18-10-2020, 12:07 PM
(This post was last modified: 18-10-2020, 12:08 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এবার আর ঝরনা নিজেকে সামলাতে পারল না সোজা আমার বুকে মুখ লুকিয়ে বেশ কিছুটা জোরেই কেঁদে উঠলো ! আবার আমার হাত ওর পিঠে ! ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে আমি ওকে স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করতে থাকলাম !! "কাঁদিস না ঝরনা ! কাঁদিস না !! তুই একটা শক্ত মেয়ে হটাত কোনো কারণ ছাড়া কাঁদলে সবাই তোকে দুও দেবে !! কেন কাঁদছিস আমাকে বল! আমি বা আমরা কি তোকে কোনো দুঃক্ষ দিয়েছি??"
এবার ঝরনা আমার বুক থেকে মুখ তুলে আমার দিকে একবার চেয়ে সোজা উঠে দাঁড়ালো ! ড্রেসটা পরে রইলো বিছানায় !! নিজের জামা টা গলিয়ে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেল !! আমি একেবারে হতবম্ভো হয়ে গেলাম ওর ব্যবহারে !! কিছু না বলে থম মেরে বসে গেলাম ঝরনার বিছানাতেই !! ভাবতে লাগলাম কেন ঝরনা এইরকম ব্যবহার করছে ! আর কেনই বা আমার সামনে ল্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! ওর কি লজ্জা বলে কিছুই নেই !! বসে বসে ভাবতে লাগলাম !
চোখে মুখে জল দিয়ে ঝরনা ঘরে ঢুকলো ! গম্ভীর ভাবে বলল " আমার ঘুম পাচ্ছে আমি শুতে চাই !!" ওর এ হেন কথাতে আমার পিত্তি একেবারে চটকে গেল ! জোরে ঝাঁজি মেরে ওকে বললাম " এই তুই নিজেকে কি ভেবেছিস বলত?? সকাল থেকে দেখছি তোর ব্যবহার ! তুই কি চাস সত্যি করে বল !! "
আমার দিকে স্থির অথচ নিস্কম্প দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাটাকাটা শব্দে ঝরনা উত্তর দিল ! " আমি বাড়ির কাজের মেয়ে ! আমার ভাবনার সাথে তোমাদের কি এসে যায়?? আমাকে আমার মত থাকতে দাও ! আমার সুখ দুঃক্ষ সবই আমার ! তোমাদের তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না এতে !!"
ঝরনার স্পর্ধা দেখে আমি রীতিমত অবাক ! রাগের চোটে একবার ইচ্ছা হলো ধরে একটা জোরে চর কসিয়ে দিই ! কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সোজা চলে গেলাম মায়ের ঘরে ! আজ এর একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাওয়া উচিত !! মা বলে ডাকতে যাচ্ছি ঠিক তখনি আমার হাতে একটা জোরে তান পড়ল ! দেখি ঝরনা আমার হাত ধরে টানছে ! আমি কোনো কথা না বলে ওর দিকে ফিরে হাত তাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম ! কিন্তু ও হচ্ছে বাগদি বাড়ির মেয়ে ! একগূঁয়ে জেদী মেয়ে ! আমার হাত ধরে টানতে টানতে সোজা আমার ঘরে নিয়ে এলো !! ঠেলে আমাকে আমার বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল " কথায় কথায় মায়ের কাছে নালিশ করা কোনো পুরুষ মানুষের কাজ নয় ! এটা মেয়েরা করে থাকে ! চুপচাপ শুয়ে পর ! আর যদি মায়ের কাছে আমার সমন্ধ্যে কোনো কথা বলেছ তাহলে দেখবে আমি কি করি !" বলেই ঝরনা নিজের বিছানাতে শুয়ে পড়ল !!
কি হচ্ছে টা কি !! আমি তো রীতিমত ধ্বন্দে পরে গেলাম !! কি চাইছে ঝরনা ! কেন ওর এইরকম ব্যবহার !! ধুর আর ভাবতে ভালো লাগছে না ! কালই ফোন করে মঞ্জু কে সব বলতে হবে ! পিসিকেও বলতে বলব ওকে যেন এখান থেকে নিয়ে যায় ! একদিনেই আমার দশ হাল করে ছেরে দিয়েছে !! রাগে ক্ষোভে আমার গায়ে জ্বলন হচ্ছিল ! কিন্তু কিছুই করার নেই ! শুয়ে পরলাম ! কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসে না ! ঘুরে ফিরে ঝরনার সমস্ত কথা চোখের সামনে ভেসে উঠছে ! না কাল এর একটা হেস্তনেস্ত অবশ্যই করব ! মাকেও বলব আর পিসিকেও বলব ! মনে মনে গজরাতে গজরাতে ঝরনার উপর প্রতিশোধ নেবার পরিকল্পনা করতে থাকলাম !!
