28-10-2020, 11:22 PM
(28-10-2020, 09:22 PM)Mr Fantastic Wrote: সিরিজা হাঁ করে তাকালো দিবাকরের দিকে। - "শিমূলতলা?"
-- "হ্যাঁ। তোমাকে যে তখন বলেছিলাম। আমার ওখানে পিসি আছে। পিসির বাড়ীতে গিয়ে থাকবো। চিন্তা কি? তোমাকে সারাদিন ধরে শুধু আদর করবো। আর তুমিও।"
সিরিজা একটু বোকা বোকা হয়ে তাকালো দিবাকরের দিকে। সত্যি ও একটা বোকার মতন কাজ করে ফেলেছে। একটু আমতা আমতা করেই দিবাকরকে বললো, "আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।"
দিবাকর একটু অবাক। সিরিজাকে জিজ্ঞাসা করলো, "কি?"
- "আমি রজতকে বলে ফেলেছি এই শিমূলতলার কথা।"
-- "কখন বললে?"
- "ভুল করে বলে ফেলেছি গো। এখন কি হবে তাহলে?"
দিবাকর ভেবে পাচ্ছে না, সিরিজা হঠাৎ গোপণ পরিকল্পনার কথাটা রজতকে ফাঁস করতে গেল কেন? ও তো রজতকে কাটাতেই চাইছে।
-- "কেন বললে তুমি এ কথা?"
- "আসলে আমি বুঝতে পারিনি। তুমি যদি রেশমীর জন্য আবার....."
দিবাকর একটু উত্তক্ত হয়ে গেল এবার। সিরিজাকে বললো, কেন সিরিজা কেন? রেশমীকে নিয়ে আমার আর মাথা ব্যাথা নেই। ওটাতো রজতেরও চাল। রেশমীর কথা বলে আমাকে ধন্দে ফেলতে চায়। কোথায় ছিল রেশমী? এতদিন সে আসেনি কেন? দিবাকরকে একবারও তার মনে পড়েনি। আজ যখন তুমিই ওকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে, তখনই ওর টনক নড়লো?
সিরিজা চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দিবাকর এবার একটু জোর গলায় বললো, "আমি তোমাকে শিমূলতলাতেই নিয়ে যাবো। দেখি রজত ওখানে আসে কিনা? কি হম্বীতম্বী করে ও। আমিও একবার দেখে নিতে চাই।"
সিরিজা দিবাকরের দিকে চেয়ে বললো, "তুমি তাহলে শিমূলতলাতেই যাবে?"
দিবাকর বললো, "অফকোর্স। অমন সুন্দর পিসির দোতলা বাড়ী। আর ওই বাড়ীটা তো আসলেই আমারই পাওনা সম্পত্তি। পিসির কোন ছেলেপুলে নেই। আমি তোমাকে বলেছিলাম না?"
সিরিজার মুখে কোন কথা নেই। শুধু বললো, "হ্যাঁ।"
দিবাকর বললো, "তাহলে আর কি? চলো তাহলে। হাওড়া থেকে ট্রেন ধরলে ৫-৬ ঘন্টায় পৌঁছে যাবো। স্টেশন থেকে অটো করে মিনিট পনেরো মতন লাগবে পিসির বাড়ীতে পৌঁছোতে। দেখবে পিসি কত খাতির আর যত্ন আত্নি করে। তোমাকে দেখলে পিসির মন ভরে যাবে।"
সিরিজা বললো, "পিসি যদি আমার কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে? কি বলবে?"
দিবাকর কি বলতেই যাচ্ছিলো। এমন সময় ভেতরের ঘর থেকে বাচ্চাটা চেঁচিয়ে উঠলো। মনে হয় ঘুম ভেঙে গেছে। দিবাকর সিরিজার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, "বলবো তুমি আমার বউ। আর ওই বাচ্চাটা আমাদের ছেলে।"
সিরিজা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে দিবাকরের দিকে। সত্যি তো বাচ্চাটার কি পরিচয় হবে, নিজে একবারও ভাবেনি সিরিজা। অথচ দিবাকর সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বউ হয়ে যখন ওর সাথে যাচ্ছে। তখন বাচ্চাটার পিতৃপরিচয় দিবাকর ছাড়া আর কেই বা হতে পারে?
