21-10-2020, 02:15 PM
।। উনত্রিশ ।।
সন্ধে হওয়ার একটু আগেই দিবাকর চলে গেছে সিরিজাকে নিয়ে। দুজনকে এগিয়ে দিতে রজত চলে এসেছিল রাস্তার মোড়ে। সিরিজাকে ছাড়ার আগে রজত আর উপভোগ্য আদরটুকু করতে পারেনি ওকে। মনের মধ্যে আফশোসটা নেই, কিন্তু দোলনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা একটা রয়ে গেছে রজতের মনে মনে। সিরিজা থাকাকালীনই যে স্পর্ধা দেখিয়েছিল দোলন, ওর অনুপস্থিতিতে সেটা যে কোন পর্যায়ে যাবে, তা এখনও রজতের অজানা। মুখে যতই বলুক, রজতের কিছুটা হলেও একটা আশঙ্কা রয়েছে দোলনকে নিয়ে। দিবাকরকে যতই ও বোঝাক, দোলনকে ও ভয় পায় না। বলে দেখানো ব্যাপারটা যতটা সহজ, করে দেখানো কাজটা মোটেই সহজ নয়।
ঘরে ফিরেই দেখলো, দোলন একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে। টেবিলের তলায়, কোথায় জানি ওটা রাখা ছিল। দোলন ম্যগাজিনটা টেনে হাতড়ে বার করেছে। যৌন ম্যাগাজিনটা দোলন চোখ বড় বড় করে দেখছে, রজত একটু অস্বস্তি বোধ করলো। দোলনকে বললো, "ওটা কি বার করেছো? রেখে দাও। সব কিছু ওভাবে দেখতে নেই।"
দোলন যেন ভ্রুক্ষেপ করলো না রজতের কথাটায়। ওর হাত থেকে ম্যাগাজিনটা কেড়ে নিয়ে রজত বললো, "এসব কে দেখতে বলেছে তোমাকে? আমাকে জিজ্ঞেস না করে কোন কিছুতে হাত দেবে না বুঝেছো?"
ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে চলে এল শোবার ঘরে। দোলনও চলে এল রজতের পিছু পিছু।
পেছনে ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে রজত বললো, "কি ব্যাপার? কি চাই তোমার?"
দোলন বললো, "সিরিজা কি কালকে সকালেই চলে আসবে আবার?"
রজত একটু বিরক্ত। মুখে বললো, "হ্যাঁ কালই তো আসবে। তবে সকালে নয়। একটু বিকেলের দিকে। কেন তোমার কি অসুবিধা? বলো আমাকে।"
-- "না তেমন কিচ্ছু নয়। এমনি জিজ্ঞেস করলাম।"
আলনাতে রজতের গেঞ্জী পায়জামা, সব ঝুলছে। প্যান্টটা ছেড়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করতে হবে। দোলনকে মুখের ওপরেই বললো, "তুমি একটু ও ঘরে যাও দোলন, আমি জামাকাপড় ছাড়বো।"
বলা সত্ত্বেও অসভ্যের মতন দাঁড়িয়ে রইলো দোলন। রজত বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, "কি হলো? বললাম না ও ঘরে যেতে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।"
-- "আমি কি এখন চা করবো?"
রজত বললো, "না, দরকার নেই।"
দোলন মাথায় একটা হাত দিয়ে চুলকোতে লাগলো। রজত বললো, "কি হলো?"
-- "না মানে আমার খেতে ইচ্ছে করছে। তাই ভাবলাম, তোমার জন্যও বানিয়ে দিই কিনা....."
রজত বললো, "তোমার খেতে ইচ্ছে করলে, তুমি বানিয়ে খাও। আমার জন্য তোমাকে চা বানাতে হবে না।"
-- "চা বানিয়ে আমি একা খাবো? সিরিজা থাকলে তো তখন তুমিও খেতে।"
- "ওফ আবার সেই এক কথা। সিরিজার ভূত চেপেছে তোমার মাথায়। বলছি তো খাবো না। শুধু শুধু আমায় বিরক্ত করছো।"
একটু রাগ দেখিয়ে দোলন বললো, "ঠিক আছে, আমিও খাবো না তাহলে। সিরিজা না আসা অবধি এ বাড়ীতে আর চা হবে না।"
রাগ দেখিয়ে আবার পাশের ঘরে চলে এল দোলন। রজত দরজাটা আলতো করে ভেজিয়ে প্যান্টটা ছেড়ে এবার পাজামা গলাতে লাগলো আসতে আসতে। সবে মাত্র পাজামাটা গলিয়েছে। প্রায় দু তিন সেকেন্ডের ব্যবধানেই দোলন আবার ভেজানো দরজাটা ঠেলে ঢুকে পড়লো রজতের শোবার ঘরে।
প্রায় চমকে উঠেছে রজত। আর একটু হলেই ওর দৃঢ় আকারের লিঙ্গটা দোলন দেখতে পেত সচক্ষে এই ঘরের মধ্যেই। কুটকুটানির কি শেষ নেই? সিরিজা যাওয়ার পরেই খেলা শুরু করে দিয়েছে এখন থেকেই।
- "কি হলো? তোমাকে বললাম না ও ঘরে যেতে। আমাকে জিজ্ঞেস না করে যখন তখন এ ঘরে ঢুকছো কেন? ঢুকবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।"
রজতের বকানিকে কোনরকম গ্রাহ্য না করেই দোলন বললো, "সিরিজা তো রান্না করেই গেছে, রাতের রুটিটা খালি করতে হবে। আমি কি করে দেব? তুমি কটা রুটি খাও গো রাত্রে?"
