13-10-2020, 10:30 PM
পর্ব ১৩
১৩ (খ)
পরদিন সকালে তুলিকে কলেজে দিতে গিয়ে রত্না ভাবীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো শান্তার। আজও মেয়েকে কলেজে দিতে এসেছে রত্না ভাবী। তাকে দেখে আজ খুশিই হল শান্তা। হাসি মুখে এগিয়ে গেলো। রত্না ভাবীও তাকে ছাড়ল না। বলল; “কোন কথা শুনব না, চল আমার বাসায়… দুজনে গিয়ে গল্প করি...”
“না না ভাবী আরেকদিন যাবো… বাসায়...”
“আহা, আরেকদিন তো যাবেই,” রত্না ভাবী হাসে। “রাজীব যেদিন থাকবে সেদিন যাবে। আজ শুধু আমি আর তুমি গল্প করবো চল। নাকি রাজীব নেই বলে যেতে চাইছ না?”
এই প্রশ্নের পর আর কথা চলে না। শান্তাকে যেতেই হয় রত্না ভাবীর সঙ্গে। রিক্সা থেকে সেই বাড়ির সামনে নামতেই কেমন একটা উত্তেজনা হয় শান্তার। দুবার এসেছে ও এখানে। দুবারই রাজীব এর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। সেই সৃতি গুলোই মনে জ্বলজ্বল করছে তার।
রত্না ভাবীর বাসা গত কালের মতনই অগোছালো। শুধু অগোছালোই নয়, সোফার উপর বসতে বসতে পাশেই একটা কালো রঙের প্যান্টি দেখতে পেলো শান্তা। আকার দেখে মনে হচ্ছে না ওটা রত্না ভাবীর। তাহলে কি নীলার? নীলা তার প্যান্টি এভাবে সোফাতে খুলে রাখবে কেন? ভাবতে চায় না শান্তা। রত্না ভাবীর সাথে গল্পে মশগুল হয়ে উঠে ও।
খুবই খোলামেলা ভাবে কথা বলে রত্না ভাবী। ধিরে ধিরে শান্তাও মন খুলতে শুরু করে। ফয়সালের সঙ্গে কীভাবে বিয়ে, তারপর শাশুড়ি মা কীভাবে ওদের সংসারটাকে এতদিন শাসন করেছে, তারপর মায়ের মৃত্যুর পর ফয়সালের অবহেলা আর অবশেষে পরকীয়ার ব্যাপারটা খুলে বলে শান্তা। ওখান থেকেই রাজীব এর কথা আসে। দুগাল ভরে প্রশংসা করে রত্না ভাবী রাজীবের। এক পর্যায়ে রাত্না ভাবী প্রশ্ন করে তাকে; “তোমায় একটা প্রশ্ন করি শান্তা, কিছু মনে কর না… কেমন?”
“জি করুন না,” শান্তা মাথা দোলায়।
“তোমার আর রাজীব এর শারীরিক সম্পর্কটা কদিন থেকে হচ্ছে?” জানতে চায় খোলামেলা ভাবে রত্না ভাবী।
শান্তা একটু লজ্জা পেলেও খুব একটা দমে উঠে না। বরং সহজ গলাতেই হাসি মুখে বলার চেষ্টা করে সে; “এই সপ্তাহ খানেক তো হয়ে গেছে...”
“খুব বেশী নয়,” রত্না ভাবী মন্তব্য করে। “দেখো শান্তা, তুমি কিন্তু একদম সংকোচ কর না। তোমার অবস্থাটা আমি পার করে আসছি দেখেই বলছি, আমি তোমার কষ্টটা বুঝি। আমার আগের স্বামীও এমন ছিল। তার উপর ও আমায় মারধোরও করতো, বুঝলে! তারপর নাজিম এর সঙ্গে যখন আমার প্রেম হয়, তখন জীবনটা একদম বদলে যায় আমার। রোজ ওকে দিয়ে না করালে আমার ভালো লাগতো না। একটু সুযোগ পেলেই ডেকে নিতাম ওকে বাসায়। তোমারই নিশ্চয়ই এমনটাই ইচ্ছে হয়… তোমার ওখানে যদি সুযোগ না হয়, তাহলে আমার এখানে যখন তখন চলে আসতে পার। ইচ্ছে করলে তুমি তুলিকে নিয়ে বিকেল বেলাতেও চলে আসতে পার। তাহলে তুলি নীলার কাছে আর্ট করবে এখানেই, আর তুমি রাজীব এর সঙ্গে মন ভরে চুদোচুদি করতে পাড়বে।”
কান দুটো গরম হয়ে উঠেছে শান্তার। তবে রত্না ভাবীর বলার ভঙ্গিতে কেমন একটা আন্তরিকতা আছে যেন। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে না পাড়লেও একটা উষ্ণতা ঘিরে ধরল ওকে। “আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো...”
“ধন্যবাদ দিতে হবে না, আমরা একটা পরিবারের মত...” রত্না ভাবী হাসে। “তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ফয়সালের বীরুধে প্রমাণ যোগার করা। যত তাড়াতাড়ি আদালতে গিয়ে ডিভোর্স লেটার পাঠাতে পাড়বে তাকে, তত তাড়াতাড়ি রাজীব এর সঙ্গে তোমার বিয়ে সম্ভব।”
“আপনি ডিভোর্স কি করে দিয়েছিলেন?”
“নাজিম একটা ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিলো আমাদের বাসায়, ওতে আমার স্বামী যে আমাকে মাড়ছে নির্যাতন করছে - তার দৃশ্য ছিল। ওটাই আদালতে দিয়েছিলাম আমরা।”
“এর কি দরকার আছে?” শান্তা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। “মানে ওমনি ওমনি ডিভোর্সও তো দেয়া যায়!”
“তাতে তুমি সুবিধে গুলো পাবে না, তুলিকেও হারাতে পার। বাপ যদি চায় - মেয়েকে নিজের কাছে রেখে দিতে পারে। প্রমাণ করতে হবে আদালতে, বাপ মা-মেয়েকে পরিত্যাগ করে অন্য মেয়ের পাল্লায় পড়েছে।”
“ওহ...” শান্তা মাথা দোলায়। “সেই প্রমাণটা কি করে পাবো?”
“তুমি ভেব না, নাজিম তো এক কালে সাংবাদিক ছিল। ও ঠিকই বের করে ফেলতে পারবে”
“আপনাদের যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো!”
“ধন্যবাদ দিতে হবে না,” মাথা নাড়ে রত্না ভাবী। “সময় মত সবই হবে। তোমার স্বামী কবে ফিরবে খুলনা থেকে?”
“বলেছে তো ৪-৫ দিন লাগবে,” শান্তা জানায় রত্না ভাবীকে।
“তাহলে এক কাজ কর না, আমাদের উকিলের সঙ্গে কাল পরশু গিয়ে একবার কথা বলে আসো...” রত্না বুদ্ধি দেয় তাকে। “একটু দূরে থাকে অবশ্য… সারাদিন সময় করে নাও। নীলা নাহয় থাকল সারাদিন তুলির সঙ্গে তোমাদের বাসায়। উকিল এর সাথে আলাপ করে রাখলে আগে ভাগে - সব ঝামেলা মিটিয়ে প্রমাণ দাখিল করাটা সহজ হয়।”
“উকিল এর সঙ্গে!” শান্তা একটু ভ্রূ কুঁচকায়। “কোথায় থাকে উনি?”
“একটু দূরে থাকে অবশ্য, তুমি বরং রাজীব এর সঙ্গে কথা বলে দেখো আজ।”
“ঠিক আছে তাই বলবো,”
সেদিন রাতে রাজীব এর ফোনে অনেক কথা হয় শান্তার। তার কাছ থেকে শান্তা জানতে পারে উকিলের নাম মৃণাল চক্রবর্তী, সনাতনী ধর্মের মানুষ। বেশ বড় মাপের উকিল নাকি। ঢাকার অদুরে গাজীপুরে তার বাড়ি কাম অফিস। ডিভোর্স এর ব্যাপারে খোলামেলা একবার তার সাথে আলাপ করার পরামর্শ রাজীবও দেয়। শান্তা একটু আমতা আমতা করে। এত দূর একলা একলা যাবে! ওমন প্রশ্ন শুনে রাজীব বলে, “আহা - একলা কেন? আমি যাবো সঙ্গে তোমার। নাজিম ভাইও তো যাবে। আসলে তার সঙ্গে আলাপ করাটা খুব জরুরী বুঝলে না! সে আইনের মারপ্যাঁচ সবই ধরতে পাড়বে।”
“ঠিক আছে,” অবশেষে রাজি হয় শান্তা। “কবে যাবে?”
“কাল নয়, পরশু যাবো।” রাজীব বলে তাকে। “তুলির সঙ্গে নীলা থাকবে নি সারাদিন। তুমি একদম চিন্তা কর না।”
চিন্তা করছে না শান্তা। তুলির ভীষণ পছন্দের মানুষ হয়ে উঠছে নীলা। বরং উকিলের কথা ভেবেই একটু অস্বস্তি হচ্ছে শান্তার। আসলেই কি ও ফয়সালকে ডিভোর্স দিতে চায়! মনে কেমন একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব খেলা করছে কেন আজ তার!
রিয়ান খান