17-10-2020, 10:02 PM
সিরিজা বুঝতে পারলো, কাল থেকে দোলন যেভাবে মুখে ফুলঝুড়ি ছোটাচ্ছে, সব পরিকল্পনা ভেস্তে না যায়। ও সিরিজাকে মনে মনে ভীষন হিংসা করছে। নইলে একই কথার পুনারাবৃত্তি। রজত না শেষ পর্যন্ত ধৈর্য হারিয়ে ওর মুখের ওপর কিছু বলে দেয়। একূল ওকূল দুকূলই যাবে। অবাধ যৌনজীবনের আনন্দটাই যাবে মাটি হয়ে।
দোলনকে বললো, "তুই কিছু চিন্তা করিস না। তোর একটা ব্যাবস্থা আমি শিগগীরই করছি।"
ঘরের মধ্যে নগ্ন হয়েই কাপড় ছাড়তে লাগলো দোলন। ভিজে কাপড়টা একপাশে ফেলে দিয়ে সিরিজাকে বললো, "একটা শাড়ী দাও না পরি।"
সিরিজা বললো, "এভাবে কাপড় ছাড়িস না দোলন। তোর দাদাবাবুর চোখ পড়লে খারাপ ভাববে।"
হাসতে হাসতে দোলন বললো, "আহা ন্যাকা। তুমি যেন ছাড়ো না আবার?"
- "আমি কি ঘরে ছাড়ি নাকি?"
-- "কোথায় ছাড়ো তাহলে?"
- "আমি তো বাথরুমে ছাড়ি।"
-- "বাথরুমে? হা হা হা।"
জোরে হা হা করে হাসতে লাগলো দোলন। সিরিজার ওর হাসি দেখে ভীষন অস্বস্তি হতে লাগলো। রাগের চোটে দোলনের মুখের ওপর নিজের পুরোনো শাড়ীটা ছুঁড়ে দিয়ে ও ঘর থেকে বেরিয়ে এল।
বাইরের ঘরে বসে রজত তখনও দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সিরিজা আসতেই ও বললো, "সিরিজা, দিবাকরকে কিছুতেই পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ফোন রেখে দিয়ে ও কোথাও গেছে। নইলে আমার ফোন ধরবে না কেন?"
দোলনের ব্যাপারে সিরিজা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, রজত বললো, "আমাকে বলতে হবে না আমি সব শুনেছি। কি আর করবে? ঝ্যামেলা যখন বাড়ীত ডেকে এনেছ, তখন পোয়াও। এছাড়া তো কোন গতি নেই। আমি কি আর সাধে বলেছি? ও মেয়ে তোমাকে আমাকে দুজনের কাউকেই স্বস্তিতে থাকতে দেবে না এখন থেকে।"
সিরিজা বললো, "তুমি দিবাকরদার বাড়ী যাবে না?"
-- "কি করে যাবো? ফোনই তো ধরছে না। তারপরে যদি বাড়ী গিয়ে না পাই?"
সিরিজা কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বললো, "এক কাজ করলে হয় না?"
রজত বেশ কৌতূহল আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞাসা করলো, "কি কাজ?"
- "দোলনকে বলে দিই, তোমার শ্বশুড়মশাই আর তোমার বউ এসেছিল কালকে। আবার আসতে পারে যখন তখন। তোকে এখানে দেখলে মুশকিল হবে। দাদাবাবুর বউ তোকে চেনে। এখানে তোকে দেখলে খারাপ ভাবতে পারে। তার চেয়ে দাদাবাবু তোকে তার বন্ধুর বাড়ী রেখে আসুক কয়েকদিনের জন্য। তুইও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবি ওখানে।"
সব শুনে রজত বললো, "ব্যাপারটা তো সেই একই হল সিরিজা। সেই তো দিবাকরকে রাজী করানোর ব্যাপার। ওকে ফোনে পেলে তবে তো? তাছাড়া তোমার দোলন রানী আবার কি ইচ্ছা পোষণ করে দেখো। সে তো থেকে থেকেই এখন কথা দিয়ে হুল ফোটাচ্ছে শরীরে। আমার মনে হয় নিজে না গিয়ে শেষ পর্যন্ত তোমাকেই যেতে বলবে দিবাকরের বাসায়।"
ঘরে ঢুকে দোলন বললো, "তোমরা দুজনে কোথায় আমার যাবার কথা বলছো গো? কারুর বাড়ীতে?"
একটু ভ্যাবাচাকা খেয়েই রজত সিরিজার দিকে তাকালো। দোলন একেবারে রজত আর সিরিজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রজত দেখলো সিরিজারই একটা শাড়ী পড়েছে দোলন। বেশ মোহময়ী হওয়ার চেষ্টা করছে সিরিজার মতন। এখনই এমন অবস্থা, এরপরে তাহলে কি হবে? স্বামী পালিয়ে যাওয়া সিরিজারই মতন গ্রামের একটা মেয়ে, মুখে কোনো হতাশার ছাপ নেই। যেন নতুন কোন দাদাবাবু জুটে যাওয়াতে বেশ স্বস্তি বোধ করছে মনে মনে।
-- "তোমরা কি আমাকে কোথাও ভাগানোর মতলব করছো?"
দোলন বেশ চোখ পাকিয়ে বললো।
সিরিজা বললো, "না তো। তুই ভুল শুনেছিস।"
-- "তাহলে কার কথা বলছো?"
