13-10-2020, 12:02 AM
।। আঠারো ।।
আপন মনে টিভি চালিয়ে একটা হিন্দী সিনেমা দেখতে লাগলো সিরিজা। বেশ কিছূক্ষণ পরে কলিংবেলটা আবার বাজল। সিরিজা ভাবল এবার রজত এসেছে। দরজাটা খুলেই ওকে সব কিছু বলতে হবে। রজতকে আর যেন কিছুতেই বিচলিত হতে দেবে না ও।
সিরিজাই যে কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজাটা খুলবে সেটা রজত আঁচ করতে পারেনি। ঘরে ঢুকেই রজত সিরিজাকে প্রশ্ন করলো, "কি ব্যাপার তুমি? আর ওরা সব কোথায়? দিবাকরই বা কোথায়? কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।"
- "ওরা চলে গেছে।"
-- "চলে গেছে? মানে?"
- "কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেছে। তারপর দিবাকরদাও চলে গেল।"
-- "সে কী? তুমি সামনে এসেছিলে? কিছু বুঝতে পারেনি ওরা?"
- "বুঝলো তো কি হলো? আমি সামনে এসেছিলাম তো।"
রজত অবাক চোখে সিরিজার দিকে তাকাল। বললো, "কিন্তু আমি তো দিবাকরকে বলেছিলাম, একটু ম্যানেজ করে নিতে। ওরা কিছু সন্দেহ করে নি তো?"
- "করলেই বা কি এসে গেল?"
অবাক হয়ে যাচ্ছিলো রজত সিরিজার কথা শুনে। সিরিজাকে বললো, "তোমাকে দেখে ওরা কিছু বলেনি?"
- "তোমার বউ এসেছিল।"
-- "কে, রীতা?"
- "হ্যাঁ। ওর বাবাকে নিয়ে।"
-- "তোমাকে দেখে কিছু বলেনি?"
- "তোমার বউ বলছিল তোমায় ডিভোর্স দেবে না।"
-- "ডিভোর্স দেবে না? কেন?"
- "তোমাকে জব্দ করতে চায়।"
-- "আমাকে জব্দ করতে চায়?"
- "হ্যাঁ। আমিও বলে দিয়েছি যে আমি তোমার সাথে ভাব করছি।"
-- "তুমি বলে দিয়েছ?" রজত যেন বিশ্বাই করছিল না সিরিজার কথা। - "কি বলেছো?"
- "কি আবার? বলে দিয়েছি আমি মনে মনে একজনকে ভালোবাসি।"
-- "তুমি? আমার বউকে?"
- "হ্যাঁ, কি হলো তাতে?"
-- "রীতা সেটা মেনে নিল? আমি তো দিবাকরকে বলেছিলাম তোমাকে ওর বউ সাজাতে।"
- "বউ হয়েই তো তোমার প্রেমিকা সাজলাম।"
দিবাকরের মতন এবার রজতেরও সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছিলো। সিরিজাকে কড়া কথা বলবে না মিষ্টি কথা বলবে, ওর সবকিছু গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছিলো। কিছু বলার আগেই সিরিজা বললো, "আমি যখন এ বাড়ীতে এসেছিলাম, তখন তোমার বউ কি ছিল?"
-- "না।"
- "আমাকে পেয়ে এতদিন একবারও তোমার বউ এর কথা মনে পড়েছে?"
-- "না।"
- "তাহলে এখন কেন এত উতলা হোচ্ছ?"
-- "উতলা তো হই নি। আমি তো রীতাকে ভুলেই গেছি। ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ডিভোর্সও দিয়ে দেবে বলেছে। উকিল মারফত চিঠি পাঠিয়েছে। তাহলে এখন আবার ন্যাকামো কেন? আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে ও যাবে কোথায়? তুমি যদি পাশে থাক আমার কোনো চিন্তা নেই সিরিজা।"
- "আমি পাশে নেই কে বললো?"
রজত তাকালো সিরিজার দিকে। সিরিজা হেসে বললো, "একদিনেই তোমার শ্বশুড় বউ এসে তোমার মাথা খারাপ করে দিল? আমাকে শুধু শুধু দিবাকরদার বউ সাজালে।"
একটু কাছে এল রজত। সিরিজার গালে হাত রেখে বললো, "কেন তোমার খারাপ লেগেছে?"
সিরিজা ওর চোখে চোখ রাখলো। বললো, "আমার নিজের খারাপ লাগেনি। লেগেছে দিবাকরদার জন্য।"
-- "কেন দিবাকর কি তোমায় কিছু বলেছে?"
- "কি আবার বলবে? দিবাকরদা তো ভালো লোক। সুযোগ বুঝে বন্ধুটাকে কাজে লাগালে, বন্ধুর জন্য ভেবেছ কোনোদিন?"
