13-03-2019, 04:34 PM
পর্ব ৭
ঘুম থেকে উঠতে বেশ বেলা হয়ে যায় সুদেষ্ণার... চোখ মেলে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে সময়ের... কানে আসে চামচ আর কাপের টুংটাং আওয়াজ... আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়ায়... ধীর পায়ে বাথরুমে ঢোকে সে... আজ অফিস ছুটি... তাই এমনিতেই এই দিনগুলো একটু আলস্যেই কাটে... ঘুম থেকে ওঠার তাড়া থাকে না... কিন্তু... সৌভিক তো এত তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়ে না? তাহলে? সে গেলো কোথায়? বাথরুমের কোমডে বসে ভাবে সুদেষ্ণা...
দাঁত মেজে ঘরে ফিরে আসতেই অবাক হয় সে... খাটের ওপরে ট্রেতে রাখা ধূমায়িত দু-কাপ চা... বালিশে ঠেস রেখে মিটিমিটি হাসি মুখে বসে সৌভিক...
‘একি? তুমি চা করলে? আমায় ডেকে দিতে পারতে তো...’ খাটে উঠে বসতে বসতে বলে সুদেষ্ণা... এই ভাবে ঘুম থেকে উঠে স্বামীর বাড়িয়ে দেওয়া চা’য়ের কাপ পেয়ে মনে মনে খুশিই হয় বেশ...
‘ঘুমন্ত অবস্থায় তোমায় এত মিষ্টি লাগে, যে জাগাতে ইচ্ছা করলো না...’ ট্রে’এর থেকে চা’য়ের কাপটা সুদেষ্ণার হাতে তুলে দিতে দিতে বলে সৌভিক...
এই ভাবে স্বামীর কাছে প্যাম্পার্ড হতে বেশ লাগে সুদেষ্ণার... পুরানো দিনগুলো মনে পড়ে যায়... স্মিত হাসি লেগে থাকে ঠোঁটের কোনে... ‘আজ দেখছি বাবুর মুডটা খুব ভালো রয়েছে?’ বলতে বলতেই ইশানের কথা মনে পড়ে... ‘হাতের কাপটা ট্রেতে রেখে বিছানা ছেড়ে দাঁড়ায় সে...
‘আবার কোথায় চললে?’ প্রশ্ন করে সৌভিক... চুমুক দেয় নিজের কাপে...
‘এক মিনিট... ইশানটা কি করছে, একবার উঁকি মেরে আসি...’ বলেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে...
.
.
.
দৈনন্দিনের থেকে ছুটির দিনগুলো স্বভাবতই একটু আলাদা হয়... অন্যান্য দিন সৌভিক সময় পায় না বাজার করার, কিছু ছুটির দিনটায় ছেলেকে নিয়ে বাজার করতে যাওয়া সৌভিকের একটা বড় আনন্দ... আর সৌভিক ইশানের অনুপস্থিতে কিছু কাজ এগিয়ে রাখে সুদেষ্ণাও... বাজার সেরে সৌভিকদের না ফেরা অবধি... তারপর একটু ভালো মন্দ রান্না, দুপুরের দিকে একটু বেলা করে এক সাথে খেতে বসা... কোথা দিয়ে যে সময়টা বয়ে যায়, হিসাব রাখা যায় না...
ইশানকে নিজের ঘরে পাঠিয়ে প্রায় টেনে নিয়ে আসে বেডরুমে সৌভিক সুদেষ্ণাকে... বিছানায় ওকে বসিয়ে ল্যাপটপটা টেনে নেয় সামনে... ল্যাপটপটায় পাওয়ার বাটন এ আঙুলের চাপ দিয়ে বলে সে, ‘দাঁড়াও... তোমায় ওই সাইটটা দেখাই...’
সুদেষ্ণা অবাক হয়ে দেখে সৌভিকের উৎসাহ... সে মনে মনে আশা পোশন করেছিল যে এই উৎসাহটা হয়তো বেডরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, কিন্তু এখন তার বুঝতে অসুবিধা হয় না যে সৌভিক ব্যাপারটা নিয়ে সত্যিই রীতি মত সিরিয়াস... এতটুকুও মজার ছলে করছে না কোন কিছু, বা রিতার কথায় ব্যাপারটা আর ফ্যান্টাসির পর্যায়ে পড়ে নেই...
