04-11-2020, 03:13 PM
#অন্য_রূপকথা
ইদানীং কালের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমি খুব, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হই না।।আর তাই, যখন ই বাইরে বেরোতে হয়, এক সাথে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনি যাতে অন্তত এক সপ্তাহ আর বেরোতে না হয়।
আজ রবিবার। তাই বাজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য বেরোতে হয়েছিল। সারা সপ্তাহের মতো মাংস, মাছ, তরি তরকারি, ঠাকুরের ফুল, এমনকি সদ্য প্রকাশিত পুজোসংখ্যা -সবকিছু কেনা প্রায় শেষ...হঠাৎ নজর পড়ল দূরত্ববিধি মেনে রাস্তার এক কোণে বসে থাকা দুজনের দিকে। মলিন সালোয়ার কামিজ পরা, মাথায় ওড়না দেওয়া, কৃশকায়া একটি মেয়ে...কত আর বয়েস হবে...একুশ, বাইশ? আর তার পাশে একটি ছোট্ট শিশু - বছর পাঁচ বা ছয়ের। মাটি মাটি খালি গা...একটা পেন্টুল পরা। সামনে, মাটিতে রাখা একটি প্লাস্টিকের বস্তার ওপর কয়েক আঁটি কুমড়ো শাক, পুঁই শাক, লঙ্কা, পাতিলেবু।
একজন ও খদ্দের নেই সামনে।
আমাকে দেখেই কেমন চোখটা চকচক করে উঠল যেন মেয়েটির।
আর, আমার মনে হলো, কুমড়ো শাক বড্ড ভালো খেতে...রাঁধতে জানি না বটে, সে শিখে নেব বড়দের কারো কাছ থেকে। পাতিলেবু তো ভিটামিন সি...এইসময়ে তো খেতেই হবে! আর লঙ্কার মতো দরকারি কিছু হয় নাকি! সে যত ই বাড়িতে থাকুক না কেন! তাই, দু আঁটি শাক, চারটে লেবু, একশো গ্রাম লঙ্কা কেনার পর দেখি - মাত্র তিরিশ টাকার সওদা হয়েছে। বাড়িয়ে দিলাম একটা পঞ্চাশ টাকার নোট। মেয়েটি একটু কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল "খুচরো লাই?"
আমার কাছে ছিল না। শুনে বস্তা উলটে একটা ব্যাগ বের করে একটু খুঁজে একটা কুড়ি টাকার নোট বের করে দিল। দেখেই মনে হচ্ছিল, টাকা বোধহয় বেশি নেই ওর ভেতর।
যাই হোক, ভারি ব্যাগটা নিয়ে হাঁটছি...কয়েক পা ই মাত্র গেছি...হঠাৎ পেছন থেকে অন্য একজন ব্যাপারি ডেকে উঠলেন "ও দিদি, আপনাকে ডাকছে তো..."
তাকিয়ে দেখি, সেই মাটি মাটি শিশুটি দৌড়ে আসছে আমার দিকে। পায়ে একটা অনেক বড় রবারের চটি...তাই খোঁড়াচ্ছে। আমি বেশ অবাক ই হয়েছিলাম...কী হলো রে বাবা!
আমার সামনে এসে বাচ্চাটি বলল "আম্মু পাটাল...লোটটা ছেঁড়া আসে..."
বুঝলাম! আমার দেওয়া পঞ্চাশ টাকার নোট টা ছেঁড়া ছিল! আমার বদভ্যাস হলো, আমি কখনো টাকা দেখে নিই না! খুব খারাপ লাগছিল, আবার ভাবছিলাম...খুচরো তো নেই...একশো টাকা খুচরো করাতে হবে এইবার।
ভাবতে ভাবতেই দেখি ক্ষুদেটা মুঠি করা হাত থেকে দুটো পাঁচ টাকার কয়েন, আর ক'টা একটাকা, দু'টাকার কয়েন মেলে দিয়েছে আমার দিকে। তারপর বলল "আম্মু বলেসে লোট টা দিয়ে দিতে..."
