01-11-2020, 07:59 PM
পর্ব - ১৪
(আগের পর্বের পর)
ছেলেকে কলেজে ছেড়ে এসে শ্রীপর্ণা শাড়ী ছেড়ে বাড়ির ম্যাক্সি পড়ে নিয়েছিল. কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে সে নীচে গিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য চা করলো আর শশুর শাশুড়ির চা তাদের ঘরে দিয়ে কিছুক্ষন তাদের সাথেই বসে গল্প করলো. তারপরে উঠে এলো দোতলায়. আজ অনেক কাপড় জমেছে কাচার জন্য. নিজের ছেলে আর স্বামীর জামা কাপড় সে নিজেই কাচে. শশুর শাশুড়ির কাপড় শাড়ী আগে বাড়ির কাজের বৌ কেচে দিতো কিন্তু বছর খানেক সে চলে গেছে. এখন সব কাজ অর্কর মাই করে. যদিও শশুর এত কাজ করতে বারণ করেছিল. নিজের ছেলের জন্য খুঁজে খুঁজে এত সুন্দরী আর যোগ্য বৌ খুঁজে এনেছিলেন তিনি তাকে দিয়ে এত কাজ করানোর বিপক্ষেই ছিলেন. আসলে সে বৌমাকে নিজের মেয়ের মতোই মনে করেন কিন্তু শ্রীপর্ণাই সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে.
সব জামা কাপড় কেচে দুই বালতি কাপড় নিয়ে ছাদে গেলো অর্কর মা. বেশ রোদ আছে. ভালোই হলো. ছাদের ওপরে উঠে দেখলো এত পরেও বেশ কয়েকটা কাক রয়েছে ছাদে. সেগুলোকে তাড়িয়ে সে ছাদে টাঙানো দড়ির ওপর কাপড় মেলতে লাগলো. মেলতে মেলতে সে বালতি থেকে যখন ছেলের একটা জামা তুলতে যাবে এমন সময় তার চোখ গেলো নীচে রাস্তার দিকে. এরকম সময় ফাঁকাই থাকে রাস্তাটা. শ্রীপর্ণা দেখলো একটা লোক তাদের বাড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে.
আরে... এত সেই লোকটা!
এর আগেও দুবার শ্রীপর্ণা লোকটাকে দেখেছে. প্রথমবার দেখেছিলো কয়েকদিন আগে এই রাস্তাতেই. তখন এত ভালো খেয়াল করেনি. শুধু লোকটার উচ্চতা আর দেহ গঠন দেখে চোখে পড়েছিল. প্রায় ৬ ফুটের ওপর লম্বা, তেমনি রোগা আর কালো. দ্বিতীয়বার দেখেছিলো ছেলেকে নিয়ে কলেজে যাবার সময় পরশু দিন. অর্ক ব্যাগে বই খাতা ঢোকাচ্ছিলো আর শ্রীপর্ণা তাড়া দিচ্ছিলো. তখন আবার খোলা দরজা দিয়ে বাইরে গেটের দিকে চোখ পড়েছিল. মনে হলো একটা লম্বা কালো লোক দ্রুত হেঁটে চলে গেলো. আর আজ আবার. কিন্তু আজতো লোকটা সোজা তাকিয়ে তাদের বাড়ির দিকেই. কে এ? কোনো বদ মতলব আছে নাকি? ডাকাত গুন্ডা নয়তো?
শ্রীপর্ণা তাড়াতাড়ি হাতের জামাটা শুকোতে দিয়ে একটু রাগী ভাবেই এগিয়ে গেলো ছাদের ধারে. কিন্তু একি? কোথায় সে? পুরো রাস্তা ফাঁকা. এদিক ওদিক ভালো করে তাকালো. কাউকে দেখতে পেলোনা অর্কর মা. এত দ্রুত কোথায় গেলো লোকটা? সে ভাবলো এই ব্যাপারটা আজকে একবার অর্কর বাবাকে জানাতে হবে.
ওদিকে অর্কর মামা বসে শুনছে অবনী বাবুর বন্ধুর অতীতের ঘটনা-
অবনী বাবু: দিব্যেন্দুর বাড়ি গেলাম পরের দিনই. ওদের বাড়ির এক পুরোনো চাকর এসে আমায় ভেতরে নিয়ে গেলো. সে আমায় ভালো করেই চেনে তাই কোনো অসুবিধাই হলোনা. আমি ঘরে অপেক্ষা করতে লাগলাম... কিছুক্ষন পরেই আমার বন্ধু ঘরে এলো. ঘরে যে মানুষটাকে ঢুকতে দেখলাম তাকে দেখে চমকে উঠলাম. এ কি অবস্থা আমার বন্ধুর?
নিজের বন্ধুকে দেখে যে কোনোদিন চমকে উঠবো ভাবিনি কখনো. এ কি অবস্থা দিব্যেন্দুর! প্রথমে তো এক মুহূর্তের জন্য চিনতেই পারিনি! আমার সেই পেটুক বন্ধুটা একেবারে রোগা লিকলিকে হয়ে গেছে, চোখ কোটরে ঢোকা, হাতে একটা হালকা কাঁপুনি. একি অবস্থা হয়েছে ওর এই কয়েক মাসে? আমি চিন্তিত ভাবে ওকে জিজ্ঞেস করাতে ও বললো..
