16-03-2019, 10:27 AM
১৬
সাইকেলের হ্যান্ডেলটা ধরে গাছের নীচ থেকে বেরনোর মিনিট খানেকের মধ্যেই চুপচুপে ভিজে গেলাম দুজনে। দুজনের শরীর আর মন একটু আগে একবার ঠান্ডা হয়েছে, এবার শরীর আরও ঠান্ডা হল।
এতটাই, যে একটু শীত শীতও করতে লাগল আমার। বুকুন আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে রেখেই হাঁটছে।
জিগ্যেস করলাম, ‘সাইকেলে বসবি?’
‘এই অন্ধকার আর বৃষ্টির মধ্যে সাইকেল চালাতে হবে না তোকে। পড়ে টড়ে যাবি, আমাকেও ফেলবি! হেঁটেই চল।‘
আমার পাশেপাশে হাঁটছিল বুকুন।
একবার বলল, ‘ইশ, যা তা হল বল রবিদা! রাস্তার মধ্যে, গাছের তলায় এইভাবে! হি হি হি।‘
আমি কথা না বলে এক হাতে ওর কাঁধটা জড়িয়ে ধরলাম।
এখনও এই মাঝবয়সী প্রেমিকযুগলকে দেখার কেউ নেই, আমাদের কাউকে লজ্জা পাওয়ারও নেই!
ও আবার বলল, ‘কাল থেকে যখনই ওই রাস্তা দিয়ে যাব আর গাছটা দেখব, তখন আমার কিন্তু লজ্জা করবে খুব!’
খিক খিক করে হাসতে লাগল বুকুন।
টুকটাক কথাবার্তা বলতে বলতে মিনিট কুড়ির মধ্যেই ওদের বাড়ির সামনে পৌঁছিয়ে গেলাম।
ও ঘরে ঢুকে যাওয়ার আগে বললাম, ‘ভাল করে গা মাথা মুছে নিস। আর কাল অর্ণব বাড়ি এলে কোনও সীন ক্রিয়েট করিস না। ও যদি মুখ খোলেও তুই আর কাকি চুপচাপই থাকিস। বেশী কথা এখানে বললে আশপাশের বাড়িতে জানাজানি হবে, আরও কেলো হবে।‘
‘হুম’ বলে বাড়িতে ঢুকে গেল।
বেশী শব্দ না করে তালা খুলে বাড়িতে ঢুকলাম। মা বোধহয় এখনও ঘুমোচ্ছে।
জামাকাপড় ছেড়ে গা, মাথা ভাল করে মুছে শুকনো বারমুডা আর টিশার্ট পড়ে একটা সিগারেট ধরালাম।
তারপর লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে শুলাম একটা পাতলা চাদর টেনে নিয়ে।
ঘুম কিছুতেই আসছে না। পিয়ালী বাড়ি ফিরল কি? না এখনও মদ খাচ্ছে আর বন্ধুদের সাথে উদ্দাম নাচ করছে – না কি আরও বেশী কিছু?
হঠাৎই খেয়াল হল – আজ অর্ণব যেমন তার বন্ধুর বউ আর শালীর সাথে নাচতে নাচতে তাদের গায়ের ওপরেই পড়ে গিয়ে শুয়ে আছে – পিয়ালীর অবস্থা যে সেরকম হয় নি তা গ্যারান্টি আছে কোনও!
কে জানে বউ কার সাথে শুয়েছে – এক না একাধিক!!
পিয়ালী কলকাতার মেয়ে – চিরকালই পার্টি – বন্ধুবান্ধব নিয়ে হুল্লোড় এসব করতে ভালবাসে। সেইসব পার্টিতে মদ তো থাকবেই – আমাদের বাড়িতেও হয় সেইসব পার্টি। আমিও মাঝে মাঝে থাকি। আর বাড়ির বাইরেরগুলো তে ঠিক হয় জানি না, তবে একটা আন্দাজ ছিল।
কলেজ ইউনিভার্সিটিতে তো নাকি গাঁজা টাজাও খেয়েছে বেশ অনেকবার – এসব পিয়ালীর কাছ থেকেই শোনা।
আজকের পার্টিতে কি মদ ছাড়া গাঁজাও ছিল?
পিয়ালী সব কিছু একসাথে খেয়ে সম্পূর্ণ আউট হয়ে যায় নি তো?
একবার মনে হল ধুর, ভেবে কী করব! কিছু তো করা যাবে না এখান থেকে! যা করছে করুক। কিন্তু তারপরেই আবার মনে হল আমি শহরে নেই আর ছেলেকে রাতে একা রেখে দিয়ে (যদিও কাজের মাসি আছে) সে পার্টি করছে সেই কোন বাগানবাড়িতে! সেখানে কি অন্য বন্ধুদের বউরা আছে?
কথাটা খেয়াল হতেই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ওই তমালের ভিডিওটা আবার চালালাম।
নজর করার চেষ্টা করলাম যে অন্য কোনও মেয়েকে দেখা যায় কি না। তবে আধো অন্ধকারে ভাল করে বোঝা গেল না ঘরে বাকি আর কারা আছে, শুধু মনে হল দু একটা মেয়েলী গলা পেলাম। তারা কারা কে জানে!
মোবাইলটা পাশে রেখে চোখ বুজলাম।
সকাল সকাল বাড়িতে ফোন করতে হবে ছেলেকে। আর তারপরে বুকুনকে।
ঘরের লোক ফিরল কী না জানতে হবে!!
--
১৭
চোখ বুজেও অনেকক্ষণ জেগেই ছিলাম।
একদিকে বুকুনের সাথে এতবছর পরে আবারও সম্পর্ক তৈরী হওয়া, অন্য দিকে পিয়ালীর পার্টি করা। একদিকে পুরণো প্রেমিকার ফিরে আসা, অন্য দিকে বিয়ে করা বউ!
হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কখনও একটা চোখের পাতা লেগে এসেছিল।
মোবাইলের আওয়াজে চোখ খুললাম। অনেকক্ষণ আগেই সকাল হয়ে গেছে বুঝলাম।
ঘুমচোখে এদিক ওদিক হাতড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম কলকাতায় আমার বাড়ির নম্বর থেকে ফোন।
কী হল আবার, ভেবেই কলটা রিসিভ করলাম, ওপারে ছেলের গলা।
‘কী গো মা তো এখনও আসে নিইই!!’
‘সে কি, এখনও আসে নি? হুম, দাঁড়া খোঁজ নিচ্ছি। তুই ব্রাশ করে কিছু খেয়ে নে। মাসি আছে তো?’
‘মাকে ফোন করেছি, ধরে নি। মাসি আছে। ব্রাশ করা হয়ে গেছে তো সেই কখওওন.. এত বেলায় কেউ ব্রাশ করে!’
‘ও আমি ঘড়ি দেখি নি বাবু। খেয়েছিস কিছু?’
‘মাসি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।‘
‘আচ্ছা আমি দেখি তোর মা কে!’
ফোনটা ছেড়ে দিয়ে কাল রাতে আসা হোয়াটস অ্যাপ মেসেজগুলো চেক করলাম – একবারেই পেয়ে গেলাম ওই তমালের নম্বর।
রিং করতে গিয়েও ভাবলাম আগে একবার পিয়ালীকেই ট্রাই করি।
রিং হয়ে হয়ে কেটে গেল, কেউ ফোন ধরল না।
তিনবারের পর চেষ্টা করলাম ওই তমালকে ফোন করতে।
সে-ও কি আর ধরবে ফোন!
তবুও খোঁজ নেওয়াটা আমার কর্তব্য।
নাহ। কেউই ফোন ধরছে না।
একটু চিন্তা হচ্ছে এখন – হল কি পিয়ালীর। সারারাত মদ খেয়ে আর হুল্লোড় করে কি অসাড়ে ঘুমোচ্ছে এখনও না কি অন্য কোনও ঝামেলায় পড়ল?
পিয়ালীকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলাম কল মী ব্যাক। বাড়িতেও ফোন কর, ছেলে ভাবছে কেন বাড়ি পৌঁছও নি বলে।
ভুরুটা কুঁচকে ভাবছি আর কোনও ভাবে খবর নেওয়া যায় কী না, পিয়ালীর অন্য বন্ধু-বান্ধবদের কয়েকজনকে চিনি, কিন্তু তাদের নম্বর নেই আমার কাছে!
ছেলেটা একা আছে, তাহলে কি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব কলকাতা? মাকে কী বলব – তার পুত্রবধূ মদ খেয়ে পার্টি করে রাতে তো নয়ই এই এত বেলাতেও বাড়ি ফেরে নি!! তাই কলকাতা ফিরতে হবে!! অসাধারণ।
এমনিতেই মায়ের সাথে পিয়ালীর খুব একটা বনিবনা নেই, তার ওপরে এই খবর দিলে তো হয়েছে!!
