17-10-2020, 04:09 PM
যেন সিরিজা ভালো করে তালিম দিয়েছে রজতকে। দোলনকে সেভাবেই বললো, "অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে বোধহয়। আমার মত লোককে আর পছন্দ হল না তাই।"
-- "তুমি বৌদিমনিকে আটকালে না কেন?"
- "আটকালেও ও থাকতো না দোলন। ও সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল।"
-- "কিন্তু আমাকে যে বলেছিল....."
- "কি বলেছিল?"
রজতের পিলে চমকে দেবার মত দোলন এবার বলে উঠলো, "আমার কাছে বৌদিমনির ফোন নম্বর আছে। ফোন করবো?"
বেশ ভয় পেয়ে গেল রজত। দোলনকে বাধা দিয়ে বললো, "না না, তুমি ফোন করবে কেন? আমিও ওর সাথে আর ঘর করতে চাই না।"
হঠাৎই একটু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল দোলন। রজত ওর আশাতে জল ঢেলে দিল। দোলনকে বললো, "তুমিও ভুলেও ফোন করবে না বুঝেছো? আমার ওকে নিয়ে আর কোন মাথাব্যাথা নেই। যে গেছে তাকে নিয়ে আর কষ্ট পেতে চাই না আমি।"
ধমকানিতে যা অবস্থা হয়। দোলন একটু সিঁটিয়ে গেল। তবু বললো, "আসলে বৌদিমনিই তো আমাকে কাজের লোকের কথা বলেছিল। সিরিজাকে পেয়ে গেলাম। ওকে বললাম, তুমি বৌদিমনির ফ্ল্যাটে চলে যাও। কিন্তু এখানে এসে দেখছি সব ওলোটপালট হয়ে গেছে।"
দোলনকে একটু ঠেস মেরে রজত বললো, "সিরিজা আসাতে তো আমার সুবিধাই হয়েছে। ও না থাকলে আমি ভীষন বিপদে পড়ে যেতাম। রাত্রিবেলায় আমার জন্য ডাক্তার ডাকা। ওষুধ এনে দেওয়া, আমার বন্ধুকে খবর দেওয়া, সব তো সিরিজাই করেছে। তোমার বৌদিমনি তখন কোথায়? আমার তো উপকারই হয়েছে সিরিজা আসাতে।"
বাথরুমের ভেতর থেকে সিরিজা আর দোলনের কথাগুলো যে কান খাড়া করে রজত শুনছিল, সেটা দোলনও বুঝতে পারেনি। প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিয়ে রজত এবার বললো, "আমি সব জানি। সিরিজাই আমাকে বলেছে। যে তুমিই নাকি ওকে আমার বাসায় পাঠিয়েছ। তারপর থেকে তোমার কথা আমি প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতাম সিরিজাকে। তোমার কাছে সিরিজার বাচ্চা রয়েছে। সে খবরও আমি সিরিজার কাছ থেকে নিয়েছি। মেয়েটা স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছে তাও আমি জানি। কিন্তু ভাবিনি ঐ মদ্যপ লোকটা আবার এখানে এসে হাজির হবে। শয়তানটাকে তুমি ভাগিয়ে দিয়েছ। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। এখন যতক্ষণ না তোমার স্বামী ফিরে না আসছে, দেখি তোমার জন্য কি ব্যাবস্থা করা যায়?"
বাচ্চাটাকে কাঁধের ওপর রেখে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে দোলন বললো, "কেন, আমি তো এখানে থাকবো বলেই এসেছি। তুমিও বললে, সিরিজাও বললো। তাহলে আবার অসুবিধে কি?"
রজত মনে মনে বললো, "আমি তো বলিনি। ওটা সিরিজাই বলেছে!"
দোলনকে তাও আস্বস্ত করে বললো, "বলবো ছাড়া কি? স্বামী নেই। তুমি একা ঐ বাসায় কি করে থাকবে? ঐ জন্যই তো আমিও মত দিলাম।"
রান্নাঘর থেকে চা করে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সিরিজা। রজত বললো, "দোলন তোমার কোন অসুবিধে হবে না। তুমি এখানেই বিনা চিন্তায় থাকো। আমার কাছে সিরিজা যা। তুমিও তাই। সিরিজাকে কাছে রেখেছি বলে, তোমার বিপদে তোমাকেও কাছে রাখতে পারবো না? আমি মানুষটা অত খারাপ নই।"
সিরিজা দু-দুটো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রজতের কথা শুনে মুচকী মুচকী হাসছে। রজত বললো, "দাঁড়াও আমি আসছি।" বলে ভেতরের ঘরে গেল একটু মাথার চুলটাকে ঠিক করতে।
দোলনের তখন সিরিজা আর রজতকে নিয়ে সন্দেহ বাতিকটা কিছুটা গেছে। বাচ্চাটাকে সোফার ওপর শুইয়ে দিয়ে চায়ের কাপটা সিরিজার হাত থেকে নিয়ে দোলন ওকে বললো, "দাদাবাবু সত্যিই খুব ভালো লোক। তাই না সিরিজা?"
