31-10-2020, 06:35 PM
(This post was last modified: 31-10-2020, 06:35 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
লালচাঁদ ও বিশু পাগলা।
শিবানী দাশ।
সন্ধের পর থেকে রাত যতই গড়াচ্ছে, মনের উচাটন ভাবটা ও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বিশুর। এত রাত হল, কোথায় গেল ছেলেটা!
এদিকে বৃষ্টি থামার ও কোনো লক্ষণ নেই। কান ফাটানো কড় কড় আওয়াজের সঙ্গে কালো আকাশের বুক চিরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ শলাকার আঁকিবুকি।
বেশ চলছিল কদিন। লালকে ঘরের পাহারায় রেখে সকাল থেকে এদিক ওদিক ঘুরে খাবার দাবারের জোগাড় হয়ে যাচ্ছিল বেশ।
আজ তিন দিন ধরে ধুম জ্বর। মাথা তুলতে পারছে না বিশু। তবুও কষ্টেসৃষ্টে দিনে একবার জমানো চাল ডাল আলু --- পুরোনো কেরোসিন স্টোভটাতে ফুটিয়ে নিয়ে যা হোক করে চলে যাচ্ছিল দুজনের। কিন্তু কালকের থেকে ভাঁড়ে মা ভবানী। সকাল থেকে নিজের সঙ্গে ছেলেটার ও তাই হরিমটর।
বিশু বুঝতে পারছিল, খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে নিশ্চয়ই। এই করোনার আবহে আজকাল অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন জায়গায় খাবারের দানসত্র খুলে বসে আছে।
কিন্তু সেসব তো দিনে দিনেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এই দুর্যোগের রাতে এতক্ষন বাইরে তাহলে কী করছে লালচাঁদ!
টেনশনে টেনশনে মাথার মধ্যে চিড়বিড় করে উঠল বিশুর। নাঃ। আর ভাবতে পারছে না। ছেঁড়া মাদুরের উপর ছেঁড়া কাঁথার বিছানার চারপাশ দিয়ে মশারি অনেক ভিতর পর্যন্ত ঢুকিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল বিশু।
আনমনা ভাবে ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে লালচাঁদ। রাস্তার ফুটে দু চার জায়গায় কাগজের প্লেটে সাজানো খাবারের প্রলোভন পার হয়ে এসেছে লাল। মাংস ভাতের গন্ধে পেটের মধ্যে চোঁ চোঁ করে উঠেছে খিদে। কাল দুপুরের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটা দানাও পেটে পড়েনি।
খাবারের দিকে কয়েক পা বাড়িয়ে ও ফিরে এসেছে লাল। বিশুর জীর্ণ শীর্ণ মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তাকে রেখে একা একা খেয়ে নেবে! ভেতর থেকে সায় পায়নি লাল।
ভ্রাম্যমাণের মত এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে কয় বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল লালের। যখন সে নিজে এই এত্তটুকুন।
লাফ দিয়ে পার হতে গিয়ে তার দুটো পা বিচ্ছিরি ভাবে আটকে গিয়েছিল দুই লাইনের ক্রশিংএর খাঁজে। চোখের সামনে দিয়ে শয়ে শয়ে মানুষ রেললাইন পার হয়ে এপাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। লাইনে পা আটকে সে যে কঁকিয়ে চলেছে, সেদিকে কারও নজর নেই।
রোজ দিনের মত গান গেয়ে পয়সা রোজগারের পর রাত দশটার লোকাল থেকে নেমে রেললাইন পার হচ্ছিল বিশু।
বগল থেকে একটা ক্র্যাচ নামিয়ে তার পা দুখানা টেনে বের করে কোলে তুলে নিয়ে বিশু তাকে নিয়ে এসেছিল স্টেশনে ওর নিজের ডেরায়।
গরম চুন হলুদ, মলম লাগিয়ে, ব্যান্ডেজ বেঁধে, প্রায় মাসখানেক চিকিৎসার পর বিশু তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলেছিল।
সোনারপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ঘেরা জায়গাটাতে ছিল বিশুর আস্তানা। তখন থেকে সে বিশুর সঙ্গে থাকে। সোনালী গায়ের রঙ দেখে আদর করে বিশু তার নাম রেখেছিল লালচাঁদ।
সেই থেকে এতগুলো বছর তারা দুজনে এক সঙ্গে বাস করছে। যা রান্না করে বিশু দুজনে ভাগ করে খায়। রাতের বেলা মশারির নীচে অকাতরে ঘুমায় দুজনে। দিনের বেলা বিশু যখন ট্রেনে গান গেয়ে রোজগারের ধান্দায় বেরিয়ে যায়, তার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির দেখভাল করে লালচাঁদ। আগলিয়ে রাখে তাদের ছোট্ট সংসারটাকে।
