17-10-2020, 08:34 PM
(This post was last modified: 17-10-2020, 08:35 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সমস্ত দেবতা নারাওনের সুরে সুর মেলালো !! বাধ্য হয়ে মহাদেব কে এই কাজের দায়িত্ব নিতে হলো !!
অনেক গুলো পুতুল বানিয়ে তিনি একদিন স্বর্গের কিনারে বসে এক একটি পুতুলের ললাট লিখন লিখতে থাকলেন আর তাদের জীবন দান করতে থাকলেন !! " যা তুই রাজা হবি !!, যা তুই মন্ত্রী হবি !!, যা তুই সেপাই হবি !! , যা তুই চোর হবি !! !! ছেড়েই যাচ্ছেন ! ছেড়েই যাচ্ছেন !! পুতুল আর শেষ হয় না !! সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে ! দেবী দূর্গা কার্তিক কে পাঠালেন ! " যা তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে আয় !! খাবার সময় হয়ে গেছে !!" কার্তিক মহাদেবের কাছে বলল " বাবা বাবা মা খেতে ডাকছে !!"
আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি !!
একে একে গনেশ, লক্ষী, স্বরসতি, নন্দী ভৃঙ্গী সবাই এসে একই উত্তর পেয়ে ফিরে গেল !! দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো ! দেবী দুর্গার পেটে ছুছোয় ডন মারতে শুরু করেছে !! কারণ * ধর্ম অনুযায়ী কোনো পত্নী পতি কে না খাইয়ে খেতে পারেন না !! তাই দুর্গাও কিছুই খেতে পারেন নি !! সন্ধ্যে ছটার সময় দূর্গা আর নিজের রাগ কে ধরে রাখতে পারলেন না !! " শালা বার কে আজ মেরি ফেলবো !!" বোলে শিবের ত্রিশুল উঠিয়ে শিবের দিকে ধেয়ে গেলেন !!
শিব দূর থেকে দেখলেন যে দেবী দূর্গা ধেয়ে আসছেন তাও আবার তারিই ত্রিশুল নিয়ে ! ওই ত্রিশুল দিয়ে যদি শিব কে মারে তাহলে শিবেরও বাঁচার কোনো চান্স নেই ! তার থেকে ভালো পালিয়ে গিয়ে বাঁচার চেষ্টা করা !! পালাতে গিয়ে শিব দেখলেন অনেক গুলো পুতুল তখনও পরে আছে ! আর আজ লাস্ট ডেট ! এদের ছাড়তেই হবে !! তরী ঘড়ি শিব সমস্ত পুতুল গুলোকে তুলে তাদের মধ্যে প্রাণ দিয়ে বললেন " তোরা গিয়ে গাঁড় মারা !!"
ব্যাস ! আমরা সেই গাঁড় মাড়ানোর দলে পরে গেছি ! তাই সারা জীবন গাঁড় মাড়িয়ে যাচ্ছি !!!"
আমার আবৃতি শেষ হোতেই পুরো বাসে হাত তালির ঝর উঠলো !! আর উঠবেই না বা কেন ?? ওঁচাটে ছেলে কবিতাটা তখন কার আমাদের বাংলার বেকার ছেলেদের অসহায়তার দর্পণ ছিল !! যাই হোক আমাদের জলসা শেষ হলো ! কমল দা আমাকে বললেন "চলে আয় পিছনে ! আজ শেষ দিনে আমরা একটু ফুর্তি করে নিই !" আমি কোনো বাক্য ব্যয় না করে পিছনের দিকে চলে গেলাম ! দেখি সব থেকে পিছনের সিটে লাহিড়ি দা , ঘোষ দা আগে থেকেই বোতল খুলে বসে রয়েছেন !
যেহেতু পুরো বাস্ত পর্দা দিয়ে ঘেরা তাই অন্য কারো বোঝার উপায় নেই পিছনের সিটে কি চলছে ! আমি আর কমল দা দুজনে পিছনের সিটে বসে পরে পর্দা টেনে দিলাম ! শুরু হলো আমাদের মাল খাওয়ার পর্ব ! মাল খেতে খেতেই ঘোষ দা বললেন "জীবনে অনেক ঘুরে বেরিয়েছি ! কিন্তু এত আনন্দ কোথাও পাইনি !!" লাহিরিদাও বলে ফেললেন ' এটা বোধ হয় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ টুর !"
কমলদা গম্ভীর মুখে জবাব দিলেন " শ্রেষ্ঠ কিনা জানিনা ! তবে এই টুরে জীবনের অর্ধেক সার্থক হয়ে গেছে সুনন্দর ! তাই না সুনন্দ?"
কমলদার কথা আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝে গেলাম কিন্তু একটু বেশিই বুঝলাম ! ! মনে মনে ভাবতে লাগলাম তৃপ্তিদি কি সব বলে দিয়েছে কমল ডাকে?? প্রশ্ন সূচক মুখ করে কমলদার দিকে তাকালাম |
- আমি কি করে জানব? তুই পেয়েছিস তুই ই জানিস ! বলেই আমাকে একটা ছোট্ট করে চোখ মারলেন !! মুখে হাঁসি !!
আমার ঘাম দিয়ে শরীর থেকে জ্বর নেমে গেল !!
- অর্ধেক জীবন সার্থক? মানে ? ঘোষ দা জিজ্ঞাস্সা করে উঠলেন !
- ও তোমরা এখন বুঝবে না !! তবে এটা তোমাদের জানিয়ে দিই যে সুনন্দ ওর জীবন সাথী পেয়ে গেছে !
- কে? কে? কোথায় পেলো?? দুজনেই সমস্বরে জিজ্ঞাস্সা করে উঠলো !!
- ক্রমশ প্রকাশ্য !! আর সেটা প্রকাশ করব আমাদের পরবর্তী টুরে ! যদি তখন তোমরা থাক তাহলে জানতে পারবে সুনন্দর জীবনসাথীকে ! কমলদা বললেন ! ঘোষ দা আর লাহিড়ি দা জিজ্ঞাস্য করলো নেক্সট টুর কবে আর কোথায়?/ আমাদের এখন থেকেই বলে দাও গুরু ! বাড়ি না ফিরে এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিই !!
- হবে হবে ! তোমাদের সমস্ত কন্টাক্ট ডিটেলস আমি নোট করে রেখেছি ! ঠিক পুজোর পরে পরেই আমরা বেরিয়ে পড়ব ! আর কোথায় যাওয়া হবে সেটা তার আগেই সবার সাথে বসে ঠিক করে নেওয়া যাবে ! এখন তোমরা সুনন্দর ভালবাসার জন্য লাস্ট একটা পেগ বানিয়ে আজকের আসর এখানে শেষ কর !! শেষ পেগে চুমুক দিয়ে সবাই এক সাথে বলে উঠলো "সুনন্দর ভালবাসা দীর্ঘজীবি হোক !"
পেগ শেষ করার সাথে সাথেই আমাদের বাস দাঁড়িয়ে গেল ! ড্রাইভার ঘোসনা করলো " আমরা এখানে রাতের খাবার খাব ! এক ঘন্টা এখানে দাঁড়াবে ! যার যা কিছু করার এখানে করে নিন !"
