Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.47 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery সিরিজা by Lekhak
#62
                            ।। সতেরো ।।


দরজা খুললো দিবাকর। চোখের সামনে রজতকে দেখবে কি? যাকে দেখলো তাকে দেখে চরম বিরক্তি ফুটে উঠলো দিবাকরের। ওফঃ আবার? এই তো সকালে এসেছিল। আবার এসেছে বুড়োটা? এ তো দেখছি জ্বালিয়ে খেল একেবারে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রজতের শ্বশুড়। বুড়ো শ্বশুড় আবার এসেছে। আবার সাথে কাকে এনেছে? শ্বশুড় মশাইয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এক ভদ্রমহিলা। পরণে শাড়ী। গায়ের রঙ ফর্সা। দেখতে খারাপ নয়। ইনি কে? রজতের স্ত্রী? কেলেঙ্কারী করেছে। এমন অসময়ে আগমন ঘটিয়ে ফেললো। তাও আবার দুজনে একসাথে? রজত ঘরে নেই এখন কি হবে? একটু আগে রেগে ওঠা দিবাকরের এবার দাঁতগুলো ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। ওর মনে হলো সিরিজাকে একটু আগে রাগটা না দেখালেই ভালো হতো। ও যদি এখন মিছিমিছি দিবাকরের স্ত্রী হতে বেঁকে বসে? সর্বনাশ করেছে।

 - "আপনারা?"

ভদ্রলোক বেশ কর্কশ গলায় বললেন, "আপনি কে?"

 - "আমি? আমি, আমি রজতের বন্ধু।"

 -- "ও তারমানে আপনি এখনও আছেন দেখছি।"

 - "হ্যাঁ।"

 -- "সকালে তো আমি এসেছিলাম। রজত বললো, আপনি নাকি স্ত্রী নিয়ে কাল রাতে ওর বাসায় এসেছেন। গভীর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন আপনারা। রজত কিছুতেই আপনাদের ডিস্টার্ব করতে চাইল না। যে কাজে এসেছিলাম, সেটা না করেই আমাকে ফিরে যেতে হলো। তা সে ব্যাক্তি এখন কোথায়? তাকে ডাকুন। আমি মেয়েকে নিয়ে এসেছি। কাজটা সেরেই চলে যাবো।"

 - "কিন্তু রজত তো এখন নেই।"

 -- "কোথায় গেছে?"

 - "অফিসে।"

 -- "কখন ফিরবে?"

দিবাকর বোকার মতন বলে ফেললো, "এই একটু পরেই। আমাকে থাকতে বলেছে। তাই রয়ে গেছি।"

 -- "ও তাহলে তো ঠিকই আছে। আমরা বরং রজতের জন্য ইসিলি ওয়েট করতে পারি। আপনি বরং ওকে ফোন করে খবর দিন, আমরা এসেছি।"

দিবাকর আমতা আমতা করছিল। শ্বশুড় মশাই আর কোনো সুযোগ না দিয়েই মেয়েকে নিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরের ভেতরে।

যেন কাল থেকেই শুধু নাকানি চোবানি খেয়ে চলেছে দিবাকর। এর আর শেষ হচ্ছে না। প্রথমটা হয়েছিল নিজের দোষে। মাল খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে একটা কেলেঙ্কারী বাঁধিয়ে দিচ্ছিল। তারপরে শুরু করলো রজত। রজতের পরে সিরিজা। এখন শুরু করেছে রজতের শ্বশুড় মশাই। ওফ! এর থেকে কি আর রেহাই নেই?

দিবাকর কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো, "আপনারা বসবেন? ঠিক আছে বসুন। আমি দেখছি রজতকে ফোনে ধরা যায় কিনা?"

শ্বশুড় মশাই সোফায় বসল। রজতের স্ত্রী গটগট করে শোবার ঘরের দিকে চলে যাচ্ছিলো। দিবাকর ওকে বাধা দিয়ে বললো, "দাঁড়ান দাঁড়ান। ওঘরে যাবেন না।"

 -- "কেন?"

 - "মানে....."

