Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery সিরিজা by Lekhak
  ।। ত্রিশ ।।


দেহমন উজাড় করে রজতকে দিল সিরিজা। আর এখন প্রতিদ্বন্দ্বিনী কোন নারীর নাম সহ্য করতে না পারাটাই স্বাভাবিক। দোলনকে নিয়ে আর আলোচনটাই করতে চাইছিল না সিরিজা। দিবাকরকে বললো, "ছাড়ো না দিবাকরদা, তুমি অন্য কথা বলো। এসো বসো। একটু তোমার কথা শুনি। কি আমাকে রাখবে তো তোমার কাছে?"

দিবাকর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিল, কি ঘটে গেল রজতের জীবনে। যাকে ও পেল, সেই এখন চলে এল আমার কাছে। এখন কি হবে তাহলে?

মুখখানা খুব চিন্তিত ভাবে করে দিবাকর বললো, "কিন্তু রজত? ও তো জানতেই পারবে, তুমি এখানে রয়েছ। তাহলে?"

সিরিজা যেন অনেক স্বাভাবিক আগের থেকে। একটু হেসে বললো, "ওর ভালোবাসার মানুষ এখন তোমার কাছে চলে এসেছে। যখন জানতেই পারবে, আমি তোমার কাছে রয়েছি, তখন আর কি হবে? ও নিজেও মেনে নেবে। তুমি তোমার বন্ধুকে সামলাতে না পারো, আমি তো রয়েছি। ওটা আমার ওপরই ছেড়ে দাও। তোমার বন্ধুকে আমি বুঝিয়ে দেব।"

দিবাকর হতবাকের মতন চেয়ে রয়েছে সিরিজার দিকে। ওর দিকে একটা আকুতি দৃষ্টি নিয়ে সিরিজা বললো, "জীবনে সুখ তো তুমি পাওনি দিবাকরদা। আমি যদি সুখ দিই? নেবে না আমার কাছ থেকে?"

কি বলছে সিরিজা? উত্তেজনার উথাল পাতালকে সামাল দেবার ক্ষমতা দিবাকরের অত নেই রজতের মতন। বুকের মধ্যে একরাশ ইচ্ছে নিয়ে দিবাকরকেও কামনার সুখ দেবার জন্য সিরিজা ইচ্ছা প্রকাশ করছে অথচ এই সিরিজাকে পেয়েই রজত ওকে বলেছিল, "দিবাকর আমি জীবনে কারুর পরোয়া কোনদিন করবো না। সিরিজাকে যখন পেয়েছি, তখন ওকেই আমি ভোগ করবো। ইচ্ছেমতন আমার কামতাগিদের আঁশ মেটাবো। প্রবল উচ্ছ্বাসে শুষে নেব ওর ভরাট যৌবন। আমার সিরিজাকে চাই। সিরিজাকে ছাড়া আমার চলবে না দিবাকর।"

পৃথিবীর কোন নারীই যে সুখ কোনদিন পুরুষমানুষকে দিতে পারবে না। জীবনকে যে মধুর করে তুলতে পারে সেই আশ্চর্য নারী সিরিজা কেমন আকাঙ্খার চোখে চেয়ে আছে দিবাকরের দিকে। ওর যেন সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।

 -- "না না এ হতে পারে না। রজতকে আমি ঠকাতে পারবো না। তুমি আমায় ভুল বুঝো না সিরিজা। এ আমি পারবো না।"

উঠে এসে দিবাকরের খুব কাছে চলে এল সিরিজা। ওর বুকের আঁচল সরিয়ে দিবাকরকে যখন তীব্র খাঁজটা দেখানোর চেষ্টা করলো, দিবাকর বুঝতেই পারলো, খুবই বাড়াবাড়ি শুরু করেছে সিরিজা। এ হতে দেওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।

 -- "কি করছো সিরিজা? ছিঃ। এসব আমাকে দেখিও না।"

 - "তোমাকে যদি আমার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরি? পারবে না এখানে মুখটা রাখতে?"