দিব্যেন্দু: লোভের ফল...... আমার পাপের ফল.
অবনী: পাপ? কিসের পাপ?
দিব্যেন্দু: যে চলে গেছে... তাকে ফিরিয়ে আনতে চাওয়া পাপই রে... আর আমি সেই পাপেই.....
অবনী: আরে কি সব উল্টো পাল্টা বলছিস? ঠিক করে বল কি হয়েছে তোর? তোকে এইভাবে দেখবো... ভাবতেই পারছিনা... কি হয়েছে সব বল আমায়?
দিব্যেন্দু আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো: কি বলবো? আমি যা বলবো... তা কি তুই মানবি? মানবি না...... আমি জানি.. কেউ মানবেনা.
অবনী: আহ!.... বলনা... কি হয়েছে?
দিব্যেন্দু: জানিস তো... একটা কথা আছে... অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো নয়..... কখনো কখনো তা মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে... আমার সাথেও তাই হয়েছে. পলকের সুখ যে এইভাবে ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে তা আমি ভাবতেও পারিনি রে...... আমি.. আমি পাপ করেছি... পাপ!
অবনী বাবু দিব্যেন্দুর দুই হাত ধরে বললেন: তুই সব খুলে বল ভাই.... কিকরে হলো এমন... আমি সব বিশ্বাস করবো.. তুই তো আর আমায় এমনি এমনি মিথ্যে বলবিনা... বল.
দিব্যেন্দু বাবু নিজের বন্ধুর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন: সুচিত্রা কে আমি কি পরিমানে ভালোবাসি তা তোকে আর নতুন করে কি বলবো... তুই তো সবই জানিস... তাই সেই মানুষটাকে আবার যখন ফিরে পেলাম তখন আনন্দে আমি সব ভুলে গেছিলাম.... ভুলে গেছিলাম এ অসম্ভব.. সে নেই.
অবনী বাবু চমকে উঠে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন: আবার ফিরে পেলি মানে? কি বলছিস তুই?
দিব্যেন্দু বাবু মুচকি হেসে বললেন: আমি জানতাম এটা শুনে তোর রিঅ্যাকশন এরকমই হবে. কিন্তু তুই কথা দিয়েছিস আমার সব কথা বিশ্বাস করবি.... আমি যা বলছি তা একটুও বানিয়ে নয়... ভাবিসনা আমার মাথার গন্ডগোল হয়েছে.... তাও বা বলি কিকরে? ওকে ফিরে পেয়ে সত্যিই মাথার গন্ডগোল হয়ে গেছিলো. ভুলে গেছিলাম সে আর নেই.... নিজের হাতেই তার তার দেহ জড়িয়ে কেঁদেছি.......... যাকগে.... যা বলছিলাম... মনে আছে তোর কাছ থেকে একটা মূর্তি কিনেছিলাম আমি বেশ কিছু সময় আগে.. একটা মেয়ের মূর্তি?
অবনী বাবু হ্যা সূচক মাথা নাড়লেন.
দিব্যেন্দু বাবু বললেন: সেটা কিনে আনার পর থেকেই এসবের শুরু. প্রথম প্রথম স্বপ্নে সুচিত্রাকে দেখাতাম... ভাবতাম ওর কথা ভাবি বলে স্বপ্নে ওকে দেখি... কিন্তু একদিন দেখি ও সত্যিই এসেছে আমার কাছে. আমি ওকে স্পর্শ করে বুঝেছি ওটা স্বপ্ন নয়... ও সত্যিই এসেছে... আমার সুচিত্রা আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে! উফফফ আনন্দে দিশেহারা অবস্থা আমার..... সেই থেকে প্রতিদিন রাতে ও আসতো আমার কাছে... আমি আর ও একসাথে কিছু মুহূর্ত উপভোগ করতাম.... তারপরে ও আবার চলে যেত. ও আমায় বলতো যে সে রোজ রাত্রে আমার কাছে এইভাবে আসবে. আমরা সারারাত একসাথে কাটাবো.... কিন্তু এই কথা যেন কেউ না জানতে পারে. আমিও কাউকে জানতে দিই নি.... এমনকি আমাদের ছেলেকেও নয়. বিশ্বাস কর ভাই.... ব্যাপারটা আমার কাছে একটুও ভয়ের ছিলোনা.... একবারও মনে হয়নি সে নেই... বরং আমার ভেতরটা আনন্দে ভোরে উঠেছিল... প্রতিদিন রাতে অন্তত আমার সুচিত্রা আমার কাছে আসতো এটাই আমার কাছে অনেক.
অবনী: তারপরে?
দিব্যেন্দু: তারপরে ধীরে ধীরে আমার কি হতে লাগলো জানিনা.... কাজ কারবার ভুলে আমি শুধু রাতের অপেক্ষা করতাম.. কখন রাত নামবে আর আমার সূচি আমার কাছে আসবে..... এমনকি আমার তাপসকেও অন্য ঘরে শুতে পাঠিয়ে দিলাম. ও আমাকে ছাড়া শুতেই পারতোনা কিন্তু তখন যেন সেসব আমার মাথাতেই ঢুকতোনা.... তখন শুধুই সুচিত্রা আর সুচিত্রা. ওকে নিয়েই মেতে থাকতাম সারা রাত্রি. আমি বুঝতে পারছিলাম আমি কেমন কমজোর হয়ে যাচ্ছি, খাওয়া দাবার ওপর কেমন অরুচি এসে গেছিলো.. ঠিকমতো খেতেও পারতাম না, একটুতেই কেমন রাগ উঠে যেত মাথায়... কতবার সামান্য কারণেই আমার সোনা ছেলেটাকে বকেছি তার ঠিক নেই. কেমন যেন সকলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম আমি. কিন্তু শেষে একদিন যা হলো... তা কোনোদিন দেখতে হবে তা ভাবতেও পারিনি.
