16-03-2019, 10:24 AM
-- ৮ --
সিগারেটের ছাইটা জানলা দিয়ে বাইরে ঝেড়ে ফেললাম। হাতে মোবাইলটা তুলে নিয়ে মেল আর হোয়াটস্ অ্যাপ মেসেজগুলো দেখতে শুরু করলাম – যেন সেই দুপুরের কথাটা ভুলে যাওয়ার জন্য নিজের সঙ্গেই লড়াই করা।
কিন্তু পারলাম কই! মেইল চেক করা শেষ করে যেই হোয়াটস্ অ্যাপে ঢুকেছি, তখনই বুকুনের কাল রাতের মেসেজগুলোর দিকে চোখ গেল। আর নিজের অজান্তেই ওর ডিসপ্লে প্রোফাইলের ওপরে আঙ্গুলটা গিয়ে পড়ল – ওর ছবিটা একটু বড় হয়ে ভেসে উঠল আমার স্ক্রীনে – একই সঙ্গে আমার মনেও!
মা না থাকার সুযোগ আমরা দুজনেই সেদিন নিয়েছিলাম – যার জন্য অনেক লুকোচুরি করে বিলের মাঠে যেতে হত! তাও বেশী কিছু করতে পারতাম না, কে না কে এসে পড়ে – এই ভেবে! তার ওপরে বুকুনের দিক থেকে তো একটা গন্ডি টানাই ছিল যে কতদূর আমি যেতে পারি, তার নিশানা করার গন্ডি!
কিন্তু হঠাৎ করেই ভরদুপুরে মা পাশের বাড়িতে গল্প করতে চলে যাওয়ায় ও নিজেই সেই গন্ডিটা ভাঙ্গতে শুরু করেছিল প্রথম থেকে।
আমি একবার জিগ্যেস করেছিলাম, ‘দরজাটা বন্ধ করে এসেছিস তো রে?’
ও আমার মুখটা নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে ছোট্ট স্বরে বলেছিল, ‘হুম’
তারপরে যা যা ঘটেছিল, তার জন্য আমরা দুজনের কেউ আগে থেকে তৈরী ছিলাম না। দুজনের কাছেই সেটা ছিল অজানাকে জানতে চাওয়া, দেখতে চাওয়া, পরখ করতে চাওয়ার প্রথম চেষ্টা। এত বছরের চেনা শরীরটাকে নতুন ভাবে চেনার অদম্য আকর্ষণ!
ও আমার পেছন থেকে সামনে এসে কোলে বসে পড়েছিল – এই চেয়ারটাতেই বসেছিলাম আমি তখনও।
তারপরে যখন ওকে নিয়ে গিয়ে আলতো করে শুইয়ে দিয়েছিলাম বিছানায় আর বুকুনের শরীরের একেকটা পরত খুলছিল আমার চোখের সামনে আর আমার চোখদুটো যেন আরও ঠেলে বেরচ্ছিল বিস্ময়ে।
ও বলেছিল, ‘অ্যাই রবিদা, কী দেখছিস ওরকম করে? লজ্জা করছে, ধ্যাত শয়তান!’
মুখে শয়তান বললেও সেই শয়তানটাকেই আরও জোরে আঁকড়ে ধরছিল ও সেই দুপুরে। দুজনে দুজনকে অনেকক্ষণ ধরে পরখ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেদিন।
কিন্তু সুযোগের পূর্ণ সদ্বব্যবহার করে উঠতে পারি নি আমরা কেউই।
আমার যেন সেদিন ট্রেন ধরার ছিল – এত তাড়াতাড়ি করেছিলাম সেদিন আমি! তাই আগেভাগেই আমি নিসৃত হয়েছিলাম – শেষ বাধা আর পেরতে পারি নি সেদিন!
হাপাতে হাপাতে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল, ‘যাহ! হয়ে গেল বাইরেই!’
বুকুনও হাপাচ্ছিল। তার মধ্যেই পিঠে আলতো করে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলেছিল, ‘আরেকদিন হবে রে রবিদা! ভাবিস না। এরকম হয় শুনেছি প্রথমবারে। আমি তো রইলাম!‘
‘এই নে রবি দা, তোর চা। কী করছিস, বৌদির সঙ্গে চ্যাট?‘ বলেই ওর সেই ট্রেড মার্ক ফিচেল হাসি।
কলেজের ছুটির দুপুরে আমার খাটে শুয়ে বুকুনের বলা কথাগুলোর রেশটা তখনও কানে ছিল, হঠাৎই অন্য কথা কানে এল!
এই এতগুলো বছর মুহুর্তের মধ্যে পেরিয়ে বর্তমানে চলে আসতে হল আমাকে!
‘নাহ। তার তো এখন বোধহয় ভোররাত!’জবাব দিলাম আমি।
‘সে কি কেন?’ নিজের জন্যও এক কাপ চা করে এনেছে বুকুন। সেটায় একটু চুমুক দিয়ে জিগ্যেস করল।
‘ ভোর তিনটের নাগাদ কোন পুজো প্যান্ডেলের সামনে থেকে সেলফি তুলে পাঠিয়েছে। তারপরে কখন বাড়ি ফিরেছে, কখন ঘুমিয়েছে কে জানে!’ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম আমি। বুকুন পাশে আমার খাটে বসছিল তখন।
এটা অবশ্য সেই পুরণো খাটটা নয় – যেটা সেই কলেজে পড়ার সময়ে আমার ঘরে ছিল!
বিয়ের সময়ে নতুন খাট করিয়েছিলাম। আগেরটা সিঙ্গল বেড ছিল। এটা ডবল বেড।
‘দেবে নিশ্চই! ও, পুজো প্যান্ডেলেও গিয়ে থাকতে পারে!’ আলতো করে কথাগুলো বললাম।
‘তা তুই চা নিয়ে এসে যে রবিদা বলে ডাক দিলি! তোর তো এ স্বভাব ছিল না! চোখ চেপে ধরতিস,’ হেসে বললাম আমি।
বুকুন মাথাটা নামিয়ে নিল। হতে পারে আমার মনের ভুল – তবুও যেন মনে হল একটা বড় নিশ্বাস ছাড়তে গিয়েও যেন একটু চেপে নিল নিজের মধ্যেই ও।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে জিগ্যেস করল, ‘তোর মনেএএএ আছে সেসব?’
কথাটায় হাল্কা ব্যঙ্গ করার সুর শুনলাম যেন!
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম, ‘মনে থাকবে না?’
বলেই সিগারেটের মাথায় জমে যাওয়া ছাইটা ঝাড়ার জন্য জানলার দিকে মুখ ফেরালাম – হয়তো বুকুনের চোখের দিকে তাকাতে চাইছিলাম না!