সবাই একে একে বাস থেকে নেমে গেল ! সবার শেষে আমি মঞ্জু কে নিয়ে নামলাম ! নামার আগে মঞ্জু আমাকে জড়িয়ে ধরে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে নিল ! আমিও মঞ্জু কে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম !! "এখন চল ! খেয়ে নিয়ে তারপর আবার দেখা যাবে !
-এই আমি পেচ্ছাপ করব ! খুব জোরে বাথরুম পেয়েছে !
- চলে যাও পিছনের দিকে লেডিস টয়লেট আছে ! ওই দেখো তৃপ্তি দিও যাচ্ছে ! চলে যাও !
মঞ্জু চলে যেতেই আমি কোনের একটা টেবিলে বসে খাবারের অর্ডার দিলাম ! চিকেন মাসরুম ফ্রায়েড রাইস আর এক প্লেট চিকেন মান্চুরিয়ানের ! কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার টেবিলে চলে এলো ! মঞ্জু ফিরে এসে মান্চুরিয়ানের দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠলো !! " ও আজ কতদিন পরে চিকেন মানচুরিয়ান খাবো !! "
-তোমার জন্যই তো মানচুরিয়ান আর চিকেন মাসরুম ফ্রায়েড রাইস আনিয়েছি ! সোনা ! আজ তুমি আমার সামনে বসে সবটা খাবে !
- আর তুমি??
- আমি শুধু বসে বসে তোমার খাওয়া দেখব !
- না না সেটা হবে না ! তোমাকেও কিছু খেতে হবে !!
- খাবে খাবে ! কেন খাবে না তবে সেটা আমাদের সাথে !! পিছন থেকে কমলদার গলা !!
প্রশ্ন সূচক চোখ নিয়ে কমলদার দিকে তাকালো মঞ্জু ! "আরে বাবা আমরা একপেগ করে মাল আর একটু সিক কাবাব খাবো ! তুই খেতে থাক তোর খাওয়া শেষ হবার আগেই সুনন্দ তোর কাছে ফিরে আসবে !!" কমলদা মঞ্জু কে আশস্ত করলো ! দু একটা টেবিল ছেড়েই একটা টেবিলে লাহিড়ি দা আর ঘোষ দা বসে ছিল ! টেবিলে গ্লাস আর প্লেটে ধোঁয়া উঠতে থাকা সিক কাবাব আর তন্দুরি চিকেন ! আমি আর কমর্দা যেতেই শুরু হয়ে গেল আমাদের পান পর্ব ! সবাই দু পেগ করে খেয়ে
উঠে পরলাম ! সিক কাবাব আর তন্দুরি চিকেনের দৌলতে আমাদের সবার পেট ভরে গেল ! প্লেটে তখনও বেশ কিছুটা কাবাব আর চিকেন ছিল ! কমলদা উঠে গিয়ে তৃপ্তি দিকে দিয়ে এলেন ! তৃপ্তি দি আবার প্লেট নিয়ে মঞ্জুর দিকে এগিয়ে গেলো !!
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আর একবার করে বাথরুম সেরে বাসে উঠে পড়ল ! বাইরে সুধু আমি, কমলদা, তৃপ্তি দি আর মঞ্জু !! আমি আর কমলদা একটা করে সিগারেট ধরলাম ! তৃপ্তি দি ধরা ধরা গলায় প্রশ্ন করলেন " আমাদের ভুলে জাবি নাতো সুনন্দ?"
-আরে ধুর ও ভুলবে কি করে?? আমি কি ওকে ভুলতে দেব?? মঞ্জু তৃপ্তিদির হাথ ধরে বলে উঠলো !!
- না রে মঞ্জু ! জীবন তা বড়ই বিচিত্র ! কে কখন কোথায় থাকে সে নিজেও জানে না ! তাই সময়ের ছাপে সবাইকেই কিছু না কিছু ভুলতেই হয় ! উদাসী গলায় কমলদা বললেন !!
- না কমলদা ! আমি যেখানেই থাকি না কেন ! তোমাদের কোনদিন ভুলবো না !! তোমাদের ফোন নাম্বার আমার কাছে আছে ! আর আমার নাম্বার তোমাদের কাছে আছে ! যখনি মন খারাপ হবে তখনি আমরা কথা বলব !! আর আমি যখন মন্জুদের বাড়ি আসব তখন তোমাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা মারব !! আই প্রমিস ! আমিও আবেগ প্রবন গলায় বলে উঠলাম !!
ভরাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা সবাই বাসে উঠে পরলাম ! সত্যি সময় কত তারাতারি শেষ হয়ে যায় ! আর আমাদের এই আনন্দের সময় যেন সময়ের আগেই শেষ হয়ে গেল !! চোখের পাতা দুটো ভারী হয়ে উঠলো ! মনেতে তখন সুধু একটাই প্রশ্ন ! কাল থেকে আবার মঞ্জুকে ছেড়ে থাকতে হবে !! কিন্তু পারব কি?? বুকের ভিতর থেকে কান্নার দলা পাকিয়ে উঠতে লাগলো ! জোর করে তাকে চাপার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম ! পারলাম না ! মুখ হয়ত চেপে গেল কিন্তু আমার চোখ আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো ! চোখ ফেটে জলের ধারা গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো ! মঞ্জুর সেই একই অবস্থা ! চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে ! শুধু চাপা ফোপানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই বেরুচ্ছে না ! আমি আর থাকতে পারলাম না ! মঞ্জু কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম ! হয়ত একটু জোরেই ! মন্জুও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো ! সমস্ত বাঁধ ভেঙ্গে হাউ হাউ করে মঞ্জু কেঁদে ফেলল !! আমাদের কাঁদার শব্দ টা এবার সত্যিই জোরে হয়ে গেছিল ! আমাদের পরের সিটেই ছিল কমলদারা |তারাতারি পর্দা সরিয়ে কমলদা আর তৃপ্তি দি আমাদের থামাতে চেষ্টা করতে লাগলো ! কিন্তু হাঁসি যেমন একটা রোগ কান্নাও বোধ হয় তাই ! আমাদের থামাতে গিয়ে কখন যে তৃপ্তি দি আর কমল দা কাঁদতে শুরু করেছে সেটা ওরাও ভুলে গেছিল ! হটাত লাহিড়ি দার আবির্ভাব ! "কি হলো তোমরা সব কান্না কাটি করছ কেন??"
- না কিছু নয় ! এই কদিনে সুনন্দ আর মঞ্জু আমাদের এত কাছে চলে এসেছে যে ওদের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার কল্পনাতে আমরা নিজেদের আর ঠিক রাখতে পারিনি ! তাই একটু .. .. চোখ মুছতে মুছতে তৃপ্তি দি বললেন !!
- এই তোরা আর কাঁদিস না আমাদের সাথে তোদের সম্পর্ক শেষ হবার নয় ! আমরা ঠিকই যোগাযোগ রাখব ! এখন ভালো ছেলে মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পর ! তৃপ্তি দি যে ভাবে সিচুএসন সামাল দিলেন সেটা সত্যি প্রশংসার যোগ্য !
- আরে দেখো আমি কাঁদছিনা বলে কি তোমরা ভাবো আমার মন খারাপ হচ্ছে না? কিন্তু আমার ওই একটাই বিরাট দোষ আমি কাঁদতে পারিনা ! লাহিড়ি দা বলে উঠলেন কিন্তু সবাইকে আড়াল করে জামার হাতা দিয়ে নিজের চোখের জল মুছলেন ! পিছনের থেকে ঘোষ দা বলে উঠলেন " বা বা কি সুন্দর কান্নার প্রতিযোগিতা চলছে !! আমি কিন্তু তোমাদের এই প্রতিযোগিতায় নেই !! তোমরা যত খুসি কান্না কাটি করো দু দিন পরে সবাই সবাইকে ভুলে যাবে !!"