 -- "না সিরিজা। তুমি ভুল করছো।"

 - "আজ থেকে শরীরটা তোমাকে দিতে চাইছি। তুমি আমায় নেবে না?"

 -- "কাকে আমি নেব সিরিজা? কাকে? শরীর মন সবকিছু উজাড় করে দিয়ে তুমি বসে আছ রজতকে। আর আজ কিনা সব একেবারেই আমি পেয়ে যাবো তোমার কাছ থেকে? যে অধিকার তোমার ওপর জন্মেছিল রজতের। অধিকার কি এভাবে ছিনিয়ে নেওয়া যায়? রজতের এই মূহূর্তে তোমাকে কতটা প্রয়োজন তুমি জানো না। ও পারবে না তোমাকে ছেড়ে থাকতে। মরে যাবে। বন্ধুটার মৃত্যুর জন্য কি শেষ পর্যন্ত আমিই দায়ী হব বলতে চাও?"

কথা বলতে বলতে মুখটা নীচু করে ফেলেছিল দিবাকর। এবার মুখ তুলে দেখলো, সিরিজার শাড়ীর আঁচল মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে, আর ওর ব্লাউজের ভেতর থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে, উন্নত বর্তুল স্তন জোড়া। সিরিজা যেন কিছুতেই মনটা আর গলাতে চাইছে না রজতের প্রতি। যাবতীয় আকর্ষন আর কেন্দ্রবিন্দু ওর দিবাকরকে ঘিরেই।

একেবারে নির্লজ্জ্বের মতন বলে বসল দিবাকরকে, "তুমি মেয়েমানুষকে নগ্ন দেখেছো কখনও?"

কি অসহায় পরিস্থিতি। শিহরণ জাগানোর চেষ্টা করেও জাগাতে পারছে না সিরিজা। দিবাকরের মন পড়ে আছে, সেই বন্ধুর প্রতি কর্তব্যপরায়ণতাকে ঘিরেই। এমন ঐশ্বর্য ভান্ডারী সিরিজা দিবাকরের মনে যখন কামনার উদ্রেক ঘটাতে পারছে না তখন আর কি হবে? নিজের কথা চিন্তা না করে যারা শুধু পরের কথাই চিন্তা করে তাদের কপালে নারী সুখ জোটেনা সহজে। 

 - "না, তুমি পারবে না দিবাকরদা। পারবে না আমাকে রাখতে। এ তোমার কাজ নয়। একটা মেয়ে নিরুপায় হয়ে তোমার মন পেতে চাইছে, অথচ তুমি তাকে বুঝতে চাইছো না। থাক, আমি চাই না তোমাকে জোড়াজুড়ি করতে। যেচে কারুর মন পাওয়া যায় না। সে যেই হোক। অত সহজে আমি তোমাকে নিজের করে নিতে পারবো না। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে তুমি ক্ষমা করো দিবাকরদা। কালই আমি চলে যাবো এখান থেকে।"

শাড়ীর আঁচলটা তুলে নিয়ে সিরিজা বুকের আবরণটা ঢেকে নিল তাড়াতাড়ি। দিবাকর একটা মরা মানুষের মতন কাঠ হয়ে বসে পড়েছে সামনের চেয়ারটার ওপর। না পারছে সিরিজার দিকে তাকাতে। না পারছে ওকে কিছু বলতে।

সিরিজা বললো, "তোমাকে একটা সত্যি কথা বলব দিবাকরদা। আমার কথা বিশ্বাস করবে?"

দিবাকর এমন ভাবে মাথাটা তুললো, যেন অনুভূতি, নারীকে পাওয়ার আনন্দ সবকিছু খুইয়ে বসে আছে শরীর থেকে। একেবারে লোভশূন্য চোখে সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো," বলো। আমি বিশ্বাস করবো সিরিজা। কেন করবো না?"

