22-10-2020, 11:56 PM
।। একত্রিশ ।।
দেওয়ালের ওপর দুটো টিকটিকি জড়াজড়ি করে সঙ্গম মৈথুন করছে। চোখের সামনে টিকটিকির রতিক্রিয়ার দৃশ্য। প্রবল উত্তেজনায়, টিকটিকি দুটো দেওয়াল ছেড়ে ধপ করে পড়লো মাটিতে। দিবাকর ঐ দৃশ্য দেখলো। ওর বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাঁকা দিয়ে উঠলো।
রাত জেগে কীট পতঙ্গের রতিক্রিয়াই দেখবে বসে? ওর কি ঘুম আর আসবে না? ইচ্ছে তো করছে, পাশের ঘরে গিয়ে সিরিজাকে একবার দেখতে। কিন্তু সিরিজা যদি ওকে দেখে ফেলে? সেদিনকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি? চোরের মতন চুপি চুপি আড়াল থেকে দেখার ইচ্ছাটা যেন কিছুতেই গেল না দিবাকরের।
বাচ্চাটা মায়ের কাছে শুয়ে আছে। একবারও চেঁচায় নি। কাঁদেও নি। হারানো মাকে খুজে পেয়ে ও যেন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে সিরিজার পাশে। কিন্তু দিবাকর আর ঘুমোতে পারছে না।
একটা সিগারেট ধরানোর আগে হাত দিয়ে ঠোঁটটা মুছে নিল দিবাকর। চেয়ারে বসে এই নিয়ে পরপর চারটে সিগারেট হল। সিরিজার কথা চিন্তা করে, এত সিগারেট খেয়েও মুখের লালা যেন শুকোচ্ছে না।
মনে পড়ছিল দিবাকরের। সেই সিরিজা একবার চুমু খেয়েছিল ওর ঠোঁটে। রজতের কথা চিন্তা করেও দিবাকরের ঠোঁটে চুমুটা খেতে ইতস্তত করেনি সিরিজা। দিবাকরের মন রাখতেই বোধহয় খেয়েছিল চুমুটা। কিন্তু তারপর থেকেই সম্পর্কটা কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে গেল। সিরিজা সেই যে রজতেরই থেকে গেল। সম্পর্ক সেভাবে গাঢ় আর হল না কিছুতেই। কেন যে চুমুটা সেদিন বিষাদ লেগেছিল, ভেবে খুব আফসোস হয় দিবাকরের। ওর মধ্যে প্রাণটা হয়তো ছিল না সেভাবে। মন থেকে চুমু তো নয়, কারুর প্রত্যাশা মেটানোর জন্য লোক দেখানো যান্ত্রিক চুমু। রজতের বন্ধুকে সেদিন পরীক্ষা করতে চেয়েছিল সিরিজা। কিন্তু আজ? আজ তো কোনো পরীক্ষা নয়। একেবারে নির্দ্ধিদায় সিরিজা বলে ফেলেছে মনের কথাটা। রজতের সঙ্গ ছেড়ে এখন দিবাকরের সাথে থাকতেই ও বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করবে। সিরিজার নতুন ঠিকানা এখন এ বাড়ী। ক্যান্টনমেন্টের রজতের সেই টু রুম ফ্ল্যাট নয়। যেখানে শত্রু পক্ষের ঘনঘন আনাগোনা। নিশ্চিন্তে পুরুষমানুষকে নিয়ে সোহাগ করার উপায় নেই। সিরিজা তাই চায় একটু নিরিবিলিতে থাকতে। রজতের টুরুম ফ্ল্যাট ছেড়ে দিবাকরের এই ছোট্ট ঘরে। যদি ওকে থাকতে দেয় এখানে দিবাকর।
টিকটিকি দুটো মাটিতে পড়ে গিয়ে কোথায় যে গেল দিবাকর আর দেখতে পাচ্ছে না। সিগারেট আবার একটা ধরালো। কিন্তু খেতে যেন ইচ্ছে করছে না আর। দুরন্ত আবেগ মানুষের মনকে যেমন উত্তাল করে তোলে। দিবাকরের সেরকমই হচ্ছিল। অভাবনীয় একটা পরিস্থিতি। উদ্দাম মনকে কিছুতেই সান্তনা দিতে পারছে না ও। চেয়ার ছেড়ে উঠে চলাফেরা শুরু করে দিয়েছে, ঘরের মধ্যে। কেমন যেন দিশাহারা এখন। সিরিজার ঘরে একবার যাবে কিনা তাই ভাবছে। ঘরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে পায়চারী করে একবার সিরিজার ঘরের দিকে পা টা একবার বাড়ালো দিবাকর। পরমূহূর্তেই ইতস্থত করে পিছিয়ে গেল আবার।
