06-10-2020, 11:49 PM
একটু কাছে টেনে নিয়ে ওকে একটা বড় চুমু খেয়ে রজত বললো, "এই শোন। আমার বউ আমার কাছে কোনদিন চায় নি। বরঞ্চ যা পেয়েছে সব নিয়ে গেছে। চাইলে দিতাম। নয়তো একটা শাড়ী বা অন্য কিছু। তোমার জন্য পুরো দোকানটাই আমি তুলে এনে দেব তোমার কাছে।"
সিরিজাকে রজত জড়িয়ে রেখেছে। বাঁধন আলগা না করেই সিরিজা বললো, "ব্লাউজ কিনবে, ব্রা কিনবে। আমার বুকের মাপ জান?"
রজত হাত দিয়ে ওর বুক দুটোকে ধরে বললো, "দেখি মেপে?"
সিরিজাকে আর ঘর থেকে বের করেনি রজত। ও ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো সিরিজাকে রেখে।
দোকান থেকে ফেরার সময় রজত ঘড়ি দেখলো। আটটা বাজে। ওর হাতে তখন দু তিনটে প্যাকেট। সিরিজার অন্তর্বাস আর একটা পাতলা ফিনফিনে শাড়ী। রজত ভাবল রাতের খাবারটা কিনে নেবে কিনা? আজকে তো আবার একটা মিলনের রাত। সিরিজাকে শুধু শুধু রান্নাঘরে ঢুকিয়ে কষ্ট দেবে কেন?
রুটি মাংসের দোকানের সামনে পয়সাটা আগে থেকেই দিয়ে ওয়েট করছিল রজত। হঠাত দেখলো ওর পান্জাবীর পকেটে মোবাইলটা বাজছে। ওটা কানে নিল। উল্টোদিক থেকে দিবাকরের কথার আওয়াজ ভেসে এলো, "এই রজত? তুমি কোথায়? আমি তোমার বাড়ীর খুব কাছেই আছি। দু মিনিটে ঢুকছি।"
রজত উত্তরে কিছু বলার আগেই লাইনটা হুট করে কেটে গেল।
দুম করে লাইনটা ওরকম কেটে যাওয়াতে রজত বেশ অস্বস্তিতে পড়লো। ও তাড়াতাড়ি দিবাকরকে আবার ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু দুতিনবার চেষ্টা করেও পেল না লাইন। মনে হয় টাওয়ারে সিগনাল পাচ্ছে না। মাঝে মাঝে কি যে হয়? রাগের চোটে মোবাইলটাই ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিল রজতের!
ভুরুটা একটু কুচকে গেছে। কপালের উপর ভাঁজ পড়েছে। রজতের এটাই চিন্তা হোল, তালাটা আজ বাইরে থেকে লাগিয়ে আসা হয় নি। সিরিজা ফ্ল্যাটে একা রয়েছে। দিবাকর ঢুকে গেলে ওকে দেখে না জানি ওর কি অবস্থা হয়। হোটেলের দোকানদারটাকে বিরক্তির চোটে বলেই ফেললো, "দাদা তাড়াতাড়ি দিন। আর কতক্ষন দাড়িয়ে থাকব?"
এক হাতে জামাকাপড়ের প্যাকেট। তার উপর খাবারের প্যাকেট। দুটো এক সাথে নিয়ে কি দৌড়োনো যায়!
রজত ঘড়ি দেখলো। মনে হোল এই দু মিনিটে দৌড়েও ঘরের কাছে পৌঁছোন অসম্ভব। এখন কি করবে? দিবাকরকে বাইরে আটকাতে পারলেই তো ভালো হোত। বুঝিয়ে সুজিয়ে ভেতরে ঢোকাত। কিন্তু একা ভেতরে ঢুকে গেলে সিরিজাকে দেখে নির্ঘাত মূর্ছা যাবে।
রজত তাড়াতাড়ি পা চালালো। শর্টকার্ট একটা গলি আছে। ওটা দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি পৌঁছোন যাবে। ও দুহাতে প্যাকেট নিয়ে প্রায় দৌড়াচ্ছে। একটা বেঁটেখাটো লোক উল্টোদিক দিয়ে আসছিল। রজতকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। হঠাত করে রজতের মাথাটা গরম করে দিল লোকটা। ওর চলার গতিটাকে স্তব্ধ করে দিল। রজতকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল রাস্তার মাঝখানে।
তেলতেলে মুখে বললো, "এই যে দাদা শুনছেন?"