আনন্দের চোটে সিরিজা নিজেই এবার চুমু খেলো দিবাকরের ঠোঁটে। চুমু দিয়ে শুধু আবেগ নয়, একেবারে খুশির প্রলেপ লাগিয়ে দিচ্ছিল দিবাকরের ঠোঁটে। পাল্টা চুমু খেয়ে, প্রত্যুত্তর দিয়ে দিবাকর বললো, "কি, খুশি তো এবার?"
সিরিজা বললো, "হ্যাঁ অনেক খুশি।"
ওকে আবার একটা চুমু খেতে যাচ্ছিলো সিরিজা। দিবাকর হেসে বললো, "এবার কিন্তু দেরীটা তুমি করছো সিরিজা। ওখানে পৌঁছোতে দেরী হয়ে গেলে। তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিও না।"
সিরিজা এবার নিজেও হেসে দিবাকরের ঠোঁটটাকে মুক্তি দিল।
ওদিকে রজতের ফ্ল্যাটে তখন জবুথবু হয়ে বসে আছে দোলন। মুখখানা কাচুমুচু। রজত ওকে লক্ষ্য করছে, কিন্তু চোখে মুখে দরদ দেখানোর কোন লক্ষণ নেই। একপাশে তখন থেকে ঠায় মেরে বসে আছে দেখে রজত বললো, "যা বলার তো বলেই দিলাম। অত চিন্তার কি আছে? নিজের ব্যাপারে তো এবার থেকে তোমাকেই চিন্তা করতে হবে। তাই না। সারাজীবন আমার ঘাড়ের ওপর চেপে বসে থাকবে। তা তো হতে দেওয়া যায় না। তাই নয় কি?"
মুখখানা একটু নিচু করে আফসোস গলায় দোলন বললো, "হ্যাঁ তাতো ঠিক। আমি তো আর সিরিজা নই, যে তুমি আমাকে দয়া করবে!"
রজত বিরক্ত হয়ে বললো, "আবার সেই একই কথা। সিরিজা তো এখন নেই। সে আমার বন্ধুর সাথে ভেগে গেছে। তাহলে আবার একথা আসছে কেন?"
দোলন মুখটা এবার তুলে বললো, "ভেগে গেছে ঠিকই। কিন্তু ও আবার দেখবে, তোমার কাছেই ঠিক ফিরে আসবে। ওকে কিছু বিশ্বাস নেই। তোমাকে যেমন বোকা বানিয়েছে। তোমার বন্ধু ওই দিবাকরদাকেও দেখবে বোকা বানাবে আর কিছু দিন পর।"
রজত মনে মনে বললো, "সিরিজা তো আসছেই। সে বিষয়ে আমি একশভাগ নিশ্চিত। কিন্ত তা বলে তোমার আর কোন সুবিধা হচ্ছে না দোলন ঢোঙ্গী। তুমি আর রি এন্ট্রি পাচ্ছো না এখানে। এই এক সপ্তাহই তোমার জন্য বরাদ্দ। জানি তার মধ্যে আজ আর কাল তুমি আমাকে খুব জালাবে। আবার আমার মাথাটা খাওয়ার চেষ্টা করবে। বলা যায় না উদোম নগ্ন হয়েও আমার মন গলানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি আর ওইদিকে পা মাড়াচ্ছি না। যথেষ্ট হয়েছে। আর তোমার ফাঁদে আমি নিজেকে জড়াতে চাই না নেকী। এবার আস্তে আস্তে নিজেকে এখান থেকে গোটানোর তোড়জোড় শুরু করে দাও।"
দোলন বললো, "তুমি কিছু বলছো আমাকে?"