এতক্ষণে বুঝলাম! ওদের দেওয়া নোটটা ছেঁড়া ছিল...। তাই...।
মনে পড়ে গেল...আমাকে দেখে ওদের চকচকে চোখের কথা...আমাকে ফিরতি টাকা দিতে গিয়ে আতান্তরে পড়া চোখের কথাও...
কিন্তু, আমার বরাবর বেশি কথা বলার অভ্যেস। তাই বললাম "অ্যাই, তুই এই বড় চটি পরেছিস কেন? আবার দৌড়চ্ছিলি? যদি পরে যেতিস?"
বাচ্চাটা একটু চুপ করে বলল "আমার চটি ছিঁড়ে গেসে। আব্বু কিনে দেবে পরে। তুমি লোট টা দাও..."
খটখটে সকালের কটকটে রোদ...তবু কেন যে ঝাপসা লাগে সব...
তখনও মুঠি বাড়িয়ে রাখা শিশু ভোলানাথকে বললাম - "আমাকে তোরা যে নোট টা দিয়েছিলি, একদম ঠিক আছে সেটা। কোনো ছেঁড়া নেই...আর এবার হেঁটে হেঁটে যাবি...দৌড়বি না..."
ফেরার পথে মনে হলো...কুমড়ো শাক খুব ভালো জিনিস...পুঁই ও...এবার থেকে সপ্তাহে প্রতিদিন ই খাওয়া উচিৎ... কাল তো লকডাউন...মঙ্গলবার ই আবার বেরোতে হবে আমাকে, বাজারে।
কুড়ি টাকার ছেঁড়া 'লোট' টা রেখে দেব আজীবন - ক্ষয়ে আসা সমাজের মাঝেও সততার দলিল হয়ে থাকুক ওটা আমার কাছে...থাকুক...থাকুক...
মিথ্যে বলেও যে কত তৃপ্তি পাওয়া যায়....
ইদানীং কালের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমি খুব, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হই না।।আর তাই, যখন ই বাইরে বেরোতে হয়, এক সাথে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনি যাতে অন্তত এক সপ্তাহ আর বেরোতে না হয়।
আজ রবিবার। তাই বাজার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য বেরোতে হয়েছিল। সারা সপ্তাহের মতো মাংস, মাছ, তরি তরকারি, ঠাকুরের ফুল, এমনকি সদ্য প্রকাশিত পুজোসংখ্যা -সবকিছু কেনা প্রায় শেষ...হঠাৎ নজর পড়ল দূরত্ববিধি মেনে রাস্তার এক কোণে বসে থাকা দুজনের দিকে। মলিন সালোয়ার কামিজ পরা, মাথায় ওড়না দেওয়া, কৃশকায়া একটি মেয়ে...কত আর বয়েস হবে...একুশ, বাইশ? আর তার পাশে একটি ছোট্ট শিশু - বছর পাঁচ বা ছয়ের। মাটি মাটি খালি গা...একটা পেন্টুল পরা। সামনে, মাটিতে রাখা একটি প্লাস্টিকের বস্তার ওপর কয়েক আঁটি কুমড়ো শাক, পুঁই শাক, লঙ্কা, পাতিলেবু।
একজন ও খদ্দের নেই সামনে।
আমাকে দেখেই কেমন চোখটা চকচক করে উঠল যেন মেয়েটির।
আর, আমার মনে হলো, কুমড়ো শাক বড্ড ভালো খেতে...রাঁধতে জানি না বটে, সে শিখে নেব বড়দের কারো কাছ থেকে। পাতিলেবু তো ভিটামিন সি...এইসময়ে তো খেতেই হবে! আর লঙ্কার মতো দরকারি কিছু হয় নাকি! সে যত ই বাড়িতে থাকুক না কেন! তাই, দু আঁটি শাক, চারটে লেবু, একশো গ্রাম লঙ্কা কেনার পর দেখি - মাত্র তিরিশ টাকার সওদা হয়েছে। বাড়িয়ে দিলাম একটা পঞ্চাশ টাকার নোট। মেয়েটি একটু কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল "খুচরো লাই?"