তখনই মনে হল একবার বুকুনকেও ফোন করা দরকার – ওর বর বাড়ি ফিরল কী না জানা উচিত।
একবারেই ফোনটা ধরল বুকুন।
‘আমি ভাবলাম সারারাত জেগে হয়তো দেরী করে ঘুম থেকে উঠবি, তাই আর সকালে ফোন করি নি। সে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। মোটামুটি ঠিকঠাক অবস্থায়। লেবু জল চেয়ে খেল। এখন স্নানে ঢুকেছে। আমি আর জিগ্যেস করি নি কোথায় ছিলে রাতে, মা-ও জানতে চায় নি কিছু। অর্ণবও নিজে থেকে কিছু বলে নি,’ ফোনটা ধরেই একটানা কথাগুলো বলে থামল বুকুন।
‘হুম’, বললাম আমি।
বুকুনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘বৌদি বাড়ি ফিরেছে তো সকালে?’
কী আর বলব, ‘না, এখনও না’ বলতে হল।
‘সে কি ! এত বেলাতেও ফেরে নি? ছেলে কার কাছে? বৌদিকে ফোন করেছিলি তুই?’ জানতে চাইল।
‘ছেলে কাজের মাসির কাছে আছে। মা ফেরে নি দেখে সে-ও ফোন করেছিল, আমিও ফোন করেছিলাম। পিয়ালী ফোন ধরছে না। একজন বন্ধু যে ওই পার্টিতে ছিল, সে-ও ফোন তুলল না। বুঝতে পারছি না কতক্ষণ অপেক্ষা করব।‘
‘সে কি রে! তুই চেষ্টা করতে থাক বারে বারে। জানাস কিন্তু কী হল!‘
‘হুম’ বলে ফোন ছেড়ে দিলাম।
আমার গলার আওয়াজ পেয়েই মা চা করেছিল। এতক্ষনে সেটা নিয়ে ঘরের বাইরে থেকে বলল, ‘রবি চা হয়ে গেছে।‘
‘হুম, দাও।‘
মা দেখলাম গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকল। টেবিলে চায়ের কাপটা রেখেই জিগ্যেস করল, ‘পিয়ালী বাড়ি ফেরে নি রাতে?’
চমকে তাকালাম মায়ের দিকে, বুঝে গেলাম বাইরে থেকে বুকুনকে যা বলছিলাম, একতরফা শুনেই বুঝে গেছে!
‘না। ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে একটা গেট টু গেদার ছিল ওদের। ওর বন্ধুরা আমাকে বলেইছিল সকালে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেবে। কিন্তু বেশ বেলা হল, তাই ভাবছিলাম!’
‘ফোনও তো ধরছে না?’
‘সবই তো শুনেছ, আবার আমার মুখ থেকে জানতে চাইছ কেন?’
‘আমি আর জেনে কী করব!’
চলে গেল মা ঘর থেকে।
দরজার কাছে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘বুকুনের বরকে কোথায় পাওয়া গেল কাল?’
‘এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। রাত হয়েছে বলে আর আসে নি। আর ফোনে চার্জ ছিল না।‘
কথা না বাড়িয়ে চায়ের কাপ আর মোবাইলটা আবার হাতে নিলাম। রিং করলাম পিয়ালীকে। প্রথমবার ধরল না।
আরেকটা চুমুক দিয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলাম। যখন মনে হচ্ছিল যে এবারও ধরবে না, তখনই ওপার থেকে এক পুরুষ কন্ঠ এল।
‘হ্যালোওওওও’ কথাটা জড়িয়ে গিয়ে আমি শুনলাম ‘হ্যাওওওওও’
বলেই যেন আবার ঘুমিয়ে পড়বে গলাটা।
তাড়াতাড়ি জিগ্যেস করলাম, ‘পিয়ালী কোথায়?’
‘ওওওরাআআ অন্য ঘরেএএ। ঘুমেএএর দেশে! কে বলছেএএএননন?’
অন্য ঘরে ঘুমের দেশে কথাটা বলে নিজেই বেশ মজা পেল – তাই ওই পুরুষকন্ঠ খ্যাক খ্যাক করে একটু হেসে নিল।
‘পিয়ালীকে ডেকে তুলুন আর ফোনটা দিন ওকে প্লিজ,’ একটু জোর গলায় কথাটা বলাতে কাজ হল বোধহয়।
ওদিকের ওই পুরুষের নেশাটা একটু কাটল বোধহয়।
জিগ্যেস করল, ‘আপনি কে বলছেন?’ এখনও বেশ জড়ানো গলা।
‘আমি ওর হাসব্যান্ড।‘ একটু দাঁত চিপেই বললাম।
‘ও। আচ্ছা ওকে ঘুম থেকে তুলতে পারি কি না দেখি।‘
ফোনটা কানে নিয়েই যে সে অন্য কোনও ঘরের দিকে যাচ্ছে, সেটা টের পেলাম। আবারও জিগ্যেস করলাম, ‘আপনারা এখন কোথায় আছেন?’
‘এই আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে। নিউ টাউনে।‘
‘কাল রাতে আপনাদের পার্টি তো বারাসাতের দিকে কোন বাগানবাড়িতে ছিল!’
‘হ্যা, সেখান থেকে চারটে নাগাদ বেরিয়ে এই তমালের বাড়িতে এসেছিলাম আমরা তিনজন।‘
‘ও আর বাকিরা?’
‘বাকি যে পেরেছে বেরিয়ে গেছে, যে পারে নি, ওখানেই ঘুমোচ্ছে। বোঝেনই তো –গেট টু গেদারে সবাই একটু বেসামাল ছিলাম’।
কথা শেষ হতেই ওই পুরুষকন্ঠ শুনলাম ডাকছে ফিস ফিস করে, ‘এই পিয়ালী.. পিয়ালী.. এএএএএইইই.. ওঠ, তোর বর ফোন করেছে..ওঠঠঠঠঠ।‘
মিনিট খানেকের চেষ্টাতেও আমার বউয়ের যে ঘুম ভাঙ্গল না, সেটা বুঝলাম। তবে তার মধ্যে আরেকটা পুরুষকন্ঠ পেলাম – একটু চাপা স্বরে – কী হয়েছে রে শালা – পিউকে ডাকছিস কেন বাঁড়া!’
প্রথম পুরুষ মুখ থেকে ফোনটা সরিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় পুরুষকে কিছু একটা বলল, বোধহয় জানাল যে পিউয়ের বর ফোন করেছে।
আর কিছু শোনা গেল না, তবে বুঝলাম ফিসফাস চলছে নিউ টাউনের ওই ঘরে।
সেকেন্ড তিরিশেক পরে প্রথম পুরুষকন্ঠ বলল, ‘বস, পিয়ালী তো ঘুমোচ্ছে এখনও। ছোটবেলার বন্ধু হলেও গায়ে হাত দিয়ে ঠেলতেও পারছি না, হেহে হে .. ওঠানোর চেষ্টা করি জল টল ছিটিয়ে। আপনাকে ফোন করাচ্ছি বস। বাই দা ওয়ে আমার নাম সুরজিৎ।‘
‘ও হাই। ঠিক আছে দেখুন কখন ওঠে আপনাদের বন্ধু। আমি রবি।‘
ফোনটা রেখেই দিচ্ছিলাম, সুরজিৎ হঠাৎই বলল, ‘পিয়ালী ঠিক আমার বন্ধু নয়, ও তমালের ক্লাসমেট ছিল। তমাল আর আমি কলিগ। সেই সূত্রে পিয়ালীর সাথে টুকটাক আলাপ। এটা আমারই ফ্ল্যাট আসলে।‘
আমি দেখতে পেলাম না ঠিকই, কিন্তু বুঝলাম আমার ভুঁরুটা কুঁচকে গেছে বেশ!
কলেজের বন্ধুর অফিস কলিগের বাড়িতে মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে বউ! আর পিয়ালী যে ওই তমালের পাশেই শুয়ে আছে, সেটা আর বলে দেওয়ার দরকার নেই।
সুরজিতের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, ‘ও আচ্ছা। উঠলে ফোন করবেন। আর কাইন্ডলি যদি পিয়ালী ওঠা পর্যন্ত ওর ফোনটা আপনার কাছেই রাখেন, দরকারে যাতে ফোন করলে কেউ ধরে ফোনটা।‘
‘নিশ্চই নিশ্চই,’ বলে কলটা কেটে দিল সুরজিৎ।
তমালের নামও শুনি নি, আর তার কলিগ সুরজিতের নামও কখনও শুনি নি পিয়ালীর কাছে!
কিন্তু সুরজিতের কথা শুনে তো মনে হল তমালের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছেই, দেখাটেখাও নিশ্চই হয় – সেই সূত্রেই পিয়ালীর সাথে সুরজিতের আলাপ হয়েছে!
এত স্বল্প পরিচয়ে কারও বাড়িতে রাতে থেকে যাওয়া যায়!!
