Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
পর্ব ২৯ (#০৬)

ঠিক সেই সময়ে পায়েল অফিস থেকে একাই ফিরে আসে। ওকে দেখে অনুপমা ওকে মা বাবার সাথে ব্যাঙ্গালোর যেতে বলে। পায়েল সেই শুনে খুব খুশি হয় সেই সাথে অনুপমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে যে দেবায়ন নিশ্চয় ঠিক হয়ে ওর কাছে ফিরে আসবে। শ্রেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে পায়েল ওকে জানায়, কিছু আগে রূপকের নামে অফিসে কুরিয়ারে একটা চিঠি আসে। সেই চিঠি পড়ে রূপক আর শ্রেয়া তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে যায়। খবর শুনে অনুপমা ওকে ওই চিঠির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে।
পায়েল ওর হাতে একটা সাদা খাম দিয়ে জানায়, “এই খামটা আসার পরেই শ্রেয়া আর রূপক বেড়িয়ে পড়েছে। তুই অহেতুক চিন্তা করে শরীর খারাপ করবি তাই রূপক তোকে জানাতে বারন করেছিল। তুই চিন্তা করসি না, রূপক ঠিক ওই আততায়ীকে খুঁজে বের করবে। তুই আমাদের সাথে ব্যাঙ্গালোর চল।”
সাদা খামের মধ্যে কাগজটা হাতে ধরে দেখে অনুপমা। একটা সাদা কাগজে ইংরেজি হরফে কম্পিউটার প্রিন্টে লেখা, “যদি দেবায়নের আততায়ীর খবর জানতে চাও তাহলে পঞ্চাশ লাখ টাকা নিয়ে কাল ভোরের মধ্যে লাভা পৌঁছাও। একা আসবে, কাউকে সাথে নিয়ে এলে বিপদ।”
অনুপমা চোখের জল মুছে দৃঢ় কণ্ঠে ওকে বলে, “না আততায়ীকে খুঁজে ওকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না রে।” ওর হাতে হাত রেখে বলে, “আমার কিছু কাজ আছে পায়েল। তুই মায়ের সাথে ব্যাঙ্গালোর যা। আমি একটা শেষ চেষ্টা করে দেখি যদি আততায়ীর আসল পরিচয় জানা যায়।”
অঙ্কন বাড়ি এলে, বিকেলের মধ্যে সোমেশ বাবু পারমিতা, পায়েল আর অঙ্কনকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ফাঁকা বাড়িতে থাকতে একদম ভালো লাগে না অনুপমার। ধৃতিমানের বিষয়ে এখন কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। নিবেদিতার ওপরে সন্দেহ করেছিল ওর কাছে একবার যাওয়া উচিত। সাত পাঁচ ভেবে গাড়ি নিয়ে নিবেদিতার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে অনুপমা।
পথে যেতে যেতে রূপককে ফোন করে, “তুই কোথায়?”
রূপক গাড়ি চালাচ্ছিল তাই শ্রেয়া ফোন উঠিয়ে উত্তর দেয়, “কেমন আছিস তুই?”
অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা কোথায়?”
শ্রেয়া উত্তর দেয়, “এই একটু বেড়িয়েছি, কাল বিকেলের মধ্যে ফিরে আসব।”
অনুপমা ধরা গলায় বলে, “আমাকে জানাতে দোষ? পায়েল আমাকে সব বলেছে।”
শ্রেয়া ওকে উত্তর দেয়, “নারে সোনা, তুই একা নস। আমরা সবাই মিলে ঠিক দেবায়নের আততায়ীকে খুঁজে বের করব। তুই একটু বিশ্রাম কর আমরা কাল বিকেলের মধ্যে কোলকাতা ফিরে এসে তোকে সব কিছু জানাব।”
অনুপমা ওদের সাবধানে যেতে বলে দেয় আর লাভা পৌঁছে যেন একটা ফোন করে বলে জানিয়ে দেয়। শ্রেয়া জানিয়ে দেয় ওরা সাবধানেই যাবে বলে ফোন রেখে দেয়। অনুপমা ভাবতে বসে কি ভাবে নিবেদিতার সামনে যাবে। বাবা আর নিবেদিতার সম্পর্কের বিষয়ে জানার পরে ওর সামনে দাঁড়ানো ওর পক্ষে যথেষ্ট কষ্টকর। নিবেদিতা এতদিন হাসিমুখে ওর সাথে বান্ধবীর মতন ব্যাবহার করে গেছে। এর মূলে দেবায়নের মাথা ছিল সেটা অনুপমা এতদিন জানত না, আর অহেতুক দেবায়ন আর নিবেদিতার মাঝের এক বিতর্কিত সম্পর্কের আভাস খুঁজে বেড়াচ্ছিল বলে নিজেকে ধিক্কার দেয়।
এমন সময়ে ওর কাছে পরাশরের ফোন আসে, “তুই কোথায়? আজকে আমার বাড়িতে আসার কথা ছিল তোর। বেশ কিছু খবর পাওয়া গেছে।”
অনুপমা উৎসুক হয়ে ওঠে, “কি খবর?”