খুব দেখতে ইচ্ছে করছে সিরিজাকে। ও কি বাচ্চাটা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে? হয়তো তাই। ঘুমন্ত অবস্থায় সিরিজাকে একবার দেখতে পারলেই যেন পরম শান্তি। কাল সকালে সিরিজা উঠলেই দিবাকর বলে দেবে ওকে। আর তোমাকে কোথাও যেতে হবে না সিরিজা। রজতের কাছেও নয়। এখানে সেখানে কোথাও নয়। তুমি এখানেই থাকবে সিরিজা। শুধু আমার কাছে।
সাহস করে এবার শোবার ঘরের দিকে একটু পা বাড়ালো দিবাকর। মনের মধ্যে হতাশার জাল বিস্তার করেছে, তবুও যেন তার মধ্যে একটু আশার আলো খুঁজতে চাইছে দিবাকর।
সিরিজা যদি কাল ওর প্রস্তাবটা মেনে নেয়। এখন শুধু এক পলক দেখে নিয়েই নিশ্চিন্তে ঘুম। নইলে বিনিদ্র রাত্রি এভাবেই কেটে যাবে। দিবাকর পারবে না কিছুতেই নিজের মনকে আর সান্তনা দিতে।
কাল সূর্যের আলো উদয় হবার পর হয়তো নতুন কিছু অপেক্ষা করছে দিবাকরের জীবনে। একেবারে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। এখন আর রজত নয়, দিবাকরকেই করতে চাইছে ওর একান্ত ভালোবাসার মানুষ।
দরজাটা খোলাই রয়েছে। মুখটা একটু ভেতরের দিকে করে অল্প আলোতে সিরিজাকে দেখার চেষ্টা করলো দিবাকর। বাচ্চাটাকে পাশে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। দরজার দিকেই পাশ ফিরে শুয়ে রয়েছে সিরিজা। শোবার মধ্যে অন্যমনস্কে, অসংলগ্ন শাড়ীতে সিরিজার নিটোল দুটি বুক। ব্লাউজ থেকে একটু বেরিয়ে পড়েছে খাঁজটা। কি দুরন্ত শরীর, অসামান্য রূপ। ঘুমের মধ্যে নরম, কোমলের মত লাগছে ওর মুখমন্ডলটা। ঠোঁট থেকে গ্রীবা, স্তন থেকে কোমর পেরিয়ে নিখুত শরীরটা যেন হৃদয় দুলিয়ে দেয়।
রজত বলেছিল দিবাকরকে, সিরিজা হল আমার হৃদয়েশ্বরী। এমন এক নারী, যা পুরুষমানুষের অকল্পনীয় আকাঙ্খার সবকিছুই যোগান দিতে পারে অনায়াসে। বুকের মধ্যে বুকের ধনকে ধরে না রাখতে পারলে, সব আকাঙ্খাই যে মাটি।
যাকে দেখে এত পাগল হওয়া যায়, তাকে কি এত সহজে ছেড়ে দেওয়া যায়? এতো তীরে এসেও তরী ডুবতে চলেছে দিবাকরের। কেন ও তখন বললো না সিরিজাকে? তোমার প্রতি কিছুটা হলেও দূর্বলতা এখনও রয়ে গেছে সিরিজা। আমি হয়তো নিজের মনের জোরটাকে বাড়াতে পারছি না। কিন্তু তোমার এই প্রস্তাবকে প্রত্যাক্ষাণ করবো, এমন মূর্খামিও আমি দেখাতে পারছি না তোমাকে। অতএব তুমি আমার। আজ থেকে আমার। আর কারো নও।
সিরিজার শরীরটা ঘুমের মধ্যে একটু নড়াচড়া করছে। দরজা থেকে চটকরে সরে গিয়ে পাশের ঘরে চলে এল দিবাকর। দেওয়ালে পিঠটা ঠেকিয়ে অনুশোচনা করছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। মুখে বলতে দ্বিধা করি, অথচ চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করি ওকে। আমি যেন একটা কি?