রজত মুখ ঘোরাল।
বিশ্রী ভাবে হেসে বললো, "ভালো আছেন?"
উফঃ এটা জিজ্ঞেস করার টাইম?
এবার লোকটা বেশ সুর করে রজতকে বললো, "আপনার প ত্ ত্ ত্ নী কে অনেকদিন দেখিনা?"
আপদ। এমনিতে তাড়া রয়েছে। তার উপর এমন সময় এসব কথা বলে রাস্তায় দাড় করিয়ে দেবার কোন মানে হয়?
রজত মুখ ভেঙচিয়ে খেঁকিয়ে উঠলো, "আপনি আপনার নিজের চড়কায় তেল দিন।"
লোকটা ভয়ের চোটে আর দাঁড়াল না। রজতও ফ্ল্যাটের দিকে হাঁটা দিল।
এ পাড়াতে অনেককেই ও চেনে না। অথচ এই বেঁটে লোকটা ওকে চিনল কি করে?
অত জোরে হেঁটেও রজত ওর ফ্ল্যাটের সামনে আসতে সময় লাগাল পাক্কা ১০ মিনিট। দরজার পাশে কলিং বেলটা টিপবে। হঠাত ওর খেয়াল হোল, দরজাটা অল্প ভেজানোই রয়েছে। কেউ বোধহয় ঢুকেছে ভেতরে, এই এক্ষুনি।
রজত দড়াম করে দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। সামনেই সোফাটার উপর বসে আছে দিবাকর। ওর চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে বড়সড় একটা কাঁটা গিলে ফেলেছে এক্ষুনি। কাঁটাটা গলা দিয়ে নামছে না। মুখটাকে কিরকম কিম্ভুতকি-মার্কা করে বসে আছে। মনে হচ্ছে হঠাৎ ও কিছু দেখে ফেলেছে। ভ্যাবাচাকা খেয়ে মুখ দিয়ে আর কথা বেরোচ্ছে না।
রজত বললো, "তোমার ফোন পাওয়ার পর এই ছুটে ছুটে আসছি। তুমি কখন এসেছ? দেখ না, দোকানদারটা দেরী করিয়ে দিল।"
দু-দুটো হাতে প্যাকেট ধরা রয়েছে। রজত কোথায় রাখবে বুঝতে পারছে না। দিবাকরকে বসিয়ে ও বললো, "একটু বস। আমি এটা রেখে দিয়ে আসছি।"
ওর শোবার ঘরের দরজাটা অল্প করে ভেতর থেকে ভেজানো। রজত আলতো ঠেলা মারতেই খুলে গেল। সিরিজা বসে আছে খাটে। ও ফিক ফিক করে হাসছে। বললো, "লোকটা কে?"
রজত বললো, "পরে বলছি দাঁড়াও। ও একা বসে আছে।"
প্যাকেট দুটো সিরিজার হাতে দিয়ে বললো, "আমি না বলা পর্যন্ত তুমি ও ঘরে যাবে না। আমি দরজাটা আবার ভেজিয়ে যাচ্ছি।"
রজত দিবাকরকে এবার ভালো করে দেখলো। বুঝলো সিরিজাকে দেখেই ভিমরী খেয়ে গেছে দিবাকর। ওর দাঁতের দুপাটি যেন লেগে গেছে। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। হঠাত কোন যৌনময়ী নারীকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।
কিন্তু দিবাকর তো এরকম নয়। ওতো নিজেই মেয়েদের সেক্সের ব্যাপারটা বোঝে। রজতকেই তো কত সন্ধান দিয়েছে এর আগে। তাহলে?
