিখে দাও তো। দরকার পড়লে দোকানে ফোন না করে তোমাকেই ফোন করে দেব।‘
টিঙ্কু চটজলদি নম্বরটা লিখে দিল একটা টুকরো কাগজে।
আপনার নম্বরটা বলুন, একটা মিসড কল দিয়ে দিচ্ছি। সেভ করে নিতে পারবেন।
রীণা জানে এটা মেয়েদের নম্বর জেনে নেওয়ার চেনা ছক।
ওষুধ এমন একটা জিনিষ যখন তখন দরকার পড়তে পারে। তাই এদের একটু হাতে রাখা ভাল। নিজের নম্বরটা বলল আর পলাশ ওর সামনেই সেটা ডায়াল করে বলল ‘একটা মিসড কল দিয়েছি দেখবেন বাড়ি গিয়ে।‘
‘থ্যাঙ্ক ইউ ভাই। দরকার পড়লে রাতবিরেতেও ফোন করব কিন্তু।‘
‘নিশ্চই বৌদি। যখনই দরকার পড়বে জানাবেন।‘
এর বেশী কিছু বলার সাহস হল না টিঙ্কুর। হাজার হোক পাড়ার টুলুদার বৌ।
বেরনোর জন্য উল্টোদিকে ঘুরেও রীণা বুঝতে পারল টিঙ্কুর দৃষ্টিটা ঠিক কোন দিকে আটকিয়ে আছে। মনে মনে বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ অনুদিদি!’
দিদিটার কথা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল রীণার।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতেই রীনার মনে হচ্ছিল সোম অপেক্ষা করে আছে নিশ্চই। খাওয়ার পরেই কি সব কাজ শেষ হয়! বাটিতে ভরে খাবারদাবার ফ্রিজে তুলে টেবিল মুছে তারপরে ঘরে আসতে পারল ও।
কম্পিউটারটা অন করেও যেন অপেক্ষার আর শেষ নেই – কতক্ষণ যে বুট হতে সময় নেয়! এবারে ও ছুটির সময়ে বাড়ি এলে একটা ল্যাপটপ কেনাতে হবে ভেবে রেখেছে রীনা। সব সময়ে টেবিল চেয়ারে বসে কম্পিউটার চালাতে ভাল লাগে নাকি! তার ওপরে আদ্দিকালের একটা মেশিন – চালু হতেই কত সময় নিয়ে নেয়।
দেরী হচ্ছে দেখে সোম আবার চলে গেল না তো!
মেশিনটা বুট হতে হতে এই সব ভাবছিল রীনা।
‘যা ভেবেছি। অপেক্ষা করে আছে!!’ ঠোঁট টিপে হেসে নিজের মনেই বলল রীণা।
‘হাই’ লিখতে যাবে, তখনই ডাক এল, ‘বৌমাআআআআ’।
একান্তে, দাঁতটা কিড়মিড় করেই বলল, ‘ধুর বাবা, আবার কী চাই! এই তো সবে এলাম!’
ততক্ষণে সোমও লিখেছে ‘কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি বল তো!’
এমনিতেই দেরী হয়েছে আসতে, তার ওপরে আবার ডাক পড়ল ও ঘর থেকে। রীনার মাথাটা গরম হয়ে গেল।
তবুও বাধ্য হয়েই সাড়া দিতে হল – ‘যাআআআআইই’, আর সোমকে লজ্জার মাথা খেয়ে লিখতে হল ‘এই শোনো, সবে এলাম, আবার মা ডাকছেন। আসছি দুমিনিটে।‘
উত্তর এল চটজলদি, ‘নো প্রবলেম! আমি আছি.. দেখ কেন ডাকছে। নিশ্চই কোনও দরকার।‘
সোমের এই কেয়ারিং ভাবটা বেশ পছন্দ রীনার।
আগেও লক্ষ্য করেছে ব্যাপারটা – বাড়ির কোনও সমস্যা হয়েছে, বা রান্না করতে দেরী হয়েছে – ও সব মন দিয়ে শোনে – সাজেশান দেয়।
শাশুড়ীর ঘরে ঢুকে জিগ্যেস করল, ‘বলুন। কী হল!’
