30-10-2020, 03:30 PM
পর্ব ১৬
১৬ (ক)
ফয়সাল আরও দুটো দিন পর ফিরে এলো। দুদিনে বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে শান্তা। চিন্তা করার ঢের সময় পেয়েছে ও। যতই ভেবেছে, ততই যেন ফয়সালকেই দোষী মনে হয়েছে তার। মনে হয়েছে ওর জন্যই তো এই পথে আজ নামতে হয়েছে তাকে, এতটা ঘৃণ্য কাজে জড়াতে হয়েছে।
ওদিনের পর রাজীব এর সঙ্গে তেমন একটা কথা হয় নি শান্তার। তবে পরদিন সকালে রত্না ভাবী এসেছিলো। পিলের প্যাকেটটা ওকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, “নাও। রাজীব এর কাছে শুনলাম সব। খুব নাকি খেলেছ ওখানে কাল!”
রাগ হচ্ছিল শান্তার। চেচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিলো, প্রতারণা করেছে ওর সঙ্গে রাজীব। তার পানীয়তে ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে তাকে প্ররোচিত করেছে অশ্লীল কাজে মত্ত হতে। কিন্তু কার কাছেই বা বিচার দেবে শান্তা! কাকেই বা দোষ দেবে! জীবনে নিজেকে এতটা একা কখনো মনে হয় নি তার। মনে হচ্ছে যেন ওর চামড়া কেউ ফালা ফালা করে কেটে দিয়ে গেছে। আর ওখানে নুন দিতে এসেছে রত্না ভাবী।
“এসব কিছু না বুঝলে? এগুলো অহরহ হয় আজকাল। আসল ব্যাপার হল ভালোবাসা, সুখে থাকা...” রত্না ভাবী বলে। “এই দেখো না, নাজিমকে নিয়ে কতোই না সুখে আছি আমি।”
শান্তা ভাবতে পারছে না রত্না ভাবী সুখে আছে। তবে প্রতিবাদ করলো না সে। বরং বলা চলে করতে পারলো না। রত্না ভাবী বলেই চলল; “প্রথম প্রথম তো - একটু লজ্জা করবেই। আরও কয়েকবার করলে দেখবে আর লজ্জা নেই।”
“আপনার বোধহয় এখন আর লজ্জা করে না তাই না?” শান্তা ক্ষোভ এর সঙ্গেই বলল।
“হা হা হা...” রত্না ভাবী তার রাগটা টের পেলো। কথা ঘুড়িয়ে নিল তাই। “ডিভোর্সটা হোক আগে, রাজীবকে বিয়ে কর। তারপর দেখবে সুখের সংসার হবে তোমার। তুলি কাল বলছিল, ওর নাকি সারাদিন একলা একলা লাগে বাসায়। একটা ভাই বোনও নেই। ওখানে আর একলা লাগবে না। কি বল শান্তা!” শান্তা কিছু বলে না। দোটানায় পড়ে থাকে ওর মন। “তোমার বিশ্রাম লাগবে। আমি আর বসব না আজ… উঠলাম কেমন? তুমি বিশ্রাম কর...”
রত্না ভাবীকে ওদিন বিদেয় দিতে পেরে খুশীই হয়েছিলো শান্তা। প্রায় ঠিকই করে ফেলেছিল, রাজীব এর সঙ্গে আর মেলামেশা নয়। ওদের মায়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে ধিরে ধিরে। শান্তা এমনটা ভাবলেও ফয়সাল ফিরে এলে - ওর ভাবনা আবার বদলে গেলো। এত দিন পর ফিরে এসে ফয়সাল জানতে পর্যন্ত চাইলো না, কেমন আছে শান্তা। উল্টো ধমকে উঠলো - শরবৎ বানিয়ে রাখে নি কেন তার জন্য শান্তা।
রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে শান্তা একটু ভয় পাচ্ছিল। আগের বার খুলনা থেকে ফিরে ফয়সাল ওকে করেছিলো। এইবারও করতে চাইবে নাকি! তাই আগে ভাগেই আলো নিভিয়ে ফেলেছিল শান্তা। কিন্তু ফয়সাল যেন ওর দিকে ফিরেও তাকাল না। কয়েকটা প্রশ্ন করে নাক ডেকে ঘুমাতে লাগলো। স্বস্তি পাবে নাকি অভিমান করবে, ভেবে পাচ্ছে না শান্তা। ফয়সাল কি দিন দিন ওর উপর থেকে সব আগ্রহ হাড়িয়ে ফেলছে? এত দিন পর ফিরে এলো, স্ত্রীকে একটা চুমু অব্দি খেল না? দাম্পত্য মানে কি শুধু মাত্র এক সঙ্গে বাস করা? একই বাসায় - একই বিছানায় ঘুমিয়ে জীবন পার করা?
ফয়সালের পাশে শুয়ে ও রাতে শান্তার ঘুম আসতে চায় না। বার বার ছটফট করে একবার এপাশে আর একবার ওপাশে ঘুরে সে। রাজীব এর কথা মনে পড়ে, রত্না ভাবীর কথা মনে পড়ে।
“ডিভোর্সটা হোক আগে, রাজীবকে বিয়ে কর। তারপর দেখবে সুখের সংসার হবে তোমার। তুলি কাল বলছিল, ওর নাকি সারাদিন একলা একলা লাগে বাসায়। একটা ভাই বোনও নেই। ওখানে আর একলা লাগবে না। কি বল শান্তা!”