‘তুই চা টা শেষ কর, আমি যাই। জেঠির বোধহয় আলুভাজা হয়ে গেল। আমি লুচিগুলো ভেজে নিয়ে আসছি।‘
আমার বিয়ের সময়ে তৈরী ডবল বেড খাট থেকে ও ঝট করে উঠে পড়ল। কিন্তু চায়ের কাপটা নিয়ে যখন বসেছিল, তখন মনে হয়েছিল একান্তে একটু আড্ডা দিতেই বোধহয় এসেছে! মনের ভুল আমার? কে জানে!
--
-- ৯ --
চা টা শেষ হওয়ার আগেই মায়ের গলা পেলাম, ‘তোর জলখাবারটা কি ঘরে দেব?’
আমি কিছু বলার আগেই আরেকটা গলা বলে উঠল, ‘কেন জেঠি! রবিদাও আমাদের সঙ্গেই টেবিলে এসে খাক না! গল্প করতে করতে খাওয়া যাবে!’
এবার জবাব দিলাম, ‘আমি আসছি টেবিলে।‘
অনেকগুলো লুচি একটা বিরাট থালায় নিয়ে যেতে যেতে বুকুন আমার ঘরে উঁকি দিয়ে বলে গেল, ‘তাড়াতাড়ি আয় রবি দা। ঠান্ডা হয়ে যাবে।‘
টেবিলে গিয়ে বসতেই মা আলুভাজার একটা বড় বাটি নিয়ে চলে এল।
আমার আর মায়ের পাতে গোটা চারেক, আর নিজের পাতে দুটো লুচি নিয়ে আলুভাজা বেড়ে দিল বুকুন।
‘তুই দুটো নিলি কেন? আরও নে!’ মা বলল।
‘আমাকে তো আবার বাড়ি গিয়েও সবার সঙ্গে খেতে হবে! এটা তো বাড়তি হয়ে গেল!’ মুখে হাল্কা হাসি নিয়ে বলল বুকুন।
আমি তখন সবে দুনম্বর লুচির শেষ অংশটা কিছুটা আলুভাজা মুখে ঠেসেছি, তখনই বুকুন বলল, ‘জেঠি, চলো না আজ দুপুরের শোতে সিনেমা দেখে আসি একটা! টাউনের নতুন হলটাতে একটা ভাল সিনেমা এসেছে। মা, তুমি আর আমি যাই চলো। অ্যাই রবিদা, তিনটে টিকিট কেটে নিয়ে আসিস তো।‘
যাহ, আমি বাদ লিস্ট থেকে, মনে মনে ভাবলাম। মুখে বললাম, ‘কী সিনেমা রে?’
‘ব্যোমকেশ’ জবাব দিল বুকুন।
‘না বাবা দুপুরে আমি একটু না গড়িয়ে নিলে আজকাল পারি না রে! তোর মার তো চোখের অবস্থা ভাল না, সিনেমা দেখতে যাবে?’ মা বলল লুচি খেতে খেতে।
‘কতদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না,’ মনে একটু আশা নিয়ে বললাম, যদি মা-কাকিমাদের দলে আমাকেও নিয়ে নেয় বুকুন।
‘চলো না বাবা একটা দিন তো! রাতে বেশী ঘুমিয়ে নিও না হয়। রবিদা, টিকিটের টাকা আমি দেব কিন্তু। ছোটবেলায় মা-জেঠিদের কাছ থেকে এটা ওটা বলে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কত্ত সিনেমা দেখতে গেছি.. আজ আমি দেখাবো। ভাল দেখে সাইডের তিনটে সিট নিস রবিদা।‘
আমি যে বললাম কতদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখি না – সেই কথাটা বোধহয় কানেই তুলল না বুকুন। তিনটে টিকিট কাটতে বলল।
‘না রে মা। আমি আর যাব না। তুই আর তোর মা যদি যায় তো যাক, রবিকে নিয়ে যা বরং,’ বলল মা।
‘ধুর চলো না বাবা! ভাবলাম তোমাদের দুজনকে নিয়ে যাব, তুমি যদি না যাও, তাহলে বাদ দাও!’ কথাগুলো বলে নিজের থালাটা নিয়ে উঠতে উঠতে বলল বুকুন। দুটো তো মাত্র লুচি নিয়েছিল, কথা বলতে বলতেই শেষ ওদুটো।
‘জেঠি, আমি যাই বুঝলে। বাড়িতে গিয়ে আবার লুচি ভাজতে হবে। তোমার জামাই আর ছেলেটা না খেয়ে আছে এতক্ষণ। অনেক দেরী হয়ে গেল গো।‘
‘হ্যাঁ হ্যাঁ তুই এগো! জামাই আর নাতিটা তো না খেয়ে আছে!’
বুকুন রান্নাঘরে থালা নামাতে গেল বোধহয়।
আমি মা কে বললাম, ‘আচ্ছা তুমি কী বলো তো? ও বলছে তোমাদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে, তুমি বলছ রবিকে নিয়ে যা! ওকে নিয়ে আমি সিনেমা দেখতে যাব! কী বলছ ভেবে বলবে তো! কী যে ঝামেলায় ফেল না!’
আমি দরজার দিকে পেছন ফিরে বসেছিলাম, তাই খেয়াল করি নি কখন বুকুন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে পেছনে ঘুরে দেখি বুকুন দাঁড়িয়ে আছে দরজা ধরে। ওর মাথাটা সামান্য নামানো, নিজের দাঁত দিয়ে ওর নীচের ঠোঁটটা সামান্য কামড়ে ধরা।
‘আসি জেঠি’, বলে বেরিয়ে গেল বুকুন।
‘আয় মা’।
বুকুন বেরিয়ে গেল, আমার দিকে আর না তাকিয়েই।
বাকি লুচি আর আলুভাজাগুলো মা ছেলেতে বিশেষ কথা না বলেই খেয়ে নিলাম।
‘আরেক কাপ চা খাবি নাকি?’ জিগ্যেস করল মা।
‘নাহ। আমি একটু বেরচ্ছি। দুপুরে ফিরব।‘
‘বেশী দেরী করিস না যেন,’ যেমনটা সবসময়ে বলে এসেছে মা।
সাইকেলটা নিয়ে আবার রাস্তায় বেরলাম। বহুদিন পরে সাইকেল চালানো হচ্ছে সকাল বিকেল। কলকাতায় থাকলে দিনের কোনও না কোনও সময়ে আধঘন্টা ট্রেডমিলটায় চড়তেই হয়। প্রথম প্রথম পিয়ালীর কড়া নজর থাকত, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে।
পিয়ালীর কোন বন্ধু নাকি বলেছিল তোর বরের বেশ ছোট্ট একটা ভুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে কিন্তু। বেশ লাগছে। আর তার নিজের বরের নাকি চল্লিশ পেরনোর আগেই বড়সড় ভুঁড়ি হয়ে গেছে। রাতে ওপরে চড়লে ওজনটা নিতে নাকি বেশ কষ্ট হয় পিয়ালীর সেই বন্ধুর!