- "তোর দাদাবাবু বন্ধুর কথা বলছিল। ফোনে পাচ্ছে না তাই।"
দোলন রজতের ঠিক উল্টোদিকে সোফাটায় বসে বললো, "ও আচ্ছা আচ্ছা। তাই? তা দাদাবাবুর আজকে অফিস নেই?"
রজত একটু বিরক্তি চোখেই তাকাল দোলনের দিকে। বললো, "না নেই। আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। তোমাদের দুজনের সাথে গল্প করবো বলে। দেখছ না আমার বন্ধুকেও লাইন মেলাচ্ছি, ওর ওখানে যাবো বলে। কিন্তু ওকে পাচ্ছি না কিছুতেই।"
সামনের সোফাটায় বসে দোলনের দৃষ্টি তখন রজতেরই দিকেই। দাঁড়িয়ে থাকা সিরিজাকেও গ্রাহ্য করছে না। হঠাৎই ব্লাউজের ভেতর থেকে বুকের খাঁজটাকে সামান্য উন্মুক্ত করে রজতের সেখানে চোখ ফেরানোর চেষ্টা করছে। দৃশ্যমান খাঁজটা রজতের একবার নজরে পড়েছে ঠিকই। কিন্তু মজা লুটে নেবার জন্য উদগ্রীব না হয়ে ও বরং সিরিজার দিকেই তাকাচ্ছে বেশি। কারন সিরিজাও যদি ঘাড় ঘুরিয়ে দোলনের ঐ রকম সকম একবার লক্ষ্য করে।
সিরিজা জীবনে আসার পর থেকে সেই মেয়েমানুষের বুকের দিকে তাকানোর লোলুপ দৃষ্টিটা আর নেই। রজত আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে। এখন সিরিজার জায়গা ওর জীবনে আর কেউ নিতে পারবে না। সে দোলই হোক বা রেশমী হোক। একজনকে তো দিবাকরের সাথে জুড়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। আর এই মেয়েটিকে যে কার সাথে জুড়ে দেওয়া যায়, তাই নিয়েই ভেবেচিন্তে মাথা আরও খারাপ হচ্ছে।
প্রায় কান্ডজ্ঞানহীন হয়েই দোলন এবার শাড়ী সরিয়ে বুকের ব্লাউজের একটা হুক লাগাতে লাগলো রজতের সামনে। যেন ঘর থেকে শাড়ী পড়ে আসার সময় ব্লাউজের হুক লাগাতে ভুলে গেছে।
এইসব যৌনকামনামাখা আবেদন ফুটিয়ে তোলা কিসের জন্য? যৌনপ্ররোচক ভঙ্গীটা যে ওকে উত্তেজিত করার জন্যই সেটা রজতের বুঝতে বাকী রইলো না। ও বেশ সতর্ক হল। বুঝলো, মেয়েটা সিরিজাকে যথেষ্টই বেগ দেবে এবার থেকে। পেটে পেটে যার এমন দুষ্টু বুদ্ধি রয়েছে, কোনদিন পুরো ব্লাউজটাই না খুলে দাঁড়িয়ে পড়ে রজতের সামনে।
সিরিজা খেয়াল করেনি দোলনের কান্ডকারখানা। রজতক বললো, "আজ কিন্তু ঘরে কোন বাজার নেই। সুতরাং বাজার থেকে শাকসব্জী, মাছ মাংস কিনে আনলে ভালো হয়। দোলনও বললো, হ্যাঁ কতদিন তোমার হাতের রান্না খাইনি। তুমি তো ভালো রাঁধতে পারো আমি জানি।"
রজত আর একবার তাকানোর চেষ্টা করছিল দোলনের দিকে। ওকে দোলন বললো, "আমিও কিন্তু ভালো রান্না জানি। তোমাকে রেঁধে খাওয়াতে পারি। তবে সিরিজার মত অত ভালো নয়।"
রজত মনে মনে বললো, "এ বাড়ীতে আসার পর থেকে আর সিরিজার রান্না সেরকম ভাবে খেলাম কোথায়? দুদিন তো হোটেলের খাবার খেয়েই আমাদের চলে গেল। আজ নয় তুমিই রান্নাটা করো, দুষ্টু মেয়ে।"
সিরিজা বাজারের থলেটা রজতের হাতে দিয়ে বললো, "বাজারটা তাহলে করে এনে দাও। আজ নয় দোলনই রান্না করবে।"
মুখ ভেংচে দোলন বললো, "না না, আজ নয়। আজ নয়। আমি অন্যদিন করবো। রান্নাটা বরং তুমিই করো আজকে। আমি বরং দাদাবাবুর সাথে বসে গল্প করবো আজকে। সময়টা বেশ ভালোই কাটবে।"
জামা প্যান্ট গলিয়ে বাজার করবে বলে বেরোতেই যাচ্ছিলো রজত। এমন সময় দিবাকরের ফোনটা এল ওর মোবাইলে। রজত ধরামাত্রই দিবাকর বললো, "সরি। বাথরুমে ছিলাম। তোমার ফোন ধরতে পারিনি। তাই করলাম তোমাকে। বলো কি বলছো? ফোন করেছিলে কেন? কিছু খবর আছে নাকি?"
রজত ফোনে দিবাকরকে বললো, "দাঁড়াও, দাঁড়াও। আমি এখন বাজারে যাচ্ছি, বাইরে বেরিয়েই তোমার সাথে কথা বলছি।"
সিরিজা, দোলন দুজনেই রজতের সামনে রয়েছে। এই অবস্থায় দিবাকরকে কিছু বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। রজত থলেটা একহাতে নিয়ে অন্যহাতে মোবাইলটা কানে ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। রাস্তায় বেরিয়েই দিবাকরকে বললো, "খুব বিপদে পড়েছি। ঐ জন্যই ফোন করেছিলাম তোমাকে।"
দিবাকর বললো, "কেন কি হল আবার?"