সিগারেট ধরালাম একটা।
ভাল লাগছে না একদম।
তবুও বাড়িতে ফোন করে ছেলেকে বললাম, যে মা একটু পরে আসবে। কাজের মাসির সাথেও কথা বলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে বললাম, আর আমি যে রাতে বাড়ি পৌঁছিয়ে খাব, সেটাও বুঝিয়ে বলে দিলাম মাসিকে।
ততক্ষণে ঠিক করেই নিয়েছি, যে বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়ব, রাত দশটা নাগাদ পৌঁছে যাব কলকাতা।
আজ দশমী, তাই বিজয়ার প্রণামটা ঝট করে সেরেই বেরিয়ে যাব।
বন্ধুদের বাড়িতে সবাই মিলে ছোটবেলার মতো বিজয়া করতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছিল। সেটাতে আমার থাকা হবে না।
তবে বুকুনদের বাড়িটা ঘুরে যাব।
স্নানে ঢুকলাম।
মা কিছু জলখাবার বানিয়েছিল, খেয়ে নিয়ে একটু ঘুম দিলাম আবার।
মাঝে বেশ কয়েকবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি পিয়ালীকে ফোন করব, কিন্তু তারপরে দেখলাম, ঘুম থেকে উঠলে সুরজিতের কাছে শুনে নিশ্চই ফোন করত। তা যখন করে নি, তার মানে এখনও ঘুমোচ্ছে। শুধু শুধু সুরজিতকে এমব্যারাস করার মানে হয় না।
বুকুনকে শুধু মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছি যে পিয়ালী এক বন্ধুর বাড়িতে রাতে থেকে গেছে।
ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে। দুপুর হয়েছে। মোবাইলটা দেখলাম – নাহ কোনও মিসড কল নেই পিয়ালীর ফোন থেকে।
মাকে বললাম যে বিকেলে বিজয়ার প্রণাম সেরেই বেরিয়ে যাব।
মা আর কিছু জানতে চাইল না।
--
১৮
তমাল ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কফি আর সিগারেট খাচ্ছিল। ঘন্টা দুয়েক আগে একবার কফি খেয়েছে। সেটা সুরজিৎ বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। এবারেরটা ও নিজেই বানিয়েছে। মোবাইলে একটু আগেই সময় দেখেছে প্রায় দুটো বাজে।
ও শুনতে পেল নীচ থেকে মাইকের আওয়াজ। নিউটাউনের ওই হাউসিং কমপ্লেক্সের পুজো প্যান্ডেল থেকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল ‘যারা প্রতিমা বরণ করতে চান, তারা এখনই মন্ডপে চলে আসতে পারেন। বরণের পরে সিঁদুর খেলা চলবে সন্ধ্যে ছটা পর্যন্ত।‘
সুরজিৎ ওর বউ-বাচ্চাদের পিক করবে শ্বশুরবাড়ি থেকে, তাই তমালকে কোনওমতে ঠেলেঠুলে তুলে দিয়ে সে বারোটা নাগাদ বেরিয়ে গেছে।
বলে গেছে বার বার, বিকেলের পরে যেন তমাল আর পিয়ালী ওর ফ্ল্যাটে কোনওমতেই আর না থাকে – ওর বউ বাড়ি ফিরে এসে দেখলে লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে দেবে!
নবমীর রাতে বউ বাচ্চা কেউ বাড়িতে ছিল না বলে তমাল আর পিয়ালীকে ভোর রাতে আসতে দিয়েছে। বারবার করে কথাগুলো বুঝিয়ে দিয়ে গেছে সুরজিৎ।
কফিটা শেষ করে ব্যালকনি থেকে ঘরে এল তমাল।
এখনও শরীর জুড়ে ক্লান্তি। ভাবল আর একটু গড়িয়ে নেওয়া যায়। দুটোর সময়ে ডেকে দেবে পিয়ালীকে। কালকে হুল্লোড়ের রেশ তো ছিলই, তারপরে ভোররাতে সুরজিতের বেডরুমে বেশ কয়েক ঘন্টার শারীরিক পরিশ্রম!
বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা পিয়ালীর দিকে তাকাল তমাল।
মনে মনে বলল, ‘উফফ এই মাঝ তিরিশেও তুই পারিস পিউ!! কী স্ট্যামিনা মাইরি তোর এখনও!!’
পাশে ঘুমিয়ে থাকা কলেজের বান্ধবী – এক সময়ের কিছুদিনের গার্লফ্রেন্ড – বা বলা ভাল শরীরি বন্ধু পিয়ালীর গায়ে একটা পাতলা চাদর রয়েছে, কিন্তু তমাল ভাল করেই জানে পিউর শরীর আর এই চাদরের মাঝে আর কোনও কাপড় নেই! সেটা অবশ্য যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে – চাদরটা তো আর পরিপাটি করে পিয়ালীর গায়ে নেই! আর ঢাকা অংশগুলোর নীচ থেকেই পিয়ালীর শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আভাস ফুটে উঠেছে।
চাদরের ভেতর থেকে ফুটে ওঠা পিয়ালীর শরীরের এক আধটা অঙ্গ আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখছিল তমাল, কখনও আবার দুই আঙ্গুল দিয়ে মুচড়ে দিচ্ছিল পর্বত শিখরের মতো পিয়ালীর শরীরের উঁচু হয়ে থাকা অংশটা।
সামান্য নড়ল পিয়ালী।
তমাল মনেমনে ভাবল এর পর আবার কবে সুযোগ পাওয়া যাবে কে জানে, আরেকবার হবে না কি!
‘এএইইইইই কী দুষ্টুমি করছিসসসসস সকালবেলায় বাবু!’ ঘুম জড়ানো গলায়, চোখ বন্ধ অবস্থাতেই একটু পাশ ফিরতে ফিরতে বলল পিয়ালী।
তমালের আঙ্গুলের ছোঁয়ায় পিয়ালীর ঘুম ভাঙ্গছে!
জবাব না দিয়ে তমালের আঙ্গুল চাদরে ঢাকা বান্ধবীর শরীরের অন্য অংশের খোঁজ শুরু করল।
‘মমমম আর না। অনেক দুষ্টুমি করেছিস রাত থেকে। বাড়ি যেতে হবে তো আমাকে’, চাদরের তলা থেকে দুটো হাত বাড় করে আড়মোড়া ভাঙ্গল পিয়ালী। চাদরটা শুধু ওর বুক অবধি ঢাকা এখন।
‘সকাল? এখন? কটা বাজে বল তো বাবু?’ আদুরে গলায় বলল তমাল।
‘কটা?’
‘দুটো পাঁচ’
তড়াক করে উঠে বসতে গিয়ে গা থেকে চাদরটা খসে গেল পিয়ালীর। সঙ্গে সঙ্গেই সেটা তুলে নিল বুকের ওপরে।
‘কটা বাজে বললি?’
‘দুটো পাঁচ বাজে’।
‘শীট ... শীট...ডাকিস নি কেন আমাকে! ছেলে বাড়িতে একা রয়েছে!!!!!! ’ একটু গলা তুলেই বলতে বলতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল পিয়ালী – চাদরটা বিছানাতেই পড়ে রইল। সেদিকে আর খেয়াল করল না পিয়ালী।
এদিক ওদিক খুঁজে নিয়ে একে একে আন্ডারগার্মেন্টসগুলো পড়তে শুরু করল সমানে চলল তমালকে ইংরেজীতে অ্যারিস্ট্রোক্র্যাটিক গালাগালি।
শাড়িটা পড়তে গিয়েও বলল, ‘ওয়াশরুমটা কোন দিকে যেন?’
তমালও গালাগালির তোড়ে ডিফেন্সলেস হয়ে পড়েছে। তার না হয় সংসার নেই, কিন্তু পিয়ালীর যে সংসার আছে, বাড়িতে ছেলেকে একা রেখে শুধু ওর কথায় রাতভর পার্টি করেছে, তারপরে বন্ধুর ফ্ল্যাটে এসে ওর শরীরের খিদে মিটেয়েছে নানা ভাবে – এসব কথা তমালের মাথায় আসে নি এতক্ষণ!
পিয়ালীর কথার তোড়ে ওরও মনে হয়েছে, আগেই ডেকে তুলে পিয়ালীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া উচিত ছিল ওর।
তমালও পোষাক পড়তে শুরু করেছিল, হাতে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিল।
একবার চোখ তুলে দেখে নিল স্বল্পবসনা এই মাঝবয়সীর হেঁটে যাওয়াটা, কলেজে পড়ার সময়ে দিনরাত যার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত তমাল।
এবার কীভাবে ম্যানেজ করবে ওর বাড়ি, কে জানে, মনে মনে ভাবল তমাল।
কী মনে হতে আদ্ধেক পোষাক পড়েই ও কিচেনে গিয়ে কফির জল চড়িয়ে দিল দুজনের জন্য।
পিয়ালীকে এককাপ কফি করে দেওয়া দরকার।
হঠাৎ আরও দায়িত্বের কথা মনে পড়ল তমালের। বিছানা, ঘর সব পরিষ্কার করে রেখে যেতে হবে, যাতে সুরজিতের বউ বাড়ি ফিরে এসে কিছু বুঝতে না পারে।
ঘরের বড় আলো জ্বালিয়ে চাদরটাদর ভাঁজ করতে করতেই পিয়ালী বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।
তমালের দিকে একটা কড়া দৃষ্টি দিয়ে পেটিকোট, ব্লাউজ – শাড়ি পড়তে লাগল একে একে, সঙ্গে চলল বাক্যবাণ।
‘তোর কথায় আমি পার্টিতে গেলাম ছেলেকে রেখে – সেখানে যা হওয়ার হয়েছে, এখানে আসতে বললি, তা-ও এলাম! তোর এই টুকু সেন্স কাজ করল না যে আমাকে সকালে বাড়ি ফিরতে হবে? আমি ঘুমিয়ে পড়লাম আর তুই বা তোর ওই কলিগ কেউ ডাকলি না! তারপরে আবার গায়ে হাত বোলাচ্ছিলি!! জানোয়ার।‘
তমাল বুঝল এই কথার জবাব দিতে গেলে আরও ক্যাচাল হবে। চেঁচামেচি করতে পারে, পাশের ফ্ল্যাট কারও কানে গেলে বিপদ আছে।
তাই চুপচাপ বিছানাটা ঠিকঠাক করে দিয়ে ভাল করে দেখে নিল, কোথাও কিছু পড়ে আছে কী না – তাদের কয়েকঘন্টা দুষ্টুমির চিহ্ন।
হঠাৎই কী খেয়াল হতে বালিশটা তুলল, নীচ থেকে একটা ছোট্ট কাগজের রঙচঙে মোড়ক বার করে পকেটে ঢোকাতে যাচ্ছিল, কিন্তু পিয়ালীর চোখে পড়ে গেল সেটা!