মাথাটা নীচু করে চুলের মুঠিটা হাত দিয়ে ধরলো দিবাকর। যেভাবে মানুষ ভুল করেছে ভেবে, মাথা ঠোকে। সেভাবেই হাত দিয়ে কপালটাকে একটু চাপড়াতে লাগলো দিবাকর। রাগে আফশোসে নিজেরই গলার টুটিটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে।
ইচ্ছা হল, আর একবার সিরিজাকে শেষ দেখাটা দেখতে, শুধু আজকের রাতটুকুর জন্য। দরজা দিয়ে মুখ বাড়ালো দিবাকর। দেখলো সিরিজা বিছানায় উঠে বসে আছে। অন্ধকারে একটা ছায়ামুর্তী ওকে দেখছে। সিরিজা ওখান থেকেই বলে উঠলো, "কি হল দিবাকরদা? এসো আমার কাছে। ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন?"
সিরিজাকে ওভাবে বিছানায় উঠে বসতে দেখে বেশ থতমত খেয়ে গেল দিবাকর। কি জানি মেয়েটা কি ভাবলো? দিবাকরও কি করবে বুঝতে পারছে না। অল্প আলোতেও সিরিজার মুখটা এখন বেশ স্পষ্ট। ওর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দিবাকরকে নিয়ে।
দিবাকর ভাবল, সিরিজা এত রাত্রেও জেগে আছে শুধু কি ওরই জন্য? না কি কোন গাঢ় শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেছে সিরিজার? এত সাবধানে পা টিপে টিপে ঘরের মধ্যে মুখ বাড়ালো দিবাকর। তাও টের পেয়ে গেল সিরিজা? ও তো শুয়েছিল। উঠলো কখন? নাকি চোখ খুলেই শুয়েছিল দিবাকরের আশায়? ওকে ডাকছে কাছে। তাহলে এখন?
একটু আগে বুকের কাপড় সরিয়ে ফেলেছিল সিরিজা। এখনও তাই। বিছানায় উঠে বসেছে। আঁচলটা ঢাকা নেই। কে জানে? মনে কি আছে মেয়েটার।
দূর্বলতাকে ঢাকার জন্য দিবাকরও একটা ছুঁতো খুঁজছে। ঘর থেকে বেরোতেও পারছে না। ভাবছে কিছু একটা বলে সিরিজাকে যদি ঠেকানো যায়। লজ্জা থেকে রেহাই পাবে কি করে ও বুঝতে পারছে না।
সিরিজা বিছানায় বসেই বললো, "আসতে লজ্জা পাচ্ছো দিবাকরদা? এসো কাছে। এত লজ্জা কিসের? কি হবে আমার কাছে এলে? তুমি খারাপ হবে? ভয় পাচ্ছো? এসো কাছে?"
এত আবেগ দিয়ে দিবাকরকে কেউ কোনদিন ডাকেনি। ডাককে উপেক্ষাও করতে পারছে না। অথচ ওর কাছে যেতে কেমন যেন ইতস্তত করছে। আড়ষ্টতায় শরীরটা নড়াচড়া করছে না। ভেতরটা কেমন যেন করছে। চমকে গেছে, হঠাৎই জেগে ওঠা সিরিজাকে দেখে। কিন্তু সিরিজার অমন বিহ্বল মূর্তী কেন? চোখে মুখে কোনো বিরক্তি নেই। যেন খুশি হয়েছে দিবাকরকে দেখে।
আবার সিরিজা বললো, "এতো করে বলছি তোমায়, তুমি কাছে আসতে পারছ না? আমি কি উঠে আসবো তোমার কাছে?"