হটাত মনে হলো কে যেন অতি সন্তর্পনে আমার মশারি তুলে আমার বিছানায় ঢুকলো ! মুখ ঘুরিয়ে দেখলাম আমার পাসে বসে আছে ঝরনা !! দু চোখের কোলে টলমল করছে জল ! ঠিক যেন কালো দিঘিতে ভাসছে দুটি পদ্ম ! চোখ গুলোও ফুলে গেছে ! মুখেতে ভেসে রয়েছে কান্না চাপার অব্যক্ত চেষ্টার ছাপ ! করুন মুখটা দেখলে যে কোনো লোকেরই মনেতে দয়া চলে আসবে ! কিন্তু আমার মনে কোনো দয়া আসলো না ! এখনো আমি ফুঁসছি রাগেতে ! আমি ওর কান্না কে উপেক্খ্যা করে অন্য দিকে পাস ফিরে শুয়ে পরলাম !! বেশ কিছুক্ষণ ঝরনা আমার পাশে চুপচাপ বসে রইলো কোনো সারা শব্দ নেই শুধু হালকা হালকা ফোঁপানোর শব্দ ছাড়া !!
আমার পা দুটোকে জড়িয়ে ধরে এবার ঝরনা বেশ জোরে জোরে কেঁদে উঠলো !এতো জোরে কেঁদে উঠলো যে পাশের ঘরে কান্নার শব্দে মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল ! মা দরজা ঠেলে আমার ঘুরে ঢুকে দেখেন যে ঝরনা আমার পা দুটোকে জড়িয়ে ধরে অবিরাম কেঁদে চলেছে !! একবার বুঝুন আমার অবস্থাটা !! না পারছি ওকে থামাতে আর না পারছি পা ছাড়াতে !
এই দৃশ্য দেখে আমার মায়ের চোখ ছানাবড়া হবার অবস্থা ! মা হয়ত ভেবেছে যে ঝরনা কে একা পেয়ে আমি ওকে রেপ করার চেষ্টা করেছি আর ঝরনা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার পা ধরে আকুতি মিনতি করছে !!
"খোকা !" মা এবার গর্জে উঠলেন ! " কি করেছিস তুই ! তোর লজ্জা ঘেন্না কিছুই নেই ! একটা অসহায় গরিব ঘরের মেয়েকে একলা পেয়ে ....... লজ্জা করলো না তোর? তুই না আমাদের ছেলে ! এমন জঘন্য কাজ করতে তোর একটুও বাঁচলো না ??"
তবু তো আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে যে ঝরনা ওর জামা পরেছিল !!
মা আমার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ! ঝরনা আমর পা ছেড়ে সোজা মায়ের বুকে মুখ রেখে আবার কাঁদতে শুরু করে দিল !!
- তোর ব্যবস্থা কাল হবে ! তোর বাবা আসুক তারপর ... চল ঝরনা তুই আমার সাথে চল ! বলেই মা ঝরনা কে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন ! কিন্তু যাবার আগে আমার দিকে আগুন আর ঘৃণার দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে যেতে ভুললেন না !
রাগে অপমানে দূক্ষে আমার মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হলো ! আকম্সিক এই রকম ঘটনা আমাকে একেবারে হতবাক করে রাখল কিছুক্ষণ ! কি করব, কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! একটু যখন ধাতস্থ হলাম তখন বিছানা ছেড়ে সোজা উঠে দাঁড়ালাম ! মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম ! যে ভুল তা মা করে গেল সেটা ভাঙ্গতে হবেই ! না হলে আমি নিজের কাছে নিজেই মুখ দেখাতে পারব না ! সোজা মায়ের ঘরে ঢুকে গেলাম "মা তুমি যেটা ভাবছ সেটা একদম ভুল !" বলেই থমকে দাঁড়ালাম ! কারণ মা নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে চুপ করে থাকতে বলছে ! আর ঝরনা মায়ের বুকে মাথা রেখে ফিস ফিস করে কিছু বলছে মাকে ! আমি ভাবলাম হয়ত আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে হয়ত কিছু বলছে ! কিন্তু যদি আমার নামে বলে তাহলে মায়ের মুখ কেন ঠান্ডা ! তাহলে কি আমার আর মঞ্জুর সম্পর্ক টার কথা সব বলে দিয়েছে ঝরনা ?? ভয়ে হতাশায় আমার বুক ধপ ধপ করতে শুরু করে দিল !! হাতের ইশারায় মা আমাকে বিছানায় বসতে বলল ! তার মানে মা সব জেনে গেছে তাই রাগে দূক্ষে আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না ! আজ আমার কপালে খুব দুঃক্ষ আছে ! যা হবার হবে এখন দেখা যাক ঝরনা মা কে কি বলেছে !!