রজত বললো, "কি বলবো আবার? যা বলার তো বলেই দিয়েছি। তা ওইভাবে হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকলে চলবে? খাওয়া দাওয়ার কিছু ব্যবস্থা করতে হবে তো। পেটে তো ক্ষিধেয় মোচড় দেওয়া শুরু করেছে।"
দোলন যেন একটা ছুতো পেয়ে গেল। রজতকে বললো, "এইজন্যই তো আমি বলছিলাম, আমি এখানে থাকি। তোমাকে রান্না করে খাওয়াতাম। তোমারও তাহলে সুবিধে হত। একা একা থাকলে ব্যাটাছেলেদের যে অসুবিধে হয়, সেটা আমরা বুঝি।"
রজত বললো, "থাক। আর অত বুঝতে হবে না। আমার একারটা আমি ভালোই করে নিতে পারবো। আমি যেন একা রান্না করে খাইনি। সিরিজা যখন ছিল না। তখন কে আমাকে রান্না করে খাওয়াতো? তুমি সব জেনে বসে আছো।"
দোলন রজতকে একটু ম্যানেজ করার মতন করে বললো, "না, আমি আসলে তা বলিনি। বলছিলাম, তোমার জন্য রান্নাটা করে দিলে আর আমার অসুবিধা কি? আমি তো এ বাড়ীতে গায়ে হাওয়া লাগাবো বলে আসিনি। ঘরের কাজ, তোমার রান্নাবান্না এসব করে দিলে তোমার একটু সুবিধা হত। এই আর কি....."
রজত ওকে বাধা দিয়ে বললো, "কি কি কি? আরেকবার বলো তো দেখি? তুমি এ বাড়ীতে এসেছিলে এই কারণে? তুমি বলবে। আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? এখন সিরিজা নেই, তাই তুমি এসব বড় বড় কথা বলছো। কি কারণে তুমি এ বাড়ীতে এসেছিলে। সেটা কি আমি আর বুঝি না? এখান থেকে সিরিজাকে যেতে তুমিই বাধ্য করছো। কে বলতে পারে? তুমি যদি ঠিক থাকতে তাহলে হয়তো সিরিজা দিবাকরের সাথে পালিয়ে যেত না। তুমিই তো গন্ডগোলটা পাকালে। যত নষ্টের মূলে তুমিই। ছিঃ আর কথা বোলো না।"
দোলন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রজতের দিকে। আর মনে মনে ভাবছে। গতকাল রাতে প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে কি সুন্দর ঠাপুনি খেয়েছিল রজতের কাছ থেকে। উত্তেজনার থরথর মূহূর্ত। যদিও সিরিজার মতন দোলনের বুকে দুধ নেই, তাও সারারাত দোলনের বুক চুষে স্বর্গলোকের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল রজত। তারপরেই কি যে হল। সকালটা হলো। সেই যে দিবাকরদার বাড়ী গেল। আর তারপরেই তুমূল কান্ড ঘটে গেল এখানে। এখন এই লোকটা যে ভাবে তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞা করছে ওকে। এত তাড়াতাড়ি কি হাল ছেড়ে দেবে দোলন। শেষ একবার চেষ্টা করে দেখবে না? মরীয়া চেষ্টা। যদি রজতকে আবার একটু নিজের বুক দুটোকে চোষানো যায়।
বাবা আর মেয়ে ট্যাক্সি করে অনেকদূর চলে এসেছে। গাড়ীতে যেতে যেতেই রজতের শ্বশুড় মশাই মেয়ে রীতাকে বললেন, "সত্যি রজত যেভাবে আমাকে আর তোকে অপমান করলো আজকে, ভোলা যায় না। এতবড় একটা অন্যায় করেও কি হাবভাব ওর। লক্ষ্য করেছিস তুই? কি কপাল করেই যে ওকে তুই বিয়ে করেছিলিস। এখন তাই ভাবছি।"
মেয়ে রীতা বাবাকে বললো, "বোঝো তাহলে? ওই লোকের সাথে ঘর করা যে কত দূঃসাধ্য সেটা আর কে বুঝবে? আমার মতন পোড়াকপাল আর ওই পোড়ামুখো স্বামী যেন আর কারুর কপালে না জোটে।"
শ্বশুড় মশাই বললেন, "কিরকম বুদ্ধি খাটিয়ে এসেছে। ওর বন্ধুটা সিরিজাকে নিয়ে ভেগেছে না ছাই। রজতই ওদের শিখিয়ে পড়িয়ে এসেছে।"