সিরিজা খুব ভালোমতনই জানে দোলনকে কিছু বুঝতে না দিতে পারার মতই কথা বলেছে রজত। দুটো তিনটে দিন ওকে ম্যানেজ করে নিলেই সব সমস্যার সমাধান। তারপর দিবাকরদাকে রাজী করিয়ে যদি দোলনকে এখান থেকে স্থানান্তরিত করা যায়। কিন্তু এই মুখপুড়িটা যেভাবে এখানে গ্যাট হয়ে বসেছে, সহজে কি যাবে এখান থেকে? একেবারে গেড়ে বসলে রজতও না শেষ পর্যন্ত ক্ষেপে যায়। তখন তো সিরিজাও মুশকিলে পড়ে যাবে দোলনকে নিয়ে।
রজতের চায়ের কাপটা হাতে ধরে সিরিজাও কিছু চিন্তা করছিল মনে মনে। হঠাৎই ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। দোলনকে বললো, "এই, চল না তুই আর আমি দুজনে মিলে তোর বরটাকে খুঁজি।"
-- "তুমি ক্ষেপেছো? সে কোথায় গেছে, তার কোন হদিশ পাবে তুমি? সব চেষ্টাই পন্ড হবে।"
সিরিজা বললো, "নিশ্চয়ই ধারেকাছেই কোথাও আছে। নইলে যাবে কোথায়?"
-- "ছাড়ো না ওর কথা। আমি ওকে ভুলে গেছি।"
সিরিজা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, দোলন বললো, "তুমি তোমার মরদকে ভুলতে পারো, আর আমি পারি না? সব ব্যাটাছেলে গুলোই তো এক টাইপের। একজন তোমার সারাক্ষণ মদে ডুবে আছে। আর একজন কোথায় গিয়ে মেয়েমানুষে ডুব দিয়েছে। কে জানে?"
রজত ঘরে ঢুকে সিরিজার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে দোলনকে বললো, "তুমি বরং আর একটা বিয়ে করে নাও দোলন। সেটাই ভালো হবে।"
বাচ্চাটা সোফায় শুয়ে অঘোরে ঘুমোতে শুরু করেছে। অনেক দিন বাদে মায়ের বুকের দুধ পেটে পড়েছে। এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। দোলন ঐ বাচ্চাটার দিকে তাকিয়েই রজতকে বললো, "আমি বিয়ে করতে পারি এক শর্তে। আগে তুমি আবার বিয়ে করো দাদাবাবু। তারপরে তোমার বিয়ে দেখে আমিও করবো।"
যেন রজত সিরিজার ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দিয়েছে দোলন। চায়ের কাপটা মুখে ধরে রজত নিজের মনকেই প্রশ্ন করে বসল, "এ আবার কি শর্ত? এতো আচ্ছা ঝ্যামেলায় ফেলে দিয়েছে মেয়েটা। সেই থেকে খালি ট্যাড়া ট্যাড়া কথা বলছে। আমার তো একদিনেই নাভিশ্বাস উঠে যাবে একে নিয়ে।"
সিরিজা দোলনকে শায়েস্তা করার জন্য বললো, "তোর দাদাবাবু কিন্তু আর বিয়ে করবে না। শেষ পর্যন্ত তোকেই পস্তাতে হবে। তুই আর একবার ভেবে দেখ দোলন।"
দোলনও সঙ্গে সঙ্গে বলটা সিরিজার কোর্টে ফেলে দিয়ে বললো, "তাহলে তুমিই বিয়েটা করো কাউকে। তারপর না হয় আমি করছি।"
একেবারে পাল্লা দিয়ে লড়াই করছে দোলন। সিরিজার চালাকির কাছে ধরা দিতে ও মোটেই রাজী নয়। বোঝা যাচ্ছে সিরিজা আর রজতকে পাকে ফেলার জন্য দোলন ভালোভাবেই তৈরী। এতক্ষণ ধরে সিরিজা আর রজত যে গল্পগুলো শুনিয়েছে দোলনকে তার কোনটাই বিশ্বাস করে নি ও। মনগড়া কথাগুলোর কোনটাই প্রভাব ফেলেনি দোলনের মনে। সিরিজাকে একটু অপ্রস্তুতে ফেলে দিয়ে ও এবার দেখছিল সিরিজা কি বলে?