সেই শুনেই পরের রবিবার দুপুরে আমাদের রুটিন রতিক্রিয়াটা করতে না দিয়ে আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে একটা ট্রেডমিল কিনে এনেছিল। রাতে পুষিয়ে দেবে, সেটাও বলেছিল কানে কানে, গলা জড়িয়ে ধরে।
রবিবার দুপুরের রতিক্রিয়াটা আমাদের রুটিন হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে সকালে ওঠা, ছেলেকে কলেজের জন্য তৈরী করা – এসব করতে হয় বলে রাত জাগতে পারবে না – বলেই দিয়েছে পিয়ালী। তাই শনিবার রাত আর রবিবার দুপুর – এই দুটোই সময় আমাদের।
সাপ্তাহিক রুটিন ভেঙ্গে সেই রবিবার রাতে বিছানায় সঙ্গ পাওয়ার জন্য সন্ধ্যেবেলা আমাকে আধঘন্টা ধরে ট্রেডমিলে দৌড়তে হয়েছিল। রাতে যখন আমি পিয়ালীর ওপরে চড়ছি, তখন সে গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘এর থেকে বেশী ভুঁড়ি বাড়লে কিন্তু করতে দেব না।‘
বলে গলাটা ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিল পিয়ালী।
সেদিন প্রায় আধঘন্টা পড়ে যখন দুজনেই ক্লান্ত হয়ে কাৎ হয়ে পাশাপাশি শুয়ে রয়েছি - তখনই পিয়ালীকে হাসতে হাসতে বলেছিলাম, ‘তুমিও তো ট্রেডমিল করলে পার। তাহলে আমার ওপরেও চাপটা কমে!’
একটু আগেই টের পেয়েছিলাম, আমার বউয়ের ওজনটাও খুব কম বাড়ে নি!
‘কীঈঈ? আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি! যাও তাহলে আর করতে হবে না, স্লিম দেখে কাউকে খুঁজে নাও গিয়ে’ কপট রাগ দেখিয়েছিল আমার বউ।
তবে পড়ে জেনেছিলাম ও নিজেও নিয়মিত ট্রেডমিল করে নিজেকে ফিট রাখার জন্য।
সাইকেল চালাতে চালাতে কখন যে টাউনের দিকে যাওয়ার বড় রাস্তায় চলে এসেছি খেয়ালই করি নি।
ছোটবেলায় এই রাস্তা দিয়েই বুকুন আর আমি পাশাপাশি কত সাইকেল চালিয়ে এদিক ওদিক যেতাম!
তখন রোগা হওয়ার জন্য আমাদের এই গ্রাম গঞ্জে কেন, শহরেও বোধহয় কারও ট্রেডমিল ছিল না! লোকে তখন অত হেলথ কনশাসও ছিল না।
বুকুন অবশ্য কোথাও থেকে জেনেছিল যে রোজ সাইকেল চালালে শরীর ফিট থাকে। কথাটা আমাকে একবার বলেছিল – কলেজের ছুটিতে বাড়িতে এসে দুজনে বেরিয়েছিলাম সাইকেল নিয়ে – তখন।
তাই ও সব জায়গায় সাইকেলে চেপেই যেত।
সাইকেল চালাতে চালাতে হঠাৎই মনে পড়ল কথাটা।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে টাউনের নতুন সিনেমা হল মুভি ম্যাজিকের কাছে এসে পড়েছি, খেয়ালই করি নি। আগে গ্রাম-মফস্বলে সিনেমা হলের নাম হত শ্যামলী, চিত্রা, আরাধনা – এসব। এখন কলকাতার ছোঁয়া লেগেছে – হলের নাম মুভি ম্যাজিক!
বুকুন তখন বলছিল সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। মনে মনে ভাবলাম, কিনে নেব তিনটে টিকিট! একবার ভাবলাম ওকে না জিগ্যেস করে টিকিট কাটলে আবার রাগারাগি না করে। তারপরে ভাবলাম, নাহ কিনেই ফেলি। কী আর হবে!
হলটা নতুন। ঝাঁ চকচকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সাইকেল স্ট্যান্ড খুঁজে পেলাম। সাইকেলটা রেখে লক লাগিয়ে খুঁজতে লাগলাম কাউন্টারটা কোন দিকে।
রোগাপটকা একটা লোক প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সির পোষাক পরে হাতে লাঠি নিয়ে বিড়ি খাচ্ছিল।
হাসি পেল লোকটাকে দেখে! এর যা চেহারা, কাকে কি সিকিউরিটি দেবে কে জানে!
ওকেই জিগ্যেস করলাম, ‘দাদা টিকিট কাউন্টারটা কোন দিকে?’
বিড়ির ধোঁয়ায় বোধহয় কাশি এসে গিয়েছিল। তার মধ্যেই বলল ‘সামনে ডানদিকে আমাদের বক্স অফিস’।
আবারও হাসি পেল। টিকিট কাউন্টার বলেছি বলে ওর বোধহয় প্রেস্টিজে লেগেছে! কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সে যদি বক্স অফিস থাকে, তাহলে আমাদের টাউনের হলে কেন টিকিট কাউন্টার থাকবে!
‘ধন্যবাদ’ বলে ওই রোগা গার্ডের দেখিয়ে দেওয়া দিকে এগোলাম।
কাউন্টার, থুড়ি, বক্স অফিসের সামনে বেশী ভিড় নেই। আগেকার হলের মতো লোহার গ্রিল দেওয়া খুপরি ঘর না, কাঁচ লাগানো কাউন্টার। মাঝখানে কথা বলার জন্য গোল গর্ত, নীচে টাকা দেওয়া আর টিকিট নেওয়ার চৌখুপি।
বাইরে বোর্ড লাগানো আছে কোন ছবি কটার সময়ে। আগের মতো একই ছবি নুন, ম্যাটিনি, ইভনিং আর নাইটে চলে না। সেই বারোটা, তিনটে, ছটার শো টাইমিংও পাল্টে গেছে। বুকুন বলেছিল ‘ব্যোমকেশ’ দেখবে। সেটার শো টাইম দেখলাম ৩-৪৫।
কাউন্টারের ভেতরে যে এ সি চলছে, সেটা টের পেলাম গোল গর্তের সামনে মুখটা রাখতেই। ভেতরে টাই পড়া এক যুবক। আগে বুকিং ক্লার্করা হতো হাড়জিড়জিড়ে বুড়ো। সবসময়ে মুখে বিড়ি।
তিনটে পয়তাল্লিশের ব্যোমকেশের তিনটে টিকিট বলতেই এখনকার স্মার্ট বুকিং ক্লার্ক তার সামনে পেতে রাখা সিটিং প্ল্যান দেখিয়ে বলল, ‘স্যার লাল দাগ দেওয়া সিটগুলো বুকড। বাকিগুলোর মধ্যে কোনটা নেবেন?’