 -- "আপনার স্ত্রী আছে তো ভেতরে? ঠিক আছে, অসুবিধার কি আছে? আমি খালি আলমারীটা খুলে কাপড় চোপড় গুলো বার করে নেব।"

দিবাকরকে পাত্তা না দিয়েই ও আবার শোবার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। দিবাকর কোনোরকমে পথটা আড়াল করে ওর স্ত্রীকে বাঁধা দিয়ে বললো, "একটু দাঁড়ান, একটু দাঁড়ান। ও আছে তো ভেতরে। আমি বরঞ্চ ওকে ডেকে তুলি। খোলামেলা ভাবে শুয়ে আছে হয়তো। আপনার নিজেরই খারাপ লাগবে। লজ্জা পাবে ও। তাই একটু বসুন। একটু বসুন। আমি সব ব্যাবস্থা করছি।"

রজতের বউটা দজ্জাল না হলেও বেশ বদমেজাজী। দিবাকরকে চোখ রাঙিয়ে বললো, "আর কেউ নেই তো ভেতরে? রজত?"

 - "না না, ওতো অফিসে গেছে। ভেতরে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।"

কোনরকমে দিবাকরের কথাটা বিশ্বাস করে রজতের বউটা তখন ওর বাপের পাশে গিয়েই বসল। দিবাকর একবার তাকাল শোবার ঘরের দিকে। ওর গায়ের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। এই মূহূর্তে হূট করে কিছু না বুঝে সিরিজা যদি এঘরে চলে আসে তাহলেই মুশকিল।

রজতের বউকে ঠান্ডা করার জন্য বললো, "আপনি বসুন। আমি দেখছি, ওকে জাগিয়ে তুলছি।"

চোখে মুখে একটা টেনশন্ নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলো দিবাকর। সিরিজাকে যে করেই হোক রাজী করাতে হবে।

রজতের বউ রীতা পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো, "শুনুন।"

দিবাকর আবার দাঁড়িয়ে পড়লো।

 -- "আপনার স্ত্রী কি সত্যি ঘুমোচ্ছেন?"

 - "হ্যাঁ বোধহয়। আপনি বসুন। আমি দেখে আসছি।"

 -- "ঠিক আছে, ঠিক আছে। ওনাকে জাগাতে হবে না। আমরা বরং রজতের জন্যই অপেক্ষা করছি।"

চালু আছে বউটা যেন দিবাকরকে কিছু শেখাতেও দেবে না। এমন পরিস্থিতির চাপে পড়েছে দিবাকর যেন মাথা দিয়ে কোনো বুদ্ধিও বার হচ্ছে না। ও তবু শোবার ঘরে ঢুকে গেল রজতের বউ এর কথা না শুনে। দেখলো সিরিজা বসে আছে যথারীতি খাটে। দিবাকরকে অবাক করে দিয়ে সেই তুমি তুমি করেই বললো, "আমি সব বুঝতে পেরেছি। ওর বউ এসেছে বাপ কে নিয়ে। আমি এখন ওঘরে যাবো না। বল আমি অঘোরে ঘুমোচ্ছি। ওদের বরং রজত না আসা অবধি অপেক্ষা করতে বল। রজতই এসে ওদের সামলাবে। আমি এখন সন্দেহ কাটাবার জন্য তোমার বউ সাজতে পারবো না। ওসব অভিনয় টভিনয় আমার দ্বারা হবে না।"

 -- "কিন্তু সিরিজা, ওরা যদি সন্দেহ করে?"

 - "করে করুক। আমি বলেছি না। এসব ঝেমেলা সামলানোর দায়িত্ব রজতের, আমার নয়।"

বেগতিক দেখে দিবাকর সিরিজাকে অগত্যা বললো, "ঠিক আছে, তুমি বরং এ ঘরে চুপটি করে শুয়ে থাক। আমি ওদের কে সামলে নিচ্ছি।"

বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো সিরিজা। দিবাকরকে যাবার আগে বললো, "দরজাটা হাট করে খুলে যেও না। আলতো করে ভেজিয়ে দিয়ে যাও। আর দেখ ওর বউ যেন এঘরে ঢুকতে না পারে।"