- অসম্ভব ! মঞ্জু চিত্কার করে উঠলো !! আমি তারাতারি মঞ্জুর মুখে হাত চাপা দিয়ে দিলাম !! মঞ্জুর মুখ টা কান্নায় ফুলে ফুলে উঠতে লাগলো !!
- চলো আমরা কিছুক্ষণ নিচে বসে গল্প করি ! তাতে হয়ত আমাদের মন কিছুটা হালকা হবে !! লাহিড়ি দা বললেন ! কমদাও বললেন সেই ভালো !! আয় তোরা নিচে নেমে আয় ! আমরা কিছুক্ষণ গল্প করি !!
মঞ্জু নিচে যেতে চাইল না ! তাই আমিও নিচে নামলাম না ! কিন্তু কমলদা, তৃপ্তি দি, ঘোষ দা লাহিড়ি দা নিচে বসে ভরাক্রান্ত মন নিয়ে কথা বার্তা শুরু করে দিলেন !! ঘোষ দা বলে ফেললেন " আরে আমরা কি কারুর শোক সভায় এসেছি যে আমরা এই ভাবে কথা বার্তা বলছি ? তার থেকে বরণ এক কাজ করা যাক ! আজকের এই রাত কে আমরা যেন ঘুমিয়ে না কাটিয়ে একটু আনন্দময় বেদনার স্মৃতি করে দিই ! কি বলো কমলদা??
- হ্যা সেটাই ভালো !! শুরু টা তাহলে আমিই করি !! বলেই কমলদা তার বেসুর গলায় গান ধরলেন "আমার না যদি থাকে সুর , তোমার আছে তুমি তা দেবে ! তোমার গন্ধ হারা ফুল তার কাছে সুরভি নেবে !! এরই নাম প্রেম ! এরই নাম প্রেম !!" মান্নাদের সেই বিখ্যাত গান টা !
গান শেষ হলে সবাই কিছুক্ষণ চুপ করে গেল !! কিন্তু ঘোষ দা ছিল ফুল ফর্মে ! "কি হলো আবার কেউ মরে গেল নাকি?"
এবার তৃপ্তি দি শুরু করলেন পিতাপুত্র ছবির সেই গান যেটা সন্ধ্যা রায় নিজের বুকের রক্ত মিশিয়ে গেয়েছিলেন !" তির বেঁধা পাখি আর গাহিবে না গান ! ভুলে গেছে জীবনের হাঁসি কলতান !!" মাঝ পথেই ঘোষ দা বাঁধা দিলেন !! "কেন আপনি দুক্ষের গান গাইছেন দিদি??" তৃপ্তি দি চুপ হয়ে গেলেন !! কমলদা হাঁক পারলেন " এই সুনন্দ, মঞ্জু তোরা নিচে নেমে আয় আমাদের কিছুই ভালো লাগছে না ! " আমরা তখনও একে ওপর কে জড়িয়ে ধরে বসে আছি ! কমলদার ডাকে আমরা আর থাকতে পারলাম না ! দুজনেই জলভরা চোখে নেমে পরলাম !!
ঘোষ দা বললেন " ঠিক আছে আমি পরিবেশ তাকে হালকা করার জন্য একটা ছড়া বলছি ! এটা স্টেনগান নামে একজন কবি অনেক আগে লিখেছিলেন !! ছড়াটির নাম শব্দ !!
লম্বা টিকি পন্ডিত মশাই
টিকি নেড়ে কন
এখন আমি তোমাদের
পড়াব ব্যাকরণ ! .
টিকি নেড়ে হাত পা
ছুড়ে বোঝান ব্যাকরণ,
বকতে বকতে হাঁপিয়ে গিয়ে
তবেই খান্ত হন !
একমাসের চেষ্টা তে
শেখালেন শব্দ
শব্দের চটে পরা ওঠে
ছেলেরা সব জব্দ !
অবশেষে একদিন ধরলেন
তিনি শব্দের পড়া
যে না পারে বলতে
পেটান তিনি হয়ে জ্ঞানহারা !
সবার শেষে পালা এলো
রায় বাড়ির সন্তুর
শব্দ বলতে বোঝে সে
বিভিন্ন ডাক জন্তুর !
ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে গেল
যেন পেয়েছে ভীষণ ভয় !
টিনের চালে ঢিল মেরে
বলে শব্দ এরেই কয় !
সত্যিই শব্দের এমন অভূতপূর্ব বিশ্লেসন শুনে আমাদের দুখী মন বেশ কিছুটা হালকা হয়ে গেল !!!
এবার কাউকে কিছুই বলতে হলো না !! মঞ্জু নিজেই গুন গুন করে গাইতে শুরু করলো " একটুকু ছোঁওয়া লাগে একটুকু কথা শুনি ! তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী ইই ইইই " তৃপ্তি দিও মঞ্জুর সাথে গলা মেলালেন !! পরিবেশ অনেকটা হালকা হয়ে গেল !! কথায় কথায় কখন যে ভর হয়ে গেছে আমাদের কারুরই খেয়াল ছিলনা ! লাহিড়ি দা বললেন চলো এবার আমরা একটু শুয়ে নিই ! বেলা বারোটা নাগাদ আমাদের বাস পৌঁছে যাবে !!
সবাই যে যার সিটে চলে গেল ! আমি আর মঞ্জু আমাদের সিটে চলে গেলাম ! কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছিল না ! একটা কঠিন নিরবতা বিরাজ করছিল ! এক ঘেয়ে একটা নিরবতা আমাদের দুজনকে অবশ করে রেখেছিল ! মঞ্জুর ঠোঁট অল্প নড়ে উঠলো !! " আমাকে ভুলে যাবে না তো ??"
মঞ্জুকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম " কেউ কি কখনো নিজের ছায়াকে ভুলে যেতে পারে ?না তাকে অস্বীকার করতে পারে?? তুমি আমার ছায়া ! তোমাকে ছাড়া কি করে আমি বাঁচি বলত??" যেদিন আমার ছায়া আমার থেকে সরে যাবে সেদিন জানবে আমার জীবনের শেষ দিন !!"
আমরা গভীর আলিঙ্গনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলাম ! বাসের জানালা দিয়ে উদয়স্ত সূর্যের লাল আভা আমাদের শরীরকে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো !
সকাল আটটা নাগাদ আমরা রামপুরহাট পৌঁছলাম ! আমাদের বাসের ড্রাইভার ঘোসনা করলেন যে সেখানে এক ঘন্টা বাস দাঁড়াবে ! সবাই নিজেদের প্রাতকৃত্যাদি যেন এখানেই সেরে নেন ! আমরা সবাই বাস থেকে নেমে সকালের প্রথম কাজ গুলো সেরে নিলাম ! লাহিরিদা সহাস্য বদনে আমাদের কাছে এগিয়ে এসে বললেন ! "সুপ্রভাত ! আশা করি তোমাদের এখন আর বেশি মন খারাপ নেই !! " আমরা হেসে ঘার নেড়ে জানিয়ে দিলাম না আমাদের মন আর খারাপ নেই !