‘দেখি প্যাকেটটা,’ শাড়ির আঁচলটা ঠিক করতে করতে একটা হাত বাড়াল পিয়ালী।
তমালও বিনাবাক্যব্যয়ে ছোট্ট চৌকো কাগজের প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।
তমাল জানে এরপর কী বড় ঝড় আসতে চলেছে।
ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে এল – ঝড়, আর সাথে পিয়ালী।
‘তিনটেই তো রয়েছে দেখছি প্যাকেটে !! ইউজ করিস নি তুই!!’ বিছানায় ধপ করে বসে পড়া তমালের থুতনিটা বেশ জোরেই তুলে ধরে জিগ্যেস করছে পিয়ালী।
‘না‘
‘মানে? কেনওওও!!!! মুখ তোল, এদিকে তাকিয়ে কথা বল! ইউজ করিস নি মানে কি? ঠিক করে বল স্কাউন্ড্রেল! হোয়্যার ডিড ইউ কাম? কোথায় ফেলেছিস?’
তমাল বলল, ‘আমরা কেউই ভেতরে ফেলি নি!’
‘আমরা কেউ মানে?’ আরও অবাক হয়ে জানতে চাইল পিয়ালী। শাড়ীর আঁচলটা তখনও ঠিকমতো কাঁধে পিন দিয়ে লাগায় নি ও, সেটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
‘দিস ইজ ড্যাম সিরিয়াস তমাল। আর কে জয়েন করেছিল তোর আর আমার সাথে?’
‘সুরজিৎ ছিল তো। তোর মনে নেই কিছুই?’
‘শীট..’ বলে বিছানায় বসে পড়ল পিয়ালী হাতের তালুতে কপালটা নামিয়ে।
মিনিট খানেক পড়ে তমাল পিয়ালীর কাঁধে হাত দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করতেই ফেটে পড়ল পিয়ালী।
এক ঝটকায় কাঁধ থেকে তমালের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বেশ জোর গলায় পিয়ালী বলে উঠল, ‘কী মনে করেছিস তুই? আই অ্যাম আর হোর? হ্যাঁ? আমি মদ খেয়ে আউট হয়ে গেছিলাম আর সেই সুযোগে কলিগের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে তোরা দুজনে মিলে.. ইশ!!!! আমি ভাবতেও পারছি না! ছি!’
‘তুই তো জেগেই ছিলি পিউ। বাধা দিস নি তো আমাদের কাউকে। নিজেই উল্টে বললি সানরাইজ দেখতে দেখতে করব – ব্যালকনিতে নিয়ে গেলি আমাদের দুজনকে! কিছুই মনে পড়ছে না?’
‘মানে? ব্যালকনিতেএএএএ??? কী বলছিস তুই যা তা!!!! হতেই পারে না! এতটা নেশা তো আমার বারাসাত থেকে বেরনোর সময়ে হয় নি! এখানে আসার পরে কী হল সত্যি করে বল তমাল! না হলে কিন্তু তোকে মেরেই ফেলব আমি!’
তমালের গলাটা এক হাতে খামচে ধরল পিয়ালী।
‘তুই এখন ওঠ, বাড়ি চল। গাড়িতে যেতে যেতে কথা বলব। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে!’
তমাল একটু শান্ত করতে চাইল পিয়ালীকে।
কথাটা খেয়াল হল পিয়ালীরও। উঠে শাড়িটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে নিয়ে নিজের মোবাইলটার খোঁজ করল। এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার ফোনটা কোথায়? একটা রিং কর তো!’
‘বোধহয় ড্রয়িং রুমে আছে। সুরজিৎ ফোন ধরেছিল মনে হচ্ছে যেন সকালবেলায় – তোর বর ফোন করেছিল।‘
‘অ্যাঁ!!!! বরের ফোন ধরতে গেল কেন?’
‘আরে কী করে জানবে?
‘গান্ডু নাকি, বরের নাম্বার হাবি বলে সেভ করা আছে, লেখা পড়তে পারে না তোর বন্ধু?’
‘ঘুমের ঘোরে খেয়াল করে নি হয়তো?’
‘কী জানতে চেয়েছিল রবি – তোকে কিছু বলেছে সুরজিৎ?’
‘আমিও তখন ঘুমের ঘোরে ছিলাম। ও ফোনটা ধরে তোকে একবার ডাকতে এসেছিল মনে আছে। কী কথা হয়েছে জানি না।‘
‘আই এম ফাক্ড টুডে। কে যে তোর কথায় পার্টিতে যেতে গেলাম। ইশশ!’
বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল পিয়ালী।
তমাল একবার শেষবারের মতো ঠিক করে ঘরটা দেখে নিল, কোথাও কোনও চিহ্ন রয়ে গেছে কী না ভোররাত থেকে যা যা হয়েছে এই ফ্ল্যাটে – সেসবের। যদিও এই ঘরে বিশেষ কিছু হয় নি – যা হওয়ার সবই ড্রয়িং রুম আর ব্যালকনিতেই হয়েছে। তবুও সাবধানের মার নেই।
তারপর ঘরের দরজা খোলা রেখেই ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়াল। এতক্ষণে খেয়াল হল পিয়ালীর জন্য কফিটা বানানো হয় নি।
‘এক কাপ কফি খাবি তো?’
‘এই ভরদুপুরে কফি! না। বাদ দে। তাড়াতাড়ি বেরো এখন।‘
তমাল কিচেনে গিয়ে গ্যাসে চড়ানো কফির ফুটন্ত জলটা ফেলে দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে জুতো পড়ল।
পিয়ালী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ফোনে মেসেজ বা কিছু চেক করছে।
দরজার বাইরে বেরিয়ে একটু জোরেই টেনে বন্ধ করল তমাল। পাশেই পিয়ালীও ছিল।
দরজা বন্ধ করার শব্দে সুরজিতের ফ্ল্যাটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন এক মধ্য বয়সী দম্পতি। তারা লিফট ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভদ্রমহিলার হাতে প্রতিমা বরণ করার ডালা – সিঁদুর মিষ্টি, পান – এসব। তাঁর ভুরুটা একটু কুঁচকালো, যে দুজন সুরজিৎ দত্তের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এল, তারা অচেনা। স্বামীর মুখের দিকে তাকালেন তিনি একবার, তারপর আবারও দত্তদের ফ্ল্যাট থেকে বেরনো দুজনের দিকে।
মনে মনে ওই ভদ্রমহিলা ভাবলেন সুরজিৎ তো দুপুরে বেরনোর সময়ে বলে গেল শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে বউ বাচ্চাকে আনতে। ওর বউ রুচিকা তো পরশুই বাপের বাড়ি গেছে সন্ধ্যে বেলার কালচারাল প্রোগ্রামের পরে।
তাহলে এরা দুজন কে!!
ততক্ষনে পিয়ালী আর তমালও লিফটের সামনে পৌঁছে গেছে। আর লিফটাও নীচ থেকে এসে দাঁড়িয়েছে আটতলায়।
দরজা খোলার পরে চারজনেই উঠল লিফটে।
ভদ্রলোক এতক্ষণ কোনও কথা বলেন নি, শুধু আড়চোখে তমাল – পিয়ালীকে দেখে গেছেন আর মাঝে মাঝে নিজের বউয়ের সাথে চোখাচুখি হয়েছে উনার।
ভদ্রমহিলার তো পেট ফুলে ঢোল হয়ে উঠছে, কতক্ষনে বরণটা শেষ করেই বাকিদের জানাতে হবে ব্যাপারটা।
কিন্তু নিজের বরের সাথেও একটু আলোচনা করা দরকার। সুরজিৎ আর বউ বাচ্চা কেউ নেই। ওদের ফ্ল্যাট থেকে বেরনো, এখন লিফটে প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়ানো এই দুজন কারা!
