18-10-2020, 01:04 PM
।। চব্বিশ ।।
রজতের মনের মধ্যে মেয়েমানুষের প্রতি লোভ, এই অতিরিক্ত নারী বাসনা আর একাধিক নারীতে নিজেকে প্রলুব্ধ করা, সব উধাও হয়ে গেছে সিরিজা আসার পর থেকে। দোলন, ওকে দেখে হয়তো ভাবছে, এই লোকটা সিরিজাকে একা পেয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে ওকে ভোগ করছে। সিরিজার যা শরীর, সেই শরীরে ডুব দেওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় কামপাগল পুরুষমানুষের কাছে। বউ নেই যখন নিশ্চয়ই নষ্টামি করেছে, সিরিজার আগুনের মতন শরীরটা নিয়ে। মুখে আর হাবভাবে যতই সাধুপুরুষ ভাব দেখাক, লোকটা নিশ্চয়ই কামপিপাসু। নইলে এইকটা দিন সিরিজাকে নিয়ে একা একা এই বাড়ীতে কাটিয়ে দিল? অথচ দোলন বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেনি ব্যাপারটা।
রজত ভালোমতই বুঝতে পারছিল, সিরিজাকে নিয়ে বাকী জীবন কাটাতে হলে, একে একে অনেক বাঁধাই পেরোতে হবে ওকে। ঝঞ্জাট, ঝ্যামেলার যেন শেষ নেই জীবনে। এক একটা করে সব এসে জুটছে ওর এই টু রুম ফ্ল্যাটে। দিবাকরকে বিশ্বাস করে অভ্যর্থনা করলো। সেও এসে রেশমীর বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেল সিরিজার মনে। শ্বশুড় মশাই আর বউ রীতার হাত থেকেও রেহাই নেই। ঘাড় থেকে নেমেও নামছে না শেষ পর্যন্ত। কখন যে আবার এই ফ্ল্যাটে এসে হানা দেবে কে জানে? সিরিজাকে নিয়ে একান্তে যে একটু মস্তি করবে তারও উপায় নেই। এখন আবার এসে জুটেছে এই দোলন। এ যে কি খেল দেখাবে শেষ পর্যন্ত কে জানে? বাকী রইলো সিরিজার মাতাল স্বামী। সেও যদি আবার এই ফ্ল্যাটে এসে কখনও হানা দেয়? কিছু বিশ্বাস নেই। লিস্টে আর কার কার নাম আছে কে জানে?
রজত মনে মনে একটা ফন্দী আঁটছিল বসে বসে। এই ফ্ল্যাটটা যদি ছেড়ে দিয়ে সিরিজাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া যায়, তাহলে কেমন হয়? সব বাধা বিপত্তির অবসান এক নিমেশে। সবার চোখের আড়ালে চলে গেলে তখন আর টেরই পাবে না কেউ, ওর ব্যক্তিগত জীবনে সিরিজাকে নিয়ে ও কি করছে? এখানে থাকলেই এরা থেকে থেকে খালি আসবে আর রজতের সুখের বারোটা বাজাবে। তার থেকে বরং.....
