07-10-2020, 03:15 PM
সকাল বেলা পরাশরের ফোনে ওর ঘুম ভাঙ্গে। অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছিল, তাই ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায়। পরাশর জানায় গত রাতে কাকুর সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। ওর কাকা একবার অনুপমার সাথে দেখা করতে চায়। অনুপমা জানিয়ে দেয়, বিকেলের দিকে দেখা করবে। এখন নিজের বাড়িতে যেতে চায়। নিজের ব্যাগ গুছিয়ে, ব্যাঙ্গালোর ফোন করে মামনি আর দেবায়নের খবর নিয়ে নেয়। তারপরে বাড়িতে প্রথমে মাকে ফোন করে।
পারমিতা ওর ফোন পেয়েই প্রশ্ন করে, “এতদিন একটা খবর নেই। পরাশরকে ফোন করলে ঠিকঠাক উত্তর পাওয়া যায়না, তুই আমাদের কি ভেবেছিস? আমরা কি তোর পর যে আমাদের ফোন উঠাস না?”
মায়ের এই উদ্বেগজনিত কণ্ঠস্বরকে ক্ষান্ত করে উত্তর দেয়, “পর নয়, তবে…..” মনে পড়ে যায়, কেউ জানে না দেবায়নের বিষয়ে সুতরাং সেই বেদনা ভাঙ্গা হৃদয় সবার সামনে প্রস্তুত করতে হবে। ধরা গলায় বলে, “মা….. ওকে…..”
পারমিতা আশঙ্কা ব্যাক্ত করে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে? তুই কোথায়? দেবায়ন…..”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলে, “না খুঁজে পাইনি। আমি এয়ারপোর্টে, একটু পরেই বাড়ি আসছি।”
পারমিতা মেয়েকে কি সান্ত্বনা দেবে ভেবে পায়না, “আচ্ছা….. আয়….. মনে হয় এটা আমাদের অদৃষ্টে ছিল, হয়ত আমাদের পাপের ফল যে ছেলেটা এইভাবে চলে গেল।”
দাঁতে দাঁত পিষে নিজের মনের ভাব সংবরণ করে নেয় অনুপমা, কার পাপের ফল জানা নেই তবে যদি বাবা অথবা রূপক দোষী হয় তাহলে ওর অনুপমা মরেও শান্তি পাবে না। তবে এই দুইজনার দিকে আঙ্গুল তোলার আগে ভালো ভাবে খুঁটিয়ে বিচার করে দেখতে হবে।
সকালের দিকেই ট্যাক্সি ধরে সোজা বাড়ি পৌঁছায় অনুপমা। ওকে দেখে পারমিতা, পায়েল অঙ্কন সবাই দৌড়ে আসে। ওর বাবা সেদিন আর অফিসে যায়না। মেয়েকে এই ভাবে ভেঙ্গে যেতে দেখে পারমিতার বুক ফেটে যায়। অনুপমা কি করবে ভেবে পায় না। বাবার চেহারায় কঠিন চিন্তার ছাপ, মেয়ের এই অভাবনীয় কষ্ট দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে। মনের এক কোনায় প্রশ্ন জাগে, বাবাও কি ওর মতন মুখোশ এঁটে না সত্যি মেয়ের জন্য চিন্তিত।
সবাই ওকে চেপে ধরে জানার জন্য। অনুপমা মিথ্যে গল্প বানিয়ে ওদের জানায় ঘুট্টুতে, ঘনসিয়ালিতে বিভিন্ন জায়গায় অনেক খুঁজেছে, এমন কি রেপ্লিং করে খাদের মধ্যে নেমে নদীর দুই পাড়ে অনেকদিন ধরে তল্লাসি করেও দেবায়নের সন্ধান পাওয়া যায়নি, এমন কি আততায়ীর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ঘনসিয়ালির পুলিসের কাছে এফ.আই.আর করা আছে, পুলিস আস্বাস দিয়েছে যে সেই ছেলেটার খোঁজ পেলে ওদের খবর দেবে।