অবনী বাবু বন্ধুর সব শুনে ভাবলেন - তারমানে.... তাপস যা বলেছিলো তা কি সত্যি? ও সত্যিই ওর মাকে দেখতো? কিন্তু এ কিকরে সম্ভব? যে চলে গেছে সে কিকরে.... যাইহোক..... তিনি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন - কি দেখেছিলি তুই?
দিব্যেন্দু বাবুর ক্লান্ত মুখে হঠাৎ রাগ ফুটে উঠলো. দাঁতে দাঁত চিপে নিজেকেই বললেন: কি ভেবেছিলাম ওকে আর ও! উফফফফ কি ঘৃণ্য দৃশ্য ছি: জানিস অবনী.....আমার এইভাবেই চলছিল. নিজের ওপর কোনো নজরই ছিলোনা আমার. না খেয়ে, না নিজের খেয়াল রেখে , না ছেলের দিকে নজর দিয়ে আমার এই অবস্থা হয়েছে তবুও আমার সেই দিকে কোনো খেয়াল ছিলোনা. ভেবেছিলাম আমার... আমার স্ত্রী আমার কাছে আবার ফিরে এসেছে... এর থেকে ভাল আর কি হতে পারে? কিন্তু... কিন্তু সেই নরকের কীট আমার স্ত্রী হতেই পারেনা... না.. না... হতেই পারেনা.....!! নইলে সে কখনো ওই ঘৃণ্য কাজ করতেই পারতোনা!!
ডুকরে প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা হয়েছিল দিব্যেন্দুর. অবনী বাবু বন্ধুর পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন: কি হয়েছিল রে... সব খুলে বল ভাই?
অবনী বাবুর হাতে হাত রেখে দিব্যেন্দু তাকিয়ে বলে: আমাদের বাড়িতে এক নতুন পাহারাদারকে নিয়োগ করেছিলাম আমি. বাড়িতে তো আমরা মালিক বলতে আমি আর আমার ছেলে ছাড়া সেরম কেউ নেই.. বাকি সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে. তাই নতুন লোক নিয়োগ করি. তার নাম চন্দন. বেশ সন্ডাই চেহারার তেমনি সাহস. রাতে সেই মূলত পাহারা দিতো. কিন্তু সে কাজে নিয়োগের পর থেকেই আমি দেখাতাম সুচিত্রা বার বার আমায় তার বিষয় প্রশ্ন করতো
সুচিত্রা: ওকে গো? নতুন লোক রেখেছো বুঝি?
দিব্যেন্দু: হ্যা.... রাতে পাহারা দেবার জন্য. তুমি কখন দেখলে?
সুচিত্রা: এইতো আসার সময়..... বাহ্..... বেশ চেহারা তো তোমার নতুন পাহারাদারের..... সত্যিই পুরুষ মানুষ এরকমই হওয়া উচিত. কি পেশিবহুল চেহারা তেমনি গায়ের জোর আছে নিশ্চই.
সেদিন ওর কথাবার্তায় আর ওর চোখে মুখে এমন একটা ভাব ফুটে উঠেছিল চন্দনকে নিয়ে আলোচনা করার সময়... ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি..... ও তো.... ও তো আমার স্ত্রী, জমিদার গিন্নি..... তাহলে ওই সামান্য গরিব পাহারাদারের ব্যাপারে এত প্রশ্ন কেন ওর? এত... এত... তারিফ করছে কেন ওর? আর চোখে ঐরকম দৃষ্টি কেন ওর? নিজের স্ত্রীয়ের রাগ হাসি দুঃখ ভালোবাসার সব রকমের চাহুনি দেখেছি আমি.... কিন্তু... কিন্তু এই চাহুনি আগে দেখিনি. কেমন যেন একটা লোভ ছিল ওই চোখে. ওই নীল চোখে.
অবনী: নীল চোখ? কি বলছিস কি? বৌদির চোখের মণি তো কালো......
দিব্যেন্দু: জানি.... সব শোন্ আগে...এরপরে প্রতি রাতে সে আমার কাছে আসতো ঠিকই কিন্তু আমায় ঘুম পাড়িয়ে তারপরে ফিরে যেতে শুরু করলো সে. আগে সে আমার থেকে সেদিনের মতো বিদায় নিয়ে এমনিতেই চলে যেত কিন্তু হঠাৎ তার এই পরিবর্তন আমার মনে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে. একদিন..... একদিন আমি এমনিতেই ঘুমোনোর নাটক করে শুয়ে রইলাম. দেখি কিছুক্ষন পরে ও চলে যাচ্ছে. আমিও কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ওর পিছু নিলাম... কিন্তু কই? কেউ তো কোথাও নেই! আমি আবার ঘরে ফিরে এলাম. কেন জানিনা মনটা খুঁত খুঁত করছিলো. মনে হচ্ছিলো কিছু একটা ঘটছে যেটা আমি জানতে পারছিনা.... অথচ আমার জানা উচিত. তখন কেন জানি হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর চিন্তা আমার মাথায় এলো..