আমার কাছে ছিল না। শুনে বস্তা উলটে একটা ব্যাগ বের করে একটু খুঁজে একটা কুড়ি টাকার নোট বের করে দিল। দেখেই মনে হচ্ছিল, টাকা বোধহয় বেশি নেই ওর ভেতর।
যাই হোক, ভারি ব্যাগটা নিয়ে হাঁটছি...কয়েক পা ই মাত্র গেছি...হঠাৎ পেছন থেকে অন্য একজন ব্যাপারি ডেকে উঠলেন "ও দিদি, আপনাকে ডাকছে তো..."
তাকিয়ে দেখি, সেই মাটি মাটি শিশুটি দৌড়ে আসছে আমার দিকে। পায়ে একটা অনেক বড় রবারের চটি...তাই খোঁড়াচ্ছে। আমি বেশ অবাক ই হয়েছিলাম...কী হলো রে বাবা!
আমার সামনে এসে বাচ্চাটি বলল "আম্মু পাটাল...লোটটা ছেঁড়া আসে..."
বুঝলাম! আমার দেওয়া পঞ্চাশ টাকার নোট টা ছেঁড়া ছিল! আমার বদভ্যাস হলো, আমি কখনো টাকা দেখে নিই না! খুব খারাপ লাগছিল, আবার ভাবছিলাম...খুচরো তো নেই...একশো টাকা খুচরো করাতে হবে এইবার।
ভাবতে ভাবতেই দেখি ক্ষুদেটা মুঠি করা হাত থেকে দুটো পাঁচ টাকার কয়েন, আর ক'টা একটাকা, দু'টাকার কয়েন মেলে দিয়েছে আমার দিকে। তারপর বলল "আম্মু বলেসে লোট টা দিয়ে দিতে..."
এতক্ষণে বুঝলাম! ওদের দেওয়া নোটটা ছেঁড়া ছিল...। তাই...।
মনে পড়ে গেল...আমাকে দেখে ওদের চকচকে চোখের কথা...আমাকে ফিরতি টাকা দিতে গিয়ে আতান্তরে পড়া চোখের কথাও...
কিন্তু, আমার বরাবর বেশি কথা বলার অভ্যেস। তাই বললাম "অ্যাই, তুই এই বড় চটি পরেছিস কেন? আবার দৌড়চ্ছিলি? যদি পরে যেতিস?"
বাচ্চাটা একটু চুপ করে বলল "আমার চটি ছিঁড়ে গেসে। আব্বু কিনে দেবে পরে। তুমি লোট টা দাও..."
খটখটে সকালের কটকটে রোদ...তবু কেন যে ঝাপসা লাগে সব...
তখনও মুঠি বাড়িয়ে রাখা শিশু ভোলানাথকে বললাম - "আমাকে তোরা যে নোট টা দিয়েছিলি, একদম ঠিক আছে সেটা। কোনো ছেঁড়া নেই...আর এবার হেঁটে হেঁটে যাবি...দৌড়বি না..."
ফেরার পথে মনে হলো...কুমড়ো শাক খুব ভালো জিনিস...পুঁই ও...এবার থেকে সপ্তাহে প্রতিদিন ই খাওয়া উচিৎ... কাল তো লকডাউন...মঙ্গলবার ই আবার বেরোতে হবে আমাকে, বাজারে।
কুড়ি টাকার ছেঁড়া 'লোট' টা রেখে দেব আজীবন - ক্ষয়ে আসা সমাজের মাঝেও সততার দলিল হয়ে থাকুক ওটা আমার কাছে...থাকুক...থাকুক...
মিথ্যে বলেও যে কত তৃপ্তি পাওয়া যায়....