পরাশর উত্তর দেয়, “আজকে কাকা ঘনসিয়ালির পুলিস ইনস্পেকটর রোহনকে ফোন করেছিল। যে ছেলেটা সেই রাতে দেবায়নকে ডাকতে এসেছিল, সেই ছেলেটার লাশ পাওয়া গেছে জঙ্গলের মধ্যে। তবে ওই ছেলেটার পরিচয় পাওয়া গেছে কিন্তু তাতে বিশেষ কিছুই লাভ হয়নি। ওই ছেলেটা ওই এলাকার ছেলে। রঞ্জিতের সাথেও কথাবার্তা বলেছে কাকু। আমরা যে সব জিনিস পত্র ওই জঙ্গল থেকে নিয়ে এসেছিলাম সেই গুলো নিয়ে তুই যদি একবার বাড়িতে আসিস তাহলে বেশ ভালো হয়।”
অনুপমা ওকে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখুনি তোর বাড়িতে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ এইদিকে আরও একটা ব্যাপার হয়েছে। কেউ একজন আজকে অফিসে রূপকের নামে একটা কুরিয়ার করে চিঠি পাঠিয়ে বলেছে যে সে নাকি দেবায়নের আততায়ীর খবর জানে। তাই শ্রেয়া আর রূপক লাভার জন্যে বেড়িয়ে গেছে।”
পরাশর খানিকক্ষণ ভাবার পরে বলে, “রূপকের নামে চিঠি? ঠিক মিলছে না। হঠাৎ রূপকের নামে কেন চিঠি পাঠাতে যাবে? তুই কি সেই চিঠি দেখেছিস?”
অনুপমা উত্তরে জানায়, সেই চিঠি ওর হাতে। বাড়ি ফিরে যে সব জিনিসপত্র জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছিল সেই সব নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের বাড়ি পৌঁছে যাবে। গাড়ির ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলে। বাড়ি থেকে প্লাস্টিক ভর্তি জিনিসপত্র গুলো নিয়ে পরাশরের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নিবেদিতার বাড়ি আর এই যাত্রায় যাওয়া হয় না।
পরাশরের বাড়ি যাওয়ার পথে নিজেই একবার সেই চিঠি খুলে দেখে। বারেবারে পড়েও বিশেষ কিছুই উদ্ধার করতে পারে না। তারপরে ওর মনে হয়, হঠাৎ এই চিঠি রূপকের নামে কেন এসেছে? আততায়ী কি রূপককে চেনে? যদি আততায়ী রূপক আর দেবায়ন দুই জনকে চেনে তাহলে ওদের অফিসের লোক ছাড়া অন্য কেউ হতে পারে না। কারন রূপক যাদবপুর থেকে পাশ করেছে আর দেবায়ন অন্য একটা কলেজ থেকে পাশ করেছে। দুইজনের দেখা সাক্ষাৎ শুধু মাত্র এই অফিস ছাড়া আর কোথাও নয়। আততায়ী নিশ্চয় এই দুইজনার ওপরে প্রতিশোধ নিতে চায়। সেই রকম হলে একমাত্র ইন্দ্রনীলকে সন্দেহ হয় কিন্তু ইন্দ্রনীল অনেকদিন থেকেই দেশে আসেনি আর মিস্টার হেরজোগ খবর নিয়েছেন যে ইন্দ্রনীল বর্তমানে লন্ডনে। ইন্দ্রনীল ছাড়া দ্বিতীয় ব্যাক্তি যার সাথে দেবায়ন আর রূপকের শত্রুতা হতে পারে সে মানুষ সূর্য। কিন্তু রূপক খবর নিয়ে দেখেছে যে সূর্য সেই সময়ে কোলকাতায় ছিল আর ওর এই কাজ করার ক্ষমতা নেই।