সত্যি বলতে সুদেষ্ণারও ইচ্ছা নেই যে আবার সেই পুরোনো তিক্ততায় ফিরে যাবার... আর সেই কারণেই সে ব্যাপারটায় আগ্রহ প্রকাশ করেছিল... চটকা ভাঙে সৌভিকের কথায়... ‘এই দেখো... এটা হচ্ছে আমাদের প্রোফাইল...’
‘বাব্বা... আমাদের প্রোফাইলও তৈরী করে ফেলেছ?’ অবাক হয় সৌভিকের এই রকম সুনিপন পরিকল্পনা দেখে...
‘কি বলছো? প্রায় বছর খানেক ধরে এই ফ্যান্টাসিটাকে লালন পালন করছি মনের মধ্যে সোনা...’ উত্তেজিত সৌভিক উত্তর দেয় সুদেষ্ণার প্রশ্নের... ‘তুমি ভাবতে পারছো... জাস্ট ফাক... কোনো অ্যাটাচমেন্ট নেই... ভালো করে উল্টে পালটে চোদো... তারপর ফিরে এসো নিজেদের আবর্তের মধ্যে... কোন মন খারাপের ব্যাপার নেই, কোন হৃদয়ের সম্পর্ক নেই... জাস্ট আ ফান... দ্যাটস্ ইট...’ বলতে বলতে সুদেষ্ণাকে নিজের কোলের মধ্যে টেনে নেয় সৌভিক... আঙুল দিয়ে দেখাতে থাকে যে প্রোফাইলটা সে তৈরী করেছে তাদের জন্য... সুদেষ্ণার গলার মধ্যে দলা পাকায় যেন... সৌভিকের সাথে নিজেও পড়তে থাকে ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে ওঠা তাদের প্রোফাইলটা... ‘মধ্য তিরিশ... দম্পতি... বাঙালী... অধুনা মুম্বাই প্রবাসী... বিশ্বাস করে ‘জীবনটা একটাই...’ সুশিক্ষিত... প্রতিষ্ঠিত... বন্ধুত্বে বিশ্বাসী...’
এরপর আরো কিছু তাদের তথ্য যদিও সেই তথ্য থেকে তাদের বর্তমান অবস্থান জানা সম্ভবপর নয় কোন মতেই... খুব সুচারুভাবেই সেগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে...
‘এই ভাবে ইন্টার্নেটএ লিখলে ব্যাপারটা একটু বিপদজনক নয় কি?’ শুকনো গলায় প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা... ‘মানে ইন্টার্নেটে তো অনেক কিছুই হয় বলে শোনা যায়...’
‘বিপদজনক ঠিকই, কিন্তু এই ক্ষেত্রে নয়... কারণ এটা একটা পেইড সাইট... তাই আলবাল কেউ এখানে এসে ঢুকে আমাদের প্রোফাইল হ্যাক করতে পারবে না বা আমাদের কোন মেলও পাঠাতে পারবে না... একমাত্র রেজিস্টার্ড মেম্বার হলে, তবেই এখানে মেল আদানপ্রদান করা সম্ভব... তাই এই ক্ষেত্রে এখানে ওই ভয়টা একেবারেই নেই...’ আস্বস্থ করে সৌভিক সুদেষ্ণাকে... ‘আর তাছাড়া, আমরাও ঠিক মত সব কিছু না দেখে আমাদেরকে অন্যদের কাছে আমাদের আইডেন্টিটি রিভিল করবই বা কেন?’
সুদেষ্ণার পেটের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি পাকায় যেন... ‘মানে তুমি মোটামুটি এটা নিয়ে এগোচ্ছিই... মানে ইয়ু রেয়ালি ওয়ান্ট টু ডু ইট... তাই না?’
‘ইয়েস সোনা...’ হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরে সুদেষ্ণাকে দুই হাতের বাহুতে... একটা ভরাট স্তনকে হাতের মুঠোয় চেপে ধরে চটকে দেয় সে অক্লেশে...
‘এইহহহ... ছাড়ো... ইশশশ... কি করছ?... ও ঘরে ইশান রয়েছে না... দুম করে যদি এসে পড়ে?’ আঁতকে উঠে বলে ওঠে সুদেষ্ণা... তারপর একটু ইতঃস্তত করে প্রশ্ন করে মৃদু স্বরে... ‘তুমি সিওর তো... মানে ইয়ু আর সিওর অ্যাবাউট ইট...’