--
সাইকেলের হ্যান্ডেলটা ধরে গাছের নীচ থেকে বেরনোর মিনিট খানেকের মধ্যেই চুপচুপে ভিজে গেলাম দুজনে। দুজনের শরীর আর মন একটু আগে একবার ঠান্ডা হয়েছে, এবার শরীর আরও ঠান্ডা হল।
এতটাই, যে একটু শীত শীতও করতে লাগল আমার। বুকুন আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে রেখেই হাঁটছে।
জিগ্যেস করলাম, ‘সাইকেলে বসবি?’
‘এই অন্ধকার আর বৃষ্টির মধ্যে সাইকেল চালাতে হবে না তোকে। পড়ে টড়ে যাবি, আমাকেও ফেলবি! হেঁটেই চল।‘
আমার পাশেপাশে হাঁটছিল বুকুন।
একবার বলল, ‘ইশ, যা তা হল বল রবিদা! রাস্তার মধ্যে, গাছের তলায় এইভাবে! হি হি হি।‘
আমি কথা না বলে এক হাতে ওর কাঁধটা জড়িয়ে ধরলাম।
এখনও এই মাঝবয়সী প্রেমিকযুগলকে দেখার কেউ নেই, আমাদের কাউকে লজ্জা পাওয়ারও নেই!
ও আবার বলল, ‘কাল থেকে যখনই ওই রাস্তা দিয়ে যাব আর গাছটা দেখব, তখন আমার কিন্তু লজ্জা করবে খুব!’
খিক খিক করে হাসতে লাগল বুকুন।
টুকটাক কথাবার্তা বলতে বলতে মিনিট কুড়ির মধ্যেই ওদের বাড়ির সামনে পৌঁছিয়ে গেলাম।
ও ঘরে ঢুকে যাওয়ার আগে বললাম, ‘ভাল করে গা মাথা মুছে নিস। আর কাল অর্ণব বাড়ি এলে কোনও সীন ক্রিয়েট করিস না। ও যদি মুখ খোলেও তুই আর কাকি চুপচাপই থাকিস। বেশী কথা এখানে বললে আশপাশের বাড়িতে জানাজানি হবে, আরও কেলো হবে।‘
‘হুম’ বলে বাড়িতে ঢুকে গেল।
বেশী শব্দ না করে তালা খুলে বাড়িতে ঢুকলাম। মা বোধহয় এখনও ঘুমোচ্ছে।
জামাকাপড় ছেড়ে গা, মাথা ভাল করে মুছে শুকনো বারমুডা আর টিশার্ট পড়ে একটা সিগারেট ধরালাম।
তারপর লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে শুলাম একটা পাতলা চাদর টেনে নিয়ে।
ঘুম কিছুতেই আসছে না। পিয়ালী বাড়ি ফিরল কি? না এখনও মদ খাচ্ছে আর বন্ধুদের সাথে উদ্দাম নাচ করছে – না কি আরও বেশী কিছু?
হঠাৎই খেয়াল হল – আজ অর্ণব যেমন তার বন্ধুর বউ আর শালীর সাথে নাচতে নাচতে তাদের গায়ের ওপরেই পড়ে গিয়ে শুয়ে আছে – পিয়ালীর অবস্থা যে সেরকম হয় নি তা গ্যারান্টি আছে কোনও!
কে জানে বউ কার সাথে শুয়েছে – এক না একাধিক!!
পিয়ালী কলকাতার মেয়ে – চিরকালই পার্টি – বন্ধুবান্ধব নিয়ে হুল্লোড় এসব করতে ভালবাসে। সেইসব পার্টিতে মদ তো থাকবেই – আমাদের বাড়িতেও হয় সেইসব পার্টি। আমিও মাঝে মাঝে থাকি। আর বাড়ির বাইরেরগুলো তে ঠিক হয় জানি না, তবে একটা আন্দাজ ছিল।
কলেজ ইউনিভার্সিটিতে তো নাকি গাঁজা টাজাও খেয়েছে বেশ অনেকবার – এসব পিয়ালীর কাছ থেকেই শোনা।
আজকের পার্টিতে কি মদ ছাড়া গাঁজাও ছিল?
পিয়ালী সব কিছু একসাথে খেয়ে সম্পূর্ণ আউট হয়ে যায় নি তো?
একবার মনে হল ধুর, ভেবে কী করব! কিছু তো করা যাবে না এখান থেকে! যা করছে করুক। কিন্তু তারপরেই আবার মনে হল আমি শহরে নেই আর ছেলেকে রাতে একা রেখে দিয়ে (যদিও কাজের মাসি আছে) সে পার্টি করছে সেই কোন বাগানবাড়িতে! সেখানে কি অন্য বন্ধুদের বউরা আছে?
কথাটা খেয়াল হতেই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ওই তমালের ভিডিওটা আবার চালালাম।
নজর করার চেষ্টা করলাম যে অন্য কোনও মেয়েকে দেখা যায় কি না। তবে আধো অন্ধকারে ভাল করে বোঝা গেল না ঘরে বাকি আর কারা আছে, শুধু মনে হল দু একটা মেয়েলী গলা পেলাম। তারা কারা কে জানে!
মোবাইলটা পাশে রেখে চোখ বুজলাম।
সকাল সকাল বাড়িতে ফোন করতে হবে ছেলেকে। আর তারপরে বুকুনকে।
ঘরের লোক ফিরল কী না জানতে হবে!!
--
১৭
চোখ বুজেও অনেকক্ষণ জেগেই ছিলাম।
একদিকে বুকুনের সাথে এতবছর পরে আবারও সম্পর্ক তৈরী হওয়া, অন্য দিকে পিয়ালীর পার্টি করা। একদিকে পুরণো প্রেমিকার ফিরে আসা, অন্য দিকে বিয়ে করা বউ!
হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে কখনও একটা চোখের পাতা লেগে এসেছিল।
মোবাইলের আওয়াজে চোখ খুললাম। অনেকক্ষণ আগেই সকাল হয়ে গেছে বুঝলাম।
ঘুমচোখে এদিক ওদিক হাতড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম কলকাতায় আমার বাড়ির নম্বর থেকে ফোন।
কী হল আবার, ভেবেই কলটা রিসিভ করলাম, ওপারে ছেলের গলা।
‘কী গো মা তো এখনও আসে নিইই!!’
‘সে কি, এখনও আসে নি? হুম, দাঁড়া খোঁজ নিচ্ছি। তুই ব্রাশ করে কিছু খেয়ে নে। মাসি আছে তো?’
‘মাকে ফোন করেছি, ধরে নি। মাসি আছে। ব্রাশ করা হয়ে গেছে তো সেই কখওওন.. এত বেলায় কেউ ব্রাশ করে!’
‘ও আমি ঘড়ি দেখি নি বাবু। খেয়েছিস কিছু?’
‘মাসি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।‘
‘আচ্ছা আমি দেখি তোর মা কে!’
ফোনটা ছেড়ে দিয়ে কাল রাতে আসা হোয়াটস অ্যাপ মেসেজগুলো চেক করলাম – একবারেই পেয়ে গেলাম ওই তমালের নম্বর।
রিং করতে গিয়েও ভাবলাম আগে একবার পিয়ালীকেই ট্রাই করি।
রিং হয়ে হয়ে কেটে গেল, কেউ ফোন ধরল না।
তিনবারের পর চেষ্টা করলাম ওই তমালকে ফোন করতে।
সে-ও কি আর ধরবে ফোন!
তবুও খোঁজ নেওয়াটা আমার কর্তব্য।
নাহ। কেউই ফোন ধরছে না।
একটু চিন্তা হচ্ছে এখন – হল কি পিয়ালীর। সারারাত মদ খেয়ে আর হুল্লোড় করে কি অসাড়ে ঘুমোচ্ছে এখনও না কি অন্য কোনও ঝামেলায় পড়ল?
পিয়ালীকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলাম কল মী ব্যাক। বাড়িতেও ফোন কর, ছেলে ভাবছে কেন বাড়ি পৌঁছও নি বলে।
ভুরুটা কুঁচকে ভাবছি আর কোনও ভাবে খবর নেওয়া যায় কী না, পিয়ালীর অন্য বন্ধু-বান্ধবদের কয়েকজনকে চিনি, কিন্তু তাদের নম্বর নেই আমার কাছে!
ছেলেটা একা আছে, তাহলে কি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব কলকাতা? মাকে কী বলব – তার পুত্রবধূ মদ খেয়ে পার্টি করে রাতে তো নয়ই এই এত বেলাতেও বাড়ি ফেরে নি!! তাই কলকাতা ফিরতে হবে!! অসাধারণ।
এমনিতেই মায়ের সাথে পিয়ালীর খুব একটা বনিবনা নেই, তার ওপরে এই খবর দিলে তো হয়েছে!!
তখনই মনে হল একবার বুকুনকেও ফোন করা দরকার – ওর বর বাড়ি ফিরল কী না জানা উচিত।
একবারেই ফোনটা ধরল বুকুন।
‘আমি ভাবলাম সারারাত জেগে হয়তো দেরী করে ঘুম থেকে উঠবি, তাই আর সকালে ফোন করি নি। সে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। মোটামুটি ঠিকঠাক অবস্থায়। লেবু জল চেয়ে খেল। এখন স্নানে ঢুকেছে। আমি আর জিগ্যেস করি নি কোথায় ছিলে রাতে, মা-ও জানতে চায় নি কিছু। অর্ণবও নিজে থেকে কিছু বলে নি,’ ফোনটা ধরেই একটানা কথাগুলো বলে থামল বুকুন।
‘হুম’, বললাম আমি।
বুকুনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘বৌদি বাড়ি ফিরেছে তো সকালে?’