খাম খানা উল্টে পাল্টে দেখে অনুপমা। কোথা থেকে এসেছে সেটা একমাত্র অফিসের রেজিস্টারে খুঁজে পাওয়া যাবে। রাত হলেও সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ড্রাইভারকে অফিসে নিয়ে যেতে বলে। অত রাতে অফিসে শুধু মাত্র নেটওয়ার্কের ছেলেরা ছাড়া আর কেউ ছিল না। গার্ড ওকে দেখে রীতিমতন অবাক হয়ে যায়। অনুপমা রিসেপসানে বসা গার্ডের কাছে কুরিয়ারের রেজিস্টার চেয়ে ওই চিঠির ঠিকানা খুঁজে বের করে। চিঠিটা দুই দিন আগে, লাভা থেকে রূপকের নামে পাঠানো হয়েছে। এই চিঠি আততায়ী নিজেই পাঠিয়েছে, নিশ্চয় এইবারে রূপকের ওপরে হামলা করবে। খাটলিং, লাভা সব পাহাড়ি এলাকা খুঁজেছে আততায়ী। বেশ বুদ্ধি ধরে যাতে নির্জনে আততায়ী নিজের কাজ হাসিল করতে পারে। অফিসের কারুর সাথে দেবায়ন আর রূপকের একত্রে শত্রুতা হতে পারে না তবুও একবার সন্দেহ দুর করার জন্য মনীষাকে জিজ্ঞেস করা। সঙ্গে সঙ্গে অনুপমা মনীষাকে ফোন করে জানতে চায় ওদের অফিসের কেউকি লম্বা ছুটিতে গেছে? মনীষা উত্তর দেয়, কেউই লম্বা ছুটিতে যায়নি। আরো জানায় যেদিন দেবায়নের এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেদিন অফিসে সবাই এসেছিল।
সঙ্গে সঙ্গে অনুপমা, আবার শ্রেয়াকে ফোন করে। বার কতক ফোন বেজে যাওয়ার পরে শ্রেয়া ফোন উঠিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে কি হয়েছে?”
অনুপমা উদ্বেগজনিত কণ্ঠে ওকে বলে, “তোরা এখন কোথায়?”
শ্রেয়া বলে, “এই বহরমপুর পেরিয়েছি। কেন কি হয়েছে?”
অনুপমা উত্তর দেয়, “তোরা লাভা যাস নে। ওই চিঠি আততায়ী নিজে লিখেছে যাতে রূপককে মারতে পারে। তোরা ফিরে আয় এখুনি ফিরে আয়।”
শ্রেয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “মানে? না আমরা এর শেষ দেখে তবেই ফিরব। যদি আততায়ী নিজেই দেখা করতে চেয়েছে তাহলে ওকে শেষ করেই ফিরব। তুই চিন্তা করিস না অনু…..”