রজত এবার একটু গম্ভীর হলো। সিরিজার কথার জবাব দিতে পারলো না। ফ্যাল ফ্যাল করে সিরিজার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ওর মনে মনে সন্দেহটা গাঢ় হতে লাগলো। সিরিজাকে দিবাকর পুরোনো কথা কিছু বলে নি তো? হঠাৎ দিবাকরের জন্য চিন্তা শুরু করে দিয়েছে সিরিজা। কি ব্যাপার? না হলে হঠাৎ এ কথাটা ও বললো কেন? ঘুরিয়ে সিরিজাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, "কেন দিবাকরদা ভালো লোক, আর আমি ভালো লোক নই?"
সিরিজা সঙ্গে সঙ্গে রজতের হাতটা ওর কাঁধের ওপর রাখলো। ওর চোখের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে একটা কথাই বললো, "দিবাকরদা তোমার খুব উপকার করতে চেয়েছে। এমন বন্ধু তুমি খুব ভাগ্য করে পেয়েছ। কিন্তু লোকটাকে দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। এত খানি বয়স হয়ে গেল। একটাও সঙ্গীসাথী নেই। একা একা কতদিন মন মরা হয়ে থাকবে ব্যাচারা? দিবাকরদার একটা বিয়ে দিতে হবে না? সত্যিকারের বউই তো দরকার। তা না আমি কিনা ওনার মিছি মিছি বউ সাজলাম।"
রজত এবার হাসতে লাগলো সিরিজার কথা শুনে। হাসতে হাসতে ওকে ছেড়ে এবার সোফার ওপরই বসে পড়লো। তখনও ওর হাসি থামছিল না।
- "তুমি হাসছো?"
রজত হাসছিল হো হো করে।
সিরিজা আবারও বললো, "তুমি হাসছো?"
রজত বললো, "শোনো শোনো, তুমি আমার কাছে এসো। একটা কথা বলছি।"
সিরিজা ওর দিকে এগিয়ে গেল। রজত ওকে পাশে বসিয়ে ওকে খুব করে জড়িয়ে ধরলো।
-- "তোমাকে খুব করে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। অনেকক্ষণ খাইনি।"
- "না খেতে হবে না ছাড়ো।"
-- "ছাড়ো বললেই হবে। খাবোই খাবো। রজত জোর করেই সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেল। সিরিজা বিরক্ত হয়ে বললো, "এই জন্য ডাকলে কাছে?"
রজত হেসে বললো, "চুমুটা খেতে চাইলাম, খেয়েও ফেললাম। তোমার কাছে চুমুর নিবেদন করে তারপর চুমু খেলাম। প্রেম জিনিষটাও তেমনি। প্রেম করবো বললেই হয়। প্রেমটা তো নিবেদন করতে হয়। তোমার ভালোমানুষ দিবাকর তো এখনও কারুকে প্রেম নিবেদন করাও শিখল না। ও প্রেম করবে কি?"
- "মানে?"
-- "মানেটা এখনও বুঝলে না?"
- "না।"
-- "তোমায় বলি তাহলে। শোনো।" রজত বলতে লাগলো, "দিবাকর হচ্ছে এমন একজন মানুষ। সে যদি ইচ্ছে করত, আমার মতন সেও তাহলে কারুর সাথে প্রেম করে ফেলত। নিজের ব্যাপারটা না ভেবে, ও শুধু পরের ব্যাপারটাই ভেবেছে। আমি অস্বীকার করছি না, সে আমার কথাও ভেবেছে। যখনই কাউকে ভালো লেগেছে, দিবাকরই উঠে পড়ে লেগেছে, আমার সাথে তাকে মিলিয়েও দিয়েছে। আমি সেই প্রেম টিকিয়ে রাখতে পারে নি। দোষ আমার। কিন্তু দিবাকর এত মেয়েমানুষ চেনা সত্তেও নিজের ভালোলাগার কথাটা তাকে মুখ ফূটে বলতে পারেনি। বড়ই লাজুক সে নিজের ব্যাপারে। এতে আমার কি দোষ তুমি বল?"
সিরিজা খুব গম্ভীর ভাবে এবার বললো, "রেশমী বলে তুমি কোনো মেয়েকে ভালোবেসেছিলে?"
এতক্ষণ দিবাকরের পরীক্ষা নিয়ে এবার যেন রজতেরও পরীক্ষা নিতে শুরু করেদিল সিরিজা। এ কার কথা বলছে সিরিজা? এ নাম ও জানল কি করে? রজত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিরিজার দিকে। কথাও বলতে পারছে না। প্রাণ খুলে হাসতে পারছে না। ওর মুখের হাসিটা যেন কেড়ে নিয়েছে সিরিজা।
- "কথা বলছো না? আমি রেশমীর কথা বলছি।"
রজত তবু চুপ করে রয়েছে। বসে বসে ভাবছে দিবাকরের কথা। তাহলে কি দিবাকর? এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারলো ও? আমি ছিলাম না। আর এই দু তিনঘন্টার মধ্যেই সিরিজাকে সব বলে দিয়েছে।
সিরিজা একটু গম্ভীর ভাবেই বললো, "রেশমীর কথা শুনেই তুমি চুপ করে গেলে? আমার কাছে লুকোতে চাইছো?"