রত্না ভাবী এমনটাই বলেছিল ওদিন। খুব কি ভুল বলেছে? রাজীবকে বিয়ে করলে কি ওর সংসার সুখের হয়ে উঠবে? হ্যাঁ, হয়তো কিছু ব্যাপার ওর মেনে নিতে কষ্ট হবে। কিন্তু ফয়সালের মত এভাবে নাক ডাকাবে না নিশ্চয়ই রাজীব। রাজীব-রত্না ভাবী, ওদের জীবন অশ্লীলতায় ঘেরা। সমাজে কতো ধরণের লোকই তো থাকে। কে জানে - এই যে ফয়সাল খুলনায় গিয়ে এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে, তাদের সম্পর্কটাও না জানি কতোটুক অশ্লীল! কিন্তু শান্তা আর ফয়সালের সম্পর্কটা কখনো ওমন অশ্লীল ছিল না, হবার আশাও নেই। এখানে মূর্তির মত পড়ে না থেকে - প্রেম ভালোবাসার বিনিময়ে যদি দুই-তিনটে পুরুষ এর চোদোনও খেতে হয়, তাহলে আপত্তি করছে কেন শান্তা!
ভবিষ্যৎটাকে বড্ড এলোমেলো মনে হচ্ছে শান্তার। ফয়সালকে জড়িয়ে ও নিজের ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে পারছে না। কিন্তু ভবিষ্যৎ এর ওই ফ্রেমে যদি রাজীবকে নিয়ে আসছে ও - তাহলে সুখ আর সুখ ধরা দিচ্ছে তার মনে। শান্তা তাই ঠিক করলো, কাল তুলিকে কলেজে দিয়ে একবার রত্না ভাবীর ওখান থেকে ঘুরে আসবে। যে পথে পা দিয়েছে - এই পথের শেষ না দেখে স্বস্তি পাবে না শান্তা।
#
“হায়দার আলী পুলিশের হেফাজতে আছে...” সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে ফয়সাল অকস্মাৎ বলে বসে। ভ্রূ কুচকেই তাকায় শান্তা। প্রথমে বুঝতে পারে না কিসের কথা বলছে ফয়সাল। তারপর চমকে উঠে।
“পুলিশ কেন?”
“ওসব তুমি বুঝবে না,” মাথা নাড়ে ফয়সাল। “আমাদের বাসায় যদি পুলিশ আসে, তাহলে বলবে হায়দার আলী শুধু মাত্র আমার দূর সম্পর্কের মামা হয়। আর কিছু জানো না তুমি। আমাদের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিল না, সেটাও বলতে পার।”
“পুলিশ আমাদের এখানে কেন আসবে?” শান্তার হাতের তালু ঘামছে।
“নানা কারনে আসতে পারে। একটা লোককে পুলিশ ধরলে তার পরিচিত সবার কাছেই পুলিশ হানা দেয়। তোমাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না।”
“তুমি খুলনায় গিয়ে কি করছ ফয়সাল?” শান্তা নিজেকে রুখতে পারে না। আচমকাই ওর ঠোঁট গলে প্রশ্নটা বেড়িয়ে আসে। তবে ফয়সালের দিকে তাকাতেই শান্তা বুঝতে পারে - প্রশ্নটা নাড়িয়ে দিয়েছে ফয়সালকে।
“ব্যবসা… ভেবেছিলাম ব্যাবসাটায় অনেক লাভ হবে। কিন্তু হায়দার আলীর এই অবস্থা... জানি না আর এদিকে এগোনোটা ঠিক হবে নাকি...”
“এমন ব্যবসা করতেই বা গেলে কেন! ওসব বাদ দিতে পারছ না?” শান্তা একটু কোমল স্বরেই বলে উঠে কথাটা।
“এই সাত দিনে আমার প্রায় কুড়ি হাজার টাকা আয় হয়েছে…… করবো না কেন?” ফয়সাল পানির গ্লাসটা তুলে ধরে। তবে চুমুক দেয় না। গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“হায়দার আলী তোমায় এই ব্যবসার সন্ধান দিয়েছে? তাহলে পুলিশ যদি তোমাকেও ধরে!” শান্তা উদ্বিগ্ন হবে নাকি বুঝতে পারছে না। ওর মনে কোথায় যেন বেজে উঠে ঘণ্টাধ্বনি। ফয়সালকে যদি পুলিশ ধরে - ওর যদি জেল হয়, তাহলে শান্তা কি মুক্ত বিহঙ্গে পরিনত হবে না? রাজীবকে বলে একটা চাকরি যোগার করে নিতে পাড়বে শান্তা। ফয়সালকে ডিভোর্স দেয়াও সহজ হয়ে উঠবে। কিন্তু কল্পনা শেষ হবার আগেই ফয়সাল ওর স্বপ্নকে গুরিয়ে দেয়।
“আমায় এই ব্যাবসার সন্ধান রাজীব দিয়েছে… রাজীবকে চিনেছ?” ফয়সাল এর অপর হাতটা মুঠি হয়ে যায়। “ওই তো আমাদের বাড়িতে যে আসতো। অফিসে চাকরি করতো। ডিভোর্স হয়েছিলো...”
“হ্যাঁ চিনেছি,” শান্তার মুখ থম্থম করছে।
“রাজীবকে বিশ্বাস করে নি বলেই আমায় হায়দার আলী কাজটা দিয়েছিলো। ওসব নিয়েই ওর সঙ্গে আমার মাস খানেক আগে কথা কাটাকাটি হয়েছিলো।”
“ওহ...” ঢোক গেলার চেষ্টা করে শান্তা। উঠে দাঁড়িয়েছে ফয়সাল। আরেকবার ওকে পুলিশের ব্যাপারে সাবধান করে অফিসের জন্য তৈরি করে ঘরে যাচ্ছে। শান্তা পাথর হয়ে বসে আছে।
রিয়ান খান