রীতা বললো, "বাবা তোমার মনে পড়ে? এর আগের দিনও ও কিরকম বোকা বানিয়েছিল আমাদের। মেয়েটাকে ঘরেই রেখে দিয়েছিল ওই দিবাকরের বউ সাজিয়ে। তুমি আমি অতক্ষণ বসেছিলাম। একবারও কিন্তু আমরা ধরতে পারিনি। ওই মেয়েটাও কম যায় না। দেখেছে তো ফাঁকা বাড়ী। রজত একা। তার বউও তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর পায় কে? সব কিছু বিসর্জন দিয়ে। ইস কি নির্লজ্জ মেয়ে রে বাবা। ছিঃ।"
শ্বশুড় মশাই বললেন, "থাক ওসব কথা আর তুলিস না তো। আমার আর শুনতে ভালো লাগছে না।"
মেয়ে বললো, "তুমিই তো ভুল করলে। চলেই এলে যখন, আমার শাড়ীগুলো নিয়ে এলে না কেন? সম্পর্ক তো চুলোয় গেছে। সব ল্যাটা চুকে যেতো তাহলে।"
বাবা বললেন, "কি করবো? রজত যেভাবে কথা বলছিল, মনে হলো তোকে আর আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দেবে। ওরকম একটা সিন ক্রিয়েটের পর কি বসে থাকা যায়? দুটো অচেনা লোক। তারমধ্যে একটা মাতাল আর দ্বিতীয়টা ওই দোলন। সেও তো আমার খুব একটা সুবিধার বলে মনে হল না। ওদের দুজনের সামনে আমাকে আর তোকে যা তা বলছে। সহ্য করা যায়? ওই জন্যই তো উঠে চলে এলুম।"
রীতা বললো, "ও ঠিক সুখেনকে পটিয়ে নেবে দেখবে। আমার মন বলছে।"
বাবা মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন, "কিভাবে?"
- "কিভাবে আবার? দু বোতল মদ খাওয়ার পয়সা দিয়ে দেবে। তুমি রজতকে চেনো না? ও সব পারে।"
-- "তা তুই ঠিক বলেছিস।"
রীতা বেশ উদাস হয়ে পড়েছে। বাবা মেয়েকে বললেন, "আমাদের আর কি আর করার আছে বল? এই হয়তো ছিল তোর কপালে। দূঃখ করিস না। আমি তোর আবার বিয়ে দেবো। ডিভোর্সটা হয়ে যাক। আর তো কদিনের মাত্র অপেক্ষা। তবে তুই কিন্তু এবারে আর জেদ ধরবি না। অনেক নিজের ক্ষতি করেছিস। আর নয়। রজতের জন্য তোকেও নিজের জীবনটা নষ্ট করতে হবে। কে মাথার দিব্যি দিয়েছে? ওর থেকে হাজার গুনে ভালো অনেক ভালো ছেলে জুটবে তোর কপালে।"
রীতা বললো, "সে ঠিক আছে বাবা। আমি আর ও বাড়ী মুখো হতে চাই না। পারো যদি বিকেল বেলা আর একবার এসে, আমার শাড়ীগুলো ফেরত নিয়ে যেও। আমি বাড়ী ফিরে দুটো বড় সুটকেস তোমাকে দিয়ে দেবো। শাড়ী আর কাপড়চোপড় গুলো ওর মধ্যে ভর্তি করে তুমি নিয়ে আসবে। আমি আর কিছু চাই না।"
মেয়ের ওপর এবার একটু রেগে গেলেন বাবা। বললেন, "তুই নিজেই মন স্থির করতে পারিস না। একবার বলছিস ওগুলোর দরকার নেই, আবার বলছিস ওগুলো নিয়ে এসো। দোনামনো করলে কি হয়? তখনই তো বুদ্ধি করে ওগুলো নিয়ে নিলে হত। তুই ভাবলি রজতকে শায়েস্তা করবি। সুখেন এলে রজত জব্দ হবে। উল্টে দেখলি তো ওই আমাদের কেমন নাস্তানাবুদ করে ছাড়লো।"
রীতা আর কোন কথা বলতে পারছে না। ট্যাক্সির জানালা দিয়ে মুখটা বাইরে বার করে আপন মনে নিজের পরিণতির কথা ভেবে যাচ্ছে। পথচলতি লোক, লোকগুলোকে দেখছে আর ভাবছে, এত সহজে হারটা মেনে নেবে ও? শেষ পর্যন্ত ওই সিরিজাই রজতকে ওর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে? কোথাকার কে একটা জুড়ে এসে ঘাড়ে চেপে বসা মেয়ে, তার জন্য রজত ওকে চিরকালের মত ত্যাগ করবে?