রজত সিরিজাকে তখন বোঝার চেষ্টা করছে। ভেতরে ভেতরে কেমন অপরাধবোধ জেগে উঠেছে। সিরিজাকে তবু বলতে পারছে না। কারন সিরিজা আর রেশমী দুজনে ওর কাছে এক নয়। যাকে মনে ধরেছে তাকে চেষ্টা করেও মিথ্যে বলা যায় না। সিরিজা ওকে যাই বলুক ও সিরিজার কাছে কিছুই লুকোতে পারবে না। এই কদিনে রজতকে যেন অনেক পাল্টে দিয়েছে সিরিজা। শুধু রেশমী কেন? সিরিজার জন্য ভালো লাগার সব মেয়েগুলোর কথাই বলতে পারে রজত সিরিজাকে। কিন্তু ভয় একটাই। সত্যি কথা বলতে গিয়ে যদি......?
খুব আবেগ জড়িত হয়ে রজত বললো, "আমি যদি তোমাকে রেশমীর কথা বলি তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো সিরিজা?"
সিরিজা এবার রজতের মাথাটা দুহাত দিয়ে ধরে বললো, "আমি আমার জীবনের পুরোনো কথা বলিনি তোমায়? সব কিছু জেনেও তুমি আমাকে তোমার করে নিয়েছ। তাহলে আমাকে তুমি লুকোচ্ছ কেন? আমি কি তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছি?"
সিরিজার দিকে ভালো করে তাকাতে পারছিল না রজত। সিরিজাই এবার রজতের মুখটা তুলে ওর চোখের ওপর চোখটা রাখলো। - "তাকাও আমার দিকে। এই দেখ, আমি তোমার কাছেই রয়েছি।"
ও তবু মানছে না দেখে সিরিজা এবার রজতের মুখটা ওর বুকের ওপর রাখলো। - "কি, আমাকে বলতে ভয় করছে?"
গরম একটা তাপ। রজতকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করছে সিরিজা। বুকের মধ্যে ছটফট করতে পারছে না রজত। তবু ভাবছে সিরিজা কত ভালো। একবার যদি ওর ভুলটাকে ক্ষমা করে দেয়। জীবনে কোনদিন আর সিরিজাকে ছেড়ে অন্য কোনো নারীর কাছে যাবে না ও।
বুকের মধ্যে মুখটাকে একনাগাড়ে ঘষতে লাগলো ও। এ যেন ক্ষমার ভিক্ষা প্রার্থনা। সিরিজা রজতকে দেখছে। ওর মধ্যে একটা শিশুর মতন অপরাধবোধ। রজতের মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে আরো আস্বস্ত করতে লাগলো সিরিজা। দেখলো রজতের বলার শক্তি নেই, কিন্তু ওর চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে যা ও শুনেছে রেশমীর ব্যাপারে। তার সবই সত্যি।
রজতের মাথাতেই হাত বুলোতে বুলোতে সিরিজা বললো, "তুমি মেয়েটা কোথায় থাকে জান?"
-- "আমি জানি না। ওটা দিবাকর জানে।"
- "দিবাকরদা তো বললো, ও নাকি এখন ওখানে আর থাকে না। বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে।"
-- "হবে হয়তো।"
- "তোমার কাছে ওর ফোন নম্বর নেই।"
-- "আমি ফোনে সবার নম্বরই ডিলিট করে দিয়েছি সিরিজা। রেশমী কেন কারুরই নম্বর নেই।"
- "তুমি একবার মেয়েটাকে চেষ্টা করে ফিরিয়ে আনতে পারো না?"
-- "রেশমীকে? কেন? কার জন্য? রজত যেন ভাবতেই পারছে না, সিরিজা কার জন্য রেশমীর কথা বলছে।"
- "আমি তোমার জন্য বলছি থোড়িই। আমি তো দিবাকরদার জন্য বলছি।"
-- "দিবাকর?"
রজত যেন এবার আকাশ থেকে পড়লো।
- "কেন তুমি জানতে না? দিবাকরদা ঐ মেয়েটিকে ভালোবাসতো।"
রজত তখনও বুঝতে পারছে না, সিরিজা কি বলতে চাইছে।
-- "দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসতো?"