অনুপমা কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করে, “প্লিস শ্রেয়া, আমার কথা শোন। আমি জানি তোরা সবাই দেবায়নের জন্য চিন্তিত কিন্তু এই আততায়ী দেবায়ন আর রূপক, দুইজনের শত্রু। আততায়ী দুইজনকে মারতে চায় তাই ত আর কারুর নামে চিঠি পাঠায়নি শুধু মাত্র রূপকের নামে পাঠিয়েছে। প্লিস আমার কথা শোন তোরা ফিরে আয়।”
শ্রেয়া উত্তর দেয়, “ঠিক আছে আমরা ফিরে আসছি। কাল সকালে দেখা হবে।”
কিছুক্ষণ ভেবে অনুপমা বলে, “না তোরা আমার জন্য বহরমপুরে অপেক্ষা কর। আমি আসছি আর দেরি করলে চলবে না, হাতেনাতে আততায়ীকে ধরতে হবে এইবারে।”
শ্রেয়া জানিয়ে দেয় ওরা অনুপমার জন্য বহরমপুরে অপেক্ষা করে থাকবে। অনুপমা সঙ্গে সঙ্গে পরাশরকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ও বহরমপুরের জন্য যাত্রা করছে। পরাশর সঙ্গে যেতে চাইলে জানায় ওকে পথে উঠিয়ে নেবে। পরাশরকে উঠাতে গিয়ে ওর কাকা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইনস্পেক্টর নিরঞ্জন বাবুর সঙ্গে দেখা হয়। নিরঞ্জন বাবু জানিয়ে দেন তিনি তার টিম নিয়ে ওদের পেছনে থাকবে। অনুপমা আর পরাশর গাড়িতে উঠে যাত্রা শুরু করে দেয়। ওদের অনেকদিনের ড্রাইভার, কমল এতদিনে বুঝে গেছে দেবায়নের কি হয়েছে। গাড়ির ড্রাইভার তীর বেগে গাড়ি ছুটিয়ে দেয়।
অনুপমা পরাশরকে বলে, “আমরা এতদিন ভুল পথে তদন্ত করছিলাম। আমাদের শেষের দিক থেকে তদন্ত না শুরু করে শুরুর দিক থেকে তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল। আসল তদন্তের সব কিছু তোমার হাতের কাছে। দেখা যাক আমরা কি কি খুঁজে পেয়েছি।”
অনুপমা সিটের ওপরে প্লাস্টিকের ব্যাগ রেখে জঙ্গল থেকে আনা জিনিস পত্র গুলো এক এক করে খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করে দেয়। সিগারেট প্যাকেট দেখে পরাশরকে বলে, “আততায়ী বেশ বড়লোক না হলে ক্লাসিক রেগুলার খায় না।” কয়েকটা কাগজের টুকরো ঘেঁটে দেখে বলেন, “আততায়ী এই কোলকাতার লোক, এই দেখ।” বলে একটা খবরের কাগজের টুকরো পরাশরের হাতে ধরিয়ে কোনার দিকে দেখিয়ে বলে, “এটা স্টেটসম্যান কাগজ। গ্রামের লোকটা বলেছিল যে আততায়ী পাঞ্জাবী কিন্তু আততায়ী বাঙ্গালী আর নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য পাঞ্জাবী সেজেছে। আততায়ী আমাদের ওই খাটলিং যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল। রূপকের ইমেল গুলো যদি চেক করা যায় তাহলে আই পি এড্রেস পাওয়া যাবে।” কুরিয়ারের চিঠিটা হাতে নিয়ে ভালো ভাবে দেখে বলে, “হুম, এই চিঠি লাভা থেকে পাঠানো হয়েছে। ওইখানে এই কুরিয়ার কোম্পানির আউটলেট খুব কম হবে নিশ্চয়। এই চিঠির ডকেট নাম্বার দেখালে অনায়াসে দুই দিন আগে কে এই চিঠি পাঠিয়েছে সেটা জানা যাবে। আততায়ীর একটা চেহারা পাওয়া যাবে। লাভা খুব ছোট জায়গা, আততায়ীকে দিনের আলোতে খুঁজে বের করতে আমাদের বিশেষ অসুবিধে হবে না।”
পরাশর অবাক হয়ে অনুপমার তারিফ করে বলে, “তুই একেবারে শার্লক হোমস হয়ে গেছিস দেখছি।”
অনুপমা স্মিত হেসে মাথা দোলায়, “না রে অতদুর সাগর পাড়ে কেন যাচ্ছিস। আমাদের গড়পার ফেলুদা হতে একটু চেষ্টা করছি আর তুই আমার তোপসে।”
কমল হুহু করে গাড়ি চালিয়ে রাত বারোটার মধ্যে বহরমপুরে পৌঁছে যায়। ওদের দেখে রূপক আর শ্রেয়া ওদের থেমে যাওয়ার কারন জিজ্ঞেস করে। অনুপমা বিস্তারে সব কিছু খুলে বলার পরে ওরা সবাই আবার যাত্রা শুরু করে দেয়। কমল, রূপকের গাড়ি চালায় আর ওরা চারজনে অনুপমার গাড়ি করে লাআভ্র উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পেছনে নিরঞ্জন বাবু একটা গাড়িতে কয়েক জন সাদা পোশাকের পুলিস নিয়ে ওদের অনুসরন করেন। সবার মধ্যে টানটান চাপা উত্তেজনা কারুর চোখে মুখে ক্লান্তির লেশ মাত্র নেই। রূপক চরম ক্ষোভে এক প্রকার গজগজ করতে করতে দ্রুত বেগে গাড়ি চালায়।
অনুপমা শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তুই অত টাকা পেলি কোথা থেকে রে?”
শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, “সেটা নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছিস কেন। তোর জন্য সব কিছু দিতে রাজি।”
অনুপমার দুই চোখ ছলকে ওঠে, “একবার আমাকে জানাতে পারলি না?”
শ্রেয়া ওর গালে আলতো চাপড় মেরে বলে, “তুই ও আমাদের দেবুর ব্যাপারে জানাস নি তাই না? তোর মাথার অবস্থা আমি বুঝি রে অনু। ছাড় সেই সব কথা এখন ওই আততায়ীকে ধরাটা আমাদের আসল উদ্দেশ্য।”
ভোরের দিকে জলপাইগুড়ি হয়ে ওদের গাড়ি লাভার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শিলিগুরি থেকে সেবক রোড ধরে। কমল জানায়, কালিম্পং হয়ে লাভা যাওয়ার চেয়ে গরুবাথান হয়ে লাভা পৌঁছাতে অনেক সহজ তাই ওরা মালবাগান টি এস্টেটের রাস্তা ধরে গরুবাথান হয়ে সকাল এগারোটা নাগাদ লাভা পৌঁছে যায়। এই লাভাতেই ওদের জন্য আততায়ী অপেক্ষা করে আছে। গাড়ি থেকে নেমে ওরা চারপাশ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে করতে এগোতে থাকে। সাদা পোশাকে নিরঞ্জন বাবু ওদের সাথে থাকেন। আড়াল থেকে নিশ্চয় আততায়ী ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। কেননা ওই চিঠিতে লাভার কোথায় দেখা করতে হবে সেটা কিছুই জানায় নি আততায়ী। তার অর্থ, আততায়ী নিশ্চয় এইবারে ওদের সাথে যোগাযোগ করে জানাবে কোথায় দেখা করতে চায়। কিন্তু ওদের দেরি দেখে নিশ্চয় আততায়ী সতর্ক হয়ে গেছে।
কুরিয়ার কোম্পানির আউটলেট খুঁজে পেতে ওদের বেশি দেরি লাগে না। চিঠি আর ডকেট নাম্বার দেখতেই কুরিয়ার নেওয়ার মেয়েটা খাতা দেখে জানায় যে তিন দিন আগে একজন এই চিঠিটা দুপুর বেলায় কুরিয়ার করেছে। নিরঞ্জন বাবু মেয়েটাকে বলেন এটা খুনের কেস এবং নিজের পরিচয় দিয়ে ওই লোকটার বিষয়ে জানতে চান। মেয়েটা জানায় যে লোকটা কোন পাঞ্জাবী নয়, তিনি দাড়ি গোঁফ ওয়ালা একজন বাঙ্গালী '., নাম মহম্মদ ইকবাল হোসেন। রেজিস্টার খুঁজে ইকবালের মোবাইল নাম্বার ওদের লিখে দেয়। নিরঞ্জন বাবু ওই মোবাইল নাম্বারে ফোন করে দেখেন মোবাইল নাম্বার ভুয়ো। তার অর্থ এই নাম এই বেশ ভুষা সব মেকি। মেয়েটা আরো জানায় যে আগন্তুকের বয়স পঞ্চাসের কাছাকাছি, মাঝারি গড়ন, ঘন ঘন সিগারেট খান। ওদের কুরিয়ার কোম্পানির সামনে একটা চায়ের দোকানে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিল তারপরে এদিক ওদিক দেখে অনেক ওরে ওদের দোকানে কুরিয়ার করতে ঢুকেছিল। মেয়েটার দেওয়া আগন্তুকের বিবরন অনুযায়ী একটা ছবি আঁকে রূপক। সেই ছবি দেখে মেয়েটা জানায় যে আগন্তুক অনেকটা এই ছবির মতন দেখতে। একটা ছবি যখন পাওয়া গেছে তাহলে এইখানে খুঁজে বের করতে বিশেষ অসুবিধে হবে না ওদের। ওই ছবিটার বেশ কয়েকটা জেরক্স করিয়ে নিয়ে নিরঞ্জন বাবু তার সাথে আসা সাদা পোশাকের অফিসারদের হাতে দিয়ে আশে পাশের হোটেল গুলোতে খোঁজ নিতে বলেন।