হঠাত রজতের খেয়াল হোল একটু আগে শোবার ঘরের ভেতরে ঢুকে ও সিরিজাকে দেখেছে। ব্লাউজ আর শায়া পড়ে বসে আছে। আর ওর সেই উদ্ধত স্তন। সিরিজাকে বোধহয় দিবাকর ঐ অবস্থাতেই দেখেছে। ভাবতে পারে নি। আমার ফ্ল্যাটে নতুন অতিথি কে দেখে চমকে গেছে।
দিবাকরের সামনে এসে ওকে নরমাল করার চেষ্টা করছিল রজত। দিবাকর মুখে খালি একবার বললো, "আমাকে এক গ্লাস জল এনে দেবে?"
রজত ফ্রীজ থেকে একটা জলের বোতল বার করে ওর হাতে দিল। বোতলটা মুখে নিয়ে ঢকঢক করে জল খেতে লাগলো দিবাকর।
শুরুটা কোথা দিয়ে করবে রজত বুঝতে পারছিল না।
দিবাকর নিজে থেকেই ওকে বললো, "তুমি যে বললে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবে। যাও নি?"
-- "গেছিলাম তো। এই তো আজকে ফিরেছি। গতকাল সকালে বেরিয়ে গেছিলাম আর আজকে ফিরেছি। একদিনেই চলে এলাম।"
- "কোথায় গিয়েছিলে?"
-- "আমার দেশের বাড়ীতে। ওখানে কিছু জমিজমা আছে। একটু দেখে এলাম আর কি?"
- "কিন্তু তুমি যে বলেছিলে?"
রজত বললো, "কি?"
- "তোমার সঙ্গিনীর খোঁজে।"
-- "ও এই?" রজত একটা স্মার্টলি হাসি দিয়ে মুখে একটা সিগারেট ধরাল। বললো, "কেন এখানে এসে তোমার কিছু মনে হচ্ছে না?"
দিবাকর একটু ঢোঁক গিলে বললো, "আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। যাকে দেখলাম, সে কে?"
রজত সিগারেটের ধোঁয়াটা গোল গোল করে রিং এর মতন ছাড়ছিল। বললো, "যাকে দেখলে, তাকে দেখে তোমার কি মনে হোল?"
- "আমি তো বুঝতেই পারিনি। তুমি ঘরে নেই অথচ?"
-- "অথচ কি?"
- "না মানে তোমার ঘরে একজন মহিলা।"
-- "মহিলাটি কে জানো?"
- "না আগে তো দেখিনি। তাই বলছিলাম।"
-- "ওর নাম সিরিজা।"
- "সিরিজা?"
-- "হ্যাঁ। আমার দেশের গাঁয়ের মেয়ে। দেখতে ভালো। চটক আছে। তাই নিয়ে এলাম সঙ্গে করে।"
- "তোমার দেশের গাঁয়ে এত ভালো মেয়ে পাওয়া যায় জানতাম না তো?"
-- "আমিও জানতাম না।"
- "তুমি জোগাড় করলে কি করে?"