আমি বসতেই ঝরনা একেবারে চুপ করে গেল ! কি হচ্ছে নিজেই ভেবে পাচ্ছি না ! অনেক পরে মা নিজের মুখ খুললেন !! " নারে খোকা আমি তোকে ভুল বুঝে ছিলাম ! আসলে ঝর্নাকে তর পায়ে ঘরে কাঁদতে দেখে আমার সব কেমন তাল গোল পাকিয়ে গেছিল ! তাই তোর সমন্ধ্যে ঐরকম ধারণা হয়েছিল ! "
- মানে ? কি বলতে চাও তুমি ! একটু যেন বেশি জোরেই বলে ফেললাম ! কারণ আমার মাথায় তখন আগুন জ্বলছে ! তুমি কি আমাকে এতটাই নিচ ভাবতে পারলে?? একবার জিজ্ঞাস্স্যা না করে আমাকে তুমি চরিত্রহীন বানিয়ে দিলে আর এখন বলছ যে তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ?? আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছি না যখন থেকে আমি বাড়ি ফিরেছি তখন থেকে ঝরনা আমার সাথে কি অভদ্র ব্যবহার করে যাচ্ছে তাতেও আমি ওকে কিছুই বলিনি তাতেও আমি দোষী হয়ে গেলাম ?? না মা আমি আর এই বাড়িতে থাকব না ! একটা অপবাদ নিয়ে এখানে থাকার চেয়ে দুরে চলে যাওয়া ভালো ! বলেই আমি মায়ের বিছানা ছেড়ে সোজা নিজের ঘরে ঢুকলাম ! মাথার জ্বলুনি টা যেন ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছিল ! কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিলাম ! নিজের ঘরে ঢুকে যে ব্যাগ টা নিয়ে দার্জিলিং গেছিলাম সেটা টেনে বার করলাম ! আলমারি খুলে নিজের জামা প্যান্ট ভরতে শুরু করে দিলাম !
- কি করছিস তুই?? পিছন থেকে মায়ের আওয়াজ !
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ব্যাগ টা বন্ধ করে একটা জামা প্যান্ট নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম ! মাথাত খুব জ্বলছে ! একটু মাথায় জল ঢাললে ভালো হয় ! মগে করে হুর হুর করে মাথায় জল ঢালতে শুরু করে দিলাম ! বেশ কয়েক মগ জল ঢালার পর নিজেকে যেন কিছুটা ঠান্ডা মনে হলো ! গা হাত পা মুছে জামা প্যান্ট গলিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম ! আরে ! আমার ব্যাগ টা কোথায়?? এই মাত্র তো ব্যাগ গুছিয়ে বিছানার উপর রেখেই গেলাম বাথরুমে ! গেল কোথায়??
বুঝতে পারলাম মা ব্যাগ নিয়ে চলে গেছে ! যাক ! ব্যাগ না নিয়েই বেরিয়ে যাব ! ড্রযার খুলে দেখি আমার মানি ব্যাগ টাও গায়েব ! যা কিছু টাকা পয়সা সব ওতেই ছিল ! আবার আমার মাথা গরম হতে শুরু করে দিল !! সোজা উদ্ধত ভঙ্গি নিয়ে মায়ের ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করলাম " আমার মানি ব্যাগ কোথায়??" বরফের মত ঠান্ডা গলায় মা আমাকে বললেন "চুপচাপ এখানে বোস ! যা বলছি আগে সেটা শুনে নে তারপর ঠিক করবি তুই কোথাও যাবি কি না !"
মায়ের গলার স্বরে এমন একটা কিছু ছিল যেটা আমার কান দিয়ে ঢুকে আমার সমস্ত শরীরের মধ্যে শীতল প্রবাহ বইয়ে দিয়ে গেল !! ভূমিকম্প হবার আগে প্রকৃতি যেমন থমকে দাঁড়িয়ে যায় ঠিক সেই রকমই মায়ের গলার আওয়াজ !
তবুও আমি বসলাম না ! মায়ের দিকে তাকালাম ! মায়ের চোখে হিমশীতল ভাব দেখে আমার হৃদপিন্ড ধক ধক করতে শুরু করে দিল !!
- তোকে আমি ভুল বুঝেছিলাম ! ঝরনা আমাকে সব বলেছে ! তুই ওকে কিছুই করিস নি ! বরণ ও তোর পায়ে ধরে তোর কাছে ক্ষমা চাইছিল ওর ব্যবহারের জন্য ! আর আমি সেটা দেখে ভুল বুঝে ছিলাম ! কিন্তু কেন ঝরনা কাঁদছিল সেটা একবার জেনে যাবি না??