-তাহলে চল সবাই এক সাথে চা পান করা যাক !
আমরা সবাই মানে কমলদা তৃপ্তিদি, ঘোষ দা , লাহিড়ি দা সবাই এক সাথে চা খেতে শুরু করলাম ! কমলদা হটাত বলে উঠলেন "একটা কাজ করলে হয়না?? সামনের মাসে একটা ছোট্ট পিকনিক টুর করলে হয় না?? যেমন ধর দুদিনের জন্য মুকুটমনিপুর বা বকখালি বা মন্দারমণি ?
তৃপ্তি দি বলে উঠলেন আমাদের কলেজের কি হবে?? আর এদের তো পরাশোনা আছে !! সবার কি তোমার মত সেলসের চাকরি নাকি?? হুট বললেই ছুটি পাওয়া যাবে?? এখন এসব চিন্তা করে লাভ নেই ! পুজোর পরে তো একটা টুর করার কথা হচ্ছে ! তখন না হয় একটা ভালো টুর করা যাবে !! কি সবাই রাজি তো??
সবাই এক সাথে বলে উঠলাম "রাজি "
- ঠিক আছে তাহলে আমরা সবাই আমাদের বাড়িতে আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে মিটিং রাখছি ! ১৫ই আগস্ট সন্ধ্যে বেলায় মিতিন্গের সাথে ইটিং ও থাকবে ! এটাই ফাইনাল রইলো !! কি রে সুনন্দ মনে থাকবে তো?? কমলদা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস্সা করলেন !
আমি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম থাকবে !!
ইতিমধ্যে আমাদের বাসের ড্রাইভার হর্ন দিতে শুরু করে দিয়েছে ! আমরা সবাই বাসে উঠে বসলাম ! আবার শুরু হলো একপ্রস্থ হাসাহাসির আসর !! কে কি ভাবে দার্জিলিং ঘুরেছে তার ধারা বিবরণী চলতে থাকলো !! সমস্ত মেয়েদের কলরোলে পুরো বাস টা একেবারে মুখর হয়ে রইলো ! বেলা বারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম মন্জুদের কলেজে !! সবাই সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে বিদায় দিল ! আমি আর মঞ্জু কলেজের গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম ! হটাত কমলদা পিছন থেকে আওয়াজ দিলেন " এই সুনন্দ একটু দাঁড়া ! তোর সাথে কিছু কথা আছে !!" আমরা দাঁড়িয়ে পরলাম কমলদা আর তৃপ্তি দি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে কমলদা আমার কাঁধে হাত রাখলেন আর তৃপ্তি দি মঞ্জুর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন " দেখ মঞ্জু যে ছেলেমানুষী তুই ওখানে গিয়ে করেছিস সেটা যেন বাড়িতে গিয়ে করিস না ! তাহলে তোরা দুজনেই ধরা পরে যাবি আর তখন তোদের দুজনের বাঁচা দুস্কর হয়ে পড়বে !! এখন তোদের শুধু সময়ের অপেখ্যা করতে হবে ! সুনন্দ নিজের পড়াশোনা কমপ্লিট করুক নিজের পায়ে দাঁড়াক আর তুইও পড়াশোনা চালিয়ে যা শুধু সময়ের অপেখ্যা করে যা ! একদিন দেখবি তোরা তোদের নিজেদের মঞ্জিল খুঁজে পেয়েছিস ! আর যদি এখন থেকেই এই রকম ছেলেমানুষী করা শুরু করে দিস তাহলে তোদের ভালবাসা মাঝ পথেই হারিয়ে যাবে ! শুধু আমি তোদের এইটুকুই বলতে চাই ভালবাসা মানে শুধু সেক্স নয় ! ভালবাসা মানে হচ্ছে একটা অটুট বন্ধন যে বন্ধন যখন সেক্স থাকবেনা তখনও টিকে থাকবে ! ভালবাসা হলো সমস্ত জীবনের মানে ! যে মানে কে তুই যতই বোঝার চেষ্টা করবি ততই ভালবাসতে শুরু করবি ! দেখবি একদিন তোদের ভালবাসা তোদের জীবনের পাথেয় হয়ে গেছে ! যেখান থেকে যতই আঘাত আসুক না কেন তোদের ভালবাসার কাছে সমস্ত আঘাত তুচ্ছ বলে মনে হবে !!"
হটাত মঞ্জু ত্রিপ্তিদির পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলো !! আমিও করতে গেলাম কিন্তু তৃপ্তি আমার প্রনাম নিলেন না ! বললেন " না রে তোর প্রনাম আমি নিতে পারব না ! তুই ও আমাকে তোর ভালবাসার দানে ঋনী করে দিয়েছিস ! তোর প্রনাম নিয়ে তোর ঋণ কে আমি ছোট করতে পারব না ! ভালো থাকিস ! আর যখন মন্জুদের বাড়িতে আসবি তখন যেন আমাদের বাড়িতে অবস্যই আসিস !! তৃপ্তিদির চোখের কনে চিকচিকে জলের কনা টলমল করছে ! কমলদা আমার কাঁধে চাপ দিয়ে বললেন "এই দাদাকে যেন ভুলে যাসনা !" বলেই উল্টো পথে হাঁটা দিলেন !
আমরা একটা রিক্সা নিয়ে মন্জুদের বাড়ি পৌঁছলাম ! আমাদের দেখেই পিসি উচ্ছসিত হয়ে uthlen ! যাক বাবা তোরা এসে গেছিস ! খুবই চিন্তায় ছিলাম ! কি করছিস, কেমন আছিস,কি খাচ্ছিস ভাবতে ভাবতে আমার পাগল হবার উপক্রম !!
আমিও হেঁসে বললাম "দেখে নাও পিসি তোমার মেয়েকে কিন্তু একপিসেই ফেরত এনেছি !! এবার আমার ছুটি !!"
যেই বলা অমনি আমার পিঠে ধুপ করে একটা কিল ! "ছুটি মানে?? তুই কি বলেছিলিস তোর মনে নেই?? মঞ্জু আমার দিকে দুষ্টু চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো !!
আমি আবার কি বললাম? আমি তো শুধু বলেছিলাম বডিগার্ড হয়ে যাব আর একটা বডিতেই ফেরত নিয়ে আসব !! ব্যাস আমার ডিউটি শেষ !! বলেই আমি মঞ্জুকে চোখ মারলাম ! যাতে ও যেন কোনো ছেলেমানুষী না করে বসে !! মন্জুও চুপ হয়ে গেল !! পিসি বললেন যা যা তোরা চান করে আয় খেয়েদেয়ে একটু শুয়ে নে ! সারারাত বাস জার্নি করেছিস একটু ঘুমিয়ে নিলে শরীরটা ভালো লাগবে !! তোদের খাওয়া হলে আমি একটু শ্রীরামপুর বেরুব ! সন্ধ্যে বেলায় ফিরে আসব ! আর সুনন্দ তুই কাল সকালে বাড়ি যাবি আজ আর যাবার দরকার নেই ! বাড়িতে একটা ফোন করে দে ! বলেই পিসি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন !! পিসি যেই আমাদের দিকে পিছন ঘুরেছেন অমনি মঞ্জু আমাকে চিমটি কেটে ফিস ফিস করে বলল ! আজ পুরো দুপুর আর রাত কিন্তু বাকি আছে !!