‘আমার দুপুরের ওষুধটা শেষ হয়ে গেছে খেয়াল করি নি তো!’
‘ওহ,’ বলেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এখন কি আর শিবেনের ওষুধের দোকান খোলা পাব! যাচ্ছি। বড় রাস্তা থেকেই নিয়ে আসি। আর কোনও ওষুধ লাগবে? দেখে নিন একবার।‘
মুখটা ভার করে শাশুড়ীর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রীণা।
কম্পিউটারটা অন করাই ছিল।
সোমকে একটা ম্যাসেজ দিয়ে দিল, ‘একটু বেরতে হবে। মায়ের ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। থেকো প্লিজ।‘
ও বোধহয় খেয়াল করল না ম্যাসেজটা।
রীণা নাইটি পড়ে তো আর বাইরে বেরতে পারবে না, তাই আলনা থেকে একটা লেগিংস আর কুর্তি নামিয়ে নিল ঝট করে পড়ে নেওয়ার জন্য।
কী মনে হল, পাশের টেবিলে মোবাইলটা দাড় করিয়ে রেখে চাপ দিল ছোট্ট একটা বোতামে।
দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁটটা হাল্কা করে চেপে ধরেই ঝটপট চেঞ্জ করে নিল পোষাকটা। তারপরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কম্পিউটারের স্ক্রীণটা লক করে বেরোনোর আগে দেখে নিল সোম তখনও ম্যাসেজটা দেখে নি!
‘যাহ বাবা, গেল কোথায়!’ মনে মনে বলল রীণা।
তারপরে শাশড়ীর ঘরে আবার ঢুকে জিগ্যেস করল, ‘আর কোনও ওষুধ লাগবে না তো? আসছি আমি তাহলে।‘
সদর দরজাটা বাইরে থেকেই টেনে লক করে দিয়ে রাস্তায় যখন নামল রীণা, তখন ভর দুপুর।
শ্বশুরবাড়িটা বেশ পুরণো, তাই ঘর থেকে বাইরের রোদটা টের পাওয়া যায় না।
চোখটা ধাঁধিয়ে গেল রীণার অত রোদে। কপাল থেকে সানগ্লাসটা টেনে চোখে নামিয়ে নিয়ে ছাতাটা খুলে রাস্তায় পা দিল।
একটু এগিয়েই একটা ওষুধের দোকান আছে, কিন্তু যা ভেবেছিল, তাই, বন্ধ হয়ে গেছে শিবেনের দোকান। এখন হেঁটে হেঁটে চল বড় রাস্তায়।
২
এই যে ওর হাঁটার সময়ে গোল নিতম্ব দুটোতে সামান্য ঢেউ খেলে যায়, এটা ওকে বেশ প্র্যাকটিস করে পারফেক্ট করতে হয়েছে।
যখন ওর শরীর বেশ প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে, তখনই ওর এক মাসতুতো দিদি – যে সেই বয়সেই বেশ নাম করেছিল পাড়ায় আর কোচিং ক্লাসে, সে-ই একদিন রীণাকে বলেছিল কথাটা।
মাসির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল রীণা পরীক্ষার পরে। দিদির ঘরেই ঘুমোতো – আর দুপুরে আর রাতে বাকিরা ঘুমিয়ে পড়ার পরে চলত ওদের নানা দুষ্টুমির গল্প।
শোয়ার আগে লম্বা একঢাল চুল আঁচড়ানো রীণার অনেকদিনের অভ্যেস। সেদিনও সেটাই করছিল। ওর দিদি বিছানায় আধশোয়া হয়ে মোবাইলে কারও সঙ্গে এস এম এসে গল্প করছিল।