কিছু একটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ও নিজের বাপকে বলে বসলো, "বাবা এক কাজ করলে হয় না? এই কটা দিন রজতকে একটু চোখে চোখে রাখলে হয় না? মানে ও আসলে কি করতে চাইছে, মেয়েটাকেই বা কোথায় লুকিয়ে রেখেছে সব পরিষ্কার হয়ে যেত তাহলে।"
ভীষন একটা বিরক্তি মুখে নিয়ে রীতার বাবা মেয়েকে বলে উঠলেন, "তুই আবার ক্ষেপেছিস? কি হবে এসব করে? ভুলে যা না ওকে। এখনো ভুলতে পারছিস না? তোর কি মাথায় ভূত চেপেছে? আমায় পরিষ্কার করে বলো তো?"
রীতা বললো, "না বাবা, অঘটন কিছু একটা ঘটবে। আমার মন তাই বলছে। তুমি মিলিয়ে নিও। আমি রজতের শেষ পরিনতিটা নিজের চোখে দেখার জন্য শুধু একটু অপেক্ষা করতে চাইছি। দেখি না কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। এমনও তো হল, ওর বানানো কথাটাই সত্যি হয়ে গেল। সিরিজা শেষ পর্যন্ত ওই দিবাকরের সাথেই অন্য কোথাও পালিয়ে গেল।"
-- "তাতে তোরই বা হল কি? লাভ কি কিছু হবে তাতে?"
- "অবশ্যই লাভ হবে বাবা। আমি রজতকে চোখের সামনেই শেষ হতে দেখতে চাই। তারজন্যই তো শুধু অপেক্ষা করতে চাইছি।"
মেয়ের বাবা এবার ভুরু কূঁচকে তাকালেন মেয়ের দিকে। রীতা ওর বাবার হাতের ওপর হাতটা রেখে বললো, "প্লীজ বাবা প্লীজ। এই কটা দিন তুমি রজতকে একটু নজর রাখার চেষ্টা কর। আমি এভাবে আর কখনও বলবো না তোমাকে। শুধু কয়েকটা দিন। তারপরেই দেখবে খেলা কেমন শেষ হবে যবনিকা পতনের মতন। না থাকবে সিরিজা, না থাকবে রজতের হুঙ্কার। সব শেষ হবে চোখের নিমেষে। আমার মন তাই বলছে।"
কি আর করবেন শ্বশুড়মশাই? শেষ পর্যন্ত মেয়েকে শেষবারের মতন কথা দিয়ে বসলেন, আর সাথে এটাও বললেন, "এই কিন্তু শেষবার। এরপরে আর জেদ ধরবি না। তাহলে কিন্তু চরম ক্ষতিটা হবে আমাদেরই।"
রীতা ট্যাক্সির মধ্যেই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো বাবার দিকে। ঘন ঘন কি অত চিন্তা করছে মেয়ের বাবাও বুঝতে পারছে না। শেষকালে রজতের কথা ভেবে ভেবে মেয়েটা পাগল না হয়ে যায়। মেয়েকে বললেন, "কি হলো, আবার তোর মত চেঞ্জ হল না কি? "
রীতা বললো, "বাবা তুমি একটা জিনিষ লক্ষ্য করেছো?"
বাবা মেয়েকে বললেন, "কি?"
- "রজত কেমন ওই দোলন বলে মেয়েটার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছিলো। একবার তো ধমকও দিয়ে বসলো।"
শ্বশুড় মশাই বললেন, "তাতে কি?"