রজত হেসে বললো, "কখনও কখনও ভাগ্যদেবতা প্রসন্ন হলে জুটে যায় আপনা আপনি।"
দিবাকর শোবার ঘরের দরজাটার দিকে তাকাচ্ছিল। রজত বললো, "ডাকবো না কি ওকে এখানে? ও ভেতরের ঘরে আছে। তুমি এসেছ তো? তাই লজ্জায় আসতে পারছে না।"
দিবাকর কিছু বলার আগেই রজত বললো, "না না ডাকছি দাড়াও।"
ও একটু চেঁচিয়ে বললো, "এই সিরিজা শোনো একটু এদিকে।"
রজত দেখলো দিবাকর মুখটা একটু নীচু করে ফেলেছে। আর ওর চোয়ালটা কেমন শক্ত হয়ে গেছে। মনে হয় সিরিজাকে ঐ অবস্থায় দেখে সিরিজার থেকে বেশী লজ্জা পেয়ে গেছে দিবাকর।
রজতের ডাক শুনে শোবার ঘরের দরজাটা খুলে রজতের বাইরের ঘরটায় প্রবেশ করেছে সিরিজা। ওর পরণে তখন রজতের দেওয়া পাতলা ফিনফিনে শাড়ীটা। গায়ে জড়িয়েছে যেন পেঁয়াজের খোসার মতন। পুরুষের চোখকে প্রলুব্ধ করবেই। কেশরাশি ছড়িয়ে পড়েছে ওর ঘাড়ের পাশ দিয়ে। সিরিজার চোখে যেন একটা দীপ্তি। হঠাতই ঘরটায় কোন নারীর আবির্ভাবে আলোকিত হয়ে উঠেছে।
রজত দেখেছে সিরিজাকে। সিরিজা দেখছে রজতকে। দিবাকর হাঁ করে দেখছে সিরিজাকে। মুখে কথা নেই।
সিরিজা যেন একসাথেই দুজনকে বোবা বানিয়ে দিয়েছে ক্ষনিকের জন্য।
-- "দিবাকর। তোমাকে সিরিজার কথা বলছিলাম। নাও দেখ এবার ভালো করে।"
দিবাকর নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রজতের মতন ওরও চোখ আটকে গেছে সিরিজার ঝলসানো শরীরে।
- "উনি তো আমায় দেখেছেন।"
রজত বুঝতে পারছে সিরিজা কেন একথা বলছে। দিবাকর তখন একটু আড়ষ্ট। যেন কিছুটা লজ্জিত। সিরিজা ঘর থেকে চলে যাবার পর দিবাকর রজতকে বলছে, "আসলে আমি বুঝতে পারিনি। কলিংবেলটা টিপেছি। ভেবেছি তুমি খুলবে। তারপরই দেখি অন্য একটা মুখ। আমাকে দেখেই ভেতরের ঘরে চলে গেল। আসলে অপ্রস্তুতে পড়ে গেছিল। তারপর ভেতর ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো, "আপনি কে?"
রজত দিবাকরের কথা শুনে হাসছে হো হো করে।
এরপরে দশ মিনিটের বেশী বসেনি দিবাকর। রজতকে বললো, "আজ তাহলে উঠি। অন্য আরেকদিন আসবো। তোমার নতুন জীবন সুখীময় হোক। অল দ্য বেস্ট।"
যাওয়ার আগে রজতকে আসতে আসতে বললো, "একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?"
-- "কি?"
- "এটা কি temporary না permanent?"
রজত হেসে দিবাকরকে বললো, "একদম permanent."
রজতের ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেছে দিবাকর। ও হাঁটছে আর ভাবছে। চাঁদুর(এখানে রজত) কপাল ভালো। খাসা জুটিয়েছে মেয়েটাকে। কিন্তু একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। যা যা বললো, সব কি সত্যি, না এর মধ্যে কোন রহস্য আছে?
একটা সিগারেট মুখে নিয়ে যেতে যেতে আফসোস করছে দিবাকর। ইস। সারাজীবন একে ওকে কত মাল সাপ্লাই করলুম। কিম্তু নিজের ভাগ্যে একটাও জুটল না। রজতের মতন আমিও ভাগ্যবান হতে পারতুম। যদি প্যান্টের তলায় ঐ খোকাবাবুটা একটু শক্তপোক্ত হোত। ওটা ঠিকমতন দাঁড়াতেই চায় না। কি যে হয়েছে কে জানে। তারপরেই চলতে চলতে প্যান্টের চেনের উপরটায় হাত লাগিয়ে চমকে উঠলো দিবাকর। আরিব্বাস। এটা আজকে এত খাড়া হোল কি করে? কোনদিন তো এরকম হয় না। তারমানে সবই কি সিরিজার গুনে। ব্র্যাভো ব্র্যাভো। সাবাশ। অতি আনন্দে রাস্তা দিয়ে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে দিবাকর। পথচারী দেখে মনে করবে এই বোধহয় কোনকিছু অসম্ভবকে সম্ভব করেছে দিবাকর।
সিরিজাকে রজত জড়িয়ে রেখেছে। বাঁধন আলগা না করেই সিরিজা বললো, "ব্লাউজ কিনবে, ব্রা কিনবে। আমার বুকের মাপ জান?"