সেটা হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক মেসেঞ্জারে চ্যাট করার আগের যুগ। তাই এস এম এসই ছেলেমেয়েদের প্রেম করার নতুন হাতে আসা সুযোগ ছিল সেটা।
আয়না দিয়ে সেটা দেখেই রীণা বুঝেছিল নিশ্চই কোনও ছেলের সঙ্গে লাইন মারছে।
একটা এস এম এস পাঠানোর ফাঁকে ফাঁকে রীণার দিকে তাকাচ্ছিল ওর দিদি অর্চনা।
হঠাৎই তার দিদি বলেছিল, ‘শোন, তোর পেছনটা বেশ গোল গোল। একটু ঠিক মতো হাঁটলে কিন্তু বেশ লাগবে পেছন থেকে। ছেলেরা চোখ ফেরাতে পারবে না।‘
হিহি করে হাসতে হাসতে বলেছিল কথাগুলো অর্চনা।
রীণা হাতে চিরুনিটা ধরে রেখেই ভুরুটা কুঁচকে দিদির দিকে তাকিয়েছিল আয়নার মধ্যে দিয়েই।
‘ইশশ. তোমার মুখে কিছু আটকায় না নাকি গো!’
‘যাহ বাল। তোকে সাজেশান দিতে গেলাম আর আমার মুখ খারাপ হয়ে গেল!’
দিদির এই ছোটখাটো খিস্তিগুলো কিন্তু দিনের অন্য সময়ে শুনতে পাওয়া যায় না। বন্ধুদের সঙ্গে নিশ্চই বলে আর এখন মাসতুতো বোন বাড়িতে থাকায় দুপুরে আর রাতে প্রতিটা কথাতেই দু অক্ষর চার অক্ষর।
‘উফ তুমি যে কী না! ধ্যাত।‘ ছোট্ট জবাব দিয়েছিল রীনা।
‘শোন বাঁড়া। যা গাঁড় না তোর, সত্যি বলছি মাইরি, ছেলে হলে এতক্ষণে দুবার খিঁচে মাল ফেলে দিতাম। একটু খেলিয়ে হাটবি, দেখবি কত ছেলে বাথরুমে পা পিছলে পড়ে।‘
‘উফফ.. কী যা তা! বাথরুমে পা পিছলোবে কেন ছেলেরা?’ জানতে চাইল রীনা।
‘কিছুই বুঝিস না তুই নাকি ঢ্যামনামি করিস রে? বাথরুমে মাল ফেলে তাতে পা পিছলোবে রে বাল! তবে সত্যি বোন, তুই গাঁড়টা হাল্কা দুলিয়ে হাঁট। দেখিস কী ম্যাজিক হয়। হাট তো দেখি একটু,’ অর্ডার করল দিদি।
দুই বোনের এই সব অসভ্য কথাবার্তা চলছিল রীণার মাসির বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে। সেটাই অর্চনার পড়ার আর শোয়ার ঘর। কলেজে ওঠার পরে যখন থেকে ওর পাখা গজিয়েছে, তখনই বাবা-মাকে ম্যানেজ করে এই ঘরটা দখল করেছিল অর্চনা।
রাতে সেখানে পড়াশোনা কতটা হয় আর এস এম এস বা মোবাইলে প্রেম পিড়িত কতটা হয়, সেটা ওর মোবাইলের কলরেকর্ড দেখলেই বোঝা যায়!
ওই কথাবার্তার মধ্যেই আরও একটা এস এম এস করে আয়নার কাছে যেখানে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছিল রীণা, সেখানে উঠে এল অর্চনা।
রীণার নাইটি ঢাকা পেছনে একটা আলতো করে চাঁটি মেরে ওর মাসতুতো দিদি বলল, ‘চল ছাদে। হাটা প্র্যাকটিস করবি।‘
‘ধুর কী শুরু করলে বলো তো অনুদিদি!’