কী আর বলব, ‘না, এখনও না’ বলতে হল।
‘সে কি ! এত বেলাতেও ফেরে নি? ছেলে কার কাছে? বৌদিকে ফোন করেছিলি তুই?’ জানতে চাইল।
‘ছেলে কাজের মাসির কাছে আছে। মা ফেরে নি দেখে সে-ও ফোন করেছিল, আমিও ফোন করেছিলাম। পিয়ালী ফোন ধরছে না। একজন বন্ধু যে ওই পার্টিতে ছিল, সে-ও ফোন তুলল না। বুঝতে পারছি না কতক্ষণ অপেক্ষা করব।‘
‘সে কি রে! তুই চেষ্টা করতে থাক বারে বারে। জানাস কিন্তু কী হল!‘
‘হুম’ বলে ফোন ছেড়ে দিলাম।
আমার গলার আওয়াজ পেয়েই মা চা করেছিল। এতক্ষনে সেটা নিয়ে ঘরের বাইরে থেকে বলল, ‘রবি চা হয়ে গেছে।‘
‘হুম, দাও।‘
মা দেখলাম গম্ভীর মুখে ঘরে ঢুকল। টেবিলে চায়ের কাপটা রেখেই জিগ্যেস করল, ‘পিয়ালী বাড়ি ফেরে নি রাতে?’
চমকে তাকালাম মায়ের দিকে, বুঝে গেলাম বাইরে থেকে বুকুনকে যা বলছিলাম, একতরফা শুনেই বুঝে গেছে!
‘না। ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে একটা গেট টু গেদার ছিল ওদের। ওর বন্ধুরা আমাকে বলেইছিল সকালে বাড়ি পৌঁছিয়ে দেবে। কিন্তু বেশ বেলা হল, তাই ভাবছিলাম!’
‘ফোনও তো ধরছে না?’
‘সবই তো শুনেছ, আবার আমার মুখ থেকে জানতে চাইছ কেন?’
‘আমি আর জেনে কী করব!’
চলে গেল মা ঘর থেকে।
দরজার কাছে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘বুকুনের বরকে কোথায় পাওয়া গেল কাল?’
‘এক বন্ধুর বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। রাত হয়েছে বলে আর আসে নি। আর ফোনে চার্জ ছিল না।‘
কথা না বাড়িয়ে চায়ের কাপ আর মোবাইলটা আবার হাতে নিলাম। রিং করলাম পিয়ালীকে। প্রথমবার ধরল না।
আরেকটা চুমুক দিয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলাম। যখন মনে হচ্ছিল যে এবারও ধরবে না, তখনই ওপার থেকে এক পুরুষ কন্ঠ এল।
‘হ্যালোওওওও’ কথাটা জড়িয়ে গিয়ে আমি শুনলাম ‘হ্যাওওওওও’
বলেই যেন আবার ঘুমিয়ে পড়বে গলাটা।
তাড়াতাড়ি জিগ্যেস করলাম, ‘পিয়ালী কোথায়?’
‘ওওওরাআআ অন্য ঘরেএএ। ঘুমেএএর দেশে! কে বলছেএএএননন?’
অন্য ঘরে ঘুমের দেশে কথাটা বলে নিজেই বেশ মজা পেল – তাই ওই পুরুষকন্ঠ খ্যাক খ্যাক করে একটু হেসে নিল।
‘পিয়ালীকে ডেকে তুলুন আর ফোনটা দিন ওকে প্লিজ,’ একটু জোর গলায় কথাটা বলাতে কাজ হল বোধহয়।
ওদিকের ওই পুরুষের নেশাটা একটু কাটল বোধহয়।
জিগ্যেস করল, ‘আপনি কে বলছেন?’ এখনও বেশ জড়ানো গলা।
‘আমি ওর হাসব্যান্ড।‘ একটু দাঁত চিপেই বললাম।
‘ও। আচ্ছা ওকে ঘুম থেকে তুলতে পারি কি না দেখি।‘
ফোনটা কানে নিয়েই যে সে অন্য কোনও ঘরের দিকে যাচ্ছে, সেটা টের পেলাম। আবারও জিগ্যেস করলাম, ‘আপনারা এখন কোথায় আছেন?’
‘এই আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে। নিউ টাউনে।‘
‘কাল রাতে আপনাদের পার্টি তো বারাসাতের দিকে কোন বাগানবাড়িতে ছিল!’
‘হ্যা, সেখান থেকে চারটে নাগাদ বেরিয়ে এই তমালের বাড়িতে এসেছিলাম আমরা তিনজন।‘
‘ও আর বাকিরা?’
‘বাকি যে পেরেছে বেরিয়ে গেছে, যে পারে নি, ওখানেই ঘুমোচ্ছে। বোঝেনই তো –গেট টু গেদারে সবাই একটু বেসামাল ছিলাম’।
কথা শেষ হতেই ওই পুরুষকন্ঠ শুনলাম ডাকছে ফিস ফিস করে, ‘এই পিয়ালী.. পিয়ালী.. এএএএএইইই.. ওঠ, তোর বর ফোন করেছে..ওঠঠঠঠঠ।‘
মিনিট খানেকের চেষ্টাতেও আমার বউয়ের যে ঘুম ভাঙ্গল না, সেটা বুঝলাম। তবে তার মধ্যে আরেকটা পুরুষকন্ঠ পেলাম – একটু চাপা স্বরে – কী হয়েছে রে শালা – পিউকে ডাকছিস কেন বাঁড়া!’
প্রথম পুরুষ মুখ থেকে ফোনটা সরিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় পুরুষকে কিছু একটা বলল, বোধহয় জানাল যে পিউয়ের বর ফোন করেছে।
আর কিছু শোনা গেল না, তবে বুঝলাম ফিসফাস চলছে নিউ টাউনের ওই ঘরে।
সেকেন্ড তিরিশেক পরে প্রথম পুরুষকন্ঠ বলল, ‘বস, পিয়ালী তো ঘুমোচ্ছে এখনও। ছোটবেলার বন্ধু হলেও গায়ে হাত দিয়ে ঠেলতেও পারছি না, হেহে হে .. ওঠানোর চেষ্টা করি জল টল ছিটিয়ে। আপনাকে ফোন করাচ্ছি বস। বাই দা ওয়ে আমার নাম সুরজিৎ।‘
‘ও হাই। ঠিক আছে দেখুন কখন ওঠে আপনাদের বন্ধু। আমি রবি।‘
ফোনটা রেখেই দিচ্ছিলাম, সুরজিৎ হঠাৎই বলল, ‘পিয়ালী ঠিক আমার বন্ধু নয়, ও তমালের ক্লাসমেট ছিল। তমাল আর আমি কলিগ। সেই সূত্রে পিয়ালীর সাথে টুকটাক আলাপ। এটা আমারই ফ্ল্যাট আসলে।‘
আমি দেখতে পেলাম না ঠিকই, কিন্তু বুঝলাম আমার ভুঁরুটা কুঁচকে গেছে বেশ!
কলেজের বন্ধুর অফিস কলিগের বাড়িতে মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে বউ! আর পিয়ালী যে ওই তমালের পাশেই শুয়ে আছে, সেটা আর বলে দেওয়ার দরকার নেই।
সুরজিতের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, ‘ও আচ্ছা। উঠলে ফোন করবেন। আর কাইন্ডলি যদি পিয়ালী ওঠা পর্যন্ত ওর ফোনটা আপনার কাছেই রাখেন, দরকারে যাতে ফোন করলে কেউ ধরে ফোনটা।‘
‘নিশ্চই নিশ্চই,’ বলে কলটা কেটে দিল সুরজিৎ।
তমালের নামও শুনি নি, আর তার কলিগ সুরজিতের নামও কখনও শুনি নি পিয়ালীর কাছে!
কিন্তু সুরজিতের কথা শুনে তো মনে হল তমালের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছেই, দেখাটেখাও নিশ্চই হয় – সেই সূত্রেই পিয়ালীর সাথে সুরজিতের আলাপ হয়েছে!
এত স্বল্প পরিচয়ে কারও বাড়িতে রাতে থেকে যাওয়া যায়!!