রজত বললো, "আমি কিছু খাবো না। তুমি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ো।"
দোলনের যেন পছন্দ হয় নি রজতের উত্তরটা। মুখখানা একটু ব্যাজার মত করে ও বললো, "মানে? খাবে না কেন?"
- "খাবো না। তাতে তোমার কি? তোমার এত কি অসুবিধে হচ্ছে দোলন? আমি কি খাবো না খাবো, সেটাও কি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে না কি দোলন? সেই থেকে আমাকে বিরক্ত করছো। বলছি তো খাবো না। তুমি রাত্রে যেকটা রুটি খাও। নিজে বানিয়ে নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ো। আমাকে বিরক্ত করতে এসো না। আর হ্যাঁ এখন ও ঘরে গিয়ে বসো। আমাকে ডিস্টার্ব কোরো না। আমি কিছুক্ষণ এখন ঘুমোবো। কেউ এলে আমাকে জিজ্ঞেস না করে দরজা খুলবে না। রাতে তোমার খাওয়া হয়ে গেলে আমাকে একবার জাগিয়ে তুলবে। ও ঘরে তোমার শোবার ব্যবস্থাটা করে দেব। তারপর আমি এসে আবার এ ঘরে শোব।"
একটু বেশ করুন মত করে মুখটা, দোলন বললো, "তুমি কি এ ঘরে একা শোবে?"
রজত বললো, "হ্যাঁ। একাই তো শোব। কেন?"
-- "আমি ও ঘরে আলাদা শোব?"
- "তা ছাড়া কি? তোমাকে কি রাত্রে আমি পাশে নিয়ে শোব দোলন? কি বলতে চাও তুমি দোলন?"
রজতের কথার উপযুক্ত কোন জবাব না দিতে পেরে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দোলন। বুঝতেই পারছিল, সিরিজা নেই, কিন্তু রজত যেন মানসিক ভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দোলনের চক্করে পা ফাঁসাতে ও একেবারেই নারাজ। কিছুতেই ওর মায়াবী ছলনার জালে পড়তে রাজী নয়। সিরিজাকে যেন রজত কথা দিয়েছে, আমি দোলনকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখব, আজকের রাতটুকুর জন্য। কিছুতেই ওকে নিজের কাছে ভীড়তে দেব না। তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে দিবাকরের বাড়ী যেতে পারো এবার। তোমার আর কোন চিন্তা নেই।
ট্যাক্সি থেকে দিবাকর নামল সিরিজাকে নিয়ে। ভাড়াটা মিটিয়ে সিরিজাকে বললো, "এসো সিরিজা, এবার আমার কুটীরে পদার্পন করো।"
বাচ্চাটাকে সাথে নিয়ে এসেছে সিরিজা, দোলনের ওপর ভরসা না করেই। দিবাকরের পিছন পিছন ও ঢুকলো দিবাকরের একতলার বাড়ীতে। দরজার তালা খুলল দিবাকর। সিরিজাকে বললো, "এসো ঢোকো। কাল সকাল অবধি তুমি এখন আমার জিম্মায়। এখানে তোমার আর কোন চিন্তা নেই।"
বাচ্চাটাকে একজায়গায় শুইয়ে সিরিজা দিবাকরের ঘরের ভেতরটা ভালো করে দেখতে লাগলো। একা থাকে লোকটা। অথচ নিজের ঘর দোর কেমন সাজানো গোছানো অবস্থায় রেখেছে। কোথাও কোন জায়গা অগোছালো নয়। একেবারে পরিপাটি সুন্দর করে সাজানো।
সিরিজা বললো, "তুমি একা থাকো, তোমাকে দেখে মনেই হচ্ছে না। এত সাজানো গোছানো ঘরটা। বউ এসে দেখলে তো অবাক হয়ে যাবে।"
দিবাকর একটু হাসল। বললো, "আগে বউ তো আসুক। তারপর দেখা যাবে। আমার কপালে সেরকম আর কেউ জুটলো কোথায়?"
সিরিজা বললো, "তোমার এ বাড়ীতে কোন মেয়েমানুষ আসে নি আগে?"
দিবাকর বললো, "মেয়েমানুষ?"
- "রেশমী এসেছিলো কোনদিন?"
সিরিজার মুখের দিকে তাকিয়ে দিবাকর বললো, "একদিনই এসেছিল। তাও প্রথম দিকে। তারপর যখন রজতের সাথে মেলামেশা শুরু করলো, আর আসেনি আমার এখানে।"
একটু হেসে সিরিজা বললো, "আর এখন যদি আবার আসে?"
-- "সবই তোমার ওপর নির্ভর করছে সিরিজা। তুমি কিভাবে ওকে রাজী করাবে, তার ওপর। হলে সব তোমার কৃপায় হবে।"
সিরিজা বললো, "সেদিন আসতে খুব বেশি দেরী নেই। আর তো কিছুদিন বাদেই আমাদের দেখা হচ্ছে। এবার রেশমী তোমার বউ হবে। দিবাকরদার তখন আর কোন চিন্তা থাকবে না।"
মুখটা একটু নীচু করে নিল দিবাকর। যেন ক্ষনিকের একটা লজ্জা। শহরের একটা পোড় খাওয়া লোককে গ্রামের মেয়েটা লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে, প্রেম ভালোবাসার অনুভূতিগুলো সব এরকমই হয়। ও বললো, "আমি আশায় দিন গুনছি, দেখি কি হয়?"