আমি অতশত না ভেবে বললাম ভাল দেখে তিনটে দিন ব্যালকনিতে। কোনও একটা সাইড থেকে দেবেন। কত তিনটে?’
সে কম্পিউটারে কীসব টাইপ করে আমাকে বলল ‘দেড়শো টাকা স্যার।‘
দুটো একশো টাকার নোট দিয়ে কম্পিউটার প্রিন্ট আউট নিয়ে দেখে নিলাম সিনেমার নাম, সময় সব ঠিকঠাক আছে কী না। আগেকার মতো পাতলা ঘুড়ির কাগজে ছাপা টিকিট না এটা!
এই টিকিট নিয়েই একবার কী ঝামেলা আমাদের বাড়িতে!
তখনও মা আমার আর বুকুনের সম্পর্কটা জানত না। ছোট থেকেই ও যেমন আমাদের বাড়িতে যেত আসত, তার বাইরে মা আর কিছু ভাবে নি।
কিন্তু হায়ার সেকেন্ডারির পরে একদিন আমার জামার পকেটে কীভাবে যেন টিকিটের কাউন্টারপার্ট থেকে গিয়েছিল। আগের দিন ম্যাটিনি শোতে বুকুনকে নিয়ে সিনেমায় গিয়েছিলাম। ব্যালকনিতে একটা সাইডে দুটো সীটে দুজনে বেশ ঘন হয়ে বসে সিনেমাটা দেখেছিলাম। আমাদের দুজনেরই হাত মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তখনই বুকুন কুটুস করে চিমটি কাটছিল। ফিস ফিস করে বলছিল, ‘কী হচ্ছে রবিদা। হলে অন্য লোক আছে তো!’
হল থেকে বেরিয়ে আমরা যখন বিলের মাঠে বসেছিলাম খুব কাছাকাছি, তখন দুষ্টুমি করে বুকুন জানতে চেয়েছিল, ‘রবিদা, সিনেমার গল্পটা কী বলত!’
‘ধুর সিনেমার দিকে মন ছিল নাকি আমার,’ হেসে বলেছিলাম আমি।
‘সে আর মনে থাকবে কী করে, যা অসভ্যতা শুরু করেছিলি!’
সেই বিকেল থেকে প্রায় সন্ধ্যে পর্যন্ত বুকুনের সঙ্গে কাটানোর আমেজটা রাতে আর পরের দিন সকালেও ছিল। ফুরফুরে মেজাজেই আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি মায়ের মুখটা থমথমে।
‘বেশী লায়েক হয়ে গেছ, তাই না? সবে তো হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছ!’
অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম মায়ের দিকে। কেসটা কী মেপে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
‘কী ব্যাপার মা?’
‘জানো না কী ব্যাপার! সিনেমা দেখতে গিয়েছিলে? আমাকে না বলে?’
তখনও বাড়িতে লুকিয়েই সিনেমা দেখতে হত আমাদের।
বুঝলাম মা হয়তো কারও কাছ থেকে শুনেছে – কেউ হয়তো আমাকে দেখে ফেলেছে হলে ঢোকা বা বেরনোর সময়ে।
আমার প্রথমে মাথায় এল সঙ্গে বুকুন ছিল, এটা কেউ মায়ের কানে লাগিয়ে দেয় নি তো!
তাহলে তো সর্বনাশ!
আমি মায়ের কথার জবাবে একটু আমতা আমতা করে বলেছিলাম, ‘ওই বন্ধুরা বলল, তাই গিয়েছিলাম। তোমাকে কে বলল।‘
বোঝার চেষ্টা করছিলাম বুকুন সঙ্গে থাকার ব্যাপারটা মায়ের কানে পৌঁছেছে কী না!
‘বন্ধু-রা? টিকিট তো ছিল দুটো!’
ইশশশ, সবসময়ে সিনেমার টিকিট রাস্তায় ফেলে দিই, কাল আর খেয়ালই ছিল না। মা নিশ্চই কাচতে দেওয়ার সময়ে খুঁজে পেয়েছে।
তবে ভাগ্যিস মা আর কিছু জানতে চায় নি যে কে ছিল সঙ্গে।
এভাবেই একবার পকেটে বিড়ির কুচো তামাক পেয়ে সাংঘাতিক রাগ করেছিল মা। প্রায় মারতে বাকি রেখেছিল।
সেদিন বিকেলে বিলের মাঠে বসে যখন বুকুনকে বলছিলাম সিনেমার টিকিট মায়ের হাতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা, ও হাতের তালুতে কপালটা নামিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘ইশশশশ। একটু খেয়াল করবি তো! তুই কী রে! ভাব তো একবার জেঠিমা আর কিছু জানতে চাইলে কী হত!’
ওর কোলে শুয়ে পড়েছিলাম আমি তখন। আমার বুকের ওপরে ওর হাতদুটো রাখা ছিল। সেদুটোতে আলতো করে আঙুল বোলাতে বোলাতে বলেছিলাম, ‘কাল সিনেমা হল থেকেই আমার যা অবস্থা হয়েছিল, তারপর এখানে এসে.. খেয়ালই ছিল না যে পকেটে টিকিটের পার্টটা রয়ে গেছে।‘
‘শয়তান কোথাকার। তুই কাল যা করছিলি হলে বসে! ইশ!’
‘ইশের কী আছে! আমরা তো ছিলাম লাস্ট রোয়ের কোনে!’
‘তুই ইচ্ছে করেই ওই সীট নিয়েছিলি না? অসভ্যতা করবি বলে!’
আমি জবাব না দিয়ে বুকুনের একটা হাত তুলে নিয়ে আমার ঠোঁটের ওপরে রেখে ওর চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম। ও অন্য হাতটা দিয়ে আমার মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিল।
‘তুই আমার যা অবস্থা করেছিলি না রে, সারারাত ঘুমোতে পারি নি। দুষ্টু কোথাকার।‘
‘কেন কেন? ঘুমোস নি কেন?’
‘বুঝিস না? বদমাশ!’
‘বল না বল না.. কী হয়েছিল .. ঘুমোস নি কেন?’
নিজের মুখটা ওর কোলে শুয়ে থাকা আমার মুখের খুব কাছে নিয়ে এসে বলেছিল ‘তোর হাতের ছোঁয়াগুলের মনে পড়ছিল, আর কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি ভেতরে ভেতরে! বুঝেছ হাঁদারাম!’