মাথা তুলে আবার মায়ের দিকে তাকালাম ! মায়ের চোখে তখনও বরফের চাদর ! ঝরনা কাঁদছিল কারণ ওকে কেউ কোনো দিন নতুন জামাকাপড় দেইনি ! জীবনে এই প্রথম কেউ ওকে নতুন ড্রেস দিয়েছে তাই আনন্দে ও কেঁদে ফেলেছে ! সারা জীবন ও লোকেদের পরিত্যক্ত জামা কাপড় পরেই কাটিয়েছে ! আজ জীবনে প্রথম ও নতুন ড্রেস পেয়েছে ! তাই...... তুই ওর কান্না থামাতে গেছিলিস কিন্তু ওর ইগো ওকে হিংস্র করে দিয়েছিল ! তোকে তাই অনেক কটু কথা বলেছে ! আর যখন ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তখন ও তোর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে গেছিল !! আমি সেটা দেখেই ভেবেছিলাম যে তুই হয়ত জোর করে ওর সর্বনাশ করতে চাইছিলিস ! আর এই রকম ভাতা কি স্বাভাবিক নয় কি??
- তুমি তো আমার মা ! তুমার থেকে আমাকে বেশি কেউই জানে না ! এমনকি আমি নিজেই নিজেকে ততটা জানিনা যতটা তুমি আমাকে জানো ! তবুও তুমি আমাকে এতটা নিচ কি করে ভাবতে পারলে মা??
- না রে বাবা ! ভুল আমি করেছি কিন্তু সেই ভুল টা হয়েছিল একটা কারণেই আর সেটা হলো আমি একজন নারী ! নারীরা এত ভাবে প্রতারিত হয়ে এসেছে এই সমাজের কাছ থেকে যে তারা প্রথম নজরেই কোনো জিনিস কে ভালো করে নিতে পারে না ! হলেও বা তুই আমার ছেলে, তুই তো একজন পুরুষই ! আর পুরুষদের স্বভাব তাদের মায়েরাও বুঝতে পারে না ! যাক এবার তুই ঠিক করে নে তুই বাড়িতে থাকবি না যাবি !! আর যদি যেতে হয় তাহলে ......... ঝরনা খোকার ব্যাগটা দিয়ে দে !! ঝরনা কাঁদতে কাঁদতে ব্যাগ টা নিয়ে আবার সোজা আমার পা ধরে কাঁদতে শুরু করে দিল !! আমি কি করব নিজেই বুঝতে পারছিলাম না ! " আমার পা ছার ঝরনা ! আর আগে তোর কান্না বন্ধ কর !! যদি তুই চাস এ বাড়িতে থাকতে তাহলে আর কখনো কাঁদবি না ! " বলে আমি পা টা ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা আমার ঘরে চলে এলাম !
কখন জানিনা আমার চোখেও জল এসে গেছিল ! গলার কাছটাতে একটা দেলা যেন আটকে রয়েছে ! যতই চেষ্টা করছি সেটাকে সরাতে ততই যেন আরও বেশি করে গলায় আটকে যাচ্ছে ! একসময় সেই দলাটা আর রুখে থাকতে চাইল না ! চোখ ভেঙ্গে বেরিয়ে এলো কান্নার বন্যা !!
সকাল বেলা বাড়ির চেহেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে দেখা দিল ! মনে হলো কে জেনো আমাকে জোরে জোরে ঠেলছে ! ঘুম জড়ানো চোখে দেখলাম ঝরনা আমাকে খুব জোরে জোরে ঠেলছে ! কিন্তু মুখেতে কোনো কথা নেই !! ঘুম জড়ানো মুখেই বললাম " আমাকে ঘুমোতে দে !" কিন্তু তাতেও ঝরনার ঠেলা বন্ধ হলো না !! আবার ঘুম চোখে তাকিয়ে বললাম " কেন ডিস্টার্ব করছিস??" ঝরনা বলল " সকাল ছটা বেজে গেছে ! মা বললেন তোমাকে তুলে দিতে ! তোমার টুইসনে যাবার সময় হয়ে গেছে! টুইসনের নাম শুনে ধর্মর করে উঠে বসলাম ! বসার সাথে সাথেই আমার মুখের সামনে এক কাপ চা বাড়িয়ে দিয়ে ঝরনা দাঁড়িয়ে রইলো !! আমি এদিক ওদিক চাইলাম ! কিন্তু চোখের পলকে ঝরনার অন্য হাত আমার সামনে এগিয়ে এলো আর সেটাতেই ছিলো আমার কাম্য জিনিস ! আমার জলের বোতল ! সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে আমি বেশ খানিক তা জল খাই তারপর চা আর তারপর সোজা পাইখানায় !! এটা আমার নিত্য পদ্ধতি! জলের বোতল তা হাতে নিয়ে গলায় ঢালতে ঢালতে চিন্তা করতে থাকলাম ঝরনা কি করে আমার অভ্যাস জানলো !! যাই হোক বেশি কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম ! ঝরনা আমার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে দু হাতে নিজের কান ধরে মাথা নিচের দিকে করে বলল " সরি আমার অন্যায় হয়ে গেছে ! আমাকে ক্ষমা করে দাও !!" আমি কোনো কথা না বলে ওর দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম !
এবার ঝরনা আমার বুক থেকে মুখ তুলে আমার দিকে একবার চেয়ে সোজা উঠে দাঁড়ালো ! ড্রেসটা পরে রইলো বিছানায় !! নিজের জামা টা গলিয়ে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেল !! আমি একেবারে হতবম্ভো হয়ে গেলাম ওর ব্যবহারে !! কিছু না বলে থম মেরে বসে গেলাম ঝরনার বিছানাতেই !! ভাবতে লাগলাম কেন ঝরনা এইরকম ব্যবহার করছে ! আর কেনই বা আমার সামনে ল্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! ওর কি লজ্জা বলে কিছুই নেই !! বসে বসে ভাবতে লাগলাম !
চোখে মুখে জল দিয়ে ঝরনা ঘরে ঢুকলো ! গম্ভীর ভাবে বলল " আমার ঘুম পাচ্ছে আমি শুতে চাই !!" ওর এ হেন কথাতে আমার পিত্তি একেবারে চটকে গেল ! জোরে ঝাঁজি মেরে ওকে বললাম " এই তুই নিজেকে কি ভেবেছিস বলত?? সকাল থেকে দেখছি তোর ব্যবহার ! তুই কি চাস সত্যি করে বল !! "
আমার দিকে স্থির অথচ নিস্কম্প দৃষ্টিতে তাকিয়ে কাটাকাটা শব্দে ঝরনা উত্তর দিল ! " আমি বাড়ির কাজের মেয়ে ! আমার ভাবনার সাথে তোমাদের কি এসে যায়?? আমাকে আমার মত থাকতে দাও ! আমার সুখ দুঃক্ষ সবই আমার ! তোমাদের তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না এতে !!"
ঝরনার স্পর্ধা দেখে আমি রীতিমত অবাক ! রাগের চোটে একবার ইচ্ছা হলো ধরে একটা জোরে চর কসিয়ে দিই ! কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে সোজা চলে গেলাম মায়ের ঘরে ! আজ এর একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাওয়া উচিত !! মা বলে ডাকতে যাচ্ছি ঠিক তখনি আমার হাতে একটা জোরে তান পড়ল ! দেখি ঝরনা আমার হাত ধরে টানছে ! আমি কোনো কথা না বলে ওর দিকে ফিরে হাত তাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম ! কিন্তু ও হচ্ছে বাগদি বাড়ির মেয়ে ! একগূঁয়ে জেদী মেয়ে ! আমার হাত ধরে টানতে টানতে সোজা আমার ঘরে নিয়ে এলো !! ঠেলে আমাকে আমার বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল " কথায় কথায় মায়ের কাছে নালিশ করা কোনো পুরুষ মানুষের কাজ নয় ! এটা মেয়েরা করে থাকে ! চুপচাপ শুয়ে পর ! আর যদি মায়ের কাছে আমার সমন্ধ্যে কোনো কথা বলেছ তাহলে দেখবে আমি কি করি !" বলেই ঝরনা নিজের বিছানাতে শুয়ে পড়ল !!
কি হচ্ছে টা কি !! আমি তো রীতিমত ধ্বন্দে পরে গেলাম !! কি চাইছে ঝরনা ! কেন ওর এইরকম ব্যবহার !! ধুর আর ভাবতে ভালো লাগছে না ! কালই ফোন করে মঞ্জু কে সব বলতে হবে ! পিসিকেও বলতে বলব ওকে যেন এখান থেকে নিয়ে যায় ! একদিনেই আমার দশ হাল করে ছেরে দিয়েছে !! রাগে ক্ষোভে আমার গায়ে জ্বলন হচ্ছিল ! কিন্তু কিছুই করার নেই ! শুয়ে পরলাম ! কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসে না ! ঘুরে ফিরে ঝরনার সমস্ত কথা চোখের সামনে ভেসে উঠছে ! না কাল এর একটা হেস্তনেস্ত অবশ্যই করব ! মাকেও বলব আর পিসিকেও বলব ! মনে মনে গজরাতে গজরাতে ঝরনার উপর প্রতিশোধ নেবার পরিকল্পনা করতে থাকলাম !!