বাচ্চাটাকে যেখানে শুয়েছিল, সিরিজা ওর পাশেই বসতে যাচ্ছিলো, দিবাকর ওর শোবার বিছানাটা দেখিয়ে বললো, "ওখানে নয়, তুমি এখানে বসো সিরিজা। এখানে। রাত্রে বাচ্চাটাকে নিয়ে এখানেই শোবে তুমি।"
সিরিজা বললো, "বারে, তুমি কোথায় শোবে তাহলে?"
দিবাকর বললো, "আমার শোবার ব্যাপারে তোমাকে চিন্তা হবে নাকি? দূর। আমি ঠিক কোথাও শুয়ে রাতটা কাটিয়ে দেব।"
একটু হেসে সিরিজা বললো, "এক সাথে শুলে কি হয়? তোমার লজ্জা করছে এখনও?"
দিবাকর মাথাটা চুলকে বললো, "তুমি এখন রজতের আমানত। তোমার পাশে আমি শুলে ওর সাথে বেইমানি করা হবে। ব্যাচারা দোলনকে নিয়ে এত টেনশনে পড়ে গেছে আমি যেচে আবার ওর টেনশন বাড়াই?"
বলেই একটু হেসে ফেললো দিবাকর।
- "বন্ধুকে তো খুব ভালোবাসো। তোমার বন্ধুও তোমাকে খুব বিশ্বাস করে। নইলে আমাকে কি তোমার সাথে পাঠাতো?"
-- "আমি জানি সিরিজা। রজত আমাকে কত বিশ্বাস করে। তার মর্যাদা দিতে জানি আমি। একবারই ভুল হয়ে গিয়েছিল, আর ভুল হবে না আমার।"
সিরিজা বললো, "তোমাকে নিয়ে তো ওর চিন্তা নেই। চিন্তাটা দোলনকে নিয়ে। কি যে কান্ডকারখানা শুরু করেছে। আজ রাতে না আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে না বসে।"
দিবাকর বললো, "তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো সিরিজা। রজত যেভাবে আমাকে আশ্বাস দিয়েছে, ও কিছুই করতে পারবে না। দোলনকে রজত ভীড়তেই দেবে না আজকে। আমি বলছি, দেখে নিও, আমার কথা মিলিয়ে নিও, তাই হবে।"
সিরিজা তবু যেন একটু চিন্তিত, মনের ভাবটা গোপন না করে বললো, "আমাকেও ভরসা দিয়েছে রজত এ ব্যাপারে। আমি তো ওকে নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি দোলনকে নিয়ে।"
দিবাকর সিরিজাকে সান্তনা দিয়ে বললো, "দূর কিচ্ছু হবে না। তুমি খামোকা উতলা হচ্ছো। কালকে আমার সাথে আবার ও বাড়ী যাবে, দেখবে সব ঠিক আছে আবার আগের মতন।"
সিরিজা বললো, "আমরা এখানে এসে গেছি, ওকে একবার ফোন করে দেখ না, কি করছে এখন?"
দিবাকর রজতকে লাইনটা মেলাতেই যাচ্ছিলো। সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "না না, থাক থাক। এখন নয়। ফোনটা বরং একটু পরের দিকে কোরো। রাত্রে শোবার সময়।"
দিবাকর বললো, "আমি না করলেও, ও ঠিক করবে। একটু দেখে নিই। তারপরে না হয় করবো।"
সিরিজার দিবাকরের বিছানায় এবার একটু গড়াতে ইচ্ছে করছে। ওকে দিবাকর বললো, "আমার অবস্থাটা জানো তো? অনেকটা রজতের মতই। রান্নাটা ঘরে সবসময় করতে পারি না। হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হয়। কাল ঐ খাবার খেয়েই যত বিপত্তি। এখন ভাবছি অল্প করে কিছু রাতের খাবার কিনে নিয়ে আসি সামনের হোটেলটা থেকে। তুমিও তো খাবে। আমি আসা না পর্যন্ত তুমি ততক্ষণ না হয় খাটে শুয়ে একটু বিশ্রাম করো। আমি এক্ষুনি আসছি। আর হ্যাঁ। আমার মোবাইল ফোনটাও রেখে গেলাম, তোমার কাছে। রজত ফোন করলে, ওর সাথে কথা বোলো।"
দরজাটা খুলে দিবাকর বেরোতেই যাচ্ছিলো,সিরিজা পেছন থেকে হঠাৎ ওকে ডাক দিল। - "শোন দিবাকরদা।"
দিবাকর দাঁড়াল, বললো, "বলো কি বলছো?"
সিরিজা বললো, "তুমি কিন্তু আমার পাশেই শোবে দিবাকরদা। তোমার অত ভয় নেই। বিশ্বাস করে একা একা তোমার বাড়ীতে চলে এলাম। আর এইটুকু বিশ্বাস করতে পারবো না তোমাকে?"
সিরিজার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে আর দাঁড়াতে পারলো না দিবাকর। বললো, "ঠিক আছে, ঠিক আছে, ও দেখা যাবে পরে। আমি খাবার টা তাড়াতাড়ি নিয়ে আসি বরং দোকান থেকে। তোমাকে অভূক্ত রেখে দিলে রজত আমার ওপর রাগ করবে আবার।"
ঘর থেকে বেরিয়েই খুব কাছেই খাবারের দোকান। দিবাকর পা চালিয়ে জলদি হেঁটে দোকানটার কাছে গিয়ে পৌঁছল। একটা বউ চাটু তে গরম গরম রুটি সেঁকছে বাইরের দিকটায় বসে। ভেতরে একটা জোয়ান লোক খদ্দেরদের তদারকি করছে। বাচ্চা দুটো ছেলে খাবার পরিবেশন করছে কাস্টমারদের ফরমাইশ অনুযায়ী। সামনে বসা বউটা দিবাকরকে বললো, "কি দিবাদা? কি লাগবে বলো? রুটি মাংস?"