রজত একটু কারচুপি করে বললো, "আরে..... সিরিজার গ্রাম থেকে একটা মেয়ে চলে এসেছে এখানে। বলা নেই কওয়া নেই। সিরিজা আর আমি ওকে নিয়ে এখন হিমশিম খাচ্ছি। তুমি এ বিপদ থেকে এখন আমায় উদ্ধার করো।"
দিবাকর একটু অবাক হয়েই বললো, "আমি আবার কিভাবে উপকার করবো?"
রজত স্মরন করিয়ে দিল দিবাকরকে। বললো, "তোমার মনে নেই? তুমি থাকতে শ্বশুড় আর বউ এসেছিল এ বাড়ীতে? আবার যদি আসে? মেয়েটা জানে আমি সিরিজাকে ভালোবাসি। আমার বউকে দেখতে পারলে মুশকিল হয়ে যাবে। ওকে এখান থেকে বিদায় করতে পারছি না।"
দিবাকর একটু হেসে বললো, "গ্রাম থেকে যখন এসেছে, তখন আবার গ্রামেই পাঠিয়ে দাও না। তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।"
রজত একটু বিরক্ত হয়েই বললো, "এখনই কি করে পাঠাবো? সবে তো আজই এসেছে। দু তিনদিন না গেলে ওকে ভাগাতে পারছি না।"
দিবাকর বললো, "তা আমাকে কি করতে বলছো?"
রজত বললো, "আমি বলছিলাম, যদি ওকে তোমার ওখানে দুতিনদিনের জন্য পাঠিয়ে দিই? তোমার অসুবিধে আছে?"
একটু ভেবে দিবাকর বললো, "তা অসুবিধে কেন হবে? তোমার জন্য আমি তো সবসময়ই আছি। তবে তোমার সাথে থেকে থেকে এখন আমি অনেকটা তোমার মতই হয়ে গেছি। বউকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিরিজার সাথে প্রেম করছো, সিরিজা যখন সব মেনেই নিয়েছে তখন ঐ মেয়েটাকেই নিয়েই বা তোমার এত ভয় কিসের? গ্রামের মেয়ে বলেই তাকে মাথায় করে রাখতে হবে নাকি? ওকে বলে দাও না, তোমার সিরিজা ছাড়াও বউ আছে একটা। সে যদি ও বাড়ীতে আবার আসে, ঐ গ্রামের মেয়ে যেন বেশি ছটফট না করে। ব্যাস্ তাহলেই তো হল।"
রজত যেন কিছুতেই বোঝাতে পারছে না দিবাকরকে। বললো, "তুমি বুঝতে পারছো না, ব্যাপারটা তা নয়। আসল ব্যাপারটা অন্যখানে।"
দিবাকর একটু ঠাট্টার ছলেই বললো, "আমি সব বুঝি। নতুন মেয়ে দেখে আবার যদি তোমার আসক্তি জেগে যায়, তাই চোখের আড়াল থেকে দূর করতে চাইছো। আমি জানি সিরিজাকে তুমি ঠকাবে না। ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে সিরিজার সাথে একটু একাত্ম হয়ে যেতে চাইছো। অন্য কেউ ঘরে থাকলে কি আর নিরিবিলিতে প্রেম করা সম্ভব? আমি সব বুঝি।"
রজত মনে মনে বললো, "তুমি ছাই বোঝো। ও মেয়ে এখন সিরিজার দেখাদেখি আমার সাথেই ভিড়তে চাইছে। সে আর কি করে বোঝাবো তোমাকে? ঘাড় থেকে নামলেই তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।"
রজতকে অবাক করে দিবাকর একটা দারুন কথা বললো এবার। বেশ একটু গম্ভীর ভাবেই বললো, "আমার কোন আপত্তি নেই। তবে রেশমিকে নিয়ে তুমি আর সিরিজা যেভাবে এত খাটাখাটনি করছো। শেষ পর্যন্ত তোমাদের খাটনি জলে চলে গেলে আমি কিন্তু তোমারই পথ ধরবো।"
রজত অবাক হয়ে বললো, "মানে?"
দিবাকর বললো, "তুমি যেমন গ্রামের মেয়ে ধরে নিয়ে এসেছ। তেমনি আমিও ঐ গ্রামের মেয়েটাকে পটিয়ে নেব। তারপর ওটাকেই বিয়ে করবো।"
ফোনটা কানে ধরে বেশ হাসছিল রজত। দিবাকরকে বললো, "তোমার বেশ পরিবর্তন হয়েছে দিবাকর। আগে এমন কথা তোমার মুখ দিয়ে কোনদিন শুনিনি।"
ওকে আরও অবাক করে দিবাকর বললো, "কেমন দেখতে গো মেয়েটাকে? সিরিজার মতন? নাকি অন্যরকম?"