বসার ঘরে বাপ বেটি একসাথে বসে আছে। দিবাকর শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে একটা বোকার মতন হাসি দিল ওদের সামনে। মাথাটা হাত দিয়ে চুলকোতে চুলকোতে ওদের দুজনকে বললো, "সিরিজাকে ডাকলাম। ও অঘোরে ঘুমোচ্ছে। উঠলো না কিছুতেই। আপনাদের কথাটা বলতেই পারলাম না।"

 -- "সিরিজা?" - রজতের বউটা দিবাকরকে বললো, "বাব্বাহ, আপনার বউ এর নামটাতো অদ্ভূত। এমন নাম শুনিনি কখনও আগে।"

বাবাও মেয়ের সাথে ফোড়ন কেটে বললো, "অসময় ঘুমোচ্ছে কেন? রাত জেগেছে নাকি? সকালেও তো এসে দেখলাম ঘুমোচ্ছে।"

 - "হ্যাঁ ওর শরীরটা একটু খারাপ তো তাই।"

 -- "ও আচ্ছা আচ্ছা।"

দিবাকর ওদের সামনে বসল। রজতের বউ রীতা বললো, "আপনি ওর কদিনের বন্ধু? আগে তো শুনিনি ওর মুখে।"

 - "আমি? আমি অনেক দিনের? সেই ছোটোবেলা থেকে।"

 -- "ছোটোবেলার বন্ধু? আপনাকে তো বিয়েতে দেখিনি।"

 - "বলেছিল তো। বলেছিলো। আমিই আসতে পারিনি। আসলে ওর বিয়ের সময় আমি এখানে ছিলাম না।"

 -- "আর আপনার বিয়ে?"

 - "আমার বিয়ে?"

 -- "হ্যাঁ। ওর আগে হয়েছে না পরে?"

টেনশন কাটানোর জন্য দিবাকরের একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছিল। শ্বশুড় মশাই এর অনুমতি চেয়ে ও বললো, "আমি একটা সিগারেট ধরাব?"

 -- "হ্যাঁ হ্যাঁ খান। অসুবিধে নেই।"

দিবাকর সিগারেটটা ধরালো। যেন একটু স্বস্তি এল। শ্বশুড় মশাই ওকে বললো, "আপনি রজতকে ফোন করুন। দেখুন অফিস থেকে বেরিয়েছে কিনা? আমাদেরও তো কাজ সেরে ফিরতে হবে।"

 - "হ্যাঁ হ্যাঁ। এই করছি।"

এক চান্সেই লাইন পেয়ে গেল দিবাকর। ফোনটা কানে নিয়ে রজতকে ও বললো, "আমি দিবাকর বলছি।"

 -- "হ্যাঁ হ্যাঁ বলো।"

 - "তোমার আর কত দেরী?"

 -- "এই তো আসছি আর একটু পরে।"

 - "অফিস থেকে বেরিয়েছো?"

 -- "হ্যাঁ বেরিয়েছি। সিরিজার জন্য একটা ভালো শাড়ী কিনছি দোকান থেকে।"

 - "শাড়ী?"

রজত ও প্রান্ত থেকে কিছু বলার আগেই দিবাকর বুঝতে পারলো মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছে শাড়ী কথাটার উচ্চারণ করে। ও শ্বশুড় মশাই আর রজতের বউ তখন নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

 - "শোনো শোনো। তুমি তাড়াতাড়ি এখন চলে এসো।"

 -- "কেন কেন কি হয়েছে?"

 - "তোমার শ্বশুড় মশাই এসেছেন, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে। ওনারা অপেক্ষা করছেন তোমার জন্য। আমি ঘরে বসিয়ে রেখেছি।"

 -- "তার মানে?"

দিবাকর এবার একটু চেঁচিয়ে বললো, "তোমার শ্বশুড় মশাই আর তোমার বউ এসেছে। ওনারা ওয়েট করছেন।"

বেশ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে রজত ও প্রান্ত থেকে বললো, "আমার সাথে ত্যাঁদরামো হচ্ছে? কালকে যাদের আসার কথা তারা চলে এল আজকে? আমি কি সবসময় ঘর জুড়ে বসে থাকব ওদের জন্য? ওদের বল চলে যেতে। আমার আসতে দেরী হবে।"

রজত তখনও চেঁচাচ্ছিল। দিবাকর হাত দিয়ে ফোনের মাউথপীসটা চেপে শ্বশুড় আর বউকে বললো, "ও বলছে আপনাদের তো কালকে আসার কথা?"