অর্চনাকে অনুদিদি বলেই ডাকে রীণা।
মুখে হাল্কা আপত্তি করলেও রীণা ভালই জানত যে দিদির কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া কঠিন।
তারপরের বেশ কিছুক্ষণ ছাদের অন্ধকারে পেছনে ঢেউ খেলিয়ে হাটা প্র্যাকটিস চলেছিল দুই বোনের।
তার মধ্যেই কখনও কোমরে, কখনও পেছনে হাত দিয়ে বোনের হাটার স্টাইলটা পারফেক্ট করার চেষ্টা করছিল অর্চনা।
প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি হচ্ছিল পেছনে বার বার দিদির হাতের ছোয়ায়। কিন্তু তারপরে কখন যেন ভাল লাগতে শুরু করেছিল ওর। শরীরটা শিরশির করতে শুরু করেছিল।
সেই শিরশিরানির অন্তিম পর্যায়টা হয়েছিল অর্চনার চিলেকোঠার ঘরের বিছানায় – বড় আলোটা নিবিয়ে দিয়ে হাল্কা একটা সবুজ রাত-বাতির আলোয় – তখন না অর্চনা, না রীণা – কারও গায়েই একটা সুতোও ছিল না।
মাসির বাড়িতে শেখা সেই পেছনে ঢেউ খেলিয়ে হাটাটা ওখান থেকে ফিরে আসার পরেও নিয়মিতই চালু রেখেছিল রীণা।
তা দেখে কত ছেলে বাথরুমে পা পিছলে পড়েছিল, সেটা রীণা জানে না, তবে কলেজের বন্ধুরাও ওর হাটার স্টাইল দেখে হিংসা করছে দেখে বুঝতে পেরেছিল যে অনুদিদির ট্রেনিংটা বিফলে যায় নি।
সেই থেকেই হাঁটার সময়ে কোমরটা সামান্য খেলিয়ে দেয় রীণা।
৩
এই ভরদুপুরে মফস্বল শহরে যদিও ওর সেই দোলা লাগানো হাঁটা দেখার লোক যে বিশেষ থাকবে না রাস্তায়, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা, তবুও ওটাই ওর স্টাইল।
তবে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে ওর ওই সামান্য পেছনে ঢেউ তোলা হাটা দেখে মফস্বল শহরটায় ওর বরের বন্ধুরা বা পাড়ার কমবয়সী ছেলেরা যে তাকিয়ে থাকত, সেটা ও নিজের কানেই শুনেছে।
পাড়ার বয়স্ক মহিলারা ওর হাটার স্টাইল দেখে ব্যাপারটা জানিয়েছিলেন ওর শাশুড়িকে। তিনিই বউমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘ওই সব কলকাতার স্টাইল এখানে চলে না বউমা!’
‘কোন স্টাইল মা?’
‘ওই যে ভাবে কোমর দুলিয়ে হাটো তুমি তা পাড়া প্রতিবেশীরা কেউ ভাল চোখে দেখছে না। কয়েকজন বলেওছে আমাকে।‘
‘মানে? আমি আবার স্টাইল করে হাটলাম কবে? আর আমি কীভাবে হাটব, কী পড়ব, সেসবও যদি পাড়া প্রতিবেশীই বলে দেন, তাহলে তো খুব মুশ্কিল।‘
আর কথা না বাড়িয়ে শাশুড়ির সামনে থেকে চলে গিয়েছিল তখনকার মতো।
রাতে বরের কাছে আদর খাওয়ার পরে কথাটা তার কানেও তুলেছিল রীণা।
নতুন বিয়ে করা বউয়ের শরীরটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে রীণার বর বলেছিল, ‘আমার বন্ধু বান্ধবরাও তোমার হাঁটার কথা বলেছে – আমিও লক্ষ্য করেছি – হেব্বি সেক্সি লাগে কিন্তু তোমার হাঁটা.’