সিরিজা কিছুই বললো না। শুধু একবার তাকাল রজতের দিকে। দোলনের কথা শুনে রজতের চোয়ালগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছিল রজত এখনই দোলনকে সহ্য করতে পারছে না মনে মনে। পাছে রজত রেগেমেগে কিছু বলে না দেয় পরিস্থিতিটা সামাল দেবার জন্য ও বললো, "আমার বিয়ে নিয়ে তো মাথাব্যাথা নেই। তবে তোর দাদাবাবুর জন্য আমার সত্যি কষ্ট হয়।"
রজতের এবার পিলে চমকে দিয়ে দোলন বললো, "দাদাবাবু আমার শোবার কোথায় ব্যাবস্থা করেছো? রাত্রে তো সিরিজা তোমার জন্য জেগে বসে থাকে। আমি বাপু রাত জাগতে পারবো না। তবে এই বসার ঘরে ঐ সোফার ওপর শুয়ে কিন্তু আমার ঘুম হবে না। আমরা গরীব ঘরে থাকি। কিন্তু আমাদেরও খাট বিছানা আছে। কিছু যদি মনে না করো, তাহলে তোমার শোবার ঘরেই আমার একটা শোবার ব্যাবস্থা করে দাও না? আমি না হয় তোমার বিছানার একপাশেই শুয়ে থাকব। বলতে পারো রাত্রে তোমার সাথে সিরিজা আমি দুজনেই থাকব। সিরিজা শুধু রাত জেগে তোমার সেবা করবে, আর আমি নাক ডাকিয়ে ঘুমাবো।"
রজত পুরো তেলে বেগুনের মতন জ্বলে উঠে সিরিজার দিকে তাকালো। এই মেয়েটা বলে কি? প্রথম দিনই এসে সিরিজার জায়গাটা নিতে চায়? মনে তো হচ্ছে একেবারে পরিকল্পনা করেই এসেছে রজতের এখানে। এখন এটাকে বানচাল করে দেবার কি উপায়? রজতের মুখটা এবার কাচুমুচু হয়ে গেল। সিরিজার কাছে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। কারন এর উত্তর ওর জানা নেই।
সিরিজা একটু চোখ টিপে রজতকে আশ্বস্ত করলো। মানে দোলনের কথা শুনে অত ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ও ইচ্ছে করেই রজতকে পরীক্ষা করছে। ঘর ছেড়ে এই ফ্ল্যাটে যখন এসে পড়েছে তখন সবুর করা ছাড়া কোন উপায় নেই। দোলনের চালাকিতে এখন সহজে ভয় পেলে চলবে না বুদ্ধি করেই এর মোকাবিলা করতে হবে।
কাপের চা টা শেষ করতে করতে রজত তখনকার মতন চুপ করে গেল। দোলন বললো, "দাদাবাবু, আমি এখন একটু চানে ঢুকব। তোমাদের নিশ্চয়ই চানটান হয় নি। আমার আবার সকাল সকাল চান করে নেওয়া অভ্যেস। তা গামছাটামছা আছে নাকি? আমি তো কিছু নিয়ে আসিনি।"
দোলনকে বাথরু্মের দরজাটা দেখিয়ে সিরিজা বললো, "গামছা থাকবে না কেন? সব ঐ ভেতরেই আছে। তোর কিছু চিন্তা করার নেই।"
সোফা থেকে উঠে একটু পাছা বেঁকিয়ে ঢং করে বাথরুমে চানে ঢুকলো দোলন। ও চানে ঢোকা মাত্রই রজত এবার সিরিজাকে নিয়ে পড়লো।
শোবার ঘরে ঢুকে সিরিজাকে জাপটে ধরে পাগলের মতন ওর বুকে মুখ ঘষতে লাগলো রজত। সিরিজা বললো, "অ্যাই অ্যাই। দোলনকে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই। ও এক্ষুনি আবার বেরিয়ে আসতে পারে।"
রজত বললো, "আমার কিন্তু এই বেয়াদপীপনাটা আর সহ্য হচ্ছে না সিরিজা। ও কি মনে করেছে এখানে এসে? তখন থেকে আমাদের দুজনকে ঠেস মেরে কথা বলে যাচ্ছে। একেবারে গায়ে পড়া ভাব। প্রথম প্রথম আপনি বলে কথা বলছিল আমার সাথে। এখন আবার তুমি তুমি করে কথা বলছে। আমি কিন্তু তোমার মুখের দিকে চেয়ে ওকে কিছু বলছি না সিরিজা। সব সহ্য করে যাচ্ছি, নইলে কখন বার করে দিতুম।"
সিরিজা রজতকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো, "ক্ষেপেছো তুমি? সব রাগটা গিয়ে তখন আমার ওপর পড়বে। ওদিকে আমার মাতাল বরটাকে সব বলে দিয়ে ও আমাকে শায়েস্তা করবে। আর ওদিকে তোমার বউকে ফোন করে তোমাকে জব্দ করবে। এখন অত রাগলে চলবে না।"
রজত ভেবে দেখলো সিরিজা কথাটা ভুল বলেনি। সিরিজাকে বললো, "তার মানে দোলনের হাতে তো এখন অনেক ক্ষমতা?"
সিরিজা বললো, "হ্যাঁ, বলছি তো তাই।"
মুখ কাচুমুচু করে একটু ছেলেমানুষির মতন করতে লাগলো রজত। সিরিজাকে বললো, "তুমি ওকে আসতে বললে কেন? না এলেই তো ভালো হত। এসেই কেমন বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে প্রথম দিন। এখনই ঘাড়ে চেপে বসেছে, এরপরে কি হবে?"