এই গল্প বলার সময়ে বারেবারে ওর সাথে পায়েলের চোখাচুখি হয়ে যাচ্ছিল। মনে হয় পায়েল কিছু বলতে চায় অথবা পায়েল হয়ত ওর মিথ্যে গল্প ধরে ফেলেছে। শ্রেয়া যে ইন্দ্রনীলের সাথে ছলনার খেলা খেলেছিল সেটা পায়েল জানত কিন্তু ওকে বলেনি, হতেও পারে এইবারে পায়েল অনেক কিছু জানে কিন্তু ওকে বলার কিছু সময় পায়নি। বাবা, মাকে সব ঘটনা বলার পরে পায়েল কে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে অনুপমা। ওকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়েই পায়েল ওকে জড়িয়ে ধরে দুঃখ প্রকাশ করে কেঁদে ফেলে। অনুপমা কাকে সান্ত্বনা দেবে ঠিক করে উঠতে পারে না, পায়েল কে সত্যি বলবে কি না সেটাও ভেবে উঠতে পারে না।
পায়েল ওকে বলে, “তুই চলে যাওয়ার পর থেকে শ্রেয়া আর রূপক বসে নেই জানিস।”
আবার ওর অবাক হওয়ার পালা, প্রশ্ন করে অনুপমা, “মানে?”
পায়েল উত্তর দেয়, “তুই ঘুট্টু চলে গেলি, আর শ্রেয়া আর রূপক সোজা জলপাইগুড়ি গিয়েছিল সূর্যের খবর নেওয়ার জন্য।”
অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে, “এত কিছু করেছে ওরা?”
পায়েল আরো জানায়, “জলপাইগুড়িতে ওদের না পেয়ে আশে পাশের লোক জনের কাছ থেকে খবর যোগাড় করে জানতে পারে যে সূর্য আর মনিদিপা কোলকাতা চলে এসেছে। তারপরে শ্রেয়া আর রূপক দুইজনে সূর্যের বাড়ি যায়। তুই নাকি কয়েকদিন আগে ওদের টাকা দিয়েছিলি?”
বুক ভরে শ্বাস নেয় অনুপমা, “হ্যাঁ।”
পায়েল ওকে বলে, “রূপকের রুদ্র মূর্তি দেখে সূর্যের অবস্থা খারাপ।”
অবাক অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “সূর্যের সাথে আর কি করেছে ওরা?”
পায়েল মাথা নাড়ায়, “না না, মারপিট এই সবে যায়নি, শুধু মাত্র খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কবে কোথায় ছিল, ইত্যাদি। তবে ওরা দেবায়নকে মারেনি, ওদের সেই ক্ষমতা নেই। সূর্যের উপরে রূপকের সন্দেহ ইন্দ্রনীল আর ওর বাবার ওপরে পড়ে। টালিগঞ্জে ওদের ফ্লাটে গিয়ে দেখে মিস্টার অনিমেশ শ্রেয়ার ওই ঘটনার পরে ফ্ল্যাট বিক্রি করে জার্মানি চলে গেছে। সত্যি মিথ্যে যাচাইয়ের জন্য শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার হেরজোগকে ফোন করে। মিস্টার হেরজোগকে শ্রেয়া সবিস্তারে সব কিছু খুলে বলে। মিস্টার হেরজোগ খবর লাগিয়ে ওদের জানায় যে ইন্দ্রনীল স্থায়ী ভাবে লন্ডনে চলে গেছে আর ওর বাবা মিস্টার অনিমেশ আবার ব্যাঙ্কে চাকরি করছে।”
অনুপমা শূন্য চাহনি নিয়ে পায়েলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন ধরে যাদের যাদের সন্দেহের তালিকাভুক্ত করেছিল তাদের সবাই সন্দেহের ঘের থেকে পার পেয়ে গেল। নিজের বান্ধবী শ্রেয়া, ওর সন্দেহের তালিকা থেকে মুক্তি পায়নি। শ্রেয়া আর রূপককে ওর বিষয়ে এতটা চিন্তিত জানতে পেরে ওর দুই চোখ ছলছল করে ওঠে। বাকি থাকে শুধু মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর। আততায়ী কি তাহলে আসলে ওর বাবা?
