17-10-2020, 04:00 PM
।। তেইশ ।।
সিরিজার বুকে মুখ রেখে রজত ঘুমে আচ্ছন্ন। সিরিজাও তাই। সকাল যে অনেক আগেই হয়ে গেছে, ওরা দুজনের কেউই জানে না। সাতসকালেই দোলন আসবে বলেছিল। আসেনি। রজত, সিরিজার দুজনের কারুরই ঘুম ভাঙেনি। দোলন ভোরবেলা না আসার ফলে আরও কিছুক্ষণ নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর অধিকার পেয়ে গেছে রজত। ওর গভীর নিঃশ্বাসটা পড়ছিল সিরিজার বুকের খাঁজের ওপর। সিরিজার বুক দুটোও নিঃশ্বাসের সাথে তালে মিলিয়ে উঠছিল আর নামছিল। বিছানায় একটু পাশ ফিরে রজতের পিঠের ওপর তখন সিরিজার একটা হাত। রজতের হাতটা ঠিক সিরিজার কোমরের ওপরে। চোখদুটো দুজনেরই বোজা। গভীর নিদ্রায় মগ্ন।
ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে শুয়েছিল দুজনে। অ্যালার্ম বেজে গেছে অনেকক্ষণ। কিন্তু ঘড়ি ওদের দুজনকে ঘুম থেকে জাগাতে পারেনি। ঠিক এই মূহূর্তে দোলন যদি এসে পড়ে, তবেই যদি ওদের ঘুম ভাঙে।
রাত্রে শোবার ঠিক আগে, আরও একপ্রস্থ সিরিজার শরীরটাকে আদর করেছে রজত। সিরিজা বাধা দেয় নি। রজত বলছিল, "দোলন যতদিন এ বাড়ীতে থাকবে, তোমাকে আদর সোহাগ কিছুই করতে পারবো না দিনের বেলাটায়। যা হবে রাত্রিরে। পাশের ঘরে দোলনের শোবার ব্যাবস্থা করে, এঘরে তুমি আর আমি। আমরা দুজন। তোমাকে আদর করতে না পারলে, আমার যে কি কষ্ট হবে সিরিজা, তোমাকে কি করে আমি বোঝাবো?"
রজত ঠিক করে রেখেছিল, দোলন এলে আজই একবার দিবাকরের বাড়ী থেকে ঘুরে আসবে। সিরিজার কথা মতন দিবাকরকে যদি একবার রাজী করানো যায়। তারপর এই দোলনটাকেও রাজী করাতে হবে এবং সময়মত ভাগাতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
সিরিজা রাজী হয় নি। বলেছিল, "না, এখনই যেও না। ওকে দুদিন অন্ততঃ এখানে থাকতে দাও। নইলে ও বেঁকে বসতে পারে। তাছাড়া তোমার শ্বশুর মশাই যেভাবে এখানে যাওয়া আসা শুরু করেছে, আমরা দুটো মেয়ে এই বাড়ীতে একা একা থাকলে আরও বিপদ।"
রজতের যেন ঝঞ্জাট এর শেষ নেই। এই একটা সমস্যার এখনও কূল কিনারা করতে পারেনি ও নিজেই। শ্বশুর মশাই হঠাৎ এসে দুটো মেয়েকে একসাথে দেখলে যে কি কেলোর কীর্তি ঘটবে তা নিয়ে ও বেশ আতঙ্কিত। সিরিজার শরীরটার সাথে নিজের শরীরটা মিলিয়ে দেবার পর শুধু টেনশনটা কেটে যায়। কথায় বলে যৌনসঙ্গম অনেক দুশ্চিন্তা দূর করে। রজতের বাকী জীবনে সিরিজাই এখন আশা আর ভরসা।
দোলনের এখানে থাকার ব্যাপারটা নিয়ে গল্প করতে করতেও ওদের অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। সিরিজা বারবার রজতকে আস্বস্ত করেছে। দোলনকে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। সিরিজাই ঠিক এর একটা উপায় বার করবে।
মেয়েটা নাকি খুব কথা বলে। সিরিজাই বলছিল, "বকবকানি একবার শুরু হলে থামতেই চায় না। সিরিজাকে সাথে পেলে ওর বকবকানিটা আরও বাড়বে।"
রজত ঠিক করে রেখেছে দোলন যখন সিরিজার সাথে বকবক করবে, তখন ও পাশের ঘরে বসে টিভি দেখবে। দুটো কানে তুলো গুঁজে রাখবে, যাতে মাথা না ধরে। দোলন একটু অন্যমনস্ক হলে, ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও গেলে বা চানে ঢুকলে তখন সিরিজাকে যত পারবে আদর করবে। দিনের বেলার মনস্কামনাটুকু যতটা সম্ভব পূরণ করে নেবে। তক্কে তক্কে থাকতে হবে। সুযোগ এলে, সেটাকে হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই। দোলনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুখটুকুকে মাঝে মধ্যে ভোগ করে না নিলে রজতেরই বা চলবে কি করে?