সিরিজা বললো, "তোমার বন্ধু দোলনকে পছন্দ করে না আমিও জানি সেকথা। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে ও দোলনের জেদ ভাঙাতে চাইছে, তাতে ও একদমই সফল হবে না তুমি দেখে নিও। শরীরটাকে নিয়ে দেওয়া নেওয়ার এই বেকার ছেলেখেলা সব নষ্ট হবে আজ রাতে। এতে দোলনের জিত তো শুধু হবেই না, ও আরও পেয়ে বসবে। আমাকেও তাড়াতে চাইবে ওখান থেকে। ঘন ঘন ওর সাথে মাখামাখির করার চেষ্টা করবে, তখন জোর করেও কিছু হবে না। দোলন ও বাড়ী থেকে আর কোনদিনই যাবে না।"

একেবারে মন থেকে কথাগুলো বলছে সিরিজা। বুকের মধ্যে কষ্টটা যেন এখনও রয়ে গেছে।

দিবাকর খুব হতাশ গলায় বললো, "হ্যাঁ, কি যে করলো রজত। আজ ও খুব ভুল কাজ করে বসলো।"

এমন একটা পরিস্থিতি, নিজের মনেও সাহস জোগাতে পারছে না দিবাকর, সিরিজার মনকে তো নয়ই। দুটো যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্র। এক দিকে রজত আর একদিকে দিবাকর। কারুর সাথে কারুর মিল খাবে না কোনদিনই।

সিরিজা একটু হেসে বললো, "আমার সাথে একসঙ্গে শুতেও বুঝি লজ্জা করছে তোমার? ভাবছ সিরিজা যদি ঘুমের ঘোরে তোমাকে জড়িয়ে ধরে?"

দিবাকর আমতা আমতা করে কি বলবে বুঝতে পারছিল না। ওর কথা জিভে এসেও আটকে যাচ্ছে। বেরোতে চাইছে না সহজে মুখ দিয়ে। অনেক কষ্ট করে বোকার মতন বললো, "না, তা নয়। তুমি যদি কিছু মনে না করো, তাহলে শোবার ঘরে তুমি শোও। আমি না হয় এঘরে।"

সিরিজা আবার একটু হাসল। বললো, "ঠিক আছে। আমি না হয় বাচ্চাটাকে নিয়ে এ ঘরে শুচ্ছি। তুমি নিজের ঘরে শোও আরাম করে।"

দিবাকর বললো, "না তোমার কষ্ট হবে সিরিজা। বাচ্চা নিয়ে তুমি এঘরে শুতে পারবে না। তার চেয়ে আমিই কষ্ট করে নিচ্ছি আজ রাতটা। কালকে নয় অন্য কিছুর ব্যবস্থা করবো।"

সিরিজা অবাক হয়ে বললো, "কাল আমি থাকবো তোমার কাছে? তুমি সাহস করে বলছো?"

দিবাকরের মনের মধ্যে কোন লোভ নেই। সিরিজার প্রতি সহানুভূতিটা দেখাতে কোন কার্পন্য নেই। খুব অন্তর থেকে বললো, "আমি চাই না বাচ্চাটাকে নিয়ে তুমি কোথাও চলে যাও সিরিজা। আমি হয়তো নিরুপায়। ভুল করছি রজতের জন্য। কিন্তু তুমি কষ্ট পাও, সেটা আমি চাই না। তোমার যতদিন মন চায় তুমি এখানে থাক। আমি তোমাকে না করবো না।"

মনে পড়ছিল সিরিজার। এই লোকটাই সেদিন রজতের ফ্ল্যাটে কি কান্ডটাই না ঘটিয়েছিল। সিরিজার সঙ্গে পরের দিন কথা বলার পর, নিজের কাম ইচ্ছাটাকে একেবারেই দমন করে ফেলেছে দিবাকর। এত কষ্ট করছে সিরিজা। কিন্তু দিবাকরের সেই ইচ্ছাটাকে ফিরিয়ে আনতে পারছে না কিছুতেই। ও যেন সব জেনেও কিছু বুঝতে চেষ্টা করছে না এখনও।