অনেক গুলো পুতুল বানিয়ে তিনি একদিন স্বর্গের কিনারে বসে এক একটি পুতুলের ললাট লিখন লিখতে থাকলেন আর তাদের জীবন দান করতে থাকলেন !! " যা তুই রাজা হবি !!, যা তুই মন্ত্রী হবি !!, যা তুই সেপাই হবি !! , যা তুই চোর হবি !! !! ছেড়েই যাচ্ছেন ! ছেড়েই যাচ্ছেন !! পুতুল আর শেষ হয় না !! সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে ! দেবী দূর্গা কার্তিক কে পাঠালেন ! " যা তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে আয় !! খাবার সময় হয়ে গেছে !!" কার্তিক মহাদেবের কাছে বলল " বাবা বাবা মা খেতে ডাকছে !!"
আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি !!
একে একে গনেশ, লক্ষী, স্বরসতি, নন্দী ভৃঙ্গী সবাই এসে একই উত্তর পেয়ে ফিরে গেল !! দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো ! দেবী দুর্গার পেটে ছুছোয় ডন মারতে শুরু করেছে !! কারণ * ধর্ম অনুযায়ী কোনো পত্নী পতি কে না খাইয়ে খেতে পারেন না !! তাই দুর্গাও কিছুই খেতে পারেন নি !! সন্ধ্যে ছটার সময় দূর্গা আর নিজের রাগ কে ধরে রাখতে পারলেন না !! " শালা বার কে আজ মেরি ফেলবো !!" বোলে শিবের ত্রিশুল উঠিয়ে শিবের দিকে ধেয়ে গেলেন !!
শিব দূর থেকে দেখলেন যে দেবী দূর্গা ধেয়ে আসছেন তাও আবার তারিই ত্রিশুল নিয়ে ! ওই ত্রিশুল দিয়ে যদি শিব কে মারে তাহলে শিবেরও বাঁচার কোনো চান্স নেই ! তার থেকে ভালো পালিয়ে গিয়ে বাঁচার চেষ্টা করা !! পালাতে গিয়ে শিব দেখলেন অনেক গুলো পুতুল তখনও পরে আছে ! আর আজ লাস্ট ডেট ! এদের ছাড়তেই হবে !! তরী ঘড়ি শিব সমস্ত পুতুল গুলোকে তুলে তাদের মধ্যে প্রাণ দিয়ে বললেন " তোরা গিয়ে গাঁড় মারা !!"
ব্যাস ! আমরা সেই গাঁড় মাড়ানোর দলে পরে গেছি ! তাই সারা জীবন গাঁড় মাড়িয়ে যাচ্ছি !!!"
আমার আবৃতি শেষ হোতেই পুরো বাসে হাত তালির ঝর উঠলো !! আর উঠবেই না বা কেন ?? ওঁচাটে ছেলে কবিতাটা তখন কার আমাদের বাংলার বেকার ছেলেদের অসহায়তার দর্পণ ছিল !! যাই হোক আমাদের জলসা শেষ হলো ! কমল দা আমাকে বললেন "চলে আয় পিছনে ! আজ শেষ দিনে আমরা একটু ফুর্তি করে নিই !" আমি কোনো বাক্য ব্যয় না করে পিছনের দিকে চলে গেলাম ! দেখি সব থেকে পিছনের সিটে লাহিড়ি দা , ঘোষ দা আগে থেকেই বোতল খুলে বসে রয়েছেন !
যেহেতু পুরো বাস্ত পর্দা দিয়ে ঘেরা তাই অন্য কারো বোঝার উপায় নেই পিছনের সিটে কি চলছে ! আমি আর কমল দা দুজনে পিছনের সিটে বসে পরে পর্দা টেনে দিলাম ! শুরু হলো আমাদের মাল খাওয়ার পর্ব ! মাল খেতে খেতেই ঘোষ দা বললেন "জীবনে অনেক ঘুরে বেরিয়েছি ! কিন্তু এত আনন্দ কোথাও পাইনি !!" লাহিরিদাও বলে ফেললেন ' এটা বোধ হয় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ টুর !"
কমলদা গম্ভীর মুখে জবাব দিলেন " শ্রেষ্ঠ কিনা জানিনা ! তবে এই টুরে জীবনের অর্ধেক সার্থক হয়ে গেছে সুনন্দর ! তাই না সুনন্দ?"
কমলদার কথা আর কেউ না বুঝলেও আমি বুঝে গেলাম কিন্তু একটু বেশিই বুঝলাম ! ! মনে মনে ভাবতে লাগলাম তৃপ্তিদি কি সব বলে দিয়েছে কমল ডাকে?? প্রশ্ন সূচক মুখ করে কমলদার দিকে তাকালাম |
- আমি কি করে জানব? তুই পেয়েছিস তুই ই জানিস ! বলেই আমাকে একটা ছোট্ট করে চোখ মারলেন !! মুখে হাঁসি !!
আমার ঘাম দিয়ে শরীর থেকে জ্বর নেমে গেল !!
- অর্ধেক জীবন সার্থক? মানে ? ঘোষ দা জিজ্ঞাস্সা করে উঠলেন !
- ও তোমরা এখন বুঝবে না !! তবে এটা তোমাদের জানিয়ে দিই যে সুনন্দ ওর জীবন সাথী পেয়ে গেছে !
- কে? কে? কোথায় পেলো?? দুজনেই সমস্বরে জিজ্ঞাস্সা করে উঠলো !!
- ক্রমশ প্রকাশ্য !! আর সেটা প্রকাশ করব আমাদের পরবর্তী টুরে ! যদি তখন তোমরা থাক তাহলে জানতে পারবে সুনন্দর জীবনসাথীকে ! কমলদা বললেন ! ঘোষ দা আর লাহিড়ি দা জিজ্ঞাস্য করলো নেক্সট টুর কবে আর কোথায়?/ আমাদের এখন থেকেই বলে দাও গুরু ! বাড়ি না ফিরে এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিই !!
- হবে হবে ! তোমাদের সমস্ত কন্টাক্ট ডিটেলস আমি নোট করে রেখেছি ! ঠিক পুজোর পরে পরেই আমরা বেরিয়ে পড়ব ! আর কোথায় যাওয়া হবে সেটা তার আগেই সবার সাথে বসে ঠিক করে নেওয়া যাবে ! এখন তোমরা সুনন্দর ভালবাসার জন্য লাস্ট একটা পেগ বানিয়ে আজকের আসর এখানে শেষ কর !! শেষ পেগে চুমুক দিয়ে সবাই এক সাথে বলে উঠলো "সুনন্দর ভালবাসা দীর্ঘজীবি হোক !"
পেগ শেষ করার সাথে সাথেই আমাদের বাস দাঁড়িয়ে গেল ! ড্রাইভার ঘোসনা করলো " আমরা এখানে রাতের খাবার খাব ! এক ঘন্টা এখানে দাঁড়াবে ! যার যা কিছু করার এখানে করে নিন !"
সবাই একে একে বাস থেকে নেমে গেল ! সবার শেষে আমি মঞ্জু কে নিয়ে নামলাম ! নামার আগে মঞ্জু আমাকে জড়িয়ে ধরে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে নিল ! আমিও মঞ্জু কে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম !! "এখন চল ! খেয়ে নিয়ে তারপর আবার দেখা যাবে !