রীতা বললো, "ওইখানেই তো তোমাকে মারপ্যাঁচটা বুঝে নিতে হবে।"
শ্বশুড় মশাই বললেন, "আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।"
রীতা বললো, "তুমি এখনও বুঝলে না?"
বাবা এবারে পুরো ক্ষেপে উঠেছেন, এবারে উনারই মাথা খারাপ। - "আরে কি তখন থেকে মারপ্যাঁচ মারপ্যাঁচ করে যাচ্ছিস। আসল কথাটা বলবি তো?"
- "ওফঃ বাবা তুমি এখনও কত অবুঝ। আরে বাবা এসব তো রজতেরই চাল।"
-- "সে তো জানি।"
- "ওই দিবাকরের সাথে সিরিজা পালায়নি। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।"
-- "কোথায় আছে তাহলে?"
- "আছে কোথাও। রজত ইচ্ছে করেই ওটা করেছে। ও জানে দোলন ভয়ের চোটে আমাদের সব বলে দেবে। মাঝখান থেকে তুমি মোবাইলটা থেকে ওকে তখন ফোনটা করে ভুলটা করেছো। নিমেষের মধ্যে প্ল্যান খাটিয়ে নিয়েছে রজত। আর দেখলে না? দোলনের ওপর ও কেমন হম্বি তম্বি করছিল।"
-- "কিন্তু!"
- "কি কিন্তু?"
-- "তোকে নিয়ে যখন সকাল বেলা আসলাম, তখনও দেখলাম দোলনকে ও সেভাবে পাত্তা দিচ্ছে না। আমরা আসবো জেনে সিরিজাকে ও আগে থেকেই ওখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে সেটা তো জানি, কিন্তু দোলনের ওপর ও কোনো ভাবেই সন্তুষ্ট নয়।"
রীতা কিছুক্ষণ চিন্তা করলো, তারপর ওর বাবাকে বললো, "আমারও মাথায় কিছু ঢুকছে না। আমি নেই, আর সবাই আমার বরটাকে নিয়ে পড়লো না কি? মেয়েগুলো সব নিজের স্বামীকে ছেড়ে আমার স্বামীটাকে নিয়ে পড়েছে।"
-- "ওকে আর স্বামী বলিস না। রজত একটা ছেলে, সে আবার তোর স্বামী। এক হাতে তালি বাজে না কি রে? রজতের প্রশ্রয় না থাকলে দোলনই বা সাহস পায় কি করে? যত নষ্টের মূলে ওই হতচ্ছাড়াটা। ও কি কুক্ষণে যে ওর সাথে তোর বিয়েটা দিয়েছিলাম রে? কত ভালো ভালো সেই সময় সন্মন্ধ এসেছিল, তা না কি না একটা ফুর্তীবাজ ছেলের সঙ্গে বিয়েটা দিয়ে তোর জীবনটা নষ্ট করলাম।"
রীতা এবার বাবার হাতের ওপর নিজের হাতটা রাখলো। বাবাকে বললো, "বাবা আমি তো এখনও শক্ত রয়েছি, তুমি অত ভেঙে পড়ছো কেন?"
রীতার বাবা বললেন, "ভেঙে পড়িনি রে মা, ভেঙে পড়িনি। আমার বয়সটা যদি আর একটু কম থাকতো, দেখতিস রজতের কি হালটা করে আমি ছাড়তাম। আমাদেরকে নাকানি চোবানি খাওয়া? হাড়ে হাড়ে ওর মজাটা তখন টের পাইয়ে দিতাম।"
ট্যাক্সিটা রীতাদের বাড়ীর কাছে এসে পড়েছে। রীতা বললো, "বাবা এই কটা দিন কিন্তু তোমার শেষ পরীক্ষা। শেষ হাসিটা আমাদেরই হাসতে হবে। এই কিন্তু তোমাকে আমি বলে রাখলাম।"
শ্বশুড় মশাই হঠাৎ মেয়েকে বলে বসলেন, "দাঁড়া, আমিও রজতকে এবার দেখাচ্ছি কত ধানে কত চাল। ওর হালত খারাপ করে ছেড়ে দেবো আমি।"
মেয়ে দেখছে বাবা পকেট থেকে মোবাইল বার করে, কাকে যেন ফোন করছে।
রীতা বললো, "কাকে ফোন করছো তুমি বাবা?"