শ্বশুর মশাই বললেন, "হ্যাঁ সেই মতই তো কথা হয়েছিল। কিন্তু আমার মেয়ে শুনতে চাইল না। তাছাড়া কাল ওর সময় হবে না।"

দিবাকর মাউথ পিসের ওপর থেকে হাতটা তুলে রজতকে বললো, "ওনারা বলছেন, কাজটা আজকেই সারতে চান। কালকে ওনাদের সময় হবে না।"

 -- "এ তো মহা জ্বালা দেখছি। যেমন বাপ তেমনি শালা মেয়ে। নতুন করে ঘাড়ে ঝ্যামেলা পাকাতে চাইছে। ভালো লাগে না আমার। ঠিক আছে, ঠিক আছে। বল ওদের বসতে আমি আসছি। আর শোনো?"

 - "হ্যাঁ বলো।"

 -- "আমি যা বলব, তুমি শুধু হ্যাঁ তে আর না তে জবাব দেবে।"

 - "হ্যাঁ বলো।"

 -- "আমার বউ কিছু সন্দেহ করেছে?"

 - "না।"

 -- "শ্বশুড় মশাই?"

 - "না।"

 -- "ওরা সিরিজাকে দেখেছে?"

 - "না।"

 -- "তুমি বলেছো তো? সিরিজা তোমার বউ?"

 - "হ্যাঁ।"

 -- "সিরিজা ঠিক আছে তো?"

 - "হ্যাঁ।"

 -- "ঠিক আছে তুমি একটু সামাল দাও, আমি আসছি।"

দিবাকর লাইনটা ছেড়ে দিল। রজতের শ্বশুড় মশাই ওকে বললেন, "কি বললো ও?"

 - "আসছে আসছে। বেরিয়ে পড়েছে। আপনাদের বললো বসতে। আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।"

 -- "তুমি থাকো কোথায় বাপু? তোমাতে তুমি বললাম, কিছু মনে কোরো না।"

 - "না না আপনি বয়জেষ্ঠ ব্যক্তি। আমাকে তুমি বলতেই পারেন।"

 -- "কোথায় থাক তুমি?"

 - "আমি? খুব কাছেই থাকি। এই শহরেতেই।"

 -- "রজতের ব্যাপারে কিছু জানো?"

 - "কি ব্যাপারে?"

 -- "ও কিসব করে বেড়ায় তুমি খবর রাখো?"

দিবাকর মনে মনে বললো, বুড়োটা হারামজাদা। এখন যেই বসতে বললাম, অমনি আমাকে খুঁচিয়ে সব জানার চেষ্টা করছে। তবু বললো, "কিসের খবর?"

 -- "আমার মেয়েকে বিয়ে করেও ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি জানি ও অনেক কিছুই করে বেড়ায়।"

দিবাকর যেন কিছুই জানে না এমন ভাব করলো। রজতের শ্বশুড়কে বললো, "দেখুন মেশোমশাই, এটাতো হলো ব্যক্তিগত প্রশ্ন। তাছাড়া আমি ওর ব্যাপারে কিছুই খবর রাখি না। নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকি। তাছাড়া সংসার ধর্ম আছে। স্ত্রী আছে। ঐ নিয়েই আমার সময় কেটে যায়। একটু আগে বললাম না, যার জন্য রজতের বিয়েতে আমি আসতে পারিনি।"

 -- "তবু ভালো। তুমি তোমার স্ত্রীকে ভালোবাসো। আর আমার মেয়ের তো কপালটাই খারাপ। রাগ করে আমার কাছে চলে এল। এখন ডিভোর্স নেওয়া ছাড়া ওর কোনো গতি নেই।"

কপালের নাম গোপাল। দিবাকর মনে মনে বললো, ভালোবাসতে গিয়ে কি খেসারতটাই না দিতে হচ্ছে। ওরও দম আটকে গেছে। এখন মিছি মিছি ভালোবাসাটাকে যতদূর ধরে রাখা যায়। শ্বশুড় মশাইকে উস্কে দিয়ে ও বললো, "আমার মনে হয় মনের মিলটাই আসল। মতপার্থক্য থাকলে শুধু শুধু একজনকে জীবন দিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তার চেয়ে বরং আলাদা আলাদা হয়ে যাওয়াই উচিত। আপনার মেয়ে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।"

 -- "তুমি ঠিকই বলেছো। সেই জন্যই তো....."