-এই আমি পেচ্ছাপ করব ! খুব জোরে বাথরুম পেয়েছে !
- চলে যাও পিছনের দিকে লেডিস টয়লেট আছে ! ওই দেখো তৃপ্তি দিও যাচ্ছে ! চলে যাও !
মঞ্জু চলে যেতেই আমি কোনের একটা টেবিলে বসে খাবারের অর্ডার দিলাম ! চিকেন মাসরুম ফ্রায়েড রাইস আর এক প্লেট চিকেন মান্চুরিয়ানের ! কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার টেবিলে চলে এলো ! মঞ্জু ফিরে এসে মান্চুরিয়ানের দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠলো !! " ও আজ কতদিন পরে চিকেন মানচুরিয়ান খাবো !! "
-তোমার জন্যই তো মানচুরিয়ান আর চিকেন মাসরুম ফ্রায়েড রাইস আনিয়েছি ! সোনা ! আজ তুমি আমার সামনে বসে সবটা খাবে !
- আর তুমি??
- আমি শুধু বসে বসে তোমার খাওয়া দেখব !
- না না সেটা হবে না ! তোমাকেও কিছু খেতে হবে !!
- খাবে খাবে ! কেন খাবে না তবে সেটা আমাদের সাথে !! পিছন থেকে কমলদার গলা !!
প্রশ্ন সূচক চোখ নিয়ে কমলদার দিকে তাকালো মঞ্জু ! "আরে বাবা আমরা একপেগ করে মাল আর একটু সিক কাবাব খাবো ! তুই খেতে থাক তোর খাওয়া শেষ হবার আগেই সুনন্দ তোর কাছে ফিরে আসবে !!" কমলদা মঞ্জু কে আশস্ত করলো ! দু একটা টেবিল ছেড়েই একটা টেবিলে লাহিড়ি দা আর ঘোষ দা বসে ছিল ! টেবিলে গ্লাস আর প্লেটে ধোঁয়া উঠতে থাকা সিক কাবাব আর তন্দুরি চিকেন ! আমি আর কমর্দা যেতেই শুরু হয়ে গেল আমাদের পান পর্ব ! সবাই দু পেগ করে খেয়ে
উঠে পরলাম ! সিক কাবাব আর তন্দুরি চিকেনের দৌলতে আমাদের সবার পেট ভরে গেল ! প্লেটে তখনও বেশ কিছুটা কাবাব আর চিকেন ছিল ! কমলদা উঠে গিয়ে তৃপ্তি দিকে দিয়ে এলেন ! তৃপ্তি দি আবার প্লেট নিয়ে মঞ্জুর দিকে এগিয়ে গেলো !!
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আর একবার করে বাথরুম সেরে বাসে উঠে পড়ল ! বাইরে সুধু আমি, কমলদা, তৃপ্তি দি আর মঞ্জু !! আমি আর কমলদা একটা করে সিগারেট ধরলাম ! তৃপ্তি দি ধরা ধরা গলায় প্রশ্ন করলেন " আমাদের ভুলে জাবি নাতো সুনন্দ?"
-আরে ধুর ও ভুলবে কি করে?? আমি কি ওকে ভুলতে দেব?? মঞ্জু তৃপ্তিদির হাথ ধরে বলে উঠলো !!
- না রে মঞ্জু ! জীবন তা বড়ই বিচিত্র ! কে কখন কোথায় থাকে সে নিজেও জানে না ! তাই সময়ের ছাপে সবাইকেই কিছু না কিছু ভুলতেই হয় ! উদাসী গলায় কমলদা বললেন !!
- না কমলদা ! আমি যেখানেই থাকি না কেন ! তোমাদের কোনদিন ভুলবো না !! তোমাদের ফোন নাম্বার আমার কাছে আছে ! আর আমার নাম্বার তোমাদের কাছে আছে ! যখনি মন খারাপ হবে তখনি আমরা কথা বলব !! আর আমি যখন মন্জুদের বাড়ি আসব তখন তোমাদের সাথে জমিয়ে আড্ডা মারব !! আই প্রমিস ! আমিও আবেগ প্রবন গলায় বলে উঠলাম !!
ভরাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা সবাই বাসে উঠে পরলাম ! সত্যি সময় কত তারাতারি শেষ হয়ে যায় ! আর আমাদের এই আনন্দের সময় যেন সময়ের আগেই শেষ হয়ে গেল !! চোখের পাতা দুটো ভারী হয়ে উঠলো ! মনেতে তখন সুধু একটাই প্রশ্ন ! কাল থেকে আবার মঞ্জুকে ছেড়ে থাকতে হবে !! কিন্তু পারব কি?? বুকের ভিতর থেকে কান্নার দলা পাকিয়ে উঠতে লাগলো ! জোর করে তাকে চাপার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম ! পারলাম না ! মুখ হয়ত চেপে গেল কিন্তু আমার চোখ আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো ! চোখ ফেটে জলের ধারা গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো ! মঞ্জুর সেই একই অবস্থা ! চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে ! শুধু চাপা ফোপানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই বেরুচ্ছে না ! আমি আর থাকতে পারলাম না ! মঞ্জু কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম ! হয়ত একটু জোরেই ! মন্জুও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো ! সমস্ত বাঁধ ভেঙ্গে হাউ হাউ করে মঞ্জু কেঁদে ফেলল !! আমাদের কাঁদার শব্দ টা এবার সত্যিই জোরে হয়ে গেছিল ! আমাদের পরের সিটেই ছিল কমলদারা |তারাতারি পর্দা সরিয়ে কমলদা আর তৃপ্তি দি আমাদের থামাতে চেষ্টা করতে লাগলো ! কিন্তু হাঁসি যেমন একটা রোগ কান্নাও বোধ হয় তাই ! আমাদের থামাতে গিয়ে কখন যে তৃপ্তি দি আর কমল দা কাঁদতে শুরু করেছে সেটা ওরাও ভুলে গেছিল ! হটাত লাহিড়ি দার আবির্ভাব ! "কি হলো তোমরা সব কান্না কাটি করছ কেন??"
- না কিছু নয় ! এই কদিনে সুনন্দ আর মঞ্জু আমাদের এত কাছে চলে এসেছে যে ওদের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার কল্পনাতে আমরা নিজেদের আর ঠিক রাখতে পারিনি ! তাই একটু .. .. চোখ মুছতে মুছতে তৃপ্তি দি বললেন !!
- এই তোরা আর কাঁদিস না আমাদের সাথে তোদের সম্পর্ক শেষ হবার নয় ! আমরা ঠিকই যোগাযোগ রাখব ! এখন ভালো ছেলে মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পর ! তৃপ্তি দি যে ভাবে সিচুএসন সামাল দিলেন সেটা সত্যি প্রশংসার যোগ্য !
- আরে দেখো আমি কাঁদছিনা বলে কি তোমরা ভাবো আমার মন খারাপ হচ্ছে না? কিন্তু আমার ওই একটাই বিরাট দোষ আমি কাঁদতে পারিনা ! লাহিড়ি দা বলে উঠলেন কিন্তু সবাইকে আড়াল করে জামার হাতা দিয়ে নিজের চোখের জল মুছলেন ! পিছনের থেকে ঘোষ দা বলে উঠলেন " বা বা কি সুন্দর কান্নার প্রতিযোগিতা চলছে !! আমি কিন্তু তোমাদের এই প্রতিযোগিতায় নেই !! তোমরা যত খুসি কান্না কাটি করো দু দিন পরে সবাই সবাইকে ভুলে যাবে !!"
