Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery সিরিজা by Lekhak
শ্বশুড় মশাই দুজনকে একপলক দেখে নিলেন, বুঝলেন, মেয়ে এখনি কোন বেফাঁস কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলেই রজত সঙ্গে সঙ্গে রিয়্যাক্ট করে উঠবে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "সে রজত যা ভালো মনে করেছে, তাই করেছে। ওর হয়তো কাজের দরকার ছিল, রজত তাই ওকে রেখেছে। তোর এখন এসব দেখে লাভ কি?"

রজত মুখটা আবার অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে। শ্বশুড়মশাই বললেন, "তা যাচ্ছো কোথায়? আমি তো ভেবেছিলাম কদিন বাদে আসবো। তুমি তাড়া লাগালে তাই বাধ্য হলাম আসতে।"

রজত মুখটা আবার শ্বশুড়ের দিকে ঘুরিয়েছে, কিন্তু জবাব দিতে চাইছে না। বিরক্তি আর অসহ্য লাগছে। ঠিক সেই সময় দোলন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো, "আপনারা চা খাবেন তো?"

শ্বশুড় মশাই দোলনের দিকে একবার তাকালেন। রীতাও তাকালো। রজত দেখলো দোলন শাড়ীটা জড়িয়েছে গায়ে, কিন্তু কোমরের ওপর গিটটা এমন ভাবে জড়িয়েছে, পেট নাভি সব দেখা যাচ্ছে। রীতা এসব দেখতে অভ্যস্ত নয়।

মেয়ের দিকে তাকিয়ে শ্বশুড় বললেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ। খাবো। চা খেতে অসুবিধে কি? তবে আমারটা চিনি ছাড়া। সুগারের রুগী আমি। চায়ে চিনি খাই না।"

মেয়ে বললো, "আমার জন্য করতে হবে না। আমি চা খেয়েই বেরিয়েছি।"

দোলন এবার তাকালো রজতের দিকে। রজত বললো, "যাও চা করে নিয়ে এসো। আর শুধু চা নয়, বিস্কুটটাও সাথে এনো।"

ঘাড়টা নেড়ে, পাছা নাড়তে নাড়তে দোলন আবার রান্নাঘরে চলে গেল। শ্বশুড় মশাই বললেন, "আগের দিন যখন এসেছিলাম, তোমার সেই বন্ধুকে দেখলাম। স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিল। কি যেন নাম?"

রজত বললো, "দিবাকর।"

 -- "হ্যাঁ হ্যাঁ দিবাকর। চলে গেছে ওরা?"

রজত বললো, "হ্যাঁ ওতো সেদিনই চলে গেছে। আমি অফিস থেকে ফিরে দেখলাম, আপনারা নেই। দিবাকর বললো, আপনারা নাকি অপেক্ষা করেননি। নইলে তো সেদিনই ঝেমেলা মিটে যেত।"

সাতসকালে যতসব বেমতলব কথাবার্তা। রজতের মেজাজ খারাপ হতে লাগলো, তারপরও শান্ত থাকার চেষ্টা করে বললো, "আপনি চা টা খেয়ে নিন। ততক্ষনে নয়, আপনার মেয়ে শাড়ীগুলো গুছিয়ে নিক। কিসে নিয়ে যাবেন? সুটকেশ, ব্যাগ কিছু এনেছেন?"

শ্বশুড় তাকাচ্ছে তার মেয়ের দিকে। রজত বললো, "আগের দিনই তো সব ঝেমেলা মিটিয়ে নিতে পারতেন। তা না, শুধু শুধু আপনাদেরই দেরী হল।"

এবার রীতা বললো, "নিয়ে যাবো বলেই তো এসেছিলাম। যা সব ন্যাকা ন্যাকা কর্তাবার্তা শুনলাম, আমার আর বসবার ভক্তি হল না। যেমন বন্ধু, তেমনি তার বউ।"

শ্বশুড় মশাই বাধা দিয়ে বললেন, "আঃ থাক না। ওসব কথা এখন তুলে কি লাভ? তুই যে জন্য এসেছিস, সেটাই করে নে বরঞ্চ গিয়ে। ও বলছে, ওকে নাকি আবার বেরোতে হবে। শুধু শুধু দেরী করিয়ে লাভটা কি বলো?"