সিরিজা বললো, "আমি একটা কাপড় এনেছি সঙ্গে। শাড়ীটা পাল্টাবো। তুমি বসো। আমি তাহলে ও ঘরে একটু যাই।"

দিবাকর বললো, "হ্যাঁ, তুমি পাল্টে এসো। আমি বসে আছি ততক্ষণ এ ঘরে।"

বাচ্চটার কাছে গিয়ে ঘুমোচ্ছে কিনা ওকে একটু নজর করে সিরিজা কাপড়ের প্যাকেট টা নিয়ে ঢুকল দিবাকরের শোবার ঘরে।

চেয়ারে একা বসে রইলো দিবাকর। জীবনে অনেকগুলো করা ভুলের সাথে আর একটা ভুল যোগ হল আজ। যাকে প্রত্যাক্ষান করলো, তাকে কি মুখ ফুটে বলতে পারবে আর? ভালো লাগার কথা বলতে পারবে আর? সিরিজাকে ভালো লাগবে না। এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। বন্ধুর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে জীবনের মোক্ষম সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চলেছে দিবাকর। আর হয়তো এ সুযোগ কোনদিন পাবেই না জীবনে। চেয়ারে বসে একটা সিগারেট ধরালো দিবাকর। ওর মনের মধ্যে ভালো মন্দ অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। মনটা আসতে আসতে বদলাতেও শুরু করেছে, কিন্তু পারছে না নিজের মধ্যে কামনার আকাঙ্খাটাকে জাগ্রত করতে। ভাবছে কি করবে ও? তাহলে কি বলেই দেবে সিরিজাকে? আজ রাতে ও রাজী আছে সিরিজার পাশে শুতে।

মনের মধ্যে ইচ্ছাটা নিয়ে হতভাগার মতন বসে আছে। সিগারেটে টান দিচ্ছে, আর ধোঁয়া ছাড়ছে। কিন্তু মনটা এখনও সিরিজাকে নিয়েই পড়ে আছে। দিবাকর যেন জীবনে আর সিরিজার সান্নিধ্য পাবে না কখনও, এটাই ধরে নিল মনে মনে। সারাজীবন ধরে একটা আফশোস করার মতই কাজ করেছে ও। এখন পস্তানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। সিরিজাকে মত পরিবর্তন করে ইচ্ছার কথাটা বলবে, সে সৎসাহস ওর নেই।

সেই রুটির দোকানের বউটাও ওকে বললো একটু আগে। - "আর কবে কাউকে ঘরে আনবে দিবাকরদা? তোমার কথা ভেবে ভেবে, আমরাও তো মাঝে মধ্যে একটু উতলা হই। তুমি নিজে কি সেটা বুঝবে না?"

এত মেয়েকে ও দেখলো, আলাপ করলো, কিন্তু রেশমী ছাড়া আর তো কাউকে মনে ধরলো না। সিরিজা রজতের জীবনে এল, সে আবার দিবাকরের ভালোলাগাকে নতুন স্বাদ দিল। সিরিজা, রেশমীকেও ছাড়িয়ে গেল। যাও বা সিরিজাকে মন প্রান দিয়ে চাইল, সেটাও পিছিয়ে গেল রজতের জন্য। বন্ধুপ্রীতি আর কতদিন? রজতের সব ঝেমেলা মিটে গেলে, ও সিরিজাকে নিয়েই পড়ে থাকবে সারাজীবন। তখন আর এই বোকাভোলা, সাদাসিধে বন্ধুটার কথা মনেও পড়বে না। এখন শুধু শুধু রজতের কথা ভেবে হাত কামড়ানো কেন? দয়া দাক্ষিন্য দেখানোর এর কি কোনো প্রয়োজন ছিল?