এসব দেখে স্টেশনের অন্য বাসিন্দারা নাক সিঁটকায়। বলে ‘আপনি পায় না খেতে, শঙ্করাকে ডাকে’। তখন থেকেই বিশুর সঙ্গে তাদের দূরত্বের শুরু। দেখতে দেখতে একসময় ল্যাংড়া বিশুর নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘বিশু পাগলা’।
বিশু পাগলাও সবাইকে ছেড়ে লালচাঁদকে হৃদয়ের বন্ধু করে নেয়। বিশু বলে ---আমার ভাই ছেলে বন্ধু --- সব তুই লাল। যতদিন বেঁচে আছি, দুজন একসাথে বাঁচব। মরব যখন একসাথে। আমাকে ছেড়ে চলে যাস না কখনও।
ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধানী চোখে এদিক ওদিক নজর করতে থাকে লাল। বেশ কিছুটা দূরে একটা জটলা দেখে এগিয়ে যায়। দূর থেকে দেখতে পায় মানুষের একটা লম্বা লাইন। কলেজ বাড়ির বারান্দায় কিছু মানুষ দানসত্র খুলেছে। রান্না করা খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বুভুক্ষু মানুষ গুলোর হাতে।
বারান্দার এক কোনে শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লাল।
লাইন শেষে তখনও কয়েকটা প্যাকেট বাকি রয়ে গেছে। একজনের চোখ পড়ে যায় লালের দিকে। পাশের সঙ্গীকে বলে ---কেমন শুয়ে আছে দেখেছ। আহারে, খুব খিদে পেয়ে গেছে মনে হয়।
একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে তার সামনে এগিয়ে আসে লোকটি। বলে ---রাস্তার এখানে ওখানে তোদের জন্য খাবারের কত ব্যবস্থা। কোথাও কিছু জোটাতে পারলিনা সারাদিনে! বলতে বলতে লালের মুখের সামনে বসে প্যাকেটটা খুলতে যাবে, ছোঁ মেরে লোকটার হাত থেকে প্যাকেটটা মুখ দিয়ে টেনে নেয় লাল। তারপর চোঁ চোঁ দৌড় শুরু করে। টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে স্টেশনে নিজের আস্তানায় এসে থামে।
খাবারের প্যাকেট মুখ থেকে বিছানার পাশে নামিয়ে, বিশুর গায়ের চাদর টানাটানি শুরু করে দেয়।
ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসে বিশু। লালকে দেখে আশ্বস্ত হয়। খাবারের প্যাকেটটা দেখতে পেয়ে ঘোর বিস্ময়ে খাবারের প্যাকেট আর লালকে দেখতে থাকে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, যে লাল তার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে!
নিজের আর লালের থালায় খিচুড়ি লাবড়া ডিমের ডালনা সাজাতে সাজাতে বিশুর দু চোখ বেয়ে দরদরিয়ে জলের ধারা নেমে আসেছে। অবাক হচ্ছিল লাল। এতদিন সে জেনে এসেছে, দুঃখ হলে কাঁদে সবাই। তাহলে এমন আনন্দের মুহূর্তে তার বন্ধু এমন আকুল হয়ে কেঁদে চলেছে কেন!
স্বান্তনা দেওয়ার জন্য কাছে এগিয়ে এসে বিশুর কোলে মুখ গুঁজে দেয় লাল।
বাইরে তখন আবার মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। খাবারের গন্ধে ভুরভুর করছে চারপাশ। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে হাপুস হুপুস খাওয়ার শব্দ মিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
লালচাঁদের ভেতরটা আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠেছে। এতদিনে সে বন্ধুর জন্য সত্যি করে কিছু করতে পেরেছে। তবে এই খুশির মুহুর্তে বন্ধুর এমন চোখের জলের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না সে। ভাবছিল, এইজন্যেই মনে হয় সবাই লোকটার নাম দিয়েছে ‘পাগলা বিশু’।
খাওয়া শেষ করে বিশুর কোল ঘেঁষে লালচাঁদ আনন্দের চোটে চিৎকার করে উঠল 'ভৌ ভৌ'।
দুই বন্ধুর জীবনের এমন অলৌকিক দৃশ্যের সাক্ষী ছিল না কেউ। শুধুমাত্র বিশ্বপিতা অন্তরালে থেকে তাঁর সৃষ্ট জীব কুলের এমন স্বর্গীয় মুহূর্তের নীরব সাক্ষী হয়ে সব দেখে যাচ্ছিলেন। তাঁর দুচোখে ও তখন গড়িয়ে নামছিল অঝোর বৃষ্টিধারা।
শিবানী দাশ।
সন্ধের পর থেকে রাত যতই গড়াচ্ছে, মনের উচাটন ভাবটা ও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বিশুর। এত রাত হল, কোথায় গেল ছেলেটা!