দোলন বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে বুকে জড়িয়ে আবার বসার ঘরে চলে এল। সোফায় শোয়ালো সিরিজার বাচ্চাটাকে। এবার রজতের দিকে তাকালো সোজাসুজি দৃষ্টিতে। রজত ওকে দেখেও না দেখার ভান করছে। ওর মনের মধ্যে শুধু সিরিজা আর সিরিজা। অন্য কোন নারীর প্রতি দূর্বলতা আর কোনভাবেই অবশিষ্ট নেই। শুধু বাথরুমের ভেতর থেকে সিরিজা একটু পরেই বেরোবে, ও যেন তার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
দোলন ওর প্রতি রজতের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য ইচ্ছে করেই ওকে বললো, "আমি যতই নিজের মুখপোড়া স্বামীটাকে নিয়ে হাপিত্যেশ করি, আমার কষ্ট আর কেউ বুঝবে না। আমি তো আর সিরিজার মতন নই। ও যে স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছায় এখানে চলে এল। আমি হলে কি পারতুম? তাই তো নিজের জ্বালায় মরছি। এখন দেখছি সিরিজাই ঠিক আর আমি ভুল। তখন যদি একবার ওর মতিগতিটা একটু বুঝতে পারতুম, তাহলে হয়তো আমিই ওকে ছেড়ে চলে যেতুম আগে।"
রজত কোন উত্তর দিচ্ছে না দোলনের কথায়। ভাবখানা এমন, কথায় কথা বাড়ালে নিজেই না আবার ফেঁসে যায়। মনের সুখে সিগারেট টানতে টানতে ও এবার হাতে মোবাইলটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো। দোলন যা বলেছে একটু আগে, ও এক কান দিয়ে ঢুকিয়েছে, আর এক কান দিয়ে বার করে দিয়েছে। এ মেয়ের সাথে মুখ লাগানোর কোন ইচ্ছা ওর আপাতত নেই। শুধু দিবাকর আসা অবধি অপেক্ষা। তারপর ওকে দিবাকরের বাড়ীতে স্থানান্তর করা। দোলনের সব দুলুনি বেরিয়ে যাবে সকাল পেরিয়ে বিকেলটা হলেই। ওর সব চালাকী আমি বের করে দেব, আর কয়েক ঘন্টা পরেই। দোলনও থাকবে না। আর থাকবে না এই ফ্ল্যাটটাও। কদিন বাদেই সিরিজাকে নিয়ে আমি চম্পট দেব এখান থেকে।
রজতকে অবাক করে দোলন এবার বললো, "দাদাবাবু তুমি আমার কথায় রাগ করেছো? আমি খুব ট্যারা ট্যারা কথা বলছিলাম, তোমাকে অস্বস্তিতে ফেলেছি। সিরিজা এখানে তোমার কাছে এসে রয়েছে বলে আমি হিংসে করছি। তুমি খুব চটে গেছ বোধহয় আমার ওপর? আমি আসলে মেয়েটা এমনই। মুখের ওপর শুধু দুমদাম করে বলে ফেলি। তারপরে আফসোশ করি। আমি কথা দিচ্ছি, আর কিছু ট্যারা বাঁকা কথা বার্তা বলব না তোমায়। নাকে খত দিলাম। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও দাদাবাবু।
রজতের মনে হল, এটা বোধহয় দোলনের নতুন কোন চাল। ওকে পটানোর জন্যই এখন নাকে খত দিচ্ছে। এ মেয়ে মোটেই সুবিধের নয়। একেবারে পাক্কা অভিনয় করে ওর মন ভোলানোর চেষ্টা করছে। রজতের কাছে নিজের মন জয় করতে চায়। ও চক্করে আমি কিছুতেই পা দিচ্ছি না।
রজতকে এবার আরও কিছুটা অবাক করে দোলন বললো, "সিরিজার যে তোমাকে পেয়ে একটা হিল্লে হয়ে গেছে, তারজন্য আমি খুব খুশি। জানো তো দাদাবাবু?"
রজত ভাবছে, এ কোন কথা ও শুনছে দোলনের মুখ দিয়ে? সিরিজাকে নিয়ে যা কিনা এত জ্বলুনি। সেই কিনা আবার সিরিজার প্রতি দয়া দেখাচ্ছে মত পরিবর্তন করে? হঠাৎ এত মায়া মমতার উদয় হল সিরিজাকে নিয়ে? কি ব্যাপারটা, সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না।
এবার একটু কৌতূহল মুখ নিয়ে রজতকে ফাঁপরে ফেলে দোলন জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি সিরিজাকে ভালোবাসো দাদাবাবু? সত্যি করে বলো না। আমি তো সবই জানি। আর জেনেও তুমি কি ভাবছ, আমি হিংসে করছি সিরিজাকে নিয়ে? সিরিজা আর তুমি যদি বলো, এই ফ্ল্যাট ছেড়ে এক্ষুনি আমায় চলে যেতে, আমি তাও চলে যাবো। কিন্তু যাবার আগে একটি কথাই বলে যাবো। ওকে যখন পেয়েছ, তখন তুমি ওকে নিয়েই ভালো করে সুখে থাকো। তোমারও তো সিরিজা ছাড়া কেউ নেই। বৌদিমনি যখন এখানে থাকে না। তখন তোমাকে আর কে দেখবে বলো? সিরিজা আর তোমার মধ্যে যে সম্পর্কটা তৈরী হয়েছে, তাতে আমি দোষের কিছুই দেখি না। পুরুষমানু্ষেরা ওর মতন মেয়ে মানুষের শরীরটা দেখলে ছটফট করে উঠবেই। যা রসদ দিয়ে ওকে ভগবান এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে, তুমি খুব ভাগ্যবান, যে সিরিজার মতন মেয়েকে তুমি এ জীবনে পেয়েছ।"