- "হ্যাঁ।"
-- "আমাকে তো কোনোদিন বলেনি ও।"
- "তুমি বলার সুযোগ দাও নি।"
-- "আমি সুযোগ দিইনি? আমি তো কোনোদিন ভাবিই নি দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসে। ওতো রেশমীকে শুধু চিনত। আমার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল ব্যাস এই পর্যন্ত। কিন্তু দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসতো, আমি তোমার মুখেই প্রথম শুনছি।"
সিরিজা বললো, "দিবাকরদা লোকটাই এরকম। নিজে থেকে কিছু বলে না। তোমার প্রেমের জন্য নিজের স্বার্থকে বলি দিতেও কসুর করে নি সে। কি লাভ হলো? যাকে তুমি নিলে না, সে দিবাকরেরও হলো না। লোকটা সেই সঙ্গী ছাড়াই রয়ে গেল।"
রজত সিরিজার বুকে এবার মুখ লুকিয়ে বললো, "আমি বুঝতে পারিনি গো। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।"
- "এই ক্ষমাটা তুমি যদি দিবাকরদার কাছে চাইতে, আরো ভালো হতো। তোমার জন্য সে অনেক করেছে।"
রজত বুঝতে পারছিলো কি ভুলটাই করেছে ও। দিবাকর হয়তো দূঃখে সিরিজাকে কথাগুলো বলেছে। নইলে সিরিজাই বা জানবে কি করে?
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ও সঙ্গে সঙ্গে দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করলো। দু তিনবার চেষ্টা করার পর ও দিবাকরকে লাইনে পেল। মোবাইলটা কানে নিয়ে ও দিবাকরকে বলতে লাগলো, "কি হলো তুমি চলে গেলে কেন? আমাদের তো একসাথে বেরোনোর কথা ছিল।"
- "না মানে তোমার শ্বশুড় মশাই ও চলে গেল। আমি ওনাদের আটকাতে পারলাম না। ভাবলাম, আর বোধহয় থেকে কাজ নেই তাই চলে এলাম।"
-- "কাজ নেই মানে? তুমি আমার জন্য এত করলে, আর আমাকে একটা থ্যাঙ্কস বলারও সুযোগ দিলে না।"
- "কোথায় করতে পারলাম কই।"
-- "কেন?"
- "সিরিজা তো তোমার বউকে ভয় খাইয়ে দিল।"
-- "ঠিকই তো করেছে।"
- "ঠিক করেছে?"
-- "ঠিক করেনি! আমার বউ বলেছে আমাকে ডিভোর্স দেবে না। সিরিজাও তাই মোক্ষম চালটা দিয়েছে। তুমি ধরতে পারো নি।"
- "সবই তো বুঝলাম। কিন্তু এখন যদি তোমার বউ যদি বলে ঘর করবো।"
রজত কিছুক্ষণ থেমে গিয়ে এবার বললো, "সে সুযোগ আর তাকে দিই কি করে বল। আমার তো সিরিজা ছাড়া আর কোনো বউ নেই।"
দিবাকর কথাটা শুনে বেশ খুশী হলো। বললো, "ভালো ভালো। তোমরা ভালো থাক এটাই আমি চাই।"
রজত শুনে বললো, "কিন্তু আমি আর সিরিজাও একটা জিনিষ চাই"
- "কি?"
-- "তোমার একটা বিয়ে দিতে, তোমাকেও ভালো রাখতে আর তোমার জন্য রেশমীর কাছে গিয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে। তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা দিবাকর।"
ফোনটা হাতে নিয়ে থ মেরে গেছে দিবাকর। তাহলে কি সিরিজা রজতকে কিছু বলেছে? মেয়েটা সত্যি পারে বটে। কখনও ওকে, কখনও রজতকে, সবাইকে যেন পাল্টে দিচ্ছে পুরোপুরি। সিরিজা সিরিজা আর সিরিজা। সত্যি যেন জবাব নেই সিরিজার। ফোনটা ধরে আবার হ্যালো হ্যালো বলছে দিবাকর। কিন্তু রজত কথা বলছে না। দিবাকর আসলে দেখতে পাচ্ছে না, ফোন ছেড়ে সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছে রজত। সিরিজা ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন যদি আবার সেই আগের মতন শরীরি ভালোবাসায় দুজনে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বলার তাহলে কিছু নেই।
- "ছাড়ো আমাকে। যেই ক্ষমা করে দিলাম অমনি না?"
-- "আর একটু আর একটু।"
রজত আবার সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁটটা চুবিয়ে দিতে যাচ্ছিলো, সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "আমাকে যে বললে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবে, তার কি হলো?"
-- "যাবো তো। তোমার জন্যই তো এলাম। দেখ, তোমার জন্য একটা নতুন শাড়ী কিনে নিয়ে এসেছি।"
সুন্দর প্যাকেটে মোড়া শাড়ীটা খুলে দেখছিল সিরিজা। রজত সেই অবস্থায় আবার সিরিজার ঠোঁটের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছিল। সিরিজা যেন শাড়ীটা পেয়ে খুব খুশী হয়েছে সেটার জানান দিতে আবার রজতের ঠোঁটের সাথে ঠোঁটটা মেলালো। রজত এবার সিরিজাকে চুমু খাওয়ার জন্য দুহাতে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। এবার যে ধরলো, আর ওকে ছাড়লো না।
আপন মনে টিভি চালিয়ে একটা হিন্দী সিনেমা দেখতে লাগলো সিরিজা। বেশ কিছূক্ষণ পরে কলিংবেলটা আবার বাজল। সিরিজা ভাবল এবার রজত এসেছে। দরজাটা খুলেই ওকে সব কিছু বলতে হবে। রজতকে আর যেন কিছুতেই বিচলিত হতে দেবে না ও।
সিরিজাই যে কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজাটা খুলবে সেটা রজত আঁচ করতে পারেনি। ঘরে ঢুকেই রজত সিরিজাকে প্রশ্ন করলো, "কি ব্যাপার তুমি? আর ওরা সব কোথায়? দিবাকরই বা কোথায়? কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।"
- "ওরা চলে গেছে।"
-- "চলে গেছে? মানে?"