‘অফ কোর্স হানি...’ উত্তেজিত জবাব দেয় সৌভিক... ‘ভাবো তো... প্রায় বছর খানেক ধরে এটা নিয়ে তোমার পেছনে পড়ে ছিলাম... আর অ্যাট লাস্ট... তোমার মত পেলাম... উফফফফ... কি দারুন একটা এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে যে না কি বলবো...’ বলতে বলতে সুদেষ্ণা কে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় নরম ঠোঁটের ওপরে...
সুদেষ্ণার মনের মধ্যে সেই মুহুর্তে এক মিশ্র অনুভূতি খেলা করে চলে... ভয়, লজ্জা, দ্বিধা... আবার সেই সাথে এক অদম্য উত্তেজনা...
দুজনে মিলে মন দেয় ল্যাপটপে ফের... একটা একটা করে মেল খুলতে থাকে তারা... পড়তে থাকে তাদের মেলের বিশয়বস্তুগুলো...
নিজেরাই হাসাহাসি করে এক একজনের এক এক রকমের আর্জি দেখে... মেল লেখার ধরণ পড়ে... কেউ কেউ বোকার মত মেল পাঠিয়েছে, আবার কেউ কেউ লিখেছে ভালোই কিন্তু তাদের ছবি দেখে হয়তো পছন্দ হয় না কোন ভাবেই, দুজনেরই...
‘এটা দেখো... এটা খারাপ নয় কিন্তু...’ পরের মেলটা খুলে আঙুল তুলে দেখায় সৌভিক...
ছবিটা একটা কাপলএর... খুব একটা বেশি দিনের বিয়ে নয়, সেটা বোঝা যায়... মেয়েটাকে খুব মিষ্টি দেখতে... রোগা পাতলা, ছিপছিপে... সুদেষ্ণার নিজের পুরানো দিনের কথা মনে পড়িয়ে দেয়... দেখেই বোঝা যায় এখনও পরিপক্ক হয়ে ওঠে নি সেই অর্থে... সেই হিসাবে সৌভিকের মেয়েটিকে পছন্দ হবে, এটা নতুন কিছু নয়... কিন্তু ছেলেটি যে ভাবে নিজের শরীরের পেশি প্রদর্শন করে ছবি তুলিয়েছে, তাতে দেখেই নাঁক কোঁচকায় সুদেষ্ণা... ‘উমমমম... ন্যাএএএ...’ মুখ বিকৃতি করে সে...
সুদেষ্ণার না শুনে কোন দ্বিমত করে না সৌভিক... ‘ঠিক আছে... কোনো ব্যাপার না... আরো অনেক মেল এসেছে... সে গুলো খুঁজে দেখি বরং...’ বলে মন দেয় পরবর্তি মেলএ...
আসতে আসতে ইনবক্সে থাকা সব মেলই দেখা হয়ে যায় তাদের, কিন্তু মনের মত একটাও সেই ভাবে কোন প্রোফাইল খুজে পায় না দুজনেই... যদি বা সৌভিকের কয়েকটাকে পছন্দ হয়েছিল, কিন্তু সুদেষ্ণার পছন্দ হয় না কিছুতেই... তাই সৌভিকও আর এগোয় না...
‘মনে হচ্ছে আজ আমাদের দিন নয়... ঠিক আছে... নো প্রবলেম... আমরা অপেক্ষা করবো ঠিক মেলটার জন্য... কি বলো?’ এই ভাবে সব কটা সে রিজেক্ট করে দেওয়াতে সুদেষ্ণার যেন মনে হয় একটু হলেও হতাশা লেগে থাকে সৌভিকের গলার স্বরে...
‘ওহ গড!... আই কান্ট বিলিভ আই অ্যাম ডুইং দিস...’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে সুদেষ্ণা...
সৌভিক ঝুঁকে সুদেষ্ণাকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে... ‘ইয়েস হানি... ইয়ু উইল লাভ ইট...’ নীচু হয়ে চুমু খায় সুদেষ্ণার গালের ওপরে...
‘পাপা... ও পাপাআআআ...’ ও ঘর থেকে ছেলের গলার স্বর ভেসে আসে...
‘আসছি সোনা...’ গলা তুলে উত্তর দেয় সৌভিক... তারপর সুদেষ্ণার দিকে ফিরে বলে, ‘দাঁড়াও... দেখে আসি পুত্রের আবার কি আর্জি...’ বলে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে...
সুদেষ্ণা চুপচাপ ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে এমনিই... আর তখনই হটাৎ একটা মেল ঢোকে, পিং করে আওয়াজ করে... অন্যমস্কতায় মেলটার ওপরে ক্লিক করে সুদেষ্ণা...
‘তোমাদের দুজনকে দেখে বেশ ভালো লাগলো... আমাদের ছবি পাঠাও তোমাদের... চলো আমরা এক অভূতপূর্ব সুখের সন্ধান করি...’ মেলের নীচে প্রেরকের কিছু তথ্য আর সেই সাথে তাদের দুজনের একসাথে তোলা ছবি অ্যাাটাচ্ড করা...
সুদেষ্ণা মেলের সাথে অ্যাটাচ্ড ছবিটা খোলে... এক ভদ্রলোক... গাঢ় স্যুট পরিহিত... আর তার পাশে বসে রয়েছে একজন মহিলা... সুদেষ্ণা কেমন যেন হারিয়ে যায় ভদ্রলোকের গভীর হাসিটার মধ্যে...
‘ইন্টারেস্টং... কি বলো?’ পেছন থেকে আসা সৌভিকের গলার স্বরে চমকে প্রায় লাফ দিয়ে ওঠে সুদেষ্ণা... কখন সৌভিক পেছনে এসে দাঁড়িয়ে সেও ছবিটা দেখছিল, খেয়ালই করে নি সেটা সে...
‘আহ! হ্যা...’ ইতঃস্থত করে সামান্য মাথা নাড়ায় সুদেষ্ণা... গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তার... সৌভিক তার পেছনে দাড়িয়েই ঝুঁকে পড়ে ওদের প্রোফাইল পড়তে থাকে...
‘উমমমম... ভদ্রলোকের বয়স প্রায় চুয়াল্লিশ... ভদ্রমহিলা, ওনার স্ত্রী, বয়স সাঁইত্রিশ... একটু বেশি এনারা বয়স্ক বলে মনে হয় না তোমার?’ সুদেষ্ণাকে প্রশ্ন করে সৌভিক... ‘ ভদ্রলোক তোমার থেকে প্রায় বছর দশেকের বড় হবেন, আর ওনার স্ত্রীও আমার থেকে বছর দুয়েকের সিনিয়র...’
‘কিন্তু ওনাদের দেখে কিন্তু সেটা মনে হয় না...’ বলেই থমকায় সুদেষ্ণা... সে যেন ভাবতেই পারে না, সে এই কথাগুলো বলছে বলে...
‘হুমমমম... বুঝলাম... মানে আমার সোনা অবশেষে একজনকে পছন্দ করেই ফেলেছে...’ বলতে বলতে পেছন থেকে গাঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে সুদেষ্ণাকে সৌভিক... ‘ওকে... এখুনি আমি এই মেলটা জবাব পাঠিয়ে দিচ্ছি... আর সেই সাথে আমাদের ছবিও পাঠিয়ে দেবো...’
গলার মধ্যে দলা পাকায় সুদেষ্ণার... কানের মধ্যেটা কেমন গরম হয়ে হল্কা বেরুতে থাকে যেন... শুকনো গলায় সৌভিকের হাতের ওপরে হাত রেখে অনুনয় করে সে... ‘এত তাড়া করছ কেন সৌভিক... আমাকে প্লিজ একটু সময় দাও...’
সুদেষ্ণার গালে গাল রাখে সৌভিক... ‘বেশ... দিলাম... কিন্তু কতদিন?’
‘অন্তত... অন্তত সপ্তাহ খানেক...’ বলতে বলতে বুকের মধ্যেটায় একটা কাঁপন ধরে যায়...
‘ঠিক আছে... তাই হবে... আমি এক্ষুনি কিছু বলবো না আর... তবে যা সিদ্ধান্ত নেবার, একটু তাড়াতাড়ি নিও...’ বলতে বলতে ঘুরে এসে বসে বিছানায়... পাঠানো ছবিটাকে সেভ করে রাখে নিজের ড্রাইভে সৌভিক... সুদেষ্ণা ডুবে যায় এক গভীর চিন্তায়...
.
.
.
সে চায় যে করেই হোক একবার অন্তত রিতার সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে... কিন্তু অফিসে পরদিন পৌছে একেবারেই সে রিতাকে আলাদা করে কথা বলার সুযোগ পায় না... যখন রিতাকে পায় তখন তাদের লাঞ্চ টাইম... কিন্তু সে চেষ্টা করেও বিশয়টা রিতার সামনে উপস্থাপিত করতে পারে না কিছুতেই... কি ভাবে শুরু করে ভেবে পায় না, আর আদৌ রিতাকে বলাটাও ঠিক হবে কিনা, সেটা নিয়েও একটু দ্বিধায় পড়ে যায়... রিতা যখন জানতে চায় তাদের মধ্যের দাম্পত্য নিয়ে যে প্রবলেম হচ্ছিল, সেটার ব্যাপারে... আনমনে মাথা নেড়ে বলে সে যে ওটা এখন ঠিক হয়ে গেছে... আর কোন ঝামেলা নেই ওদের মধ্যে অবশিষ্ট...
.
.
.
মাঝের সাতটা দিন যেন ঝড়ের মত কোথা দিয়ে বেরিয়ে যায়... সুদেষ্ণার জন্য সেটা যতটা দ্রুততায়, সৌভিকের জন্য যেন ততটাই স্লথ গতিতে কাটে দিন’কটা... সুদেষ্ণা সারা সপ্তাহ ধরে বারে বারে ভেবেছে বিশয়টা নিয়ে, কিন্তু কিছুতেই কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারে নি সে... আর শুধু দেখেছে এই ক’টা দিন কি দারুন উৎসাহে কাটিয়েছে সৌভিক... একেবারে বাচ্ছা ছেলের মত আবভাব করেছে বাড়িতে থাকতে... আর শুধু তাই নয়... তাদের মধ্যের শীতলতা যেন এক লহমায় কোথায় উড়ে গিয়েছে... আগে যেখানে তাদের মধ্যে সেক্স প্রায় হতই না, সেখানে এই সপ্তাহের মধ্যেই যে কতবার তারা মিলিত হয়েছে তার কোন হিসাব নেই... এক এক সময় তো মনে হয়েছে যে তাদের বিয়ে দশ বছর নয়, একেবারে নব বিবাহিত তারা... শুধু যা একটু সামলে চলেছে ইশানের কথা মাথায় রেখে... তা না হলে হয়তো আরো অনেক সাহসী ব্যাপার স্যাপার করে বসতো সৌভিক... সুদেষ্ণা বোঝে যে যদি সে এই ব্যাপারটা না বলে দেয়, তাহলে তাদের সম্পর্কটা আবার ঘুরে সেই আগের জায়গাতেই ফিরে যাবে... হয়তো তার থেকেও আরো খারাপ হয়ে উঠবে... আর সে কথা ভাবতেই শঙ্কায় ভরে ওঠে মন তার... আবার সে এটাও ভাবে, এই জুটিটাকে সে হয়তো রিজেক্ট করে দিলো... কিন্তু তার পর আবার কার প্রোফাইল আসবে হাতে, কে জানে? আর সে ফিরে যেতে চায় না তাদের সেই কিছুদিন আগের তিক্ততায় ভরা জীবনে... তাদের সেই আগের মধুর দিনগুলোর কথা সে ভোলে নি... আর এটাও সে কোনমতেই অস্বীকার করে না যে সৌভিক তাকে ভালোবাসে, হয়তো পাগলের মতই ভালোবাসে, যেমন সে ভালোবাসে সৌভিককে... তাই তাদের সম্পর্কের অবনতি হোক, সেটা তার কখনই অভিপ্রায় নয়... তারজন্য যা করতে হয়, তা করতে প্রস্তুত সে... আর সত্যিই তো... সৌভিক হয়তো ঠিকই বলেছে... এইটুকু স্বামীর খুশির জন্য না হয় করলই সে... চাইলে সৌভিক তো তার পেছনে অনেক মেয়ের সাথেই সম্পর্ক রাখতে পারতো... কত মেয়েকে নিয়েই না তার আড়ালে বিছানায় যেতে পারতো... কোই, সে তো তা কোনো দিনও করে নি... তাকে কখন ঠকাবার কথা মাথাতেই আনে নি...
.
.
.