রজত এবার একটু ধমকের স্বরেই দিবাকরকে বললো, "আমি বাজার থেকে ফিরেই সিরিজাকে সব বলছি, যে তুমি এখন রেশমিকে ভুলে কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলছো, ঐ তখন বকা দেবে তোমায়। তোমার গ্রামের মেয়ের প্রতি পীড়িত সব আমি বার করছি।"
ফোনে দুজনেই হাসতে লাগলো। রজত দিবাকরকে বললো, "এসো না আজ সন্ধেবেলা, একটু জমিয়ে আড্ডা হবে আবার আগের মতন।"
দিবাকর ফোন ছাড়ার আগে বললো, "আসছি তাহলে। তোমার নতুন অতিথিকে গিয়ে একবার দেখতে হবে, কেমন? গ্রামের মেয়ের প্রতি আগ্রহ আমারও বেশ বেড়ে গেছে তোমায় দেখে। একবার গিয়েই দেখিনা মেয়েটা কেমন। তারপর না হয় ভেবে চিন্তে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। রেশমি তো রইলো মাথায়। একেও একবার চাক্ষুস দেখে নিই। অসুবিধা তো কিছু নেই?"
দিবাকরের সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে রজত বললো, "এও কিন্তু বিবাহিতা, সেটা কিন্তু মাথায় রেখ।"
রজতের কথা শুনে দিবাকর একটু দমে গেল। বললো, "বিবাহিতা? কি ব্যাপার কি বলো তো? সব বিয়ে করা মেয়েগুলো লাইন দিয়ে যাচ্ছে এক এক করে তোমার বাড়ীতে। এ তো বিবাহিত মেয়েদের হাট বসেছে দেখছি তোমার ফ্ল্যাটে। ধন্য রজত ধন্য। তোমার বউ যে কেন তোমায় ছেড়ে চলে গেল। খুব ভুল করলো। আমার তো কপালে একটাই জুটল না। আর তোমার দু-দুটো?"
রজত বললো, "রাখো তো তোমার ইয়ার্কী। এসব ফাজলামি ছাড়ো। বিকেলে এসো। আমি অপেক্ষা করবো।"
বাজার থেকে মাছ আর তরকারী কিনে কিছুক্ষণ বাদেই ফ্ল্যাটে ফিরল রজত। বাজারের থলে একহাতে নিয়ে আরেক হাতে কলিংবেল টিপতেই, দরজা খুলে সামনে এসে দাড়াল দোলন। রজতের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, "আমাকে ওটা দাও, আমি ভেতরে রেখে আসছি।"
রজত থলেটা ওর হাতে দিয়ে বললো, "সিরিজা কোথায়? ওকে দেখতে পাচ্ছি না।"
ফিক ফিক করে হেসে দোলন বললো, "সিরিজা নেই। চলে গেছে।"
-- "চলে গেছে!"
রজত অবাক হয়ে চোখমুখ লাল করে ফেললো। দোলনকে বললো, "চলে গেছে মানে?"
দোলন বললো, "কেন আমি তো রয়েছি। তোমার কি চাই বলো না?"
রজত বেশ রেগে গিয়েই এবার বললো, "ইয়ার্কী মেরো না আমার সঙ্গে? সিরিজা কোথায় গেছে বলো?"
দোলন তখনও হাসছিল। রজতকে বললো, "সিরিজার জন্য তোমার খুব দরদ? তাই না দাদাবাবু। আমি যেই বললাম নেই। অমনি তুমি উতলা হয়ে পড়লে। আর রাগ দেখাচ্ছ আমার ওপর। কেন আমি কি দোষ করলাম?"
শোবার ঘরের ভেতরটা একবার দেখে নিয়ে রজত বললো, "আচ্ছা মুশকিল তো? আমি যাবার আগেই যে মেয়েটা ছিল, আর আমি আসা মাত্রই সে হাওয়া হয়ে গেল? কোথায় গেল এখন? সেটাই বলো না আমাকে।"
সোফার ওপর বসে হেসে গড়িয়ে পড়ে দোলন বললো, "বুঝেছি বুঝেছি, আর রাগ দেখাতে হবে না আমাকে। ও ঘরেই আছে।"
- "কোথায়?"
-- "বাথরুমে।"
দোলন খুব হাসতে লাগলো। রজত বুঝলো, আসলে বাথরুমের দরজাটা যে ভেতর থেকে লাগানো রয়েছে। সেটা ও বুঝেই উঠতে পারেনি। মেয়েটা খুব মজা নিচ্ছে এখন রজতের উতলা হওয়া দেখে। ওকে ইচ্ছে করেই বলেছে দোলন, যাতে রজত টেনশনে পড়ে যায়।
বাচ্চাটা শোবার ঘরে খাটের ওপর শুয়ে ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎ একটু কেঁদে ওঠাতে দোলন এবার ভেতরের ঘরে গেল বাচ্চাটার কান্না রুখতে। রজত একটা সিগারেট ধরিয়ে সোফার ওপর বসল। মনে মনে বললো, "দাঁড়াও না! দিবাকর আসুক। তারপর তোমার মজা আমি দেখাচ্ছি। সিরিজাকে নিয়ে হিংসা আর আমাকে নিয়ে তোমার ফাজলামি, সব বার করে দেব আজ সন্ধেবেলা। শুধু দিবাকরের এসে যাওয়াটা দরকার।"
বাচ্চাটার কান্না তখনও থামছে না। রজত দেখলো দোলন ওকে আবার ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাচ্চাটাকে বুকে নিয়ে ঘুমপাড়ানি গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। একটু অবাক হয়েই এবার ও দোলনকে দেখতে লাগলো একদৃষ্টে। সিরিজার ওপর যার এত হিংসে। কিন্তু বাচ্চাটার ওপর থেকে এখনও মায়া চলে যায়নি দোলনের। ও যেন সেই মায়ামমতা দিয়েই বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। হয়তো পাপ নেই শরীরে। শুধু রজতকে পরীক্ষা করে দেখছে, এই ফ্ল্যাটের চার দেওয়ালের মধ্যে সিরিজার মত ওকেও রজত কিছু করে বসে কিনা।
চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত
দোলনকে বললো, "তুই কিছু চিন্তা করিস না। তোর একটা ব্যাবস্থা আমি শিগগীরই করছি।"
ঘরের মধ্যে নগ্ন হয়েই কাপড় ছাড়তে লাগলো দোলন। ভিজে কাপড়টা একপাশে ফেলে দিয়ে সিরিজাকে বললো, "একটা শাড়ী দাও না পরি।"
সিরিজা বললো, "এভাবে কাপড় ছাড়িস না দোলন। তোর দাদাবাবুর চোখ পড়লে খারাপ ভাববে।"
হাসতে হাসতে দোলন বললো, "আহা ন্যাকা। তুমি যেন ছাড়ো না আবার?"