ঠিক চোখ দুটো বোজার সময় রজত বললো, "কাল যদি দোলন একটু বেলা করে আসতো, তাহলেই তো ভালো হতো। তুমি আর আমি, দুজনে বেশ কিছুক্ষণ আরও শুয়ে থাকতে পারতাম। তা না শুধু শুধু ভোর ভোর এসে বিরক্ত করা।"
দোলন আসে নি। রজতের ইচ্ছাটাই পূরণ করেছে। সিরিজাকে আরও একটু জড়িয়ে ধরে ঘুমের মধ্যেই ওর বুকের আরও গভীরে মুখ রাখার চেষ্টা করছিল রজত। ঠিক এই সময়ই দোলন এলো ঘুম ভাঙাতে। দরজায় প্রবল জোড়ে কড়া নাড়ল বার দুয়েক। সিরিজা, রজতের দুজনেরই ঘুমটা ভাঙল। বিছানায় বসে বুকের ব্লাউজ লাগাতে লাগাতে সিরিজা বললো, "আসছি দোলন আসছি। দাঁড়া একটু।"
বুকের ব্লাউজটা গলিয়ে শায়া আর শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে নিতে যত সময়। দোলনেরও তর সইছে না। আরও একবার কড়া নেড়েছে। সিরিজা রজতকে বললো, "তুমি শুয়ে থাকো। তোমাকে উঠতে হবে না। আমি ওকে ঘরে ঢোকাচ্ছি।"
তড়িমড়ি করে ঘুম থেকে উঠেছে। শাড়ীটা ভালো মতন গায়ে জড়িয়ে না নিলে দোলন আবার কি ভাববে? সিরিজা শাড়ীটা জড়িয়ে এগিয়ে গেল দরজা খুলতে। রজত সিরিজার বদলে এবার পাশ বালিশটা জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে থাকলো।
দরজায় খুলতেই দোলন সিরিজাকে বললো, "এখনও ঘুম ভাঙেনি তোমার? আমি তো বেলা করেই এলাম। ভাবলাম একটু দেরী করেই যাই। এখনও যে দিব্যি শুয়ে আছ ভাবিনি।"
ঘরে ঢুকে দোলন বললো, "দাদাবাবু বুঝি এখনও ঘুমোচ্ছে? আমি এসেছি, এবার বোধহয় ঘুম ভেঙে যাবে।"
সিরিজা ওর কথা শুনে ঘাড় নাড়লো।
ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে দোলন। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "নাও এবার তোমার পোলাটাকে ধরো, আসল মা'কে দেখতে না পেয়ে বেচারার মন ভালো হচ্ছে না কিছুতেই।"
সিরিজা একটু ইতস্তত করছিল। দোলন বললো, "ধরো এটাকে, এটা তো তোমারই বাচ্চা। আসল মা'কে ছেড়ে নকল মায়ের কাছে, আর কতদিন ভালো লাগবে?"
সিরিজা দুহাত বাড়ালো। বাচ্চাটাকে নিজের কোল থেকে সিরিজার কোলে দিয়ে দিল দোলন।
চোখদুটোকে কাতুমুতু করে বাচ্চাটা সিরিজাকে দেখছে। একটু পরেই ভ্যা করে কান্না জুড়ে দিল। সিরিজা দোলনকে বললো, "এটাকে তুইই ধর। আমার কোলে থাকতে ওর এখন ভালো লাগছে না।"
দোলন আবার বাচ্চাটাকে নিয়ে যথারীতি আদর করতে লাগলো। সিরিজাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, "তোমার আপদ মরদটা যখন এসেছিল, খুব চিন্তায় পড়ে গেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে। তুমি নেই, ঘরে তোমার বাচ্চা রয়েছে আমার সাথে। এদিকে আমার স্বামীটাও পালিয়েছে আমাকে ছেড়ে। একা একা ওকে নিয়ে কি যে করি? তার ওপর ঐ শয়তানটা থেকে থেকে খালি এসে আমায় বিরক্ত করছে। ভাগ্যিস এই দুধের শিশুটাকে একবারও দেখতে পায়ে নি। নইলে আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে পালাতো।"
- "তুই কি ওকে ঘরে লুকিয়ে রেখে ছিলিস?"
-- "আমি তো তোমার স্বামীকে ঘরের ভেতরেই ঢুকতে দিই নি। নইলে কি আর ও টের পেত না? বলেছি, সিরিজা ওর বাচ্চা নিয়েই চলে গেছে এখান থেকে। কোথায় গেছে আমি জানি না। ভাগ্যিস ও তখন কেঁদে ওঠেনি। নইলে?"
বাচ্চাটার গালে চুমু খেতে লাগলো দোলন। ওকে আদর করতে লাগলো। সিরিজাকে বললো, "তোমার বাপু শখ কম নয়। স্বামীকে ছেড়ে, আমার ঘাড়ে বাচ্চা ফেলে দিয়ে দিব্যি এখানে এসে রয়েছ। দাদাবাবুর সাথে খুব পিড়িত হয়েছে না তোমার?"
দোলনের মুখে যেন কিছু আটকায় না। সিরিজা বললো, "আমি তো ভাবিনি, দাদাবাবুর বউ নেই এখানে। এসেছিলাম যখন, তখন থেকেই তো নেই। আমাকে বললো, তুমি থেকে যাও এখানে। একটু ঘরের কাজকর্ম আর রান্নাবান্নাটা করে দিলে আমারই সুবিধা হয়। তাই....."
-- "তাই তুমি থেকে গেলে। দাদাবাবুও সুবিধে হলো, আর তোমারও থাকার একটা জায়গা হলো। আর আমি যে ওদিকে কি জ্বালায় মরছি তুমি জানো?"
দোলনের কোলে ফিরে গিয়ে বাচ্চাটার তখন কান্না থেমেছে। ওকে একটু দোল খাওয়াতে খাওয়াতে দোলন বললো, "তোমার বাচ্চাটাকে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম জানো। তুমি যখন এটাকে আমার হাতে তুলে দিলে, খুব আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু সব গন্ডগোল পাকালো আমার স্বামীটা। ওর পছন্দ হয় নি তোমার বাচ্চাটাকে। খালি আমায় বলো তো, তুমি সিরিজার বাচ্চাটাকে মানুষ করার দায়িত্ব নিলে কেন? ও তো আমাদের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে পালালো। আমি যতই বলি, না সিরিজা দেয় নি। আমিই চেয়ে নিয়েছি ওর কাছ থেকে, ততো রাগ দেখাতো আমার ওপরে। বলতাম, আমাদের তো বাচ্চাকাচ্চা হয় নি। তাই দুজনে মিলে এটাকেই মানুষ করি না ক্ষতি কি?"
