08-10-2020, 08:35 PM
পর্ব ১২
১২ (ঘ)
রত্না ভাবী এসেছে। তবে একলা নয় রত্না ভাবী। তার সঙ্গে একটা লোক দাড়িয়ে আছে। লোকটি যে রত্না ভাবীর স্বামী নাজিম ভাই, তা আর বলে দিতে হল না শান্তাকে।
“দুঃখিত তোমায় বিরক্ত করলাম গো,” রত্না ভাবী হাসি মুখে বলে উঠে। শান্তা ভেবে পায় না কি উত্তর দিবে! লজ্জায় আর অপমানে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে ওর। টের পাচ্ছে ওর গাল-মুখ লাল হয়ে উঠেছে। ওরা কি করছে এখানে! আর রাজীবই বা এতক্ষন ওদেরকে নিয়ে দরজার বাহিরে দাড়িয়ে আছে কেন? “এই আমার স্বামী গো, নাজিম... ”
দরজাটা আলতো করে খুলেছে শান্তা। রত্না ভাবী কোমর দিয়ে ধাক্কা দিয়ে পুরোটাই খুলে ফেলল। খুলে শান্তাকে ঠেলে ঢুকে গেলো ঘরের ভেতরে। বিছানাটা তখনো অগোছালো, ঘরের বাতাসে ভারী হয়ে আছে সঙ্গমের ঘ্রান। শান্তার পুরো শরীরটা ঝিমঝিম করছে। একটু আগে কি চলছিল এ ঘরে, তা আর অজানা নয় কারও কাছে। রাজীব এর কি বুদ্ধি নেই? কি বুঝে ওদের ঘরে ধুকাল সে!
ঘরে ধুকাবার কথা খেয়াল করে শান্তা টের পেলো ওর পিছু পিছি নাজিম ভাইও ঢুকে পড়েছে ঘরে। মিটি মিটি হাসছে লোকটি। রাজীব এর থেকে বয়সে ঢের বড় নাজিম ভাই। পেটটা খানিকটা ঠেলে বের হয়ে আছে। মাথায় চুল গুলো পাতলা হয়ে এসেছে একেবারে। চেহারায় কেমন একটা হাসি হাসি ভাব।
রাজীবও ঢুকেছে ঘরে। শান্তার চোখে মুখে রাগ আর লজ্জা মিলেমেশে একাকার হয়ে আছে। ভেতরটা কেমন শুন্য লাগছে ওর। রাজীব ইশারা করলো তাকে - ভয় নেই। ভয় নেই, তবে লজ্জা! তার কি মাথা খেয়ে ফেলেছে নাকি শান্তা!
“ওফ তোমাদের করার মধ্যে বাঁধা দিলাম,” রত্না ভাবী বেশ স্বাভাবিক গলায় বলে খাটে বসতে বসতে। নাজিম ভাইও এগিয়ে গিয়ে টেবিলটায় হেলান দেয়।
শান্তা কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছন থেকে রাজীব বলে, “নাহ না ভাবী, আমাদের হয়ে গিয়েছিলো.....”
হয়ে গিয়েছিলো! কি বলছে রাজীব এসব! শান্তার কানে যেন কেমন ফাঁপা শুনাচ্ছে কথা গুলো। ওর হৃদপিণ্ড যে আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের মত ছুটে বেড়াচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
“শান্তা তো দেখছি খুবই সুন্দরী,” নাজিম ভাই এই প্রথম কথা বলে উঠে। ঢোক গিলে মেঝের দিকে তাকায় শান্তা। আর সইতে পারছে না ও। পা দুটো ভার হাড়িয়ে ফেলছে।
“যাই হোক,” রত্না ভাবী তাগদা দেয়। “মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে তোমরা দেখছ না! এই রাজীব, দেখাও না শান্তাকে - ছবি গুলো।”
ছবি! কিসের ছবি? শান্তার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। রাজীব এর হাতে একটা খাম। সেটা বাড়িয়ে ধরে সে শান্তার দিকে। “এই মাত্রই নাজিম ভাই ডেভেলপ করে আনলো… ফয়সালের কুকর্মের ছবি।”
ফয়সালের কুকর্ম! একটা বোঝা যেন নেমে যেতে থাকে শান্তার মন থেকে। কিন্তু সেই জায়গায় ঠা নেয় কষ্ট। খামটা রাজীব এর হাত থেকে নিয়ে ভেতর থেকে ও তিনটে ছবি বার করে। তিনটে ছবিই অন্ধকারের মধ্যে তুলা। ঠিক স্পষ্ট হয়। প্রথম ছবিটায় ঠিক বুঝা না গেলেও, দ্বিতীয় ছবিটায় শান্তা দেখতে পেলো ফয়সালকে। হাসপাতাল ঘরে তুলা একটা ছবি। কালো রঙের সোফাতে বসে আছে ফয়সাল। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে একটি মেয়েকে। মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে শান্তা নিশ্চিত, এই সেই মেয়ে যার সঙ্গে খুলনা গিয়েছিলো ফয়সাল।
“দেখলে?” রাজীব ওর হাত থেকে ছবি গুলো নিল। যত্ন করে আবার খামে ঢুকিয়ে রাখতে লাগলো।
“আমার স্বামী,” রত্না ভাবী বলে, “সাংবাদিক ছিল আগে। এসব গোয়েন্দাগিরি খুব ভালো পারে বুঝলে!”
“আরে না না,” নাজিম ভাই মাথা নাড়ে। “ক্যামেরা সঙ্গে ছিল আর ওই সময়ই দরজাটা খুলেছে নার্স, ছবি তুলে ফেলেছি ভিতরে।”
“এটা দিয়ে কি প্রমাণ করা যাবে?” শান্তা কাপা স্বরে জানতে চায়।
“নাহ,” রাজীব এগিয়ে এসে শান্তার কাঁধে হাত রাখে। “তবে তুমি চিন্তা কর না… আমরা আরও শক্ত প্রমাণ বার করে ফেলব। কি বলেন নাজিম ভাই?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ পারবো,” নাজিম ভাই মাথা দোলায়। “তবে তোমার সাহায্য লাগবে শান্তা। তোমার সাহায্য ছাড়া সম্ভব না।”
“আমি সাহায্য করবো,” শান্তা ঢোক গিলে সম্মতি দেয়।
“বেশ তো...” রাজীব মাথাটা ক্যাঁৎ করে। “ফয়সাল ফিরুক এইবার খুলনা থেকে… তোমায় আর বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে না শান্তা।”
“এই তুলিকে কলেজ থেকে আনতে হবে, সময় হয়ে যাচ্ছে...।” শান্তা ঘড়ির দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে। ওদিকে উঠে দাড়ায় রত্না ভাবী।
“এই নাজিম, আসো আমরা যাই - বিদেয় নেবার আগে ওরা একটু চুমু টুমু খাবে, এর মধ্যে থাকা ঠিক না...।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ চল,” নাজিম ভাই দুই হাত এক করে ঘষে। “আরেক রাউন্ড খেলেও নিতে পার তোমরা,” বলেই শান্তার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে নাজিম ভাই। তারপর স্ত্রীর সঙ্গে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। ওরা বেরোতেই রাজীব এর দিকে রাগত চোখে তাকায় শান্তা।
“ওদের ভেতরে আনলে কেন?”
“আহা - ওরা কি আর বুঝে না?” রাজীব হাসে। শান্তার দুই কাধ জাপটে ধরে চুমু খায় ওর কপালে। “ফয়সালের ঘর করে করে তুমি একদম সেকেলে গৃহবধূ হয়ে গেছো। আজকাল এসব নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামায় না বুঝলে! ছেলে-মেয়ে চুদোচুদি করবে, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।”
“হয়েছে আমায় শেখাতে এসো না,”
“ঠিক আছে বাবা ভুল হয়েছে,” কানে ধরে রাজীব। “প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে করি বল তো! একটা কাজ করি, আজ বিকেলে নীলা তো যাবে তুলিকে পড়াতে। ওকে পড়াতে বসিয়ে তুমি বেড়িয়ে এসো। তোমায় নিয়ে ঘুরাঘুরি করবো, কেনাকাটা করবো… কেমন?”
হাসি ফুটে শান্তার ঠোঁটে। মাথা ক্যাঁৎ করে সায় জানায় সে।
রিয়ান খান