- "কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেছে। তারপর দিবাকরদাও চলে গেল।"
-- "সে কী? তুমি সামনে এসেছিলে? কিছু বুঝতে পারেনি ওরা?"
- "বুঝলো তো কি হলো? আমি সামনে এসেছিলাম তো।"
রজত অবাক চোখে সিরিজার দিকে তাকাল। বললো, "কিন্তু আমি তো দিবাকরকে বলেছিলাম, একটু ম্যানেজ করে নিতে। ওরা কিছু সন্দেহ করে নি তো?"
- "করলেই বা কি এসে গেল?"
অবাক হয়ে যাচ্ছিলো রজত সিরিজার কথা শুনে। সিরিজাকে বললো, "তোমাকে দেখে ওরা কিছু বলেনি?"
- "তোমার বউ এসেছিল।"
-- "কে, রীতা?"
- "হ্যাঁ। ওর বাবাকে নিয়ে।"
-- "তোমাকে দেখে কিছু বলেনি?"
- "তোমার বউ বলছিল তোমায় ডিভোর্স দেবে না।"
-- "ডিভোর্স দেবে না? কেন?"
- "তোমাকে জব্দ করতে চায়।"
-- "আমাকে জব্দ করতে চায়?"
- "হ্যাঁ। আমিও বলে দিয়েছি যে আমি তোমার সাথে ভাব করছি।"
-- "তুমি বলে দিয়েছ?" রজত যেন বিশ্বাই করছিল না সিরিজার কথা। - "কি বলেছো?"
- "কি আবার? বলে দিয়েছি আমি মনে মনে একজনকে ভালোবাসি।"
-- "তুমি? আমার বউকে?"
- "হ্যাঁ, কি হলো তাতে?"
-- "রীতা সেটা মেনে নিল? আমি তো দিবাকরকে বলেছিলাম তোমাকে ওর বউ সাজাতে।"
- "বউ হয়েই তো তোমার প্রেমিকা সাজলাম।"
দিবাকরের মতন এবার রজতেরও সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছিলো। সিরিজাকে কড়া কথা বলবে না মিষ্টি কথা বলবে, ওর সবকিছু গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছিলো। কিছু বলার আগেই সিরিজা বললো, "আমি যখন এ বাড়ীতে এসেছিলাম, তখন তোমার বউ কি ছিল?"
-- "না।"
- "আমাকে পেয়ে এতদিন একবারও তোমার বউ এর কথা মনে পড়েছে?"
-- "না।"
- "তাহলে এখন কেন এত উতলা হোচ্ছ?"
-- "উতলা তো হই নি। আমি তো রীতাকে ভুলেই গেছি। ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ডিভোর্সও দিয়ে দেবে বলেছে। উকিল মারফত চিঠি পাঠিয়েছে। তাহলে এখন আবার ন্যাকামো কেন? আমাকে ডিভোর্স না দিয়ে ও যাবে কোথায়? তুমি যদি পাশে থাক আমার কোনো চিন্তা নেই সিরিজা।"
- "আমি পাশে নেই কে বললো?"
রজত তাকালো সিরিজার দিকে। সিরিজা হেসে বললো, "একদিনেই তোমার শ্বশুড় বউ এসে তোমার মাথা খারাপ করে দিল? আমাকে শুধু শুধু দিবাকরদার বউ সাজালে।"
একটু কাছে এল রজত। সিরিজার গালে হাত রেখে বললো, "কেন তোমার খারাপ লেগেছে?"
সিরিজা ওর চোখে চোখ রাখলো। বললো, "আমার নিজের খারাপ লাগেনি। লেগেছে দিবাকরদার জন্য।"
-- "কেন দিবাকর কি তোমায় কিছু বলেছে?"
- "কি আবার বলবে? দিবাকরদা তো ভালো লোক। সুযোগ বুঝে বন্ধুটাকে কাজে লাগালে, বন্ধুর জন্য ভেবেছ কোনোদিন?"