রজতের যেন তর সইছিল না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে সিরিজাকে বললো, "আমি এক্ষুনি ফোন লাগাচ্ছি দিবাকরকে। ঐ মেয়েটার একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে।"
সিরিজা বললো, "আমার মনে হয় ফোনে দিবাকরদাকে না বলে, দিবাকরদার বাসায় গিয়ে ব্যাপারটা বললেই তো ভালো হয়। দিবাকরদার ওখানে গিয়ে তুমি ঠিক গুছিয়ে বলতে পারবে।"
রজত বললো, "তা ঠিক। তবে ওকে একবার ফোন করে অন্তত জানিয়ে দিই যে আমি আসছি।"
সিরিজা ঘাড় নাড়লো। রজত দিবাকরকে লাইন মিলিয়ে দুতিনবার ধরার চেষ্টা করলো ফোনে। অথচ দেখলো ফোন বেজে যাচ্ছে, কিন্তু দিবাকর ফোন ধরছে না। সিরিজাকে বললো, "এর আবার কি হল? ফোন রেখে কোথায় গেল? বেজেই যাচ্ছে ধরছে না।"
বাইরের ঘরের সোফাটায় বসে দিবাকরকে ফোনে ধরার জন্য আবার ট্রাই করতে লাগলো রজত। সিরিজা তখন শোবার ঘরের বিছানার চাদরটা ঠিক করছে। একটু পরেই চান সেরে বাথরুম থেকে বেরোল দোলন। তাকাবো না তাকাবো করেও দোলনের দিকে চোখ ফেরাতে বাধ্য হল রজত। চান সেরে ভিজে কাপড় গায়ে দিয়েই বেরিয়েছে বাথরুম থেকে। সিরিজার মতন বৃহৎ স্তনাধিকারিনী না হলেও দোলনের সুন্দর বক্ষযুগল ভিজে কাপড়ের আড়ালেও দেখা যাচ্ছে। এমন নারীকে দেখলে কামভাব জাগ্রত হয় ঠিকই। কিন্তু সেই কামকে চাগিয়ে রাখতে হলে আবার সেই নারীর ওপরেই পুরুষকে দিওয়ানা বনে যেতে হবে। রজতের এই মূহূর্তে দোলনের ওপর দিওয়ানা বনে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই আপাতত নেই।
দোলনকে এক ঝলক গায়ে, ভিজে কাপড় জড়ানো অবস্থায় দেখে নিয়েই আবার চোখদুটোকে ঘুরিয়ে নিল রজত। ভাবখানা এমন, অত সহজে আমাকে বশ করার চেষ্টা কোরো না দোলন। তোমার মায়ায় কোন মতেই আমি নিজেকে জড়াচ্ছি না।
দোলন ঐ অবস্থায় শোবার ঘরের ভেতরে গেল। রজত দেখলো দিবাকর এখনও ওর ফোন ধরছে না। কি যে ব্যাপার হল কিছুই ও বুঝে উঠতে পারছে না। ভেতরের ঘরে ওরা দুজনে আবার নিজেদের মধ্যে বকবক শুরু করে দিয়েছে। রজত সোফায় বসে এবার একটা সিগারেট ধরালো। খেয়াল করলো দোলন সিরিজাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছে। রজতের ব্যাপারেই যেন কিছু জানতে চাইছে সিরিজার কাছ থেকে।
দোলন ঘরে ঢুকেই সিরিজাকে বললো, "আমি যখন চান করছিলাম, দাদাবাবু কিছু বলছিল আমার কথা?"
সিরিজা বললো, "কেন কি বলবে?"
-- "ঐ যে দুষ্টু মেয়ে আমি। এখানে আসার পর থেকেই আমি তোমাদের ঝ্যামেলায় ফেলছি।" বলেই হাসতে লাগলো সিরিজার দিকে তাকিয়ে।
সিরিজা উল্টে বললো, "না তো, কিছু বলেনি তো? আমাকে তো বলছিল, দোলন খুব ভালো মেয়ে। তোর সন্মন্ধে খুব ভালো ধারনা দাদাবাবুর। আমাকে বললো, দেখো ও তো তোমার খুব উপকারই করেছে। এখন ও যখন বিপদে পড়েছে, তখন আমাদেরও বিপদ থেকে ওকে বাঁচানো উচিৎ।"
সিরিজার মুখ থেকে রজতের কথা শুনে দোলনের যতটা বিশ্বাস হল, তার থেকেও নিজের ওপরই ধিক্কারটা এল বেশি। ওকে বললো, "আমি বোধহয় তোমার মত হতেই পারলেই ভালো হত। স্বামী আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগেই আমি ওকে ছেড়ে পালিয়ে আসতাম। যেমনটি তুমি করেছো। এই বাড়ীতে তুমি দাদাবাবুর দয়ায় ঠাই পেয়েছ। আমিও যদি ওকে আগেই ছেড়ে দিয়ে তোমার মত দাদাবাবুর ফ্ল্যাটে চলে আসতাম, তাহলে দাদাবাবুর কাছে তোমার জায়গাটা হয়তো আমিই নিতাম।"
-- "তুমি বৌদিমনিকে আটকালে না কেন?"