হটাত মনে হলো কে যেন অতি সন্তর্পনে আমার মশারি তুলে আমার বিছানায় ঢুকলো ! মুখ ঘুরিয়ে দেখলাম আমার পাসে বসে আছে ঝরনা !! দু চোখের কোলে টলমল করছে জল ! ঠিক যেন কালো দিঘিতে ভাসছে দুটি পদ্ম ! চোখ গুলোও ফুলে গেছে ! মুখেতে ভেসে রয়েছে কান্না চাপার অব্যক্ত চেষ্টার ছাপ ! করুন মুখটা দেখলে যে কোনো লোকেরই মনেতে দয়া চলে আসবে ! কিন্তু আমার মনে কোনো দয়া আসলো না ! এখনো আমি ফুঁসছি রাগেতে ! আমি ওর কান্না কে উপেক্খ্যা করে অন্য দিকে পাস ফিরে শুয়ে পরলাম !! বেশ কিছুক্ষণ ঝরনা আমার পাশে চুপচাপ বসে রইলো কোনো সারা শব্দ নেই শুধু হালকা হালকা ফোঁপানোর শব্দ ছাড়া !!
আমার পা দুটোকে জড়িয়ে ধরে এবার ঝরনা বেশ জোরে জোরে কেঁদে উঠলো !এতো জোরে কেঁদে উঠলো যে পাশের ঘরে কান্নার শব্দে মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল ! মা দরজা ঠেলে আমার ঘুরে ঢুকে দেখেন যে ঝরনা আমার পা দুটোকে জড়িয়ে ধরে অবিরাম কেঁদে চলেছে !! একবার বুঝুন আমার অবস্থাটা !! না পারছি ওকে থামাতে আর না পারছি পা ছাড়াতে !
এই দৃশ্য দেখে আমার মায়ের চোখ ছানাবড়া হবার অবস্থা ! মা হয়ত ভেবেছে যে ঝরনা কে একা পেয়ে আমি ওকে রেপ করার চেষ্টা করেছি আর ঝরনা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার পা ধরে আকুতি মিনতি করছে !!
"খোকা !" মা এবার গর্জে উঠলেন ! " কি করেছিস তুই ! তোর লজ্জা ঘেন্না কিছুই নেই ! একটা অসহায় গরিব ঘরের মেয়েকে একলা পেয়ে ....... লজ্জা করলো না তোর? তুই না আমাদের ছেলে ! এমন জঘন্য কাজ করতে তোর একটুও বাঁচলো না ??"
তবু তো আমার ভাগ্য ভালো বলতে হবে যে ঝরনা ওর জামা পরেছিল !!
মা আমার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ! ঝরনা আমর পা ছেড়ে সোজা মায়ের বুকে মুখ রেখে আবার কাঁদতে শুরু করে দিল !!
- তোর ব্যবস্থা কাল হবে ! তোর বাবা আসুক তারপর ... চল ঝরনা তুই আমার সাথে চল ! বলেই মা ঝরনা কে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন ! কিন্তু যাবার আগে আমার দিকে আগুন আর ঘৃণার দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে যেতে ভুললেন না !
রাগে অপমানে দূক্ষে আমার মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হলো ! আকম্সিক এই রকম ঘটনা আমাকে একেবারে হতবাক করে রাখল কিছুক্ষণ ! কি করব, কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! একটু যখন ধাতস্থ হলাম তখন বিছানা ছেড়ে সোজা উঠে দাঁড়ালাম ! মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম ! যে ভুল তা মা করে গেল সেটা ভাঙ্গতে হবেই ! না হলে আমি নিজের কাছে নিজেই মুখ দেখাতে পারব না ! সোজা মায়ের ঘরে ঢুকে গেলাম "মা তুমি যেটা ভাবছ সেটা একদম ভুল !" বলেই থমকে দাঁড়ালাম ! কারণ মা নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে চুপ করে থাকতে বলছে ! আর ঝরনা মায়ের বুকে মাথা রেখে ফিস ফিস করে কিছু বলছে মাকে ! আমি ভাবলাম হয়ত আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে হয়ত কিছু বলছে ! কিন্তু যদি আমার নামে বলে তাহলে মায়ের মুখ কেন ঠান্ডা ! তাহলে কি আমার আর মঞ্জুর সম্পর্ক টার কথা সব বলে দিয়েছে ঝরনা ?? ভয়ে হতাশায় আমার বুক ধপ ধপ করতে শুরু করে দিল !! হাতের ইশারায় মা আমাকে বিছানায় বসতে বলল ! তার মানে মা সব জেনে গেছে তাই রাগে দূক্ষে আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না ! আজ আমার কপালে খুব দুঃক্ষ আছে ! যা হবার হবে এখন দেখা যাক ঝরনা মা কে কি বলেছে !!