সিগারেট ধরালাম একটা।
ভাল লাগছে না একদম।
তবুও বাড়িতে ফোন করে ছেলেকে বললাম, যে মা একটু পরে আসবে। কাজের মাসির সাথেও কথা বলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে বললাম, আর আমি যে রাতে বাড়ি পৌঁছিয়ে খাব, সেটাও বুঝিয়ে বলে দিলাম মাসিকে।
ততক্ষণে ঠিক করেই নিয়েছি, যে বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়ব, রাত দশটা নাগাদ পৌঁছে যাব কলকাতা।
আজ দশমী, তাই বিজয়ার প্রণামটা ঝট করে সেরেই বেরিয়ে যাব।
বন্ধুদের বাড়িতে সবাই মিলে ছোটবেলার মতো বিজয়া করতে যাওয়ার প্ল্যান হয়েছিল। সেটাতে আমার থাকা হবে না।
তবে বুকুনদের বাড়িটা ঘুরে যাব।
স্নানে ঢুকলাম।
মা কিছু জলখাবার বানিয়েছিল, খেয়ে নিয়ে একটু ঘুম দিলাম আবার।
মাঝে বেশ কয়েকবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ভেবেছি পিয়ালীকে ফোন করব, কিন্তু তারপরে দেখলাম, ঘুম থেকে উঠলে সুরজিতের কাছে শুনে নিশ্চই ফোন করত। তা যখন করে নি, তার মানে এখনও ঘুমোচ্ছে। শুধু শুধু সুরজিতকে এমব্যারাস করার মানে হয় না।
বুকুনকে শুধু মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছি যে পিয়ালী এক বন্ধুর বাড়িতে রাতে থেকে গেছে।
ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে। দুপুর হয়েছে। মোবাইলটা দেখলাম – নাহ কোনও মিসড কল নেই পিয়ালীর ফোন থেকে।
মাকে বললাম যে বিকেলে বিজয়ার প্রণাম সেরেই বেরিয়ে যাব।
মা আর কিছু জানতে চাইল না।
--
১৮
তমাল ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কফি আর সিগারেট খাচ্ছিল। ঘন্টা দুয়েক আগে একবার কফি খেয়েছে। সেটা সুরজিৎ বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। এবারেরটা ও নিজেই বানিয়েছে। মোবাইলে একটু আগেই সময় দেখেছে প্রায় দুটো বাজে।
ও শুনতে পেল নীচ থেকে মাইকের আওয়াজ। নিউটাউনের ওই হাউসিং কমপ্লেক্সের পুজো প্যান্ডেল থেকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল ‘যারা প্রতিমা বরণ করতে চান, তারা এখনই মন্ডপে চলে আসতে পারেন। বরণের পরে সিঁদুর খেলা চলবে সন্ধ্যে ছটা পর্যন্ত।‘
সুরজিৎ ওর বউ-বাচ্চাদের পিক করবে শ্বশুরবাড়ি থেকে, তাই তমালকে কোনওমতে ঠেলেঠুলে তুলে দিয়ে সে বারোটা নাগাদ বেরিয়ে গেছে।
বলে গেছে বার বার, বিকেলের পরে যেন তমাল আর পিয়ালী ওর ফ্ল্যাটে কোনওমতেই আর না থাকে – ওর বউ বাড়ি ফিরে এসে দেখলে লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে দেবে!
নবমীর রাতে বউ বাচ্চা কেউ বাড়িতে ছিল না বলে তমাল আর পিয়ালীকে ভোর রাতে আসতে দিয়েছে। বারবার করে কথাগুলো বুঝিয়ে দিয়ে গেছে সুরজিৎ।
কফিটা শেষ করে ব্যালকনি থেকে ঘরে এল তমাল।
এখনও শরীর জুড়ে ক্লান্তি। ভাবল আর একটু গড়িয়ে নেওয়া যায়। দুটোর সময়ে ডেকে দেবে পিয়ালীকে। কালকে হুল্লোড়ের রেশ তো ছিলই, তারপরে ভোররাতে সুরজিতের বেডরুমে বেশ কয়েক ঘন্টার শারীরিক পরিশ্রম!
বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা পিয়ালীর দিকে তাকাল তমাল।
মনে মনে বলল, ‘উফফ এই মাঝ তিরিশেও তুই পারিস পিউ!! কী স্ট্যামিনা মাইরি তোর এখনও!!’
পাশে ঘুমিয়ে থাকা কলেজের বান্ধবী – এক সময়ের কিছুদিনের গার্লফ্রেন্ড – বা বলা ভাল শরীরি বন্ধু পিয়ালীর গায়ে একটা পাতলা চাদর রয়েছে, কিন্তু তমাল ভাল করেই জানে পিউর শরীর আর এই চাদরের মাঝে আর কোনও কাপড় নেই! সেটা অবশ্য যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে – চাদরটা তো আর পরিপাটি করে পিয়ালীর গায়ে নেই! আর ঢাকা অংশগুলোর নীচ থেকেই পিয়ালীর শরীরের নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আভাস ফুটে উঠেছে।
চাদরের ভেতর থেকে ফুটে ওঠা পিয়ালীর শরীরের এক আধটা অঙ্গ আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখছিল তমাল, কখনও আবার দুই আঙ্গুল দিয়ে মুচড়ে দিচ্ছিল পর্বত শিখরের মতো পিয়ালীর শরীরের উঁচু হয়ে থাকা অংশটা।
সামান্য নড়ল পিয়ালী।
তমাল মনেমনে ভাবল এর পর আবার কবে সুযোগ পাওয়া যাবে কে জানে, আরেকবার হবে না কি!
‘এএইইইইই কী দুষ্টুমি করছিসসসসস সকালবেলায় বাবু!’ ঘুম জড়ানো গলায়, চোখ বন্ধ অবস্থাতেই একটু পাশ ফিরতে ফিরতে বলল পিয়ালী।
তমালের আঙ্গুলের ছোঁয়ায় পিয়ালীর ঘুম ভাঙ্গছে!
জবাব না দিয়ে তমালের আঙ্গুল চাদরে ঢাকা বান্ধবীর শরীরের অন্য অংশের খোঁজ শুরু করল।
‘মমমম আর না। অনেক দুষ্টুমি করেছিস রাত থেকে। বাড়ি যেতে হবে তো আমাকে’, চাদরের তলা থেকে দুটো হাত বাড় করে আড়মোড়া ভাঙ্গল পিয়ালী। চাদরটা শুধু ওর বুক অবধি ঢাকা এখন।
‘সকাল? এখন? কটা বাজে বল তো বাবু?’ আদুরে গলায় বলল তমাল।
‘কটা?’
‘দুটো পাঁচ’
তড়াক করে উঠে বসতে গিয়ে গা থেকে চাদরটা খসে গেল পিয়ালীর। সঙ্গে সঙ্গেই সেটা তুলে নিল বুকের ওপরে।
‘কটা বাজে বললি?’
‘দুটো পাঁচ বাজে’।
‘শীট ... শীট...ডাকিস নি কেন আমাকে! ছেলে বাড়িতে একা রয়েছে!!!!!! ’ একটু গলা তুলেই বলতে বলতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল পিয়ালী – চাদরটা বিছানাতেই পড়ে রইল। সেদিকে আর খেয়াল করল না পিয়ালী।
এদিক ওদিক খুঁজে নিয়ে একে একে আন্ডারগার্মেন্টসগুলো পড়তে শুরু করল সমানে চলল তমালকে ইংরেজীতে অ্যারিস্ট্রোক্র্যাটিক গালাগালি।
শাড়িটা পড়তে গিয়েও বলল, ‘ওয়াশরুমটা কোন দিকে যেন?’
তমালও গালাগালির তোড়ে ডিফেন্সলেস হয়ে পড়েছে। তার না হয় সংসার নেই, কিন্তু পিয়ালীর যে সংসার আছে, বাড়িতে ছেলেকে একা রেখে শুধু ওর কথায় রাতভর পার্টি করেছে, তারপরে বন্ধুর ফ্ল্যাটে এসে ওর শরীরের খিদে মিটেয়েছে নানা ভাবে – এসব কথা তমালের মাথায় আসে নি এতক্ষণ!
পিয়ালীর কথার তোড়ে ওরও মনে হয়েছে, আগেই ডেকে তুলে পিয়ালীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া উচিত ছিল ওর।
তমালও পোষাক পড়তে শুরু করেছিল, হাতে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিল।
একবার চোখ তুলে দেখে নিল স্বল্পবসনা এই মাঝবয়সীর হেঁটে যাওয়াটা, কলেজে পড়ার সময়ে দিনরাত যার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত তমাল।
এবার কীভাবে ম্যানেজ করবে ওর বাড়ি, কে জানে, মনে মনে ভাবল তমাল।
কী মনে হতে আদ্ধেক পোষাক পড়েই ও কিচেনে গিয়ে কফির জল চড়িয়ে দিল দুজনের জন্য।
পিয়ালীকে এককাপ কফি করে দেওয়া দরকার।
হঠাৎ আরও দায়িত্বের কথা মনে পড়ল তমালের। বিছানা, ঘর সব পরিষ্কার করে রেখে যেতে হবে, যাতে সুরজিতের বউ বাড়ি ফিরে এসে কিছু বুঝতে না পারে।
ঘরের বড় আলো জ্বালিয়ে চাদরটাদর ভাঁজ করতে করতেই পিয়ালী বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।
তমালের দিকে একটা কড়া দৃষ্টি দিয়ে পেটিকোট, ব্লাউজ – শাড়ি পড়তে লাগল একে একে, সঙ্গে চলল বাক্যবাণ।
‘তোর কথায় আমি পার্টিতে গেলাম ছেলেকে রেখে – সেখানে যা হওয়ার হয়েছে, এখানে আসতে বললি, তা-ও এলাম! তোর এই টুকু সেন্স কাজ করল না যে আমাকে সকালে বাড়ি ফিরতে হবে? আমি ঘুমিয়ে পড়লাম আর তুই বা তোর ওই কলিগ কেউ ডাকলি না! তারপরে আবার গায়ে হাত বোলাচ্ছিলি!! জানোয়ার।‘
তমাল বুঝল এই কথার জবাব দিতে গেলে আরও ক্যাচাল হবে। চেঁচামেচি করতে পারে, পাশের ফ্ল্যাট কারও কানে গেলে বিপদ আছে।
তাই চুপচাপ বিছানাটা ঠিকঠাক করে দিয়ে ভাল করে দেখে নিল, কোথাও কিছু পড়ে আছে কী না – তাদের কয়েকঘন্টা দুষ্টুমির চিহ্ন।
হঠাৎই কী খেয়াল হতে বালিশটা তুলল, নীচ থেকে একটা ছোট্ট কাগজের রঙচঙে মোড়ক বার করে পকেটে ঢোকাতে যাচ্ছিল, কিন্তু পিয়ালীর চোখে পড়ে গেল সেটা!