কিন্তু আমার কথায় মন গলতো না ওর। খালি দোষারোপ করতো, আর গালাগালি খিস্তি খেউর করতো মুখে। সেইজন্যই বোধহয় পালিয়ে গেল আমাকে ছেড়ে।
সিরিজা দুহাতটা বাড়ালো আবার। দোলন কে বললো, "দে, আমাকে আর একবার দে।"
দোলন সিরিজার বাচ্চা সিরিজাকে আবার ফেরত দিল। মুখ নিচু করে সিরিজা এবার ওকে আদর করতে লাগলো। বাচ্চাটা এবার কাঁদলো না। শুধু সিরিজার দিকে চেয়ে থাকল একদৃষ্টে। মায়ের প্রতি যেন অভিমান নেই। দুধের শিশু ও আবার মায়ের পিরিত বুঝবে টাকি?
- "তোর স্বামীটা কোথায় গেল বলতো তোকে ছেড়ে?"
-- "জানি না।"
- "তোর সাথে অশান্তি করতো? রাত বিরেতে বাড়ী ফিরতো?"
-- "তা তো করতই। তলে তলে কারুর সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে কিনা আমিই বা কি করে বুঝবো?"
- "তুই আগে থেকে কিছু বুঝতে পারিস নি?"
-- "কি করে বুঝব? না বললাম তো। নিশ্চয়ই কোনো মাগীর খপ্পরে পড়েছে বোধহয়। জানতে পারলে তো আর আস্ত রাখতুম না।"
সিরিজা বাচ্চাটাকে আদর করতে করতেই দোলনকে সান্তনা দিতে লাগলো। বললো, "চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।"
দোলন একটু অবাক করে দিয়েই সিরিজাকে বললো, "তুমি আছো, দাদাবাবু আছে। আমার আবার চিম্তা কি? এই যে এখানে আজ থেকে এখানে গ্যাট হয়ে বসলাম, সহজে নড়ছি না এখান থেকে!"
সিরিজা একটু ভূরু কূঁচকে দোলনের দিকে তাকালো। দোলন ওর মন রেখে এবার বললো, "তোমার অবশ্য দোষ কিছু আমি দেখি না। যা মদ্য মাতাল স্বামী তোমার। ওরকম স্বামী আমার থাকলে, আমিও তোমার মত ঘর ছেড়ে স্বামী ছেড়ে পালিয়ে আসতুম।"
বাচ্চাটা চোখ বুজে এবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে। সিরিজা মুখ নিচু করে ওকে চুমু খেলো। স্নেহের চুম্বন করছে। মায়ের আদরে স্নেহ মমতায় ভরিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। দোলন দূর থেকেই ওকে বললো, "আমি তো বুকের দুধ ওকে খাওয়াতে পারি না। তোমাকে ছেড়েই তো আমার কাছে রয়েছে। কাছে যখন পেয়েছ, একটু বুকের দুধ খাওয়াও না ওকে। বুকের দুধ পেটে পড়লে, তখন দেখবে থাকতে পারবে না তোমাকে ছেড়ে।"
সিরিজা বাচ্চাটাকে বুকে ধরে দোলনের কথা মতন ব্লাউজটা খুলতে লাগলো আস্তে আস্তে। বাচ্চাটাকে বুকে ধরে স্তনের বোঁটাটা ঢুকিয়ে দিল ঠোঁটের মধ্যে।
ঘুমন্ত অবস্থাতেই বাচ্চাটা চোখ বন্ধ করে মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে। রজতের মত আগ্রাসী নয়। শান্ত, ধীর চিত্তে। যেন কামনার হাহাকার নেই। পাপের পঙ্কিল পরশও নেই। বাচ্চাটাকে বুকে চেপে ধরে স্তন নিঃসৃত করে ভরিয়ে দিচ্ছে সিরিজা। ঠিক মা আর শিশুর চিরন্তন যুগলবন্দী ছবি।
রজত ঘরে ঢুকেছে কখন ঘুম থেকে উঠে সিরিজা, দোলন কারুরই খেয়াল নেই। ঘুম চোখে হাঁ করে দেখছে রজত। সিরিজা ব্লাউজের একপাশটা খুলে স্তন বের করে বাচ্চাটাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। বাচ্চার দেখাদেখি ওরও ইচ্ছে করছে কিছুটা। ভাবমূর্তি প্রকাশ পেলেও মুখে কিছু বলতে পারছে না কারন সিরিজার সাথে দোলনও রয়েছে ঐ ঘরের মধ্যেই।
-- "ও দাদাবাবু এসেছেন? ঘুম ভেঙেছে আপনার?"
দোলনই প্রথম নজর করলো রজতকে।
সিরিজা মুখটা তুলে এবার তাকালো রজতের দিকে। রজতের করুন মুখ দেখে ওর মুখে একটু মুচকি হাসি।
বাচ্চাটাকে বুকে ধরেই বললো, "দোলন এসেছে কিছুক্ষণ আগে। জিজ্ঞেস করছিল দাদাবাবুর ঘুম ভেঙেছে কিনা?"
রজত চোখ দুটো হাত দিয়ে রগড়ে আবার সিরিজার দিকে তাকালো। তখনও ওর বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। সিরিজাকে বললো, "ও তো বলেছিলো আরও সকাল সকাল আসবে। দেরী করে এলো?"
জবাবটা দিল দোলনই। বললো, "কাল আপনারা দুজন অনেক রাত করে শুয়েছেন, আমি জানি। সেইজন্যই একটু দেরী করে এলুম। এই আর কি।"
রজত মনে মনে ভাবল, "আমরা দেরী করে শুয়েছি, সেটা দোলন জানল কি করে? ও কি সিরিজা আর আমার সম্পর্ক নিয়ে কিছু সন্দেহ করছে? মেয়েদের মনে হিংসার অভাব নেই। সিরিজা আমার সাথে বহাল তবিয়তে রয়েছে সেটা ওর সহ্য নাও হতে পারে।"
উল্টে ওই দোলনকে বললো, "আমরা তো তোমার জন্য তাড়াতাড়িই শুয়েছি কালকে। তুমি ভোর ভোর আসবে। সিরিজাও বললো, দশটার আগে শুয়ে পড়তে। আমিও তাই শুয়ে পড়লাম। কিন্তু তুমি দেরি করে আসবে, আমিও ভাবিনি।"
বাচ্চাটাকে তখনও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে সিরিজা। রজত যেন কিছুই দেখেনি এমন ভাব করে ঢুকে গেল বাথরুমে। দোলনকে বললো, "বসো, আমি চোখ মুখ ধুয়ে আসছি।"
সিরিজা দেখছিল দোলনকে। রজতের ফ্ল্যাটটাকে ভালো করে দেখছিল দোলন। রান্নাঘর, বাথরুম, বসার ঘরে চোখ বুলিয়ে দৃষ্টিটা সটান চলে গেল রজতের শোবার ঘরের দিকে। সিরিজাকে বললো, "দাদাবাবু ঐ ঘরে শোয়। আর তুমি?"