- "আটকালেও ও থাকতো না দোলন। ও সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল।"
-- "কিন্তু আমাকে যে বলেছিল....."
- "কি বলেছিল?"
রজতের পিলে চমকে দেবার মত দোলন এবার বলে উঠলো, "আমার কাছে বৌদিমনির ফোন নম্বর আছে। ফোন করবো?"
বেশ ভয় পেয়ে গেল রজত। দোলনকে বাধা দিয়ে বললো, "না না, তুমি ফোন করবে কেন? আমিও ওর সাথে আর ঘর করতে চাই না।"
হঠাৎই একটু মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল দোলন। রজত ওর আশাতে জল ঢেলে দিল। দোলনকে বললো, "তুমিও ভুলেও ফোন করবে না বুঝেছো? আমার ওকে নিয়ে আর কোন মাথাব্যাথা নেই। যে গেছে তাকে নিয়ে আর কষ্ট পেতে চাই না আমি।"
ধমকানিতে যা অবস্থা হয়। দোলন একটু সিঁটিয়ে গেল। তবু বললো, "আসলে বৌদিমনিই তো আমাকে কাজের লোকের কথা বলেছিল। সিরিজাকে পেয়ে গেলাম। ওকে বললাম, তুমি বৌদিমনির ফ্ল্যাটে চলে যাও। কিন্তু এখানে এসে দেখছি সব ওলোটপালট হয়ে গেছে।"
দোলনকে একটু ঠেস মেরে রজত বললো, "সিরিজা আসাতে তো আমার সুবিধাই হয়েছে। ও না থাকলে আমি ভীষন বিপদে পড়ে যেতাম। রাত্রিবেলায় আমার জন্য ডাক্তার ডাকা। ওষুধ এনে দেওয়া, আমার বন্ধুকে খবর দেওয়া, সব তো সিরিজাই করেছে। তোমার বৌদিমনি তখন কোথায়? আমার তো উপকারই হয়েছে সিরিজা আসাতে।"
বাথরুমের ভেতর থেকে সিরিজা আর দোলনের কথাগুলো যে কান খাড়া করে রজত শুনছিল, সেটা দোলনও বুঝতে পারেনি। প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিয়ে রজত এবার বললো, "আমি সব জানি। সিরিজাই আমাকে বলেছে। যে তুমিই নাকি ওকে আমার বাসায় পাঠিয়েছ। তারপর থেকে তোমার কথা আমি প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতাম সিরিজাকে। তোমার কাছে সিরিজার বাচ্চা রয়েছে। সে খবরও আমি সিরিজার কাছ থেকে নিয়েছি। মেয়েটা স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছে তাও আমি জানি। কিন্তু ভাবিনি ঐ মদ্যপ লোকটা আবার এখানে এসে হাজির হবে। শয়তানটাকে তুমি ভাগিয়ে দিয়েছ। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। এখন যতক্ষণ না তোমার স্বামী ফিরে না আসছে, দেখি তোমার জন্য কি ব্যাবস্থা করা যায়?"
বাচ্চাটাকে কাঁধের ওপর রেখে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে দোলন বললো, "কেন, আমি তো এখানে থাকবো বলেই এসেছি। তুমিও বললে, সিরিজাও বললো। তাহলে আবার অসুবিধে কি?"
রজত মনে মনে বললো, "আমি তো বলিনি। ওটা সিরিজাই বলেছে!"
দোলনকে তাও আস্বস্ত করে বললো, "বলবো ছাড়া কি? স্বামী নেই। তুমি একা ঐ বাসায় কি করে থাকবে? ঐ জন্যই তো আমিও মত দিলাম।"
রান্নাঘর থেকে চা করে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সিরিজা। রজত বললো, "দোলন তোমার কোন অসুবিধে হবে না। তুমি এখানেই বিনা চিন্তায় থাকো। আমার কাছে সিরিজা যা। তুমিও তাই। সিরিজাকে কাছে রেখেছি বলে, তোমার বিপদে তোমাকেও কাছে রাখতে পারবো না? আমি মানুষটা অত খারাপ নই।"
সিরিজা দু-দুটো চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রজতের কথা শুনে মুচকী মুচকী হাসছে। রজত বললো, "দাঁড়াও আমি আসছি।" বলে ভেতরের ঘরে গেল একটু মাথার চুলটাকে ঠিক করতে।
দোলনের তখন সিরিজা আর রজতকে নিয়ে সন্দেহ বাতিকটা কিছুটা গেছে। বাচ্চাটাকে সোফার ওপর শুইয়ে দিয়ে চায়ের কাপটা সিরিজার হাত থেকে নিয়ে দোলন ওকে বললো, "দাদাবাবু সত্যিই খুব ভালো লোক। তাই না সিরিজা?"