রজত হাত দিয়ে ওর বুক দুটোকে ধরে বললো, "দেখি মেপে?"
সিরিজাকে আর ঘর থেকে বের করেনি রজত। ও ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লো সিরিজাকে রেখে।
দোকান থেকে ফেরার সময় রজত ঘড়ি দেখলো। আটটা বাজে। ওর হাতে তখন দু তিনটে প্যাকেট। সিরিজার অন্তর্বাস আর একটা পাতলা ফিনফিনে শাড়ী। রজত ভাবল রাতের খাবারটা কিনে নেবে কিনা? আজকে তো আবার একটা মিলনের রাত। সিরিজাকে শুধু শুধু রান্নাঘরে ঢুকিয়ে কষ্ট দেবে কেন?
রুটি মাংসের দোকানের সামনে পয়সাটা আগে থেকেই দিয়ে ওয়েট করছিল রজত। হঠাত দেখলো ওর পান্জাবীর পকেটে মোবাইলটা বাজছে। ওটা কানে নিল। উল্টোদিক থেকে দিবাকরের কথার আওয়াজ ভেসে এলো, "এই রজত? তুমি কোথায়? আমি তোমার বাড়ীর খুব কাছেই আছি। দু মিনিটে ঢুকছি।"
রজত উত্তরে কিছু বলার আগেই লাইনটা হুট করে কেটে গেল।
দুম করে লাইনটা ওরকম কেটে যাওয়াতে রজত বেশ অস্বস্তিতে পড়লো। ও তাড়াতাড়ি দিবাকরকে আবার ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু দুতিনবার চেষ্টা করেও পেল না লাইন। মনে হয় টাওয়ারে সিগনাল পাচ্ছে না। মাঝে মাঝে কি যে হয়? রাগের চোটে মোবাইলটাই ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিল রজতের!
ভুরুটা একটু কুচকে গেছে। কপালের উপর ভাঁজ পড়েছে। রজতের এটাই চিন্তা হোল, তালাটা আজ বাইরে থেকে লাগিয়ে আসা হয় নি। সিরিজা ফ্ল্যাটে একা রয়েছে। দিবাকর ঢুকে গেলে ওকে দেখে না জানি ওর কি অবস্থা হয়। হোটেলের দোকানদারটাকে বিরক্তির চোটে বলেই ফেললো, "দাদা তাড়াতাড়ি দিন। আর কতক্ষন দাড়িয়ে থাকব?"
এক হাতে জামাকাপড়ের প্যাকেট। তার উপর খাবারের প্যাকেট। দুটো এক সাথে নিয়ে কি দৌড়োনো যায়!
রজত ঘড়ি দেখলো। মনে হোল এই দু মিনিটে দৌড়েও ঘরের কাছে পৌঁছোন অসম্ভব। এখন কি করবে? দিবাকরকে বাইরে আটকাতে পারলেই তো ভালো হোত। বুঝিয়ে সুজিয়ে ভেতরে ঢোকাত। কিন্তু একা ভেতরে ঢুকে গেলে সিরিজাকে দেখে নির্ঘাত মূর্ছা যাবে।
রজত তাড়াতাড়ি পা চালালো। শর্টকার্ট একটা গলি আছে। ওটা দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি পৌঁছোন যাবে। ও দুহাতে প্যাকেট নিয়ে প্রায় দৌড়াচ্ছে। একটা বেঁটেখাটো লোক উল্টোদিক দিয়ে আসছিল। রজতকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। হঠাত করে রজতের মাথাটা গরম করে দিল লোকটা। ওর চলার গতিটাকে স্তব্ধ করে দিল। রজতকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল রাস্তার মাঝখানে।
তেলতেলে মুখে বললো, "এই যে দাদা শুনছেন?"