- "আমি কি ঘরে ছাড়ি নাকি?"
-- "কোথায় ছাড়ো তাহলে?"
- "আমি তো বাথরুমে ছাড়ি।"
-- "বাথরুমে? হা হা হা।"
জোরে হা হা করে হাসতে লাগলো দোলন। সিরিজার ওর হাসি দেখে ভীষন অস্বস্তি হতে লাগলো। রাগের চোটে দোলনের মুখের ওপর নিজের পুরোনো শাড়ীটা ছুঁড়ে দিয়ে ও ঘর থেকে বেরিয়ে এল।
বাইরের ঘরে বসে রজত তখনও দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সিরিজা আসতেই ও বললো, "সিরিজা, দিবাকরকে কিছুতেই পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ফোন রেখে দিয়ে ও কোথাও গেছে। নইলে আমার ফোন ধরবে না কেন?"
দোলনের ব্যাপারে সিরিজা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, রজত বললো, "আমাকে বলতে হবে না আমি সব শুনেছি। কি আর করবে? ঝ্যামেলা যখন বাড়ীত ডেকে এনেছ, তখন পোয়াও। এছাড়া তো কোন গতি নেই। আমি কি আর সাধে বলেছি? ও মেয়ে তোমাকে আমাকে দুজনের কাউকেই স্বস্তিতে থাকতে দেবে না এখন থেকে।"
সিরিজা বললো, "তুমি দিবাকরদার বাড়ী যাবে না?"
-- "কি করে যাবো? ফোনই তো ধরছে না। তারপরে যদি বাড়ী গিয়ে না পাই?"
সিরিজা কিছুক্ষণ ভেবে তারপর বললো, "এক কাজ করলে হয় না?"
রজত বেশ কৌতূহল আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞাসা করলো, "কি কাজ?"
- "দোলনকে বলে দিই, তোমার শ্বশুড়মশাই আর তোমার বউ এসেছিল কালকে। আবার আসতে পারে যখন তখন। তোকে এখানে দেখলে মুশকিল হবে। দাদাবাবুর বউ তোকে চেনে। এখানে তোকে দেখলে খারাপ ভাবতে পারে। তার চেয়ে দাদাবাবু তোকে তার বন্ধুর বাড়ী রেখে আসুক কয়েকদিনের জন্য। তুইও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবি ওখানে।"
সব শুনে রজত বললো, "ব্যাপারটা তো সেই একই হল সিরিজা। সেই তো দিবাকরকে রাজী করানোর ব্যাপার। ওকে ফোনে পেলে তবে তো? তাছাড়া তোমার দোলন রানী আবার কি ইচ্ছা পোষণ করে দেখো। সে তো থেকে থেকেই এখন কথা দিয়ে হুল ফোটাচ্ছে শরীরে। আমার মনে হয় নিজে না গিয়ে শেষ পর্যন্ত তোমাকেই যেতে বলবে দিবাকরের বাসায়।"
ঘরে ঢুকে দোলন বললো, "তোমরা দুজনে কোথায় আমার যাবার কথা বলছো গো? কারুর বাড়ীতে?"
একটু ভ্যাবাচাকা খেয়েই রজত সিরিজার দিকে তাকালো। দোলন একেবারে রজত আর সিরিজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রজত দেখলো সিরিজারই একটা শাড়ী পড়েছে দোলন। বেশ মোহময়ী হওয়ার চেষ্টা করছে সিরিজার মতন। এখনই এমন অবস্থা, এরপরে তাহলে কি হবে? স্বামী পালিয়ে যাওয়া সিরিজারই মতন গ্রামের একটা মেয়ে, মুখে কোনো হতাশার ছাপ নেই। যেন নতুন কোন দাদাবাবু জুটে যাওয়াতে বেশ স্বস্তি বোধ করছে মনে মনে।
-- "তোমরা কি আমাকে কোথাও ভাগানোর মতলব করছো?"
দোলন বেশ চোখ পাকিয়ে বললো।
সিরিজা বললো, "না তো। তুই ভুল শুনেছিস।"
-- "তাহলে কার কথা বলছো?"
- "তোর দাদাবাবু বন্ধুর কথা বলছিল। ফোনে পাচ্ছে না তাই।"
দোলন রজতের ঠিক উল্টোদিকে সোফাটায় বসে বললো, "ও আচ্ছা আচ্ছা। তাই? তা দাদাবাবুর আজকে অফিস নেই?"