সিরিজার মুখ থেকে কথা বার করতে চাইছে দোলন। চটপট উত্তর না দিয়ে সিরিজা একটু রয়ে সয়েই বললো, "তোর কি মনে হয়? কোথায় শুই?"
দোলনও চালাক কম নয়। সিরিজাকে বললো, "নিশ্চয়ই দাদাবাবুর সাথে?"
দোলনকে এবার মোক্ষম জবাবটা দিল সিরিজা। বললো, "তুই শুবি আজ থেকে ও ঘরে, দাদাবাবুর সাথে। আমি না হয় এ ঘরে।"
দোলন কিছুটা অপ্রস্তুত। সিরিজার মুখ থেকে এমন মনরাখা কথা শুনেও ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। সাত সকালে রজতের ফ্ল্যাটে এসে ও সিরিজাকে বেশ কোনঠাসা করে দিয়েছে, এই ভেবে কি বলবে সেটাই ভাবছিল। সিরিজা সঙ্গে সঙ্গে বললো, "আমি তো প্রথম দিন এ ফ্ল্যাটে এসে এ ঘরেই শুয়েছিলাম। দাদাবাবু একা একা ও ঘরে শুয়েছিল। দ্বিতীয় দিন দেখলাম, ঘুমের ঘোরে হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করে দিয়েছে তোর দাদাবাবু। আমি এ ঘর থেকে ছুটে গেলাম ও ঘরে। দেখলাম ঘুম ভেঙে প্রচন্ড ঘামছে দরদর করে। আমি চোখে মুখে জল দিলাম। এক গ্লাস জল এনেও খাওয়ালাম। তাও দেখি কেমন যেন হাঁসফাস করছে। বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গেল। তারপরই ধড়াস করে মেঝেতে পড়ে গেল। রাত বিরেতে আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। দাদাবাবু বললো, "বাক্সে ওষুধ আছে, আমাকে এনে দাও।" আমি দিলাম, তাও দেখি চোখ দুটো ওপরের দিকে করে কেমন যেন করছে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আমি মেয়েমানুষ, দাদাবাবুর এই অবস্থায় কি করবো? বুদ্ধি করে দাদাবাবুর এক বন্ধুকে ফোন করলাম। খুব ভালো লোক। নাম দিবাকরদা। উনি এলেন ঐ অতরাত্রেই একেবারে ডাক্তারবাবুকে সাথে নিয়েই। ডাক্তার বাবু সব দেখে বললেন, আসলে উনি মানসিক ভাবে একটা শখ পেয়েছেন। স্ত্রীর জন্য চিন্তা করেই ওনার এমন দশা হয়েছে। বউ যখন নেই তখন রাত্রে একা শুতে দেওয়াটা ঠিক হবে না। ওনার সাথে কেউ শুলে বা কাছাকাছি থাকলে ভালো হয়। তাই আমি তারপর থেকে এঘর থেকে ওঘরে। দাদাবাবুর এখনও রাত বিরেতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়। আমাকে তখন পাশে বসে সেবা শুশ্রষা করতে হয়। এই আর কি।"
-- "হুম।"
দোলন মনে মনে বললো, "গল্প বেশ ভালোই ফেঁদেছো! তোমার সত্যি জবাব নেই সিরিজা!"
এবার একটু সিরিজাকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্যই বললো, "তাহলে আজ থেকে দাদাবাবুর সেবা শুশ্রষা আমি করবো বলছো?"
সিরিজাও ঘাবড়ে যাওয়ার মেয়ে নয়। দোলনকে বললো, "কেন করবি না? আমি তো বলেই দিলাম তোকে। শুধু সারারাত না ঘুমিয়ে তোকে জেগে বসে থাকতে হবে। আমি যতটা কষ্ট করি। তুই যদি করতে পারিস কর। আমার আপত্তির কি আছে?"
দোলন চোখ কপালে তুলে বললো, "তুমি সারারাত জেগে বসে থাকো? ঘুমোও কখন তাহলে?"
- "আমি দুপুরবেলাটা ঘুমোই। তোর দাদাবাবু অফিসে চলে যায় তখন। দিনের বেলাটা এই ফ্ল্যাটেতো আমি একাই থাকি। কিছুক্ষণ ঐ টিভিটা চালিয়ে দেখি তারপর ঘুমিয়ে পড়ি। তোর দাদাবাবু অফিস থেকে ফেরে সন্ধেবেলা। তখন চা করে খাওয়াই।"
দোলন দেখছে রজত এবার বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বলছে, "সিরিজা এবার চা টা করো। আমরা সবাই মিলে খাই।"
বাচ্চাটাকে অনেকক্ষণ ধরে বুকের দুধ খাইয়েছে সিরিজা। দোলনকে বললো, "নে, তুই এবার ছেলেটাকে ধর। আমি চায়ের জলটা বসিয়ে দিয়ে আসি।"
রান্নাঘরে ঢুকল সিরিজা। রজত তখন সামনের সোফাটায় বসে পড়েছে। দেখলো দোলন বেশ কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখছে। বেশ চমকে দেবার মতন প্রশ্ন করলো এবার রজতকে। - "দাদাবাবু, তোমার বউ কেন চলে গেল?"