পারমিতা ওর ফোন পেয়েই প্রশ্ন করে, “এতদিন একটা খবর নেই। পরাশরকে ফোন করলে ঠিকঠাক উত্তর পাওয়া যায়না, তুই আমাদের কি ভেবেছিস? আমরা কি তোর পর যে আমাদের ফোন উঠাস না?”
মায়ের এই উদ্বেগজনিত কণ্ঠস্বরকে ক্ষান্ত করে উত্তর দেয়, “পর নয়, তবে…..” মনে পড়ে যায়, কেউ জানে না দেবায়নের বিষয়ে সুতরাং সেই বেদনা ভাঙ্গা হৃদয় সবার সামনে প্রস্তুত করতে হবে। ধরা গলায় বলে, “মা….. ওকে…..”
পারমিতা আশঙ্কা ব্যাক্ত করে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে? তুই কোথায়? দেবায়ন…..”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলে, “না খুঁজে পাইনি। আমি এয়ারপোর্টে, একটু পরেই বাড়ি আসছি।”
পারমিতা মেয়েকে কি সান্ত্বনা দেবে ভেবে পায়না, “আচ্ছা….. আয়….. মনে হয় এটা আমাদের অদৃষ্টে ছিল, হয়ত আমাদের পাপের ফল যে ছেলেটা এইভাবে চলে গেল।”
দাঁতে দাঁত পিষে নিজের মনের ভাব সংবরণ করে নেয় অনুপমা, কার পাপের ফল জানা নেই তবে যদি বাবা অথবা রূপক দোষী হয় তাহলে ওর অনুপমা মরেও শান্তি পাবে না। তবে এই দুইজনার দিকে আঙ্গুল তোলার আগে ভালো ভাবে খুঁটিয়ে বিচার করে দেখতে হবে।
সকালের দিকেই ট্যাক্সি ধরে সোজা বাড়ি পৌঁছায় অনুপমা। ওকে দেখে পারমিতা, পায়েল অঙ্কন সবাই দৌড়ে আসে। ওর বাবা সেদিন আর অফিসে যায়না। মেয়েকে এই ভাবে ভেঙ্গে যেতে দেখে পারমিতার বুক ফেটে যায়। অনুপমা কি করবে ভেবে পায় না। বাবার চেহারায় কঠিন চিন্তার ছাপ, মেয়ের এই অভাবনীয় কষ্ট দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে। মনের এক কোনায় প্রশ্ন জাগে, বাবাও কি ওর মতন মুখোশ এঁটে না সত্যি মেয়ের জন্য চিন্তিত।
সবাই ওকে চেপে ধরে জানার জন্য। অনুপমা মিথ্যে গল্প বানিয়ে ওদের জানায় ঘুট্টুতে, ঘনসিয়ালিতে বিভিন্ন জায়গায় অনেক খুঁজেছে, এমন কি রেপ্লিং করে খাদের মধ্যে নেমে নদীর দুই পাড়ে অনেকদিন ধরে তল্লাসি করেও দেবায়নের সন্ধান পাওয়া যায়নি, এমন কি আততায়ীর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে ঘনসিয়ালির পুলিসের কাছে এফ.আই.আর করা আছে, পুলিস আস্বাস দিয়েছে যে সেই ছেলেটার খোঁজ পেলে ওদের খবর দেবে।
এই গল্প বলার সময়ে বারেবারে ওর সাথে পায়েলের চোখাচুখি হয়ে যাচ্ছিল। মনে হয় পায়েল কিছু বলতে চায় অথবা পায়েল হয়ত ওর মিথ্যে গল্প ধরে ফেলেছে। শ্রেয়া যে ইন্দ্রনীলের সাথে ছলনার খেলা খেলেছিল সেটা পায়েল জানত কিন্তু ওকে বলেনি, হতেও পারে এইবারে পায়েল অনেক কিছু জানে কিন্তু ওকে বলার কিছু সময় পায়নি। বাবা, মাকে সব ঘটনা বলার পরে পায়েল কে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে অনুপমা। ওকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়েই পায়েল ওকে জড়িয়ে ধরে দুঃখ প্রকাশ করে কেঁদে ফেলে। অনুপমা কাকে সান্ত্বনা দেবে ঠিক করে উঠতে পারে না, পায়েল কে সত্যি বলবে কি না সেটাও ভেবে উঠতে পারে না।
পায়েল ওকে বলে, “তুই চলে যাওয়ার পর থেকে শ্রেয়া আর রূপক বসে নেই জানিস।”
আবার ওর অবাক হওয়ার পালা, প্রশ্ন করে অনুপমা, “মানে?”