রজত এবার একটু গম্ভীর হলো। সিরিজার কথার জবাব দিতে পারলো না। ফ্যাল ফ্যাল করে সিরিজার দিকে তাকিয়ে রইলো।
ওর মনে মনে সন্দেহটা গাঢ় হতে লাগলো। সিরিজাকে দিবাকর পুরোনো কথা কিছু বলে নি তো? হঠাৎ দিবাকরের জন্য চিন্তা শুরু করে দিয়েছে সিরিজা। কি ব্যাপার? না হলে হঠাৎ এ কথাটা ও বললো কেন? ঘুরিয়ে সিরিজাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো, "কেন দিবাকরদা ভালো লোক, আর আমি ভালো লোক নই?"
সিরিজা সঙ্গে সঙ্গে রজতের হাতটা ওর কাঁধের ওপর রাখলো। ওর চোখের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে একটা কথাই বললো, "দিবাকরদা তোমার খুব উপকার করতে চেয়েছে। এমন বন্ধু তুমি খুব ভাগ্য করে পেয়েছ। কিন্তু লোকটাকে দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। এত খানি বয়স হয়ে গেল। একটাও সঙ্গীসাথী নেই। একা একা কতদিন মন মরা হয়ে থাকবে ব্যাচারা? দিবাকরদার একটা বিয়ে দিতে হবে না? সত্যিকারের বউই তো দরকার। তা না আমি কিনা ওনার মিছি মিছি বউ সাজলাম।"
রজত এবার হাসতে লাগলো সিরিজার কথা শুনে। হাসতে হাসতে ওকে ছেড়ে এবার সোফার ওপরই বসে পড়লো। তখনও ওর হাসি থামছিল না।
- "তুমি হাসছো?"
রজত হাসছিল হো হো করে।
সিরিজা আবারও বললো, "তুমি হাসছো?"
রজত বললো, "শোনো শোনো, তুমি আমার কাছে এসো। একটা কথা বলছি।"
সিরিজা ওর দিকে এগিয়ে গেল। রজত ওকে পাশে বসিয়ে ওকে খুব করে জড়িয়ে ধরলো।
-- "তোমাকে খুব করে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। অনেকক্ষণ খাইনি।"
- "না খেতে হবে না ছাড়ো।"
-- "ছাড়ো বললেই হবে। খাবোই খাবো। রজত জোর করেই সিরিজার ঠোঁটে চুমু খেল। সিরিজা বিরক্ত হয়ে বললো, "এই জন্য ডাকলে কাছে?"
রজত হেসে বললো, "চুমুটা খেতে চাইলাম, খেয়েও ফেললাম। তোমার কাছে চুমুর নিবেদন করে তারপর চুমু খেলাম। প্রেম জিনিষটাও তেমনি। প্রেম করবো বললেই হয়। প্রেমটা তো নিবেদন করতে হয়। তোমার ভালোমানুষ দিবাকর তো এখনও কারুকে প্রেম নিবেদন করাও শিখল না। ও প্রেম করবে কি?"
- "মানে?"
-- "মানেটা এখনও বুঝলে না?"
- "না।"
-- "তোমায় বলি তাহলে। শোনো।" রজত বলতে লাগলো, "দিবাকর হচ্ছে এমন একজন মানুষ। সে যদি ইচ্ছে করত, আমার মতন সেও তাহলে কারুর সাথে প্রেম করে ফেলত। নিজের ব্যাপারটা না ভেবে, ও শুধু পরের ব্যাপারটাই ভেবেছে। আমি অস্বীকার করছি না, সে আমার কথাও ভেবেছে। যখনই কাউকে ভালো লেগেছে, দিবাকরই উঠে পড়ে লেগেছে, আমার সাথে তাকে মিলিয়েও দিয়েছে। আমি সেই প্রেম টিকিয়ে রাখতে পারে নি। দোষ আমার। কিন্তু দিবাকর এত মেয়েমানুষ চেনা সত্তেও নিজের ভালোলাগার কথাটা তাকে মুখ ফূটে বলতে পারেনি। বড়ই লাজুক সে নিজের ব্যাপারে। এতে আমার কি দোষ তুমি বল?"
সিরিজা খুব গম্ভীর ভাবে এবার বললো, "রেশমী বলে তুমি কোনো মেয়েকে ভালোবেসেছিলে?"
এতক্ষণ দিবাকরের পরীক্ষা নিয়ে এবার যেন রজতেরও পরীক্ষা নিতে শুরু করেদিল সিরিজা। এ কার কথা বলছে সিরিজা? এ নাম ও জানল কি করে? রজত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিরিজার দিকে। কথাও বলতে পারছে না। প্রাণ খুলে হাসতে পারছে না। ওর মুখের হাসিটা যেন কেড়ে নিয়েছে সিরিজা।
- "কথা বলছো না? আমি রেশমীর কথা বলছি।"
রজত তবু চুপ করে রয়েছে। বসে বসে ভাবছে দিবাকরের কথা। তাহলে কি দিবাকর? এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারলো ও? আমি ছিলাম না। আর এই দু তিনঘন্টার মধ্যেই সিরিজাকে সব বলে দিয়েছে।
সিরিজা একটু গম্ভীর ভাবেই বললো, "রেশমীর কথা শুনেই তুমি চুপ করে গেলে? আমার কাছে লুকোতে চাইছো?"