সিরিজার রাখা প্রস্তাবটা মেনে নিলেই হতো।

এক নাগাড়ে টানতে টানতে সিগারেটটা পুরো শেষ। দিবাকরের মনে হল, আর একটা ধরায় এক্ষুনি। চিন্তাটা ওকে পুরো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে। কি করবে এখন ও? কিছুই বুঝতে পারছে না।

কাপড়টা পাল্টে শোবার ঘর থেকে বেরোলো সিরিজা। দিবাকর দেখলো, ও নতুন একটা শাড়ী পড়েছে। মনে হচ্ছে রজতই ওকে কিনে দিয়েছে।

সিরিজা বললো, "বসে বসে কি ভাবছো? ভাবছো আমি খুব খারাপ, তাই না?"

দিবাকর বললো, "কেন তুমি খারাপ কেন হবে? আমি তো এমনি এমনিই....."

সিরিজা বললো, "জানি, আমি খুব খারাপ। সবাই তো এই জন্যই আমাকে খারাপ বলে।"

দিবাকর বললো, "সবাই মানে? কে কে?"

 - "ঐ যে আমার গ্রামের লোকেরা আমার আড়ালে বলতো। আমার পেছনে বলতো। আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছি। ওরা কি এখনও বলছে না। নিশ্চয়ই বলছে। নইলে ও ব্যাটা এত সাহস পায় কি করে?"

দিবাকর বুঝতে পারছিল না। সিরিজা কার কথা বলছে? ওকে বললো, "কার কথা বলছো তুমি সিরিজা?"

 - "কেন? আমি আমার স্বামীটার কথা বলছি। তুমি বুঝতে পারছো না?"

দিবাকর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো, "ও। তাই। তারপর আবার বললো, তাতে কি? এ তো তোমার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। তুমি কোথায় থাকবে। কার সাথে থাকবে। সবই তোমার ইচ্ছার ওপর। তোমার ইচ্ছাতে তো কেউ বাদ সাধতে পারবে না সিরিজা। সে যেই হোক। তোমার স্বামী হলেও পারবে না। এখন ছেলেদের সব রাইট কেড়ে নিয়েছে সরকার।"

সিরিজা বললো, "তা ঠিক। আমি ঔ জন্যই আর চিন্তা করি না জান? শুধু....."

 -- "শুধু কি?"

বলে, সিরিজার মুখের দিকে চেয়ে রইলো দিবাকর।

 - "শুধু মনের মতন কাউকে যদি পেতাম। মনের আশাটা জুড়িয়ে যেত। কি যে হয়ে গেল।"

মনের মত তুমি তো রজতকে পেয়েছিলে সিরিজা। শুধু দোলনটা না এলে এত কান্ড হত না। সিরিজার মুখের দিকে তাকিয়ে, মনে মনে এই কথাটাই বললো দিবাকর। সিরিজা, আজ তোমার আমার, দুজনেরই খুব অপয়া দিন। খুব খারাপ লাগছে তাই তোমাকে দেখে।

সিরিজা বললো, "চলো এবার খেয়ে নিই। শুতে হবে তো?"

দিবাকর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় বারোটার কাছাকাছি বাজে এখন। কথায় কথায় যে রাত হয়ে যায়, সেটা খেয়াল করেনি এতক্ষণ।

ও্দিকে রজত মনে হয় দোলনকে নিয়ে কিছু একটা করছে। মনটা ওদিকে করে কোনো লাভ নেই। রান্নাঘর থেকে নিজেই একটা বড় থালা আর দুটো ঝোলের বাটি নিয়ে এসে বললো, "এসো খাও। আমি খাবারের প্যাকেটটা আবার গিয়ে নিয়ে আসছি।"

 - "সেকি? তুমি খাবে না।"

 -- "না সিরিজা। আজ নয়। শরীরটা ঠিক হোক। কালকে খাবো আবার।"

 - "একটুও খাবে না? একটু অন্তত খাও।"

খাবারের প্যাকেটটা রান্নাঘর থেকে নিয়ে আসার পর সিরিজা এমন পীড়াপীড়ি করতে লাগলো, দিবাকর বললো, "আচ্ছা, আচ্ছা, আমি শুধু একটা রুটি খাবো। তোমার কথা রাখার জন্য।"

 - "তাহলে প্লেট?"