আমি বসতেই ঝরনা একেবারে চুপ করে গেল ! কি হচ্ছে নিজেই ভেবে পাচ্ছি না ! অনেক পরে মা নিজের মুখ খুললেন !! " নারে খোকা আমি তোকে ভুল বুঝে ছিলাম ! আসলে ঝর্নাকে তর পায়ে ঘরে কাঁদতে দেখে আমার সব কেমন তাল গোল পাকিয়ে গেছিল ! তাই তোর সমন্ধ্যে ঐরকম ধারণা হয়েছিল ! "
- মানে ? কি বলতে চাও তুমি ! একটু যেন বেশি জোরেই বলে ফেললাম ! কারণ আমার মাথায় তখন আগুন জ্বলছে ! তুমি কি আমাকে এতটাই নিচ ভাবতে পারলে?? একবার জিজ্ঞাস্স্যা না করে আমাকে তুমি চরিত্রহীন বানিয়ে দিলে আর এখন বলছ যে তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ?? আমি তো এটাই ভেবে পাচ্ছি না যখন থেকে আমি বাড়ি ফিরেছি তখন থেকে ঝরনা আমার সাথে কি অভদ্র ব্যবহার করে যাচ্ছে তাতেও আমি ওকে কিছুই বলিনি তাতেও আমি দোষী হয়ে গেলাম ?? না মা আমি আর এই বাড়িতে থাকব না ! একটা অপবাদ নিয়ে এখানে থাকার চেয়ে দুরে চলে যাওয়া ভালো ! বলেই আমি মায়ের বিছানা ছেড়ে সোজা নিজের ঘরে ঢুকলাম ! মাথার জ্বলুনি টা যেন ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছিল ! কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিলাম ! নিজের ঘরে ঢুকে যে ব্যাগ টা নিয়ে দার্জিলিং গেছিলাম সেটা টেনে বার করলাম ! আলমারি খুলে নিজের জামা প্যান্ট ভরতে শুরু করে দিলাম !
- কি করছিস তুই?? পিছন থেকে মায়ের আওয়াজ !
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে ব্যাগ টা বন্ধ করে একটা জামা প্যান্ট নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম ! মাথাত খুব জ্বলছে ! একটু মাথায় জল ঢাললে ভালো হয় ! মগে করে হুর হুর করে মাথায় জল ঢালতে শুরু করে দিলাম ! বেশ কয়েক মগ জল ঢালার পর নিজেকে যেন কিছুটা ঠান্ডা মনে হলো ! গা হাত পা মুছে জামা প্যান্ট গলিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম ! আরে ! আমার ব্যাগ টা কোথায়?? এই মাত্র তো ব্যাগ গুছিয়ে বিছানার উপর রেখেই গেলাম বাথরুমে ! গেল কোথায়??
বুঝতে পারলাম মা ব্যাগ নিয়ে চলে গেছে ! যাক ! ব্যাগ না নিয়েই বেরিয়ে যাব ! ড্রযার খুলে দেখি আমার মানি ব্যাগ টাও গায়েব ! যা কিছু টাকা পয়সা সব ওতেই ছিল ! আবার আমার মাথা গরম হতে শুরু করে দিল !! সোজা উদ্ধত ভঙ্গি নিয়ে মায়ের ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করলাম " আমার মানি ব্যাগ কোথায়??" বরফের মত ঠান্ডা গলায় মা আমাকে বললেন "চুপচাপ এখানে বোস ! যা বলছি আগে সেটা শুনে নে তারপর ঠিক করবি তুই কোথাও যাবি কি না !"
মায়ের গলার স্বরে এমন একটা কিছু ছিল যেটা আমার কান দিয়ে ঢুকে আমার সমস্ত শরীরের মধ্যে শীতল প্রবাহ বইয়ে দিয়ে গেল !! ভূমিকম্প হবার আগে প্রকৃতি যেমন থমকে দাঁড়িয়ে যায় ঠিক সেই রকমই মায়ের গলার আওয়াজ !
তবুও আমি বসলাম না ! মায়ের দিকে তাকালাম ! মায়ের চোখে হিমশীতল ভাব দেখে আমার হৃদপিন্ড ধক ধক করতে শুরু করে দিল !!
- তোকে আমি ভুল বুঝেছিলাম ! ঝরনা আমাকে সব বলেছে ! তুই ওকে কিছুই করিস নি ! বরণ ও তোর পায়ে ধরে তোর কাছে ক্ষমা চাইছিল ওর ব্যবহারের জন্য ! আর আমি সেটা দেখে ভুল বুঝে ছিলাম ! কিন্তু কেন ঝরনা কাঁদছিল সেটা একবার জেনে যাবি না??