তারপরে আমার ঠোঁটের ওপরে থাকা ওর হাতটা সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সেই জায়গায় নিজের ঠোঁটা চেপে ধরেছিল বুকুন – অনেকক্ষণ ধরে।
---
সিগারেটের ছাইটা জানলা দিয়ে বাইরে ঝেড়ে ফেললাম। হাতে মোবাইলটা তুলে নিয়ে মেল আর হোয়াটস্ অ্যাপ মেসেজগুলো দেখতে শুরু করলাম – যেন সেই দুপুরের কথাটা ভুলে যাওয়ার জন্য নিজের সঙ্গেই লড়াই করা।
কিন্তু পারলাম কই! মেইল চেক করা শেষ করে যেই হোয়াটস্ অ্যাপে ঢুকেছি, তখনই বুকুনের কাল রাতের মেসেজগুলোর দিকে চোখ গেল। আর নিজের অজান্তেই ওর ডিসপ্লে প্রোফাইলের ওপরে আঙ্গুলটা গিয়ে পড়ল – ওর ছবিটা একটু বড় হয়ে ভেসে উঠল আমার স্ক্রীনে – একই সঙ্গে আমার মনেও!
মা না থাকার সুযোগ আমরা দুজনেই সেদিন নিয়েছিলাম – যার জন্য অনেক লুকোচুরি করে বিলের মাঠে যেতে হত! তাও বেশী কিছু করতে পারতাম না, কে না কে এসে পড়ে – এই ভেবে! তার ওপরে বুকুনের দিক থেকে তো একটা গন্ডি টানাই ছিল যে কতদূর আমি যেতে পারি, তার নিশানা করার গন্ডি!
কিন্তু হঠাৎ করেই ভরদুপুরে মা পাশের বাড়িতে গল্প করতে চলে যাওয়ায় ও নিজেই সেই গন্ডিটা ভাঙ্গতে শুরু করেছিল প্রথম থেকে।
আমি একবার জিগ্যেস করেছিলাম, ‘দরজাটা বন্ধ করে এসেছিস তো রে?’
ও আমার মুখটা নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে ছোট্ট স্বরে বলেছিল, ‘হুম’
তারপরে যা যা ঘটেছিল, তার জন্য আমরা দুজনের কেউ আগে থেকে তৈরী ছিলাম না। দুজনের কাছেই সেটা ছিল অজানাকে জানতে চাওয়া, দেখতে চাওয়া, পরখ করতে চাওয়ার প্রথম চেষ্টা। এত বছরের চেনা শরীরটাকে নতুন ভাবে চেনার অদম্য আকর্ষণ!
ও আমার পেছন থেকে সামনে এসে কোলে বসে পড়েছিল – এই চেয়ারটাতেই বসেছিলাম আমি তখনও।
তারপরে যখন ওকে নিয়ে গিয়ে আলতো করে শুইয়ে দিয়েছিলাম বিছানায় আর বুকুনের শরীরের একেকটা পরত খুলছিল আমার চোখের সামনে আর আমার চোখদুটো যেন আরও ঠেলে বেরচ্ছিল বিস্ময়ে।
ও বলেছিল, ‘অ্যাই রবিদা, কী দেখছিস ওরকম করে? লজ্জা করছে, ধ্যাত শয়তান!’
মুখে শয়তান বললেও সেই শয়তানটাকেই আরও জোরে আঁকড়ে ধরছিল ও সেই দুপুরে। দুজনে দুজনকে অনেকক্ষণ ধরে পরখ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেদিন।
কিন্তু সুযোগের পূর্ণ সদ্বব্যবহার করে উঠতে পারি নি আমরা কেউই।
আমার যেন সেদিন ট্রেন ধরার ছিল – এত তাড়াতাড়ি করেছিলাম সেদিন আমি! তাই আগেভাগেই আমি নিসৃত হয়েছিলাম – শেষ বাধা আর পেরতে পারি নি সেদিন!
হাপাতে হাপাতে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল, ‘যাহ! হয়ে গেল বাইরেই!’
বুকুনও হাপাচ্ছিল। তার মধ্যেই পিঠে আলতো করে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলেছিল, ‘আরেকদিন হবে রে রবিদা! ভাবিস না। এরকম হয় শুনেছি প্রথমবারে। আমি তো রইলাম!‘
‘এই নে রবি দা, তোর চা। কী করছিস, বৌদির সঙ্গে চ্যাট?‘ বলেই ওর সেই ট্রেড মার্ক ফিচেল হাসি।
কলেজের ছুটির দুপুরে আমার খাটে শুয়ে বুকুনের বলা কথাগুলোর রেশটা তখনও কানে ছিল, হঠাৎই অন্য কথা কানে এল!
এই এতগুলো বছর মুহুর্তের মধ্যে পেরিয়ে বর্তমানে চলে আসতে হল আমাকে!
‘নাহ। তার তো এখন বোধহয় ভোররাত!’জবাব দিলাম আমি।
‘সে কি কেন?’ নিজের জন্যও এক কাপ চা করে এনেছে বুকুন। সেটায় একটু চুমুক দিয়ে জিগ্যেস করল।
‘ ভোর তিনটের নাগাদ কোন পুজো প্যান্ডেলের সামনে থেকে সেলফি তুলে পাঠিয়েছে। তারপরে কখন বাড়ি ফিরেছে, কখন ঘুমিয়েছে কে জানে!’ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললাম আমি। বুকুন পাশে আমার খাটে বসছিল তখন।
এটা অবশ্য সেই পুরণো খাটটা নয় – যেটা সেই কলেজে পড়ার সময়ে আমার ঘরে ছিল!
বিয়ের সময়ে নতুন খাট করিয়েছিলাম। আগেরটা সিঙ্গল বেড ছিল। এটা ডবল বেড।
‘দেবে নিশ্চই! ও, পুজো প্যান্ডেলেও গিয়ে থাকতে পারে!’ আলতো করে কথাগুলো বললাম।
‘তা তুই চা নিয়ে এসে যে রবিদা বলে ডাক দিলি! তোর তো এ স্বভাব ছিল না! চোখ চেপে ধরতিস,’ হেসে বললাম আমি।
বুকুন মাথাটা নামিয়ে নিল। হতে পারে আমার মনের ভুল – তবুও যেন মনে হল একটা বড় নিশ্বাস ছাড়তে গিয়েও যেন একটু চেপে নিল নিজের মধ্যেই ও।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে জিগ্যেস করল, ‘তোর মনেএএএ আছে সেসব?’
কথাটায় হাল্কা ব্যঙ্গ করার সুর শুনলাম যেন!
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম, ‘মনে থাকবে না?’
বলেই সিগারেটের মাথায় জমে যাওয়া ছাইটা ঝাড়ার জন্য জানলার দিকে মুখ ফেরালাম – হয়তো বুকুনের চোখের দিকে তাকাতে চাইছিলাম না!