এদিকে বৃষ্টি থামার ও কোনো লক্ষণ নেই। কান ফাটানো কড় কড় আওয়াজের সঙ্গে কালো আকাশের বুক চিরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ শলাকার আঁকিবুকি।
বেশ চলছিল কদিন। লালকে ঘরের পাহারায় রেখে সকাল থেকে এদিক ওদিক ঘুরে খাবার দাবারের জোগাড় হয়ে যাচ্ছিল বেশ।
আজ তিন দিন ধরে ধুম জ্বর। মাথা তুলতে পারছে না বিশু। তবুও কষ্টেসৃষ্টে দিনে একবার জমানো চাল ডাল আলু --- পুরোনো কেরোসিন স্টোভটাতে ফুটিয়ে নিয়ে যা হোক করে চলে যাচ্ছিল দুজনের। কিন্তু কালকের থেকে ভাঁড়ে মা ভবানী। সকাল থেকে নিজের সঙ্গে ছেলেটার ও তাই হরিমটর।
বিশু বুঝতে পারছিল, খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে নিশ্চয়ই। এই করোনার আবহে আজকাল অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন জায়গায় খাবারের দানসত্র খুলে বসে আছে।
কিন্তু সেসব তো দিনে দিনেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এই দুর্যোগের রাতে এতক্ষন বাইরে তাহলে কী করছে লালচাঁদ!
টেনশনে টেনশনে মাথার মধ্যে চিড়বিড় করে উঠল বিশুর। নাঃ। আর ভাবতে পারছে না। ছেঁড়া মাদুরের উপর ছেঁড়া কাঁথার বিছানার চারপাশ দিয়ে মশারি অনেক ভিতর পর্যন্ত ঢুকিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল বিশু।
আনমনা ভাবে ফাঁকা রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছে লালচাঁদ। রাস্তার ফুটে দু চার জায়গায় কাগজের প্লেটে সাজানো খাবারের প্রলোভন পার হয়ে এসেছে লাল। মাংস ভাতের গন্ধে পেটের মধ্যে চোঁ চোঁ করে উঠেছে খিদে। কাল দুপুরের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটা দানাও পেটে পড়েনি।
খাবারের দিকে কয়েক পা বাড়িয়ে ও ফিরে এসেছে লাল। বিশুর জীর্ণ শীর্ণ মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। তাকে রেখে একা একা খেয়ে নেবে! ভেতর থেকে সায় পায়নি লাল।
ভ্রাম্যমাণের মত এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে কয় বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল লালের। যখন সে নিজে এই এত্তটুকুন।
লাফ দিয়ে পার হতে গিয়ে তার দুটো পা বিচ্ছিরি ভাবে আটকে গিয়েছিল দুই লাইনের ক্রশিংএর খাঁজে। চোখের সামনে দিয়ে শয়ে শয়ে মানুষ রেললাইন পার হয়ে এপাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। লাইনে পা আটকে সে যে কঁকিয়ে চলেছে, সেদিকে কারও নজর নেই।
রোজ দিনের মত গান গেয়ে পয়সা রোজগারের পর রাত দশটার লোকাল থেকে নেমে রেললাইন পার হচ্ছিল বিশু।
বগল থেকে একটা ক্র্যাচ নামিয়ে তার পা দুখানা টেনে বের করে কোলে তুলে নিয়ে বিশু তাকে নিয়ে এসেছিল স্টেশনে ওর নিজের ডেরায়।
গরম চুন হলুদ, মলম লাগিয়ে, ব্যান্ডেজ বেঁধে, প্রায় মাসখানেক চিকিৎসার পর বিশু তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলেছিল।
সোনারপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ঘেরা জায়গাটাতে ছিল বিশুর আস্তানা। তখন থেকে সে বিশুর সঙ্গে থাকে। সোনালী গায়ের রঙ দেখে আদর করে বিশু তার নাম রেখেছিল লালচাঁদ।
সেই থেকে এতগুলো বছর তারা দুজনে এক সঙ্গে বাস করছে। যা রান্না করে বিশু দুজনে ভাগ করে খায়। রাতের বেলা মশারির নীচে অকাতরে ঘুমায় দুজনে। দিনের বেলা বিশু যখন ট্রেনে গান গেয়ে রোজগারের ধান্দায় বেরিয়ে যায়, তার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির দেখভাল করে লালচাঁদ। আগলিয়ে রাখে তাদের ছোট্ট সংসারটাকে।