পায়েল উত্তর দেয়, “তুই ঘুট্টু চলে গেলি, আর শ্রেয়া আর রূপক সোজা জলপাইগুড়ি গিয়েছিল সূর্যের খবর নেওয়ার জন্য।”
অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে, “এত কিছু করেছে ওরা?”
পায়েল আরো জানায়, “জলপাইগুড়িতে ওদের না পেয়ে আশে পাশের লোক জনের কাছ থেকে খবর যোগাড় করে জানতে পারে যে সূর্য আর মনিদিপা কোলকাতা চলে এসেছে। তারপরে শ্রেয়া আর রূপক দুইজনে সূর্যের বাড়ি যায়। তুই নাকি কয়েকদিন আগে ওদের টাকা দিয়েছিলি?”
বুক ভরে শ্বাস নেয় অনুপমা, “হ্যাঁ।”
পায়েল ওকে বলে, “রূপকের রুদ্র মূর্তি দেখে সূর্যের অবস্থা খারাপ।”
অবাক অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “সূর্যের সাথে আর কি করেছে ওরা?”
পায়েল মাথা নাড়ায়, “না না, মারপিট এই সবে যায়নি, শুধু মাত্র খুঁটিনাটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কবে কোথায় ছিল, ইত্যাদি। তবে ওরা দেবায়নকে মারেনি, ওদের সেই ক্ষমতা নেই। সূর্যের উপরে রূপকের সন্দেহ ইন্দ্রনীল আর ওর বাবার ওপরে পড়ে। টালিগঞ্জে ওদের ফ্লাটে গিয়ে দেখে মিস্টার অনিমেশ শ্রেয়ার ওই ঘটনার পরে ফ্ল্যাট বিক্রি করে জার্মানি চলে গেছে। সত্যি মিথ্যে যাচাইয়ের জন্য শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে মিস্টার হেরজোগকে ফোন করে। মিস্টার হেরজোগকে শ্রেয়া সবিস্তারে সব কিছু খুলে বলে। মিস্টার হেরজোগ খবর লাগিয়ে ওদের জানায় যে ইন্দ্রনীল স্থায়ী ভাবে লন্ডনে চলে গেছে আর ওর বাবা মিস্টার অনিমেশ আবার ব্যাঙ্কে চাকরি করছে।”
অনুপমা শূন্য চাহনি নিয়ে পায়েলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন ধরে যাদের যাদের সন্দেহের তালিকাভুক্ত করেছিল তাদের সবাই সন্দেহের ঘের থেকে পার পেয়ে গেল। নিজের বান্ধবী শ্রেয়া, ওর সন্দেহের তালিকা থেকে মুক্তি পায়নি। শ্রেয়া আর রূপককে ওর বিষয়ে এতটা চিন্তিত জানতে পেরে ওর দুই চোখ ছলছল করে ওঠে। বাকি থাকে শুধু মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর। আততায়ী কি তাহলে আসলে ওর বাবা?