রজত সিরিজাকে তখন বোঝার চেষ্টা করছে। ভেতরে ভেতরে কেমন অপরাধবোধ জেগে উঠেছে। সিরিজাকে তবু বলতে পারছে না। কারন সিরিজা আর রেশমী দুজনে ওর কাছে এক নয়। যাকে মনে ধরেছে তাকে চেষ্টা করেও মিথ্যে বলা যায় না। সিরিজা ওকে যাই বলুক ও সিরিজার কাছে কিছুই লুকোতে পারবে না। এই কদিনে রজতকে যেন অনেক পাল্টে দিয়েছে সিরিজা। শুধু রেশমী কেন? সিরিজার জন্য ভালো লাগার সব মেয়েগুলোর কথাই বলতে পারে রজত সিরিজাকে। কিন্তু ভয় একটাই। সত্যি কথা বলতে গিয়ে যদি......?
খুব আবেগ জড়িত হয়ে রজত বললো, "আমি যদি তোমাকে রেশমীর কথা বলি তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো সিরিজা?"
সিরিজা এবার রজতের মাথাটা দুহাত দিয়ে ধরে বললো, "আমি আমার জীবনের পুরোনো কথা বলিনি তোমায়? সব কিছু জেনেও তুমি আমাকে তোমার করে নিয়েছ। তাহলে আমাকে তুমি লুকোচ্ছ কেন? আমি কি তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছি?"
সিরিজার দিকে ভালো করে তাকাতে পারছিল না রজত। সিরিজাই এবার রজতের মুখটা তুলে ওর চোখের ওপর চোখটা রাখলো। - "তাকাও আমার দিকে। এই দেখ, আমি তোমার কাছেই রয়েছি।"
ও তবু মানছে না দেখে সিরিজা এবার রজতের মুখটা ওর বুকের ওপর রাখলো। - "কি, আমাকে বলতে ভয় করছে?"
গরম একটা তাপ। রজতকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করছে সিরিজা। বুকের মধ্যে ছটফট করতে পারছে না রজত। তবু ভাবছে সিরিজা কত ভালো। একবার যদি ওর ভুলটাকে ক্ষমা করে দেয়। জীবনে কোনদিন আর সিরিজাকে ছেড়ে অন্য কোনো নারীর কাছে যাবে না ও।
বুকের মধ্যে মুখটাকে একনাগাড়ে ঘষতে লাগলো ও। এ যেন ক্ষমার ভিক্ষা প্রার্থনা। সিরিজা রজতকে দেখছে। ওর মধ্যে একটা শিশুর মতন অপরাধবোধ। রজতের মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে আরো আস্বস্ত করতে লাগলো সিরিজা। দেখলো রজতের বলার শক্তি নেই, কিন্তু ওর চোখের ভাষা বলে দিচ্ছে যা ও শুনেছে রেশমীর ব্যাপারে। তার সবই সত্যি।
রজতের মাথাতেই হাত বুলোতে বুলোতে সিরিজা বললো, "তুমি মেয়েটা কোথায় থাকে জান?"
-- "আমি জানি না। ওটা দিবাকর জানে।"
- "দিবাকরদা তো বললো, ও নাকি এখন ওখানে আর থাকে না। বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে।"
-- "হবে হয়তো।"
- "তোমার কাছে ওর ফোন নম্বর নেই।"
-- "আমি ফোনে সবার নম্বরই ডিলিট করে দিয়েছি সিরিজা। রেশমী কেন কারুরই নম্বর নেই।"
- "তুমি একবার মেয়েটাকে চেষ্টা করে ফিরিয়ে আনতে পারো না?"
-- "রেশমীকে? কেন? কার জন্য? রজত যেন ভাবতেই পারছে না, সিরিজা কার জন্য রেশমীর কথা বলছে।"
- "আমি তোমার জন্য বলছি থোড়িই। আমি তো দিবাকরদার জন্য বলছি।"
-- "দিবাকর?"
রজত যেন এবার আকাশ থেকে পড়লো।
- "কেন তুমি জানতে না? দিবাকরদা ঐ মেয়েটিকে ভালোবাসতো।"
রজত তখনও বুঝতে পারছে না, সিরিজা কি বলতে চাইছে।
-- "দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসতো?"
