Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ঝর্ণা The Untold story ! সমাপ্ত
#71
মনের দুঃখে নিজেকে মদে ডুবিয়ে দিলাম ! তার মাঝেই ঘটলো অঘটন ! সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে চৈতালির মা পঙ্গু হয়ে গেলো ! শরীর থেকে সেক্স জিনিসটাই শেষ হয়ে গেলো ! আমি গভীর দুঃখে ভেঙে পড়লাম ! আরও বেশি করে মদে ডুবিয়ে দিলাম ! উশৃঙ্খল জীবন ছিল আমার ! একদিন চৈতালির মা আমাকে একটা প্রস্তাব রাখলো আমি যেন সরলার সাথে সেক্স করি তাহলে আমার নিঃসঙ্গতায় দূর হবে আর সরলারও ! নেশার ঘোরে আমি চৈতালির মাকে আমাদের সব কথা খুলে বললাম ! সব শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লো চৈতালির মা ! আমাকে ওর চোখের সামনে থেকে সরে যেতে বললো ! আমি কোনো কথা না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম ! আমার কোনো বন্ধু ছিল না যে যার সাথে আমি সব শেয়ার করবো ! মনের দুঃখ মনেতেই চেপে রেখে জীবন কাটাতে লাগলাম ! একদিন চৈতালির মায়ের কাছ থেকে ডাক এলো ! উপেখ্যা করতে পারলাম না ! ফিরে গেলাম বাড়ি ! চৈতালির মায়ের চোখ মুখ শুকনো ! আমাকে দেখেই ঝরঝরিয়ে ওকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে আমি স্বান্তনা দিতে থাকলাম !
অনেক্ষন পরে চৈতালির মা শান্ত হয়ে আমাকে বললো আমি যেন সরলাকে গ্রহণ করি ! আমি যেন সরলাকে বিয়ে করি ! সেটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা ! কারণ শুধু মাত্র শারীরিক সুখের জন্য আমি আমার বৌ কে অবহেলা করতে পারিনা ! আমার বিবেকে লাগলো ! আমি আমার বৌয়ের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করলাম ! শেষে রফা হলো যে আমি সরলার সাথে সেক্স করতে পারি ! এতে দুজনেরই ভালো ! কারণ সরলার যৌবন ওরও শারীরিক চাহিদা আছে ! আমি রাজি হলাম! বললাম "কিন্তু সরলা কি রাজি হবে ?"
- সেটা আমায় দেখবো ! আজ রাতেই আমাদের ঘরে তোমাদের মিলনের ব্যবস্থা করবো !
জানিনা কি ভাবে সরলাকে রাজি করিয়ে ছিল ! রাত্রিবেলায় যখন আমার বেডরুমে ঢুকলাম দেখি আমার বিছানায় সরলা ! একপাশে শুয়ে অঞ্জলি আর অন্য পাশে চৈতালি ! আমাকে দেখে আমার বৌ স্মিত হেসে বললো "এই নাও তোমার সরলাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম ! শুধু খেয়াল রেখো আমরা তিনজন ছাড়া এই ব্যাপারটা কেউ যেন না জানে ! "
বৌয়ের সামনেই আমি সরলাকে জড়িয়ে ধরলাম ! ধীরে ধীরে আমরা সঙ্গমে মেতে উঠলাম ! দেখতে দেখতে অংকে গুলো বছর কেটে গেলো ! আমাদের রাসলীলা এইভাবেই চলছিল ! কিন্তু সরলা নিজেকে বদলায়নি ! যে দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে সেটার থেকে একচুলও নড়েনি ! অঞ্জলি ১৫ বছরে প্রবেশ করলো ! তখনি আমার কাকাকে সব কিছু খুইয়ে বাড়ি ফিরতে হলো ! যখন তাঁকে আনা হলো তিনি বদ্ধ উন্মাদ ! ওনাকে ওপরের ঘরে বন্ধ করে রাখতে হতো ! ওনাকে দেখা শোনার জন্য একটা চাকর রাখা হয়েছিল ! একদিন সে কামাই করলো !তাই তাকে খাবার দেবার জন্য সরলা অঞ্জলীকে পাঠায় ! আর সেখানেই। ...
বলে লাহিড়ী কাকু থিম গেলেন !.........

কাকা তো বদ্ধ উন্মাদ ছিলেন ! সেই অবস্থায় তিনি অঞ্জলীকে ধরে তার জামা কাপড় ছিঁড়ে তাকে রেপ করেন ! অঞ্জলীর চিৎকার যখন সবাই শুনতে পায় তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে ! কোনোরকমে অঞ্জলীকে উদ্ধার করা হয় ! রক্তে ক্ষত বিক্ষত অবস্থায় অঞ্জলীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ! পুলিশ আসে ! কিন্তু যেহেতু আমাদের টাকার প্রতিপত্তি আছে তাই পুরো কেসটা ধামাচাপা পরে যায় ! জ্ঞান ফেরার পর অঞ্জলি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চিৎকার করতে থাকে ! তাকে কেউ শান্ত করতে পারেনা ! ইনজেকশন দিয়ে অঞ্জলীকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় !  বাড়ি  নিয়ে আসার পর ধীরে ধীরে অঞ্জলি সুস্থ হতে থাকে ! কাকাকে আমরা রাঁচির পাগলা গারদে রেখে আসি ! প্রায় এক বছর কাকা রাঁচির পাগলা গারদে থাকেন  ! একটু সুস্থ হলে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি !
অঞ্জলীর মনে আমাদের প্রতি বিরাট বিতৃষ্ণা ! কারণ ওকে রেপ করা হয়েছে আর আমরা সেটা জেনেও পুলিশ কেস হতে দিই নি ! উল্টে ধামা চাপা দিয়ে দিয়েছি ! তখন অঞ্জলীকে আমরা সবাই বোঝাই যে যদি পুলিশ কেস হতো তাহলে কাকার কিছুই হতো না ! বড়োজোর তাকে এরেস্ট করা হতো আর তাকে পাগলা গারোদেই পাঠানো হতো ! কিন্তু সমাজের বুকে আমাদের যে বদনাম হতো সেটা কি সে ভেবে দেখেছে ? সবাই তোমার দিকে সব সময় আঙ্গুল তুলে দেখাতো "দ্যাখ এই সেই মেয়ে জেক রেপ করা হয়েছে ! " কোনো সহানুভূতি তুমি সমাজ থেকে পেতে না ! উল্টে আদমখোরের দল সব সময় তোমায় ভোগ করার জন্য লালায়িত থাকতো ! কারণ যে একবার রেপ হয়ে যায় মানুষ ভাবে তাকে সহজেই পাওয়া যায় ! তোমার ভবিষ্যৎ , তোমার জীবন বরবাদ হয়ে যেত ! আর সেটা আমরা সহ করতে পারতাম না ! আরও পারতাম না কারণ নিজের মেয়ের জীবন নিয়ে আমরা ছেলেখেলা করতে পারিনা !
-  তার মানে তো একটাই বোঝায় ! যে আমি তোমাদের আশ্রিতার মেয়ে বলে আমি ন্যায় পাবনা সেটা কেন বলতে চাইছো না ? এটা যদি তোমার মেয়ে চৈতালি হতো পারতে তুমি এইভাবে সব কিছু ধামাচাপা দিতে ?
- চুপ করো তুমি ? যা না মুখে আসছে সেটাই বলে যাচ্ছ ? জানো তুমি কাকে কি বলছো ? সরলা রেগে ফুঁসে উঠলো ! জানি তোমার উপর অত্যাচার হয়েছে ! আর আমার মেয়ে বলে কত কষ্ট আমার বুকে বাজছে সেটা তুমি বুঝতে পারবে না ! কিন্তু তুমি যাকে এই সমস্ত উল্টোপাল্টা  কথাগুলো বলছো যদি সে না থাকতো তাহলে আমরা কোথায় যেতাম সেটা জানো?
- সেই জন্যই তো বলছি আশ্রিত বলেই তো সব কিছু আমাদেরই সহ্য করতে হবে  তাই না মা ?
- নিজের বাবার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় সেটা তুমি জানোনা ?
- আমার বাবা ? সেতো শুনেছে কবে মরে গেছেন ! আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন লালন পালন করেছেন বলেই কি ওনাকে নিজের বাবা বলে মেনে নিতে হবে ?
- অঞ্জলি ইইইইইইই  একটা বিকট চিৎকার করে সরলা অঞ্জলীর গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন !
জ্বলভরা চোখে আগুন দৃষ্টি দিয়ে আমাদের উপর বুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো !
আমরা সরলাকে বকতে লাগলাম " কেন তুমি ওকে মারলে ? জানো তুমি ও একটা বিরাট আঘাত পেয়েছে তারপরেও কি করে তুমি ওকে মারতে পারলে সরলা ?"
- আঘাত তো আমিও পেয়েছিলাম তোমার কাছ থেকে ! আমি কি আমার বাবাকে বা ভাই কে প্রসোহন করেছিলাম ? জানতাম যে এটা আমার ভাগ্য ! তাই মানিয়ে নিয়েছিলাম ! তারপর তোমরা যখন আমাকে আশ্রয় দিলে ! সম্মান দিলে তখন ও আমার সেই আঘাতকে আমি আশীর্বাদ বলে জেনে নিয়েছিলাম ! ওর ও বোঝা উচিত !
- কি বোঝা উচিত ? তোমার সাথে যেটা হয়েছিল সেটা ছিল আমাদের লালসা ! কিন্তু ওর সাথে যেটা হয়েছে সেটা তো শুধুমাত্র একটা দুর্ঘটনা ! সেই দুর্ঘটনার কতটা প্রভাব ওর মনে পড়েছে সেটা কেন বুঝতে পারছোনা ? যাও ওকে বোঝাও ! স্বান্তনা দাও ! আমরা আছি !
সন্ধ্যে বেলায় অনেক অনুরোধ করার পরও যখন অঞ্জলি দরজা খুললো না তখন আমার স্ত্রী মানে চৈতালির মা  ওর বন্ধ দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে  অনেক অনুনয় বিনয় করার পর অঞ্জলি ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে এলো ! সারাদিন মেয়েটা খুব কেঁদেছিলো ! পুরো মুখ চোখ কেঁদে কেঁদে ফুলিয়ে দিয়েছিলো ! সস্নেহে আমার স্ত্রী ওকে বুকের মাঝে টেনে নিলেন ! হাতের ইশারায় আমাদের সবাইকে দূরে চলে যেতে বললেন ! আমরা সবাই চলে গেলাম ! হুইলচেয়ার নিয়ে ওই ভাবে কথা বলে সম্ভব নয় ! তাই অঞ্জলীকে ওনার ঘরে যেতে অনুরোধ করলেন ! ইশারাতে সরলাকে খাবার পাঠিয়ে দিতে বলে নিজের ঘরের দিকে হুইলচেয়ার নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন !
অনেক আদরে নিজের হাতে অঞ্জলীকে খাইয়ে দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে থাকলেন ! কি কথা হলো বা কি হলো আমরা কেউই জানতে পারলাম না ! বেশ কিছুক্ষন পর অঞ্জলি ঘর থেকে বেরিয়ে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো !  আমি বললাম কিছু বলবি ? ও কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেলো ! ওর চোখে মুখে ছিল ঝড়ের পূর্বাভাস !