সিরিজার বুকে মুখ রেখে রজত ঘুমে আচ্ছন্ন। সিরিজাও তাই। সকাল যে অনেক আগেই হয়ে গেছে, ওরা দুজনের কেউই জানে না। সাতসকালেই দোলন আসবে বলেছিল। আসেনি। রজত, সিরিজার দুজনের কারুরই ঘুম ভাঙেনি। দোলন ভোরবেলা না আসার ফলে আরও কিছুক্ষণ নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর অধিকার পেয়ে গেছে রজত। ওর গভীর নিঃশ্বাসটা পড়ছিল সিরিজার বুকের খাঁজের ওপর। সিরিজার বুক দুটোও নিঃশ্বাসের সাথে তালে মিলিয়ে উঠছিল আর নামছিল। বিছানায় একটু পাশ ফিরে রজতের পিঠের ওপর তখন সিরিজার একটা হাত। রজতের হাতটা ঠিক সিরিজার কোমরের ওপরে। চোখদুটো দুজনেরই বোজা। গভীর নিদ্রায় মগ্ন।
ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে শুয়েছিল দুজনে। অ্যালার্ম বেজে গেছে অনেকক্ষণ। কিন্তু ঘড়ি ওদের দুজনকে ঘুম থেকে জাগাতে পারেনি। ঠিক এই মূহূর্তে দোলন যদি এসে পড়ে, তবেই যদি ওদের ঘুম ভাঙে।
রাত্রে শোবার ঠিক আগে, আরও একপ্রস্থ সিরিজার শরীরটাকে আদর করেছে রজত। সিরিজা বাধা দেয় নি। রজত বলছিল, "দোলন যতদিন এ বাড়ীতে থাকবে, তোমাকে আদর সোহাগ কিছুই করতে পারবো না দিনের বেলাটায়। যা হবে রাত্রিরে। পাশের ঘরে দোলনের শোবার ব্যাবস্থা করে, এঘরে তুমি আর আমি। আমরা দুজন। তোমাকে আদর করতে না পারলে, আমার যে কি কষ্ট হবে সিরিজা, তোমাকে কি করে আমি বোঝাবো?"
রজত ঠিক করে রেখেছিল, দোলন এলে আজই একবার দিবাকরের বাড়ী থেকে ঘুরে আসবে। সিরিজার কথা মতন দিবাকরকে যদি একবার রাজী করানো যায়। তারপর এই দোলনটাকেও রাজী করাতে হবে এবং সময়মত ভাগাতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
সিরিজা রাজী হয় নি। বলেছিল, "না, এখনই যেও না। ওকে দুদিন অন্ততঃ এখানে থাকতে দাও। নইলে ও বেঁকে বসতে পারে। তাছাড়া তোমার শ্বশুর মশাই যেভাবে এখানে যাওয়া আসা শুরু করেছে, আমরা দুটো মেয়ে এই বাড়ীতে একা একা থাকলে আরও বিপদ।"
রজতের যেন ঝঞ্জাট এর শেষ নেই। এই একটা সমস্যার এখনও কূল কিনারা করতে পারেনি ও নিজেই। শ্বশুর মশাই হঠাৎ এসে দুটো মেয়েকে একসাথে দেখলে যে কি কেলোর কীর্তি ঘটবে তা নিয়ে ও বেশ আতঙ্কিত। সিরিজার শরীরটার সাথে নিজের শরীরটা মিলিয়ে দেবার পর শুধু টেনশনটা কেটে যায়। কথায় বলে যৌনসঙ্গম অনেক দুশ্চিন্তা দূর করে। রজতের বাকী জীবনে সিরিজাই এখন আশা আর ভরসা।
দোলনের এখানে থাকার ব্যাপারটা নিয়ে গল্প করতে করতেও ওদের অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। সিরিজা বারবার রজতকে আস্বস্ত করেছে। দোলনকে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। সিরিজাই ঠিক এর একটা উপায় বার করবে।
মেয়েটা নাকি খুব কথা বলে। সিরিজাই বলছিল, "বকবকানি একবার শুরু হলে থামতেই চায় না। সিরিজাকে সাথে পেলে ওর বকবকানিটা আরও বাড়বে।"
রজত ঠিক করে রেখেছে দোলন যখন সিরিজার সাথে বকবক করবে, তখন ও পাশের ঘরে বসে টিভি দেখবে। দুটো কানে তুলো গুঁজে রাখবে, যাতে মাথা না ধরে। দোলন একটু অন্যমনস্ক হলে, ঘর থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও গেলে বা চানে ঢুকলে তখন সিরিজাকে যত পারবে আদর করবে। দিনের বেলার মনস্কামনাটুকু যতটা সম্ভব পূরণ করে নেবে। তক্কে তক্কে থাকতে হবে। সুযোগ এলে, সেটাকে হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই। দোলনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুখটুকুকে মাঝে মধ্যে ভোগ করে না নিলে রজতেরই বা চলবে কি করে?