তাহলে কি ও!!!
আমি তাড়াতাড়ি নেমে একতলায় নামতে লাগলাম. সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বার বার বুকটা ধক ধক করছিলো. বার বার নিজেকে নিজেই বলছিলাম যেন আমার চিন্তা মিথ্যে হয় যেন আমি ভুল প্রমাণিত হই.... কিন্তু চন্দনের ঘরের সামনে যেতেই ভেতর থেকে নারীর আর পুরুষের গোঙানি শুনেই বুঝলাম আমার ধারণাই সঠিক. দরজা ভেজানো ছিল. আমি দরজার ফাঁকে চোখ রাখতেই দেখি সেই বীভৎস ঘৃণ্য দৃশ্য!!
আমার সুচিত্রা.... আমার সুচিত্রা চন্দনের সাথে.... সামান্য কাজের লোকের সাথে!! উফফফফ!!!
আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা দিব্যেন্দু.. কেঁদে ফেললো সে. অবনী বাবু পাশে বশে বুকে টেনে নিলেন বন্ধুকে.
দিব্যেন্দু কাঁদতে কাঁদতেই বললো: একবার ভাব অবনী... যে স্ত্রীকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি.... যাকে এতোই ভালোবেসেছি যে তার পরে আর বিয়ে করার চিন্তাও মাথাতে আনিনি.... আমি দেখছি আমার সেই সুচিত্রা এক পাহারাদারের ওপর বসে লাফাচ্ছে..... উফফফফফ কি জঘন্য!! আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি.... প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছিলো আমার ওর ওপর..... আমি বুঝে গেছিলাম.... এ আমার সেই সুচিত্রা নয়, হতেই পারেনা! এ কোনো মায়াবিনী... আমায় এতদিন শুধু ব্যবহার করেছে.. এবারে আমার থেকেও শক্তিশালী পুরুষ পেয়ে তাকে ব্যবহার করছে!
রাগের মাথায় ওপর থেকে আমার বন্দুকটা নিয়ে এসে সজোরে দরজায় ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকি. আমায় দেখে দুজনেই...... হ্যা দুজনেই চমকে ওঠে. আমি প্রচন্ড ঘেন্না মনে চিল্লিয়ে ওকে বলি - শালী রেন্ডি!! বেশ্যা!! এত খিদে তোর? আমাকে দিয়েও শান্তি হয়না... এখন একে নিয়ে মজা লুটছিস? কুত্তি!! তুই আমার সুচিত্রা নয়.... হতেই পারিসনা তুই... কোথায় আমার স্ত্রী সুচিত্রা আর কোথায় তুই.....মায়াবিনী শয়তানি.... শালী নরকের কীট! চলে যা! চলে যা.... আর কোনোদিন ফিরে আসবিনা! আমি আদেশ করছি চলে যা!
সে ধীরে ধীরে আমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো. যাবার সময় সে একবার আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নোংরা হাসি হাসলো তারপর কোথায় যে গেলো আর দেখতেই পেলাম না তাকে. ওদিকে সেই চন্দন আমার পায়ে জড়িয়ে সে কি কান্না.
-- বাবু.. বাবু আমায় মাফ করে দেন.... এই মহিলা আজ তিনদিন ধরে রোজ আসে আমার ঘরে.... তারপরে আমার কিহয় আমি জানিনা... আমি সব ভুলে যাই.. বাবু... আমার কোনো দোষ নেই বাবু.... আমি চলে যাবো বাবু... আমায় প্রাণে মারবেন না.
আমি তাকে ছেড়ে দি... সে পরের দিনই চলে যায়. কিন্তু আমি শুধু তাকেই বাড়ি থেকে বার করে দিইনি..... আরেকটা জিনিস দূর করে দিয়েছি.... সেটাই সব নষ্টের গোড়া.... ওটা আসার পর থেকেই এসবের শুরু.
অবনী: কি.... কি বার করে দিয়েছিস
দিব্যেন্দু: তোর দোকান থেকে কেনা.... ওই... ওই মূর্তিটা... ওটা অভিশপ্ত! ওটা নিশ্চই খুব খারাপ কিছু..... ওটার জন্যই এসব হয়েছে আমার সাথে... নইলে আগে তো কোনোদিন কিছু হয়নি.... আর যবে থেকে ওটা ফেলে দিয়েছি.... তারপর থেকে আমি অনেকটা শান্ত..... এইকদিন যে আমার সাথে কি হয়েছিল.... আমি যেন নিজের মধ্যেই ছিলাম না.... তবে এখন.... অনেকটা হালকা লাগছে.
অবনী: কোথায় ফেলেছিস ওটা?
দিব্যেন্দু: আমাদের বাড়ির উত্তরের যে জঙ্গল সেখানেই ছুড়ে ফেলে দিয়ে এসেছি কিছুদিন আগে. কিন্তু......
অবনী: কিন্তু কি?