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে দোলন এবার একটু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। রজতের মনে হল, যা একটা ফাঁড়া ছিল। সেটা বোধহয় এখন কেটে গেল।
নিজের মধ্যে যে গোমড়া ভাবটা এতক্ষণ ছিল, সেটা এবার কাটানোর চেষ্টা করছে রজত। দোলনই ওকে আরও সহজ করে দেবার জন্য বললো, "তুমি যদি আমাকে এখানে রেখে ওকে কোথাও নিয়ে বেরোও। বাইরে কোথাও ঘুরতে যাও। তাতেও আপত্তি নেই আমার তোমাদের কাছে। আমি চুপচাপ একটা কোনে বসে কাটিয়ে দেব। আর নিজের একটা বিকল্প ব্যাবস্থা হয়ে গেলে এ বাড়ী ছেড়ে আমিও চলে যাবো। শুধু তোমাদের সুখে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য এলাম। না এলেই মনে হচ্ছে ভালো হত।"
দোলন হঠাৎ সুর পাল্টে এমন কথা বলছে, রজতের তেমন কিছু মনেই হল না। উল্টে ও দেখলো রজতকে ইশারা করে দোলন বলছে, "তুমি ওর মাতাল স্বামীটাকে নিয়ে একদম চিন্তা কোরো না। ওকে এমন পট্টি পড়িয়ে দিয়েছি, ও আর সিরিজার হদিশই পাবে না এ জীবনে। কিছু হলে ও আমার কাছেই তো আসবে আবার। আর আমাকেও ও পাবে না এখন। জব্দ হবে ব্যাটা ভালোমতই।"
রজত কিছু বলছে না দেখে দোলন নিজেই বললো, "আচ্ছা তুমি বলো তো দাদাবাবু, ঐ মদ্যপটার সাথে কেন সিরিজা থাকবে? সিরিজার যা রুপ আছে, ওর তো কিছুই নেই। একটা দাড়িমুখ ওয়ালা কিম্ভূতর্কী মার্কা লোক। সে কিনা আশা করে সিরিজার মতন পরী থাকবে ওর সাথে। চাল নেই চুলো নেই। আবার সিরিজাকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। আমি তো ঐ মাতালটার হাত থেকে বাঁচবার জন্যই এখানে চলে এলুম। নইলে কি আর আসতুম? ঐ চালাঘরেই কাটিয়ে দিতাম বাকী জীবন।"
রজতের এতক্ষণ বাদে মুখ দিয়ে কথা বেরোলো। দোলনকে বললো, "তুমি চিন্তা কোরো না দোলন। আমি একটা ব্যবস্থা আজই করছি। তোমার থাকার কোন অসুবিধে হবে না। যে আসছে, সে আমার খুব ভালো বন্ধু। আমি তার কাছেই তোমাকে রাখার ব্যাবস্থা করবো। তোমার কোন অসুবিধে হবে না।"
দোলন বেশ আগ্রহ নিয়ে রজতকে জিজ্ঞাসা করলো, "কে আসছে গো দাদাবাবু? তোমার বন্ধু? কি নাম?"
রজত বললো, "ওর নাম দিবাকর। ও আসছে আমার এখানে। তোমাকে ভাবছি, ওর ওখানে পাঠিয়ে দেব আজকে। ও রাজী আছে।"
দোলন বুঝতে পারছে, রজত হয়তো সিরিজার জন্যই আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিয়েছে ব্যাপারটা। যতই হোক এক নারীর আগমনে যদি অন্য নারী সুখের ব্যাঘাত ঘটে যায়, তাহলে তো পুরুষমানুষকে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবেই। দোলন রজতের মনের কথাটা বলে, এতক্ষণে রজতকে সহজ করেছে। ভেবেছিল মেয়েটি বোধহয় বজ্জাতের হাড়। এখন বুঝতে পারছে দোলন কত ভালো। অন্যের সুখ দেখে ও কখনও হিংসে করে না। সে যতই নিজে কষ্ট পাক। সবাই তো আর কপালে সুখ নিয়ে এ পৃথিবীতে আসেনি। সিরিজার জন্য ভগবান বোধহয় এমন একটা লোককেই তপস্যা করিয়ে রেখেছিল। নইলে সিরিজাই বা যেচে এসে ধরা দেয়? এ বাড়ীর দরজা দোলন ওকে না চেনালে সিরিজার বোধহয় মুখই দেখা হত না এই দাদাবাবুর। বোদি মনির অবর্তমানে এই বাড়ীতে সিরিজাকে একা পেয়ে তখন কপালও হয়তো ফিরত না দাদাবাবুর। দুজনে দুজনকে পেয়েছে, এতেই ও খুশি। সিরিজা যদি বলে, এখনও ওর বাচ্চাটাকে একাই দেখভালো করতে পারবে দোলন। ওর কোন অসুবিধে হবে না।
রজতকে অবাক করে দোলন বললো, "তোমার বন্ধুটি নিশ্চয়ই ভালো? আসলে আমি তো চিনি না। তোমার কথায় বিশ্বাস করে যাই? অসুবিধে হবে না তো?"