স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে খাবারের হোটেলটা চালায়। এই মহল্লাতে অনেক পুরোন বাসিন্দা। দিবাকরকে অনেক দিন ধরেই চেনে। মাঝে মাঝে এখান থেকে খাবার নিয়ে যায় দিবাকর। বউটা দিবাকরকে বললো, "রুটির সাথে মাছ নেবে? না মাংস নেবে?"
দিবাকর বললো, "যেটা ভালো হয় দাও। মাছ ভালো থাকলে মাছই দাও। নয়তো মাংসের কারী। সাথে তরকারী কিছু আছে?"
বউটা বললো, "হ্যাঁ ভালো আলু পটলের তরকারী হয়েছে। নেবে?"
দিবাকর বললো, "দাও তাহলে। কত তোমার রুটি তরকারী আর মাংস?"
বউটা বললো, "রুটি কটা নেবে তো বললে না?"
- "আমার একার আর কটা লাগবে? দাও ঐ পাঁচটা মতন।"
বউটা দিবাকরের মুখের দিকে একটু অবাক চোখে তাকালো। বললো, "সেকি, তোমার সাথে যে এক মহিলাকে দেখলাম। বিয়ে করেছো বুঝি? দুজনের জন্য কেবল পাঁচটা?"
একটু হকচকিয়ে গেল দিবাকর। বললো, "তুমি আবার কখন দেখলে?"
-- "ঐ যে ট্যাক্সি থেকে যখন তোমরা নামলে। সাথে তো একটা বাচ্চাও দেখলাম। কবে তুমি বিয়ে করলে? আর কবে তোমার বাচ্চা হল গো? আগে তো দেখিনি কোনদিন।"
বউটার নাম অনীমা। দিবাকর বললো, "অনীমা তুমি পারো বটে। মেয়েছেলে সাথে থাকলেই কি আর বউ হয়ে যায় নাকি? আরে ও তো আমার বন্ধুর বউ। বন্ধুও অফিস ডিউটি করে আসবে আজকে। একটু বেশি রাত হবে। বউ তাই একটু আগে চলে এসেছে।"
বউটা শুনে বললো, "ও তাই? আমি বুঝতে পারিনি। ভাবলাম, তোমার তাহলে এতদিনে একটা হিল্লে হল। যা বাবা। বন্ধুর বউ যখন তাহলে আর শুনে কি হবে?"
দিবাকর হাসছিল অনীমার কথা শুনে। বললো, "না তোমার ঠেলায় আমাকে এবার বিয়েটা করতেই হবে দেখছি। নইলে রেহাই নেই।"
ভেতরে তদারকি করা জোয়ান লোকটা তখন অনীমা আর দিবাকরের কথা শুনে বেরিয়ে এসেছে। দিবাকরকে বললো, "আমার বউ তোমার কথা সবসময়ই বলে। তুমি এখান থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাও। ও প্রায়ই বলে, দিবাকরদার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়। একটা যদি বিয়ে করে ফেলত? কষ্ট করে দোকান থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া। বউ না জুটলে ব্যাচারীর বড় কষ্ট। নিজের খদ্দেরকে এভাবে হাতছাড়া করতে কে চায়? আমরা দুজনেই তোমার কথা খুব ভাবি। দোকানদারি চালাই কিন্তু অপরের দূঃখ কষ্ট আমরাও বুঝি।"
অনীমার হাত থেকে মাংস রুটি আর তরকারীর প্যাকেটটা নিয়ে দিবাকর বললো, "কত হয়েছে বলো তো? আরে আমার যেন বিয়ে করলেই সব সমস্যা মিটে যাবে। এখানে তোমার দোকানের এত ভালো রান্না। অত সহজে আমি ছেড়ে দেব? বিয়ে করেও রোজ খাবার নিয়ে যাবো এখান থেকে। অত সহজে এখানে আসা আমি ছাড়ছি না।"
খাবারের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দিবাকর এবার রওনা দিল ঘরে ফেরার দিকে। বাড়ী ফিরে সিরিজাকে এবার জিজ্ঞেস করতে হবে, রজত ফোনটা করেছিল কিনা?