‘দেখি প্যাকেটটা,’ শাড়ির আঁচলটা ঠিক করতে করতে একটা হাত বাড়াল পিয়ালী।
তমালও বিনাবাক্যব্যয়ে ছোট্ট চৌকো কাগজের প্যাকেটটা এগিয়ে দিল।
তমাল জানে এরপর কী বড় ঝড় আসতে চলেছে।
ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে এল – ঝড়, আর সাথে পিয়ালী।
‘তিনটেই তো রয়েছে দেখছি প্যাকেটে !! ইউজ করিস নি তুই!!’ বিছানায় ধপ করে বসে পড়া তমালের থুতনিটা বেশ জোরেই তুলে ধরে জিগ্যেস করছে পিয়ালী।
‘না‘
‘মানে? কেনওওও!!!! মুখ তোল, এদিকে তাকিয়ে কথা বল! ইউজ করিস নি মানে কি? ঠিক করে বল স্কাউন্ড্রেল! হোয়্যার ডিড ইউ কাম? কোথায় ফেলেছিস?’
তমাল বলল, ‘আমরা কেউই ভেতরে ফেলি নি!’
‘আমরা কেউ মানে?’ আরও অবাক হয়ে জানতে চাইল পিয়ালী। শাড়ীর আঁচলটা তখনও ঠিকমতো কাঁধে পিন দিয়ে লাগায় নি ও, সেটা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
‘দিস ইজ ড্যাম সিরিয়াস তমাল। আর কে জয়েন করেছিল তোর আর আমার সাথে?’
‘সুরজিৎ ছিল তো। তোর মনে নেই কিছুই?’
‘শীট..’ বলে বিছানায় বসে পড়ল পিয়ালী হাতের তালুতে কপালটা নামিয়ে।
মিনিট খানেক পড়ে তমাল পিয়ালীর কাঁধে হাত দিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করতেই ফেটে পড়ল পিয়ালী।
এক ঝটকায় কাঁধ থেকে তমালের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বেশ জোর গলায় পিয়ালী বলে উঠল, ‘কী মনে করেছিস তুই? আই অ্যাম আর হোর? হ্যাঁ? আমি মদ খেয়ে আউট হয়ে গেছিলাম আর সেই সুযোগে কলিগের ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে তোরা দুজনে মিলে.. ইশ!!!! আমি ভাবতেও পারছি না! ছি!’
‘তুই তো জেগেই ছিলি পিউ। বাধা দিস নি তো আমাদের কাউকে। নিজেই উল্টে বললি সানরাইজ দেখতে দেখতে করব – ব্যালকনিতে নিয়ে গেলি আমাদের দুজনকে! কিছুই মনে পড়ছে না?’
‘মানে? ব্যালকনিতেএএএএ??? কী বলছিস তুই যা তা!!!! হতেই পারে না! এতটা নেশা তো আমার বারাসাত থেকে বেরনোর সময়ে হয় নি! এখানে আসার পরে কী হল সত্যি করে বল তমাল! না হলে কিন্তু তোকে মেরেই ফেলব আমি!’
তমালের গলাটা এক হাতে খামচে ধরল পিয়ালী।
‘তুই এখন ওঠ, বাড়ি চল। গাড়িতে যেতে যেতে কথা বলব। এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে!’
তমাল একটু শান্ত করতে চাইল পিয়ালীকে।
কথাটা খেয়াল হল পিয়ালীরও। উঠে শাড়িটা তাড়াতাড়ি ঠিক করে নিয়ে নিজের মোবাইলটার খোঁজ করল। এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার ফোনটা কোথায়? একটা রিং কর তো!’
‘বোধহয় ড্রয়িং রুমে আছে। সুরজিৎ ফোন ধরেছিল মনে হচ্ছে যেন সকালবেলায় – তোর বর ফোন করেছিল।‘
‘অ্যাঁ!!!! বরের ফোন ধরতে গেল কেন?’
‘আরে কী করে জানবে?
‘গান্ডু নাকি, বরের নাম্বার হাবি বলে সেভ করা আছে, লেখা পড়তে পারে না তোর বন্ধু?’
‘ঘুমের ঘোরে খেয়াল করে নি হয়তো?’
‘কী জানতে চেয়েছিল রবি – তোকে কিছু বলেছে সুরজিৎ?’
‘আমিও তখন ঘুমের ঘোরে ছিলাম। ও ফোনটা ধরে তোকে একবার ডাকতে এসেছিল মনে আছে। কী কথা হয়েছে জানি না।‘
‘আই এম ফাক্ড টুডে। কে যে তোর কথায় পার্টিতে যেতে গেলাম। ইশশ!’
বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল পিয়ালী।
তমাল একবার শেষবারের মতো ঠিক করে ঘরটা দেখে নিল, কোথাও কোনও চিহ্ন রয়ে গেছে কী না ভোররাত থেকে যা যা হয়েছে এই ফ্ল্যাটে – সেসবের। যদিও এই ঘরে বিশেষ কিছু হয় নি – যা হওয়ার সবই ড্রয়িং রুম আর ব্যালকনিতেই হয়েছে। তবুও সাবধানের মার নেই।
তারপর ঘরের দরজা খোলা রেখেই ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়াল। এতক্ষণে খেয়াল হল পিয়ালীর জন্য কফিটা বানানো হয় নি।
‘এক কাপ কফি খাবি তো?’
‘এই ভরদুপুরে কফি! না। বাদ দে। তাড়াতাড়ি বেরো এখন।‘
তমাল কিচেনে গিয়ে গ্যাসে চড়ানো কফির ফুটন্ত জলটা ফেলে দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে জুতো পড়ল।
পিয়ালী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ফোনে মেসেজ বা কিছু চেক করছে।
দরজার বাইরে বেরিয়ে একটু জোরেই টেনে বন্ধ করল তমাল। পাশেই পিয়ালীও ছিল।
দরজা বন্ধ করার শব্দে সুরজিতের ফ্ল্যাটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন এক মধ্য বয়সী দম্পতি। তারা লিফট ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভদ্রমহিলার হাতে প্রতিমা বরণ করার ডালা – সিঁদুর মিষ্টি, পান – এসব। তাঁর ভুরুটা একটু কুঁচকালো, যে দুজন সুরজিৎ দত্তের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এল, তারা অচেনা। স্বামীর মুখের দিকে তাকালেন তিনি একবার, তারপর আবারও দত্তদের ফ্ল্যাট থেকে বেরনো দুজনের দিকে।
মনে মনে ওই ভদ্রমহিলা ভাবলেন সুরজিৎ তো দুপুরে বেরনোর সময়ে বলে গেল শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে বউ বাচ্চাকে আনতে। ওর বউ রুচিকা তো পরশুই বাপের বাড়ি গেছে সন্ধ্যে বেলার কালচারাল প্রোগ্রামের পরে।
তাহলে এরা দুজন কে!!
ততক্ষনে পিয়ালী আর তমালও লিফটের সামনে পৌঁছে গেছে। আর লিফটাও নীচ থেকে এসে দাঁড়িয়েছে আটতলায়।
দরজা খোলার পরে চারজনেই উঠল লিফটে।
ভদ্রলোক এতক্ষণ কোনও কথা বলেন নি, শুধু আড়চোখে তমাল – পিয়ালীকে দেখে গেছেন আর মাঝে মাঝে নিজের বউয়ের সাথে চোখাচুখি হয়েছে উনার।
ভদ্রমহিলার তো পেট ফুলে ঢোল হয়ে উঠছে, কতক্ষনে বরণটা শেষ করেই বাকিদের জানাতে হবে ব্যাপারটা।
কিন্তু নিজের বরের সাথেও একটু আলোচনা করা দরকার। সুরজিৎ আর বউ বাচ্চা কেউ নেই। ওদের ফ্ল্যাট থেকে বেরনো, এখন লিফটে প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়ানো এই দুজন কারা!
--