শ্বশুড় মশাই প্রথমে মেয়ের কথার কোন উত্তর দিলেন না। মোবাইল থেকে কাকে যেন নম্বর মিলিয়ে ট্রাই করতে লাগলেন।
রীতা আবার বললো, "কাকে ফোন করছো বলবে তো?"
মেয়েকে বাবার তবু কোন উত্তর নেই। দু একবার নম্বরটা ট্রাই করার পরে মোবাইলটা কানের সামনে ধরলেন।
ও প্রান্ত থেকে আওয়াজ এলো, "হ্যালো!"
- "হ্যাঁ হ্যালো! কে রতন?"
-- "হ্যাঁ রতন বলছি।"
- "আমি মেসোমশাই বলছি।"
-- "কে মেসোমশাই?"
- "আরে রীতার বাবা। চিনতে পারছো না?"
-- "ও হো। এবারে বুঝেছি। তা মেসোমশাই আছেন কেমন? অনেক দিন পর তো।"
- "হ্যাঁ অনেক দিন পর। আর বোলো না। খুব খারাপ সময় যাচ্ছে আমার।"
-- "কি হলো আবার?"
- "আরে আমার মেয়েকে নিয়ে। বড় কষ্টে ভুগছি গো। মেয়েও আমার খুব কষ্টে আছে।"
-- "কেন? রীতাদির তো বিয়ে হয়ে গিয়েছিল না?"
- "হ্যাঁ। তারপরেই তো যত গন্ডগোল।"
--"কেন কি হলো মেসোমশাই?"
- "আর বোলো না। আমার মেয়ের বরটা হল বড় বজ্জাত। মেয়েকে খালি কষ্ট দিচ্ছে। নতুন নতুন মেয়েমানুষ নিয়ে ফুর্তী করছে। এই আর কি? তোমাকে আর কষ্টের কথা কি বলব। তুমি তো আমার ছেলের মতন বাবা।"
-- "মেসোমশাই। আপনি যা বললেন, তাতে তো খুব খারাপ লাগলো শুনে। আমাকে কি করতে হবে? ওর হাত পা দুটো কেটে দেবো?"
- "না বাবা, কাটতে হবে না কাটতে হবে না। আমি চাই, তুমি একটু আমার জামাইয়ের ওপরে নজরদারী করো। ও কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে। তোমাকে একটু নজর রাখতে হবে। তুমি এটুকু করলেই আমার কাজ চলে যাবে। বড় জ্বালাচ্ছে ওর স্বামীটা। ওকে একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার।"
ও প্রান্ত থেকে রতন বললো, মেসোমশাই, আপনি তো জানেন, আমি কি রকম। মাথা গরম হয়ে গেলে আমি কাউকে ছাড়ি না। আপনি বললে, ওর ধড় থেকে মাথাটাকেও আলাদা করে দিতে পারি। এসব আমার কাছে জলভাত। সাধে কি আর ছ বছর জেলে কাটিয়েছি, এমনি এমনি?"
- "আমি সব জানি রতন। আমি সব জানি। সেইজন্যই তো তোমার ওপর আমার একটু বেশী ভরসা। এতদিন নিজেই চেষ্টা করে দেখছিলাম। দেখলাম কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তাই ভাবলাম, তোমার স্মরনাপান্ন হই আর কি? এছাড়া আমার আর কোন গতি নেই।"
-- "না না মেসোমশাই, এভাবে বলবেন না। আপনি বলবেন, আর আমি না করতে পারি? আপনার জামাইকে আমি ঠিক শিক্ষা দিয়ে দেবো। শুধু আমাকে কলকাতায় আসতে দিন।"
- "কেন? তুমি এখন এখানে নেই?"
-- "না আমি তো শিমূলতলায়।"
- "শিমূলতলায়?"
-- "হ্যাঁ, শিমূলতলায়। এখানে আমার শ্বশুড় বাড়ী। আপনি তো জানেন না। আমি বিয়ে করেছি।"
- "তাই?"
-- "হ্যাঁ। আপনার বৌমাকে নিয়ে এসেছি। এই আর তিন চারটে দিন থাকবো। তারপরেই কলকাতায় ফিরবো। আমি গিয়ে সব সামলে নিচ্ছি, আপনাকে কিচ্ছু চিন্তা করতে হবে না।"
রীতার বাবা যেন এবার আস্বস্ত হলেন। রতনকে বললেন, "আমি এবারে নিশ্চিন্ত হলাম। আর তুমি ফিরেই কিন্তু আমাকে ফোন কোরো। এটা আমার নম্বর। সেভ করা আছে নিশ্চয়ই?"
রতন বললো, "সেভ করা না থাকলেও আমি সেভ করে নিচ্ছি। আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না।"
তারপরে আবার ও বললো, "তা রীতাদি এখন কোথায়?"
- "এই তো আমার কাছেই আছে। আমার পাশে বসে আছে।"
-- "আচ্ছা। আচ্ছা। গিয়ে কথা হবেখন।"
রতন ফোনটা ছেড়ে দিল। রীতা থতমত খেয়ে চেয়ে আছে তখন ওর বাবার দিকে। এতোক্ষণ ধরে ফোনে কথা বলেছে, মেয়ের আর বুঝতে বাকী নেই। তাও বাবাকে প্রশ্ন করে বসলো, "বাবা এ তুমি কাকে ফোন করেছো?"
রীতার বাবা বললেন, "এ হচ্ছে রতন। মনে নেই? এলাকায় সব কাঁপতো রতনের নাম শুনে। তুই সবই জানিস। অথচ রজত রজত করে এখন সব ভুলে গেছিস।"
মেয়ে যেন আকাশ থেকে পড়েছে। বাবাকে বললো, "তা রতন এখানে কি করবে? ও তো একটা নামকরা গুন্ডা।"
-- "ওই তো রজতকে জব্দ করবে। এ ছাড়া আর উপায় কি বল? রতনকে একবার আসতে দে। তারপর দেখ, রজতকে ও কেমন উচিৎ শিক্ষা দেয়।"
- "কিন্তু বাবা!"
-- "কি?"
- "ও যদি রাগের মাথায় রজতকে সত্যি সত্যি মেরে দেয়।"
-- "আরে তুই পাগল হয়েছিস? শুধু একটু চমকে দেবে, তাতেই দেখবি সব কাজ হয়ে যাবে। ওই সিরিজাও তখন থাকবে না। আর দোলন তো নয়ই।"
রীতা ভেবে পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত রতন আবার এসে জুড়ে বসবে। কি করতে কি করে বসবে, তারপর সব কিছু আবার চৌপাট না হয়ে যায়।
বাবা মেয়েকে বললেন, "কি ভাবছিস?"
- "না ভাবছি, ওকে ডাকাটা কি ঠিক হল?"
-- "একদম ঠিক। এই বয়সে আমি কি আর অত দৌড় ঝাঁপ করতে পারি। বুঝিস তো সব।"
- "বাবা রতন কিছু করে বসবে না? তুমি জোর দিয়ে বলছো তো?"
মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে শ্বশুড়মশাই বললেন, "কিচ্ছু করবে না। আমি বলছি তো। তুই অত চিন্তা করছিস কেন? শুধু ওকে একবার আসতে দে। এখন বললো, শিমূলতলায় ওর শ্বশুড় বাড়ীতে আছে। তিন চারদিন পরেই না কি ফিরবে।"
- "শিমূলতলা?"
-- "হ্যাঁ তাই তো বললো।"
কোনরকমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রীতা বললো, "দেখা যাক, তোমার এই রতন এসে আমার কি উপকারটা করতে পারে। আমার খুব ভয় করছে। যা মাথাগরম ছেলে।"
মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বাবা বললেন, "তুই কি এখনো রজতকে ভালোবাসিস নাকি রে? এত চিন্তা করছিস?"
রীতা বললো, "না না, ওতো আমি এমনি বলছি।"
মেয়ের রকম দেখে রীতার বাবা এবার সত্যি একটু অবাক হয়ে গেলেন।
এটা কি শেষ update
নাকি????