রজত একটু বিরক্তি চোখেই তাকাল দোলনের দিকে। বললো, "না নেই। আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। তোমাদের দুজনের সাথে গল্প করবো বলে। দেখছ না আমার বন্ধুকেও লাইন মেলাচ্ছি, ওর ওখানে যাবো বলে। কিন্তু ওকে পাচ্ছি না কিছুতেই।"
সামনের সোফাটায় বসে দোলনের দৃষ্টি তখন রজতেরই দিকেই। দাঁড়িয়ে থাকা সিরিজাকেও গ্রাহ্য করছে না। হঠাৎই ব্লাউজের ভেতর থেকে বুকের খাঁজটাকে সামান্য উন্মুক্ত করে রজতের সেখানে চোখ ফেরানোর চেষ্টা করছে। দৃশ্যমান খাঁজটা রজতের একবার নজরে পড়েছে ঠিকই। কিন্তু মজা লুটে নেবার জন্য উদগ্রীব না হয়ে ও বরং সিরিজার দিকেই তাকাচ্ছে বেশি। কারন সিরিজাও যদি ঘাড় ঘুরিয়ে দোলনের ঐ রকম সকম একবার লক্ষ্য করে।
সিরিজা জীবনে আসার পর থেকে সেই মেয়েমানুষের বুকের দিকে তাকানোর লোলুপ দৃষ্টিটা আর নেই। রজত আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে। এখন সিরিজার জায়গা ওর জীবনে আর কেউ নিতে পারবে না। সে দোলই হোক বা রেশমী হোক। একজনকে তো দিবাকরের সাথে জুড়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। আর এই মেয়েটিকে যে কার সাথে জুড়ে দেওয়া যায়, তাই নিয়েই ভেবেচিন্তে মাথা আরও খারাপ হচ্ছে।
প্রায় কান্ডজ্ঞানহীন হয়েই দোলন এবার শাড়ী সরিয়ে বুকের ব্লাউজের একটা হুক লাগাতে লাগলো রজতের সামনে। যেন ঘর থেকে শাড়ী পড়ে আসার সময় ব্লাউজের হুক লাগাতে ভুলে গেছে।
এইসব যৌনকামনামাখা আবেদন ফুটিয়ে তোলা কিসের জন্য? যৌনপ্ররোচক ভঙ্গীটা যে ওকে উত্তেজিত করার জন্যই সেটা রজতের বুঝতে বাকী রইলো না। ও বেশ সতর্ক হল। বুঝলো, মেয়েটা সিরিজাকে যথেষ্টই বেগ দেবে এবার থেকে। পেটে পেটে যার এমন দুষ্টু বুদ্ধি রয়েছে, কোনদিন পুরো ব্লাউজটাই না খুলে দাঁড়িয়ে পড়ে রজতের সামনে।
সিরিজা খেয়াল করেনি দোলনের কান্ডকারখানা। রজতক বললো, "আজ কিন্তু ঘরে কোন বাজার নেই। সুতরাং বাজার থেকে শাকসব্জী, মাছ মাংস কিনে আনলে ভালো হয়। দোলনও বললো, হ্যাঁ কতদিন তোমার হাতের রান্না খাইনি। তুমি তো ভালো রাঁধতে পারো আমি জানি।"
রজত আর একবার তাকানোর চেষ্টা করছিল দোলনের দিকে। ওকে দোলন বললো, "আমিও কিন্তু ভালো রান্না জানি। তোমাকে রেঁধে খাওয়াতে পারি। তবে সিরিজার মত অত ভালো নয়।"
রজত মনে মনে বললো, "এ বাড়ীতে আসার পর থেকে আর সিরিজার রান্না সেরকম ভাবে খেলাম কোথায়? দুদিন তো হোটেলের খাবার খেয়েই আমাদের চলে গেল। আজ নয় তুমিই রান্নাটা করো, দুষ্টু মেয়ে।"
সিরিজা বাজারের থলেটা রজতের হাতে দিয়ে বললো, "বাজারটা তাহলে করে এনে দাও। আজ নয় দোলনই রান্না করবে।"
মুখ ভেংচে দোলন বললো, "না না, আজ নয়। আজ নয়। আমি অন্যদিন করবো। রান্নাটা বরং তুমিই করো আজকে। আমি বরং দাদাবাবুর সাথে বসে গল্প করবো আজকে। সময়টা বেশ ভালোই কাটবে।"
জামা প্যান্ট গলিয়ে বাজার করবে বলে বেরোতেই যাচ্ছিলো রজত। এমন সময় দিবাকরের ফোনটা এল ওর মোবাইলে। রজত ধরামাত্রই দিবাকর বললো, "সরি। বাথরুমে ছিলাম। তোমার ফোন ধরতে পারিনি। তাই করলাম তোমাকে। বলো কি বলছো? ফোন করেছিলে কেন? কিছু খবর আছে নাকি?"
রজত ফোনে দিবাকরকে বললো, "দাঁড়াও, দাঁড়াও। আমি এখন বাজারে যাচ্ছি, বাইরে বেরিয়েই তোমার সাথে কথা বলছি।"
সিরিজা, দোলন দুজনেই রজতের সামনে রয়েছে। এই অবস্থায় দিবাকরকে কিছু বলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। রজত থলেটা একহাতে নিয়ে অন্যহাতে মোবাইলটা কানে ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। রাস্তায় বেরিয়েই দিবাকরকে বললো, "খুব বিপদে পড়েছি। ঐ জন্যই ফোন করেছিলাম তোমাকে।"
দিবাকর বললো, "কেন কি হল আবার?"