দিবাকর মনে মনে এবার একটু ওপরওয়ালাকে স্মরণ করলো। তারমানে অল লাইন ইজ ক্লিয়ার। রজতকে আর এদের দুজনের কাছ থেকে কোনো বেগ পেতে হবে না। রজত আর সিরিজার নতুন জীবন সুখময় হোক।

রজতের বউ ওর বাপের কথাই শুনছিল। মাথা নীচু করে বসেছিল। মুখ দেখে মনে হবে রজতের প্রতি বিতৃষ্ণায় মন ভরে গেছে। কথা বলছিল না কিন্তু রাগটা ভীষন ভাবে ফুটে উঠছিল। হঠাৎ এবার দিবাকর আর ওর বাবাকেও চমকে দিয়ে এমন একটা কথা বললো যে দিবাকর প্রায় আঁতকে উঠলো। একি সর্বনাশ!

রজতের বউ বললো, "আমি তো ভাবছি ওকে ডিভোর্সও দেব না। সারাজীবন এভাবেই পচিয়ে মারবো।"

চমকে উঠলো শ্বশুড় মশাইও। মেয়েকে বললেন, "কি বলছিস তুই! তোর মাথার ঠিক আছে। রজতকে তুই ডিভোর্স দিবি না মানে? তুই কি ওর সাথে ঘর করবি না কি?"

 -- "ঘরও করবো না। ডিভোর্সও দেব না।"

দিবাকর রীতিমতন হকচকিয়ে গেল। ভাবলো এতো নতুন বিপদ এল। রজত তো বিপাকে জড়িয়ে পড়লো। ডিভোর্স না পেলে সিরিজাকে নিয়ে বাকী জীবনটা তো সুখেও কাটাতে পারবে না। বউটা ত্যাঁদোড় আছে তো? বেছে বেছে মাথা দিয়ে এমন বুদ্ধি বার করেছে যাতে রজত শান্তিতে না থাকে।

দিবাকর তবুও বললো, "আপনি যদি রজতকে আর পছন্দ না করেন, তাহলে ডিভোর্স দেওয়াটাই তো বুদ্ধিমানের কাজ। শুধু শুধু নিজের লাইফ নষ্ট করবেন কেন? তার থেকে আপনিও একটা বিয়ে করে নিন।"

 -- "তাই বুঝি? আপনার বন্ধুও বিয়ে করছে নাকি? তা পাত্রীটি কে? একবার জানতে পারি?"

 - "বিয়ে? না না ও বিয়ে করছে না?"

 -- "সত্যি বুঝি?"

 - "সত্যি সত্যি বিয়ে করলে আমায় বলতো। সে রকম যখন বলেনি তার মানে ওর এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।"

 -- "আপনি জানলেন কি করে? ও সব পারে। তাছাড়া ও বিয়ে না করেও এমন কিছু করে যাতে ওর বিয়ে না করলেও চলে। ওর হয়ে আপনি আর সাফাই গাইতে আসবেন না প্লীজ।"

দিবাকর বুঝলো, বউটা মুখরা আছে বেশ। এটাকে বাগে আনতে বেশ সময় লাগবে। ব্যাচারা রজতের কপাল খারাপ, যা বলছে তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে রজতকে বেশ বেগ পেতে হবে। এ মেয়ে সহজে রাজী হওয়ার মেয়ে নয়।

বাপ তখন মেয়েকে বোঝাচ্ছে, "ছেলেমানুষি করিস না রীতা। বাপ হয়ে আমিও কি চাইব তোর জীবনটা নষ্ট হোক। আমি তোর আরেকটা বিয়ে দেব।"

