23-10-2020, 08:03 AM
#অন্য_রূপকথা
আজ একটু লেক মার্কেটের দিকে গেছিলাম, কিছু কেনাকাটা করার জন্য। কাজ সেরে আগে পেটপুজো করব, নাকি একটু লেক মলের পিছন দিকে যে গাছের দোকানগুলো আছে, সেদিকে যাব ভাবছি, এইসময় হাত ধরে টানল কেউ একজন। তাকিয়ে দেখি, একটি ছোট্ট মেয়ে, রং জ্বলা ফ্রক পরা...কত হবে বয়স? এই সাত বা আট? হাতে কয়েকটা ধূপের প্যাকেট। যাঁরা এই অঞ্চলে যাতায়াত করেন, তাঁরা জানেন, এখানে একটু দাঁড়ালেই এই ধরনের বাচ্চারা ধূপ বিক্রি করতে আসে। যদিও ধূপের গুনমান তেমন ভালো না, তবু মানবতার খাতিরে এবং মায়াবশত কিনতেই হয়। আসলে, "ভিক্ষা করিস কেন...কাজ করে খেতে পারিস না?" যাতে কেউ বলতে না পারেন, সেজন্যই বোধহয় এইভাবে বাচ্চাদের হাতে ধূপ ধরিয়ে দেওয়া হয় বিক্রির জন্য । বেশিরভাগ সময়েই বাচ্চারা ঘ্যানঘ্যান করে এবং কয়েকটি বেশি ধূপ কিনতেই হয়, অনিচ্ছাসত্ত্বেও।
ঠিক সেইরকম মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমি। তবে, সাধারণত আমি যাঁদের কাছ থেকেই কিছু কিনি না কেন, একটু কথা বলার চেষ্টা করি...এইভাবেই কত কিছু শিখতে পারি। কখনও অতুলনীয় জেদের কাহিনী, কখনও বা জীবনদর্শন,যা মুগ্ধ করে। তা, এই বাচ্চাটিকেও জিজ্ঞেস করলাম "এই, তোর নাম কি রে?"
বাচ্চাটা একটু চুপ করে বলল "আমার নাম রাজকুমারী!"
রাজকুমারী! ওর নাম!
বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম।
কলেজবেলায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করতাম, পথশিশুদের পড়াতাম। বিশেষ কিছু না, এই বাংলা আর অল্পস্বল্প অঙ্ক আর ইংরিজি। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই নাম হতো 'আশু', 'ছোটকা', 'খোকা' বা 'বিজ্লী', বড়জোর 'গীতা'। 'রাজকুমারী' শুনে তাই অবাক এবং হয়ত হতভম্ব ও হয়ে গেছিলাম!
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটিও বোধহয় সেটা বুঝতে পেরেছিল। তাই খুবই স্বাভাবিক গলায় বলে উঠল "আমাকে আগে 'কালী' বলে ডাকত! আমার ভালো লাগত না নামটা। তাই আমি নিজেই নিজের এই নাম দিয়েছি! আমি এই জায়গাটার রাজকুমারী! ভাল নাম না?" বলে একমুখ হেসে তিড়িংবিড়িং করে চলে গেল আমার সামনে দিয়ে। নতুন খরিদ্দারের খোঁজেই হয়ত...।
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম সেই গমনপথের দিকে।
আমরা অনেকেই নিজের শর্তে জীবন কাটানোর কথা বলি এবং ভাবি। অনেকে পারি, বেশিরভাগ ই পারি না। কিন্তু...কতজন ভাল না লাগা বিষয় গুলিকে পরিবর্তনের কথা ভাবি? আর এই চালচুলোহীন শিশু ভোলানাথ... কী প্রচন্ড পজিটিভ...কী ভীষন আত্মবিশ্বাস! নিজেই নিজের পছন্দমত নাম যে দিতে পারে...সে কি আরও অনেক, অনেক ভালোবাসার যোগ্য না?
আজ খুব পরিপূর্ণ মন নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। চোখে কাজলের মতো লেপ্টে আছে লেকমার্কেট এলাকার রাজকুমারীর ঝকঝকে হাসি... হাতের ধূপের সুগন্ধ হৃদয়ে লেগে গেছে...