খুঁজতে খুঁজতে একটা হোটেলের লোকের কাছ থেকে জানতে পারে যে এই রকম দেখতে একজন দুই দিন আগে ওদের হোটেল ছিল। তবে সেই আগন্তুকের নাম মহম্মদ ইকবাল নয়, তার দাড়ি গোঁফ ছিল না, তিনি একজন বাঙ্গালী, নাম রাজেশ সেন। অনুপমা চমকে ওঠে, এই নাম ওর প্রয়াত জেঠুর নাম। কিন্তু জেঠু প্রায় কুড়ি বছর আগে মারা গেছেন।
নিরঞ্জন বাবু অনুপমাকে শান্ত করে বলেন, “অত চমকে যাওয়ার কিছু নেই অনুপমা। এটা নিতান্ত কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে। এখন পর্যন্ত যা যা নামধাম পাওয়া গেছে তার সবটাই ভুয়ো, সুতরাং এই হোটেলে যে ঠিকানা অথবা নাম আগন্তুক লিখিয়ে গেছে সেটাও ভুয়ো হবে। তবে লাভা বেশি বড় জায়গা নয় আততায়ীকে খুঁজে বের করতে আমাদের বিশেষ বেগ পেতে হবে না।”
হোটেলের লোকের কাছ থেকে আগন্তুকের ছবি চায় নিরঞ্জন বাবু। ছবি দেখে চমকে যাওয়ার পালা এইবারে নিরঞ্জন বাবুর। ছবি হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দেখার পরে তিনি অবাক হয়ে বলেন, “এই লোক?” এই বলে তিনি অনুপমার হাতে ছবি ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “চিনতে পারছ একে?”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “না, এই ব্যাক্তিকে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।”
নিরঞ্জন বাবু স্মিত হেসে বলেন, “হুম, তোমার না চেনার কথা তবে রূপক আশা করি চিনতে পারবে।” বলে রূপকের হাতে ছবি ধরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “কি রূপক চিনতে পারছ?”
রূপক মাথা নাড়ায়, “ঠিক মনে পড়ছে না।”
নিরঞ্জন বাবু বলেন, “ভুলে গেলে একে? তোমাকে আর দেবায়নকে খুন করার এনার কাছে সব থেকে বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। তোমাকে এই আগন্তুক রাস্তায় মেরে ফেলতে চেয়েছিল এই লাভাতে নয়। তাই ওই চিঠিতে লাভার কোথায় দেখা করতে হবে সেটা লেখা নেই। তোমাকে সকালে এই জায়গায় আসতে বলার একটা মাত্র কারন কেননা সকালের দিকে রাস্তায় কুয়াশা হয়, পাহাড়ি রাস্তায় কুয়াশার মধ্যে গাড়ি চালানো দুঃসাধ্য। তোমার গাড়িকে খাদে ফেলে দুর্ঘটনার রূপ দিয়ে দিত আততায়ী, তুমি জানতে পারতে না কে তোমাকে মারল। আমি হলফ করে বলতে পারি আততায়ী আমাদের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করেছিল কিন্তু সাধারণত সব মানুষ কালিম্পং হয়ে লাভা আসে। যেহেতু আমরা গরুবাথান হয়ে লাভা এসেছি সেই জন্য আততায়ী আর সুযোগ পায়নি আক্রমন করার। চল এইবারে আআদের বেড়িয়ে পড়তে হবে। আততায়ী ট্রেনে করে ফিরবে বলে মনে হয় না, নিশ্চয় প্লেন ধরবে। বাগডোগরা গিয়ে প্যাসেঞ্জার লিস্ট দেখলেই বোঝা যাবে।”
রূপক বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পরে চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে বলে, “আচ্ছা এইবারে চিনেছি কে। শালা এইবারে আর আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না।”
অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “কে এই লোক?”
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 08-10-2020, 12:36 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)