‘তুই চা টা শেষ কর, আমি যাই। জেঠির বোধহয় আলুভাজা হয়ে গেল। আমি লুচিগুলো ভেজে নিয়ে আসছি।‘
আমার বিয়ের সময়ে তৈরী ডবল বেড খাট থেকে ও ঝট করে উঠে পড়ল। কিন্তু চায়ের কাপটা নিয়ে যখন বসেছিল, তখন মনে হয়েছিল একান্তে একটু আড্ডা দিতেই বোধহয় এসেছে! মনের ভুল আমার? কে জানে!
--
-- ৯ --
চা টা শেষ হওয়ার আগেই মায়ের গলা পেলাম, ‘তোর জলখাবারটা কি ঘরে দেব?’
আমি কিছু বলার আগেই আরেকটা গলা বলে উঠল, ‘কেন জেঠি! রবিদাও আমাদের সঙ্গেই টেবিলে এসে খাক না! গল্প করতে করতে খাওয়া যাবে!’
এবার জবাব দিলাম, ‘আমি আসছি টেবিলে।‘
অনেকগুলো লুচি একটা বিরাট থালায় নিয়ে যেতে যেতে বুকুন আমার ঘরে উঁকি দিয়ে বলে গেল, ‘তাড়াতাড়ি আয় রবি দা। ঠান্ডা হয়ে যাবে।‘
টেবিলে গিয়ে বসতেই মা আলুভাজার একটা বড় বাটি নিয়ে চলে এল।
আমার আর মায়ের পাতে গোটা চারেক, আর নিজের পাতে দুটো লুচি নিয়ে আলুভাজা বেড়ে দিল বুকুন।
‘তুই দুটো নিলি কেন? আরও নে!’ মা বলল।
‘আমাকে তো আবার বাড়ি গিয়েও সবার সঙ্গে খেতে হবে! এটা তো বাড়তি হয়ে গেল!’ মুখে হাল্কা হাসি নিয়ে বলল বুকুন।
আমি তখন সবে দুনম্বর লুচির শেষ অংশটা কিছুটা আলুভাজা মুখে ঠেসেছি, তখনই বুকুন বলল, ‘জেঠি, চলো না আজ দুপুরের শোতে সিনেমা দেখে আসি একটা! টাউনের নতুন হলটাতে একটা ভাল সিনেমা এসেছে। মা, তুমি আর আমি যাই চলো। অ্যাই রবিদা, তিনটে টিকিট কেটে নিয়ে আসিস তো।‘
যাহ, আমি বাদ লিস্ট থেকে, মনে মনে ভাবলাম। মুখে বললাম, ‘কী সিনেমা রে?’
‘ব্যোমকেশ’ জবাব দিল বুকুন।
‘না বাবা দুপুরে আমি একটু না গড়িয়ে নিলে আজকাল পারি না রে! তোর মার তো চোখের অবস্থা ভাল না, সিনেমা দেখতে যাবে?’ মা বলল লুচি খেতে খেতে।
‘কতদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয় না,’ মনে একটু আশা নিয়ে বললাম, যদি মা-কাকিমাদের দলে আমাকেও নিয়ে নেয় বুকুন।
‘চলো না বাবা একটা দিন তো! রাতে বেশী ঘুমিয়ে নিও না হয়। রবিদা, টিকিটের টাকা আমি দেব কিন্তু। ছোটবেলায় মা-জেঠিদের কাছ থেকে এটা ওটা বলে টাকা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কত্ত সিনেমা দেখতে গেছি.. আজ আমি দেখাবো। ভাল দেখে সাইডের তিনটে সিট নিস রবিদা।‘
আমি যে বললাম কতদিন হলে গিয়ে সিনেমা দেখি না – সেই কথাটা বোধহয় কানেই তুলল না বুকুন। তিনটে টিকিট কাটতে বলল।
‘না রে মা। আমি আর যাব না। তুই আর তোর মা যদি যায় তো যাক, রবিকে নিয়ে যা বরং,’ বলল মা।
‘ধুর চলো না বাবা! ভাবলাম তোমাদের দুজনকে নিয়ে যাব, তুমি যদি না যাও, তাহলে বাদ দাও!’ কথাগুলো বলে নিজের থালাটা নিয়ে উঠতে উঠতে বলল বুকুন। দুটো তো মাত্র লুচি নিয়েছিল, কথা বলতে বলতেই শেষ ওদুটো।
‘জেঠি, আমি যাই বুঝলে। বাড়িতে গিয়ে আবার লুচি ভাজতে হবে। তোমার জামাই আর ছেলেটা না খেয়ে আছে এতক্ষণ। অনেক দেরী হয়ে গেল গো।‘
‘হ্যাঁ হ্যাঁ তুই এগো! জামাই আর নাতিটা তো না খেয়ে আছে!’
বুকুন রান্নাঘরে থালা নামাতে গেল বোধহয়।
আমি মা কে বললাম, ‘আচ্ছা তুমি কী বলো তো? ও বলছে তোমাদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে, তুমি বলছ রবিকে নিয়ে যা! ওকে নিয়ে আমি সিনেমা দেখতে যাব! কী বলছ ভেবে বলবে তো! কী যে ঝামেলায় ফেল না!’
আমি দরজার দিকে পেছন ফিরে বসেছিলাম, তাই খেয়াল করি নি কখন বুকুন এসে পেছনে দাঁড়িয়েছে। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে পেছনে ঘুরে দেখি বুকুন দাঁড়িয়ে আছে দরজা ধরে। ওর মাথাটা সামান্য নামানো, নিজের দাঁত দিয়ে ওর নীচের ঠোঁটটা সামান্য কামড়ে ধরা।
‘আসি জেঠি’, বলে বেরিয়ে গেল বুকুন।
‘আয় মা’।
বুকুন বেরিয়ে গেল, আমার দিকে আর না তাকিয়েই।
বাকি লুচি আর আলুভাজাগুলো মা ছেলেতে বিশেষ কথা না বলেই খেয়ে নিলাম।
‘আরেক কাপ চা খাবি নাকি?’ জিগ্যেস করল মা।
‘নাহ। আমি একটু বেরচ্ছি। দুপুরে ফিরব।‘
‘বেশী দেরী করিস না যেন,’ যেমনটা সবসময়ে বলে এসেছে মা।
সাইকেলটা নিয়ে আবার রাস্তায় বেরলাম। বহুদিন পরে সাইকেল চালানো হচ্ছে সকাল বিকেল। কলকাতায় থাকলে দিনের কোনও না কোনও সময়ে আধঘন্টা ট্রেডমিলটায় চড়তেই হয়। প্রথম প্রথম পিয়ালীর কড়া নজর থাকত, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে।
পিয়ালীর কোন বন্ধু নাকি বলেছিল তোর বরের বেশ ছোট্ট একটা ভুঁড়ি উঁকি দিচ্ছে কিন্তু। বেশ লাগছে। আর তার নিজের বরের নাকি চল্লিশ পেরনোর আগেই বড়সড় ভুঁড়ি হয়ে গেছে। রাতে ওপরে চড়লে ওজনটা নিতে নাকি বেশ কষ্ট হয় পিয়ালীর সেই বন্ধুর!