- "হ্যাঁ।"
-- "আমাকে তো কোনোদিন বলেনি ও।"
- "তুমি বলার সুযোগ দাও নি।"
-- "আমি সুযোগ দিইনি? আমি তো কোনোদিন ভাবিই নি দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসে। ওতো রেশমীকে শুধু চিনত। আমার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল ব্যাস এই পর্যন্ত। কিন্তু দিবাকর রেশমীকে ভালোবাসতো, আমি তোমার মুখেই প্রথম শুনছি।"
সিরিজা বললো, "দিবাকরদা লোকটাই এরকম। নিজে থেকে কিছু বলে না। তোমার প্রেমের জন্য নিজের স্বার্থকে বলি দিতেও কসুর করে নি সে। কি লাভ হলো? যাকে তুমি নিলে না, সে দিবাকরেরও হলো না। লোকটা সেই সঙ্গী ছাড়াই রয়ে গেল।"
রজত সিরিজার বুকে এবার মুখ লুকিয়ে বললো, "আমি বুঝতে পারিনি গো। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।"
- "এই ক্ষমাটা তুমি যদি দিবাকরদার কাছে চাইতে, আরো ভালো হতো। তোমার জন্য সে অনেক করেছে।"
রজত বুঝতে পারছিলো কি ভুলটাই করেছে ও। দিবাকর হয়তো দূঃখে সিরিজাকে কথাগুলো বলেছে। নইলে সিরিজাই বা জানবে কি করে?
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ও সঙ্গে সঙ্গে দিবাকরকে ধরার চেষ্টা করলো। দু তিনবার চেষ্টা করার পর ও দিবাকরকে লাইনে পেল। মোবাইলটা কানে নিয়ে ও দিবাকরকে বলতে লাগলো, "কি হলো তুমি চলে গেলে কেন? আমাদের তো একসাথে বেরোনোর কথা ছিল।"
- "না মানে তোমার শ্বশুড় মশাই ও চলে গেল। আমি ওনাদের আটকাতে পারলাম না। ভাবলাম, আর বোধহয় থেকে কাজ নেই তাই চলে এলাম।"
-- "কাজ নেই মানে? তুমি আমার জন্য এত করলে, আর আমাকে একটা থ্যাঙ্কস বলারও সুযোগ দিলে না।"
- "কোথায় করতে পারলাম কই।"
-- "কেন?"
- "সিরিজা তো তোমার বউকে ভয় খাইয়ে দিল।"
-- "ঠিকই তো করেছে।"
- "ঠিক করেছে?"
-- "ঠিক করেনি! আমার বউ বলেছে আমাকে ডিভোর্স দেবে না। সিরিজাও তাই মোক্ষম চালটা দিয়েছে। তুমি ধরতে পারো নি।"
- "সবই তো বুঝলাম। কিন্তু এখন যদি তোমার বউ যদি বলে ঘর করবো।"
রজত কিছুক্ষণ থেমে গিয়ে এবার বললো, "সে সুযোগ আর তাকে দিই কি করে বল। আমার তো সিরিজা ছাড়া আর কোনো বউ নেই।"
দিবাকর কথাটা শুনে বেশ খুশী হলো। বললো, "ভালো ভালো। তোমরা ভালো থাক এটাই আমি চাই।"
রজত শুনে বললো, "কিন্তু আমি আর সিরিজাও একটা জিনিষ চাই"
- "কি?"
-- "তোমার একটা বিয়ে দিতে, তোমাকেও ভালো রাখতে আর তোমার জন্য রেশমীর কাছে গিয়ে পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে। তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা দিবাকর।"
ফোনটা হাতে নিয়ে থ মেরে গেছে দিবাকর। তাহলে কি সিরিজা রজতকে কিছু বলেছে? মেয়েটা সত্যি পারে বটে। কখনও ওকে, কখনও রজতকে, সবাইকে যেন পাল্টে দিচ্ছে পুরোপুরি। সিরিজা সিরিজা আর সিরিজা। সত্যি যেন জবাব নেই সিরিজার। ফোনটা ধরে আবার হ্যালো হ্যালো বলছে দিবাকর। কিন্তু রজত কথা বলছে না। দিবাকর আসলে দেখতে পাচ্ছে না, ফোন ছেড়ে সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে গেছে রজত। সিরিজা ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন যদি আবার সেই আগের মতন শরীরি ভালোবাসায় দুজনে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বলার তাহলে কিছু নেই।
- "ছাড়ো আমাকে। যেই ক্ষমা করে দিলাম অমনি না?"
-- "আর একটু আর একটু।"
রজত আবার সিরিজার ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁটটা চুবিয়ে দিতে যাচ্ছিলো, সিরিজা বাধা দিয়ে বললো, "আমাকে যে বললে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবে, তার কি হলো?"
-- "যাবো তো। তোমার জন্যই তো এলাম। দেখ, তোমার জন্য একটা নতুন শাড়ী কিনে নিয়ে এসেছি।"
সুন্দর প্যাকেটে মোড়া শাড়ীটা খুলে দেখছিল সিরিজা। রজত সেই অবস্থায় আবার সিরিজার ঠোঁটের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছিল। সিরিজা যেন শাড়ীটা পেয়ে খুব খুশী হয়েছে সেটার জানান দিতে আবার রজতের ঠোঁটের সাথে ঠোঁটটা মেলালো। রজত এবার সিরিজাকে চুমু খাওয়ার জন্য দুহাতে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। এবার যে ধরলো, আর ওকে ছাড়লো না।