দিব্যেন্দু: দুদিন আগেই আমার ছেলেকে নিয়ে ঐদিকটায় বেড়াতে গেছিলাম.... কিন্তু ওখানে গিয়ে আমি আর ওটা খুঁজে পাইনি. যদিও আমি আর মুখদর্শন করতে চাইনা সেটার কিন্তু যদি অন্য কারোর হাতে সেটা পরে? তাই ওটা খুজছিলাম.. যদি পেতাম তাহলে হয়তো কোথাও পুঁতে দিতাম.... ওসব জিনিস ভাঙাও উচিত নয়. কিন্তু কোথাও পেলাম না আর.
অবনী: ওতো বড়ো জঙ্গল... কোথায় ফেলেছিস তা কি মনে আছে... তার চেয়ে ছাড়... গেছে.. আপদ গেছে. আমি এসব মানতাম না... কিন্তু তুই যা বললি তা শোনার পর তো....
দিব্যেন্দু: তাপস রোজ বলতো... বাবা দেখো.. কত কাক আমাদের ছাদে... আমি ওসব নজরই দিইনি.... কিন্তু এখন সেসব কিছুই নেই. নিজেকে প্রচন্ড দোষী লাগছেরে বন্ধু.... নিজের ছেলের কাছে দোষী, নিজের স্ত্রীয়ের কাছে দোষী.
অবনী: আর এসব ভাবিসনা.... এখন সব ঠিক হয়ে গেছে তো.
দিব্যেন্দু: জানিস আরেকটা ব্যাপার হতো. কেন জানি মনে হতো কেউ যেন আমাদের বাড়ির ওপর নজর রাখে. মাঝে মাঝে দেখাতাম একটা রোগা লম্বা লোক বাড়ির বাইরে. বেশ কয়েকবার. ব্যাপারটা ভালো লাগেনি আমার. তাই রাতে পাহারাও বাড়িয়ে দিয়েছিলাম.
অবনী: রোগা লম্বা লোক? বাড়ির ওপর নজর রাখতো?
দিব্যেন্দু: না এটা আমার অনুমান.... হয়তো অন্য ব্যাপার হতে পারে কিন্তু বেশ কয়েকবার আমি লোকটাকে দেখেছি আসে পাশে. বাবারে... কি লম্বা আর তেমনি কালো. কিন্তু.....
অবনী: কিন্তু কি?
দিব্যেন্দু: বেশ কয়েকদিন আর দেখিনি লোকটাকে. হয়তো অন্য কাজে এদিক এসেছিলো. যাইহোক ছাড়.... আমি..... আমি এসব ভুলতে চাই... আমি আমার ছেলেটাকে নিয়ে আবার নতুন করে বাঁচতে চাই. ওই আমার সব এখন.
এতক্ষন ধরে এতকিছু বলার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন অবনী বাবু. তারপরে চাইলেন দীপঙ্কর বাবুর দিকে. তিনি অবাক হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে. সেই মুখ দেখে সামান্য হেসে অবনী বাবু বললেন - নিশ্চই ভাবছেন কোন পাগলের কাছে এসেছেন.... এসব আবার হয় নাকি? কি? তাইতো?
একটু লজ্জা পেয়ে অর্কর মামা হেসে বললেন: না না তা নয়.... আমি যদিও অলোকিক ব্যাপার টেপার বেশি মানিনা.... ওসব আজগুবি মনে করি... কিন্তু....... আপনার থেকে সব শুনে......
অবনী: আমিও আপনার মতোই ছিলাম বিশ্বাস করুন.... বন্ধুর ছেলের মুখে সব শুনেও বিশ্বাস করিনি কিছুই.... কেন করবো? এসব...... এসব হয় নাকি? বাচ্চাটা নিশ্চই ভুলভাল দেখেছে... এসব ভেবেছিলাম.... কিন্তু নিজের বন্ধুর ওই অবস্থা আর সব শুনে আমি আর অবিশ্বাস করে থাকতে পারিনি. এসব অলোকিক ব্যাপারে প্রতি আমার ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়. বিশেষ করে ওই.... ওই লোকটা আমায় কি জিনিস গছিয়ে দিয়েছিলো জানার জন্যই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলাম আমি. তাই নানারকম নিষিদ্ধ তন্ত্র বিষয়ক পুস্তক দেশ বিদেশ থেকে জোগাড় করতে শুরু করলাম, নানারকম লোকের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম যারা এসব বিষয়ে জানে. শেষে আমি আমার উত্তর পেলাম এক জিপসি মহিলার কাছে. সে আমায় জানালো ওই মূর্তির আসল পরিচয় আর সব শুনে তো আমার... আমার ভয় বেড়ে গেছিলো. এ কি জিনিস আমার বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছিলাম অজান্তে!!
দীপঙ্কর উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন : কি? কিসের মূর্তির এটা অবনী বাবু? এর পরিচয় কি?
চলবে......
অবনী: তারপরে?