দিবাকরও বুদ্ধিমানের মত সাথে সাথে তাল দিয়ে যেতে লাগলো, "হ্যাঁ ঠিকই তো, ঠিকই তো।"

মেয়ে এবার এমন জোরে চেঁচিয়ে বললো, "না না আমি কোনো কথা শুনছি না। আমি ওকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব। ডিভোর্স আমি কিছুতেই ওকে দেব না।"

শোবার ঘরে রজতের বউ এর চিৎকারটা সিরিজার কানে গিয়ে পৌঁছোল। ও ওখান থেকেই দিবাকরকে ডাক দিল, "এই একটু শোনো এদিকে। এঘরে।"

রজতের বউ আর শ্বশুর মশাই দুজনেই ভাবল, দিবাকরের বউ এর ঘুম ভেঙেছে তাহলে। দিবাকর আবার শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালো।

এদিক সামলাবো না ওদিক? কোনদিকে আমি যে যাই?

ঘরে ঢুকল দিবাকর। সিরিজার তখন বেশ রুদ্রমূর্ত্তি। চোখটা বেশ বড় বড় করে সিরিজা দিবাকরকে বললো, "কি বলছে কি ওরা? তখন থেকে বাপ মেয়ে খুব চ্যাঁচাচ্ছে। এবার মনে হচ্ছে আমাকে সামনে যেতে হবে।"

দিবাকর আরো টেনশনে পড়ে গেল। বললো, "এই না না তুমি যেও না। আমি দেখছি ব্যাপারটা। তাছাড়া ও কিছু নয়। তুমি চিন্তা করছো কেন? রজতও তো এক্ষুনি এসে পড়লো বলে।"

 - "আমি ও ঘরে না গেলে তুমি একা সামলাতে পারবে দিবাকরদা?"

 -- "ঠিক সামলে নেব। তুমি দেখে নিও। তাছাড়া তুমি ওঘরে গেলে বাপ মেয়ে বরং সন্দেহ করবে। তারপর রজত এসে আর কিছু করতে পারবে না।"

 - "আমি ওদেরকে গিয়ে সব সত্যি কথাটা বলে দেব।"

 -- "পাগল হয়েছ নাকি? কি সত্যি বলে দেবে?"

 - "যা সত্যি তাই বলব। ক্ষমতা থাকে ওর বউ আমাকে কিছু বলে দেখাক।"

দিবাকর বুঝলো সিরিজা এবার রজতের প্রতি যেন গলে গেছে। ওদের সাথে মহরা নিতে চাইছে। ও তবু বললো, "না না তোমার ও ঘরে যাওয়ার দরকার নেই। মেয়েছেলে মেয়েছেলেতে মুখ লাগানটা ঠিক নয়। আমার সব চেষ্টা পন্ড হয়ে যাবে। সিরিজা প্লীজ তুমি ওঘরে এখন এস না।"

 - "তুমি কি বলেছো? আমি তোমার বউ?"

 -- "হ্যাঁ। তাছাড়া তো আর উপায় ছিল না।"

 - "তাহলে আমিও গিয়ে বলব ওর বউকে, যে আমি তোমার বউ নই।"
[+] 3 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
সিরিজা by Lekhak - by Mr Fantastic - 03-10-2020, 07:04 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Kalobonduk - 03-10-2020, 07:11 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Kolir kesto - 03-10-2020, 09:28 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by sohom00 - 04-10-2020, 10:02 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by nightangle - 04-10-2020, 12:47 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 06-10-2020, 08:36 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 07-10-2020, 07:47 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 07-10-2020, 03:53 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by chndnds - 08-10-2020, 07:13 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Mr Fantastic - 12-10-2020, 05:18 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 16-10-2020, 02:28 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by price rajib - 25-10-2020, 02:58 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by pagolsona - 30-10-2020, 11:36 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by raja05 - 18-06-2021, 04:24 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by 212121 - 21-08-2021, 11:04 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Fokir_sadhU - 09-10-2022, 01:52 AM
RE: সিরিজা by Lekhak - by 212121 - 21-08-2021, 11:03 PM
RE: সিরিজা by Lekhak - by Arpon Saha - 09-10-2022, 02:56 AM



Users browsing this thread: 56 Guest(s)