দোলনকে আশ্বস্ত করে রজত বললো, "না তুমি দিবাকরকে দেখলেই বুঝতে পারবে, ও খুব ভালো। ভীষন পরোপকারী আর দরদী। তুমি সিরিজাকে জিজ্ঞাসা করে দেখ, ও তোমাকে বলবে, দিবাকরকে নিয়ে চিন্তা করার মতন কিছু নেই। তুমি নিশ্চিন্তে ওর ওখানে থাকতে পারবে। আমি তো সেইজন্যই ঠিক করেছি এটা।"
সিরিজা বাথরুম থেকে বেরোল। দোলন এবার রজতকে আরও চমকে দিয়ে শেষবারের মতন বললো," আমি যদি এ ঘরটায় থাকি। ঐ সোফাটায়। আর তুমি আর সিরিজা, ভেতরের ঘরটায়, তাহলেও কি অসুবিধে হবে? আমি তো রাত্তিরের জন্য ঐ ঘরটা তোমাদের ছেড়েই দেব। সিরিজা তোমার সাথে থাকবে। আমি এ ঘরটায় একা একা। তাহলেও কি আপত্তি হবে তোমার? শুধু শুধু বন্ধুকে কেন কষ্ট দেবে? তার চেয়ে আমি বরং এখানে....."
রজত দেখলো সিরিজাও বেশ অবাক হয়ে গেছে দোলনের কথা শুনে। এতক্ষণ বসে বসে যা আওড়াচ্ছিল, তা বোধহয় শোনে নি ভেতর থেকে। শুনলে আরও চমকে উঠতো বোধহয়।
রজত একটু অপ্রস্তুতে পড়ে তাকাল সিরিজার দিকে। সিরিজাও তাকাল রজতের দিকে। ওকে বললো, "থাক না। ও যখন যেতে না চাইছে, তখন জোর করে পাঠিয়ে লাভ কি? বরং ও এখানেই থাকুক। তোমার কোন অসুবিধে হবে না।"
রজত ভাবল, সে তো নয় বোঝা গেল। কিন্তু সবকিছু জলের মতন সহজ হল কি? ওর যা সেক্স। দোলনের সামনে যখন তখন সিরিজাকে চটকাচটকী করতে পারবে কি? এ মেয়েটাই বা কি ভাববে? দাদাবাবুর সত্যি লজ্জ্বা শরম নেই। সিরিজাকে নিয়ে বেপোরোয়া ভাবে সহবাসটা এইকটা দিন ও যা করছিল, তাতে তো ব্যাঘাত ঘটে গেল। শুধু রাতের বেলাটা দোলন ওদের কে রেহাই দিয়ে দেবে, আর দিনের বেলা রজত কি তাহলে শুকনো মুখে বসে থাকবে? ওর সখ আল্লাদ পূরণ হবে কি করে? দোলন যদিও ব্যাপারটা সব বুঝে গেছে। তাহলেও ওর সামনে তো আর বেহায়াপনাটা করা যায় না। দোলন এতে নিজেই লজ্জ্বা পাবে। তারপর দুম করে না বলে যদি এ ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যায়? তাহলে আবার আর এক বিপত্তি। তখন কচকচানি যৌনতা সব মাথায় তুলে সিরিজা আর ওকে, দুজনকেই একসাথে বেরিয়ে পড়তে হবে দোলনকে খোঁজার উদ্দেশ্যে। এত বড় রিস্ক সত্যি নেওয়া যায় না। কিছু একটা ব্যবস্থা ওকে করতেই হবে।
রজতের মনের মধ্যে মেয়েমানুষের প্রতি লোভ, এই অতিরিক্ত নারী বাসনা আর একাধিক নারীতে নিজেকে প্রলুব্ধ করা, সব উধাও হয়ে গেছে সিরিজা আসার পর থেকে। দোলন, ওকে দেখে হয়তো ভাবছে, এই লোকটা সিরিজাকে একা পেয়ে যাচ্ছেতাই ভাবে ওকে ভোগ করছে। সিরিজার যা শরীর, সেই শরীরে ডুব দেওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় কামপাগল পুরুষমানুষের কাছে। বউ নেই যখন নিশ্চয়ই নষ্টামি করেছে, সিরিজার আগুনের মতন শরীরটা নিয়ে। মুখে আর হাবভাবে যতই সাধুপুরুষ ভাব দেখাক, লোকটা নিশ্চয়ই কামপিপাসু। নইলে এইকটা দিন সিরিজাকে নিয়ে একা একা এই বাড়ীতে কাটিয়ে দিল? অথচ দোলন বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারেনি ব্যাপারটা।