রজত একটু কারচুপি করে বললো, "আরে..... সিরিজার গ্রাম থেকে একটা মেয়ে চলে এসেছে এখানে। বলা নেই কওয়া নেই। সিরিজা আর আমি ওকে নিয়ে এখন হিমশিম খাচ্ছি। তুমি এ বিপদ থেকে এখন আমায় উদ্ধার করো।"
দিবাকর একটু অবাক হয়েই বললো, "আমি আবার কিভাবে উপকার করবো?"
রজত স্মরন করিয়ে দিল দিবাকরকে। বললো, "তোমার মনে নেই? তুমি থাকতে শ্বশুড় আর বউ এসেছিল এ বাড়ীতে? আবার যদি আসে? মেয়েটা জানে আমি সিরিজাকে ভালোবাসি। আমার বউকে দেখতে পারলে মুশকিল হয়ে যাবে। ওকে এখান থেকে বিদায় করতে পারছি না।"
দিবাকর একটু হেসে বললো, "গ্রাম থেকে যখন এসেছে, তখন আবার গ্রামেই পাঠিয়ে দাও না। তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।"
রজত একটু বিরক্ত হয়েই বললো, "এখনই কি করে পাঠাবো? সবে তো আজই এসেছে। দু তিনদিন না গেলে ওকে ভাগাতে পারছি না।"
দিবাকর বললো, "তা আমাকে কি করতে বলছো?"
রজত বললো, "আমি বলছিলাম, যদি ওকে তোমার ওখানে দুতিনদিনের জন্য পাঠিয়ে দিই? তোমার অসুবিধে আছে?"
একটু ভেবে দিবাকর বললো, "তা অসুবিধে কেন হবে? তোমার জন্য আমি তো সবসময়ই আছি। তবে তোমার সাথে থেকে থেকে এখন আমি অনেকটা তোমার মতই হয়ে গেছি। বউকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিরিজার সাথে প্রেম করছো, সিরিজা যখন সব মেনেই নিয়েছে তখন ঐ মেয়েটাকেই নিয়েই বা তোমার এত ভয় কিসের? গ্রামের মেয়ে বলেই তাকে মাথায় করে রাখতে হবে নাকি? ওকে বলে দাও না, তোমার সিরিজা ছাড়াও বউ আছে একটা। সে যদি ও বাড়ীতে আবার আসে, ঐ গ্রামের মেয়ে যেন বেশি ছটফট না করে। ব্যাস্ তাহলেই তো হল।"
রজত যেন কিছুতেই বোঝাতে পারছে না দিবাকরকে। বললো, "তুমি বুঝতে পারছো না, ব্যাপারটা তা নয়। আসল ব্যাপারটা অন্যখানে।"
দিবাকর একটু ঠাট্টার ছলেই বললো, "আমি সব বুঝি। নতুন মেয়ে দেখে আবার যদি তোমার আসক্তি জেগে যায়, তাই চোখের আড়াল থেকে দূর করতে চাইছো। আমি জানি সিরিজাকে তুমি ঠকাবে না। ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে সিরিজার সাথে একটু একাত্ম হয়ে যেতে চাইছো। অন্য কেউ ঘরে থাকলে কি আর নিরিবিলিতে প্রেম করা সম্ভব? আমি সব বুঝি।"
রজত মনে মনে বললো, "তুমি ছাই বোঝো। ও মেয়ে এখন সিরিজার দেখাদেখি আমার সাথেই ভিড়তে চাইছে। সে আর কি করে বোঝাবো তোমাকে? ঘাড় থেকে নামলেই তো হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।"
রজতকে অবাক করে দিবাকর একটা দারুন কথা বললো এবার। বেশ একটু গম্ভীর ভাবেই বললো, "আমার কোন আপত্তি নেই। তবে রেশমিকে নিয়ে তুমি আর সিরিজা যেভাবে এত খাটাখাটনি করছো। শেষ পর্যন্ত তোমাদের খাটনি জলে চলে গেলে আমি কিন্তু তোমারই পথ ধরবো।"
রজত অবাক হয়ে বললো, "মানে?"
দিবাকর বললো, "তুমি যেমন গ্রামের মেয়ে ধরে নিয়ে এসেছ। তেমনি আমিও ঐ গ্রামের মেয়েটাকে পটিয়ে নেব। তারপর ওটাকেই বিয়ে করবো।"
ফোনটা কানে ধরে বেশ হাসছিল রজত। দিবাকরকে বললো, "তোমার বেশ পরিবর্তন হয়েছে দিবাকর। আগে এমন কথা তোমার মুখ দিয়ে কোনদিন শুনিনি।"
ওকে আরও অবাক করে দিবাকর বললো, "কেমন দেখতে গো মেয়েটাকে? সিরিজার মতন? নাকি অন্যরকম?"
রজত এবার একটু ধমকের স্বরেই দিবাকরকে বললো, "আমি বাজার থেকে ফিরেই সিরিজাকে সব বলছি, যে তুমি এখন রেশমিকে ভুলে কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলছো, ঐ তখন বকা দেবে তোমায়। তোমার গ্রামের মেয়ের প্রতি পীড়িত সব আমি বার করছি।"
ফোনে দুজনেই হাসতে লাগলো। রজত দিবাকরকে বললো, "এসো না আজ সন্ধেবেলা, একটু জমিয়ে আড্ডা হবে আবার আগের মতন।"
দিবাকর ফোন ছাড়ার আগে বললো, "আসছি তাহলে। তোমার নতুন অতিথিকে গিয়ে একবার দেখতে হবে, কেমন? গ্রামের মেয়ের প্রতি আগ্রহ আমারও বেশ বেড়ে গেছে তোমায় দেখে। একবার গিয়েই দেখিনা মেয়েটা কেমন। তারপর না হয় ভেবে চিন্তে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। রেশমি তো রইলো মাথায়। একেও একবার চাক্ষুস দেখে নিই। অসুবিধা তো কিছু নেই?"
দিবাকরের সব আশায় জল ঢেলে দিয়ে রজত বললো, "এও কিন্তু বিবাহিতা, সেটা কিন্তু মাথায় রেখ।"
রজতের কথা শুনে দিবাকর একটু দমে গেল। বললো, "বিবাহিতা? কি ব্যাপার কি বলো তো? সব বিয়ে করা মেয়েগুলো লাইন দিয়ে যাচ্ছে এক এক করে তোমার বাড়ীতে। এ তো বিবাহিত মেয়েদের হাট বসেছে দেখছি তোমার ফ্ল্যাটে। ধন্য রজত ধন্য। তোমার বউ যে কেন তোমায় ছেড়ে চলে গেল। খুব ভুল করলো। আমার তো কপালে একটাই জুটল না। আর তোমার দু-দুটো?"
রজত বললো, "রাখো তো তোমার ইয়ার্কী। এসব ফাজলামি ছাড়ো। বিকেলে এসো। আমি অপেক্ষা করবো।"
বাজার থেকে মাছ আর তরকারী কিনে কিছুক্ষণ বাদেই ফ্ল্যাটে ফিরল রজত। বাজারের থলে একহাতে নিয়ে আরেক হাতে কলিংবেল টিপতেই, দরজা খুলে সামনে এসে দাড়াল দোলন। রজতের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, "আমাকে ওটা দাও, আমি ভেতরে রেখে আসছি।"
রজত থলেটা ওর হাতে দিয়ে বললো, "সিরিজা কোথায়? ওকে দেখতে পাচ্ছি না।"
ফিক ফিক করে হেসে দোলন বললো, "সিরিজা নেই। চলে গেছে।"
-- "চলে গেছে!"
রজত অবাক হয়ে চোখমুখ লাল করে ফেললো। দোলনকে বললো, "চলে গেছে মানে?"
দোলন বললো, "কেন আমি তো রয়েছি। তোমার কি চাই বলো না?"
রজত বেশ রেগে গিয়েই এবার বললো, "ইয়ার্কী মেরো না আমার সঙ্গে? সিরিজা কোথায় গেছে বলো?"
দোলন তখনও হাসছিল। রজতকে বললো, "সিরিজার জন্য তোমার খুব দরদ? তাই না দাদাবাবু। আমি যেই বললাম নেই। অমনি তুমি উতলা হয়ে পড়লে। আর রাগ দেখাচ্ছ আমার ওপর। কেন আমি কি দোষ করলাম?"
শোবার ঘরের ভেতরটা একবার দেখে নিয়ে রজত বললো, "আচ্ছা মুশকিল তো? আমি যাবার আগেই যে মেয়েটা ছিল, আর আমি আসা মাত্রই সে হাওয়া হয়ে গেল? কোথায় গেল এখন? সেটাই বলো না আমাকে।"
সোফার ওপর বসে হেসে গড়িয়ে পড়ে দোলন বললো, "বুঝেছি বুঝেছি, আর রাগ দেখাতে হবে না আমাকে। ও ঘরেই আছে।"
- "কোথায়?"
-- "বাথরুমে।"
দোলন খুব হাসতে লাগলো। রজত বুঝলো, আসলে বাথরুমের দরজাটা যে ভেতর থেকে লাগানো রয়েছে। সেটা ও বুঝেই উঠতে পারেনি। মেয়েটা খুব মজা নিচ্ছে এখন রজতের উতলা হওয়া দেখে। ওকে ইচ্ছে করেই বলেছে দোলন, যাতে রজত টেনশনে পড়ে যায়।
বাচ্চাটা শোবার ঘরে খাটের ওপর শুয়ে ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎ একটু কেঁদে ওঠাতে দোলন এবার ভেতরের ঘরে গেল বাচ্চাটার কান্না রুখতে। রজত একটা সিগারেট ধরিয়ে সোফার ওপর বসল। মনে মনে বললো, "দাঁড়াও না! দিবাকর আসুক। তারপর তোমার মজা আমি দেখাচ্ছি। সিরিজাকে নিয়ে হিংসা আর আমাকে নিয়ে তোমার ফাজলামি, সব বার করে দেব আজ সন্ধেবেলা। শুধু দিবাকরের এসে যাওয়াটা দরকার।"
বাচ্চাটার কান্না তখনও থামছে না। রজত দেখলো দোলন ওকে আবার ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাচ্চাটাকে বুকে নিয়ে ঘুমপাড়ানি গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। একটু অবাক হয়েই এবার ও দোলনকে দেখতে লাগলো একদৃষ্টে। সিরিজার ওপর যার এত হিংসে। কিন্তু বাচ্চাটার ওপর থেকে এখনও মায়া চলে যায়নি দোলনের। ও যেন সেই মায়ামমতা দিয়েই বাচ্চাটাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে। হয়তো পাপ নেই শরীরে। শুধু রজতকে পরীক্ষা করে দেখছে, এই ফ্ল্যাটের চার দেওয়ালের মধ্যে সিরিজার মত ওকেও রজত কিছু করে বসে কিনা।
চতুর্থ অধ্যায় সমাপ্ত