রজত মুখ ঘোরাল।
বিশ্রী ভাবে হেসে বললো, "ভালো আছেন?"
উফঃ এটা জিজ্ঞেস করার টাইম?
এবার লোকটা বেশ সুর করে রজতকে বললো, "আপনার প ত্ ত্ ত্ নী কে অনেকদিন দেখিনা?"
আপদ। এমনিতে তাড়া রয়েছে। তার উপর এমন সময় এসব কথা বলে রাস্তায় দাড় করিয়ে দেবার কোন মানে হয়?
রজত মুখ ভেঙচিয়ে খেঁকিয়ে উঠলো, "আপনি আপনার নিজের চড়কায় তেল দিন।"
লোকটা ভয়ের চোটে আর দাঁড়াল না। রজতও ফ্ল্যাটের দিকে হাঁটা দিল।
এ পাড়াতে অনেককেই ও চেনে না। অথচ এই বেঁটে লোকটা ওকে চিনল কি করে?
অত জোরে হেঁটেও রজত ওর ফ্ল্যাটের সামনে আসতে সময় লাগাল পাক্কা ১০ মিনিট। দরজার পাশে কলিং বেলটা টিপবে। হঠাত ওর খেয়াল হোল, দরজাটা অল্প ভেজানোই রয়েছে। কেউ বোধহয় ঢুকেছে ভেতরে, এই এক্ষুনি।
রজত দড়াম করে দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। সামনেই সোফাটার উপর বসে আছে দিবাকর। ওর চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে বড়সড় একটা কাঁটা গিলে ফেলেছে এক্ষুনি। কাঁটাটা গলা দিয়ে নামছে না। মুখটাকে কিরকম কিম্ভুতকি-মার্কা করে বসে আছে। মনে হচ্ছে হঠাৎ ও কিছু দেখে ফেলেছে। ভ্যাবাচাকা খেয়ে মুখ দিয়ে আর কথা বেরোচ্ছে না।
রজত বললো, "তোমার ফোন পাওয়ার পর এই ছুটে ছুটে আসছি। তুমি কখন এসেছ? দেখ না, দোকানদারটা দেরী করিয়ে দিল।"
দু-দুটো হাতে প্যাকেট ধরা রয়েছে। রজত কোথায় রাখবে বুঝতে পারছে না। দিবাকরকে বসিয়ে ও বললো, "একটু বস। আমি এটা রেখে দিয়ে আসছি।"
ওর শোবার ঘরের দরজাটা অল্প করে ভেতর থেকে ভেজানো। রজত আলতো ঠেলা মারতেই খুলে গেল। সিরিজা বসে আছে খাটে। ও ফিক ফিক করে হাসছে। বললো, "লোকটা কে?"
রজত বললো, "পরে বলছি দাঁড়াও। ও একা বসে আছে।"
প্যাকেট দুটো সিরিজার হাতে দিয়ে বললো, "আমি না বলা পর্যন্ত তুমি ও ঘরে যাবে না। আমি দরজাটা আবার ভেজিয়ে যাচ্ছি।"
রজত দিবাকরকে এবার ভালো করে দেখলো। বুঝলো সিরিজাকে দেখেই ভিমরী খেয়ে গেছে দিবাকর। ওর দাঁতের দুপাটি যেন লেগে গেছে। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। হঠাত কোন যৌনময়ী নারীকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।
কিন্তু দিবাকর তো এরকম নয়। ওতো নিজেই মেয়েদের সেক্সের ব্যাপারটা বোঝে। রজতকেই তো কত সন্ধান দিয়েছে এর আগে। তাহলে?