অফিস থেকে বাড়ি ফেরে চুপচাপ... দৈনন্দিন কাজ সেরে যখন নিজের শোবার ঘরে ঢোকে, সৌভিক ততক্ষনে বিছানায় উঠে পড়েছে... শান্ত ভাবে রাতের প্রসাধন সেরে বিছানায় উঠে আসে সুদেষ্ণা... বালিশে হেলান দিয়ে বসে সে...
‘তাহলে? এক সপ্তাহ আজ পূরণ হলো...’ সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সৌভিক...
সুদেষ্ণা মুখ তুলে তাকায় স্বামীর পানে... তারপর সরে এসে সৌভিকের বুকে মাথা রাখে সে... ‘ছবি পাঠিয়ে দাও...’ বলতে বলতে কেমন কাঁপন ধরে তার গলায়... ঢোক গেলে সে... ‘তবে... তবে একটা কথা শুধু...’ দম নেয় সে... ‘এই প্রথম আর এই শেষ... একবারই কিন্তু... আর নয়...’
‘হুররেএএএএএ...’ প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে আনন্দে সৌভিক... দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সুদেষ্ণাকে...
ওর ছেলেমানুষি দেখে হেসে ফেলে সুদেষ্ণাও... ‘আস্তে... ধাড়ি খোকা... পাশের ঘরে ইশান ঘুমাচ্ছে... ভুলে গেছো?’
সত্যি সত্যিই ইশান দৌড়ে ঢোকে ঘরের মধ্যে... ‘কি হলো পাপা? এই ভাবে হুররে বলে চিৎকার করলে কেন? বিরাট ছয় মেরেছে?’
সুদেষ্ণা আর সৌভিক দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে ছেলের কথায়...
ইশানকে আবার ঘরে শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ফিরে আসে সুদেষ্ণা... সৌভক ততক্ষনে ল্যাপটপ খুলে তাদের দুজনার ছবি বাছতে ব্যস্ত... সুদেষ্ণা ঘরে আসতেই টেনে পাশে বসায়... দেখাতে থাকে তাদের ছবি গুলো... ‘না... এটা নয়... আর কয়একটা দেখাও...’ খুব ভালো করে দেখে শুনে একটা তাদের ছবি বাছে সুদেষ্ণা... যেটা দেখে নিজেও সন্তুষ্ট হয় সে...
.
.
.
পরদিনই জবাব আসে তাদের মেলএর... আর তারপর থেকে বেশ কিছু দিন কেটে যায় মেলের আদান প্রদানে... মেল থেকে ফোন নাম্বার... একে অপরের ব্যাপারে সম্পূর্ণ তথ্যের হাত বদল...
ডেভিড ব্রিগ্যাঞ্জা আর এলিজাবেথ... ডেভিডের গোয়াতে একটা ফার্ম হাউস আছে... আর এলি সম্পূর্ণ ভাবেই গৃহবধূ... তারা মোটামুটি এই ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞ... প্রায় বছর পাঁচেক ধরে তারা এই ভাবেই পার্টনার সোয়াপ করে আসছে... এবং তাতে তারা তৃপ্ত যে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না... ওরাই নিমন্ত্রণ জানায় সৌভিকদের গোয়াতে আসার জন্য... একটা উইকএন্ড দেখে... তাতে তাদের বক্তব্য যে এর ফলে তারা সামনা সামনি একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারবে... আর যদি তার ফলে সম্পর্কের উন্নতি হয়, তখন না হয় পরবর্তি পর্যায়ে এগোনো যাবে... আর যদি সৌভকরা মনে করে যে না, তাহলে কোন কারণ দর্শানো প্রয়োজনই নেই... শ্রেফ ফিরে এলেই হবে... তাতে কারুর মধ্যে কোন দ্বিধা থাকবে না...
সবই ঠিকঠাক হয়ে যায় এরপর... কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ইশানকে নিয়ে... তাকে এই দুটো দিন কার কাছে রেখে যাওয়া যায় সেটাই প্রশ্ন জাগে... অবশেষে স্থির হয় ইশান এই দুটো দিন তার বন্ধু, ভিকির বাড়িই থাকবে... অর্চনা আর সুরেশকে অনুরোধ করাতে তারা হা হা করে ওঠে... দুটো দিন ইশান থাকবে তাতে তাদের যে কোন অসুবিধা নেই, সেটা জানায় সুদেষ্ণাদের... তাদেরকে এক গাদা মিথ্যা বলে ইশানকে রেখে রওনা দেয় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে ওরা দুজনে মিলে...
ক্রমশ...