দিবাকর বেরিয়ে যাবার পর সিরিজা কিছুক্ষণ মোবাইলটা হাতে ধরে বসে রইলো যদি রজত এখুনি ওকে ফোন করে। মিনিট দশেক পরেও ফোন এল না। সিরিজা ভাবল, হয়তো পরে করবে রজত। দোলনকে নিয়ে স্বাভবিক ভাবেই খুব দুশ্চিন্তায় আছে। কি করে মেয়েটাকে সামাল দেবে, সেটাই হয়তো ভাবছে। সিরিজা ভাবল, ঠিক মনে করে ওকে ফোন করবে রজত। ওর ভুল হবে না।
ঘরে বসে ওর মনে পড়ছিল, দোলনের সেই দূঃসাহসিক, বেহায়াপনা কথাগুলো। কি অবলীলায় নির্লজ্জ্বের মতন সিরিজাকে বলে যাচ্ছিলো রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। একবারও ভাবছিল না, যা বলছে, সেটা কখনই সম্ভব নয়। এক পুরুষ, দুজন মেয়েমানুষকে একসাথে প্রেম ভালোবাসা আর শরীরি খেলা খেলবে, সেটা কখনই সম্ভব নয়।
সন্ধে হওয়ার একটু আগেই দিবাকর চলে গেছে সিরিজাকে নিয়ে। দুজনকে এগিয়ে দিতে রজত চলে এসেছিল রাস্তার মোড়ে। সিরিজাকে ছাড়ার আগে রজত আর উপভোগ্য আদরটুকু করতে পারেনি ওকে। মনের মধ্যে আফশোসটা নেই, কিন্তু দোলনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা একটা রয়ে গেছে রজতের মনে মনে। সিরিজা থাকাকালীনই যে স্পর্ধা দেখিয়েছিল দোলন, ওর অনুপস্থিতিতে সেটা যে কোন পর্যায়ে যাবে, তা এখনও রজতের অজানা। মুখে যতই বলুক, রজতের কিছুটা হলেও একটা আশঙ্কা রয়েছে দোলনকে নিয়ে। দিবাকরকে যতই ও বোঝাক, দোলনকে ও ভয় পায় না। বলে দেখানো ব্যাপারটা যতটা সহজ, করে দেখানো কাজটা মোটেই সহজ নয়।
ঘরে ফিরেই দেখলো, দোলন একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে। টেবিলের তলায়, কোথায় জানি ওটা রাখা ছিল। দোলন ম্যগাজিনটা টেনে হাতড়ে বার করেছে। যৌন ম্যাগাজিনটা দোলন চোখ বড় বড় করে দেখছে, রজত একটু অস্বস্তি বোধ করলো। দোলনকে বললো, "ওটা কি বার করেছো? রেখে দাও। সব কিছু ওভাবে দেখতে নেই।"
দোলন যেন ভ্রুক্ষেপ করলো না রজতের কথাটায়। ওর হাত থেকে ম্যাগাজিনটা কেড়ে নিয়ে রজত বললো, "এসব কে দেখতে বলেছে তোমাকে? আমাকে জিজ্ঞেস না করে কোন কিছুতে হাত দেবে না বুঝেছো?"
ম্যাগাজিনটা হাতে নিয়ে চলে এল শোবার ঘরে। দোলনও চলে এল রজতের পিছু পিছু।
পেছনে ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে রজত বললো, "কি ব্যাপার? কি চাই তোমার?"
দোলন বললো, "সিরিজা কি কালকে সকালেই চলে আসবে আবার?"
রজত একটু বিরক্ত। মুখে বললো, "হ্যাঁ কালই তো আসবে। তবে সকালে নয়। একটু বিকেলের দিকে। কেন তোমার কি অসুবিধা? বলো আমাকে।"
-- "না তেমন কিচ্ছু নয়। এমনি জিজ্ঞেস করলাম।"
আলনাতে রজতের গেঞ্জী পায়জামা, সব ঝুলছে। প্যান্টটা ছেড়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করতে হবে। দোলনকে মুখের ওপরেই বললো, "তুমি একটু ও ঘরে যাও দোলন, আমি জামাকাপড় ছাড়বো।"
বলা সত্ত্বেও অসভ্যের মতন দাঁড়িয়ে রইলো দোলন। রজত বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, "কি হলো? বললাম না ও ঘরে যেতে। আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো।"
-- "আমি কি এখন চা করবো?"
রজত বললো, "না, দরকার নেই।"
দোলন মাথায় একটা হাত দিয়ে চুলকোতে লাগলো। রজত বললো, "কি হলো?"
-- "না মানে আমার খেতে ইচ্ছে করছে। তাই ভাবলাম, তোমার জন্যও বানিয়ে দিই কিনা....."
রজত বললো, "তোমার খেতে ইচ্ছে করলে, তুমি বানিয়ে খাও। আমার জন্য তোমাকে চা বানাতে হবে না।"
-- "চা বানিয়ে আমি একা খাবো? সিরিজা থাকলে তো তখন তুমিও খেতে।"
- "ওফ আবার সেই এক কথা। সিরিজার ভূত চেপেছে তোমার মাথায়। বলছি তো খাবো না। শুধু শুধু আমায় বিরক্ত করছো।"
একটু রাগ দেখিয়ে দোলন বললো, "ঠিক আছে, আমিও খাবো না তাহলে। সিরিজা না আসা অবধি এ বাড়ীতে আর চা হবে না।"
রাগ দেখিয়ে আবার পাশের ঘরে চলে এল দোলন। রজত দরজাটা আলতো করে ভেজিয়ে প্যান্টটা ছেড়ে এবার পাজামা গলাতে লাগলো আসতে আসতে। সবে মাত্র পাজামাটা গলিয়েছে। প্রায় দু তিন সেকেন্ডের ব্যবধানেই দোলন আবার ভেজানো দরজাটা ঠেলে ঢুকে পড়লো রজতের শোবার ঘরে।
প্রায় চমকে উঠেছে রজত। আর একটু হলেই ওর দৃঢ় আকারের লিঙ্গটা দোলন দেখতে পেত সচক্ষে এই ঘরের মধ্যেই। কুটকুটানির কি শেষ নেই? সিরিজা যাওয়ার পরেই খেলা শুরু করে দিয়েছে এখন থেকেই।
- "কি হলো? তোমাকে বললাম না ও ঘরে যেতে। আমাকে জিজ্ঞেস না করে যখন তখন এ ঘরে ঢুকছো কেন? ঢুকবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।"
রজতের বকানিকে কোনরকম গ্রাহ্য না করেই দোলন বললো, "সিরিজা তো রান্না করেই গেছে, রাতের রুটিটা খালি করতে হবে। আমি কি করে দেব? তুমি কটা রুটি খাও গো রাত্রে?"
রজত বললো, "আমি কিছু খাবো না। তুমি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ো।"
দোলনের যেন পছন্দ হয় নি রজতের উত্তরটা। মুখখানা একটু ব্যাজার মত করে ও বললো, "মানে? খাবে না কেন?"
- "খাবো না। তাতে তোমার কি? তোমার এত কি অসুবিধে হচ্ছে দোলন? আমি কি খাবো না খাবো, সেটাও কি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে না কি দোলন? সেই থেকে আমাকে বিরক্ত করছো। বলছি তো খাবো না। তুমি রাত্রে যেকটা রুটি খাও। নিজে বানিয়ে নিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ো। আমাকে বিরক্ত করতে এসো না। আর হ্যাঁ এখন ও ঘরে গিয়ে বসো। আমাকে ডিস্টার্ব কোরো না। আমি কিছুক্ষণ এখন ঘুমোবো। কেউ এলে আমাকে জিজ্ঞেস না করে দরজা খুলবে না। রাতে তোমার খাওয়া হয়ে গেলে আমাকে একবার জাগিয়ে তুলবে। ও ঘরে তোমার শোবার ব্যবস্থাটা করে দেব। তারপর আমি এসে আবার এ ঘরে শোব।"
একটু বেশ করুন মত করে মুখটা, দোলন বললো, "তুমি কি এ ঘরে একা শোবে?"
রজত বললো, "হ্যাঁ। একাই তো শোব। কেন?"
-- "আমি ও ঘরে আলাদা শোব?"
- "তা ছাড়া কি? তোমাকে কি রাত্রে আমি পাশে নিয়ে শোব দোলন? কি বলতে চাও তুমি দোলন?"
রজতের কথার উপযুক্ত কোন জবাব না দিতে পেরে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দোলন। বুঝতেই পারছিল, সিরিজা নেই, কিন্তু রজত যেন মানসিক ভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দোলনের চক্করে পা ফাঁসাতে ও একেবারেই নারাজ। কিছুতেই ওর মায়াবী ছলনার জালে পড়তে রাজী নয়। সিরিজাকে যেন রজত কথা দিয়েছে, আমি দোলনকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখব, আজকের রাতটুকুর জন্য। কিছুতেই ওকে নিজের কাছে ভীড়তে দেব না। তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে দিবাকরের বাড়ী যেতে পারো এবার। তোমার আর কোন চিন্তা নেই।
ট্যাক্সি থেকে দিবাকর নামল সিরিজাকে নিয়ে। ভাড়াটা মিটিয়ে সিরিজাকে বললো, "এসো সিরিজা, এবার আমার কুটীরে পদার্পন করো।"
বাচ্চাটাকে সাথে নিয়ে এসেছে সিরিজা, দোলনের ওপর ভরসা না করেই। দিবাকরের পিছন পিছন ও ঢুকলো দিবাকরের একতলার বাড়ীতে। দরজার তালা খুলল দিবাকর। সিরিজাকে বললো, "এসো ঢোকো। কাল সকাল অবধি তুমি এখন আমার জিম্মায়। এখানে তোমার আর কোন চিন্তা নেই।"
বাচ্চাটাকে একজায়গায় শুইয়ে সিরিজা দিবাকরের ঘরের ভেতরটা ভালো করে দেখতে লাগলো। একা থাকে লোকটা। অথচ নিজের ঘর দোর কেমন সাজানো গোছানো অবস্থায় রেখেছে। কোথাও কোন জায়গা অগোছালো নয়। একেবারে পরিপাটি সুন্দর করে সাজানো।
সিরিজা বললো, "তুমি একা থাকো, তোমাকে দেখে মনেই হচ্ছে না। এত সাজানো গোছানো ঘরটা। বউ এসে দেখলে তো অবাক হয়ে যাবে।"
দিবাকর একটু হাসল। বললো, "আগে বউ তো আসুক। তারপর দেখা যাবে। আমার কপালে সেরকম আর কেউ জুটলো কোথায়?"
সিরিজা বললো, "তোমার এ বাড়ীতে কোন মেয়েমানুষ আসে নি আগে?"
দিবাকর বললো, "মেয়েমানুষ?"
- "রেশমী এসেছিলো কোনদিন?"
সিরিজার মুখের দিকে তাকিয়ে দিবাকর বললো, "একদিনই এসেছিল। তাও প্রথম দিকে। তারপর যখন রজতের সাথে মেলামেশা শুরু করলো, আর আসেনি আমার এখানে।"
একটু হেসে সিরিজা বললো, "আর এখন যদি আবার আসে?"
-- "সবই তোমার ওপর নির্ভর করছে সিরিজা। তুমি কিভাবে ওকে রাজী করাবে, তার ওপর। হলে সব তোমার কৃপায় হবে।"
সিরিজা বললো, "সেদিন আসতে খুব বেশি দেরী নেই। আর তো কিছুদিন বাদেই আমাদের দেখা হচ্ছে। এবার রেশমী তোমার বউ হবে। দিবাকরদার তখন আর কোন চিন্তা থাকবে না।"
মুখটা একটু নীচু করে নিল দিবাকর। যেন ক্ষনিকের একটা লজ্জা। শহরের একটা পোড় খাওয়া লোককে গ্রামের মেয়েটা লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে, প্রেম ভালোবাসার অনুভূতিগুলো সব এরকমই হয়। ও বললো, "আমি আশায় দিন গুনছি, দেখি কি হয়?"
বাচ্চাটাকে যেখানে শুয়েছিল, সিরিজা ওর পাশেই বসতে যাচ্ছিলো, দিবাকর ওর শোবার বিছানাটা দেখিয়ে বললো, "ওখানে নয়, তুমি এখানে বসো সিরিজা। এখানে। রাত্রে বাচ্চাটাকে নিয়ে এখানেই শোবে তুমি।"
সিরিজা বললো, "বারে, তুমি কোথায় শোবে তাহলে?"
দিবাকর বললো, "আমার শোবার ব্যাপারে তোমাকে চিন্তা হবে নাকি? দূর। আমি ঠিক কোথাও শুয়ে রাতটা কাটিয়ে দেব।"
একটু হেসে সিরিজা বললো, "এক সাথে শুলে কি হয়? তোমার লজ্জা করছে এখনও?"
দিবাকর মাথাটা চুলকে বললো, "তুমি এখন রজতের আমানত। তোমার পাশে আমি শুলে ওর সাথে বেইমানি করা হবে। ব্যাচারা দোলনকে নিয়ে এত টেনশনে পড়ে গেছে আমি যেচে আবার ওর টেনশন বাড়াই?"
বলেই একটু হেসে ফেললো দিবাকর।
- "বন্ধুকে তো খুব ভালোবাসো। তোমার বন্ধুও তোমাকে খুব বিশ্বাস করে। নইলে আমাকে কি তোমার সাথে পাঠাতো?"
-- "আমি জানি সিরিজা। রজত আমাকে কত বিশ্বাস করে। তার মর্যাদা দিতে জানি আমি। একবারই ভুল হয়ে গিয়েছিল, আর ভুল হবে না আমার।"
সিরিজা বললো, "তোমাকে নিয়ে তো ওর চিন্তা নেই। চিন্তাটা দোলনকে নিয়ে। কি যে কান্ডকারখানা শুরু করেছে। আজ রাতে না আবার উল্টোপাল্টা কিছু করে না বসে।"
দিবাকর বললো, "তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো সিরিজা। রজত যেভাবে আমাকে আশ্বাস দিয়েছে, ও কিছুই করতে পারবে না। দোলনকে রজত ভীড়তেই দেবে না আজকে। আমি বলছি, দেখে নিও, আমার কথা মিলিয়ে নিও, তাই হবে।"
সিরিজা তবু যেন একটু চিন্তিত, মনের ভাবটা গোপন না করে বললো, "আমাকেও ভরসা দিয়েছে রজত এ ব্যাপারে। আমি তো ওকে নিয়ে ভাবছি না। ভাবছি দোলনকে নিয়ে।"
দিবাকর সিরিজাকে সান্তনা দিয়ে বললো, "দূর কিচ্ছু হবে না। তুমি খামোকা উতলা হচ্ছো। কালকে আমার সাথে আবার ও বাড়ী যাবে, দেখবে সব ঠিক আছে আবার আগের মতন।"
সিরিজা বললো, "আমরা এখানে এসে গেছি, ওকে একবার ফোন করে দেখ না, কি করছে এখন?"
দিবাকর রজতকে লাইনটা মেলাতেই যাচ্ছিলো। সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "না না, থাক থাক। এখন নয়। ফোনটা বরং একটু পরের দিকে কোরো। রাত্রে শোবার সময়।"
দিবাকর বললো, "আমি না করলেও, ও ঠিক করবে। একটু দেখে নিই। তারপরে না হয় করবো।"
সিরিজার দিবাকরের বিছানায় এবার একটু গড়াতে ইচ্ছে করছে। ওকে দিবাকর বললো, "আমার অবস্থাটা জানো তো? অনেকটা রজতের মতই। রান্নাটা ঘরে সবসময় করতে পারি না। হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হয়। কাল ঐ খাবার খেয়েই যত বিপত্তি। এখন ভাবছি অল্প করে কিছু রাতের খাবার কিনে নিয়ে আসি সামনের হোটেলটা থেকে। তুমিও তো খাবে। আমি আসা না পর্যন্ত তুমি ততক্ষণ না হয় খাটে শুয়ে একটু বিশ্রাম করো। আমি এক্ষুনি আসছি। আর হ্যাঁ। আমার মোবাইল ফোনটাও রেখে গেলাম, তোমার কাছে। রজত ফোন করলে, ওর সাথে কথা বোলো।"
দরজাটা খুলে দিবাকর বেরোতেই যাচ্ছিলো,সিরিজা পেছন থেকে হঠাৎ ওকে ডাক দিল। - "শোন দিবাকরদা।"
দিবাকর দাঁড়াল, বললো, "বলো কি বলছো?"
সিরিজা বললো, "তুমি কিন্তু আমার পাশেই শোবে দিবাকরদা। তোমার অত ভয় নেই। বিশ্বাস করে একা একা তোমার বাড়ীতে চলে এলাম। আর এইটুকু বিশ্বাস করতে পারবো না তোমাকে?"
সিরিজার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে আর দাঁড়াতে পারলো না দিবাকর। বললো, "ঠিক আছে, ঠিক আছে, ও দেখা যাবে পরে। আমি খাবার টা তাড়াতাড়ি নিয়ে আসি বরং দোকান থেকে। তোমাকে অভূক্ত রেখে দিলে রজত আমার ওপর রাগ করবে আবার।"
ঘর থেকে বেরিয়েই খুব কাছেই খাবারের দোকান। দিবাকর পা চালিয়ে জলদি হেঁটে দোকানটার কাছে গিয়ে পৌঁছল। একটা বউ চাটু তে গরম গরম রুটি সেঁকছে বাইরের দিকটায় বসে। ভেতরে একটা জোয়ান লোক খদ্দেরদের তদারকি করছে। বাচ্চা দুটো ছেলে খাবার পরিবেশন করছে কাস্টমারদের ফরমাইশ অনুযায়ী। সামনে বসা বউটা দিবাকরকে বললো, "কি দিবাদা? কি লাগবে বলো? রুটি মাংস?"