পরের দিন  সকালে সকালে অঞ্জলি আমাদের ঘরে এলো ! সবার সামনেই বললো " আমি এই বাড়িতে থাকতে পারবো না ! আমাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দাও !"
- কেন তুই হোস্টেলে যেতে চাইছিস ? সরলা প্রশ্ন করলো !
- একজন জারজ সন্তান হয়ে বেঁচে থাকার কোনো মানেই নেই ! আমি স্বাধীন ভাবে থাকতে চাই !
বুঝলাম আমার স্ত্রী অঞ্জলীকে বলে দিয়েছে অঞ্জলীর জন্ম বৃত্তান্ত ! আমি বা সরলা যেটা বলতে পারিনি সেটা আমার স্ত্রী ওকে বলে দিয়েছে ! ভালোই হয়েছে ! একদিন না একদিন সে জানতে পারতোই ! তখনও আমাদের এই রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো ! সেটা আজ হয়ে ভালোই হয়েছে ! আমি বললাম এখন তো কোনো বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি নেবে না ! সামনের সেশনে ওকে আমরা ভর্তি করে দেব ! ততদিন যেন অপেখ্যা করে ! কোনো কথা না বলে অঞ্জলি নিজের ঘরে চলে গেলো !
যে কদিন সময় ছিল হাতে সেই কদিনে কোর্টে গিয়ে এফিডেভিড দিয়ে অঞ্জলীর বাপের নাম বদলে আমার নাম দিলাম ! সেটা যদিও অঞ্জলি জানতো না ! জেনে ছিল যখন ওকে বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে গেছিলাম !
যখন ও নিজের ভর্তির ফর্মে সই করতে গেলো তখন নিজের সারনেম দেখে স্থির কিন্তু জ্বলন্ত দৃষ্টিতে দেখে সই করে চুপচাপ নিজের হোস্টেলের রুমের দিকে চলে গেলো ! স্কুলের প্রিন্সিপাল আমাকে প্রশ্ন করলেন "কি ব্যাপার বাপ বেটিতে কি ঝগড়া টগড়া হয়েছে নাকি বোর্ডিং স্কুলে আসার জন্য !" আমি শুধু বললাম "অনেক বোরো ধাক্কা খেয়েছে মেয়ে আমার ! একটু যেন খেয়াল রাখবেন ! " শুরু হলো অঞ্জলীর হোস্টেলের দিন !  
অঞ্জলি আমাদের থেকে একেবারে দূরে সরে গেলো ! ভেবেছিলাম হয়তো বোর্ডিং স্কুলে গিয়ে অঞ্জলি সামলে নেবে নিজেকে ! কিন্তু ভুল ! চিঠি দিলে উত্তর দিতো না ! বোর্ডিং স্কুলে ফোন করলে কথা বলতে চাইতো না ! ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে ! কেন জানিনা ! যেদিন অঞ্জলি জেনেছিলো যে আমি ওর বাবা সেটাকে কিছুতেই ও মেনে নিতে পারছিলো না ! ও নিজেকে জ্বারজ সন্তান বলে ভাবতে শুরু করতে থাকলো ! নিজেই নিজের মনের আগুনে পুড়তে থাকলো ! এক ফুলের মতো নিষ্পাপ অঞ্জলি থেকে অঞ্জলি ধীরে ধীরে ক্রুর অঞ্জলিতে পরিণত হতে শুরু করলো ! ওর মনে জ্বলতে শুরু করেছিল  প্রতিশোধের আগুন ! ওর মনের কোনায় একটা শঙ্কা বাসা বেঁধে গেছিলো যে ওর বাবাকে আমরাই খুন করিয়েছি ! যদিও ওর শঙ্কাটা আংশিক হলেও সত্যি ! কারণ ওর বাবা ছিল সিপিএমের একজন উঠতি নেতা ! ! (যদিও তখন সিপিএম ছিলোনা !  তখন ছিল সিপিআইএমল  ! যাদের কে আমরা নকশাল বলে চিহ্নিত করেছিলাম ! ) সেই সংঘঠনের একজন সক্রিয় কর্মী ও নেতা ছিল সে ! ধীরে ধীরে তার প্রভাব সমাজের উপর বাসা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছিলো ! সমস্ত যুবক এবং কিশোররা তার অন্ধ সাপোর্টার ! তার এক কথায় সবাই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল ! শুরু হয়েছিল হিংস্র আন্দোলন যে আন্দোলনের মুখ্য ছিল সাম্যবাদ ! চীন আর রাশিয়ার প্ররোচনায় তারা তখন এক একজন বিবেকহীন, আবেগহীন একদল সশস্ত্র মানুষ যাদের মা বাপ ছিল মাও সেতুং আর লেলিন ! নিজেদের মা বাপ ভাই বোন কাউকেই এরা নিজের বলে মনে করতো না ! এদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল ধনীদের, জমিদারদের জীবন নাশ ! পুলিশও এদের সব থেকে বোরো শত্রু ছিল ! একের পর এক এরা ধনীদের লুটতে আর খুন করতে শুরু করে দিয়েছিলো ! আমি যদিও একজন ধনী জমিদার বাড়ির লোক ছিলাম তবুও ওদের সাম্যবাদের নীতিকে সমর্থন করতাম কিন্তু ওদের যে উদ্দেশ্যবিহীন লুটপাট আর খুন করাটাকেও সমর্থন করতাম না ! তখন আতঙ্কবাদী কথাটা বা শব্দটা ঠিক ভাবে ব্যবহার হয়নি ! কারণ ভারত সরকারের মতে ক্ষুদিরাম আর ভগৎ সিংহ আর সুভাষ বোস  ই  ছিল ভারতের সব থেকে বোরো আতঙ্কবাদী ! তাই এদের নতুন নাম করণ হয়েছিল নকশাল ! কংগ্রেস সরকারের রাতের ঘুম এরা কেড়ে নিয়েছিল ! আর করেছিল আমাদের মতো লোকেদের  যারা জমিদারি চলে গেলেও নিজেদেরকে জমিদার বলে মনে করতো ! আর গরিবদের উপর অত্যাচার করতো ! অবশ্যই সেখানে পুরোপুরি সহযোগিতা থাকত পুলিশের আর কংগ্রেসের নেতাদের !