ঠিক চোখ দুটো বোজার সময় রজত বললো, "কাল যদি দোলন একটু বেলা করে আসতো, তাহলেই তো ভালো হতো। তুমি আর আমি, দুজনে বেশ কিছুক্ষণ আরও শুয়ে থাকতে পারতাম। তা না শুধু শুধু ভোর ভোর এসে বিরক্ত করা।"
দোলন আসে নি। রজতের ইচ্ছাটাই পূরণ করেছে। সিরিজাকে আরও একটু জড়িয়ে ধরে ঘুমের মধ্যেই ওর বুকের আরও গভীরে মুখ রাখার চেষ্টা করছিল রজত। ঠিক এই সময়ই দোলন এলো ঘুম ভাঙাতে। দরজায় প্রবল জোড়ে কড়া নাড়ল বার দুয়েক। সিরিজা, রজতের দুজনেরই ঘুমটা ভাঙল। বিছানায় বসে বুকের ব্লাউজ লাগাতে লাগাতে সিরিজা বললো, "আসছি দোলন আসছি। দাঁড়া একটু।"
বুকের ব্লাউজটা গলিয়ে শায়া আর শাড়ীটা গায়ে জড়িয়ে নিতে যত সময়। দোলনেরও তর সইছে না। আরও একবার কড়া নেড়েছে। সিরিজা রজতকে বললো, "তুমি শুয়ে থাকো। তোমাকে উঠতে হবে না। আমি ওকে ঘরে ঢোকাচ্ছি।"
তড়িমড়ি করে ঘুম থেকে উঠেছে। শাড়ীটা ভালো মতন গায়ে জড়িয়ে না নিলে দোলন আবার কি ভাববে? সিরিজা শাড়ীটা জড়িয়ে এগিয়ে গেল দরজা খুলতে। রজত সিরিজার বদলে এবার পাশ বালিশটা জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে থাকলো।
দরজায় খুলতেই দোলন সিরিজাকে বললো, "এখনও ঘুম ভাঙেনি তোমার? আমি তো বেলা করেই এলাম। ভাবলাম একটু দেরী করেই যাই। এখনও যে দিব্যি শুয়ে আছ ভাবিনি।"
ঘরে ঢুকে দোলন বললো, "দাদাবাবু বুঝি এখনও ঘুমোচ্ছে? আমি এসেছি, এবার বোধহয় ঘুম ভেঙে যাবে।"
সিরিজা ওর কথা শুনে ঘাড় নাড়লো।
ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে দোলন। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বললো, "নাও এবার তোমার পোলাটাকে ধরো, আসল মা'কে দেখতে না পেয়ে বেচারার মন ভালো হচ্ছে না কিছুতেই।"
সিরিজা একটু ইতস্তত করছিল। দোলন বললো, "ধরো এটাকে, এটা তো তোমারই বাচ্চা। আসল মা'কে ছেড়ে নকল মায়ের কাছে, আর কতদিন ভালো লাগবে?"
সিরিজা দুহাত বাড়ালো। বাচ্চাটাকে নিজের কোল থেকে সিরিজার কোলে দিয়ে দিল দোলন।
চোখদুটোকে কাতুমুতু করে বাচ্চাটা সিরিজাকে দেখছে। একটু পরেই ভ্যা করে কান্না জুড়ে দিল। সিরিজা দোলনকে বললো, "এটাকে তুইই ধর। আমার কোলে থাকতে ওর এখন ভালো লাগছে না।"
দোলন আবার বাচ্চাটাকে নিয়ে যথারীতি আদর করতে লাগলো। সিরিজাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো, "তোমার আপদ মরদটা যখন এসেছিল, খুব চিন্তায় পড়ে গেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে। তুমি নেই, ঘরে তোমার বাচ্চা রয়েছে আমার সাথে। এদিকে আমার স্বামীটাও পালিয়েছে আমাকে ছেড়ে। একা একা ওকে নিয়ে কি যে করি? তার ওপর ঐ শয়তানটা থেকে থেকে খালি এসে আমায় বিরক্ত করছে। ভাগ্যিস এই দুধের শিশুটাকে একবারও দেখতে পায়ে নি। নইলে আমার হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে পালাতো।"
- "তুই কি ওকে ঘরে লুকিয়ে রেখে ছিলিস?"
-- "আমি তো তোমার স্বামীকে ঘরের ভেতরেই ঢুকতে দিই নি। নইলে কি আর ও টের পেত না? বলেছি, সিরিজা ওর বাচ্চা নিয়েই চলে গেছে এখান থেকে। কোথায় গেছে আমি জানি না। ভাগ্যিস ও তখন কেঁদে ওঠেনি। নইলে?"
বাচ্চাটার গালে চুমু খেতে লাগলো দোলন। ওকে আদর করতে লাগলো। সিরিজাকে বললো, "তোমার বাপু শখ কম নয়। স্বামীকে ছেড়ে, আমার ঘাড়ে বাচ্চা ফেলে দিয়ে দিব্যি এখানে এসে রয়েছ। দাদাবাবুর সাথে খুব পিড়িত হয়েছে না তোমার?"
দোলনের মুখে যেন কিছু আটকায় না। সিরিজা বললো, "আমি তো ভাবিনি, দাদাবাবুর বউ নেই এখানে। এসেছিলাম যখন, তখন থেকেই তো নেই। আমাকে বললো, তুমি থেকে যাও এখানে। একটু ঘরের কাজকর্ম আর রান্নাবান্নাটা করে দিলে আমারই সুবিধা হয়। তাই....."
-- "তাই তুমি থেকে গেলে। দাদাবাবুও সুবিধে হলো, আর তোমারও থাকার একটা জায়গা হলো। আর আমি যে ওদিকে কি জ্বালায় মরছি তুমি জানো?"
দোলনের কোলে ফিরে গিয়ে বাচ্চাটার তখন কান্না থেমেছে। ওকে একটু দোল খাওয়াতে খাওয়াতে দোলন বললো, "তোমার বাচ্চাটাকে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম জানো। তুমি যখন এটাকে আমার হাতে তুলে দিলে, খুব আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু সব গন্ডগোল পাকালো আমার স্বামীটা। ওর পছন্দ হয় নি তোমার বাচ্চাটাকে। খালি আমায় বলো তো, তুমি সিরিজার বাচ্চাটাকে মানুষ করার দায়িত্ব নিলে কেন? ও তো আমাদের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে পালালো। আমি যতই বলি, না সিরিজা দেয় নি। আমিই চেয়ে নিয়েছি ওর কাছ থেকে, ততো রাগ দেখাতো আমার ওপরে। বলতাম, আমাদের তো বাচ্চাকাচ্চা হয় নি। তাই দুজনে মিলে এটাকেই মানুষ করি না ক্ষতি কি?"