মেয়ে সোফা ছেড়ে ওঠার নামই করছে না। রজত এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললো, "দেখুন, আমি আগেও বলেছি, আবারো বলছি, আমার কিন্তু অত সময় নেই। ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই বেরোতে হবে আমায়। আজ যদি এগুলো না নেন, আর কিন্তু পাবেন না সহজে। পরে তখন আমাকে দোষ দেবেন না।"

রজত কথাটা বলা মাত্রই রীতা সোফা ছেড়ে উঠে পড়লো। বাবাকে বললো, "সেই ভালো বাবা। আজ বরং ওগুলো নিয়ে লাভ নেই। উনি ফিরে এলেই, তারপর না হয় আবার আসবো। তুমি চা টা খেয়ে বাইরে আসো। আমি না হয় ততক্ষণ বাইরে অপেক্ষা করছি।"

রজতের চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। রীতাকে বললো, "এটা একটু অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে না। থেকে থেকেই আমাকে বিরক্ত করা। তারপর আবার নিজের খামখেয়ালি মত ডিসিশন চেঞ্জ করা। আমার কি অন্য কোন কাজ নেই? নাকি এই করে যাবো চিরকাল ধরে?"

রীতা যেন গায়ে পড়ে ঝগড়া করার একটা সুযোগ পেয়েছে ভালোমতন। রজতকে বললো, "কাকে কি বলছো তুমি? নিজের মুখটা আয়নায় দেখো গিয়ে একবার ভালো করে। লজ্জ্বা করেনা? বাড়ীতে মেয়ে এনে ফুর্তী করার মত জঘন্য মানসিকতার লোক তুমি, নিজের চরিত্রের কি বাকি আছে কিছু? মেয়েমানুষ নেওটা পুরুষের আবার বড় বড় কথা। কি ভাবো আমায়? আমি কি কিছু বুঝি না? কি করতে মেয়েটাকে কাজে রেখেছো, এই কদিনে কটা মেয়েছেলেকে নিয়ে ফুর্তী করেছো, সবই জানা আছে আমার। আমি কি করবো না করবো, সেটা তি তোমার হুকুমে নাকি? ওতো আমারই মর্জি। চেষ্টা করেও যাকে শুধরোতে পারলাম না, সে আবার বড়বড় কথা বলছে আমাকে। "

শ্বশুড় মশাই রীতাকে বললেন, "আঃ রীতা হচ্ছেটা কি? পুরোনো কথা তুলে আবার কেন ঝেমেলা বাড়াচ্ছিস? যে কাজে এসেছি, সেটা করে নিলেই তো সমস্যা মিটে যায়।"

রীতা ওর বাবাকে বললো, "তুমি চুপ করো। যা বলছি, ঠিকই বলছি। তুমি কি ওর হয়ে ওকালতি করছো আমার সঙ্গে?"

রজত চুপ হয়ে রয়েছে, কোন কথা বলছে না।

রীতা বললো, "বেশী কথা আমিও বলতে চাই না। এসব বাজে লোকের সাথে মুখ লাগানো আমার কাজ নয়। যে কাজে এসেছিলাম, সেটা এখন করবো না। পরে যদি সুযোগ হয়, আসবো। নইলে কাপড় পড়ে থাক এখানে। কে আসছে বারে বারে?"

রজত এবার রীতার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো, "শোনো, যা বলার তুমি কোর্টে বোলো। এখানে এসব কথা তুলে কোনো লাভ আছে কি? ডিভোর্সের নোটিশ তো পাঠিয়েছ, আমি কি করবো না করবো, তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? রজত কারুর চোখ রাঙানির ধার ধারে না। আমার যা ইচ্ছে তাই করবো। হু দ্য হেল আর ইউ? যে আমাকে শাসন করছো?"

রীতা রজতের দিকে চোখমুখ পাকিয়ে বললো, "মুখ সামলে কথা বলো, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।"

 -- "উফ, তোরা কি শুরু করলি বল দেখি।"

শ্বশুড় মশাই এবার মেয়ে জামাই দুজনকেই ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। রজত বললো, "দেখলেন তো, আমি ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম, আপনারা আমার পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছিলেন। কাল যখন ছেলেটাকে হাতে নাতে ধরে ফেললাম, আপনি অস্বীকার করছিলেন। আমার পেছনে লোক লাগিয়ে আপনারা কি প্রমাণ করতে চাইছেন, জানি না। আমি খারাপ। আমার চরিত্র খারাপ। মেয়েমানুষ নিয়ে ফুর্তী করি, এসব জেনেই তো রীতা এ বাড়ী ছেড়ে চলেগেছিল। তাহলে আবার এখন এসব কথা তুলে লাভ কি? দ্য চ্যাপ্টার ইজ ক্লোজড। এন্ড দ্য ম্যাটার ইজ ফিনিজড। এবার আমাকে আমার মত থাকতে দিন, আর আপনারাও আপনাদের মত থাকুন।"

শ্বশুড় মশাই এবার বললেন, "তুমি না বুঝে অনেক কিছু করেছো রজত। সেগুলো নিয়ে আমাদেরও তো কিছু বলার থাকতে পারে। রীতা তোমাকে কিছু বলতে চাইছে। তুমি যদি শোনো, তাহলে আমিও বলতে পারি।"

রজত বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, "কি শুনবো? কি বলবেন? সেই তো একই ঘ্যানঘ্যানানি।"

শ্বশুড় মশাই এবার একটু গম্ভীর মুখে বললেন, "সিরিজা বলে কোন মেয়ে এসে ছিল তোমার কাছে? বেশ কিছুদিন।"

রজত যেন আকাশ থেকে পড়লো। অবাক হয়ে বললো, "সিরিজা? কে সে? তাকে আপনারা চেনেন?"

শ্বশুড় মশাই বললেন, "মেয়েটা সন্মন্ধে আমরা অনেক খবর জোগাড় করেছি। তোমাকে বলতেই তো এসেছিলাম। কিন্তু তুমি যদি অবুঝ হও। তাহলে তো কিছু বলার নেই।"

রজত এবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ওদের দুজনের দিকে। বউ আর শ্বশুড় দুজনেই তখন রজতকে দেখছে, সিরিজা নামটা শোনা মাত্রই রজতের মুখটা কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেছে। দোলন ঠিক তখনই চায়ের কাপটা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ওদের সামনে।

রীতা বলছে, "কি হল? সিরিজার নাম শুনে মুখ যে একেবারে শুকনো হয়ে গেল তোমার? মিষ্টার রজত মল্লিক, সিরিজার নাম শুনেই তুমি কাঁপছো? নিজেকে ভীষন চালাক ভাবো, তাই না? আর বাকীরা সব বোকা? তুমি যদি চলো ডালে ডালে, তাহলে জেনে রেখো তোমার এই বউও চলে পাতায় পাতায়।"

থতমত খেয়ে গেছে দোলনও। চায়ের কাপ হাতে ধরে বোকার মত শুধু চেয়ে আছে ওদের দিকে। রীতা কি করে সিরিজার ব্যাপারটা জানলো, সেটা দোলনও বুঝতে পারছে না।

কিছুটা দুশ্চিন্তা আর বেশ কিছুটা অবাক হয়ে যাওয়া। দুটো মিলে মিশে রজত এমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল, ভাবলো, এ আবার কি ঝামেলা। সিরিজার নাম, বাপ বেটী দুজনে এক সাথে জানলো কি করে?

সন্দেহের তীরটা গিয়ে পড়লো দোলনের দিকে। কটমট করে বেশ কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা এসে থেকে অবধি নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। রীতাকে যদি লাগিয়ে থাকে তাহলে ওই লাগিয়েছে। সিরিজাকে রজতের জীবন থেকে এইভাবেই ও সরিয়ে দিতে চায়।

দোলন বুঝতে পারছে রজত ওকে সন্দেহ করছে। চায়ের কাপটা হাতে ধরে মাথা নেড়ে রজতকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, "আমি না, আমি না। আমি বলিনি। অন্য কেউ....."

রজতের ইচ্ছে করছিল দোলনকে এক ধাক্কা দিয়ে কাপটা চূড়মাড় করে মাটীতে ফেলে দিতে। কিছুক্ষণ রেগে মেগে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে, রীতা আর শ্বশুড়ের দিকে ফিরে বললো, "হ্যাঁ, সিরিজা আমার কাছে ছিল। তো? আপনাদের তাতে কি?"

রীতা খেঁকিয়ে উঠে বললো, "ছিলো মানে? কোথাকার একটা মেয়েকে নিয়ে ঘরের মধ্যে তুমি যা খুশীতাই করেছো। আবার বলছো তাতে কি?"

রজত এবার রীতাকে বললো, "কে বলেছে তোমাদেরকে সিরিজার কথা? দোলন?"

দোলন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মুখ কাচুমুচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন সব তড়পানি শেষ। রীতা ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "দোলন বলতে যাবে কেন? সিরিজার কথা আমাকে অন্য একজন বলেছে।"

রজত বললো, "কে সে? নামটা একবার শুনি।"

রীতা জবাব না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

একটু আগে দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছে রজত। দিবাকর ফোনটা ধরেনি। মনে হল ইচ্ছে করেই যেন লাইনটা কেটে দিয়েছে। কে যে শত্রুতা করছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। রজতের সেই মূহূর্তে মনে হল, সিরিজাকে নিজের ঘরে পেয়ে দিবাকর কি তাহলে এই গেমটা খেললো? শ্বশুড় মশাই আর বউয়ের কানে কথাটা তুলে দিয়ে রজতকে এমন কোনঠাসা করে দেওয়া, যাতে রজত সিরিজার দিকে আর হাত বাড়াতে না পারে।

বোকার মত রীতাকে বলে বসলো, "ও তার মানে দিবাকর বলেছে এই কথা?"

রীতা বললো, "দিবাকর? ও তোমার সেই গুনধর বন্ধু। সেদিন যে বউ নিয়ে এসেছিল? না না সে কেন বলবে? আমাকে বলেছে অন্য একজন।"

রজত বেশ অবাক হচ্ছে। সিরিজার নামটা এরা বলছে। অথচ সিরিজা যে আসলে কে? এরা এখনও কেউ ধরতে পারেনি। সেদিন সিরিজাকে, দিবাকরের সাথে বাপ মেয়ে দুজনেই তো দেখেছে। দিবাকরের সত্যিকারের বউ হিসেবেই ধরে নিল। অথচ সেই মেয়েই যে সিরিজা সেটা এখনও জানতে পারলো না।

তাহলে সিরিজার নামটা এদের কানে তুললো কে?

রজত বললো, "গোয়েন্দা লাগিয়ে ভালোই খবর জোগাড় করেছেন দেখছি। ট্যাক্সি থেকে নামবার সময় একদিন দেখলাম, ছাতা মাথায় দিয়ে একটা লোক আমার এই গলি দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেদিন বুঝেছিলাম, আপনিই এসেছিলেন। কাল ঐ ফড়িংটার কলার ধরলাম। ওকেও আপনারা পাঠিয়েছিলেন। আমি কোন মেয়েছেলে নিয়ে এ বাড়ীতে রয়েছি, সব তথ্য জোগাড় করেছেন। নামটাও জেনেছেন। কাপড় চোপড় নেওয়ার নাম করে বারবার আমাকে তাগাদা কেন মারা, এসবতো এখন খুব ভালোমতই বুঝতে পারছি। সিরিজার জন্য গা জ্বলে যাচ্ছে আপনাদের।"

রীতা হঠাৎই বলে বসলো, "মেয়েটাকে কোথায় পাঠিয়ে দিয়েছ? ভেবেছিলাম তো, আজ সকালে এসে ওকে দেখতে পাবো। আমরা আসার আগেই গায়েব করে দিলে? লাজ লজ্জা নেই, চরিত্রহীন একটা পুরুষ তুমি, আমাদের জন্য তোমার এত ভয়? না হয় মেয়েটাকে একবার দেখতাম। সেও নিশ্চয়ই তোমার মত চরিত্রহীনা হবে।"

রজত দাঁত মুখ খেঁচিয়ে বললো, "তুমি নিজে কি?"

শ্বশুড় মশাই রীতাকে বললো, "আহ্ চুপ করো না। ওর নিজের ভালো ও নিজেই বুঝবে। তোর ওতে কি?"

রজত এবার বললো, "হ্যাঁ, এবার কাপড় চোপড় নিয়ে আপনারা এখান থেকে পাতলা হন তো। আমার অনেক কাজ আছে।"

রীতা বললো, "কেন? সিরিজাকে আনতে যাবে বুঝি? তোমার তো কাজ বলতে ওটাই।"

শ্বশুড় মশাই ঘড়ি দেখছেন, যেন কারুর আশার জন্য উনি অপেক্ষা করছেন।

রজত দোলনকে বললো, "আর সামনে দাঁড়িয়ে কি হবে? চা কেউ খাবে না। যাও, ওটা ভেতরে রেখে এসো।"

দোলন চায়ের কাপটা নিয়ে আবার ভেতরে চলে গেল।

রজত ওদের দুজনকে বললো, "আপনারা কাপড় চোপড় যখন নেবেন না। তাহলে এবার আসুন। আমি আমার কাজ সারি।"

রীতা দড়াম করে দরজাটা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাবাকে বললো, "বাবা তুমি এসো। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।"

রীতা বেরিয়ে যাবার পর শ্বশুড়মশাই রজতকে বললেন, "কিছু মনে কোরো না বাবা। বোঝো তো ও তো আমার একমাত্র মেয়ে। রাগে মাথার ঠিক রাখতে পারছে না। ও তো তোমায় ভালো বেসেছিল। কি করবে? দেখছে তুমি যখন ওকে চাও না, রাগ করে আমার কাছে চলে এলো। কারন না থাকলে কেউ কি ঘর ভাঙতে চায়। তুমি রীতার দিকটা একদম চিন্তা করছো না।"

রজত দেখছে শ্বশুড় মশাই এবার অন্য সুরে কথা বলছে। মেয়ের জন্য দরদ একেবারে উতলে পড়ছে। হঠাৎ এমন নরম মনোভাব নেওয়ার কারনটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। শ্বশুড়কে বললো, "আপনার মেয়ে আমার সাথে না থাকলেই সুখী হবে। ভালোই তো করেছে। আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখানে থাকলে বরং বেশী কষ্ট পেতো। আমার চরিত্রটা যে খারাপ তাই না?"

শ্বশুড় মশাই রজতকে বললো, "তুমি কি রীতাকে এখনও ভালোবাসো?"

রজত অবাক হয়ে বললো, "কেন বলুন তো?"

শ্বশুড় বললো, "না যদি একবার ভেবে দেখতে, রীতাকে বলে আমি ডিভোর্স কেসটা উইথড্র করে নিতাম। বাপ হয়ে মেয়ের জীবন নষ্ট করতে, আমিও কি চাইতে পারি, তুমি বলো না?"

রজত বললো, "কেন, মেয়ের আবার বিয়ে দিয়ে দিন। তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আজকাল অনেকেই তো ডিভোর্সের পরেও বিয়ে করছে। এর আর এমন কি? রীতার জন্য আপনি আমার চেয়ে অনেক ভালো পাত্র পেয়ে যাবেন।"

শ্বশুড় মশাই কি যেন ভাবলেন। তারপর রজতের দিকে চোখ বড় বড় করে বললেন, "সে না হয় হলো। কিন্তু তুমি তাই বলে ঐ বিবাহিত মেয়েটার সাথে, যার কিনা একটা বাচ্চাও আছে। স্বামীকে ছেড়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে এসেছে। তাকে নিয়ে বাকী জীবনটা কাটাবে?"

টেনশনটা যতটা কেটে গিয়েছিল, এখন আবার নতুন করে মনের মধ্যে জমা হচ্ছে। রজত অবাক হয়ে শ্বশুড়মশাইকে বললো, "আপনারা ওর সন্মন্ধে এত খবর জোগাড় করেছেন। কি করে করলেন, আমি সেই ভেবেই তো অবাক হচ্ছি। এসব তথ্য জোগাড় করার জন্য প্রচুর পয়সা খরচা করেছেন বলেই তো মনে হচ্ছে। সিরিজা বিবাহিত, গ্রাম থেকে এসেছে, ওর বাচ্চা আছে। কিছুই জানতে বাকী নেই। কে আপনাদের এসব বললো বলুন তো? একমাত্র দিবাকর ছাড়া আর তো এই ব্যাপারটা কেউ জানে না। দোলনও যখন বলেনি, তাহলে কে আপনাদের বললো?"

কেমন যেন একটা ধোঁয়াশা তৈরী হচ্ছে। রজত বুঝতে পারছে না, সাত সকালে বাপ মেয়ে এসে রজতকে যেমন নাকানি চোবানি খাওয়াচ্ছে, এরা যে আদৌ কি করতে চাইছে, সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না। একবার বলে, ঘর করবে না, আবার এসে বলছে, ঘর করার ইচ্ছা রয়েছে। মাথামুন্ডু বাপ মেয়ের মতিগতি বোঝাই তো দায় হয়ে পড়েছে।

সন্দেহটা দূর করার জন্য ও আবার দোলনকে ডাকলো রান্নাঘর থেকে।

 - "এই যে দোলন, এসো একটু এদিকে।"

দোলন সামনে এলো।

রজত দোলনের দিকে তাকিয়ে বললো, "সিরিজা সন্মন্ধে তুমি তো সবই জানো?"

দোলন বললো, "হ্যাঁ।"

 - "কিন্তু ইনারা দুজনে সিরিজা সন্মন্ধে যা বলছে, সবই তো মিলে যাচ্ছে। তুমি যখন বলোনি। তখন বললোটা কে?"

দোলন ফট করে চেঁচিয়ে উঠে বললো, "ঐ তোমার বন্ধুটাই বলেছে গো, বদমাইশ, ওই সিরিজাকে এখন কব্জা করেছে।"

শ্বশুড় মশাই অবাক হয়ে বললো, "বন্ধু মানে কে? ঐ দিবাকর?"

রজত দোলনকে ধমক দিয়ে বললো, "তুমি চুপ করো। যা জানো না, কেন শুধু শুধু কথা বলো?"

দোলন চুপ করে গেল। রজত এবার ওর শ্বশুড়কে বলতে লাগলো, "দেখুন, আমি চাই না, আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আপনারা বাবা, মেয়েতে অত বেশী মাথা ঘামান। একটা মেয়ে আমার কাছে এসেছিল, যে আমার কাছে ছিল। মেয়েটাকে আমার ভালো লেগে গেছে। এ তো হতেই পারে। তা বলে আপনাদের এত রাগ হবার কিছু নেই। সিরিজা গ্রাম থেকে এসেছে, ওর বাচ্চা আছে, স্বামী আছে। ওসব আমিও জানি। আমি তো জেনেবুঝেই সব করেছি। খামোকা একই কথা বারবার তুলে আপনারা আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছেন? এ বিষয়টা না তুললেই ভালো হয় না? আমি তো আপনার সব কথার উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমার যেটা ইচ্ছে সেটা করবো। এখানে আপনারও কিছু বলার নেই। আপনার মেয়েরও কিছু বলার নেই। এটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এখন আপনার মেয়েও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সে কি করে বেড়াচ্ছে, আমি কি দেখতে যাচ্ছি? তাহলে আপনারাই বা শুধু শুধু সিরিজার কথা কেন তুলছেন?"

হঠাৎ রীতা ঘরের মধ্যে আবার চলে এল। এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়েছিল। ঘরে ঢুকে হঠাৎই নিজের বাবাকে বললো, "বাবা, কেন ওকে বোঝানোর চেষ্টা করছো? আগুন নিয়ে খেলছে ও। যা খুশি করুক, ওকে করতে দাও না। তোমার অত কি? যাকে বলে কোন লাভ হয় না। তাকে অত বোঝাবার চেষ্টা করতে নেই। গাড্ডায় তো পড়েছে। এবার যখন বেধরক ধোলাই খাবে, কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না।"

রীতিমতন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো রজত। বউকে বললো, "তুমি কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো রীতা। বাড়বাড়ির একটা লিমিট আছে।"

রীতা বললো, "দাঁড়াও না, দাঁড়াও। লোকটাকে একটু পরে আসতে দাও। তোমার সব তড়পানি বেরিয়ে যাবে একটু পরে।"

রজত বললো, "কে আসবে কে? কার কথা বলছো?"

রীতা বললো, "এখন বলব কেন? আর একটু অপেক্ষা করো। সব পর্দা ফাঁস হবে একটু পরে।"

রজতের শ্বশুড় বললো, "না না এসব ঝেমেলার মধ্যে আমাদের থেকে লাভ নেই। চল চল রীতা। আমরা বরং চলে যাই। ওর ঝেমেলা ওই মেটাবে।"

রীতা বললো, "আমি তো তখন থেকেই বলছি চলো। খামোকা একটা ফালতু লোকের সাথে মুখ লাগাতে গেলে কেন তুমি? চলো বাড়ীতে যাবো, আমার অনেক কাজ আছে।"

বাপ, মেয়ে দুজনেই এবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মুখটা কাচুমুচু করে রজত বসে আছে। কে আসবে? কার কথা বলে চলে গেল, রজত কিছুই বুঝতে পারছে না। সকালবেলা দিনটাই যেন খুব বাজে ভাবে শুরু হল। এসবের মধ্যেও দিবাকর যদি ফোনটা অন্তত ধরত, তাহলে নয় স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু ও যে দেখছি, বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এটা একটা রহস্য। বাপ মেয়ে সিরিজার সন্মন্ধে এত কথা জানার কারণটা কিছুতেই ও ধরতে পারছে না।

দোলন একটু ন্যাকামো করে, রজতকে বললো, "দেখেছো তো? সিরিজা তোমার কত বড় বোঝা। সাধে কি বলেছিলাম? তোমাকে এখন বিপদে ফেলে দিয়ে কায়দা করে এখান থেকে সরে পড়লো।"

রজত বললো, "দোলন, আমার মাথায় কিন্তু এখন রক্ত চড়ে রয়েছে। আমাকে আর রাগিও না।"

দোলন চুপ করে গেল। রজত দেখলো, সিরিজাকে এই ব্যাপারটা জানানো দরকার। ও আবার দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করতে লাগলো। দিবাকরের ফোনের সুইচ যথারিতী বন্ধ। সাত সকালে যেন পীরিত হচ্ছে এখন সিরিজাকে নিয়ে। জামাটা গলিয়ে নিয়ে রজত বললো, "না, এখন আমাকে যেতেই হবে।"

দোলন বললো, "কোথায়?"

রজত বললো, "দিবাকরের বাড়ী যাবো। সিরিজাকে সব জানাতে হবে।"

দোলন মুখ ভেঙচে বললো, "এতো কিছু পরেও আবার সেই সিরিজা!"

রজত ধমকে বললো, "তুমি চুপ করো। আর আমি না আসা অবধি ঘরে অপেক্ষা করো। কেউ এলে দরজা খুলবে না। আমি ঘন্টা তিনেক পরে আবার চলে আসবো।"

দোলনকে ঘরে রেখেই বেরিয়ে গেল রজত। ট্যাক্সি ধরে তাড়াতাড়ি দিবাকরের বাসায় পৌঁছোতে হবে।

কাল রাতে দিবাকরের সাথে সিরিজা চলে যাবার পর থেকেই, মনটা উসখুস করছে। এক ঘেয়ে জীবনটা থেকে কাটানোর মুক্তি, বাঁধভাঙা যৌন স্রোতে ভেসে যাওয়ার আনন্দ, সবই যা হয়েছিল সিরিজার আবির্ভাবে, আজ যেন সবাই তাকে নিয়ে হিংসা করছে। তোয়াক্কাহীন জীবন কাটানোর যে স্পর্ধা দেখিয়েছিল রজত, আজ সেখানে মাথা গলাচ্ছে ওর শত্রুরা। রজত সিরিজাকে সারাজীবনের জন্য ভোগ করবে, এখানেই যেন তাদের প্রবল আপত্তি। কেউ চায় না এই আনন্দটুকু ওকে প্রাণভরে নিতে। সে দোলনই হোক, দিবাকরই হোক বা হোক রজতের স্ত্রী আর শ্বশুড় মশাই। নিজস্ব ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে এত চোখ রাঙানি, এও কি সহ্য হয়? সবাই যেন কোনঠাসা করে দিতে চাইছে ওকে। এখন নতুন উপদ্রব কোন এক অজানা শত্রু। যে সব ব্যাপারে লাগিয়েছে রীতা আর ওর বাবাকে।

ট্যাক্সিতে যেতে যেতে রজত ভাবছিল, সিরিজাকে তো আগে নিয়ে আসি। তারপরে এ রহস্যের সমাধান করবো।

গাড়ীতে যেতে যেতেই ও আবার দিবাকরকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলো। দিবাকর ফোন অফ করে রেখেছে। চোয়াল শক্ত করে রজত মনে মনে বললো, "ফোন অফ করে রেখে তুই কি আমায় ফাঁকি দিতে পারবি দিবাকর? সিরিজাকে পাবার স্বপ্ন তুই ছেড়ে দে। আমি পৌঁছোচ্ছি এখুনি। হাত ধরে টেনে নিয়ে আসবো ওখান থেকে, তুই কিছুই করতে পারবি না।"

ট্যাক্সিটা অনেকদূর চলে গেছে। রজতের ফ্ল্যাটে দোলন একা। বসার ঘরে বসে বসে দোলন ভাবছে, সিরিজা যদি ফিরে আসে তাহলে ও আবার কি নাটক শুরু করবে। যাও বা লোকটাকে নিয়ে চটকাচটকি হয়েছিল কাল রাতে, সুযোগের সদ্ব্যবহারটা হতে হতেও পুরো হল না। সাতসকালে বউ আর শ্বশুড় এসে পন্ড করে দিল পুরো দিনটাই।

হাতে একটা ম্যাগাজিন তুলে দোলন উল্টে পাল্টে ভেতরের ছবিগুলো সব দেখছে। সদর দরজার কলিংবেলটা হঠাৎই বেজে উঠলো। দোলন ভেতর থেকে চেঁচালো, "কে?"

বাইরে থেকে কর্কশ গলায় একজন বললো, "দরজা খোল হারামজাদী, নইলে আমি কিন্তু ভেঙে ঢুকবো।"

দোলন ভয় পেয়ে বললো, "কে আপনি?"

লোকটা বললো, "আমি সিরিজার স্বামী। দরজা খোল। নইলে লাথী মেরে দরজা আমি ভেঙে দেবো।"

[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
সিরিজা by Lekhak - by Mr Fantastic - 03-10-2020, 07:04 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Kalobonduk - 03-10-2020, 07:11 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Kolir kesto - 03-10-2020, 09:28 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by sohom00 - 04-10-2020, 10:02 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by nightangle - 04-10-2020, 12:47 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 06-10-2020, 08:36 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 07-10-2020, 07:47 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 07-10-2020, 03:53 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 08-10-2020, 07:13 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 16-10-2020, 02:28 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 25-10-2020, 02:58 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Mr Fantastic - 25-10-2020, 06:21 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by pagolsona - 30-10-2020, 11:36 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by raja05 - 18-06-2021, 04:24 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by 212121 - 21-08-2021, 11:04 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Fokir_sadhU - 09-10-2022, 01:52 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by 212121 - 21-08-2021, 11:03 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Arpon Saha - 09-10-2022, 02:56 AM



Users browsing this thread: 54 Guest(s)