এসব দেখে স্টেশনের অন্য বাসিন্দারা নাক সিঁটকায়। বলে ‘আপনি পায় না খেতে, শঙ্করাকে ডাকে’। তখন থেকেই বিশুর সঙ্গে তাদের দূরত্বের শুরু। দেখতে দেখতে একসময় ল্যাংড়া বিশুর নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘বিশু পাগলা’।
বিশু পাগলাও সবাইকে ছেড়ে লালচাঁদকে হৃদয়ের বন্ধু করে নেয়। বিশু বলে ---আমার ভাই ছেলে বন্ধু --- সব তুই লাল। যতদিন বেঁচে আছি, দুজন একসাথে বাঁচব। মরব যখন একসাথে। আমাকে ছেড়ে চলে যাস না কখনও।
ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধানী চোখে এদিক ওদিক নজর করতে থাকে লাল। বেশ কিছুটা দূরে একটা জটলা দেখে এগিয়ে যায়। দূর থেকে দেখতে পায় মানুষের একটা লম্বা লাইন। কলেজ বাড়ির বারান্দায় কিছু মানুষ দানসত্র খুলেছে। রান্না করা খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বুভুক্ষু মানুষ গুলোর হাতে।
বারান্দার এক কোনে শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লাল।
লাইন শেষে তখনও কয়েকটা প্যাকেট বাকি রয়ে গেছে। একজনের চোখ পড়ে যায় লালের দিকে। পাশের সঙ্গীকে বলে ---কেমন শুয়ে আছে দেখেছ। আহারে, খুব খিদে পেয়ে গেছে মনে হয়।
একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে তার সামনে এগিয়ে আসে লোকটি। বলে ---রাস্তার এখানে ওখানে তোদের জন্য খাবারের কত ব্যবস্থা। কোথাও কিছু জোটাতে পারলিনা সারাদিনে! বলতে বলতে লালের মুখের সামনে বসে প্যাকেটটা খুলতে যাবে, ছোঁ মেরে লোকটার হাত থেকে প্যাকেটটা মুখ দিয়ে টেনে নেয় লাল। তারপর চোঁ চোঁ দৌড় শুরু করে। টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে স্টেশনে নিজের আস্তানায় এসে থামে।
খাবারের প্যাকেট মুখ থেকে বিছানার পাশে নামিয়ে, বিশুর গায়ের চাদর টানাটানি শুরু করে দেয়।
ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসে বিশু। লালকে দেখে আশ্বস্ত হয়। খাবারের প্যাকেটটা দেখতে পেয়ে ঘোর বিস্ময়ে খাবারের প্যাকেট আর লালকে দেখতে থাকে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, যে লাল তার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে!
নিজের আর লালের থালায় খিচুড়ি লাবড়া ডিমের ডালনা সাজাতে সাজাতে বিশুর দু চোখ বেয়ে দরদরিয়ে জলের ধারা নেমে আসেছে। অবাক হচ্ছিল লাল। এতদিন সে জেনে এসেছে, দুঃখ হলে কাঁদে সবাই। তাহলে এমন আনন্দের মুহূর্তে তার বন্ধু এমন আকুল হয়ে কেঁদে চলেছে কেন!
স্বান্তনা দেওয়ার জন্য কাছে এগিয়ে এসে বিশুর কোলে মুখ গুঁজে দেয় লাল।
বাইরে তখন আবার মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। খাবারের গন্ধে ভুরভুর করছে চারপাশ। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে হাপুস হুপুস খাওয়ার শব্দ মিশে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
লালচাঁদের ভেতরটা আনন্দে ভরপুর হয়ে উঠেছে। এতদিনে সে বন্ধুর জন্য সত্যি করে কিছু করতে পেরেছে। তবে এই খুশির মুহুর্তে বন্ধুর এমন চোখের জলের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না সে। ভাবছিল, এইজন্যেই মনে হয় সবাই লোকটার নাম দিয়েছে ‘পাগলা বিশু’।
খাওয়া শেষ করে বিশুর কোল ঘেঁষে লালচাঁদ আনন্দের চোটে চিৎকার করে উঠল 'ভৌ ভৌ'।
দুই বন্ধুর জীবনের এমন অলৌকিক দৃশ্যের সাক্ষী ছিল না কেউ। শুধুমাত্র বিশ্বপিতা অন্তরালে থেকে তাঁর সৃষ্ট জীব কুলের এমন স্বর্গীয় মুহূর্তের নীরব সাক্ষী হয়ে সব দেখে যাচ্ছিলেন। তাঁর দুচোখে ও তখন গড়িয়ে নামছিল অঝোর বৃষ্টিধারা।