হঠাত রজতের খেয়াল হোল একটু আগে শোবার ঘরের ভেতরে ঢুকে ও সিরিজাকে দেখেছে। ব্লাউজ আর শায়া পড়ে বসে আছে। আর ওর সেই উদ্ধত স্তন। সিরিজাকে বোধহয় দিবাকর ঐ অবস্থাতেই দেখেছে। ভাবতে পারে নি। আমার ফ্ল্যাটে নতুন অতিথি কে দেখে চমকে গেছে।
দিবাকরের সামনে এসে ওকে নরমাল করার চেষ্টা করছিল রজত। দিবাকর মুখে খালি একবার বললো, "আমাকে এক গ্লাস জল এনে দেবে?"
রজত ফ্রীজ থেকে একটা জলের বোতল বার করে ওর হাতে দিল। বোতলটা মুখে নিয়ে ঢকঢক করে জল খেতে লাগলো দিবাকর।
শুরুটা কোথা দিয়ে করবে রজত বুঝতে পারছিল না।
দিবাকর নিজে থেকেই ওকে বললো, "তুমি যে বললে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবে। যাও নি?"
-- "গেছিলাম তো। এই তো আজকে ফিরেছি। গতকাল সকালে বেরিয়ে গেছিলাম আর আজকে ফিরেছি। একদিনেই চলে এলাম।"
- "কোথায় গিয়েছিলে?"
-- "আমার দেশের বাড়ীতে। ওখানে কিছু জমিজমা আছে। একটু দেখে এলাম আর কি?"
- "কিন্তু তুমি যে বলেছিলে?"
রজত বললো, "কি?"
- "তোমার সঙ্গিনীর খোঁজে।"
-- "ও এই?" রজত একটা স্মার্টলি হাসি দিয়ে মুখে একটা সিগারেট ধরাল। বললো, "কেন এখানে এসে তোমার কিছু মনে হচ্ছে না?"
দিবাকর একটু ঢোঁক গিলে বললো, "আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। যাকে দেখলাম, সে কে?"
রজত সিগারেটের ধোঁয়াটা গোল গোল করে রিং এর মতন ছাড়ছিল। বললো, "যাকে দেখলে, তাকে দেখে তোমার কি মনে হোল?"
- "আমি তো বুঝতেই পারিনি। তুমি ঘরে নেই অথচ?"
-- "অথচ কি?"
- "না মানে তোমার ঘরে একজন মহিলা।"
-- "মহিলাটি কে জানো?"
- "না আগে তো দেখিনি। তাই বলছিলাম।"
-- "ওর নাম সিরিজা।"
- "সিরিজা?"
-- "হ্যাঁ। আমার দেশের গাঁয়ের মেয়ে। দেখতে ভালো। চটক আছে। তাই নিয়ে এলাম সঙ্গে করে।"
- "তোমার দেশের গাঁয়ে এত ভালো মেয়ে পাওয়া যায় জানতাম না তো?"
-- "আমিও জানতাম না।"
- "তুমি জোগাড় করলে কি করে?"