সিরিজা খুব ভালোমতনই জানে দোলনকে কিছু বুঝতে না দিতে পারার মতই কথা বলেছে রজত। দুটো তিনটে দিন ওকে ম্যানেজ করে নিলেই সব সমস্যার সমাধান। তারপর দিবাকরদাকে রাজী করিয়ে যদি দোলনকে এখান থেকে স্থানান্তরিত করা যায়। কিন্তু এই মুখপুড়িটা যেভাবে এখানে গ্যাট হয়ে বসেছে, সহজে কি যাবে এখান থেকে? একেবারে গেড়ে বসলে রজতও না শেষ পর্যন্ত ক্ষেপে যায়। তখন তো সিরিজাও মুশকিলে পড়ে যাবে দোলনকে নিয়ে।
রজতের চায়ের কাপটা হাতে ধরে সিরিজাও কিছু চিন্তা করছিল মনে মনে। হঠাৎই ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এল। দোলনকে বললো, "এই, চল না তুই আর আমি দুজনে মিলে তোর বরটাকে খুঁজি।"
-- "তুমি ক্ষেপেছো? সে কোথায় গেছে, তার কোন হদিশ পাবে তুমি? সব চেষ্টাই পন্ড হবে।"
সিরিজা বললো, "নিশ্চয়ই ধারেকাছেই কোথাও আছে। নইলে যাবে কোথায়?"
-- "ছাড়ো না ওর কথা। আমি ওকে ভুলে গেছি।"
সিরিজা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, দোলন বললো, "তুমি তোমার মরদকে ভুলতে পারো, আর আমি পারি না? সব ব্যাটাছেলে গুলোই তো এক টাইপের। একজন তোমার সারাক্ষণ মদে ডুবে আছে। আর একজন কোথায় গিয়ে মেয়েমানুষে ডুব দিয়েছে। কে জানে?"
রজত ঘরে ঢুকে সিরিজার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে দোলনকে বললো, "তুমি বরং আর একটা বিয়ে করে নাও দোলন। সেটাই ভালো হবে।"
বাচ্চাটা সোফায় শুয়ে অঘোরে ঘুমোতে শুরু করেছে। অনেক দিন বাদে মায়ের বুকের দুধ পেটে পড়েছে। এখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। দোলন ঐ বাচ্চাটার দিকে তাকিয়েই রজতকে বললো, "আমি বিয়ে করতে পারি এক শর্তে। আগে তুমি আবার বিয়ে করো দাদাবাবু। তারপরে তোমার বিয়ে দেখে আমিও করবো।"
যেন রজত সিরিজার ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দিয়েছে দোলন। চায়ের কাপটা মুখে ধরে রজত নিজের মনকেই প্রশ্ন করে বসল, "এ আবার কি শর্ত? এতো আচ্ছা ঝ্যামেলায় ফেলে দিয়েছে মেয়েটা। সেই থেকে খালি ট্যাড়া ট্যাড়া কথা বলছে। আমার তো একদিনেই নাভিশ্বাস উঠে যাবে একে নিয়ে।"
সিরিজা দোলনকে শায়েস্তা করার জন্য বললো, "তোর দাদাবাবু কিন্তু আর বিয়ে করবে না। শেষ পর্যন্ত তোকেই পস্তাতে হবে। তুই আর একবার ভেবে দেখ দোলন।"
দোলনও সঙ্গে সঙ্গে বলটা সিরিজার কোর্টে ফেলে দিয়ে বললো, "তাহলে তুমিই বিয়েটা করো কাউকে। তারপর না হয় আমি করছি।"
একেবারে পাল্লা দিয়ে লড়াই করছে দোলন। সিরিজার চালাকির কাছে ধরা দিতে ও মোটেই রাজী নয়। বোঝা যাচ্ছে সিরিজা আর রজতকে পাকে ফেলার জন্য দোলন ভালোভাবেই তৈরী। এতক্ষণ ধরে সিরিজা আর রজত যে গল্পগুলো শুনিয়েছে দোলনকে তার কোনটাই বিশ্বাস করে নি ও। মনগড়া কথাগুলোর কোনটাই প্রভাব ফেলেনি দোলনের মনে। সিরিজাকে একটু অপ্রস্তুতে ফেলে দিয়ে ও এবার দেখছিল সিরিজা কি বলে?
সিরিজা কিছুই বললো না। শুধু একবার তাকাল রজতের দিকে। দোলনের কথা শুনে রজতের চোয়ালগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছিল রজত এখনই দোলনকে সহ্য করতে পারছে না মনে মনে। পাছে রজত রেগেমেগে কিছু বলে না দেয় পরিস্থিতিটা সামাল দেবার জন্য ও বললো, "আমার বিয়ে নিয়ে তো মাথাব্যাথা নেই। তবে তোর দাদাবাবুর জন্য আমার সত্যি কষ্ট হয়।"
রজতের এবার পিলে চমকে দিয়ে দোলন বললো, "দাদাবাবু আমার শোবার কোথায় ব্যাবস্থা করেছো? রাত্রে তো সিরিজা তোমার জন্য জেগে বসে থাকে। আমি বাপু রাত জাগতে পারবো না। তবে এই বসার ঘরে ঐ সোফার ওপর শুয়ে কিন্তু আমার ঘুম হবে না। আমরা গরীব ঘরে থাকি। কিন্তু আমাদেরও খাট বিছানা আছে। কিছু যদি মনে না করো, তাহলে তোমার শোবার ঘরেই আমার একটা শোবার ব্যাবস্থা করে দাও না? আমি না হয় তোমার বিছানার একপাশেই শুয়ে থাকব। বলতে পারো রাত্রে তোমার সাথে সিরিজা আমি দুজনেই থাকব। সিরিজা শুধু রাত জেগে তোমার সেবা করবে, আর আমি নাক ডাকিয়ে ঘুমাবো।"
রজত পুরো তেলে বেগুনের মতন জ্বলে উঠে সিরিজার দিকে তাকালো। এই মেয়েটা বলে কি? প্রথম দিনই এসে সিরিজার জায়গাটা নিতে চায়? মনে তো হচ্ছে একেবারে পরিকল্পনা করেই এসেছে রজতের এখানে। এখন এটাকে বানচাল করে দেবার কি উপায়? রজতের মুখটা এবার কাচুমুচু হয়ে গেল। সিরিজার কাছে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। কারন এর উত্তর ওর জানা নেই।
সিরিজা একটু চোখ টিপে রজতকে আশ্বস্ত করলো। মানে দোলনের কথা শুনে অত ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ও ইচ্ছে করেই রজতকে পরীক্ষা করছে। ঘর ছেড়ে এই ফ্ল্যাটে যখন এসে পড়েছে তখন সবুর করা ছাড়া কোন উপায় নেই। দোলনের চালাকিতে এখন সহজে ভয় পেলে চলবে না বুদ্ধি করেই এর মোকাবিলা করতে হবে।
কাপের চা টা শেষ করতে করতে রজত তখনকার মতন চুপ করে গেল। দোলন বললো, "দাদাবাবু, আমি এখন একটু চানে ঢুকব। তোমাদের নিশ্চয়ই চানটান হয় নি। আমার আবার সকাল সকাল চান করে নেওয়া অভ্যেস। তা গামছাটামছা আছে নাকি? আমি তো কিছু নিয়ে আসিনি।"
দোলনকে বাথরু্মের দরজাটা দেখিয়ে সিরিজা বললো, "গামছা থাকবে না কেন? সব ঐ ভেতরেই আছে। তোর কিছু চিন্তা করার নেই।"
সোফা থেকে উঠে একটু পাছা বেঁকিয়ে ঢং করে বাথরুমে চানে ঢুকলো দোলন। ও চানে ঢোকা মাত্রই রজত এবার সিরিজাকে নিয়ে পড়লো।
শোবার ঘরে ঢুকে সিরিজাকে জাপটে ধরে পাগলের মতন ওর বুকে মুখ ঘষতে লাগলো রজত। সিরিজা বললো, "অ্যাই অ্যাই। দোলনকে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই। ও এক্ষুনি আবার বেরিয়ে আসতে পারে।"
রজত বললো, "আমার কিন্তু এই বেয়াদপীপনাটা আর সহ্য হচ্ছে না সিরিজা। ও কি মনে করেছে এখানে এসে? তখন থেকে আমাদের দুজনকে ঠেস মেরে কথা বলে যাচ্ছে। একেবারে গায়ে পড়া ভাব। প্রথম প্রথম আপনি বলে কথা বলছিল আমার সাথে। এখন আবার তুমি তুমি করে কথা বলছে। আমি কিন্তু তোমার মুখের দিকে চেয়ে ওকে কিছু বলছি না সিরিজা। সব সহ্য করে যাচ্ছি, নইলে কখন বার করে দিতুম।"
সিরিজা রজতকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো, "ক্ষেপেছো তুমি? সব রাগটা গিয়ে তখন আমার ওপর পড়বে। ওদিকে আমার মাতাল বরটাকে সব বলে দিয়ে ও আমাকে শায়েস্তা করবে। আর ওদিকে তোমার বউকে ফোন করে তোমাকে জব্দ করবে। এখন অত রাগলে চলবে না।"
রজত ভেবে দেখলো সিরিজা কথাটা ভুল বলেনি। সিরিজাকে বললো, "তার মানে দোলনের হাতে তো এখন অনেক ক্ষমতা?"
সিরিজা বললো, "হ্যাঁ, বলছি তো তাই।"
মুখ কাচুমুচু করে একটু ছেলেমানুষির মতন করতে লাগলো রজত। সিরিজাকে বললো, "তুমি ওকে আসতে বললে কেন? না এলেই তো ভালো হত। এসেই কেমন বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে প্রথম দিন। এখনই ঘাড়ে চেপে বসেছে, এরপরে কি হবে?"
রজতের যেন তর সইছিল না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে সিরিজাকে বললো, "আমি এক্ষুনি ফোন লাগাচ্ছি দিবাকরকে। ঐ মেয়েটার একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে।"
সিরিজা বললো, "আমার মনে হয় ফোনে দিবাকরদাকে না বলে, দিবাকরদার বাসায় গিয়ে ব্যাপারটা বললেই তো ভালো হয়। দিবাকরদার ওখানে গিয়ে তুমি ঠিক গুছিয়ে বলতে পারবে।"
রজত বললো, "তা ঠিক। তবে ওকে একবার ফোন করে অন্তত জানিয়ে দিই যে আমি আসছি।"
সিরিজা ঘাড় নাড়লো। রজত দিবাকরকে লাইন মিলিয়ে দুতিনবার ধরার চেষ্টা করলো ফোনে। অথচ দেখলো ফোন বেজে যাচ্ছে, কিন্তু দিবাকর ফোন ধরছে না। সিরিজাকে বললো, "এর আবার কি হল? ফোন রেখে কোথায় গেল? বেজেই যাচ্ছে ধরছে না।"
বাইরের ঘরের সোফাটায় বসে দিবাকরকে ফোনে ধরার জন্য আবার ট্রাই করতে লাগলো রজত। সিরিজা তখন শোবার ঘরের বিছানার চাদরটা ঠিক করছে। একটু পরেই চান সেরে বাথরুম থেকে বেরোল দোলন। তাকাবো না তাকাবো করেও দোলনের দিকে চোখ ফেরাতে বাধ্য হল রজত। চান সেরে ভিজে কাপড় গায়ে দিয়েই বেরিয়েছে বাথরুম থেকে। সিরিজার মতন বৃহৎ স্তনাধিকারিনী না হলেও দোলনের সুন্দর বক্ষযুগল ভিজে কাপড়ের আড়ালেও দেখা যাচ্ছে। এমন নারীকে দেখলে কামভাব জাগ্রত হয় ঠিকই। কিন্তু সেই কামকে চাগিয়ে রাখতে হলে আবার সেই নারীর ওপরেই পুরুষকে দিওয়ানা বনে যেতে হবে। রজতের এই মূহূর্তে দোলনের ওপর দিওয়ানা বনে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই আপাতত নেই।
দোলনকে এক ঝলক গায়ে, ভিজে কাপড় জড়ানো অবস্থায় দেখে নিয়েই আবার চোখদুটোকে ঘুরিয়ে নিল রজত। ভাবখানা এমন, অত সহজে আমাকে বশ করার চেষ্টা কোরো না দোলন। তোমার মায়ায় কোন মতেই আমি নিজেকে জড়াচ্ছি না।
দোলন ঐ অবস্থায় শোবার ঘরের ভেতরে গেল। রজত দেখলো দিবাকর এখনও ওর ফোন ধরছে না। কি যে ব্যাপার হল কিছুই ও বুঝে উঠতে পারছে না। ভেতরের ঘরে ওরা দুজনে আবার নিজেদের মধ্যে বকবক শুরু করে দিয়েছে। রজত সোফায় বসে এবার একটা সিগারেট ধরালো। খেয়াল করলো দোলন সিরিজাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছে। রজতের ব্যাপারেই যেন কিছু জানতে চাইছে সিরিজার কাছ থেকে।
দোলন ঘরে ঢুকেই সিরিজাকে বললো, "আমি যখন চান করছিলাম, দাদাবাবু কিছু বলছিল আমার কথা?"
সিরিজা বললো, "কেন কি বলবে?"
-- "ঐ যে দুষ্টু মেয়ে আমি। এখানে আসার পর থেকেই আমি তোমাদের ঝ্যামেলায় ফেলছি।" বলেই হাসতে লাগলো সিরিজার দিকে তাকিয়ে।
সিরিজা উল্টে বললো, "না তো, কিছু বলেনি তো? আমাকে তো বলছিল, দোলন খুব ভালো মেয়ে। তোর সন্মন্ধে খুব ভালো ধারনা দাদাবাবুর। আমাকে বললো, দেখো ও তো তোমার খুব উপকারই করেছে। এখন ও যখন বিপদে পড়েছে, তখন আমাদেরও বিপদ থেকে ওকে বাঁচানো উচিৎ।"
সিরিজার মুখ থেকে রজতের কথা শুনে দোলনের যতটা বিশ্বাস হল, তার থেকেও নিজের ওপরই ধিক্কারটা এল বেশি। ওকে বললো, "আমি বোধহয় তোমার মত হতেই পারলেই ভালো হত। স্বামী আমাকে ছেড়ে যাওয়ার আগেই আমি ওকে ছেড়ে পালিয়ে আসতাম। যেমনটি তুমি করেছো। এই বাড়ীতে তুমি দাদাবাবুর দয়ায় ঠাই পেয়েছ। আমিও যদি ওকে আগেই ছেড়ে দিয়ে তোমার মত দাদাবাবুর ফ্ল্যাটে চলে আসতাম, তাহলে দাদাবাবুর কাছে তোমার জায়গাটা হয়তো আমিই নিতাম।"