দিবাকরের মনে হল, ও তো রজত নয়। কিন্তু সিরিজা যেন রজতের মতই খুব কাছে পেতে চাইছে দিবাকরকে। চোরের মতন মুখ বাড়িয়ে ধরা পড়ে গেছে। অথচ সিরিজা এমন ভাবে ওকে ডাকছে, যেন একটুও বিচলিত হয়নি দিবাকরকে দেখে।
কোনরকমে আড়ষ্ট ভাবটা কাটিয়ে আরও একটু ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো দিবাকর। বিছানার দিকে এগোতে মন চাইছে না, তবু যেতে হচ্ছে সিরিজার ডাকে। মনের মধ্যে লালসা নেই, অথচ ওকে হারানোর ভয়ে একটু আগেই ভীষন চঞ্চল হয়ে পড়েছিল দিবাকর। সাধ করে মেয়েটা তখন মনের ইচ্ছেটা জানিয়েছিল। মুখের ওপর হ্যাঁ বলে দিলে এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো না।
একটু কাছে গিয়ে দিবাকর বললো, "আসলে আমি দেখতে এলাম, তোমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে কিনা? তুমি জেগে আছো বুঝতে পারিনি।"
অন্ধকারেও সিরিজার চোখ দুটো বেশ স্বচ্ছ। আকুতি দৃষ্টি নিয়ে দেখছে দিবাকরকে। কথাটা বিশ্বাস হয় নি। শুধুই ওর অসুবিধের কথা চিন্তা করে দিবাকর এসেছে এ ঘরে? মনকে যেন সায় দিতে পারছে না সিরিজাও। বুকের আঁচলটা তবুও সরালো না ও। দিবাকরকে বললো,তুমি এখনও ঘুমোও নি? চিন্তায় ঘুম আসছে না বুঝি?
কথাটা শুনে সামনেই দাঁড়িয়ে রইলো দিবাকর। খাঁজকাটা বুকের দিকে তাকাতেও পারছে না ভালোভাবে।
সিরিজা বললো, "বসো এখানে। কি, কোন দুশ্চিন্তা হচ্ছে আমাকে নিয়ে?"
দিবাকর বললো, "না সিরিজা। তোমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কেন করবো আমি? আমি আসলে একটু নিজের কথাই চিন্তা করছিলাম অনেকদিন পরে।"
সিরিজা বললো, "কি চিন্তা করছিলে? আমাকে বলবে তুমি?"
তবু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দেখে সিরিজা এবার নিজেই হাতটা বাড়ালো ওর দিকে। দিবাকরের হাতের ওপর সিরিজার হাতের স্পর্শ। একটু চাপ দিচ্ছে হাতটা দিয়ে। দিবাকর বসে পড়লো সিরিজার পাশে।
- "কি চিন্তা করছিলে? আমাকে বলবে না?"
এখনও তাকিয়ে রয়েছে দিবাকরের দিকে একদৃষ্টে। যেন মনের মধ্যে গভীর আশা নিয়ে কিছু প্রত্যাশা করছে ইতিবাচক, দিবাকরের মুখ থেকে শোনার জন্য।
দিবাকর মুখটা নীচু করে বললো, "এতোদিন শুধু অন্যের কথাই ভেবে এসেছি। বন্ধুটার কথা চিন্তা করে তোমাকে কি উত্তর দেব? তাই সংশয়ে ভুগছিলাম। মনে হল, তোমাকে বুঝতে ভুল করেছি আমি। তোমার তো কোনো দোষ নেই সিরিজা। দোষটা রজতের। ভুলটা ওই করেছে। এখন আমি পড়ে গেছি তোমার আর রজতের মাঝে। দোটনায় পড়ে নিজে কি করবো, বুঝে উঠতে পারছিলাম না।"
সিরিজা এবার একটু আবেগ দিয়ে বললো, "আমিও তোমাকে বুঝতে ভুল করেছিলাম দিবাকরদা। তুমি ভালো লোক। তোমার বন্ধুও ভালো। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমি তো আর ওখানে ফিরে যেতে পারবো না।"
দিবাকর দেখছিল, সিরিজা ওর হাতটা ধরে রয়েছে এখনও। ছাড়তে চাইছে না সহজে। এই শেষবারের মতন দিবাকরের কাছ থেকে যেন প্রবল সন্মতিটা পাবার আশায় আকূল হয়ে চেয়ে রয়েছে ওর দিকে। হাতটা ধরেই সিরিজা বললো, "আমার জন্য নিজের বন্ধুকে ভুলে যেতে পারবে না দিবাকরদা? আমি যদি ওর কাছে আর ফিরে যেতে না চাই? তুমি তোমার বন্ধুর জায়গাটা নিতে পারবে না?"