মাথা তুলে আবার মায়ের দিকে তাকালাম ! মায়ের চোখে তখনও বরফের চাদর ! ঝরনা কাঁদছিল কারণ ওকে কেউ কোনো দিন নতুন জামাকাপড় দেইনি ! জীবনে এই প্রথম কেউ ওকে নতুন ড্রেস দিয়েছে তাই আনন্দে ও কেঁদে ফেলেছে ! সারা জীবন ও লোকেদের পরিত্যক্ত জামা কাপড় পরেই কাটিয়েছে ! আজ জীবনে প্রথম ও নতুন ড্রেস পেয়েছে ! তাই...... তুই ওর কান্না থামাতে গেছিলিস কিন্তু ওর ইগো ওকে হিংস্র করে দিয়েছিল ! তোকে তাই অনেক কটু কথা বলেছে ! আর যখন ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তখন ও তোর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে গেছিল !! আমি সেটা দেখেই ভেবেছিলাম যে তুই হয়ত জোর করে ওর সর্বনাশ করতে চাইছিলিস ! আর এই রকম ভাতা কি স্বাভাবিক নয় কি??
- তুমি তো আমার মা ! তুমার থেকে আমাকে বেশি কেউই জানে না ! এমনকি আমি নিজেই নিজেকে ততটা জানিনা যতটা তুমি আমাকে জানো ! তবুও তুমি আমাকে এতটা নিচ কি করে ভাবতে পারলে মা??
- না রে বাবা ! ভুল আমি করেছি কিন্তু সেই ভুল টা হয়েছিল একটা কারণেই আর সেটা হলো আমি একজন নারী ! নারীরা এত ভাবে প্রতারিত হয়ে এসেছে এই সমাজের কাছ থেকে যে তারা প্রথম নজরেই কোনো জিনিস কে ভালো করে নিতে পারে না ! হলেও বা তুই আমার ছেলে, তুই তো একজন পুরুষই ! আর পুরুষদের স্বভাব তাদের মায়েরাও বুঝতে পারে না ! যাক এবার তুই ঠিক করে নে তুই বাড়িতে থাকবি না যাবি !! আর যদি যেতে হয় তাহলে ......... ঝরনা খোকার ব্যাগটা দিয়ে দে !! ঝরনা কাঁদতে কাঁদতে ব্যাগ টা নিয়ে আবার সোজা আমার পা ধরে কাঁদতে শুরু করে দিল !! আমি কি করব নিজেই বুঝতে পারছিলাম না ! " আমার পা ছার ঝরনা ! আর আগে তোর কান্না বন্ধ কর !! যদি তুই চাস এ বাড়িতে থাকতে তাহলে আর কখনো কাঁদবি না ! " বলে আমি পা টা ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা আমার ঘরে চলে এলাম !
কখন জানিনা আমার চোখেও জল এসে গেছিল ! গলার কাছটাতে একটা দেলা যেন আটকে রয়েছে ! যতই চেষ্টা করছি সেটাকে সরাতে ততই যেন আরও বেশি করে গলায় আটকে যাচ্ছে ! একসময় সেই দলাটা আর রুখে থাকতে চাইল না ! চোখ ভেঙ্গে বেরিয়ে এলো কান্নার বন্যা !!
সকাল বেলা বাড়ির চেহেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে দেখা দিল ! মনে হলো কে জেনো আমাকে জোরে জোরে ঠেলছে ! ঘুম জড়ানো চোখে দেখলাম ঝরনা আমাকে খুব জোরে জোরে ঠেলছে ! কিন্তু মুখেতে কোনো কথা নেই !! ঘুম জড়ানো মুখেই বললাম " আমাকে ঘুমোতে দে !" কিন্তু তাতেও ঝরনার ঠেলা বন্ধ হলো না !! আবার ঘুম চোখে তাকিয়ে বললাম " কেন ডিস্টার্ব করছিস??" ঝরনা বলল " সকাল ছটা বেজে গেছে ! মা বললেন তোমাকে তুলে দিতে ! তোমার টুইসনে যাবার সময় হয়ে গেছে! টুইসনের নাম শুনে ধর্মর করে উঠে বসলাম ! বসার সাথে সাথেই আমার মুখের সামনে এক কাপ চা বাড়িয়ে দিয়ে ঝরনা দাঁড়িয়ে রইলো !! আমি এদিক ওদিক চাইলাম ! কিন্তু চোখের পলকে ঝরনার অন্য হাত আমার সামনে এগিয়ে এলো আর সেটাতেই ছিলো আমার কাম্য জিনিস ! আমার জলের বোতল ! সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে আমি বেশ খানিক তা জল খাই তারপর চা আর তারপর সোজা পাইখানায় !! এটা আমার নিত্য পদ্ধতি! জলের বোতল তা হাতে নিয়ে গলায় ঢালতে ঢালতে চিন্তা করতে থাকলাম ঝরনা কি করে আমার অভ্যাস জানলো !! যাই হোক বেশি কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম ! ঝরনা আমার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে দু হাতে নিজের কান ধরে মাথা নিচের দিকে করে বলল " সরি আমার অন্যায় হয়ে গেছে ! আমাকে ক্ষমা করে দাও !!" আমি কোনো কথা না বলে ওর দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম !