Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ঝর্ণা The Untold story ! সমাপ্ত
#47
মঞ্জু সোজা গিয়ে আগে ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরল ! বেশ কিছুক্ষণ পরে ওনাকে ছেড়ে দিয়ে ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলো ! ঠিক তখনি আমি আবিস্কার করলাম যে ভদ্র মহিলাম পা দুটো অতিশয় ক্ষীন এবং সেগুলো সোফার উপরি জড়ো করা অবস্থাতেই আছে !
- থাক মা থাক ! এতদিন পরে আমাদের কথা মনে পড়ল?? আসিস না কেন?? বলতে বলতেই আমার উপর ওনার চোখ পড়ল ! আমাকে দেখেই উনি বলে উঠলেন " এটি কে??"
- ও আমার দাদা ! সুনন্দ ! আজ এসেছে ! তাই তো ওকে বললাম চল অনেক দিন মাসিমার সাথে দেখা হয় নি ! আমাকে নিয়ে চল !! বলেই মঞ্জু আমাকে চোখের ইশারায় প্রনাম করতে বলল !! আমিও বাধ্য ছেলের মত গিয়ে ভদ্রমহিলাম রুগ্ন পায়ে প্রনাম করলাম !
- বেঁচে থাক বাবা ! সুখে থাক !!! বোসো বোসো ! আরে ও সরলা !! ওদের কে একটু মিষ্টি মুখ করা ! আজ প্রথম এই ছেলেটি আমাদের বাড়িতে এলো !!
ভদ্রমহিলার এ হেন মাতৃসুলভ আচরণে আমি অবাক হয়ে গেলাম ! এত ধনী ঘরের বউ হয়েও কত সুন্দর মিষ্টি ব্যবহার ! সত্যি লেখকেরা তাদের গল্পে বা উপস্যাসে যে বনেদী ধনীদের কথা বলেন তাহলে সেগুলো মিথ্যা নয় ! এনারা সত্যিই ধার্মিক, বত্স্ল্যপরায়ন ! এবং খুবই বিনম্র !! ভদ্রমহিলা পঙ্গু হলেও ওনার মধ্যে কোনো বিকার নেই ! কি সুন্দর ভাবে নিজের জীবন টাকে মানিয়ে নিয়েছেন ! আমি সতিই মুঘ্ধ হয়ে গেলাম ! আবেগের তাড়নায় আমি ভদ্রমহিলাকে আবার প্রনাম করে বসলাম !!
- একি বাবা ! একি করছ ! এই তো প্রনাম করলে ! আবার কেন??
কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না ! হটাতই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল "আপনাকে দেখতে ঠিক যেন মা দুর্গার মত ! তাই আপনাকে দূর্গা মা ভেবে আরও একবার প্রনাম করলাম !!"
- বা তুমি তো বেশ সুন্দর কথা বলতে জানো !! কিসে পড়?? মানে কোন ক্লাসে পড়??
- আমি এইবার হায়ার সেকেন্ডারী দেব !
- বা বা ! বেশ ভালো ! তা তোমার সাবজেক কি?? সাইন্স না কমার্স ?
- আমি সাইন্স নিয়ে পরছি ! ইচ্ছা আছে আগে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার হব !!
- নিশ্চই হবে বাবা ! কিছু হতে গেলে তার জন্য একটা লক্ষ্য ঠিক করতে হয় তবেই সেই লক্ষে পৌঁছনো যায় !! তবে তোমাকে একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না করো !
- না না বলুন না ! আপনার কথা শুনতে আমার খুব ভালো লাগছে !
- যদি তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড় তাহলে অতি অবস্যই যেন ইনসট্রুমেসন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পোরো ! কারণ আমাদের দেশে ইনসট্রুমেসন ইঞ্জিনিয়ার খুব কম পাওয়া যায় ! তাই ওই পোড়ার মুখো জার্মান গুলো এখনো আমাদের টেকনোলোজি কে অবজ্ঞা করে !!
ভদ্র মহিলার মুখে টেকনোলোজির কথা শুনে আমি রীতিমত স্তম্ভিত !! আমার অবস্থা বুঝতে পেরে মঞ্জু বলে উঠলো " তুই কি ভেবেছিস দাদা? মাসিমা ভারতের প্রথম ইনসট্রুমেসন ইঞ্জিনিয়ার অফ ১৯৫৩ ফ্রম ইতালি !! বলেই থম মেরে গেল !!
বেশ বুঝতে পারলাম নিশ্চই এর পরে কোনো করুন ইতিহাস আছে যেটা মোটেই সুখকর নয় !!
কথা ঘোরাতে মঞ্জু জিজ্ঞাস্সা করলো ! মাসিমা ! চৈতালি কোথায়??
- আর বলিস না ! কাল অঞ্জলি এসেছে ! ও আর মঞ্জু শোলে দেখতে গেছে মঞ্জুশ্রী তে ! এই বার এসে পরবে !!
মঞ্জুশ্রী ওখানকার একটা বিখ্যাত সিনেমা হল ! ওখানকার বললে ভুল হবে ! সম্পূর্ণ জেলায় একটি মাত্র হল যেটা সম্পূর্ণ এসি ! আর আমি যে সময়ের কথা বলছি সেই সময় এসি হলে বসে সিনেমা দেখা ছিল সবার সপ্ন ! এখন না হয় অনেক মাল্টিপ্লেক্স হয়ে গিয়েছে ! আর এখন বোধ হয় এমন কোনো সিনেমা হল নেই যাতে এসি নেই ! কিন্তু তখনকার দিনে কলকাতার মেট্রো হল ছাড়া আর কোনো সিনেমা হলে এসি ছিল না ! একমাত্র হুগলি জেলার ওই একটি হলি ছিল এসি হল ! আর সেটা নিয়ে সবার অনেক গর্ব ছিল !! যাই হোক আমি এখানে মঞ্জুশ্রী হলের বিবরণ লিখতে বসিনি !
-অঞ্জলি দি এসেছে?? মঞ্জুর প্রশ্নে আমার চটক ভাঙ্গলো !!
- হ্যা ! বেশ কয়েক দিন থাকবে ! তারপর আবার চলে যাবে ! তুই তো জানিস ও একমাত্র মেয়ে সরলার ! ও সরলাকে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু সরলা কিছুতেই আমাকে ছেড়ে যাবে না !! তোরা খুব বেশি বোর হচ্ছিস নাতো?? বোর হলে খুকুমনির ঘরে চলে যা ! কমপিউটার খুলে গেম খেলতে পারিস আর না হলে টিভি দেখতে পারিস আর না হলে গল্পের বইও পড়তে পারিস !!
মঞ্জু বলল "সেই ভালো ! আমরা বরণ চৈতালির ঘরে যাই ! ও এলে সোজা ওখানেই পাঠিয়ে দেবেন ! আমাদের আবার তৃপ্তিদির বাড়িতে যেতে হবে !! ওখানে রাতে দিনারের নিমন্ত্রণ রয়েছে !!"
- কি ব্যাপার বলত ?? খুকুমনির বাবারও নেমন্তন্ন ওখানে আর খুকুমনির নেমন্তন্ন সাথে অন্জলিকেও নেমন্তন্ন করা হয়েছে ওখানে !!
- কি করে জানব?? আমার দাদাকেও তো ফোন করে ডেকে এনেছে সেই জন্যই !!
- তৃপ্তির কি আজ জন্মদিন?? যাই হোক ভালই হলো ! তোরাও ওখানে যাবি ! যা তোরা বরণ খুকুমনির ঘরে গিয়ে বোস আমি সরলাকে দিয়ে তোদের জলখাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি !
মঞ্জু আর কোনো কথা না বলে আমাকে ইশারায় ওকে অনুসরণ করতে বলল ! আমিও মঞ্জুর পিছু পিছু চৈতালির ঘরে গিয়ে পৌঁছলাম ! চৈতালির ঘরে ঢুকে আমার তো চক্ষু চরক গাছ !! এটা কোনো মেয়ের ঘর না ফাইভ স্তর হোটেলের রুম?? এত ঐসর্জ এত আরাম এত বিলাসবহুল ঘরের কল্পনাও আমরা করতে পারিনা !! মঞ্জু সোজা গিয়ে চৈতালির বিছানাতে শুয়ে পড়ল ! হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকলো !! আমি মঞ্জুর ডাকে সারা দিতে পারছিলাম না ! কারণ এইরকম পরিবেশে আমি কোনদিন পরিনি ! থাকতে না পেরে আমি মঞ্জু কে জিগাস্সা করলাম "এ তুমি কোথায় নিয়ে এলে?? চৈতালি রা এত বড়লোক?? আর ভদ্রমহিলা একজন ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্তেও কি করে পঙ্গু হলেন? এই অঞ্জলি দিদিটাই বা কে আর সরলা মাশিটাই বা কে?? "
মঞ্জু আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে উত্তর দিল " অনেক বড় ইতিহাস !! এই বাড়ির প্রতিটি ইঁট পাথরে অনেক কান্না, অনেক না বলা বেদনা লুকিয়ে আছে !! শুনলে তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে !!"
- না তুমি বল ! আমার প্রচন্ড কৌতুহল হচ্ছে !!
- ঐযে দেখলে মাসীমা কে ! উনি একজন অতি বিদুষী মহিলা ছিলেন ! চৈতালির বাবাও ইতালি তে পড়াশোনা করেছেন ! সেখানেই মাসিমার সাথে আলাপ আর সেই থেকেই প্রেম ! বাড়ির অমতে সেখানেই বিয়ে করেন ! কারণ মাসিমার ছিলেন কায়স্থ ! তার উপর এই বংশে কোনো স্বাধীনচেতা মেয়েকে বউ করে নিয়ে আসার প্রথা ছিল না !! কিন্তু বাপের এক ছেলে হওয়াতে কারুর আর কিছুই করার ছিল না বিয়ে না মেনে ! কিন্তু বিয়ের একবছরের মাথায় যখন চৈতালি পেতে হটাত মাসিমা সিরি থেকে পরে যান ! অনেক কাঠ খর পুড়িয়ে ওনাকে বাঁচানো হয় ! চৈতালিও সুস্থ ভাবে জন্ম নেয় ! কিন্তু মাসিমার পা দুটো প্যারালিসিস হয়ে যায় ! সেই থেকেই মাসিমা ...........
- খুব দুক্ষের কথা ! কিন্তু ওই সরলা মাসি?
কথার মাঝখানেই দরজায় টোকার শব্দ !! " আসব??"
- ও মাসি ! তুমিও না !! কতবার তোমাকে বলেছি আমাদের সাথে ফরমালিটিস করবে না !
- তোমরা বললে কি হবে!! যেটা নিয়ম সেটাই করছি ! কারুর কাছে আসার আগে তার পারমিসন নিতে হয় ! বলেই সরলা মাসি ভিতরে ঢুকলেন ! পিছনে একজন চাকর জাতীয় মহিলা ট্রে তে করে প্রচুর স্ন্যাকস আর চা নিয়ে ঢুকলো একেবারে রাজকীয় স্টাইলে !! আমাদের জন্য চায়ের পটে করে চা নিয়ে আসা হয়েছে একদম হোটেলের কায়দায় ! কাপে লিকার চা ঢেলে সরলা পিসি জিজ্ঞাস্সা করলো কত তা দুধ আর কতটা চিনি দেবেন ! আমি বললাম একদম নরমাল ! তিনি চা ঢেলে চামচ দিয়ে গুলিয়ে আমাদের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে স্ন্যাক্সের প্লেট টা মাঝখানে রাখলেন !
-তোমরা বসে বসে চা খাও আর ১৫ মিনিটের মধ্যেই ওরা এসে যাবে ! বলেই তিনি দরজা টা টেনে ভেজিয়ে দিয়ে কাজের মহিলাটিকে নিয়ে চলে গেলেন !! আমি মঞ্জুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম "কি হলো বললে নাতো?"
- কি বলব?
-ওই যে সরলা মাসির কথা আর অঞ্জলি দিদির কথা??
- সরলা মাসি মাসিমা মানে চৈতালির মায়ের গ্রামের মেয়ে ! চত বেলা থেকেই ওদের বন্ধুত্ব ! কিন্তু পরে পসনার জন্য মাসিমা কে বিদেশে চলে যেতে হয় ! যখন নিজে বিয়ে করে ফিরে আসেন তখন সরলা মাসিরও বিয়ে হয়ে গেছে ! কিন্তু বিয়ের মাত্র আট বছরের মাথায় ওনার স্বামী হটাত খুন হয়ে যান ! তখন অঞ্জলি দিদি ৭ বছরের ! ওনাদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছিল ! সরলা মাসির ভায়েরাও ওনাদের আশ্রয় দেন নি ! কোনো রকমে লোকের বাড়ি কাজ করে সরলা মাসি কে জীবন কাটাতে হচ্ছিল ! সেই সময় মাসীমা নিজের গ্রামে ঘুরতে গেলে সব জানতে পেরে সরলা মাসি কে এখানে নিয়ে আসেন অঞ্জলি দিদিকে পরা লেখা শেখান ! পরে অঞ্জলি দিদিও মাসিমার অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ! কিন্তু এক বছরের মাথাতেই ধরা পরে ওনার স্বামীর ক্যান্সার ! বেশি দিন বাঁচে নি ! তারপর থেকে অঞ্জলি দিদি বম্বে তে একটা কোম্পানি তে চাকরি করে !!
- ধুর আমি সেটা বলছি না ! সরলা মাসি কে দেখে কিন্তু কাজের লোক বলে মনে হয় না ! অন্য কিছু সম্পর্ক নিশ্চই আছে !!
- মঞ্জু একটা চোখ ছোট করে ঠোঁটের কোনে একটা বেঁকা হাসি নিয়ে বলল " বা বা ! দেখেই রহস্সের গন্ধ পাচ্ছ?"
- না মার যেন মনে হলো ওনার ব্যবহারে একটা কর্তিত্বের আভাস রয়েছে !!
- অনেক দিন এখানে আছে বলে হয়ত....... মঞ্জু বলে উঠলো !!
আমাদের কথা শেষ হয় নি ! ঠিক তখনি চৈতালি ধরম করে দরজা খুলে ঢুকে মঞ্জু কে জড়িয়ে ধরল আর ওর গালে চকাস চকাস করে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিল !! আমাকে দেখেই একটু চমকে গিয়ে বলে উঠলো ! " আরে সুনন্দ দা? তুমিও এসেছ??
আমি চৈতালি কে চিনতে পারলাম ! চৈতালিও আমাদের সাথে দাজিলিং গেছিল ! আর চৈতালির গার্জেন হয়ে গেছিলেন আমাদের লাহিড়ি দা ! তার মানে লাহিড়ি দা হচ্ছে চৈতালির বাবা !! সত্যিই আমি একটা বুদ্ধু !!
- তুমি কিন্তু এই ক দিনে আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গেছ ! তোমাকে দেখেই লাইন মারতে ইচ্ছা করছে ! কি রে মঞ্জু লাইন মারব নাকি তোর দাদার সাথে !! চৈতালি বলে উঠলো !
-চেষ্টা করে দেখতে পারিস ! তার আগে জেনে নে ও আবার অন্য কোথাও লাইন দিয়ে বসে নেই তো ! বলেই মঞ্জু আমাকে চোখ মারলো ! আমিও মঞ্জু কে চোখ মেরে বললাম "চেষ্টা করে দেখতে পারো !! ফ্রি তে যা পাওয়া যায় আমি তাই নিয়ে নি !!"
-

- আমি কিন্তু ফ্রি তে কাউকে কিছু দিই না ! কিছু দিলে কিছু নিয়ে নিই ! সেটা যেন ভুলে যেওনা !! চুটল হেসে চৈতালি বলে উঠলো !!
আমাদের মধ্যে এক প্রস্থ হাসির ফওয়ারা ছুটল ! হটাত তার মাঝেই মঞ্জু জিজ্ঞাস্সা করলো " কি রে তৃপ্তিদির বাড়ি যাবি না?"
- হ্যা যাব তো ! বাবা এখুনি এসে পড়বে তারপর আমরা যাব ! আমাদের সাথে আজ অঞ্জলি দিও যাবে !! অঞ্জলি দি কি করে তৃপ্তি দিকে চিনলো? আমি মনে মনে ভাবতে থাকলাম ! প্রর্ক্ষনেই মনে পরে গেল যে অঞ্জলি দিও ওই একই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছে ! আর পড়াশোনাতে অঞ্জলি দি নাকি স্কুলের টপার ছিল ! এটা পরে আমি মঞ্জুর মুখ থেকে শুনেছিলাম ! বেশ কিছুক্ষণ গল্পে গল্পে আমাদের সময় কেটে গেল ! এসেছিলাম কিছু করতে আর হয়ে গেল অন্য কিছু ! তবুও বেশ ভালই লাগছিল ! আবার চৈতালির ঘরের দরজায় টোকা ! সেই কাজের মহিলাটি গলা বাড়িয়ে বলে উঠলো " দিদিমনি ! বাবু নিচে ডাকছেন ! " বলেই বেরিয়ে গেল !!
- চল নিচে চল ! বাবা এসে গেছেন ! এবার আমরা বেরুব !!
সিরি দিয়ে নিচে নামতেই লাহিড়ি দা আমাকে দেখে ফেললেন ! অতি উত্সাহে চেঁচিয়ে উঠলেন " আরে সুনন্দ বাবু যে !! তুমি যে বলে ছিলে আসবে না ! এলে তাহলে ! আজকের পার্টি খুব জমবে !" বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন !! চৈতালির বাবার এমন ব্যবহারে ড্রইংরুমে উপস্থিত সবাই চমকে গেল ! যে লোকটার ভয়ে পুরো বাড়িটা ঠথস্ত থাকে সেই লোকটা প্রাণ খুলে উচ্চস্বরে হেসে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরাতে সবাই খুব অবাক ! চ্জ্পিতালির মায়ের দিকে তাকিয়ে লাহিড়ি দা বলে উঠলেন " তুমি জানো এই সুনন্দ কি সুন্দর আবৃতি করতে পারে??" ওর গলাতে একটা আবৃতি শুনেই আমি ঘায়েল হয়ে আছি ! যদি সুযোগ আসে তাহলে তোমাদের নিশ্চই শোনাব !! " বলেই আমার পিঠে একটা ধপাস করে থাপ্পর জমিয়ে দিলেন !
- চল এবার যাওয়া যাক ! সবাই গিয়ে আমার গাড়িতে বস ! আমি আসছি !!
- আমি তো মটর সাইকেল নিয়ে এসেছি !
- বা তাহলে বেশ ভালই হলো !!এই তোরা সবাই আমার গাড়িতে আয় ! আমি সুনন্দর সাথে মটর সাইকেলে যাচ্ছি !! দরজার মুখেই আধো আলো আঁধারে একজন প্রায় 70 বছর বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে ! লাহিড়ি দাকে দেখেই এক গাল হেসে বললেন ! " ও তুমি কোথাও যাচ্ছ নাকি?? আমি এসেছিলাম তোমার কাছে একটু দরকারে !!"
- কি দরকার কাকু?? তোমার তো এখন ঘর থেকে বেরুনোর কথা নয়?? তুমি এখানে কি করছ?? যাও ঘরে যাও !! পরে তোমার কথা শুনব !!
- না আগে আমার কথা শুনে যাও ! আমার খুব দরকার ! দেরী করলে বিপদে পরে যাব !!
- ওহ ! এত মহা ঝামেলা !! আচ্ছা বলে ফেল কি দরকারী কথা !!
ভদ্রলোক আমার দিকে একটু সন্দিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে বললেন " এর সামনেই বলব? না মানে খুব গোপনীয় কথা তো তাই......
- চিন্তার কিছুই নেই ! তুমি নিশ্চিন্তে তারাতারি বলে ফেল ! আমাকে বেরুতে হবে !!
হটাত ভদ্রলোক লাহিরিদার হাত দুটো ধরে খুব করুন স্বরে মিনতি করে উঠলো " তোমরা কি কেউ কিডনি কিনবে?? আমার খুব টাকার দরকার !শ্যামলকে বাঁচাতে অনেক টাকা লাগবে ! ওরা বলেছে টাকা দিলেই শ্যামল কে ছেড়ে দেবে !! কেনোনা আমার কিডনি ! আমার কাছে আর কিছুই নেই যে আমি বিক্রি করে টাকাটা ওদের দেব ! কেনো না দয়া করে বলেই ভদ্রলোক কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন !
লাহিড়ি দা ভদ্রলোক কে স্বান্তনা দিতে দিতে বললেন " আচ্ছা আচ্ছা চল আমি তোমার কিডনি কিনব ! কাল সকালে ! এখন ঘরে চল ! কাল সকালে তোমার কিডনি কিনে তোমাকে টাকা দিয়ে দেব ! " একরকম জোর করেই ভদ্রলোক কে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন !! বেশ কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এলেন !!
- কিছু মনে করিস না সুনন্দ ! উনি আমার ছোট কাকা ! ছেলের শোকে পাগল হয়ে গেছেন ! মাঝে মাঝে ভালো থাকেন আবার মাঝে মাঝে পাগলামো করেন !! বয়স হয়েছে ! বেশি ডোজের ওসুধ দিতে পারি না ! যে কদিন বেঁচে আছেন আমাদের চেষ্টা সেই কত দিন যেন ভালো ভাবেই থাকেন কিন্তু.........
- উনি হটাত কিডনি বিক্রি করার কথা বলছেন কেনো??
- সে এক লম্বা ইতিহাস ! উনি বিহারের ভাগলপুরে ব্যবসা করতেন ! সেখানেই থাকতেন পুরো পরিবার নিয়ে ! একদিন ওনার বাড়িতে ডাকাতি হয়ে যায় ! ডাকাতরা ওনার যথা সর্বস্স লুটে নিয়ে চলে যায় ! যেতে যেতে ওনার স্ত্রী আর ১২ বছরের ছেলেকেও তুলে নিয়ে যায় ! ওদের মুক্তি পন হিসাবে দাবি করে ২০ লক্ষ্য টাকা ! কিন্তু কাকার কাছে কিছুই আর ছিল না ! অনেক বন্ধু বান্ধবের কাছে তিনি টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন ! কিন্তু কোথাও পাননি ! তৃতীয় দিনে আমার কাকীর ক্ষতবিক্ষত লাস পাওয়া গেছিল ! নেকড়ের মত তার শরীর কে খোবলানো হয়েছিল ! আর তার সাথে একটা চিঠি ! ২০ লক্ষ্য টাকা আগামী দু দিনের মধ্যে না দিলে ওনার একমাত্র ছেলে শ্যামল কেও মেরে ফেলে দেওয়া হবে ! যখন আমাদের কাছে খবর পৌঁছল তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে ! আমার বাবা আর আমি টাকা নিয়ে পৌঁছলাম ! কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ ! ওরা শ্যামল কেও মেরে রাস্তার ধরে ফেলে দিয়ে গেছিল ! সেই থেকেই কাকা পাগল হয়ে যান ! অনেক চিকিত্সা করিয়েছি ! উনি এখনো ভাবেন টাকাটা দিয়ে দিলে ওনার ছেলেকে ফিরে পাবেন !! একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো লাহিড়ি দার মুখ থেকে ! ওনার কথা শুনে আমার হাত পা কি রকম যেন ঠান্ডা হয়ে গেছিল ! নিজের অজান্তেই চোখের কোনায় জল চলে এসেছিল ! ঠিক তখনি মঞ্জু , চৈতালি আর অঞ্জলি দিদি হই হই করতে করতে বেরিয়ে এলো ! আমাদের দেখেই চৈতালি অবাক হয়ে বলে উঠলো " তোমরা এখনো যাওনি??"
লাহিড়ি দা শুধু একটাই কথা বললেন " কাকা"
- কি হয়েছে ছোট দাদুর??
- আজ আবার পাগলামো তা বেড়েছে ! রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল ! অনেক কষ্টে ঘরে ঢুকিয়ে ইনজেকসন দিয়ে ঘুম পরিয়ে এলাম ! কাল থেকে একজন আয়া দরকার চব্বিশ ঘন্টার জন্য !
-আজ সকালেই দাদু কে পিয়ানো বাজাতে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম আজ কিছু একটা হবে !! চৈতালি বলে উঠলো !
- থাক তোর মাকে যেন কিছু বলতে যাস না ! তাহলে আবার কান্না কাটি জুড়ে দেবে !! যা তরা গাড়িতে করে চলে যা ! আমি আর সুনন্দ আসছি !
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ঝর্ণা The Untold story ! - by dada_of_india - 18-10-2020, 12:19 PM



Users browsing this thread: 33 Guest(s)