একটা উষ্ণ অনুভূতি আসতে আসতে ঘিরে ধরছিল দিবাকরকে। অবাক চোখে চেয়ে আছে সিরিজার দিকে। ও কি তাহলে শেষ পর্যন্ত রজতকে ভুলেই গেল? আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না ওর সাথে?
মনে মনে বললো, "হতাশায় যাকে তুমি ভুলে যেতে চাইছো সিরিজা, সে তো, তুমি ভুলে গেলেও, তোমাকে ভুলবে না সহজে। আমি রজতকে নিয়ে আর চিন্তা করি না। কিন্তু তুমি পারবে তো ওকে ঠেকাতে? কাল রজত এসে জোর করে তোমাকে নিয়ে যেত চাইবে এখান থেকে। আমি তোমার জন্য ওকে বাঁধা দেব। আর বাঁধা দিলেই নষ্ট হবে, চিরকালের মতন আমার সাথে ওর সম্পর্ক। প্রবল ভাবে যে তোমাকে চায়, তাকে আটকালে আমি হবো তার চরম শত্রু। ও তোমার কোনো দোষ দেখবে না সিরিজা। নিজের তো নয়ই। বুঝবে এই সাধের বন্ধুটাই তাল বুঝে ছুরী বসিয়ে দিয়েছে ওর বুকে। তোমার মনটা যদি তখন বদলে যায়? তুমি যদি তখন ফিরে যাও?"
সিরিজা দেখছে, দিবাকর মুখে কিছু বলছে না। কিছু একটা চিন্তা করছে, হয়তো ওকে নিয়েই।
আস্তে আস্তে দিবাকরের হাতটা ধরে ওকে একটু কাছে টানার চেষ্টা করছে সিরিজা। দিবাকর বুঝতে পারছিল, সিরিজার সেই প্রকট যৌন আবেদন, রজতের রক্তে যা ম্যারাথন ছুটিয়ে দিয়েছিল, এবার সেটাকেই মেলে ধরার চেষ্টা করছে সিরিজা। ওর যেন অবলম্বন হিসেবে একজন পুরুষকে সত্যিই দরকার। তাহলে কি এতক্ষণ শুধুই উদ্বেগে ছটফট করছিল বিছানায়?
হাতটা ধরে দু-মুঠোর মধ্যে চেপে ধরার চেষ্টা করছিল সিরিজা। হঠাৎই দিবাকরকে বলে বসলো, "আমি পারি না দিবাকরদা। আমার বুকের ভেতরটা চিনচিন করে। দেখো আমার বুকের এখানে হাত দিয়ে।"
যার শরীরে এত দাবদাহ, সে কি করে পারবে পুরুষসঙ্গ ছাড়া থাকতে? চকিত হরিনীর মতন কাঁপতে শুরু করেছে সিরিজা। দিবাকর এমন রূপ আগে কখনও দেখেনি সিরিজার।
ওর হাতটা এবার মুঠোয় ধরে নিজের বুকে ঠেকানোর চেষ্টা করছিল সিরিজা। দিবাকর ছাড়াতেও পারছে না।
ওর দিকে তাকিয়ে দিবাকর বলে উঠলো, "কি করছো তুমি সিরিজা? কি হয়েছে তোমার? ছাড়ো আমার হাতটাকে।"
সিরিজা বললো, "তুমি আমার বুকে হাত রাখতে লজ্জা পাও? আমি যদি লজ্জা কাটিয়ে দিই তোমার? পারবে না এখানে মুখটা রাখতে?"