রজত হেসে বললো, "কখনও কখনও ভাগ্যদেবতা প্রসন্ন হলে জুটে যায় আপনা আপনি।"
দিবাকর শোবার ঘরের দরজাটার দিকে তাকাচ্ছিল। রজত বললো, "ডাকবো না কি ওকে এখানে? ও ভেতরের ঘরে আছে। তুমি এসেছ তো? তাই লজ্জায় আসতে পারছে না।"
দিবাকর কিছু বলার আগেই রজত বললো, "না না ডাকছি দাড়াও।"
ও একটু চেঁচিয়ে বললো, "এই সিরিজা শোনো একটু এদিকে।"
রজত দেখলো দিবাকর মুখটা একটু নীচু করে ফেলেছে। আর ওর চোয়ালটা কেমন শক্ত হয়ে গেছে। মনে হয় সিরিজাকে ঐ অবস্থায় দেখে সিরিজার থেকে বেশী লজ্জা পেয়ে গেছে দিবাকর।
রজতের ডাক শুনে শোবার ঘরের দরজাটা খুলে রজতের বাইরের ঘরটায় প্রবেশ করেছে সিরিজা। ওর পরণে তখন রজতের দেওয়া পাতলা ফিনফিনে শাড়ীটা। গায়ে জড়িয়েছে যেন পেঁয়াজের খোসার মতন। পুরুষের চোখকে প্রলুব্ধ করবেই। কেশরাশি ছড়িয়ে পড়েছে ওর ঘাড়ের পাশ দিয়ে। সিরিজার চোখে যেন একটা দীপ্তি। হঠাতই ঘরটায় কোন নারীর আবির্ভাবে আলোকিত হয়ে উঠেছে।
রজত দেখেছে সিরিজাকে। সিরিজা দেখছে রজতকে। দিবাকর হাঁ করে দেখছে সিরিজাকে। মুখে কথা নেই।
সিরিজা যেন একসাথেই দুজনকে বোবা বানিয়ে দিয়েছে ক্ষনিকের জন্য।
-- "দিবাকর। তোমাকে সিরিজার কথা বলছিলাম। নাও দেখ এবার ভালো করে।"
দিবাকর নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রজতের মতন ওরও চোখ আটকে গেছে সিরিজার ঝলসানো শরীরে।
- "উনি তো আমায় দেখেছেন।"
রজত বুঝতে পারছে সিরিজা কেন একথা বলছে। দিবাকর তখন একটু আড়ষ্ট। যেন কিছুটা লজ্জিত। সিরিজা ঘর থেকে চলে যাবার পর দিবাকর রজতকে বলছে, "আসলে আমি বুঝতে পারিনি। কলিংবেলটা টিপেছি। ভেবেছি তুমি খুলবে। তারপরই দেখি অন্য একটা মুখ। আমাকে দেখেই ভেতরের ঘরে চলে গেল। আসলে অপ্রস্তুতে পড়ে গেছিল। তারপর ভেতর ঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো, "আপনি কে?"
রজত দিবাকরের কথা শুনে হাসছে হো হো করে।
এরপরে দশ মিনিটের বেশী বসেনি দিবাকর। রজতকে বললো, "আজ তাহলে উঠি। অন্য আরেকদিন আসবো। তোমার নতুন জীবন সুখীময় হোক। অল দ্য বেস্ট।"
যাওয়ার আগে রজতকে আসতে আসতে বললো, "একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?"
-- "কি?"
- "এটা কি temporary না permanent?"
রজত হেসে দিবাকরকে বললো, "একদম permanent."
রজতের ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেছে দিবাকর। ও হাঁটছে আর ভাবছে। চাঁদুর(এখানে রজত) কপাল ভালো। খাসা জুটিয়েছে মেয়েটাকে। কিন্তু একটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। যা যা বললো, সব কি সত্যি, না এর মধ্যে কোন রহস্য আছে?
একটা সিগারেট মুখে নিয়ে যেতে যেতে আফসোস করছে দিবাকর। ইস। সারাজীবন একে ওকে কত মাল সাপ্লাই করলুম। কিম্তু নিজের ভাগ্যে একটাও জুটল না। রজতের মতন আমিও ভাগ্যবান হতে পারতুম। যদি প্যান্টের তলায় ঐ খোকাবাবুটা একটু শক্তপোক্ত হোত। ওটা ঠিকমতন দাঁড়াতেই চায় না। কি যে হয়েছে কে জানে। তারপরেই চলতে চলতে প্যান্টের চেনের উপরটায় হাত লাগিয়ে চমকে উঠলো দিবাকর। আরিব্বাস। এটা আজকে এত খাড়া হোল কি করে? কোনদিন তো এরকম হয় না। তারমানে সবই কি সিরিজার গুনে। ব্র্যাভো ব্র্যাভো। সাবাশ। অতি আনন্দে রাস্তা দিয়ে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে দিবাকর। পথচারী দেখে মনে করবে এই বোধহয় কোনকিছু অসম্ভবকে সম্ভব করেছে দিবাকর।
প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত