Thread Rating:
  • 65 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance শেষের পাতায় শুরু (Completed)
পর্ব তিন – (#5-14)

 
প্রত্যেক দিনের মতন সেদিন রাতে যখন মায়ের সাথে কথা হয়েছিল, মা ওর গলার আওয়াজ পেয়েই বুঝে গিয়েছিল কিছু একটা হয়েছে। মাকে সব কথা খুলে জানিয়েছিল রিশু, সাথে এটাও জানিয়ে দিয়েছিল জীবনে কাউকেই আর বিয়ে করবে না, কারণ ও চায়না কোন তৃতীয় ব্যাক্তি এসে ওদের পরিবারের মাঝে কোন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করুক। আম্বালিকা বার দুয়েক চেষ্টা করেছিল রিশুকে বুঝাতে, কিন্তু রিশু চন্দ্রিকার কাছে জবাবদিহি দিতে নারাজ, ভুল সে করেনি সুতরাং কারুর সামনে ঝুঁকতে নারাজ, এক অহম বোধ সেদিন কাজ করেছিল ওর মধ্যে।
 
সেই রাতে ইন্দ্রজিত ওর বাড়িতে এসেছিল, রিশুর সাথে খুব ঝগড়া হয়েছিল, রাগের বশে রিশু ইন্দ্রজিতের কলার চেপে ধরে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দিয়েছিল। সেদিনের পরে প্রায় দুই বছর, রিশুর সাথে ইন্দ্রজিতের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, শালিনীর সাথেও ইন্দ্রজিতের সম্পর্ক বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। দুই বছর পরে শালিনী আর ইন্দ্রজিতের মধ্যে আবার নতুন করে প্রেমের দানা বাঁধে। ততদিনে ইন্দ্রজিত অনেক শুধরে যায়। ওদের এমএস শেষ হওয়ার পরে ইন্দ্রজিত আর শালিনীর বিয়ে হয়।
 
মাঝে মাঝেই শালিনী আক্ষেপ করে রিশুকে বলে, “ভাইয়া, আমার জন্য তোমার ভালোবাসা তোমাকে হারাতে হল।”

ম্লান হাসে রিশু, “যে প্রেমে বিশ্বাস নেই সেটা প্রেম নয়, সেটা নিছক একটা রঙ্গিন ধোঁয়া।”
 
প্লেন এবারে নিচের দিকে নামতে শুরু করে দিয়েছে, সিট বেল্ট বেঁধে নেওয়ার এনাউন্সমেন্ট হতেই জানালার বাইরে দেখে রিশু। ছোট ছোট আলো গুলো একটু একটু করে বড় হতে শুরু করে দিয়েছে। পারস খুলে একটা হাল্কা গোলাপি রঙের কাগজ বের করে দেখে, কি কারনে এই কাগজ রেখে দিয়েছিল সেটা আর মনে নেই তবে মনে হয়েছিল রেখে দেয়। একবছর আগে চন্দ্রিকার লেখা চার পাঁচ লাইনের একটা ছোট চিঠি।
 
“ডিয়ার ডক্টর অম্বরীশ সান্যাল, আমি জানি না কে ভুল কে ঠিক, তবে তুমি সেদিন যেভাবে আমার বুক ভেঙ্গে দিয়েছিলে তারপরে মানুষের ওপর থেকে ভালোবাসার ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। আমি দিল্লী ছেড়ে ফিরে যাই চেন্নাইয়ে। এক সপ্তাহ পরেই আমার বিয়ে। এই চিঠি এই কারনে লেখা কারণ তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা আর এত বছর পরেও আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। পারলে উত্তর খুঁজো নিজের কাছে, কেন তুমি আমার সাথে এত বড় প্রতারনা করলে। ইতি তোমার চন্দ্রিকা।” 
 
যে ভালোবাসায় বিশ্বাস নেই সেই ভালোবাসার কোন অর্থ নেই। মা ওর জন্য মেয়ে দেখেছে, মায়ের কথা অমান্য করার সাধ্য ওর নেই। শেষ বারের মতন চিঠিটা পড়ে, ছিঁড়ে ফেলে রিশু। চন্দ্রিকা চলে যাওয়ার পরে একাকীত্ব কাটানোর জন্য পড়াশুনা নিয়েই পরে থাকত রিশু, ইতিমধ্যে ওর বেশ কয়েকটা পেপার দেশ বিদেশের বেশ কয়েকটা মেডিকেল জার্নালে ছাপা হয়েছে। মেধাবী ছাত্র আর ভালো সার্জেন হিসাবে অরথপেডিক বিভাগে ওর বেশ নাম হয়েছে।
 
প্লেন থেকে নেমে মোবাইল খুলে দেখে মায়ের আর বোনের প্রচুর মিসকল। মাকে ফোন করে জানতে পারে যে দিপ আর দিয়া এয়ারপোর্টে ওকে আনতে গেছে। ঘড়ি দেখল রিশু, রাত প্রায় তিনটে বাজে, এত রাতেও ওর ভাই বোনের চোখে ঘুম নেই ভাবতেই হাসি পায়। বুঝতে পেরে যায় যে ওদের আনন্দের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাগ নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখে ওর জন্য অধীর অপেক্ষায় দিয়া আর দিপ। রিশুকে দেখতে পেয়েই দিপ দৌড়ে দাদাকে জড়িয়ে ধরে, পেছনেই দিয়া তার সাথে অচেনা একটা মেয়ে।
 
ঝিলিক রিশুকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে, পার্থের সাথে ওর দিদি কয়েক বার দেখা করিয়েছিল, সত্যি বলতে পার্থকে একদম পছন্দ হত না ওর। কেমন যেন গায়ে পড়া ছেলেটা, শুধু ছুতো খুঁজত ওর গায়ে একটু হাত লাগানোর। এমনিতেই দিদি তখন প্রেমে বিভোর ছিল তাই পার্থের কোন দোষ দেখতে পেত না। দিয়ার দাদাকে দেখে মনে হল, ভদ্রলোক সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। বেশ লম্বা চাওড়া, প্রসস্থ কাঁধ, চোখে চশমা, চোখ দুটো ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত, চেহারা দেখলেই বোঝা যায় বেশ শান্ত প্রকৃতির ছেলে। পরনের পোশাক খুব সাধারন হাল্কা হলদে রঙের জামা আর একটা গাড় নীল রঙের জিন্স আর একটা মোটা জ্যাকেট। এ নাকি এইএমেস এর ডাক্তার, ভাবতেই কেমন যেন লাগে ওর। হয়ত যারা সত্যিকারের শিক্ষিত তাদের এই পোশাক আসাকে বিশেষ রুচিবোধ হয়ত থাকে না।
 
দিপ দাদার বাজু ধরে ঝুলে আবদার করে বলে, “এবারে কিন্তু দিদির মতন আমার একটা ট্যাব চাই।”

রিশু ভাইয়ের কান টেনে আদর করে উত্তর দেয়, “তোর হাত ভাঙা আমি বের করে দেব। আগামি সপ্তাহ থেকে ক্লাস টেস্ট শুরু, আজকে ত পড়াশুনা কিছুই করিস নি মনে হচ্ছে।”

দিপ উত্তরে বলে, “আরে বাবা একটা দিন ত, স্কুলের পরেই ত এই বাড়িতে এসেছি।”

দিয়া দাদাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ফ্লাইটে ঘুম হয়নি মনে হচ্ছে?” বলেই ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে। প্রতিবার এই ধরনের প্রশ্ন দাদাভাইকে করে ওর মা।

বোনের কান ধরে টেনে আদর করে বলে, “তোদের জ্বালায় কি আর ঘুম হয়? বিকেলে তোর হোয়াটসাপে ফিসিক্সের প্রাক্টিকালের যে ডায়াগ্রামটা পাঠিয়েছিলাম সেটা কি খাতায় করেছিস?”

দিয়া আদুরে কন্ঠে উত্তর দেয়, “প্লিজ দাদাভাই এখন থেকেই তুমি আমার পড়াশুনা নিয়ে পড়বে?” বলে ঝিলিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, “এটা ঝিলিক, ঝিনুক দিদির বোন আর আমার প্রিয় বান্ধবী।”

আলতো মাথা নুইয়ে ঝিলিক রিশুর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, রিশু হাত মিলিয়ে দিয়ার কানে কানে প্রশ্ন করে, “ব্যাপারটা একটু ঝেড়ে কাশ ত?”

হেসে ফেলে দিয়া, “ওদের বাড়ি চল মাম্মা তোমাকে সব বলবে।” ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই দিয়া দাদার হাত ধরে টেনে বলে, “চলত আগে, বাড়ি গিয়ে মাম্মার মুখে সব শুনতে পারবে।”

বোনের মাথায় আদর করে চাঁটি মেরে বলে, “বলবি না ত, ঠিক আছে, এইত তোর দাদার প্রতি ভালোবাসা...” বলেই হেসে ফেলে।

দিয়া মুখ ব্যাজার করে মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “তুমি না সত্যি ইমোশানাল ব্লাকমেল করতে ওস্তাদ।”

রিশু মুচকি হেসে বলে, “লিভাইসের জিন্স...”

দিয়া চোখ বড়বড় আদর আবদার করে, “প্লিজ দাদাভাই ওটা চাইইইই চাই।”

রিশু হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা দেব বলেছি ত, তবে রেজাল্ট দেখে।”
 
গাড়িতে চেপে রওনা দেয় ওরা, এর মাঝে আরো একবার মায়ের ফোন আসে রিশুর কাছে। সামনের সিটে দিপ, পেছনের সিটে ঝিলিক আর রিশুর মাঝে দিয়া বসে। ঝিলিক পাশে বসে তিন ভাই বোনের এই নিবিড় সম্পর্ক দেখে আর মনে মনে হাসে। দিল্লীর এইএমএসের নাম কারুর অজানা নয়, বিখ্যাত সেই মেডিকেল কলেজ হসপিটালের অরথপেডিক সারজেন ওর বান্ধবীর দাদাভাই, নিশ্চয় ভীষণ ব্যাস্ত মানুষ, কাজের সময়ে হয়ত নাওয়া খাওয়ার সময় থাকে না। তাও ভাইয়ের কবে পরীক্ষা, বোনের প্রাক্টিকালের জন্য কোন ডায়াগ্রামের প্রয়োজন, ভাইয়ের কি চাই বোনের কি চাই সব মনে আছে। সব থেকে আশ্চর্য যেটা লাগে ওর যে ভাইয়ের হাত ভেঙ্গেছে শুনে সেই রাতেই দৌড়ে এসেছে দেশের অপর প্রান্ত থেকে।
 
বাড়ির দিকে যেতে যেতে, দিয়া মোবাইল খুলে নাম পরিচয় না জানিয়েই ঝিনুকের ছবি দেখিয়ে দাদাকে প্রশ্ন করে, “দাদাভাই একে কেমন দেখতে?”
 
ছবির দিকে একবার তাকিয়ে দেখে রিশু, বেশ সুন্দরী, ফর্সা গায়ের রঙ, হাসিটা ভীষণ মিষ্টি। বাড়ন্ত দেহের গঠন হলেও চেহারায় সুমধুর কচি কচি ভাব। মুখ দেখে মেয়েটার বয়স আন্দাজ করতে চেষ্টা করে, ওর চেয়ে অনেক ছোট নিশ্চয় বয়সে।
 
মাথা দোলায় রিশু, ছোট্ট উত্তর দেয়, “মন্দ নয়।”

ভুরু কুঁচকে তাকায় দিয়া, “ব্যাস এইটুকু?”

রিশু হেসে প্রশ্ন করে, “তুই সামনা সামনি দেখেছিস?”

মাথা দোলায় দিয়া, “হ্যাঁ, আসলে কিন্তু এই ছবির চেয়েও ভীষণ সুন্দরী দেখতে।” বলেই ফিক করে হেসে ফেলে।

রিশু মাথা নাড়ায় আর হাসে, “আমাকে বলির পাঁঠা পেয়েছিস তোরা আর কি।”

দিয়া বড় হয়েছে, অনেক কিছু এখন বুঝতে শিখেছে, জানে চন্দ্রিকার কথা তাই দাদার হাত চেপে বলে, “আমি জানি এইভাবে তোমাকে ডেকে নিয়ে আসা একদম উচিত হয়নি কিন্তু আর কোন উপায় ছিল না দাদাভাই।”

হেসে ফেলে রিশু, ওর সেই ছোট বোন আর সেই ছোট নেই, চোখের সামনে দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেল। বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে সস্নেহে মাথায় চুমু খেয়ে বলে, “ওরে আমার ঠাকুমা রে, তুই যে দেখতে দেখতে এত বড় হয়ে গেলি সেটা টের পেলাম না।”

দিপ সামনের সিট থেকে দিদিকে চেঁচিয়ে বলে, “ও বাবা, তুই একা বড় হয়েছিস নাকি?”

রিশু ছোট্ট ভাইয়ের মাথায় আলতো চাঁটি মেরে উত্তর দেয়, “না না, তুই ত একেবারে শাল গাছ হয়ে গেছিস।”


=============== পর্ব তিন সমাপ্ত =============
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 18-10-2020, 01:30 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:16 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 03:41 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 21-10-2020, 04:13 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 22-10-2020, 02:49 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by pinuram - 25-10-2020, 07:05 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 27-10-2020, 02:59 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 12:21 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 28-10-2020, 10:20 PM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 29-10-2020, 01:29 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 30-10-2020, 11:22 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 01-11-2020, 01:37 AM
RE: শেষের পাতায় শুরু - by TheLoneWolf - 02-11-2020, 12:51 PM
পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 08-12-2020, 05:19 PM
RE: পর্ব আট – (#2-38) - by pinuram - 09-12-2020, 06:58 PM
Block Guest Users! - by pinuram - 09-12-2020, 11:47 PM
RE: Block Guest Users! - by dreampriya - 10-12-2020, 09:46 AM
RE: Block Guest Users! - by pinuram - 10-12-2020, 12:18 PM
পর্ব আট – (#6-42) - by pinuram - 14-12-2020, 11:37 PM
পর্ব আট – (#7-43) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM
পর্ব আট – (#8-44) - by pinuram - 14-12-2020, 11:38 PM



Users browsing this thread: 23 Guest(s)