ওরা যেভাবে সন্ত্রাস চালাতে শুরু করেছিল হয়তো সেটা ওদের ভাষায় ছিল বিপ্লব কিন্তু আমাদের মতো লোকেদের ভাষায় ছিল ক্রুরতা ! কিছুতেই আমাদের মতো লোকেরা ওদের এই ঔদ্ধত্ততাকে কে মেনে নিতে পারছিলাম না ! জানিনা ওদের ভিতর কি শক্তি ছিল যার বলে ওরা কিশোর থেকে যুবকদেরকে ব্রেইন ওয়াশ করে তাদেরকে এক খুনিতে পরিণত করছিলো ! সমস্ত যুবকদের রক্তে তখন একটাই কথা বলতো ! কাকে মারবো ! চোখে সব সময় হিংস্রতার আগুন ! যাকে পারতো তাকে গুলি করে মেরে দিতে শুরু করে দিয়েছিলো ! যখন সরকারের টনক নড়লোও তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে ! বাংলার ৭০ ভাগ যুবক আর কিশোর তখন নকশাল !
অনিরুদ্ধর বেশ কয়েকটা কারখানা আর চালকল ওরা লুট করে ! কারখানার কর্মচারীদের নির্বিধিতে নিস্রংশ ভাবে খুন করে ! ওদের যুক্তি ছিল যারা বড়ো লোকেদের কাছে কাজ করে তারা সবাই বুর্জেয়া ! এই বুর্জেয়া কথাটার মানে তারাও হয়তো জানতো না ! আর সত্যি কথা আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারেও নি !
পুলিশ তখন ওদের পিছনে পাগলের মতো ঘুরছে ! আর ধনীরা সন্ত্রাসে ভুগছে !  
পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের মতো মুষ্টিমেয় ধনী লোক অধীর গুহ কে খুন করে এবং সেটাকে একসিডেন্ট বলে চালিয়ে দেয় ! তাই বললাম যে পরোক্ষ ভাবে আমরাই অধীর গুহকে খুন করেছি ! ( একটা কথা বলে দিই সবাইকে জানানোর জন্য অধীর গুহার মানে অঞ্জলীর বাবার বিপ্লবিক নাম ছিল "দ্রোণাচার্য " আর দ্রোণাচার্য ছিল প্রহসনের অন্য নাম ! কেউ যদি নকশাল দ্রোণাচার্য্যর কথা পরে থাকেন বা জেনে থাকেন তাহলে তার ক্রুঢ়তার কথাও নিশ্চই জানবেন ! )

যাই হোক ! জানিনা অঞ্জলীর রক্তে একটু ঘৃণা তিক্ততা কোথা থেকে এসেছিলো !  তবুও আমরা আশা রেখেছিলাম যে একদিন না একদিন অঞ্জলি বুঝতে পারবে আর নিজেকে শুধরে নেবে ! '

গরমের ছুটিতে অঞ্জলীকে একরকম জোর করেই বাড়ি নিয়ে এলাম ! কিন্তু যে অঞ্জলি এলো সে অন্য এক অঞ্জলি ! মুখে চোখে নিষ্ঠুরতার ছাপ ! আমাদের দেখলেই ওর চোখে আগুন জ্বলে ওঠে ! একমাত্র সরলাকে একটু সমীহ করতো তাও সেটা ছিল লোক দেখানো ! কারণ যেহেতু সরলা আমাদের পরিবারের একজন হয়ে গেছিলো তাই সে সোরোলাকেও মনে মনে ঘৃণা করতো কিন্তু যেহেতু তার মা তাই একটু সমীহ করতো !
কারুর সাথে কথা বলতো না ! একমাত্র চৈতালির সাথে কিন্তু সেটাও ছিল ঝগড়ার পর্যায়ে ! চৈতালি কিছুই জানতো না ! ও জানতো যে অঞ্জলি ওর দিদি ! ওর সমস্ত অত্যাচার চৈতালি মুখ বুঁজে সহ্য করতো !  
কিন্তু অঘটন ঘটলো আবার ! আমাদের কোনো এক অসাবধানতার মুহূর্তে অঞ্জলি আমাকে আর সরলাকে সঙ্গম করতে দেখে ফেললো  ! এটাই সুযোগ  ছিল অঞ্জলীর কাছে যে আমার ঘর কি ভাবে ভাঙবে ! সারারাত চিন্তা করে ঠিক করলো যে আমার স্ত্রী কে সমস্ত কথা জানিয়ে দিয়ে আমাকে আর সরলাকে উচিত শিক্ষা দেবে ! কিন্তু বিধি বাম ! যখন আমার স্ত্রীকে জানানোর জন্য আমাদের বেডরুমে আসছিলো তখন আমাদের তিনজনের সঙ্গমের চিত্র ওর সামনে এসে যায় ! নিজেই ভেবে পায়না কি করবে ! পরে আমার স্ত্রী কে অঞ্জলি চেপে ধরে ! জানতে চায় কি করে উনি এই যৌন ব্যভিচারকে সমর্থন করেন আর নিজেকে কি ভাবে লিপ্ত করেন ?
আমার স্ত্রী অঞ্জলীকে সমস্ত জিনিস বোঝান ! কি করে উনি চেয়েছেন আমার আর সরলার যৌন জীবন কে সুখী করতে চেয়েছেন ! কেন উনি আমার আর সরলার যৌন জীবন কে প্রোৎসাহিত করেছেন ! কারণ যাতে করে আমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি ! অঞ্জলি আরও নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নেয় ! এইবার ও অন্য পথ ধরে ! সবার সাথে ভালো করে কথা বলতে শুরু করে দেয় ! সবার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতে শুরু করে ! আমরা সবাই অঞ্জলীর এই পরিবর্তনে খুব খুশি হয় ! কিন্তু অঞ্জলি যে অন্য চাল চালছে সেটা কেউই বুঝতে পারিনা ! বোর্ডিং যোবন শেষ করে অঞ্জলি আমাদের বলে যে ও বিদেশে পড়তে যেতে চায় ! আমরা খুশি মনেই সেটা মেনে নিই !
অঞ্জলি বিদেশে পড়তে গেলো ! কম্পিউটার নিয়ে ও পড়াশোনা করেছিল ! সেখানেই ওর আলাপ হয় পার্থর সাথে ! ওরা একসঙ্গে লিভটুগেদার করতে শুরু করে দেয় ! যখন আমরা জানতে পারি তখন আমাদের কিছুই করার নেই ! আর আমরা যে জেনে গেছি সেটাও আমরা অঞ্জলীকে বলিনি কোনোদিন ! ব্যাঙ্গালোরে চাকরি নিয়ে দুজনেই ফিরে আসে ! প্রথম বার আমাদের বাড়িতে যখন পার্থকে নিয়ে এসে বলে যে ও পার্থ মানে দীপককে বিয়ে করতে চায় ! আমাদের মতামত বা পারমিশন চায়না ! শুধু জানিয়ে দেয় ! আমরা কোনো কথা না বলে ওর ডিসিশন কে মেনে নিয়ে ওদের রেজিস্ট্রি করিয়ে দিই ! ওরা আবার ব্যাঙ্গালোর চলে যায় ! তিন মাস পরেই ফিরে আসে পার্থকে সঙ্গে নিয়ে ! কিছুটা উদ্ভ্রান্ত কিছুটা ক্লান্ত দুজনেই ! চোখে মুখে সবসময় বিষাদের ছায়া ! একদিন আমি অঞ্জলীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কোনো প্রব্লেম আছে কিনা ! যদি আর্থিক কোনো কিছুর দরকার হয় তাহলে নিঃসংকোচে আমাকে বলে ! কিন্তু না অঞ্জলি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল  ! এর মাঝেই হটাৎ চৈতালি মুখে গায়ে ছোট পায় ! আমরা জানতে পারি যে চৈতালি সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে ছোট পেয়েছে ! অঞ্জলীরা চলে যাবার একমাস পরে সরলা আমাকে ডেকে বলে "চৈতালিকে ডাক্তার দেখতে হবে !"
- কেন কি হয়েছে ?
- যা হয়েছে সেটা বলতেও ঘেন্না  করছে ! চৈতালি প্রেগনেন্ট !
সরলার কথা শুনে আমার মাথায় বজ্রাঘাত হয় ! এটা কি করে সম্ভব ?ওর কোনো ছেলে বন্ধু আছে বলে তো আমি জানিনা ! যে এই কাজ করেছে ?
- এই কাজ করেছে আমাদের জামাই আর তার এই কাজে সাথে দিয়েছে আমাদের অঞ্জলি ! যাবার আগে অঞ্জলি আমাকে একটা চিঠি দিয়ে গেছিলো  ! পড়ারও সময় হয়নি ! আর ও বলেছিলো যেন আমি দুমাস পরে চিঠিটা পড়ি ! এটা ছিল ওর অনুরোধ ! ভেবেছিলাম হয়তো দুমাস পরে আমাদের সারপ্রাইজ দিতে চাইবে নিজেকে অঁত্বসত্তা বলে ! আমিও ওর কথা রেখেছিলাম তাই চিঠিটা পড়িনি ! কিন্তু কাল যখন চৈতালির ব্যাপারটা জানতে পারলাম তখন তাড়াতাড়ি চিঠি খুলে পড়লাম !
"মা !