দিবাকর বললো, "প্লেট লাগবে না। তুমি হাতেই দাও। আমি ঝোল মাখিয়ে খেয়ে নিচ্ছি রুটিটা।"

সিরিজা খাবারের প্যাকেটটা খুলে ফেলে বললো, "ওমা, কত এনেছো? এতো কে খাবে? আমি তো এতো খেতেই পারবো না।"

 -- "কত আর এনেছি? ওতো সামান্য। তোমার একারই রুটি আছে ওখানে। আমাকে শুধু একটা রুটি দাও। নইলে তোমার আবার কম পড়ে যাবে।"

 - "কিচ্ছু কম পড়বে না। খাও তো।"

সিরিজা নিজেই ঝোল মাখিয়ে রুটিটা তুলে দিল দিবাকরের মুখে। ঠোঁটের ওপর সিরিজার হাতের স্পর্শ পেয়ে দিবাকরের ভেতরটা কেমন ছটফট করে উঠলো। রুটিটা গলায় নিয়ে একদৃষ্টে দেখছে ওকে।

সিরিজাও দেখছে দিবাকরকে। খেতে খেতে হঠাৎই বিষম লেগে গেল গলাতে। প্রচন্ড কাশি নিয়ে কুকড়ে গেছে দিবাকর। দম প্রায় বার করে দিচ্ছে। সিরিজা বললো, "ওমা কি হলো বলো তো? দাঁড়াও আমি এক্ষুনি জল নিয়ে আসছি।

বুকে মাথায় হাত দিয়ে নিজের বিষমকে সামলাচ্ছে দিবাকর। সিরিজা এক গ্লাস ভর্তি জল নিয়ে এসে দিবাকরকে বললো, "তুমি হাঁ করো তো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে। নইলে তাড়াহুড়োতে আবার বিষম খাবে তুমি।"

নিজের হাতে দিবাকরের হায়ের মুখে জল ঢেলে দিচ্ছে সিরিজা। মনের মধ্যে কি দারুন পুলক জাগছে একটা। কাশি রোধ করার জন্য দিবাকরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সিরিজা। এত দরদী প্রান। সিরিজার মনটা যেন উদারতায় ভর্তি। সত্যি যদি এরকম কাউকে সারাজীবনের মত পাওয়া যেত? তাহলে জীবনটা ওরও পাল্টে যেত ঠিক রজতের মতন।

পোড়া কপালের দোহাই দিয়ে এরপরে লোককে বললেও সবাই হাসবে। ওহে দিবাকর, নারী চরিত্রকে যদি বুঝতেই না পারো, তাহলে সোহাগ আদরের মর্ম তুমি বুঝবে কি করে? সবাই কি আর সিরিজার মতন? কাছে যে আসতে চায়, তাকেই যদি দূরে সরিয়ে রাখো, তাহলে এই পৃথিবীতে একাই কাটাতে হবে তোমাকে চিরকাল। কেউ তোমাকে পাশে চাইবে না, কাছে ডাকবে না। ভালোবাসবে না। শরীর মন কিছুই তো দেবে না। একাকীত্ম আর যন্ত্রনায় কাটাতে হবে বাকী জীবন। কে তোমাকে তখন এত দরদ দেখাবে সিরিজার মতন? রেশমী? ও তো এখনও সাক্ষাতই করেনি সিরিজার সাথে। তারপরে যদি মন দিতে না চায়? একুল ওকুল দুকুলই গেল।

ভাবনা চিন্তায় দিবাকরের কন্ঠরোধ হয়ে গিয়েছিল একটু আগে। সিরিজা মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার পর এখন যেন অনেকটা স্বস্তি লাগছে। বাকী রুটির টুকরোটা আস্তে আস্তে খেল। সিরিজা একটু হেসে বললো, "রেশমীকে তোমার সত্যিই দরকার। নইলে তোমার চলবে কি করে?"

