13-10-2020, 10:13 PM
পর্ব ১৩
১৩(ক)
নীলার মত মিশুক মেয়েই হয় না। সেটা কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই টের পেলো শান্তা। বিকেল বেলা নীলা যখন ওদের বাড়িতে এলো তুলিকে আর্ট শেখাতে, মাত্র মিনিট পনেরোর মধ্যেই একদম ভাব জমিয়ে ফেলল সে। তুলি যেন কতদিনের চেনা নীলার কাছে। মেয়েকে সহজে মিশতে দেখে একটু স্বস্তি পেলো শান্তা। ওর আবার আধ ঘণ্টার মধ্যেই বেরনোর কথা।
ওর সব থেকে পছন্দের কামিজটা পড়ে, আয়নার সামনে বসে খানিকটা সাজগোজ করে শান্তা যখন বেরোল শোবার ঘর থেকে - তখন তুলি আর নীলা বছর খানেকের চেনা বান্ধবীর মত হাসি ঠাট্টা করছে। শান্তা উঁকি দিয়ে দেখতে পেলো যে মেয়েকে হাস্যকর মুখ ভঙ্গী করে দেখাচ্ছে নীলা - আর হেসে কুটি কুটি হচ্ছে তুলি। মেয়েকে যখন শান্তা জানালো একটু বেরোচ্ছে সে, তখন তুলি তেমন একটা গা-ই করলো না। একদম চিন্তা মুক্ত হয়েই বাড়ি থেকে বেরোল শান্তা।
রাজীব মোড় এর উপরেই অপেক্ষা করছিলো ওর জন্য। আগে ভাগেই একটা অটো ঠিক করে রেখেছিল সে। শান্তা চট করে উঠে বসলো ওর সঙ্গে। বাকি বিকেলটা শান্তার কাছে বেশ উপভোগ্য হল।
গত পাঁচ বছরে এমন একটা বিকেল শেষ কবে কাটিয়েছে শান্তা, খেয়াল নেই ওর। রাজীব এর সঙ্গে ও ঘুরে বেড়াল শপিং মলে, নিজের জন্য কিছু কামিজ এর কাপড় কিনলো, তুলির জন্য একটা পুতুল কিনে দিলো রাজীব। তারপর ওরা ফুড কোর্টে বসে ফুচকা খায় এক সঙ্গে। শান্তা এক সময় ভেবে অবাক হয়, শেষ কবে বাহিরে এমন খোলামেলা হাসি ঠাট্টা করেছিলো ও!
“তুমি একদম ভেব না শান্তা,” রাজীব এক সময় বলে তাকে। “খুব শীঘ্রই তুমি আর আমি সুন্দর একটা জীবন শুরু করবো...”
“আমি আর অপেক্ষা করতে পাড়ছি না রাজীব...।” গুঙিয়ে উঠে শান্তা নিচু স্বরে।
“আমি জানি,” টেবিল এর উপর দিয়ে রাজীব তখন শান্তার হাতটা চেপে ধরে। “তোমার উপর দিয়ে কি চলছে আমি বুঝতে পাড়ছি। কিন্তু এই কাজে তাড়াহুড়া করা মোটেই উচিৎ হবে না আমাদের শান্তা। তুমি তো রত্না ভাবীর সঙ্গে কথা বললেই। নাজিম ভাই আর রত্না ভাবীর সম্পর্ক ঠিক আমার তোমার মতনই।”
রত্না ভাবীর কথা উঠতেই আবার ভ্রূ কুচকাল শান্তা। “আচ্ছা, ওরা দেখলাম বেশ সহজ করে কথা বলে… আর তুমি ওটা একটা কাজ করলে! ওদের চট করে ঘরে ঢুকতে দিলে! ওরা কি ভাব্বে বল তো!”
“তোমায় তো তখনই বলেছি, ওসব ব্যাপারে ওরা কিছুই মনে করবে না।” রাজীব আশ্বস্ত করে তাকে। তারপর মুচকি হেসে যোগ করে, “তোমায় তো বলেছি, ওদের বাসায় সাবলেট ছিলাম আমি। তো একদিন সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে কি হয়েছে শুনবে?”
“কি হয়েছে?” ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে থাকে শান্তা।
“আমি তো আমার মত ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাচ্ছি - ওই বাসাতে বাথরুমটা আমার ঘরের সাথে ছিল না। আমি যাচ্ছি - ওদের শোবার ঘরের পাশ দিয়ে, কি মনে হল ভাবলুম যে ওদের একটু শুভ সকাল জানিয়ে যাই, দরজাটা ভেজানো ছিল - ঠেলা দিতেই দেখি ভেতরে ওরা দুজন লাগাচ্ছে।”
“ওমা সে কি!” চোখ বড় হয়ে উঠে শান্তার। হা হয়ে গেছে ওর মুখটা। হাত তুলে মুখ আড়াল করে ও। “কি বলছ! দরজা খোলা রেখেই!”
“হ্যাঁ!” মাথা দোলায় রাজীব। আশে পাশে একটু দেখে নেয়। ভিড়ভাট্টা বেশী। ওদের কথা কারও কানে যাবে না। নিচু গলায় বলে; “দুজনেই একদম উদোম হয়ে ধপাস ধপাস করে ঠাপাঠাপি করছে… আমায় দেখে তো থেমে গেলো - আমিও একদম জমে গেছি। হা হা হা...”