- অসম্ভব ! মঞ্জু চিত্কার করে উঠলো !! আমি তারাতারি মঞ্জুর মুখে হাত চাপা দিয়ে দিলাম !! মঞ্জুর মুখ টা কান্নায় ফুলে ফুলে উঠতে লাগলো !!
- চলো আমরা কিছুক্ষণ নিচে বসে গল্প করি ! তাতে হয়ত আমাদের মন কিছুটা হালকা হবে !! লাহিড়ি দা বললেন ! কমদাও বললেন সেই ভালো !! আয় তোরা নিচে নেমে আয় ! আমরা কিছুক্ষণ গল্প করি !!
মঞ্জু নিচে যেতে চাইল না ! তাই আমিও নিচে নামলাম না ! কিন্তু কমলদা, তৃপ্তি দি, ঘোষ দা লাহিড়ি দা নিচে বসে ভরাক্রান্ত মন নিয়ে কথা বার্তা শুরু করে দিলেন !! ঘোষ দা বলে ফেললেন " আরে আমরা কি কারুর শোক সভায় এসেছি যে আমরা এই ভাবে কথা বার্তা বলছি ? তার থেকে বরণ এক কাজ করা যাক ! আজকের এই রাত কে আমরা যেন ঘুমিয়ে না কাটিয়ে একটু আনন্দময় বেদনার স্মৃতি করে দিই ! কি বলো কমলদা??
- হ্যা সেটাই ভালো !! শুরু টা তাহলে আমিই করি !! বলেই কমলদা তার বেসুর গলায় গান ধরলেন "আমার না যদি থাকে সুর , তোমার আছে তুমি তা দেবে ! তোমার গন্ধ হারা ফুল তার কাছে সুরভি নেবে !! এরই নাম প্রেম ! এরই নাম প্রেম !!" মান্নাদের সেই বিখ্যাত গান টা !
গান শেষ হলে সবাই কিছুক্ষণ চুপ করে গেল !! কিন্তু ঘোষ দা ছিল ফুল ফর্মে ! "কি হলো আবার কেউ মরে গেল নাকি?"
এবার তৃপ্তি দি শুরু করলেন পিতাপুত্র ছবির সেই গান যেটা সন্ধ্যা রায় নিজের বুকের রক্ত মিশিয়ে গেয়েছিলেন !" তির বেঁধা পাখি আর গাহিবে না গান ! ভুলে গেছে জীবনের হাঁসি কলতান !!" মাঝ পথেই ঘোষ দা বাঁধা দিলেন !! "কেন আপনি দুক্ষের গান গাইছেন দিদি??" তৃপ্তি দি চুপ হয়ে গেলেন !! কমলদা হাঁক পারলেন " এই সুনন্দ, মঞ্জু তোরা নিচে নেমে আয় আমাদের কিছুই ভালো লাগছে না ! " আমরা তখনও একে ওপর কে জড়িয়ে ধরে বসে আছি ! কমলদার ডাকে আমরা আর থাকতে পারলাম না ! দুজনেই জলভরা চোখে নেমে পরলাম !!
ঘোষ দা বললেন " ঠিক আছে আমি পরিবেশ তাকে হালকা করার জন্য একটা ছড়া বলছি ! এটা স্টেনগান নামে একজন কবি অনেক আগে লিখেছিলেন !! ছড়াটির নাম শব্দ !!
লম্বা টিকি পন্ডিত মশাই
টিকি নেড়ে কন
এখন আমি তোমাদের
পড়াব ব্যাকরণ ! .
টিকি নেড়ে হাত পা
ছুড়ে বোঝান ব্যাকরণ,
বকতে বকতে হাঁপিয়ে গিয়ে
তবেই খান্ত হন !
একমাসের চেষ্টা তে
শেখালেন শব্দ
শব্দের চটে পরা ওঠে
ছেলেরা সব জব্দ !
অবশেষে একদিন ধরলেন
তিনি শব্দের পড়া
যে না পারে বলতে
পেটান তিনি হয়ে জ্ঞানহারা !
সবার শেষে পালা এলো
রায় বাড়ির সন্তুর
শব্দ বলতে বোঝে সে
বিভিন্ন ডাক জন্তুর !
ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে গেল
যেন পেয়েছে ভীষণ ভয় !
টিনের চালে ঢিল মেরে
বলে শব্দ এরেই কয় !
সত্যিই শব্দের এমন অভূতপূর্ব বিশ্লেসন শুনে আমাদের দুখী মন বেশ কিছুটা হালকা হয়ে গেল !!!
এবার কাউকে কিছুই বলতে হলো না !! মঞ্জু নিজেই গুন গুন করে গাইতে শুরু করলো " একটুকু ছোঁওয়া লাগে একটুকু কথা শুনি ! তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী ইই ইইই " তৃপ্তি দিও মঞ্জুর সাথে গলা মেলালেন !! পরিবেশ অনেকটা হালকা হয়ে গেল !! কথায় কথায় কখন যে ভর হয়ে গেছে আমাদের কারুরই খেয়াল ছিলনা ! লাহিড়ি দা বললেন চলো এবার আমরা একটু শুয়ে নিই ! বেলা বারোটা নাগাদ আমাদের বাস পৌঁছে যাবে !!
সবাই যে যার সিটে চলে গেল ! আমি আর মঞ্জু আমাদের সিটে চলে গেলাম ! কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছিল না ! একটা কঠিন নিরবতা বিরাজ করছিল ! এক ঘেয়ে একটা নিরবতা আমাদের দুজনকে অবশ করে রেখেছিল ! মঞ্জুর ঠোঁট অল্প নড়ে উঠলো !! " আমাকে ভুলে যাবে না তো ??"
মঞ্জুকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম " কেউ কি কখনো নিজের ছায়াকে ভুলে যেতে পারে ?না তাকে অস্বীকার করতে পারে?? তুমি আমার ছায়া ! তোমাকে ছাড়া কি করে আমি বাঁচি বলত??" যেদিন আমার ছায়া আমার থেকে সরে যাবে সেদিন জানবে আমার জীবনের শেষ দিন !!"
আমরা গভীর আলিঙ্গনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলাম ! বাসের জানালা দিয়ে উদয়স্ত সূর্যের লাল আভা আমাদের শরীরকে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো !
সকাল আটটা নাগাদ আমরা রামপুরহাট পৌঁছলাম ! আমাদের বাসের ড্রাইভার ঘোসনা করলেন যে সেখানে এক ঘন্টা বাস দাঁড়াবে ! সবাই নিজেদের প্রাতকৃত্যাদি যেন এখানেই সেরে নেন ! আমরা সবাই বাস থেকে নেমে সকালের প্রথম কাজ গুলো সেরে নিলাম ! লাহিরিদা সহাস্য বদনে আমাদের কাছে এগিয়ে এসে বললেন ! "সুপ্রভাত ! আশা করি তোমাদের এখন আর বেশি মন খারাপ নেই !! " আমরা হেসে ঘার নেড়ে জানিয়ে দিলাম না আমাদের মন আর খারাপ নেই !