রজত ভালোমতই বুঝতে পারছিল, সিরিজাকে নিয়ে বাকী জীবন কাটাতে হলে, একে একে অনেক বাঁধাই পেরোতে হবে ওকে। ঝঞ্জাট, ঝ্যামেলার যেন শেষ নেই জীবনে। এক একটা করে সব এসে জুটছে ওর এই টু রুম ফ্ল্যাটে। দিবাকরকে বিশ্বাস করে অভ্যর্থনা করলো। সেও এসে রেশমীর বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গেল সিরিজার মনে। শ্বশুড় মশাই আর বউ রীতার হাত থেকেও রেহাই নেই। ঘাড় থেকে নেমেও নামছে না শেষ পর্যন্ত। কখন যে আবার এই ফ্ল্যাটে এসে হানা দেবে কে জানে? সিরিজাকে নিয়ে একান্তে যে একটু মস্তি করবে তারও উপায় নেই। এখন আবার এসে জুটেছে এই দোলন। এ যে কি খেল দেখাবে শেষ পর্যন্ত কে জানে? বাকী রইলো সিরিজার মাতাল স্বামী। সেও যদি আবার এই ফ্ল্যাটে এসে কখনও হানা দেয়? কিছু বিশ্বাস নেই। লিস্টে আর কার কার নাম আছে কে জানে?
রজত মনে মনে একটা ফন্দী আঁটছিল বসে বসে। এই ফ্ল্যাটটা যদি ছেড়ে দিয়ে সিরিজাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া যায়, তাহলে কেমন হয়? সব বাধা বিপত্তির অবসান এক নিমেশে। সবার চোখের আড়ালে চলে গেলে তখন আর টেরই পাবে না কেউ, ওর ব্যক্তিগত জীবনে সিরিজাকে নিয়ে ও কি করছে? এখানে থাকলেই এরা থেকে থেকে খালি আসবে আর রজতের সুখের বারোটা বাজাবে। তার থেকে বরং.....
দোলন বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়িয়ে বুকে জড়িয়ে আবার বসার ঘরে চলে এল। সোফায় শোয়ালো সিরিজার বাচ্চাটাকে। এবার রজতের দিকে তাকালো সোজাসুজি দৃষ্টিতে। রজত ওকে দেখেও না দেখার ভান করছে। ওর মনের মধ্যে শুধু সিরিজা আর সিরিজা। অন্য কোন নারীর প্রতি দূর্বলতা আর কোনভাবেই অবশিষ্ট নেই। শুধু বাথরুমের ভেতর থেকে সিরিজা একটু পরেই বেরোবে, ও যেন তার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
দোলন ওর প্রতি রজতের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য ইচ্ছে করেই ওকে বললো, "আমি যতই নিজের মুখপোড়া স্বামীটাকে নিয়ে হাপিত্যেশ করি, আমার কষ্ট আর কেউ বুঝবে না। আমি তো আর সিরিজার মতন নই। ও যে স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছায় এখানে চলে এল। আমি হলে কি পারতুম? তাই তো নিজের জ্বালায় মরছি। এখন দেখছি সিরিজাই ঠিক আর আমি ভুল। তখন যদি একবার ওর মতিগতিটা একটু বুঝতে পারতুম, তাহলে হয়তো আমিই ওকে ছেড়ে চলে যেতুম আগে।"
রজত কোন উত্তর দিচ্ছে না দোলনের কথায়। ভাবখানা এমন, কথায় কথা বাড়ালে নিজেই না আবার ফেঁসে যায়। মনের সুখে সিগারেট টানতে টানতে ও এবার হাতে মোবাইলটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো। দোলন যা বলেছে একটু আগে, ও এক কান দিয়ে ঢুকিয়েছে, আর এক কান দিয়ে বার করে দিয়েছে। এ মেয়ের সাথে মুখ লাগানোর কোন ইচ্ছা ওর আপাতত নেই। শুধু দিবাকর আসা অবধি অপেক্ষা। তারপর ওকে দিবাকরের বাড়ীতে স্থানান্তর করা। দোলনের সব দুলুনি বেরিয়ে যাবে সকাল পেরিয়ে বিকেলটা হলেই। ওর সব চালাকী আমি বের করে দেব, আর কয়েক ঘন্টা পরেই। দোলনও থাকবে না। আর থাকবে না এই ফ্ল্যাটটাও। কদিন বাদেই সিরিজাকে নিয়ে আমি চম্পট দেব এখান থেকে।