কথাটা শুনে দিবাকর কেমন যেন মনমরার মতন হয়ে গেল। বারবার রেশমীর কথা তুলে দিবাকরকে গোলকধাঁধায় ফেলে দিচ্ছে সিরিজা। কখনও নিজের মনের কথাটা বলছে, আবার কখনও দিবাকরের কষ্ট চিন্তা করে রেশমীকে নিয়ে আসছে আলোচনার মাঝে। সিরিজা আসলে তাহলে কি বোঝাতে চাইছে? ও কি হাল ছেড়ে দিয়েছে দিবাকরের প্রতি? না এখনও দিবাকরকে পরীক্ষা করছে?

খাওয়া শেষ করে সিরিজা বললো, "আমি তো এঘরেই শুতে পারতাম দিবাকরদা? তোমার শুধু শুধু কষ্ট হবে।"

দিবাকর বললো, "না না। তুমি ওঘরেই শোও সিরিজা। বাচ্চা নিয়ে তোমারই বরং কষ্ট হবে।"

এখনও যেন বলতে পারছে না মুখ দিয়ে, চলো তুমি আমি সিরিজা, দুজনেই একসাথে শুই। আবার আলাদা আলাদা ঘরে কেন?

সাহস টুকু না দেখিয়ে সেই চাপা হয়েই রইলো দিবাকর। সিরিজা একটু করুন ভাবে তাকালো দিবাকরের দিকে। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে ওকে বললো, "আমি তাহলে যাই। কাল সকালে উঠে বোলো। আমি তোমার চা করে দেব। যদি তোমার আগে ঘুম ভাঙে আমাকে ডাকতে ভুলো না।"

যাই বলে সেই যে চলে গেল সিরিজা। আর এঘরে এলো না। মনের দরজায় কড়া নেড়ে সুযোগটা এসেও আবার সাড়া না পেয়ে ফিরে গেল। সিরিজার প্রস্তাবে দিবাকর যখন সাড়াই দিল না। তখন সিরিজাই বা আর কি করবে? দোলনের মত গায়ে পড়ে বেশি ঢলানি তো করতে পারবে না সিরিজা? হতে পারে ওর শরীরে যৌনতা প্রচন্ড। পুরুষমানুষের প্রতি আসক্তি আছে। কিন্তু দিবাকর ইচ্ছেটা না দেখালে সিরিজারও কিছু করার নেই। একবার রজতকে যেভাবে শরীরি চুম্বক দিয়ে কাছে টেনেছিল। দিবাকরের সঙ্গে সেটার আর পুনরাবৃত্তি করতে চায় না সিরিজা। ও তাই দূরেই মনে হয় চলে গেল। মন থেকে দিবাকরকে মুছে ফেললো। আর হয়তো মুখ ফুটে বলবেও না কোনদিন দিবাকরকে।

 -- "ইশ। আমি যে কি করলাম?"

চেয়ারে বসে আপন মনেই বলে উঠলো দিবাকর। তখন রাত্রি অনেক। সিরিজা এতক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছে। অথচ দিবাকরের ঘুম আসছে না। বিনিদ্র রাত্রি যাপন করে ও সিরিজার কথাই ভেবে মরছে তখন থেকে।

[+] 3 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
সিরিজা by Lekhak - by Mr Fantastic - 03-10-2020, 07:04 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Kalobonduk - 03-10-2020, 07:11 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Kolir kesto - 03-10-2020, 09:28 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by sohom00 - 04-10-2020, 10:02 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by nightangle - 04-10-2020, 12:47 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 06-10-2020, 08:36 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 07-10-2020, 07:47 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 07-10-2020, 03:53 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 08-10-2020, 07:13 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 16-10-2020, 02:28 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Mr Fantastic - 22-10-2020, 09:55 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 25-10-2020, 02:58 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by pagolsona - 30-10-2020, 11:36 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by raja05 - 18-06-2021, 04:24 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by 212121 - 21-08-2021, 11:04 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Fokir_sadhU - 09-10-2022, 01:52 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by 212121 - 21-08-2021, 11:03 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Arpon Saha - 09-10-2022, 02:56 AM



Users browsing this thread: 65 Guest(s)