যখন তুমি এই চিঠিটা পড়বে তখন হয়তো পার্থ আর এই পৃথিবীতে থাকবে না ! হয়তো আমিও থাকবো না ! তাই তোমাকে এই চিঠি দেবার আগে অনুরোধ করে এসেছি যেন দুইমাসের আগে এই চিঠিটা খুলোনা ! আমার অগাধ ভরসা আছে যে তুমি দু মাসের আগে এই চিঠি খুলবে না ! আমার মানসিক অবস্থা একদম ভালো নয় ! পার্থর যখন প্রথম ক্যান্সার ধরা পরে তখনি আমি ঠিক করে নিই আমি পার্থকে বিয়ে করবো ! ওকে একলা ছেড়ে দিতে পারবো না ! আর তা ছাড়া আমি তখন অনত্বসত্তা ! ওকে বিয়ে তো আমাকে করতেই হবে ! পার্থও নিজেও জানতো যে ওর ক্যান্সার হয়েছে ! কিন্তু আমাকে কোনোদিন জানায়নি ! যেদিন জানতে পারি সেদিন অনেক দেরি হয়ে গেছে ! তাই ওকে বিয়ে করা ছাড়া আমার কাছে কোনো উপায় ছিলোনা ! কারণ আমি ওকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম  !  আর মনে মনে সংকল্প করে ছিলাম যে যদি ওকে বাঁচাতে না পারি তাহলে ওর শেষ জীবনটাকে আনন্দে ভরিয়ে রাখবো ! আমি জানি আমি তোমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি ! কারণ আমি তখন ক্রোধে অন্ধও ছিলাম ! তোমার আর মেসোমনির সম্পর্ক কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না ! কি করে তোমাদের উপর প্রতিশোধ নেবো সব সময় সেটাই ভাবতাম ! কিন্তু পার্থ আমাকে তার নিজের দৃষ্টিকোণ দিয়ে যখন বোঝাতে শুরু করলো তখন থেকে আমিও উল্টো ভাবতে শুরু করলাম ! পার্থ আমাকে তার মতো করে নিয়েছে ! ওর মানসিক অবস্থাও আমারই মতো ! ওদের পরিবারেও আমার মতো সমস্ত ঘটনা ঘটেছে ! কিন্তু ও সেই গুলোকে পজিটিভ ভাবেই নিয়েছে ! কারণ ওর দৃঢ় বিশ্বাস যে যদি কোনো কোনো মানুষ অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে স্বেচ্ছায় যায় তার নিশ্চই শারীরিক প্রয়োজন আছে ! আর সেই প্রয়োজনটাকে মেটানোটা কোনো অপরাধ নয় ! আর যদি অপরাধ হয় তাহলে আমরা কি করছি ? আমরা কি সেক্স করছিনা ? আমরা কি জীবনটাকে উপভোগ করছিনা ? আমরা কি আমাদের শারীরিক চাহিদা মিটাচ্ছিনা? যদি তোমরা অপরাধ কাপড়ে থাকো তাহলে তো আমরাও অপরাধ করছি ! ! সেদিন আমি অনুভব করেছিলাম যে আমি কত বোরো ভুল করেছি ! আমাকে যখন দাদু রেপ করেছিল তখন আমি তোমাদের ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম ! তখন আমি আমার মন থেকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম যে তোমরা জেনে শুনে আমার রেপ কে ধামা চাপা দিয়েছো ! কিন্তু পার্থ আমাকে বুঝিয়েছিল ! একজন অসুস্থ মানুষ যদি কোনো অঘটন ঘটায় সেখানে মনুষত্ব দিয়ে বিচার করতে হয় ! সামাজিক প্রতিষ্ঠাও বজায় রাখতে হয় ! তোমরা কোনো ভুল করোনি ! আমাকে ক্ষমা করে দিও মা ! চৈতালি পরে যায় নি ! পার্থর শেষ ইচ্ছা ছিল কাউকে রেপ করবে !  এইটাই ছিল ওর বিকৃত মনস্কতা ! এইটা ক্যান্সার ধরা পড়ার আগে  ছিলোনা ! বিছানায় শুয়ে শুয়ে ও এরোটিক বই পরে নিজের মনেতে একটা বিকৃত মানসিকতার শিকার হয়ে গেছিলো ! ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করেছিলাম ! তিনি বলেছিলেন "যে মানুষ জানতে পারে তার আর বেশি দিন নেই সেই মানুষ তার ফ্যান্টাসিকে নিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করে ! এতে দেখা যায় যে যে লোকটি হয়তো ২ মাস বাঁচার তিনি যদি তার ফ্যান্টাসিকে পুরো করতে পারে তাহলে তার মধ্যে বাঁচার জন্য একটা অনুপ্রেরণা কাজ করে ! যদি পার্থ নিজের ফ্যান্টাসিকে পুরো করতে চায় তাহলে আমি যেন ওর সহযোগিতা করি ! ! প্রথম শুরু করলাম ঝর্ণা কে দিয়ে ! যদিও ঝর্নাকে পার্থ কোনোদিন রেপ করেনি বা ওর সাথে সেক্স করেনি ! কারণ ঝর্ণা তখন খুবই ছোট ! শুধু ওর শরীরের উপর দিয়ে ওকে শান্ত থাকতে হয়েছে ! ঝর্ণার ও কিছু করার ছিল না ! তাই ওকে সব মেনে নিতে হয়ে ছিল ! কিন্তু যখন প্রথম বার ও চৈতালিকে দেখে তখন থেকেই আমাকে খেপিয়ে খাচ্ছিলো যে ওর এই একটাই শেষ ফ্যান্টাসি যে ও চৈতালিকে রেপ করবে ! অনেক  চেষ্টা করেছি ওকে বোঝাতে ! কিন্তু উল্টে আমাকেই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করেছিল যে ওর জীবনের এটাই শেষ ইচ্ছা ! শেষে আমি মেনে নিয়েছিলাম  ! আর চৈতালিকে ও হিংস্র পশুর মতো ভোগ করেছে ! চৈতালি তোমাদের কিছুই জানায়নি  ! কারণ তোমরা জানলে দুঃখ পাবে  ! নিজের মনে সব দুঃখ চেপে রেখে দিয়েছে ! আমাকে ক্ষমা করো মা ! আর আমার হয়ে চৈতালির কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিও ! হয়তো এটাই আমার শেষ লেখা ! সেদিনের পর থেকেই পার্থর শরীরের অবনতি ঘটেছে ! হয়তো আর। ....
তোমাদের অভাগী মেয়ে ! "

চিঠিটা শুনে আমার মনে হলো আমি হয়তো এখুনি হার্টফেল করে মরে যাবো !
