08-10-2020, 05:31 PM
পর্ব ১২
১২ (খ)
“এই তো রত্না ভাবী, আমার হবু বউকে নিয়ে চলে এলাম,” রাজীব তখনো শান্তার হাত ধরে রেখেছে। শান্তার কানটা ঝা ঝা করছে। ওর মাথা কাজ করছে না। কেমন একটা ঘোর লাগা চোখে মহিলার দিকে তাকিয়ে আছে ও।
“আসো, শান্তা - ” রত্না ভাবী সরে জায়গা করে দিলো ওদের, “আমার ছোট বাসা গো, আসো আসো… লজ্জা পেতে হবে না, রাজীব তোমার কথা সবই বলেছে আমাদের।”
শান্তা সরু চোখে তাকায় রাজীব এর দিকে। ওর সাথে চোখ মেলাচ্ছে না রাজীব। হাত ছেড়ে নিজের বাসার মতন ভেতরে ঢুকে গেলো সে। খাবার টেবিল পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে টেবিল থেকে একটা আপেল তুলে নিয়ে কামড় বসাল। শান্তা ধির পায়ে ঢুকল বাসার ভেতরে। রত্না ভাবী দরজাটা লাগিয়েই শান্তার কাঁধে হাত দিলো। “আসো আসো… লজ্জা করতে হবে না, এই ঘরে আসো...।”
রত্না ভাবীর পিছু নিয়ে শান্তা বসার ঘরে ঢুকল। খানিকটা অগছালো চারিদিক। এখানে ওখানে পরনের কাপড় ছড়িয়ে আছে। ফ্যান ছেড়ে দিতেই ঘটঘট শব্দে চলতে শুরু করলো সেটা। হাতের কাছের কয়েকটা কাপড় তুলে ভাজ করলো রত্না ভাবী। বলল, “তুমি এসেছ আমি খুব খুশী হয়েছি। নিজের বাসাই মনে কর এটাকে… রাজীব এর সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আমরা পরিবারের মত। ওর তো কেউ নেই তেমন দুকূলে… তুমিই আছো এখন। আর আমরা আছি...”
“জি...” আলতো করে মাথা দোলায় শান্তা। কি বলবে বুঝতে পারছে না ও। ঘাম ঝড়ছে ওর। “আপনার… মানে আপনাদের সাথে নিশ্চয়ই অনেক দিনের পরিচয় ওর!”
“আমাদের সঙ্গেই সাবলেট থাকতো রাজীব বছর তিনেক ধরে। তারপর এখানে চলে আসার পর ও উপরের বাসাটা নিল… আমরা এটা,” রত্না ভাবী জানায়। কথা বলতে বলতেই রাজীব ঢুকে ঘরে। শান্তাকে আরও বিব্রতি কর অবস্থায় ফেলে ওর পাশেই গা ঘেঁষে বসে পরে।
“কই - তোমার মাস্টার্নি কোথায় রত্না ভাবী!”
“আহা এসেছ তোমরা, আমি চা নাস্তা দিচ্ছি… তারপর খেতে খেতেই কথা বলবা… তোমরা গল্প কর আসছি আমি,” রত্না ভাবী বেড়িয়ে যেতেই চেহারার হাসি মিলিয়ে যায় শান্তার। ও রাগত চোখ করে তাকায় রাজীব এর দিকে।
“এসব কি! তুমি এই মহিলার বাসায় নিয়ে আসছ কেন?” শান্তা ভ্রূ কুচকে জানতে চায়।
“আহা- রত্না ভাবী সবই জানে আমাদের কথা, ভয় নেই...” রাজীব মুচকি হাসি দিয়ে বলে। “আর ভাবী খুব অমায়িক লোক। তুমি একটু মিশলেই টের পাবা। এই যে তুলির জন্য আর্ট কলেজের ছাত্রী যোগার করে ফেলেছে রত্না ভাবী। চিন্তা করতে পার?”
“তাই নাকি!” শান্তা কি বলবে ভেবে পায় না। ওর হাতটা চেপে ধরে রাজীব।
“তোমায় যা দেখাচ্ছে না! ওফ… একদম পরীর মত,”
“ধেৎ,” নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয় শান্তা। ওর অস্বস্তি লাগছে। কেমন একটা পাপবোধ হচ্ছে ওর মনে। “জলদী এখানের কাজ শেষ কর... ”
“খুব চোদা খেতে ইচ্ছে করছে তাই না!” রাজীব রসিকতার সুরে বললেও গাল লাল হয়ে উঠে শান্তার।
“মোটেই না,”
“রস চলে এসেছে, দেখি...” বলতে বলতেই হাত বাড়িয়ে শান্তার পেটটা চেপে ধরে রাজীব। শান্তা দুই হাতে ওকে বাঁধা দিচ্ছে - ওমন সময়ই রত্না ভাবী চলে আসে। ওদের এমন জাপটা জাপ্টি অবস্থায় দেখে মোটেই বিব্রত হয় না। বরং সামনে বসে স্বাভাবিক স্বরেই বলে উঠে কথা।
“তোমাদের এক সঙ্গে খুব মানাচ্ছে গো...” রত্না ভাবী বলে তাদের। “বুঝলে শান্তা, রাজীবটা এখানে এলে খালি তোমার কথাই বলে… তুমি কিছু মনে কর না, আমি একটু খোলামেলাই কথা বলা পছন্দ করি। তোমার কষ্টটা আমি বুঝতে পাড়ছি গো… তোমার মনে যে কতো দুঃখ আমি ভালোই বুঝি। তোমার মত আমারও এমনটাই হয়েছিলো বুঝলে! তারপর নাজিমকে বিয়ে করে দেখো না এখন কতো সুখে আছি!”
চারপাশে তাকায় শান্তা। রত্না ভাবী সুখে আছে, তা ঠিক বিশ্বাস হতে চায় না ওর। মহিলা হাসিখুশি, ব্যাস এতটুকই। তারপরও কেউ এত গুলো কথা বললে তো আর চুপ করে বসে থাকা যায় না। অগত্যা শান্তাকে বলতেই হল; “আপনারও আগে বিয়ে ছিল?”
“হ্যাঁ,” জবাবটা রাজীবই দেয়। “ভাবীর আগের স্বামী অনেক নির্যাতন করতো ভাবীর উপর। তারপর ছাড়াছাড়ি হয়ে নাজিম ভাই এর সাথে বিয়ে করেছে রত্না ভাবী। তা বছর চারেক হয়ে গেলো তাই না!”
“হ্যাঁ,” মাথা দোলায় রত্না ভাবী। “আর বল না বুঝলে… আমি...”
কিন্তু আর কিছু বলার আগেই ঘরে একটা মেয়ে ঢুকল। বয়স বেশী না, একুশ কিংবা কুড়ি হবে। শ্যামলা চেহারা, লিকলিকে গড়ন। কিন্তু চেহারাটা বড্ড মায়াবী। বড়বড় দুটো ডাগর চোখ কাজল দেয়াতে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। ঢুকেই হাসি মুখে রাজীবকে জিজ্ঞাসা করলো; “এই রাজীব ভাই - তোমাকে না বলসি কালকে সন্ধ্যায় থাকতে!” মুহূর্তেই মেয়েটা তাকায় শান্তার দিকে। “আপনি নিশ্চয়ই শান্তা ভাবী… ওফফ - কি সুন্দরী আপনি! তাই তো বলি রাজীব ভাই আপনার প্রেমে হাবুডুবু কেন খাচ্ছে!”
“ওর নামই...” রাজীব বলতে গেলে বাঁধা পায়।
“আমার নাম নীলা, স্রেফ নীলা - নিলাঞ্জনাও ডাকতে পারেন আপনি চাইলে...” মেয়েটার মাঝে কিশোরী সুলভ আচরন প্রকট। এগিয়ে এসে সোজা বসে পড়লো সামনের সোফাতে। শান্তা খেয়াল করলো মেয়েটির বা হাতে অনেক গুলো সুতোর বাঁধা। “আপনার মেয়ে কোথায়? আমার ছাত্রী!”
“তুমিই তাহলে আর্ট শেখাবে?” শান্তা একবার রাজীব এর দিকে তাকায়। ওদের গল্প করতে বলে রত্না ভাবী উঠে চলে যায় চা নাস্তা আনতে। শান্তার প্রশ্নের জবাবে মাথা দোলায় নীলা।
“আমার দুটো ছাত্রী আছে, ওরা অবশ্য বড়… একজন ক্লাস নাইনে পড়ে আর একজন সেভেনে।” নীলা বলল তাকে। “রাজীব ভাই এর রিকুয়েস্টে আপনার মেয়েকে এক সপ্তাহে একদম আর্টিস্ট বানিয়ে দেবো দেখবেন!”
“না না এত কিছু লাগবে না,” মাথা নাড়ে শান্তা। “ওর পরিক্ষার আর্ট গুলো শিখিয়ে দিতে পারলেই হল,”
“ওই হল, সব শিখিয়ে দেবো...”
“টাকার ব্যাপারটা!” বলেই শান্তা রাজীব এর দিকে ফিরল।
“তোমার কিছু দিতে হবে না, আমিই দিয়ে দিবো। নীলার সাথে আমার কথা আছে ওভাবে,” রাজীব এর কথায় বিস্মিত হয় শান্তা। প্রতিবাদ করতে গেলে ওর হাত চেপে ধরে রাজীব। “আহা - তুলি কি আমার মেয়ে না এখন!”
“কিন্তু...।”
“ওফফ কি প্রেম গো! আমি আর সহ্য করতে পাড়ছি না,” নীলা নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠে দাড়ায়। খিলখিল করে হাসছে মেয়েটা। পরিবেশটা শান্তার কাছে অনেকটাই সহজ হয়ে উঠে। নীলা বলে, “রাজীব ভাই আপনি আমাকে বাসার এড্রেসটা চিনিয়ে দিয়েন… আমার এখন কলেজে যেতে হবে,”
“ওহ হ্যাঁ,” মাথা দোলায় রাজীব। “শুন শান্তা, তুমি আর চিন্তা কর না তাহলে, রোজ বিকেলের দিকে নীলা গিয়ে তুলিকে পড়িয়ে আসবে। এক দুই- তিন চার যত ঘণ্টাই লাগুক সমস্যা নেই, একদম শিখিয়ে আসবে তুলি।”
“ঠিক আছে তাহলে এই কথাই রইলো!” শান্তা মাথা দোলায়।
নীলা ওদের কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে বেড়িয়ে গেলে শান্তা ফিরে রাজীব এর দিকে। “মেয়েটা কে?”
“এখানে সাবলেট থাকে,” বলল তাকে রাজীব। “আর্ট কলেজে পড়ে। বগুড়াতে বাড়ি… বেশ ভালো মেয়ে,”
“ওহ...” শান্তা আর ভাবে না এই ব্যাপারে। রাজীব নিশ্চয়ই সব দিক গুছিয়ে নিয়েছে। রত্না ভাবী চা নাস্তা নিয়ে চলে আসে। তার সঙ্গে কথায় মেতে উঠে ওরা আবার।
চা নাস্তার পাট শেষ হতেই রাজীব উঠে দাড়ায়। অবলীলায় রত্না ভাবীকে বলে, “ভাবী, তুমি থাকো তাহলে। আমি একটু শান্তাকে নিয়ে আমার ঘরে যাচ্ছি, কেমন?”
শান্তার ভীষণ লজ্জা করে উঠে। ও রত্না ভাবীর চোখের দিকে তাকাতে পারে না। নিজের পায়ের দিকে চেয়ে থাকে। ওর লজ্জাটা আঁচ করে রত্না ভাবী বলে উঠে; “তুমি যাও, শান্তা তো আর হাড়িয়ে যাবে না… আমি দুটো কথা বলি ওর সঙ্গে। এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি, চিন্তা কর না...”
রাজীব আর দাড়ায় না। শান্তার দিকেও তাকায় না। আপন মনে হেলে দুলে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে। দরজা লাগাবার শব্দ শুনে শান্তা বুঝতে পারে বেড়িয়ে গেছে বাসা থেকে রাজীব। রত্না ভাবী খানিকটা ঝুকে আসে ওর দিকে। গলার স্বরটা নামিয়ে বলে, “তুমি একদম দুশ্চিন্তা কর না শান্তা। একজন নারী হিসেবে আমি বুঝতে পাড়ছি তোমার মনে কি চলছে… তুমি মারাত্মক একটা কষ্টের সময় পার করছ। স্বামী যখন প্রতারণা করে, নির্যাতন করে - তখন নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হয় শান্তা। একলা মনে হয়। কিন্তু তুমি একলা না শান্তা। রাজীব আছে, তোমার মেয়ে আছে, আমরা আছি। যখন একটা খুটি ভেঙ্গে যায় তখন মানুষ আরও কয়েকটা খুটি আকড়ে ধরে। আগের থেকে আরও মজবুদ খুটি আকড়ে ধরে। রাজীব তোমায় খুব ভালোবাসে শান্তা। তাকে মন খুলে দাও সব কিছু… লজ্জা কর না,”
“না না আমি লজ্জা করছি না,” মাথা নাড়ে শান্তা। “আসলে - এভাবে কারও সঙ্গে অনেক দিন আমি মেলামিশা করি না তো!”
“আমি বুঝতে পাড়ছি,” মাথা দোলায় রত্না ভাবী। “ওসব নিয়ে তোমায় আর ভাবতে হবে না। আমরা তো আছি এখন… যত দ্রুত সম্ভব তোমার স্বামীর বীরুধে প্রমাণ সংগ্রহ করে ডিভোর্সটা নিয়ে ফেল। তারপর রাজীব এর সাথে বিয়ে করে এখানে চলে আসবা। আমরা সুন্দর একটা পরিবার হয়ে থাকবো।”
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,”
“আর এর মধ্যে সংকোচ কর না,” রত্না ভাবী ওর হাতটা চেপে ধরে ঝুকে। “আমিও তো তোমার সময়টা পার করেছি। জানি আমি। পুরুষ সঙ্গীর আদর পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে এই সময় মনটা। আমার জন্য লাজ লজ্জা করতে হবে না তোমায়। যখন মন চাইবে চলে আসবে এখানে। আমরা তো আর বাচ্চামানুস নই। বুঝি যে শরীর যদি সুখী থাকে, মনটাও সুখী থাকে।”
“ধন্যবাদ...” শান্তা আর কি বলবে ভেবে পায় না। ওর বুকটা ধুকধুক করছে।
“যাও রাজীব এর সঙ্গে মন খুলে প্রেম কর গিয়ে এখন….. চিন্তার কিছু নেই, আমার কাছে লজ্জা পেতে হবে না...”
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে দাড়ায় শান্তা। মনে একটা প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ে ওর। ব্যাকুল হয়ে উঠে ভেতরের সত্ত্বাটা প্রেমিকের সঙ্গে মিলিত হতে।
রিয়ান খান