সেই শুনেই পরের রবিবার দুপুরে আমাদের রুটিন রতিক্রিয়াটা করতে না দিয়ে আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে একটা ট্রেডমিল কিনে এনেছিল। রাতে পুষিয়ে দেবে, সেটাও বলেছিল কানে কানে, গলা জড়িয়ে ধরে।
রবিবার দুপুরের রতিক্রিয়াটা আমাদের রুটিন হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে সকালে ওঠা, ছেলেকে কলেজের জন্য তৈরী করা – এসব করতে হয় বলে রাত জাগতে পারবে না – বলেই দিয়েছে পিয়ালী। তাই শনিবার রাত আর রবিবার দুপুর – এই দুটোই সময় আমাদের।
সাপ্তাহিক রুটিন ভেঙ্গে সেই রবিবার রাতে বিছানায় সঙ্গ পাওয়ার জন্য সন্ধ্যেবেলা আমাকে আধঘন্টা ধরে ট্রেডমিলে দৌড়তে হয়েছিল। রাতে যখন আমি পিয়ালীর ওপরে চড়ছি, তখন সে গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘এর থেকে বেশী ভুঁড়ি বাড়লে কিন্তু করতে দেব না।‘
বলে গলাটা ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়েছিল পিয়ালী।
সেদিন প্রায় আধঘন্টা পড়ে যখন দুজনেই ক্লান্ত হয়ে কাৎ হয়ে পাশাপাশি শুয়ে রয়েছি - তখনই পিয়ালীকে হাসতে হাসতে বলেছিলাম, ‘তুমিও তো ট্রেডমিল করলে পার। তাহলে আমার ওপরেও চাপটা কমে!’
একটু আগেই টের পেয়েছিলাম, আমার বউয়ের ওজনটাও খুব কম বাড়ে নি!
‘কীঈঈ? আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি! যাও তাহলে আর করতে হবে না, স্লিম দেখে কাউকে খুঁজে নাও গিয়ে’ কপট রাগ দেখিয়েছিল আমার বউ।
তবে পড়ে জেনেছিলাম ও নিজেও নিয়মিত ট্রেডমিল করে নিজেকে ফিট রাখার জন্য।
সাইকেল চালাতে চালাতে কখন যে টাউনের দিকে যাওয়ার বড় রাস্তায় চলে এসেছি খেয়ালই করি নি।
ছোটবেলায় এই রাস্তা দিয়েই বুকুন আর আমি পাশাপাশি কত সাইকেল চালিয়ে এদিক ওদিক যেতাম!
তখন রোগা হওয়ার জন্য আমাদের এই গ্রাম গঞ্জে কেন, শহরেও বোধহয় কারও ট্রেডমিল ছিল না! লোকে তখন অত হেলথ কনশাসও ছিল না।
বুকুন অবশ্য কোথাও থেকে জেনেছিল যে রোজ সাইকেল চালালে শরীর ফিট থাকে। কথাটা আমাকে একবার বলেছিল – কলেজের ছুটিতে বাড়িতে এসে দুজনে বেরিয়েছিলাম সাইকেল নিয়ে – তখন।
তাই ও সব জায়গায় সাইকেলে চেপেই যেত।
সাইকেল চালাতে চালাতে হঠাৎই মনে পড়ল কথাটা।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে টাউনের নতুন সিনেমা হল মুভি ম্যাজিকের কাছে এসে পড়েছি, খেয়ালই করি নি। আগে গ্রাম-মফস্বলে সিনেমা হলের নাম হত শ্যামলী, চিত্রা, আরাধনা – এসব। এখন কলকাতার ছোঁয়া লেগেছে – হলের নাম মুভি ম্যাজিক!
বুকুন তখন বলছিল সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। মনে মনে ভাবলাম, কিনে নেব তিনটে টিকিট! একবার ভাবলাম ওকে না জিগ্যেস করে টিকিট কাটলে আবার রাগারাগি না করে। তারপরে ভাবলাম, নাহ কিনেই ফেলি। কী আর হবে!
হলটা নতুন। ঝাঁ চকচকে। এদিক ওদিক তাকিয়ে সাইকেল স্ট্যান্ড খুঁজে পেলাম। সাইকেলটা রেখে লক লাগিয়ে খুঁজতে লাগলাম কাউন্টারটা কোন দিকে।
রোগাপটকা একটা লোক প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সির পোষাক পরে হাতে লাঠি নিয়ে বিড়ি খাচ্ছিল।
হাসি পেল লোকটাকে দেখে! এর যা চেহারা, কাকে কি সিকিউরিটি দেবে কে জানে!
ওকেই জিগ্যেস করলাম, ‘দাদা টিকিট কাউন্টারটা কোন দিকে?’
বিড়ির ধোঁয়ায় বোধহয় কাশি এসে গিয়েছিল। তার মধ্যেই বলল ‘সামনে ডানদিকে আমাদের বক্স অফিস’।
আবারও হাসি পেল। টিকিট কাউন্টার বলেছি বলে ওর বোধহয় প্রেস্টিজে লেগেছে! কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সে যদি বক্স অফিস থাকে, তাহলে আমাদের টাউনের হলে কেন টিকিট কাউন্টার থাকবে!
‘ধন্যবাদ’ বলে ওই রোগা গার্ডের দেখিয়ে দেওয়া দিকে এগোলাম।
কাউন্টার, থুড়ি, বক্স অফিসের সামনে বেশী ভিড় নেই। আগেকার হলের মতো লোহার গ্রিল দেওয়া খুপরি ঘর না, কাঁচ লাগানো কাউন্টার। মাঝখানে কথা বলার জন্য গোল গর্ত, নীচে টাকা দেওয়া আর টিকিট নেওয়ার চৌখুপি।
বাইরে বোর্ড লাগানো আছে কোন ছবি কটার সময়ে। আগের মতো একই ছবি নুন, ম্যাটিনি, ইভনিং আর নাইটে চলে না। সেই বারোটা, তিনটে, ছটার শো টাইমিংও পাল্টে গেছে। বুকুন বলেছিল ‘ব্যোমকেশ’ দেখবে। সেটার শো টাইম দেখলাম ৩-৪৫।
কাউন্টারের ভেতরে যে এ সি চলছে, সেটা টের পেলাম গোল গর্তের সামনে মুখটা রাখতেই। ভেতরে টাই পড়া এক যুবক। আগে বুকিং ক্লার্করা হতো হাড়জিড়জিড়ে বুড়ো। সবসময়ে মুখে বিড়ি।
তিনটে পয়তাল্লিশের ব্যোমকেশের তিনটে টিকিট বলতেই এখনকার স্মার্ট বুকিং ক্লার্ক তার সামনে পেতে রাখা সিটিং প্ল্যান দেখিয়ে বলল, ‘স্যার লাল দাগ দেওয়া সিটগুলো বুকড। বাকিগুলোর মধ্যে কোনটা নেবেন?’