কিন্তু আমার কথায় মন গলতো না ওর। খালি দোষারোপ করতো, আর গালাগালি খিস্তি খেউর করতো মুখে। সেইজন্যই বোধহয় পালিয়ে গেল আমাকে ছেড়ে।
সিরিজা দুহাতটা বাড়ালো আবার। দোলন কে বললো, "দে, আমাকে আর একবার দে।"
দোলন সিরিজার বাচ্চা সিরিজাকে আবার ফেরত দিল। মুখ নিচু করে সিরিজা এবার ওকে আদর করতে লাগলো। বাচ্চাটা এবার কাঁদলো না। শুধু সিরিজার দিকে চেয়ে থাকল একদৃষ্টে। মায়ের প্রতি যেন অভিমান নেই। দুধের শিশু ও আবার মায়ের পিরিত বুঝবে টাকি?
- "তোর স্বামীটা কোথায় গেল বলতো তোকে ছেড়ে?"
-- "জানি না।"
- "তোর সাথে অশান্তি করতো? রাত বিরেতে বাড়ী ফিরতো?"
-- "তা তো করতই। তলে তলে কারুর সাথে ভাব জমিয়ে নিয়েছে কিনা আমিই বা কি করে বুঝবো?"
- "তুই আগে থেকে কিছু বুঝতে পারিস নি?"
-- "কি করে বুঝব? না বললাম তো। নিশ্চয়ই কোনো মাগীর খপ্পরে পড়েছে বোধহয়। জানতে পারলে তো আর আস্ত রাখতুম না।"
সিরিজা বাচ্চাটাকে আদর করতে করতেই দোলনকে সান্তনা দিতে লাগলো। বললো, "চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।"
দোলন একটু অবাক করে দিয়েই সিরিজাকে বললো, "তুমি আছো, দাদাবাবু আছে। আমার আবার চিম্তা কি? এই যে এখানে আজ থেকে এখানে গ্যাট হয়ে বসলাম, সহজে নড়ছি না এখান থেকে!"
সিরিজা একটু ভূরু কূঁচকে দোলনের দিকে তাকালো। দোলন ওর মন রেখে এবার বললো, "তোমার অবশ্য দোষ কিছু আমি দেখি না। যা মদ্য মাতাল স্বামী তোমার। ওরকম স্বামী আমার থাকলে, আমিও তোমার মত ঘর ছেড়ে স্বামী ছেড়ে পালিয়ে আসতুম।"
বাচ্চাটা চোখ বুজে এবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছে। সিরিজা মুখ নিচু করে ওকে চুমু খেলো। স্নেহের চুম্বন করছে। মায়ের আদরে স্নেহ মমতায় ভরিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। দোলন দূর থেকেই ওকে বললো, "আমি তো বুকের দুধ ওকে খাওয়াতে পারি না। তোমাকে ছেড়েই তো আমার কাছে রয়েছে। কাছে যখন পেয়েছ, একটু বুকের দুধ খাওয়াও না ওকে। বুকের দুধ পেটে পড়লে, তখন দেখবে থাকতে পারবে না তোমাকে ছেড়ে।"
সিরিজা বাচ্চাটাকে বুকে ধরে দোলনের কথা মতন ব্লাউজটা খুলতে লাগলো আস্তে আস্তে। বাচ্চাটাকে বুকে ধরে স্তনের বোঁটাটা ঢুকিয়ে দিল ঠোঁটের মধ্যে।
ঘুমন্ত অবস্থাতেই বাচ্চাটা চোখ বন্ধ করে মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে। রজতের মত আগ্রাসী নয়। শান্ত, ধীর চিত্তে। যেন কামনার হাহাকার নেই। পাপের পঙ্কিল পরশও নেই। বাচ্চাটাকে বুকে চেপে ধরে স্তন নিঃসৃত করে ভরিয়ে দিচ্ছে সিরিজা। ঠিক মা আর শিশুর চিরন্তন যুগলবন্দী ছবি।
রজত ঘরে ঢুকেছে কখন ঘুম থেকে উঠে সিরিজা, দোলন কারুরই খেয়াল নেই। ঘুম চোখে হাঁ করে দেখছে রজত। সিরিজা ব্লাউজের একপাশটা খুলে স্তন বের করে বাচ্চাটাকে দুধ খাওয়াচ্ছে। বাচ্চার দেখাদেখি ওরও ইচ্ছে করছে কিছুটা। ভাবমূর্তি প্রকাশ পেলেও মুখে কিছু বলতে পারছে না কারন সিরিজার সাথে দোলনও রয়েছে ঐ ঘরের মধ্যেই।
-- "ও দাদাবাবু এসেছেন? ঘুম ভেঙেছে আপনার?"
দোলনই প্রথম নজর করলো রজতকে।
সিরিজা মুখটা তুলে এবার তাকালো রজতের দিকে। রজতের করুন মুখ দেখে ওর মুখে একটু মুচকি হাসি।
বাচ্চাটাকে বুকে ধরেই বললো, "দোলন এসেছে কিছুক্ষণ আগে। জিজ্ঞেস করছিল দাদাবাবুর ঘুম ভেঙেছে কিনা?"
রজত চোখ দুটো হাত দিয়ে রগড়ে আবার সিরিজার দিকে তাকালো। তখনও ওর বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে। সিরিজাকে বললো, "ও তো বলেছিলো আরও সকাল সকাল আসবে। দেরী করে এলো?"
জবাবটা দিল দোলনই। বললো, "কাল আপনারা দুজন অনেক রাত করে শুয়েছেন, আমি জানি। সেইজন্যই একটু দেরী করে এলুম। এই আর কি।"
রজত মনে মনে ভাবল, "আমরা দেরী করে শুয়েছি, সেটা দোলন জানল কি করে? ও কি সিরিজা আর আমার সম্পর্ক নিয়ে কিছু সন্দেহ করছে? মেয়েদের মনে হিংসার অভাব নেই। সিরিজা আমার সাথে বহাল তবিয়তে রয়েছে সেটা ওর সহ্য নাও হতে পারে।"
উল্টে ওই দোলনকে বললো, "আমরা তো তোমার জন্য তাড়াতাড়িই শুয়েছি কালকে। তুমি ভোর ভোর আসবে। সিরিজাও বললো, দশটার আগে শুয়ে পড়তে। আমিও তাই শুয়ে পড়লাম। কিন্তু তুমি দেরি করে আসবে, আমিও ভাবিনি।"
বাচ্চাটাকে তখনও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে সিরিজা। রজত যেন কিছুই দেখেনি এমন ভাব করে ঢুকে গেল বাথরুমে। দোলনকে বললো, "বসো, আমি চোখ মুখ ধুয়ে আসছি।"
সিরিজা দেখছিল দোলনকে। রজতের ফ্ল্যাটটাকে ভালো করে দেখছিল দোলন। রান্নাঘর, বাথরুম, বসার ঘরে চোখ বুলিয়ে দৃষ্টিটা সটান চলে গেল রজতের শোবার ঘরের দিকে। সিরিজাকে বললো, "দাদাবাবু ঐ ঘরে শোয়। আর তুমি?"