বরের বুকে একটা হাল্কা কিল মেরেছিল রীণা।
তার মানে অনুদিদির শেখানো কায়দা এই মফস্বল শহরেও কাজে দিচ্ছে! মনে মনে মিচকি হেসে ভেবেছিল রীণা।
এখন অবশ্য তার ওইসব ভাবনার সময় নেই। যত তাড়াতাড়ি পারে ওষুধটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। সোম অপেক্ষা করছে কম্পিউটারের ওপ্রান্তে।
গরমের দুপুরে লেগিংস আর কুর্তি পড়ে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে একটা যুবতী মেয়েকে দেখার মতো বিশেষ কেউ ছিল না তখন বড় রাস্তায়।
ওষুধের দোকানটা খোলাই ছিল। রোদের হাত থেকে বাচার জন্য সামনে একটা অর্দ্ধেক ত্রিপল ফেলা।
ভেতরে ঢুকে রীণা দেখল দোকানের কম বয়সী কর্মচারী ছেলেটা টিভি দেখছে। ওকে চেনে রীণা, পাশের পাড়াতেই থাকে। মাঝে মাঝে ওষুধপত্র দরকার হলে দোকানে ফোন করে দিলে এই ছেলেটাই বাড়িতে দিয়ে যায়। টিঙ্কু বোধহয় নাম ছেলেটার।
ভরদুপুরে ভরন্তযৌবনা বৌদিটিকে দেখে একগাল হেসে সে বলল, “এই রোদে কষ্ট করে এলেন বৌদি। ফোন করে দিলেই পারতেন!”
“ফোনটা নিয়ে বেরই নি রে ভাই। শিবেনের দোকান বন্ধ দেখে এতটা আসতে হল। শাশুড়ির ওষুধ নেই, এই দুপুরে খেয়াল হয়েছে তার,” জবাবটা দিতে দিতে প্রেসক্রিপশানটা ব্যাগ থেকে বার করেই রীণা খেয়াল ওই টিঙ্কু না কি যেন নাম ছেলেটার, তার চোখের দৃষ্টিটা কোন দিকে।
সানগ্লাসের সুবিধা এটাই যে চোখ কোন দিকে ঘুরছে, সেটা অন্য লোকে বুঝতে পারে না কিন্তু অন্যের চোখের দৃষ্টি কোন দিকে, সেটা সহজেই দেখে ফেলা যায়।
কেউ তার বুকের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে, অথচ সে বুঝতে পারছে না যে ধরা পড়ে গেছে – এটা ভেবে মনে মনে সামান্য হাসল রীণা।
অন্যদিন হলে এই দুপুরে একা ছেলেটাকে পেয়ে একটু ফ্লার্ট করতে রীণার মন্দ লাগত না। তবে আজ তাড়া আছে বাড়ি ফেরার।
প্রেসক্রিপশানটা বাড়িয়ে ধরেছে রীণা, এটা কয়েক সেকেন্ড পরে খেয়াল করে ওই টিঙ্কু না কি, সে চটজলদি বলল, ‘দিন বৌদি। কোন ওষুধটা লাগবে!’