রজতকে অবাক করে দোলন এবার বললো, "দাদাবাবু তুমি আমার কথায় রাগ করেছো? আমি খুব ট্যারা ট্যারা কথা বলছিলাম, তোমাকে অস্বস্তিতে ফেলেছি। সিরিজা এখানে তোমার কাছে এসে রয়েছে বলে আমি হিংসে করছি। তুমি খুব চটে গেছ বোধহয় আমার ওপর? আমি আসলে মেয়েটা এমনই। মুখের ওপর শুধু দুমদাম করে বলে ফেলি। তারপরে আফসোশ করি। আমি কথা দিচ্ছি, আর কিছু ট্যারা বাঁকা কথা বার্তা বলব না তোমায়। নাকে খত দিলাম। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও দাদাবাবু।
রজতের মনে হল, এটা বোধহয় দোলনের নতুন কোন চাল। ওকে পটানোর জন্যই এখন নাকে খত দিচ্ছে। এ মেয়ে মোটেই সুবিধের নয়। একেবারে পাক্কা অভিনয় করে ওর মন ভোলানোর চেষ্টা করছে। রজতের কাছে নিজের মন জয় করতে চায়। ও চক্করে আমি কিছুতেই পা দিচ্ছি না।
রজতকে এবার আরও কিছুটা অবাক করে দোলন বললো, "সিরিজার যে তোমাকে পেয়ে একটা হিল্লে হয়ে গেছে, তারজন্য আমি খুব খুশি। জানো তো দাদাবাবু?"
রজত ভাবছে, এ কোন কথা ও শুনছে দোলনের মুখ দিয়ে? সিরিজাকে নিয়ে যা কিনা এত জ্বলুনি। সেই কিনা আবার সিরিজার প্রতি দয়া দেখাচ্ছে মত পরিবর্তন করে? হঠাৎ এত মায়া মমতার উদয় হল সিরিজাকে নিয়ে? কি ব্যাপারটা, সেটা তো বোঝা যাচ্ছে না।
এবার একটু কৌতূহল মুখ নিয়ে রজতকে ফাঁপরে ফেলে দোলন জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি সিরিজাকে ভালোবাসো দাদাবাবু? সত্যি করে বলো না। আমি তো সবই জানি। আর জেনেও তুমি কি ভাবছ, আমি হিংসে করছি সিরিজাকে নিয়ে? সিরিজা আর তুমি যদি বলো, এই ফ্ল্যাট ছেড়ে এক্ষুনি আমায় চলে যেতে, আমি তাও চলে যাবো। কিন্তু যাবার আগে একটি কথাই বলে যাবো। ওকে যখন পেয়েছ, তখন তুমি ওকে নিয়েই ভালো করে সুখে থাকো। তোমারও তো সিরিজা ছাড়া কেউ নেই। বৌদিমনি যখন এখানে থাকে না। তখন তোমাকে আর কে দেখবে বলো? সিরিজা আর তোমার মধ্যে যে সম্পর্কটা তৈরী হয়েছে, তাতে আমি দোষের কিছুই দেখি না। পুরুষমানু্ষেরা ওর মতন মেয়ে মানুষের শরীরটা দেখলে ছটফট করে উঠবেই। যা রসদ দিয়ে ওকে ভগবান এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে, তুমি খুব ভাগ্যবান, যে সিরিজার মতন মেয়েকে তুমি এ জীবনে পেয়েছ।"
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে দোলন এবার একটু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। রজতের মনে হল, যা একটা ফাঁড়া ছিল। সেটা বোধহয় এখন কেটে গেল।
নিজের মধ্যে যে গোমড়া ভাবটা এতক্ষণ ছিল, সেটা এবার কাটানোর চেষ্টা করছে রজত। দোলনই ওকে আরও সহজ করে দেবার জন্য বললো, "তুমি যদি আমাকে এখানে রেখে ওকে কোথাও নিয়ে বেরোও। বাইরে কোথাও ঘুরতে যাও। তাতেও আপত্তি নেই আমার তোমাদের কাছে। আমি চুপচাপ একটা কোনে বসে কাটিয়ে দেব। আর নিজের একটা বিকল্প ব্যাবস্থা হয়ে গেলে এ বাড়ী ছেড়ে আমিও চলে যাবো। শুধু তোমাদের সুখে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য এলাম। না এলেই মনে হচ্ছে ভালো হত।"
দোলন হঠাৎ সুর পাল্টে এমন কথা বলছে, রজতের তেমন কিছু মনেই হল না। উল্টে ও দেখলো রজতকে ইশারা করে দোলন বলছে, "তুমি ওর মাতাল স্বামীটাকে নিয়ে একদম চিন্তা কোরো না। ওকে এমন পট্টি পড়িয়ে দিয়েছি, ও আর সিরিজার হদিশই পাবে না এ জীবনে। কিছু হলে ও আমার কাছেই তো আসবে আবার। আর আমাকেও ও পাবে না এখন। জব্দ হবে ব্যাটা ভালোমতই।"
রজত কিছু বলছে না দেখে দোলন নিজেই বললো, "আচ্ছা তুমি বলো তো দাদাবাবু, ঐ মদ্যপটার সাথে কেন সিরিজা থাকবে? সিরিজার যা রুপ আছে, ওর তো কিছুই নেই। একটা দাড়িমুখ ওয়ালা কিম্ভূতর্কী মার্কা লোক। সে কিনা আশা করে সিরিজার মতন পরী থাকবে ওর সাথে। চাল নেই চুলো নেই। আবার সিরিজাকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। আমি তো ঐ মাতালটার হাত থেকে বাঁচবার জন্যই এখানে চলে এলুম। নইলে কি আর আসতুম? ঐ চালাঘরেই কাটিয়ে দিতাম বাকী জীবন।"
রজতের এতক্ষণ বাদে মুখ দিয়ে কথা বেরোলো। দোলনকে বললো, "তুমি চিন্তা কোরো না দোলন। আমি একটা ব্যবস্থা আজই করছি। তোমার থাকার কোন অসুবিধে হবে না। যে আসছে, সে আমার খুব ভালো বন্ধু। আমি তার কাছেই তোমাকে রাখার ব্যাবস্থা করবো। তোমার কোন অসুবিধে হবে না।"
দোলন বেশ আগ্রহ নিয়ে রজতকে জিজ্ঞাসা করলো, "কে আসছে গো দাদাবাবু? তোমার বন্ধু? কি নাম?"
রজত বললো, "ওর নাম দিবাকর। ও আসছে আমার এখানে। তোমাকে ভাবছি, ওর ওখানে পাঠিয়ে দেব আজকে। ও রাজী আছে।"
দোলন বুঝতে পারছে, রজত হয়তো সিরিজার জন্যই আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিয়েছে ব্যাপারটা। যতই হোক এক নারীর আগমনে যদি অন্য নারী সুখের ব্যাঘাত ঘটে যায়, তাহলে তো পুরুষমানুষকে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবেই। দোলন রজতের মনের কথাটা বলে, এতক্ষণে রজতকে সহজ করেছে। ভেবেছিল মেয়েটি বোধহয় বজ্জাতের হাড়। এখন বুঝতে পারছে দোলন কত ভালো। অন্যের সুখ দেখে ও কখনও হিংসে করে না। সে যতই নিজে কষ্ট পাক। সবাই তো আর কপালে সুখ নিয়ে এ পৃথিবীতে আসেনি। সিরিজার জন্য ভগবান বোধহয় এমন একটা লোককেই তপস্যা করিয়ে রেখেছিল। নইলে সিরিজাই বা যেচে এসে ধরা দেয়? এ বাড়ীর দরজা দোলন ওকে না চেনালে সিরিজার বোধহয় মুখই দেখা হত না এই দাদাবাবুর। বোদি মনির অবর্তমানে এই বাড়ীতে সিরিজাকে একা পেয়ে তখন কপালও হয়তো ফিরত না দাদাবাবুর। দুজনে দুজনকে পেয়েছে, এতেই ও খুশি। সিরিজা যদি বলে, এখনও ওর বাচ্চাটাকে একাই দেখভালো করতে পারবে দোলন। ওর কোন অসুবিধে হবে না।
রজতকে অবাক করে দোলন বললো, "তোমার বন্ধুটি নিশ্চয়ই ভালো? আসলে আমি তো চিনি না। তোমার কথায় বিশ্বাস করে যাই? অসুবিধে হবে না তো?"