সিরিজার মুখ থেকে কথা বার করতে চাইছে দোলন। চটপট উত্তর না দিয়ে সিরিজা একটু রয়ে সয়েই বললো, "তোর কি মনে হয়? কোথায় শুই?"
দোলনও চালাক কম নয়। সিরিজাকে বললো, "নিশ্চয়ই দাদাবাবুর সাথে?"
দোলনকে এবার মোক্ষম জবাবটা দিল সিরিজা। বললো, "তুই শুবি আজ থেকে ও ঘরে, দাদাবাবুর সাথে। আমি না হয় এ ঘরে।"
দোলন কিছুটা অপ্রস্তুত। সিরিজার মুখ থেকে এমন মনরাখা কথা শুনেও ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। সাত সকালে রজতের ফ্ল্যাটে এসে ও সিরিজাকে বেশ কোনঠাসা করে দিয়েছে, এই ভেবে কি বলবে সেটাই ভাবছিল। সিরিজা সঙ্গে সঙ্গে বললো, "আমি তো প্রথম দিন এ ফ্ল্যাটে এসে এ ঘরেই শুয়েছিলাম। দাদাবাবু একা একা ও ঘরে শুয়েছিল। দ্বিতীয় দিন দেখলাম, ঘুমের ঘোরে হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করে দিয়েছে তোর দাদাবাবু। আমি এ ঘর থেকে ছুটে গেলাম ও ঘরে। দেখলাম ঘুম ভেঙে প্রচন্ড ঘামছে দরদর করে। আমি চোখে মুখে জল দিলাম। এক গ্লাস জল এনেও খাওয়ালাম। তাও দেখি কেমন যেন হাঁসফাস করছে। বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে গেল। তারপরই ধড়াস করে মেঝেতে পড়ে গেল। রাত বিরেতে আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। দাদাবাবু বললো, "বাক্সে ওষুধ আছে, আমাকে এনে দাও।" আমি দিলাম, তাও দেখি চোখ দুটো ওপরের দিকে করে কেমন যেন করছে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আমি মেয়েমানুষ, দাদাবাবুর এই অবস্থায় কি করবো? বুদ্ধি করে দাদাবাবুর এক বন্ধুকে ফোন করলাম। খুব ভালো লোক। নাম দিবাকরদা। উনি এলেন ঐ অতরাত্রেই একেবারে ডাক্তারবাবুকে সাথে নিয়েই। ডাক্তার বাবু সব দেখে বললেন, আসলে উনি মানসিক ভাবে একটা শখ পেয়েছেন। স্ত্রীর জন্য চিন্তা করেই ওনার এমন দশা হয়েছে। বউ যখন নেই তখন রাত্রে একা শুতে দেওয়াটা ঠিক হবে না। ওনার সাথে কেউ শুলে বা কাছাকাছি থাকলে ভালো হয়। তাই আমি তারপর থেকে এঘর থেকে ওঘরে। দাদাবাবুর এখনও রাত বিরেতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়। আমাকে তখন পাশে বসে সেবা শুশ্রষা করতে হয়। এই আর কি।"
-- "হুম।"
দোলন মনে মনে বললো, "গল্প বেশ ভালোই ফেঁদেছো! তোমার সত্যি জবাব নেই সিরিজা!"
এবার একটু সিরিজাকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্যই বললো, "তাহলে আজ থেকে দাদাবাবুর সেবা শুশ্রষা আমি করবো বলছো?"
সিরিজাও ঘাবড়ে যাওয়ার মেয়ে নয়। দোলনকে বললো, "কেন করবি না? আমি তো বলেই দিলাম তোকে। শুধু সারারাত না ঘুমিয়ে তোকে জেগে বসে থাকতে হবে। আমি যতটা কষ্ট করি। তুই যদি করতে পারিস কর। আমার আপত্তির কি আছে?"
দোলন চোখ কপালে তুলে বললো, "তুমি সারারাত জেগে বসে থাকো? ঘুমোও কখন তাহলে?"
- "আমি দুপুরবেলাটা ঘুমোই। তোর দাদাবাবু অফিসে চলে যায় তখন। দিনের বেলাটা এই ফ্ল্যাটেতো আমি একাই থাকি। কিছুক্ষণ ঐ টিভিটা চালিয়ে দেখি তারপর ঘুমিয়ে পড়ি। তোর দাদাবাবু অফিস থেকে ফেরে সন্ধেবেলা। তখন চা করে খাওয়াই।"
দোলন দেখছে রজত এবার বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। সিরিজার দিকে তাকিয়ে বলছে, "সিরিজা এবার চা টা করো। আমরা সবাই মিলে খাই।"
বাচ্চাটাকে অনেকক্ষণ ধরে বুকের দুধ খাইয়েছে সিরিজা। দোলনকে বললো, "নে, তুই এবার ছেলেটাকে ধর। আমি চায়ের জলটা বসিয়ে দিয়ে আসি।"
রান্নাঘরে ঢুকল সিরিজা। রজত তখন সামনের সোফাটায় বসে পড়েছে। দেখলো দোলন বেশ কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখছে। বেশ চমকে দেবার মতন প্রশ্ন করলো এবার রজতকে। - "দাদাবাবু, তোমার বউ কেন চলে গেল?"