আমি একজন সুখী মানুষ আজ...
আজ একটু লেক মার্কেটের দিকে গেছিলাম, কিছু কেনাকাটা করার জন্য। কাজ সেরে আগে পেটপুজো করব, নাকি একটু লেক মলের পিছন দিকে যে গাছের দোকানগুলো আছে, সেদিকে যাব ভাবছি, এইসময় হাত ধরে টানল কেউ একজন। তাকিয়ে দেখি, একটি ছোট্ট মেয়ে, রং জ্বলা ফ্রক পরা...কত হবে বয়স? এই সাত বা আট? হাতে কয়েকটা ধূপের প্যাকেট। যাঁরা এই অঞ্চলে যাতায়াত করেন, তাঁরা জানেন, এখানে একটু দাঁড়ালেই এই ধরনের বাচ্চারা ধূপ বিক্রি করতে আসে। যদিও ধূপের গুনমান তেমন ভালো না, তবু মানবতার খাতিরে এবং মায়াবশত কিনতেই হয়। আসলে, "ভিক্ষা করিস কেন...কাজ করে খেতে পারিস না?" যাতে কেউ বলতে না পারেন, সেজন্যই বোধহয় এইভাবে বাচ্চাদের হাতে ধূপ ধরিয়ে দেওয়া হয় বিক্রির জন্য । বেশিরভাগ সময়েই বাচ্চারা ঘ্যানঘ্যান করে এবং কয়েকটি বেশি ধূপ কিনতেই হয়, অনিচ্ছাসত্ত্বেও।
ঠিক সেইরকম মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমি। তবে, সাধারণত আমি যাঁদের কাছ থেকেই কিছু কিনি না কেন, একটু কথা বলার চেষ্টা করি...এইভাবেই কত কিছু শিখতে পারি। কখনও অতুলনীয় জেদের কাহিনী, কখনও বা জীবনদর্শন,যা মুগ্ধ করে। তা, এই বাচ্চাটিকেও জিজ্ঞেস করলাম "এই, তোর নাম কি রে?"
বাচ্চাটা একটু চুপ করে বলল "আমার নাম রাজকুমারী!"
রাজকুমারী! ওর নাম!
বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলাম।
কলেজবেলায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করতাম, পথশিশুদের পড়াতাম। বিশেষ কিছু না, এই বাংলা আর অল্পস্বল্প অঙ্ক আর ইংরিজি। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই নাম হতো 'আশু', 'ছোটকা', 'খোকা' বা 'বিজ্লী', বড়জোর 'গীতা'। 'রাজকুমারী' শুনে তাই অবাক এবং হয়ত হতভম্ব ও হয়ে গেছিলাম!
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাটিও বোধহয় সেটা বুঝতে পেরেছিল। তাই খুবই স্বাভাবিক গলায় বলে উঠল "আমাকে আগে 'কালী' বলে ডাকত! আমার ভালো লাগত না নামটা। তাই আমি নিজেই নিজের এই নাম দিয়েছি! আমি এই জায়গাটার রাজকুমারী! ভাল নাম না?" বলে একমুখ হেসে তিড়িংবিড়িং করে চলে গেল আমার সামনে দিয়ে। নতুন খরিদ্দারের খোঁজেই হয়ত...।
আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম সেই গমনপথের দিকে।
আমরা অনেকেই নিজের শর্তে জীবন কাটানোর কথা বলি এবং ভাবি। অনেকে পারি, বেশিরভাগ ই পারি না। কিন্তু...কতজন ভাল না লাগা বিষয় গুলিকে পরিবর্তনের কথা ভাবি? আর এই চালচুলোহীন শিশু ভোলানাথ... কী প্রচন্ড পজিটিভ...কী ভীষন আত্মবিশ্বাস! নিজেই নিজের পছন্দমত নাম যে দিতে পারে...সে কি আরও অনেক, অনেক ভালোবাসার যোগ্য না?
আজ খুব পরিপূর্ণ মন নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। চোখে কাজলের মতো লেপ্টে আছে লেকমার্কেট এলাকার রাজকুমারীর ঝকঝকে হাসি... হাতের ধূপের সুগন্ধ হৃদয়ে লেগে গেছে...
আমি একজন সুখী মানুষ আজ...