স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে খাবারের হোটেলটা চালায়। এই মহল্লাতে অনেক পুরোন বাসিন্দা। দিবাকরকে অনেক দিন ধরেই চেনে। মাঝে মাঝে এখান থেকে খাবার নিয়ে যায় দিবাকর। বউটা দিবাকরকে বললো, "রুটির সাথে মাছ নেবে? না মাংস নেবে?"
দিবাকর বললো, "যেটা ভালো হয় দাও। মাছ ভালো থাকলে মাছই দাও। নয়তো মাংসের কারী। সাথে তরকারী কিছু আছে?"
বউটা বললো, "হ্যাঁ ভালো আলু পটলের তরকারী হয়েছে। নেবে?"
দিবাকর বললো, "দাও তাহলে। কত তোমার রুটি তরকারী আর মাংস?"
বউটা বললো, "রুটি কটা নেবে তো বললে না?"
- "আমার একার আর কটা লাগবে? দাও ঐ পাঁচটা মতন।"
বউটা দিবাকরের মুখের দিকে একটু অবাক চোখে তাকালো। বললো, "সেকি, তোমার সাথে যে এক মহিলাকে দেখলাম। বিয়ে করেছো বুঝি? দুজনের জন্য কেবল পাঁচটা?"
একটু হকচকিয়ে গেল দিবাকর। বললো, "তুমি আবার কখন দেখলে?"
-- "ঐ যে ট্যাক্সি থেকে যখন তোমরা নামলে। সাথে তো একটা বাচ্চাও দেখলাম। কবে তুমি বিয়ে করলে? আর কবে তোমার বাচ্চা হল গো? আগে তো দেখিনি কোনদিন।"
বউটার নাম অনীমা। দিবাকর বললো, "অনীমা তুমি পারো বটে। মেয়েছেলে সাথে থাকলেই কি আর বউ হয়ে যায় নাকি? আরে ও তো আমার বন্ধুর বউ। বন্ধুও অফিস ডিউটি করে আসবে আজকে। একটু বেশি রাত হবে। বউ তাই একটু আগে চলে এসেছে।"
বউটা শুনে বললো, "ও তাই? আমি বুঝতে পারিনি। ভাবলাম, তোমার তাহলে এতদিনে একটা হিল্লে হল। যা বাবা। বন্ধুর বউ যখন তাহলে আর শুনে কি হবে?"
দিবাকর হাসছিল অনীমার কথা শুনে। বললো, "না তোমার ঠেলায় আমাকে এবার বিয়েটা করতেই হবে দেখছি। নইলে রেহাই নেই।"
ভেতরে তদারকি করা জোয়ান লোকটা তখন অনীমা আর দিবাকরের কথা শুনে বেরিয়ে এসেছে। দিবাকরকে বললো, "আমার বউ তোমার কথা সবসময়ই বলে। তুমি এখান থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাও। ও প্রায়ই বলে, দিবাকরদার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়। একটা যদি বিয়ে করে ফেলত? কষ্ট করে দোকান থেকে খাবার নিয়ে যাওয়া। বউ না জুটলে ব্যাচারীর বড় কষ্ট। নিজের খদ্দেরকে এভাবে হাতছাড়া করতে কে চায়? আমরা দুজনেই তোমার কথা খুব ভাবি। দোকানদারি চালাই কিন্তু অপরের দূঃখ কষ্ট আমরাও বুঝি।"
অনীমার হাত থেকে মাংস রুটি আর তরকারীর প্যাকেটটা নিয়ে দিবাকর বললো, "কত হয়েছে বলো তো? আরে আমার যেন বিয়ে করলেই সব সমস্যা মিটে যাবে। এখানে তোমার দোকানের এত ভালো রান্না। অত সহজে আমি ছেড়ে দেব? বিয়ে করেও রোজ খাবার নিয়ে যাবো এখান থেকে। অত সহজে এখানে আসা আমি ছাড়ছি না।"
খাবারের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে দিবাকর এবার রওনা দিল ঘরে ফেরার দিকে। বাড়ী ফিরে সিরিজাকে এবার জিজ্ঞেস করতে হবে, রজত ফোনটা করেছিল কিনা?
দিবাকর বেরিয়ে যাবার পর সিরিজা কিছুক্ষণ মোবাইলটা হাতে ধরে বসে রইলো যদি রজত এখুনি ওকে ফোন করে। মিনিট দশেক পরেও ফোন এল না। সিরিজা ভাবল, হয়তো পরে করবে রজত। দোলনকে নিয়ে স্বাভবিক ভাবেই খুব দুশ্চিন্তায় আছে। কি করে মেয়েটাকে সামাল দেবে, সেটাই হয়তো ভাবছে। সিরিজা ভাবল, ঠিক মনে করে ওকে ফোন করবে রজত। ওর ভুল হবে না।
ঘরে বসে ওর মনে পড়ছিল, দোলনের সেই দূঃসাহসিক, বেহায়াপনা কথাগুলো। কি অবলীলায় নির্লজ্জ্বের মতন সিরিজাকে বলে যাচ্ছিলো রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। একবারও ভাবছিল না, যা বলছে, সেটা কখনই সম্ভব নয়। এক পুরুষ, দুজন মেয়েমানুষকে একসাথে প্রেম ভালোবাসা আর শরীরি খেলা খেলবে, সেটা কখনই সম্ভব নয়।