দিব্যেন্দু: তারপরে ধীরে ধীরে আমার কি হতে লাগলো জানিনা.... কাজ কারবার ভুলে আমি শুধু রাতের অপেক্ষা করতাম.. কখন রাত নামবে আর আমার সূচি আমার কাছে আসবে..... এমনকি আমার তাপসকেও অন্য ঘরে শুতে পাঠিয়ে দিলাম. ও আমাকে ছাড়া শুতেই পারতোনা কিন্তু তখন যেন সেসব আমার মাথাতেই ঢুকতোনা.... তখন শুধুই সুচিত্রা আর সুচিত্রা. ওকে নিয়েই মেতে থাকতাম সারা রাত্রি. আমি বুঝতে পারছিলাম আমি কেমন কমজোর হয়ে যাচ্ছি, খাওয়া দাবার ওপর কেমন অরুচি এসে গেছিলো.. ঠিকমতো খেতেও পারতাম না, একটুতেই কেমন রাগ উঠে যেত মাথায়... কতবার সামান্য কারণেই আমার সোনা ছেলেটাকে বকেছি তার ঠিক নেই. কেমন যেন সকলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম আমি. কিন্তু শেষে একদিন যা হলো... তা কোনোদিন দেখতে হবে তা ভাবতেও পারিনি.
অবনী বাবু বন্ধুর সব শুনে ভাবলেন - তারমানে.... তাপস যা বলেছিলো তা কি সত্যি? ও সত্যিই ওর মাকে দেখতো? কিন্তু এ কিকরে সম্ভব? যে চলে গেছে সে কিকরে.... যাইহোক..... তিনি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন - কি দেখেছিলি তুই?
দিব্যেন্দু বাবুর ক্লান্ত মুখে হঠাৎ রাগ ফুটে উঠলো. দাঁতে দাঁত চিপে নিজেকেই বললেন: কি ভেবেছিলাম ওকে আর ও! উফফফফ কি ঘৃণ্য দৃশ্য ছি: জানিস অবনী.....আমার এইভাবেই চলছিল. নিজের ওপর কোনো নজরই ছিলোনা আমার. না খেয়ে, না নিজের খেয়াল রেখে , না ছেলের দিকে নজর দিয়ে আমার এই অবস্থা হয়েছে তবুও আমার সেই দিকে কোনো খেয়াল ছিলোনা. ভেবেছিলাম আমার... আমার স্ত্রী আমার কাছে আবার ফিরে এসেছে... এর থেকে ভাল আর কি হতে পারে? কিন্তু... কিন্তু সেই নরকের কীট আমার স্ত্রী হতেই পারেনা... না.. না... হতেই পারেনা.....!! নইলে সে কখনো ওই ঘৃণ্য কাজ করতেই পারতোনা!!
ডুকরে প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা হয়েছিল দিব্যেন্দুর. অবনী বাবু বন্ধুর পাশে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন: কি হয়েছিল রে... সব খুলে বল ভাই?
অবনী বাবুর হাতে হাত রেখে দিব্যেন্দু তাকিয়ে বলে: আমাদের বাড়িতে এক নতুন পাহারাদারকে নিয়োগ করেছিলাম আমি. বাড়িতে তো আমরা মালিক বলতে আমি আর আমার ছেলে ছাড়া সেরম কেউ নেই.. বাকি সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে. তাই নতুন লোক নিয়োগ করি. তার নাম চন্দন. বেশ সন্ডাই চেহারার তেমনি সাহস. রাতে সেই মূলত পাহারা দিতো. কিন্তু সে কাজে নিয়োগের পর থেকেই আমি দেখাতাম সুচিত্রা বার বার আমায় তার বিষয় প্রশ্ন করতো
সুচিত্রা: ওকে গো? নতুন লোক রেখেছো বুঝি?
দিব্যেন্দু: হ্যা.... রাতে পাহারা দেবার জন্য. তুমি কখন দেখলে?
সুচিত্রা: এইতো আসার সময়..... বাহ্..... বেশ চেহারা তো তোমার নতুন পাহারাদারের..... সত্যিই পুরুষ মানুষ এরকমই হওয়া উচিত. কি পেশিবহুল চেহারা তেমনি গায়ের জোর আছে নিশ্চই.
সেদিন ওর কথাবার্তায় আর ওর চোখে মুখে এমন একটা ভাব ফুটে উঠেছিল চন্দনকে নিয়ে আলোচনা করার সময়... ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি..... ও তো.... ও তো আমার স্ত্রী, জমিদার গিন্নি..... তাহলে ওই সামান্য গরিব পাহারাদারের ব্যাপারে এত প্রশ্ন কেন ওর? এত... এত... তারিফ করছে কেন ওর? আর চোখে ঐরকম দৃষ্টি কেন ওর? নিজের স্ত্রীয়ের রাগ হাসি দুঃখ ভালোবাসার সব রকমের চাহুনি দেখেছি আমি.... কিন্তু... কিন্তু এই চাহুনি আগে দেখিনি. কেমন যেন একটা লোভ ছিল ওই চোখে. ওই নীল চোখে.
অবনী: নীল চোখ? কি বলছিস কি? বৌদির চোখের মণি তো কালো......
দিব্যেন্দু: জানি.... সব শোন্ আগে...এরপরে প্রতি রাতে সে আমার কাছে আসতো ঠিকই কিন্তু আমায় ঘুম পাড়িয়ে তারপরে ফিরে যেতে শুরু করলো সে. আগে সে আমার থেকে সেদিনের মতো বিদায় নিয়ে এমনিতেই চলে যেত কিন্তু হঠাৎ তার এই পরিবর্তন আমার মনে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে. একদিন..... একদিন আমি এমনিতেই ঘুমোনোর নাটক করে শুয়ে রইলাম. দেখি কিছুক্ষন পরে ও চলে যাচ্ছে. আমিও কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ওর পিছু নিলাম... কিন্তু কই? কেউ তো কোথাও নেই! আমি আবার ঘরে ফিরে এলাম. কেন জানিনা মনটা খুঁত খুঁত করছিলো. মনে হচ্ছিলো কিছু একটা ঘটছে যেটা আমি জানতে পারছিনা.... অথচ আমার জানা উচিত. তখন কেন জানি হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর চিন্তা আমার মাথায় এলো..
তাহলে কি ও!!!
আমি তাড়াতাড়ি নেমে একতলায় নামতে লাগলাম. সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বার বার বুকটা ধক ধক করছিলো. বার বার নিজেকে নিজেই বলছিলাম যেন আমার চিন্তা মিথ্যে হয় যেন আমি ভুল প্রমাণিত হই.... কিন্তু চন্দনের ঘরের সামনে যেতেই ভেতর থেকে নারীর আর পুরুষের গোঙানি শুনেই বুঝলাম আমার ধারণাই সঠিক. দরজা ভেজানো ছিল. আমি দরজার ফাঁকে চোখ রাখতেই দেখি সেই বীভৎস ঘৃণ্য দৃশ্য!!
আমার সুচিত্রা.... আমার সুচিত্রা চন্দনের সাথে.... সামান্য কাজের লোকের সাথে!! উফফফফ!!!
আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা দিব্যেন্দু.. কেঁদে ফেললো সে. অবনী বাবু পাশে বশে বুকে টেনে নিলেন বন্ধুকে.
দিব্যেন্দু কাঁদতে কাঁদতেই বললো: একবার ভাব অবনী... যে স্ত্রীকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি.... যাকে এতোই ভালোবেসেছি যে তার পরে আর বিয়ে করার চিন্তাও মাথাতে আনিনি.... আমি দেখছি আমার সেই সুচিত্রা এক পাহারাদারের ওপর বসে লাফাচ্ছে..... উফফফফফ কি জঘন্য!! আর মাথা ঠিক রাখতে পারিনি.... প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছিলো আমার ওর ওপর..... আমি বুঝে গেছিলাম.... এ আমার সেই সুচিত্রা নয়, হতেই পারেনা! এ কোনো মায়াবিনী... আমায় এতদিন শুধু ব্যবহার করেছে.. এবারে আমার থেকেও শক্তিশালী পুরুষ পেয়ে তাকে ব্যবহার করছে!
রাগের মাথায় ওপর থেকে আমার বন্দুকটা নিয়ে এসে সজোরে দরজায় ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকি. আমায় দেখে দুজনেই...... হ্যা দুজনেই চমকে ওঠে. আমি প্রচন্ড ঘেন্না মনে চিল্লিয়ে ওকে বলি - শালী রেন্ডি!! বেশ্যা!! এত খিদে তোর? আমাকে দিয়েও শান্তি হয়না... এখন একে নিয়ে মজা লুটছিস? কুত্তি!! তুই আমার সুচিত্রা নয়.... হতেই পারিসনা তুই... কোথায় আমার স্ত্রী সুচিত্রা আর কোথায় তুই.....মায়াবিনী শয়তানি.... শালী নরকের কীট! চলে যা! চলে যা.... আর কোনোদিন ফিরে আসবিনা! আমি আদেশ করছি চলে যা!
সে ধীরে ধীরে আমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলো. যাবার সময় সে একবার আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নোংরা হাসি হাসলো তারপর কোথায় যে গেলো আর দেখতেই পেলাম না তাকে. ওদিকে সেই চন্দন আমার পায়ে জড়িয়ে সে কি কান্না.
-- বাবু.. বাবু আমায় মাফ করে দেন.... এই মহিলা আজ তিনদিন ধরে রোজ আসে আমার ঘরে.... তারপরে আমার কিহয় আমি জানিনা... আমি সব ভুলে যাই.. বাবু... আমার কোনো দোষ নেই বাবু.... আমি চলে যাবো বাবু... আমায় প্রাণে মারবেন না.
আমি তাকে ছেড়ে দি... সে পরের দিনই চলে যায়. কিন্তু আমি শুধু তাকেই বাড়ি থেকে বার করে দিইনি..... আরেকটা জিনিস দূর করে দিয়েছি.... সেটাই সব নষ্টের গোড়া.... ওটা আসার পর থেকেই এসবের শুরু.
অবনী: কি.... কি বার করে দিয়েছিস
দিব্যেন্দু: তোর দোকান থেকে কেনা.... ওই... ওই মূর্তিটা... ওটা অভিশপ্ত! ওটা নিশ্চই খুব খারাপ কিছু..... ওটার জন্যই এসব হয়েছে আমার সাথে... নইলে আগে তো কোনোদিন কিছু হয়নি.... আর যবে থেকে ওটা ফেলে দিয়েছি.... তারপর থেকে আমি অনেকটা শান্ত..... এইকদিন যে আমার সাথে কি হয়েছিল.... আমি যেন নিজের মধ্যেই ছিলাম না.... তবে এখন.... অনেকটা হালকা লাগছে.
অবনী: কোথায় ফেলেছিস ওটা?
দিব্যেন্দু: আমাদের বাড়ির উত্তরের যে জঙ্গল সেখানেই ছুড়ে ফেলে দিয়ে এসেছি কিছুদিন আগে. কিন্তু......
অবনী: কিন্তু কি?
দিব্যেন্দু: দুদিন আগেই আমার ছেলেকে নিয়ে ঐদিকটায় বেড়াতে গেছিলাম.... কিন্তু ওখানে গিয়ে আমি আর ওটা খুঁজে পাইনি. যদিও আমি আর মুখদর্শন করতে চাইনা সেটার কিন্তু যদি অন্য কারোর হাতে সেটা পরে? তাই ওটা খুজছিলাম.. যদি পেতাম তাহলে হয়তো কোথাও পুঁতে দিতাম.... ওসব জিনিস ভাঙাও উচিত নয়. কিন্তু কোথাও পেলাম না আর.
অবনী: ওতো বড়ো জঙ্গল... কোথায় ফেলেছিস তা কি মনে আছে... তার চেয়ে ছাড়... গেছে.. আপদ গেছে. আমি এসব মানতাম না... কিন্তু তুই যা বললি তা শোনার পর তো....
দিব্যেন্দু: তাপস রোজ বলতো... বাবা দেখো.. কত কাক আমাদের ছাদে... আমি ওসব নজরই দিইনি.... কিন্তু এখন সেসব কিছুই নেই. নিজেকে প্রচন্ড দোষী লাগছেরে বন্ধু.... নিজের ছেলের কাছে দোষী, নিজের স্ত্রীয়ের কাছে দোষী.
অবনী: আর এসব ভাবিসনা.... এখন সব ঠিক হয়ে গেছে তো.
দিব্যেন্দু: জানিস আরেকটা ব্যাপার হতো. কেন জানি মনে হতো কেউ যেন আমাদের বাড়ির ওপর নজর রাখে. মাঝে মাঝে দেখাতাম একটা রোগা লম্বা লোক বাড়ির বাইরে. বেশ কয়েকবার. ব্যাপারটা ভালো লাগেনি আমার. তাই রাতে পাহারাও বাড়িয়ে দিয়েছিলাম.
অবনী: রোগা লম্বা লোক? বাড়ির ওপর নজর রাখতো?
দিব্যেন্দু: না এটা আমার অনুমান.... হয়তো অন্য ব্যাপার হতে পারে কিন্তু বেশ কয়েকবার আমি লোকটাকে দেখেছি আসে পাশে. বাবারে... কি লম্বা আর তেমনি কালো. কিন্তু.....
অবনী: কিন্তু কি?
দিব্যেন্দু: বেশ কয়েকদিন আর দেখিনি লোকটাকে. হয়তো অন্য কাজে এদিক এসেছিলো. যাইহোক ছাড়.... আমি..... আমি এসব ভুলতে চাই... আমি আমার ছেলেটাকে নিয়ে আবার নতুন করে বাঁচতে চাই. ওই আমার সব এখন.
এতক্ষন ধরে এতকিছু বলার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন অবনী বাবু. তারপরে চাইলেন দীপঙ্কর বাবুর দিকে. তিনি অবাক হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে. সেই মুখ দেখে সামান্য হেসে অবনী বাবু বললেন - নিশ্চই ভাবছেন কোন পাগলের কাছে এসেছেন.... এসব আবার হয় নাকি? কি? তাইতো?
একটু লজ্জা পেয়ে অর্কর মামা হেসে বললেন: না না তা নয়.... আমি যদিও অলোকিক ব্যাপার টেপার বেশি মানিনা.... ওসব আজগুবি মনে করি... কিন্তু....... আপনার থেকে সব শুনে......
অবনী: আমিও আপনার মতোই ছিলাম বিশ্বাস করুন.... বন্ধুর ছেলের মুখে সব শুনেও বিশ্বাস করিনি কিছুই.... কেন করবো? এসব...... এসব হয় নাকি? বাচ্চাটা নিশ্চই ভুলভাল দেখেছে... এসব ভেবেছিলাম.... কিন্তু নিজের বন্ধুর ওই অবস্থা আর সব শুনে আমি আর অবিশ্বাস করে থাকতে পারিনি. এসব অলোকিক ব্যাপারে প্রতি আমার ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়. বিশেষ করে ওই.... ওই লোকটা আমায় কি জিনিস গছিয়ে দিয়েছিলো জানার জন্যই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলাম আমি. তাই নানারকম নিষিদ্ধ তন্ত্র বিষয়ক পুস্তক দেশ বিদেশ থেকে জোগাড় করতে শুরু করলাম, নানারকম লোকের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম যারা এসব বিষয়ে জানে. শেষে আমি আমার উত্তর পেলাম এক জিপসি মহিলার কাছে. সে আমায় জানালো ওই মূর্তির আসল পরিচয় আর সব শুনে তো আমার... আমার ভয় বেড়ে গেছিলো. এ কি জিনিস আমার বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছিলাম অজান্তে!!
দীপঙ্কর উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন : কি? কিসের মূর্তির এটা অবনী বাবু? এর পরিচয় কি?
চলবে......
কেমন লাগলো আপডেট? জানাতে ভুলবেন না. ভালো লেগে থাকলে লাইক রেপস দিতে পারেন. ধন্যবাদ