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে সরলাকে বলি যে ও যেন কালকেই চৈতালিকে নিয়ে কলকাতায় গিয়ে কোনো বোরো ডাক্তারের কাছে এবোরেশন করিয়ে নিয়ে আসে ! আমি কাল সকালেই ব্যাঙ্গালোর যাবো অঞ্জলীর কাছে !
আমার অঞ্জলীর কাছে যাবার কথা শুনে সরলার মুখ ভয়ে পাংশু হয়ে যায় ! ও ভেবে বসে যে আমি অঞ্জলীকে খুন করতে যাচ্ছি ! আমিই ওকে বোঝাই যে "দেখো সরলা যা হবার হয়েছে ! অঞ্জলীও তো আমাদের মেয়ে ! সেই মেয়েটা কষ্টে আছে ! নিজের জীবনটাকে শেষ করে দেবে বলে প্রন নিয়েছে ! একজন বাবা হয়ে কি করে আমি সেটাকে সহ্য করি বলতো ! আমি যাচ্ছি আমাদের অঞ্জলীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে তুমি নিশ্চিন্তে থাকো ! আমার প্রাণ থাকতে অঞ্জলীর কিছু হতে দেব না !
পরেরদিন সকাল বেলাতেই ফ্লাইট ধরে আমি ব্যাঙ্গালোর পৌঁছোই ! এয়ারপোর্টে নেমে অঞ্জলীকে ওর বাড়ির নাম্বারে ফোন করি ! কিন্তু কোনো উত্তর পাইনা  ! ওর বাড়ির ঠিকানা ও অফিসের ঠিকানাও  আমার কাছে ছিলোনা ! শুধু নাম জানতাম কোন কোম্পানিতে কাজ করে ! ওরা যখন বিয়ে করার জন্য বাড়ি ফিরে ছিল তখন শুধু জানিয়ে ছিল যে ওরা উইপ্রো কাজ করে ! উইপ্রো তখন ব্যাঙ্গালোরের সব থেকে বড়ো কোম্পানি ছিল ! উইপ্রোর অফিসে পৌঁছতে খুব একটা বেশি বেগ পেতে হলোনা ! যখন উইপ্রোর রিসেপশনে পৌঁছে আমি অঞ্জলীর আর দীপকের কথা জিজ্ঞাসা করলাম তখন রিসেপসনিস্ট মেয়েটি বললো পার্থ বা অঞ্জলি নামে ওখানে কেউ কাজ করে না ! শুনে আমার মাথায় হাত ! ওরা তাহলে কোথায় কাজ করে ! গেটের বাইরে বেরিয়ে এলাম ! সিকিউরিটি গার্ড আমার মুখ দেখে প্রশ্ন করলো "কেয়া হুয়া সাহাব ?"
আমি তখন ওকে বললাম অঞ্জলি আর পার্থর কথা ! বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে বললো " হা সাহাব ! হাম জানতে হ্যায় উন দোনোকো ! ৬ মাহিনা পহেলে পার্থ সাহাব কো কি বিমারী হো গায়া থা ! ও বহুত খতরনাক বিমারী থা ! উসকি বিমারী কে চলতে ঊনকো কোম্পানি সে নিকাল দিয়া গায়া থা ! ঔর ও অঞ্জলি ম্যাডাম গুস্সা হোকে নকরি ছোড দিয়া ! " বাদ মেই পাতা  চলা অঞ্জলি ম্যাম এই বি এম জয়েন  কিয়া ! আপ ওহাঁপে যাকে পাতা কিজিয়ে ! "
আমি গার্ড কে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে এই বি এমের অফিসে পৌঁছোই ! ওখানে গিয়ে অঞ্জলীর খবর জিজ্ঞাসা করতেই রিসেপশনের মেয়েটি উৎকণ্ঠার চোখে আমাকে প্রশ্ন করে কেন আমি অঞ্জলীর খোঁজ করছি ! যখন আমি ওকে বলি যে আমি অঞ্জলীর  বাবা তখন ও ব্যতিব্যস্ত হয়ে আমাকে বসতে বলে ইন্টারকমে কারুর সাথে কথা বলে ! মিনিট দুয়েকের মধ্যেই মেয়েটি আমাকে একটা কেবিনের সামনে নিয়ে এসে আমাকে বলে যান স্যার আপনার জন্য অপেখ্যা করছেন ! আমি রুমের ভিতর প্রবেশ করতেই এক তরুণ যুবক যে নিজের পরিচয় দিলো আকাশ সিংলা বলে ! সে ওখানকার এইচ আর ম্যানেজার !
- স্যার আপনি পাঁচ মিনিট অপেখ্যা করুন আমি আপনাকে নিয়ে যাবো ! ততক্ষনে আপনি চা এবং জলখাবার খেয়ে নিন ! ওর বলার সাথে সাথেই একজন বেয়ারা আমার সামনে এক প্লেট স্যান্ডউইচ আর চায়ের কাপ রেখে চলে গেলো !
- স্যার আপনি খেয়ে নিন ! আমাকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দিন ! আমি আপনাকে ওদের কাছে নিয়ে যাবো! বলেই ও ল্যাপটপে কিছু করতে লাগলো !
ছেলেটির কথা বলার ধরণে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম ! কোনো কথা না বলে স্যান্ডউইচ আর চায়ের সদ্ব্যবহার করে ফেললাম ! ততক্ষনে ছেলেটিও ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়েছে ! "চলুন স্যার! " ওর সাথে আমরা বাইরে বেরিয়ে আসতেই দু একজন অফিসের স্টাফ ওনাকে চোখের ইশারাতে  জিজ্ঞাসা করলো কি ব্যাপার ? ও শুধু বললো যে যিনি অঞ্জলীর বাবা ! আমার কথা জেনে সবার মুখেতে একটা দুঃখের ছায়া নেমে এলো ! আকাশ কোনো কথা না বলে অফিসের বাইরে বেরিয়ে এসে নিজের মারুতি ৮০০ গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিলো !
হটাৎ দেখি আমাদের গাড়ি ব্যাঙ্গালোর থানার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো ! আমি প্রশ্ন করলাম এখানে কেন ? কোনো কি দুর্ঘটনা হয়েছে ?
শুধু বললো চলুন আমার সাথে সব জানতে পারবেন ! আমি ওকে অনুসরণ করে সোজা এস এইচ ওর ঘরে পৌঁছে গেলাম ! এস এইচ ওর সহকারী আকাশ কে দেখে প্রশ্ন করলো " কি মিস্টার সিংলা ? কোনো খবর পেলেন ? আকাশ বললো ইনি মিস্টার লাহিড়ী ! অঞ্জলীর বাবা !
- আইয়ে সাহেব ! আইয়ে! বৈঠিয়ে ! সাহেব আভি আ জায়েগা ! ও হি আপ সে বাত করেঙ্গে ! হাম বেঙ্গল পুলিশ ক ভি ইনফর্ম কিয়া! অভি তক তো আপকে ঘর মে ভি খবর পৌঁছ গয়া হোগা !
- কি হয়েছে আমাকে বলবেন !
- স্যার ফিকার মত্ কিজিয়ে ! সাহাব আনে বালা হি হ্যায় ! ঘাবড়াইয়ে মত্ !
মনেতে তখন হাজারো চিন্তার ঝড় ! একবার আকাশের দিকে তাকালাম ! ও কোনো কথা না বলে মুখটাকে যত সম্ভব গম্ভীর করে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো !
গভীর দুশ্চিন্তায় আর হতাশায় আমি ভগ্ন হৃদয়ে বসে বসে ভাবতে থাকি কেন এখানে এলাম ! কেনই বা আকাশ আমাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে এলো ! কেনই বা এরা আমাকে কিছই বলতে চাইছে না ! তবে কি কোনো বিরাট অঘটন ঘটেছে ?
দেখতে দেখতে আধাঘন্টা কেটে গেলো ! আমার ধৈর্য আর ধৈর্য ধরে থাকতে পারছিলো না ! অস্থির চিত্তে একবার আকাশের দিকে আর একবার পুলিশের লোকটির দিকে তাকাচ্ছিলাম ! ওদের মধ্যে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছিলাম না ! নিজের মনেই ভাবতে শুরু করলাম ! আমি কি কোনো চক্রান্তের শিকার হতে চলেছি ? এরা কি করে এতো নিস্পৃহ হয়ে আমার সামনে বসে আছে ! কেনই বা আমাকে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হচ্ছে না ? যেন আমি একটা বিশাল অন্ধকারের মধ্যে বসে আছি যেখানে কোনো আলোর আশা দেখতে পাচ্ছিনা ! কতক্ষন যে এই ভাবে অন্ধকারের সাথে যোদ্ধ করেছি সেটা হয়তো নিজেও জানিনা ! হটাৎ কেউ আমাকে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো " মিস্টার লাহিড়ী কেমন আছেন ?"
গম্ভীর গলার আওয়াজে চমক ভেঙে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম একজন আমারি বয়সী গম্ভীর মানুষ আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে !
- আমাকে কিছু বলবেন কি হয়েছে ? কেনই বা এখানে আমাকে আনা হয়েছে ?
- ধীরে মিস্টার লাহিড়ী ! ধীরে ! সব জানতে পারবেন ! কিন্তু তার আগে আমাকে কত গুলো প্রশ্নের উত্তর  আপনাকে দিতে হবে !
- বলুন কি জানতে চান ?
- অঞ্জলি আপনার কে হয় ?
- আমার মেয়ে !
- আপনার নিজের মেয়ে ?
- হ্যা !
- কিন্তু অঞ্জলি যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে সেখানে সে বলেছে যে আপনার রক্ষিতার মেয়ে সে ! তাহলে সেকি ভুল বলেছে ?
- ভুল ও বলেনি আবার ঠিক ও বলে নি !
- বুঝলাম না ! একটু বুঝিয়ে বলবেন ?
- ধুস মশাই ! সেই তখন থেকে আমাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন ! কি হয়েছে সেটা আগে বলবেন তো নাকি ? একটু বিরক্ত হয়ে আমি এস এইচ ও কে বললাম ! এতক্ষন থানাতে থাকার ফলেই হোক আর জমিদার রক্তের জোরেই হোক নিজের উপর আস্থা ফিরে পাচ্ছিলাম ! তাই না ঘাবড়ে ইন্সপেক্টর কে প্রশ্ন করলাম !
- বলছি ! সব বলছি ! তার আগে আমি যে প্রশ্ন গুলো করছি সেগুলোর যদি সঠিক উত্তর দেন তাহলে হয়তো আপনার মেয়েকে আমরা বাঁচাতে পারবো ! তা না হলে। ..... একটা লম্বা নিঃস্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ইন্সপেক্টর !
বুঝলাম ! বেশ বড়ো রকম বিপদ হয়েছে অঞ্জলীর ! ভালো মতোই ফেঁসেছে ! এখন যে ভাবেই হোক অঞ্জলীকে বাঁচাতে হবে !
- বলুন কি জানতে চান !?
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ঝর্ণা The Untold story ! - by dada_of_india - 19-10-2020, 08:06 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)