রীণা দেখিয়ে দিল আঙ্গুল বাড়িয়ে কোনটা চাই। তারপরে কাউন্টারের ওপরে সামান্য ভর দিয়ে একটু ঝুঁকে দাঁড়াল কোমরটা তিরিশ ডিগ্রি মতো বেঁকিয়ে।
টিঙ্কু তাক থেকে ওষুধটা নামিয়ে কোন দিকে তাকাবে, সেটা একেবারে হিসেব কষে ফেলেছে রীণা মুহুর্তের মধ্যে।
অঙ্কে ও চিরকালই কাঁচা ছিল, তাই হায়ার সেকেন্ডারী থেকে আর্টস নিয়েই পড়েছে। তবে এইসব হিসেব কষতে ওর মুহুর্তও দেরী হয় না।
কাউন্টারের ওপরে ঠিক কতটা ঝুঁকলে কুর্তির বুকে কাটা জায়গাটা দিয়ে ঠিক কতটা ক্লিভেজ দেখা দেবে, সেই হিসেবও করে ফেলেছে রীণা।
এই ছোটখাটো উত্তেজনাগুলো ছেলেদের মধ্যে তৈরী করতে ওর ভাল লাগে। বদলে কিছুই চাই না ওর, কিন্তু ওই যে ছেলেগুলোর তাকানো, এটাই উপভোগ করে ও।
তবে ছেলেগুলোকে বুঝতে দেয় না যে অঙ্কের উত্তরটা ওর ভাল করে জানা আছে! তাই এইসব ছোটখাটো উত্তেজনা তৈরী করে ছেলেদের চোখের দিকে তাকাতে পারে না। টিঙ্কুর দিক থেকে অন্যদিকে তাকাতে গিয়ে সামনেই চোখে পড়ল নানা ব্র্যান্ডের কন্ডোম সাজিয়ে রাখা আছে।
কয়েক বছর আগেও ওষুধের দোকানে কন্ডোম এত সাজিয়ে গুজিয়ে রাখা থাকত না। যাদের দরকার তারা দোকানদারের কানের কাছে প্রায় চুপিচুপি ব্র্যান্ডের নামটা বলে দিত। আর দোকানদার অন্য কাস্টমারদের একটু লুকিয়ে টুক করে সেটা কাগজের প্যাকেটে ভরে এগিয়ে দিত।
যেভাবে এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি হয়। ছেলেদের সামনে মেয়েদের ওই অতি প্রয়োজনীয় জিনিষটা লুকিয়ে বিক্রি করার কী আছে, সেটা রীণার মাথায় আসে না।
কন্ডোমের প্যাকেটগুলো দেখতে দেখতে রীণার বুক থেকে একটা গভীর চাপা নিশ্বাস বেরিয়ে এল। মনে মনে ভাবল, কতদিন হয়ে গেল ওই জিনিষটা আর দরকার হয় না ওর। আবার কবে দরকার হবে কে জানে।
টিঙ্কু ওষুধটা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ততক্ষণে।
টাকা মিটিয়ে ওষুধটা ব্যাগে ভরে দোকান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ওই ছেলেটিকে বলল, ‘তোমার নাম তো টিঙ্কু? ফোন নাম্বারটা লিখে দাও তো। দরকার পড়লে দোকানে ফোন না করে তোমাকেই ফোন করে দেব।‘
টিঙ্কু চটজলদি নম্বরটা লিখে দিল একটা টুকরো কাগজে।
আপনার নম্বরটা বলুন, একটা মিসড কল দিয়ে দিচ্ছি। সেভ করে নিতে পারবেন।
রীণা জানে এটা মেয়েদের নম্বর জেনে নেওয়ার চেনা ছক।
ওষুধ এমন একটা জিনিষ যখন তখন দরকার পড়তে পারে। তাই এদের একটু হাতে রাখা ভাল। নিজের নম্বরটা বলল আর পলাশ ওর সামনেই সেটা ডায়াল করে বলল ‘একটা মিসড কল দিয়েছি দেখবেন বাড়ি গিয়ে।‘
‘থ্যাঙ্ক ইউ ভাই। দরকার পড়লে রাতবিরেতেও ফোন করব কিন্তু।‘
‘নিশ্চই বৌদি। যখনই দরকার পড়বে জানাবেন।‘
এর বেশী কিছু বলার সাহস হল না টিঙ্কুর। হাজার হোক পাড়ার টুলুদার বৌ।
বেরনোর জন্য উল্টোদিকে ঘুরেও রীণা বুঝতে পারল টিঙ্কুর দৃষ্টিটা ঠিক কোন দিকে আটকিয়ে আছে। মনে মনে বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ অনুদিদি!’
দিদিটার কথা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল রীণার।