আমি অতশত না ভেবে বললাম ভাল দেখে তিনটে দিন ব্যালকনিতে। কোনও একটা সাইড থেকে দেবেন। কত তিনটে?’
সে কম্পিউটারে কীসব টাইপ করে আমাকে বলল ‘দেড়শো টাকা স্যার।‘
দুটো একশো টাকার নোট দিয়ে কম্পিউটার প্রিন্ট আউট নিয়ে দেখে নিলাম সিনেমার নাম, সময় সব ঠিকঠাক আছে কী না। আগেকার মতো পাতলা ঘুড়ির কাগজে ছাপা টিকিট না এটা!
এই টিকিট নিয়েই একবার কী ঝামেলা আমাদের বাড়িতে!
তখনও মা আমার আর বুকুনের সম্পর্কটা জানত না। ছোট থেকেই ও যেমন আমাদের বাড়িতে যেত আসত, তার বাইরে মা আর কিছু ভাবে নি।
কিন্তু হায়ার সেকেন্ডারির পরে একদিন আমার জামার পকেটে কীভাবে যেন টিকিটের কাউন্টারপার্ট থেকে গিয়েছিল। আগের দিন ম্যাটিনি শোতে বুকুনকে নিয়ে সিনেমায় গিয়েছিলাম। ব্যালকনিতে একটা সাইডে দুটো সীটে দুজনে বেশ ঘন হয়ে বসে সিনেমাটা দেখেছিলাম। আমাদের দুজনেরই হাত মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। তখনই বুকুন কুটুস করে চিমটি কাটছিল। ফিস ফিস করে বলছিল, ‘কী হচ্ছে রবিদা। হলে অন্য লোক আছে তো!’
হল থেকে বেরিয়ে আমরা যখন বিলের মাঠে বসেছিলাম খুব কাছাকাছি, তখন দুষ্টুমি করে বুকুন জানতে চেয়েছিল, ‘রবিদা, সিনেমার গল্পটা কী বলত!’
‘ধুর সিনেমার দিকে মন ছিল নাকি আমার,’ হেসে বলেছিলাম আমি।
‘সে আর মনে থাকবে কী করে, যা অসভ্যতা শুরু করেছিলি!’
সেই বিকেল থেকে প্রায় সন্ধ্যে পর্যন্ত বুকুনের সঙ্গে কাটানোর আমেজটা রাতে আর পরের দিন সকালেও ছিল। ফুরফুরে মেজাজেই আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখি মায়ের মুখটা থমথমে।
‘বেশী লায়েক হয়ে গেছ, তাই না? সবে তো হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছ!’
অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম মায়ের দিকে। কেসটা কী মেপে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
‘কী ব্যাপার মা?’
‘জানো না কী ব্যাপার! সিনেমা দেখতে গিয়েছিলে? আমাকে না বলে?’
তখনও বাড়িতে লুকিয়েই সিনেমা দেখতে হত আমাদের।
বুঝলাম মা হয়তো কারও কাছ থেকে শুনেছে – কেউ হয়তো আমাকে দেখে ফেলেছে হলে ঢোকা বা বেরনোর সময়ে।
আমার প্রথমে মাথায় এল সঙ্গে বুকুন ছিল, এটা কেউ মায়ের কানে লাগিয়ে দেয় নি তো!
তাহলে তো সর্বনাশ!
আমি মায়ের কথার জবাবে একটু আমতা আমতা করে বলেছিলাম, ‘ওই বন্ধুরা বলল, তাই গিয়েছিলাম। তোমাকে কে বলল।‘
বোঝার চেষ্টা করছিলাম বুকুন সঙ্গে থাকার ব্যাপারটা মায়ের কানে পৌঁছেছে কী না!
‘বন্ধু-রা? টিকিট তো ছিল দুটো!’
ইশশশ, সবসময়ে সিনেমার টিকিট রাস্তায় ফেলে দিই, কাল আর খেয়ালই ছিল না। মা নিশ্চই কাচতে দেওয়ার সময়ে খুঁজে পেয়েছে।
তবে ভাগ্যিস মা আর কিছু জানতে চায় নি যে কে ছিল সঙ্গে।
এভাবেই একবার পকেটে বিড়ির কুচো তামাক পেয়ে সাংঘাতিক রাগ করেছিল মা। প্রায় মারতে বাকি রেখেছিল।
সেদিন বিকেলে বিলের মাঠে বসে যখন বুকুনকে বলছিলাম সিনেমার টিকিট মায়ের হাতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা, ও হাতের তালুতে কপালটা নামিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘ইশশশশ। একটু খেয়াল করবি তো! তুই কী রে! ভাব তো একবার জেঠিমা আর কিছু জানতে চাইলে কী হত!’
ওর কোলে শুয়ে পড়েছিলাম আমি তখন। আমার বুকের ওপরে ওর হাতদুটো রাখা ছিল। সেদুটোতে আলতো করে আঙুল বোলাতে বোলাতে বলেছিলাম, ‘কাল সিনেমা হল থেকেই আমার যা অবস্থা হয়েছিল, তারপর এখানে এসে.. খেয়ালই ছিল না যে পকেটে টিকিটের পার্টটা রয়ে গেছে।‘
‘শয়তান কোথাকার। তুই কাল যা করছিলি হলে বসে! ইশ!’
‘ইশের কী আছে! আমরা তো ছিলাম লাস্ট রোয়ের কোনে!’
‘তুই ইচ্ছে করেই ওই সীট নিয়েছিলি না? অসভ্যতা করবি বলে!’
আমি জবাব না দিয়ে বুকুনের একটা হাত তুলে নিয়ে আমার ঠোঁটের ওপরে রেখে ওর চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম। ও অন্য হাতটা দিয়ে আমার মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিল।
‘তুই আমার যা অবস্থা করেছিলি না রে, সারারাত ঘুমোতে পারি নি। দুষ্টু কোথাকার।‘
‘কেন কেন? ঘুমোস নি কেন?’
‘বুঝিস না? বদমাশ!’
‘বল না বল না.. কী হয়েছিল .. ঘুমোস নি কেন?’
নিজের মুখটা ওর কোলে শুয়ে থাকা আমার মুখের খুব কাছে নিয়ে এসে বলেছিল ‘তোর হাতের ছোঁয়াগুলের মনে পড়ছিল, আর কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি ভেতরে ভেতরে! বুঝেছ হাঁদারাম!’
তারপরে আমার ঠোঁটের ওপরে থাকা ওর হাতটা সরিয়ে নিয়ে গিয়ে সেই জায়গায় নিজের ঠোঁটা চেপে ধরেছিল বুকুন – অনেকক্ষণ ধরে।
---