তপ্ত শরীরে যেন প্রবল আকাঙ্খায় থরথর করে কাঁপছে সিরিজা। ওর ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস পড়ছে। এই প্রথম মুখ থেকে স্বাকারোক্তিটা বেরিয়ে এলো। - "আমি পারি না দিবাকরদা। আমি পারি না। এতো কামজ্বর শরীরে। কেউ আমাকে ভালোবাসুক, আমার শরীরটাকে আদর করুক। আমাকে কেউ উজাড় করে দিক। এই শরীরটাই শুধু আমাকে ছটফট করিয়ে পাগল করে মারায়। কাকে দেব এই শরীর? আমার শরীরে যে শুধুই তাপ দিবাকরদা। তুমি যদি আমাকে বুঝতে না পারো আর যে কেউ বুঝতে পারবে না।"
দিবাকরের একটা হাত দুহাতে ধরে এবার নিজের বুকের খাঁজে ঠেকিয়ে দিল সিরিজা। ও চোখ বুজে ফেলেছে। যেন বুকের ওপর দিবাকরের হাত চেপে রেখে কষ্টটা লাঘব করতে চাইছে। গোলাকার দুটো পৃথিবী, সিরিজার অমূল্য বক্ষ সম্পদ। যা চোখে পড়লেই হাই ভোল্টেজ কারেন্ট বয়ে যায়, সেখানে পড়েছে দিবাকরের হাত।
নিজের মধ্যে সেই শক্তিটা আনতে পারছে না রজতের মতন। হাতটা কাঁপছে। সিরিজা মুঠোয় ওটা চেপে ধরে শক্তিটা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
চোখটা বুজেই সিরিজা বললো, "আমি জানি তুমি ওর মত নও। নিজে থেকে কখনও কাউকে কিছু করোনি। একবার অনুভব করো দিবাকরদা। সাহসটা বাড়াও। কামপাগলিনী এই মেয়েটা কি সুখ দিতে পারবে না তুমি?"
দিবাকর অল্প কিছু সময়ের জন্য চোখ দুটো বুজে ফেললো উত্তেজনায়। হাত দিয়ে তরঙ্গটা বয়ে এসে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে নিমেষে। মেয়েমানুষের বুক ছোঁয়ার কি অপূর্ব অনুভূতি। সিরিজা ক্রমশ হাতটাকে আরও ছড়িয়ে দিতে চাইছে সারা বুকের ওপরে। ও নিজে থেকে দিবাকরের হাতটা ধরে সঞ্চালন করাতে চাইছে, কিন্তু দিবাকর পারছে না সক্রিয় হতে।
এই প্রথম কোনো মেয়েমানুষের বুকের ওপর হাত পড়েছে দিবাকরের। মনে পড়ছিল রজতের কথা। রজত ওকে বলেছিল, "সিরিজা একটা নেশার মতন। যে নেশা বড়ই মধুর। তোমার কপালে এরকম কেউ যদি জোটে, তাহলে তুমি হবে খুব ভাগ্যবান। কিন্তু সিরিজার মতন তুমি কাউকেই পাবে না দিবাকর। ও পাওয়া বড়ই কঠিন। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। শুধু খুঁজে ফিরেই একসার। এই পৃথিবীতে সিরিজার কোনো বিকল্পই নেই। শত চেষ্টা করেও আর একটা দ্বিতীয় সিরিজা তুমি খুঁজে আর পাবে না।"
শেষ পর্যন্ত কিনা নিজের সিরিজাকেই তুলে দিল ওর হাতে? দিবাকরের ভেতরটা তোলপাড় হতে শুরু করেছে।
চোখটা খুলল দিবাকর। সিরিজা বললো, "আমার ঠোঁটে একটা চুমু খাবে দিবাকরদা? একবার তো আমি খেয়েছিলাম। তুমি কিন্তু নিজে থেকে এখনও খাওনি আমাকে। খেতে ইচ্ছে করছে না?"