“তারপর ওরা কিছু বলে নি?” জানতে চায় শান্তা।
“আর কি বলবে!” রাজীব ভ্রূ নাচায়। “কাছা কাছি থাকলে এমন কতো কিছুই হয়… একদিন জানো, বাসায় আমি একলা ছিলাম, রত্না ভাবী বোধহয় ভেবেছে আমি বাসায় নেই। তার ঘরে জামা পরিবর্তন করছিলো। আমি ওদিক যেতেই চোখ পড়ে গিয়েছিলো একদম!”
শান্তার গাল দুটো রাঙ্গিয়ে উঠে। “ছি! তুমি একদম অসভ্য… নিশ্চয়ই উঁকি মারছিলে তুমি!”
“তা একটু মাড়ছিলাম বটে,” চোখ টিপে রাজীব। “আমি তো আর ফয়সালের মত নই - যে হাতের কাছের সুন্দরী রেখে খুলনা গিয়ে প্রেম করবো!”
“ধেৎ,” শান্তা মুখ বাকায়। “রত্না ভাবী দেখে নি?”
“দেখেছে আমায়। দেখে তেড়ে এসেছিলো দুষ্টুমি করে। আমিও রসিকতার ছলে দুটো চুমু দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি,”
“ছি - কি বলছ! যাহ্, রসিকতা করছ আমার সঙ্গে তুমি,”
“তুমি রত্না ভাবীকে জিজ্ঞাসা করে নিও একদিন,” আবারও চোখ টিপে রাজীব।
“নাজিম… নাজিম ভাই শুনলে তোমায়...” কথাটা শেষ করে না শান্তা। আঙ্গুলের ইশারায় গলা কাটার ইঙ্গিত দেয়।
“নাজিম ভাই জানে তো,” রাজীব শান্ত সুরে বলে। “নাজিম ভাইকে রত্না ভাবী সেদিনই বলেছে ঘটনাটা। ভাই এর সঙ্গে এই নিয়ে কতো রসিকতা করি আমি,”
“কি বলছ!” শান্তা একটু অবাক হয়। “তার বউকে তুমি কাপড় ছাড়া দেখে নিয়েছ, আর ওটা নিয়ে রসিকতা করছে উনি!” শান্তার কেন জানি ওই রাতের কথা মনে পড়ে যায়। গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলো ওরা। রাতের বেলা আগুন এর ভয়ে তুলিকে তুলে কোন মতে বেড়িয়ে এসেছিলো শান্তা। বুকের উর্ণা ছিল না বলে কি মন্তব্যটাই না করেছিলো ফয়সাল!
“ফয়সাল তোমায় একদম আদিম কালের নারী বানিয়ে রেখেছে বুঝলে!” রাজীব মন্তব্য করে। “ভয় নেই, একবার আমার কাছে চলে এলে দেখবে - জীবনটা আর এক ঘেয়ে মনে হবে না তোমার কাছে,”
শান্তার কাছে এখনই মনে হচ্ছে না। রাজীব যেন ওর জীবনটাকে সত্যিকার অর্থেই রাঙ্গিয়ে দিয়েছে। ওরা উঠে ফুড কোর্ট থেকে। সন্ধ্যার একটু পরে শান্তাকে নামিয়ে দেয় রাজীব বাড়ির সামনে। তারপর উঠে আসে ওর সঙ্গে সিড়ি বেয়ে। নীলাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরবে রাজীব।
দরজা নীলাই খুলে দেয়। দৌড়ে আসে তুলি। মাকে জাপটে ধরে। মেয়ের মুখে ফুটে আছে আনন্দ। রাজীবকে বসিয়ে শান্তা মেয়ের সঙ্গে ওর ঘরে আসে। মাকে টেনে এনেছে তুলি। বিছানায় ছড়িয়ে আছে অনেক গুলো আর্ট। জাহাজ এঁকেছে তুলি, ঘোড়া এঁকেছে, বাড়ি এঁকেছে, দারুণ লাগছে প্রতিটি আর্ট। চমকে উঠে শান্তা। এত কিছু ওর মেয়ে এক বিকেলেই একে ফেলেছে? কেমন করে!
“আমি আবার কাল আসবো ভাবী,” নীলা বলে তাকে। “কাল আমার বিকেলে ক্লাস আছে। তুলির কলেজ ছুটি হলেই আসবো,”
“ঠিক আছে,” মাথা ক্যাঁৎ করে শান্তা। “তুমি অনেক করলে...”
“এ কিছু না,” বলে চোখ টিপে নীলা, “ঘুরাঘুরি কেমন করলেন সেটা বলুন!”
“হয়েছে ভালো হয়েছে,”
“তাহলেই হবে,” আবারও চোখ টিপে বেড়িয়ে যায় নীলা। ওদের দরজা অব্দি এগিয়ে দেয় শান্তা। সিড়ি দিয়ে নীলা আর রাজীবকে নেমে যেতে দেখে ও। তারপর দরজা লাগিয়ে বড় করে একটা শ্বাস ফেলে। ঘরের মধ্যে কেমন একটা নিস্তব্দতা যেন। নীলা আর রাজীব এর সঙ্গে সেও যদি বেড়িয়ে যেতে পারতো এই বাসা ছেড়ে!
রিয়ান খান