দোলনকে আশ্বস্ত করে রজত বললো, "না তুমি দিবাকরকে দেখলেই বুঝতে পারবে, ও খুব ভালো। ভীষন পরোপকারী আর দরদী। তুমি সিরিজাকে জিজ্ঞাসা করে দেখ, ও তোমাকে বলবে, দিবাকরকে নিয়ে চিন্তা করার মতন কিছু নেই। তুমি নিশ্চিন্তে ওর ওখানে থাকতে পারবে। আমি তো সেইজন্যই ঠিক করেছি এটা।"
সিরিজা বাথরুম থেকে বেরোল। দোলন এবার রজতকে আরও চমকে দিয়ে শেষবারের মতন বললো," আমি যদি এ ঘরটায় থাকি। ঐ সোফাটায়। আর তুমি আর সিরিজা, ভেতরের ঘরটায়, তাহলেও কি অসুবিধে হবে? আমি তো রাত্তিরের জন্য ঐ ঘরটা তোমাদের ছেড়েই দেব। সিরিজা তোমার সাথে থাকবে। আমি এ ঘরটায় একা একা। তাহলেও কি আপত্তি হবে তোমার? শুধু শুধু বন্ধুকে কেন কষ্ট দেবে? তার চেয়ে আমি বরং এখানে....."
রজত দেখলো সিরিজাও বেশ অবাক হয়ে গেছে দোলনের কথা শুনে। এতক্ষণ বসে বসে যা আওড়াচ্ছিল, তা বোধহয় শোনে নি ভেতর থেকে। শুনলে আরও চমকে উঠতো বোধহয়।
রজত একটু অপ্রস্তুতে পড়ে তাকাল সিরিজার দিকে। সিরিজাও তাকাল রজতের দিকে। ওকে বললো, "থাক না। ও যখন যেতে না চাইছে, তখন জোর করে পাঠিয়ে লাভ কি? বরং ও এখানেই থাকুক। তোমার কোন অসুবিধে হবে না।"
রজত ভাবল, সে তো নয় বোঝা গেল। কিন্তু সবকিছু জলের মতন সহজ হল কি? ওর যা সেক্স। দোলনের সামনে যখন তখন সিরিজাকে চটকাচটকী করতে পারবে কি? এ মেয়েটাই বা কি ভাববে? দাদাবাবুর সত্যি লজ্জ্বা শরম নেই। সিরিজাকে নিয়ে বেপোরোয়া ভাবে সহবাসটা এইকটা দিন ও যা করছিল, তাতে তো ব্যাঘাত ঘটে গেল। শুধু রাতের বেলাটা দোলন ওদের কে রেহাই দিয়ে দেবে, আর দিনের বেলা রজত কি তাহলে শুকনো মুখে বসে থাকবে? ওর সখ আল্লাদ পূরণ হবে কি করে? দোলন যদিও ব্যাপারটা সব বুঝে গেছে। তাহলেও ওর সামনে তো আর বেহায়াপনাটা করা যায় না। দোলন এতে নিজেই লজ্জ্বা পাবে। তারপর দুম করে না বলে যদি এ ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যায়? তাহলে আবার আর এক বিপত্তি। তখন কচকচানি যৌনতা সব মাথায় তুলে সিরিজা আর ওকে, দুজনকেই একসাথে বেরিয়ে পড়তে হবে দোলনকে খোঁজার উদ্দেশ্যে। এত বড় রিস্ক সত্যি নেওয়া যায় না। কিছু একটা ব্যবস্থা ওকে করতেই হবে।