পাথরের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিবাকর। ওর গলার স্বর আটকে গেছে। সিরিজা যেন আজই বাসনার জ্বালাকে পূরণ করে নিতে চাইছে। পুরুষমানুষের সঙ্গ পাবার জন্য এতটাই উদগ্রীব থাকে মেয়েটা, দিবাকর আগে বোঝেনি।
ঠোঁট দুটো কাঁপছিল সিরিজার। দিবাকরের হাতটাকে বুকের ওপর থেকে তুলে নিজের ঠোঁটে ছোঁয়ালো সিরিজা। বুঝতে পারছিল দিবাকর, এ এক নতুন পৌরুষের আগুনে ঝাঁপ দিতে চাইছে সিরিজা। ঠোঁটে ঠোঁটে মিলন ঘটলে নাকি দারুন খেলা শুরু হয়। ভালোবাসা লাট্টুর মত ঘুরপাক খেতে থাকে সারা শরীরে। ও যেন সেই খেলাই শুরু করতে চাইছে দিবাকরের সাথে।
ওকে অবাক করে সিরিজা বললো, "তুমি ভাবছো? আমি আবার যদি কাল তোমার বন্ধুর কাছে ফিরে যাই? আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না? ও আমাকে জোর করলেও আমি যাবো না। তুমি দেখে নিও। শুধু একটু তোমাকে সাহস দিতে চাইছি দিবাকরদা। আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। শরীরে যে আমার ভীষন কামনা। এই কামনা নিয়েই চলে এসেছিলাম ওখান থেকে। একটা মনের মানুষ জুটিয়েও নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সেই মানুষটা আমার মনের মধ্যে আর নেই। কোথায় হারিয়ে গেছে। এখন শুধু তোমাকেই আবার নতুন করে পেতে চাইছি।"
সন্মতি না নিয়েই দিবাকরের হাতের এক একটা করে আঙুল মুখে পুরে চুষতে শুরু করলো সিরিজা। অবাক চোখে দিবাকর তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মুখে কিছু বলতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে সিরিজা প্রবল তৃপ্তিতে ওর হাতের আঙুল চুষে যাচ্ছে। চাইছে দিবাকর একটু রজতের মতই হয়ে যাক। শরীরি ভান্ডারে মুগ্ধ হয়ে রজত যেভাবে কামনার ঝড় তুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সিরিজার ওপর। সেভাবে দিবাকরও যদি.....
আবেগটা চেপে রাখতে না পেরে সিরিজা এবার আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো দিবাকরকে। গলা জড়িয়ে দিবাকরের গালে একটা চুমু খেয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। প্রতিরোধ করতে পারেনি দিবাকর। শুধু মুখে বললো, "সিরিজা তুমি?"
ওকে জড়িয়ে ধরে গালে অনবরত চুমু খেয়ে চলেছে সিরিজা। এবার ঠোঁটটাকে দিবাকরের ঠোঁটের খুব কাছে নিয়ে গিয়ে বললো, "পারবে না তুমি তোমার বন্ধুর মতন হতে? পারবে না দিবাকরদা? কি বলো?"
শরীরের ভেতরটায় এমন একটা তোলপাড় হয়ে যাওয়ার মূহুর্ত আগে কখনও আসেনি। সিরিজার ঠোঁট ওর ঠোঁটের কত কাছে, অথচ কামড়ে ধরে জিভের লালা দিয়ে তীব্র আস্বাদনে ভরিয়ে দিতে পারছে না সিরিজাকে। চুম্বনের অনুভূতিটা গাঢ় চুম্বনে সবচেয়ে প্রানবন্ত হয়। দিবাকরের মনে হচ্ছে একটু ছুঁয়ে স্পর্শ করলেই ও যেন পৃথিবীর সেরা ঠোঁটের স্বাদটা পাবে। একটু একটু করে ঠোঁটটাকে খুব কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, অথচ জড়তাই ওকে কেমন ঠোঁটের স্পর্শ থেকে দূরে করে দিচ্ছে।
নিজে থেকে দিবাকরের চেষ্টাটাকে বিফলে যেতে দিল না সিরিজা। গলা থেকে উঠে গিয়ে ওর দুটো হাত তখন জড়িয়ে ধরেছে দিবাকরের মাথাটাকে। ঠোঁটের সুধাকে উজাড় করে বিলিয়ে দেবার জন্য ও বললো, "কি হয়েছে তোমার দিবাকরদা? এখনও লজ্জা পাচ্ছো? এই যে তাকাও, আমার দিকে তাকাও।"