-তাহলে চল সবাই এক সাথে চা পান করা যাক !
আমরা সবাই মানে কমলদা তৃপ্তিদি, ঘোষ দা , লাহিড়ি দা সবাই এক সাথে চা খেতে শুরু করলাম ! কমলদা হটাত বলে উঠলেন "একটা কাজ করলে হয়না?? সামনের মাসে একটা ছোট্ট পিকনিক টুর করলে হয় না?? যেমন ধর দুদিনের জন্য মুকুটমনিপুর বা বকখালি বা মন্দারমণি ?
তৃপ্তি দি বলে উঠলেন আমাদের কলেজের কি হবে?? আর এদের তো পরাশোনা আছে !! সবার কি তোমার মত সেলসের চাকরি নাকি?? হুট বললেই ছুটি পাওয়া যাবে?? এখন এসব চিন্তা করে লাভ নেই ! পুজোর পরে তো একটা টুর করার কথা হচ্ছে ! তখন না হয় একটা ভালো টুর করা যাবে !! কি সবাই রাজি তো??
সবাই এক সাথে বলে উঠলাম "রাজি "
- ঠিক আছে তাহলে আমরা সবাই আমাদের বাড়িতে আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে মিটিং রাখছি ! ১৫ই আগস্ট সন্ধ্যে বেলায় মিতিন্গের সাথে ইটিং ও থাকবে ! এটাই ফাইনাল রইলো !! কি রে সুনন্দ মনে থাকবে তো?? কমলদা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস্সা করলেন !
আমি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম থাকবে !!
ইতিমধ্যে আমাদের বাসের ড্রাইভার হর্ন দিতে শুরু করে দিয়েছে ! আমরা সবাই বাসে উঠে বসলাম ! আবার শুরু হলো একপ্রস্থ হাসাহাসির আসর !! কে কি ভাবে দার্জিলিং ঘুরেছে তার ধারা বিবরণী চলতে থাকলো !! সমস্ত মেয়েদের কলরোলে পুরো বাস টা একেবারে মুখর হয়ে রইলো ! বেলা বারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম মন্জুদের কলেজে !! সবাই সবাইকে অভিবাদন জানিয়ে বিদায় দিল ! আমি আর মঞ্জু কলেজের গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম ! হটাত কমলদা পিছন থেকে আওয়াজ দিলেন " এই সুনন্দ একটু দাঁড়া ! তোর সাথে কিছু কথা আছে !!" আমরা দাঁড়িয়ে পরলাম কমলদা আর তৃপ্তি দি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে কমলদা আমার কাঁধে হাত রাখলেন আর তৃপ্তি দি মঞ্জুর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন " দেখ মঞ্জু যে ছেলেমানুষী তুই ওখানে গিয়ে করেছিস সেটা যেন বাড়িতে গিয়ে করিস না ! তাহলে তোরা দুজনেই ধরা পরে যাবি আর তখন তোদের দুজনের বাঁচা দুস্কর হয়ে পড়বে !! এখন তোদের শুধু সময়ের অপেখ্যা করতে হবে ! সুনন্দ নিজের পড়াশোনা কমপ্লিট করুক নিজের পায়ে দাঁড়াক আর তুইও পড়াশোনা চালিয়ে যা শুধু সময়ের অপেখ্যা করে যা ! একদিন দেখবি তোরা তোদের নিজেদের মঞ্জিল খুঁজে পেয়েছিস ! আর যদি এখন থেকেই এই রকম ছেলেমানুষী করা শুরু করে দিস তাহলে তোদের ভালবাসা মাঝ পথেই হারিয়ে যাবে ! শুধু আমি তোদের এইটুকুই বলতে চাই ভালবাসা মানে শুধু সেক্স নয় ! ভালবাসা মানে হচ্ছে একটা অটুট বন্ধন যে বন্ধন যখন সেক্স থাকবেনা তখনও টিকে থাকবে ! ভালবাসা হলো সমস্ত জীবনের মানে ! যে মানে কে তুই যতই বোঝার চেষ্টা করবি ততই ভালবাসতে শুরু করবি ! দেখবি একদিন তোদের ভালবাসা তোদের জীবনের পাথেয় হয়ে গেছে ! যেখান থেকে যতই আঘাত আসুক না কেন তোদের ভালবাসার কাছে সমস্ত আঘাত তুচ্ছ বলে মনে হবে !!"
হটাত মঞ্জু ত্রিপ্তিদির পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলো !! আমিও করতে গেলাম কিন্তু তৃপ্তি আমার প্রনাম নিলেন না ! বললেন " না রে তোর প্রনাম আমি নিতে পারব না ! তুই ও আমাকে তোর ভালবাসার দানে ঋনী করে দিয়েছিস ! তোর প্রনাম নিয়ে তোর ঋণ কে আমি ছোট করতে পারব না ! ভালো থাকিস ! আর যখন মন্জুদের বাড়িতে আসবি তখন যেন আমাদের বাড়িতে অবস্যই আসিস !! তৃপ্তিদির চোখের কনে চিকচিকে জলের কনা টলমল করছে ! কমলদা আমার কাঁধে চাপ দিয়ে বললেন "এই দাদাকে যেন ভুলে যাসনা !" বলেই উল্টো পথে হাঁটা দিলেন !
আমরা একটা রিক্সা নিয়ে মন্জুদের বাড়ি পৌঁছলাম ! আমাদের দেখেই পিসি উচ্ছসিত হয়ে uthlen ! যাক বাবা তোরা এসে গেছিস ! খুবই চিন্তায় ছিলাম ! কি করছিস, কেমন আছিস,কি খাচ্ছিস ভাবতে ভাবতে আমার পাগল হবার উপক্রম !!
আমিও হেঁসে বললাম "দেখে নাও পিসি তোমার মেয়েকে কিন্তু একপিসেই ফেরত এনেছি !! এবার আমার ছুটি !!"
যেই বলা অমনি আমার পিঠে ধুপ করে একটা কিল ! "ছুটি মানে?? তুই কি বলেছিলিস তোর মনে নেই?? মঞ্জু আমার দিকে দুষ্টু চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো !!
আমি আবার কি বললাম? আমি তো শুধু বলেছিলাম বডিগার্ড হয়ে যাব আর একটা বডিতেই ফেরত নিয়ে আসব !! ব্যাস আমার ডিউটি শেষ !! বলেই আমি মঞ্জুকে চোখ মারলাম ! যাতে ও যেন কোনো ছেলেমানুষী না করে বসে !! মন্জুও চুপ হয়ে গেল !! পিসি বললেন যা যা তোরা চান করে আয় খেয়েদেয়ে একটু শুয়ে নে ! সারারাত বাস জার্নি করেছিস একটু ঘুমিয়ে নিলে শরীরটা ভালো লাগবে !! তোদের খাওয়া হলে আমি একটু শ্রীরামপুর বেরুব ! সন্ধ্যে বেলায় ফিরে আসব ! আর সুনন্দ তুই কাল সকালে বাড়ি যাবি আজ আর যাবার দরকার নেই ! বাড়িতে একটা ফোন করে দে ! বলেই পিসি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন !! পিসি যেই আমাদের দিকে পিছন ঘুরেছেন অমনি মঞ্জু আমাকে চিমটি কেটে ফিস ফিস করে বলল ! আজ পুরো দুপুর আর রাত কিন্তু বাকি আছে !!