06-10-2020, 09:15 PM
পর্ব ২৯ (#০২)
কথাটা শেষ করে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়ে অনুপমা। শ্রেয়া আর পায়েল দৌড়ে এসে ওকে বাধা দিতে যায়, কিন্তু অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় দেবায়নের আততায়ীকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আর বাড়ি ফিরবে না। অনুপমা নিজের সিদ্ধান্তে অটল, সবাই কিংকর্তব্যবিমুঢ়ের মতন ওর দিকে চেয়ে থাকে হাঁ করে। রূপক আর ধীমান এগিয়ে আসে ওর সাথে যাওয়ার জন্য।
অনুপমা রূপককে থামিয়ে দিয়ে বলে, “না রে রূপক, শ্রেয়াকে পায়েলকে সামলাতে তোর দরকার পড়বে। তুই চলে গেলে ওরা সবাই অথৈ জলে পড়ে যাবে।”
পরাশর তখন নিজের ব্যাগ কাঁধে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “তুই একা কেন যাবি, আমিও তোর সাথে যাব চল।”
অবাক চোখে অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুই আবার কেন এত কষ্ট করবি?”
পরাশর ওর কাঁধ চাপড়ে নিচু কণ্ঠে উত্তর দেয়, “তোর অত মাথা ব্যাথা নিতে হবে না। চল বেড়িয়ে পরি অনেকটা পথ আমাদের যেতে হবে। ঘুট্টু পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে যাবে।”
অনুপমা ওকে আর মানা করতে পারে না। গাড়িতে ওঠার আগে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে অনুপমা। পায়েল, অঙ্কন, শ্রেয়া সবার চোখে জল। জারিনা, সঙ্গীতা ঋতুপর্ণা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। ওর বাবা, সোমেশ বাবু নির্বাক হয়ে গেছেন। অঙ্কন ছলছল চোখে দিদির দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, হয়ত দিদির সাথে এটাই শেষ দেখা।
গাড়ি ছাড়ার আগে অঙ্কন দৌড়ে এসে দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই কথা দে ফিরে আসবি।”
ভাইকে কি ভাবে সান্ত্বনা দেবে ভেবে পায় না অনুপমা। নিজেও জানে না যে পথে নেমেছে তাঁর শেষ কোথায়, তাও ভাইকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেয়, “আমি ফিরব, নিশ্চয় ফিরব আর দেবায়নকে সাথে নিয়েই ফিরব।”
আর বেশি দাঁড়ায় না অনুপমা, জানে বেশি দাঁড়ালে ওদের দেরি হয়ে যাবে। পরাশর আর অনুপমা, হৃষীকেশ থেকে আবার ঘনসিয়ালির রাস্তা ধরে। গাড়ি আবার হৃষীকেশ থেকে পাহাড়ি সঙ্কীর্ণ পথ ধরে উঠতে শুরু করে দেয়। এইবারে এই পাহাড় আর ওকে টানে না। চুপচাপ অঙ্ক কষতে শুরু করে অনুপমা। দেবায়নের নিরুদ্দেশের পেছনে কার হাত হতে পারে। ওর বাবা সোমেশ সেন, এত তাড়াতাড়ি রীহতে কি করে পৌছাল? বাবার ওপর থেকে সন্দেহ দুর করার জন্য অনুপমা মাকে ফোন করে।
পারমিতা মেয়ের গলা শুনেই উদ্বেগ জনিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুই কেমন আছিস? কি হয়েছে।”
সংক্ষেপে মাকে সব কথা জানিয়ে এটা জানাতে ভোলে না যেন ওর মামনিকে কিছু না জানানো হয়। পারমিতা জানায় দেবশ্রীকে এখুনি কিছুই জানাবে না কিন্তু কতদিন এই সংবাদ দেবশ্রীর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে। অনুপমা জানায় ঘন সিয়ালি থেকে ফিরে এসে নিজেই মামনিকে জানাবে সম্পূর্ণ ঘটনা তারপরে যা হবার নিজেই মোকাবিলা করবে। জানে একবার এই খবর মামনির কানে পৌঁছালে মামনি মূর্ছা যাবে, কিন্তু কিছুই করার নেই। বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে, ওদের চলে যাওয়ার পরের দিন দেরাদুনের হোটেলের মালিকের সাথে কোন এক বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সোমেশ বেড়িয়ে পড়েন। যাওয়ার সময়ে বলে যান ফিরতে বেশ কয়েকদিন দেরি হবে। বাবা কি সত্যি দেরাদুনে গিয়েছিলেন না দেবায়নের পিছু নিয়েছিলেন? দেবায়ন বাবার অনেক ক্ষতি করেছে, চাকরি ছাড়তে হয়েছে, হয়তো বাবা এর মধ্যে জেনে ফেলেছে যে ওর মায়ের সাথে এক সময়ে দেবায়নের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। দেবায়নের নামে যদিও কোন কোম্পানি নেই তবুও দেবায়ন বাবার পথ থেকে সরে গেলে কোম্পানির সব কিছুর ওপরে বাবার এক ছত্র অধিপতি হবে। কিন্তু বাবার কাছে দেবায়ন সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, এমত অবস্থায় কি বাবা সত্যি দেবায়নকে নিজের পথ থেকে সরাতে চাইবে?
পরাশর ওকে জিজ্ঞেস করে, “এর পেছনে তোর কাকে সন্দেহ হয়।”
বুক ভরে শ্বাস নেয় অনুপমা, “সন্দেহ অনেক কিন্তু ঠিক ধরতে পারছি না কে হতে পারে।”
পরাশর ওকে বলে, “সব সন্দেহ ভাজনদের একটা তালিকা বানানো যাক, তারপরে খুনের উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে।”
অনুপমা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। ওকে খুন করার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি ছিল সেটা যদি সঠিক ভাবে জানা যায় তাহলে আততায়ীকে ধরা আমাদের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে।”
ওদের গাড়ি বারকোট পৌঁছাতেই অনুপমার ফোনে ইনসপেক্টর রোহণের ফোন আসে। ফোনে ইনসপেকটর জানায় নদীতে একটা মৃত দেহ পাওয়া গেছে। সেই শুনে অনুপমার বুক কেঁপে ওঠে, চরম আশঙ্কায় থরথর করে কাঁপতে শুরু করে অনুপমা। পরাশর জানতে চায় সেই মৃতদেহের পরনে কি ছিল। জামা কাপড়ের বিবরন আর দেহের বিবরন শুনে অনুপমা শ্বস্তির শ্বাস নেয়, বুঝে যায় ওই মৃত দেহ দেবায়নের নয়। তাও ইনস্পেক্টর ওদের নিউ তেহেরির হসপিটালে এসে মৃতদেহ শনাক্ত করতে অনুরোধ করে।
ঘনসিয়ালি থানায় গিয়ে সব থেকে আগে পুলিস ইন্সপেক্টিরের সাথে দেখা করে ওরা। তারপরে পুলিসের সাথে নিউ তেহেরির হসপিটালে গিয়ে মৃতদেহ সনাক্ত করে। অনুপমা আর মর্গে ঢুকতে চায় না, পরাশর শনাক্ত করে এসে জানায় ওই মৃতদেহ দেবায়নের নয়। ইনস্পেকটর রোহন জানায় এই দুইদিনে ওরা সেই ছেলের কোন সন্ধান পায়নি। অনুপমা জানায় নিজেই একবার রীহতে গিয়ে আবার দেবায়নের খোঁজ করবে। অনুপমা বদ্ধ পরিকর আগে দেবায়নের খোঁজ করবে তারপরে আততায়ীর খোঁজে যাবে। অনুপমা জানে এই অভিপ্রায় ইনস্পেকটরকে জানালে সে বাধা দেবে তাই আর তাকে কিছু না জানিয়েই পরাশরকে নিয়ে ঘুট্টুর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে।
ঘুট্টূ পৌঁছে সব থেকে আগে গাইড রঞ্জিতের খোঁজ করে অনুপমা। রঞ্জিতকে জানায় দেবায়নকে খুঁজতে যেতে চায়।
সব শুনে রঞ্জিত ওকে বলে, “ম্যাডাম, স্যার কে খুঁজতে আমাদের কোন আপত্তি নেই তবে আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি। এই পাহাড়ি নদী আর ওই উঁচু খাদ থেকে কেউ পড়ে গেলে তার বাঁচার আশঙ্কা খুব কম। যদি বেঁচে থাকেন স্যার, তাহলে এতদিনে এই আশেপাশের গ্রামের কোন লোক ইতিমধ্যে খুঁজে বের করে নিত। কিন্তু এই চার পাঁচ দিনে আশেপাশের কোন গ্রামের কেউই স্যারকে দেখেনি। তবে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখছি একজন সন্দেহ জনক ব্যাক্তিকে কয়েকদিন আগে এই এলাকায় দেখা গিয়েছিল।”
অনুপমা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেই লোকের বিষয়ে কি কিছু জানতে পেরেছেন?”
রঞ্জিত ওদের নিয়ে একজনের বাড়িতে যায়। টালির ছাউনি দেওয়া পাহাড়ের এক গ্রাম্য বাড়ি। ওদের এত রাতে দেখে এক বৃদ্ধ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। রঞ্জিত ওই এলাকার লোক, সেই ওই বৃদ্ধের সাথে পাহাড়ি ভাষায় কথাবার্তা বলে অনুপমাদের জানায়, এই বৃদ্ধ ভদ্রলোক কয়েকদিন আগে এক পাঞ্জাবী লোককে একা একা এইখানে ঘোরাফেরা করতে দেখেছিল। তারপরে অবশ্য সেই পাঞ্জাবী লোকের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সেই পাঞ্জাবী ভদ্রলোক এক একা একটা ব্যাগ তাঁবু ইত্যাদি নিয়ে একাই এইদিকে ঘুরতে এসেছিল বলে ওই বৃদ্ধকে জানায়। সোজা রাস্তা ছেড়ে গ্রামের পথ আর জঙ্গলের পথ ধরে রীহের দিকে যাত্রা করে। বৃদ্ধ জঙ্গলের মধ্যে ছাগল চড়াতে গিয়ে সেই পাঞ্জাবী লোকের দেখা পায়। আরো জিজ্ঞাসাবাদ করে ওরা জানতে পারে যে কয়েকদিন পরে, অর্থাৎ যেদিন এই দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর আগের দিন পর্যন্ত ওই পাঞ্জাবী লোকটাকে জঙ্গলের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সেই লোকের উচ্চতা মাঝারি, দেহের গঠন মাঝারি, বয়স আন্দাজ পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাসের মাঝামাঝি। বৃদ্ধ এক উল্লেখযোগ্য তথ্য ওদের দেয়। দাড়ি গোঁফ থাকা সত্ত্বেও সেই পাঞ্জাবীটা ঘনঘন সিগারেট টানছিল। সাধারনত এত পাঞ্জাবীরা সিগারেট খায় না। সেই শুনে অনুপমা পরাশরের দৃঢ় বিশ্বাস হয়, আসলে বেশ ভুষা বদলে নকল দাড়ি গোঁফ লাগিয়ে পাঞ্জাবী সেজে আততায়ী এই জায়গায় দেবায়নের অপেক্ষা করেছিল। বৃদ্ধ ওদের এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে পারল না।
সেই রাতে রঞ্জিতের অনুরোধে পরাশর আর অনুপমা ওর বাড়িতে রাত কাটায়। রঞ্জিত জানায় ওর পক্ষে যতদূর সম্ভব সাহায্য সে করবে।
রাতের বেলা পরাশর ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর কাকে সন্দেহ হয়? কে দেবায়নের সব থেকে বড় শত্রু?”
অনুপমা কিছুক্ষণ ভাবতে বসে, এমন প্রচুর গোপন বিষয় আছে যা গোপন থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই পরাশরকে সব কিছু জানানো উচিত হবে না। বিশেষ করে বর্তমানে অনুপমার সন্দেহ নিজের বাবার ওপরে প্রবল। দেবায়ন বাবার সব থেকে বড় পথের কাঁটা হতে পারে, দ্বিতীয় সূর্য, নিজের আর স্ত্রী মনিদিপার অপমানের বদলা নিতে দেবায়নকে মারতে পিছপা হবে না। তৃতীয় ধৃতিমান, দেবায়ন এক সময়ে একও অপদস্থ করেছিল তার বদলা নিতে ধৃতিমান নিশ্চয় মুখিয়ে থাকবে। চতুর্থ, ইন্দ্রনীল আর অনিমেশ আঙ্কেল, যে ভাবে ওদের হাত থেকে রূপক আর দেবায়ন সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে তাতে তারাও দেবায়নের ওপরে প্রতিশোধ নেওয়ার ফাঁক খুঁজবে। পঞ্চম, পুনের হোটেলের মালিক রজত পানিক্কর, এক রকম ব্ল্যাকমেইল করেই ওর কাছ থেকে হোটেল হাতিয়ে নিয়ে পথে বসিয়ে দিয়েছে দেবায়ন। বাবাকে ছাড়া বাকি সবার নাম আর উদ্দেশ্য পরাশরকে জানায়। অনুপমা বলতে শুরু করে আর একটা পরাশর একটা প্যাডের মধ্যে সব কিছু লিখতে শুরু করে।
সব শুনে পরাশর ওকে বলে, “এক বার ওই ছেলেটাকে পেলে বড় ভালো হত কিন্তু যখন ছেলেটাকে পাওয়া যাচ্ছে না তখন আমাদের মনে হয় রীহের ওই জঙ্গলে একবার যাওয়া উচিত। এক রাতে নিশ্চয় ওই আততায়ী রীহ থেকে ঘুট্টু হেঁটে আসেনি। এই রাস্তা ওর অজানা সুতরাং যতদূর মনে হয় এই কয়দিন ওই আততায়ী ওই জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়েছিল।”
অনুপমা মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। তবে আমাদের আসল উদ্দেশ্য দেবায়নকে খুঁজে পাওয়া। আগে আমরা দেবায়নকে খুঁজতে নামবো ওই খাদের মধ্যে তারপরে আততায়ীকে খুঁজবো।”
পরের দিন সূর্যের আলো ফোটা মাত্রই ওরা রীহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এইবারে দশ কিলোমিটার যেতে ওদের আর ছয় ঘন্টা লাগলো না। অনুপমার বুকে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে দেয়, ওর শরীরে নতুন রক্তের সঞ্চার হয়, দেবায়নকে খোঁজার এক নতুন সাহস আর শক্তি নিয়ে দুপুরের আগেই রীহ পৌঁছে যায় ওরা। সাথে দুইজন পোর্টার নিয়ে গিয়েছিল।
রঞ্জিতের সাথে খাদের কিনারায় এসে পুনরায় ওই জায়গাটা তদারকি করে দেখে। প্রথম দিনে যযে পায়ের ছাপ গুলো ওরা দেখেছিল এতদিনে বহু পায়ের ছাপের ফলে সেই ছাপ গুলো মাটিতে মিশে গেছে। তাও কিছুটা আন্দাজ করে যেদিকে আগে আততায়ীর পায়ের ছাপ গিয়েছিল সেদিকে ওরা হাঁটতে শুরু করে দেয়। বেশ কিছুটা দুর গিয়ে আন্দাজ মতন আততায়ীর পায়ের ছাপ অনুসরন করে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এদিক ওদিক ভালো ভাবে দেখতে দেখতে পরাশর আর অনুপমা এগিয়ে চলে, পেছনে রঞ্জিত আর দুটো ছেলে। ঘন জঙ্গল, উঁচু উঁচু দেবদারু পাইন ইত্যাদি গাছে ভরা, ভিজে মাটি নরম পাতা আর ঘাসে ঢাকা। বেশ কিছদুর গিয়ে একটা খালি জায়গা দেখে ওরা থেমে যায়। ঘন জঙ্গলের মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা সদ্য পরিষ্কার করে তাঁবু খাটানোর আর থাকার চিহ্ন দেখতে পায়। অনুপমার সন্দেহ দুর হয়ে যায়, এই জায়গায় নিশ্চয় ওই আততায়ী বেশ কয়েকদিন থেকেছে। সঙ্গে সঙ্গে রঞ্জিত পরাশর আর অনুপমা চারপাশে তথ্য প্রমান যোগাড় করার জন্য লেগে পড়ে। খুঁজে খুঁজে একটা খালি সিগারেট প্যাকেট পায়, বেশ কিছু প্লাস্টিকের ব্যাগ, বেশ কিছু বিস্কুটের প্যাকেট ম্যাগির প্যাকেট জলের বোতল ইত্যাদি খুঁজে পায়। রঞ্জিত সব কিছু একটা প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে জড় করে অনুপমার হাতে তুলে দেয়। আরো বেশ কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুঁজে নদীর দিকে চলে আসে। রঞ্জিত জানায় বৃদ্ধের বিবরনের কোন পাঞ্জাবী লোককে নিচের দিকে নামতে দেখেনি সুতরাং ধরে নেওয়া যায় ওই আততায়ী রীহ ছাড়িয়ে উপরের দিকে হয়ত উঠে গেছে নয়ত আরো গভীর জঙ্গলের পথ ধরে অন্যপাশ দিয়ে নেমে গেছে।
ওইখানে আরো বেশ কিছখন খোঁজাখুঁজি করার পরে তিনজনে তাঁবুতে ফিরে আসে। পরাশর ব্যাগের মধ্যে থেকে সিগারেট প্যাকেট বের করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোর জানাশোনার মধ্যে কেউ কি এই সিগারেট খায়?”
বেশ দামী সিগারেট প্যাকেট দেখে অনুপমা স্মিত হেসে বলে, “তুই নিজেই এই সিগারেট খাস…..”
পরাশর হেসে ফেলে, “বেশ বলেছিস। সাধারন অথচ দামী সিগারেট। ধরে নেওয়া যেতে পারে আততায়ী বড়লোক, রুচিবোধ সম্পন্ন ব্যাক্তি। আমাদের সন্দেহের তালিকা অনুযায়ী কে কে এই সিগারেট ব্যাবহার করতে পারে?”
অনুপমা একটু ভেবে বলে, “সবাই এই সিগারেট ব্যাবহার করতে পারে। যদিও আমি রজত পানিক্করের সাথে আমাদের বিশেষ পরিচয় হয়নি তবে আমাদের সামনে সে কখন সিগারেট ধরায়নি। অনিমেশ, ধৃতিমান সূর্য সবাই এই সিগারেট খেতে পারে।”
মনে মনে অঙ্ক কষে, ওর বাবা সাধারণত চুরুট খায়, তবে মাঝে মধ্যে সিগারেট খায়। বাবার নাম এখন পর্যন্ত পরাশরকে জানানো হয়নি।
পরাশর জিজ্ঞেস করে, “এর পরের কি করনীয় আমাদের?”
অনুপমা বলে, “কাল রঞ্জিতকে বলে আমি নিজেই ওই খাদের মধ্যে রেপ্লিং করে নামবো আর নদীর কিনারা ধরে নিচের দিকে খুঁজতে খুঁজতে যাবো।”
পরাশর ওকে বলে, “খুব বিপদজনক হয়ে যাবে ব্যাপারটা।”
দুঃখিত, ভারাক্রান্ত মনে অনুপমা ওকে বলে, “বিপদ বলে আমার জীবনে আর কিছু নেই। যখন দেবায়ন আমার পাশেই নেই তখন আর বেঁচে থেকে কি লাভ।”
বলতে বলতে ওর গলা ধরে আসে। বারেবারে হাতের আংটি গালে ঘষে বুকের মধ্যে চেপে ধরে দেবায়নের পরশ খুঁজতে চেষ্টা করে।
সারা রাত অনুপমা ঘুমাতে পারে না, পরাশর অনেকক্ষণ জেগে বসে ওকে পাহাড় দিয়েছিল কিন্তু শেষ রাতের দিকে পরাশরের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। শেষ রাতের দিকে অনুপমা তাঁবুর বাইরে দাঁড়িয়ে দুর পাহাড়ের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। হয়ত ওই দূরে পাহাড়ে কোথাও ওর পুচ্চু লুকিয়ে আছে, হয়ত ওর সাথে লুকোচুরির খেলা খেলে যাচ্ছে। একবার যদি ছেলেটাকে ধরতে পারে তাহলে খুব বকুনি দেবে। কখন যে মাটিতে বসে বসে ওর চোখ লেগে গিয়েছিল সেটা আর টের পায়না। ঘুম ভাঙ্গে সকালের পাখীর ডাকে। পুবের আকাশের সূর্যের লালিমার ছটা সোজা ওর চেহারায় এসে পড়তেই চোখ খুলে যায়। সামনে বিস্তীর্ণ বনভূমি, একপাশে নদী।
পরাশর তৈরি হয়ে ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, “রাতে ঘুমোসনি নিশ্চয়। একা একা এইখানে বসে কি করছিলি?”
অনুপমা ম্লান হেসে বলে, “অপেক্ষা করা ছাড়া আর কি করার আছে আমার বল।”
এমন সময়ে রঞ্জিত দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ওকে বলে, “ম্যাডাম একটা খবর পাওয়া গেছে।”
চাপা উত্তেজনায় অনুপমার বুকের ধুকপুকানি থেমে যায়। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “কি খবর।”
রঞ্জিত ওকে বলে, “ঘুট্টুর নিচের দিকের এক গ্রামের একজন গত রাতে নদীতে একজন ছেলেকে ভেসে যেতে দেখে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছে। এই মাত্র আমাকে একজন খবর দিল। যতদূর মনে হয় দেবায়ন হতে পারে।”
অনুপমার ওই শুনে রঞ্জিত আর পরাশর কে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পরে গ্রামের দিকে। ওর পা আর মাটিতে পরে না, হাঁটার বদলে দৌড়াতে শুরু করে অনুপমা। কি অবস্থায় দেখবে, কি রকম আছে, বেঁচে আছে না শেষ দেখা দেখতে পাবে সেই আশঙ্কায় ওর হৃদপিণ্ড বারেবারে লাফিয়ে উঠে গলায় চলে আসে।
রীহ থেকে ঘুট্টূ প্রায় ওরা দৌড়াতে দৌড়াতে আসে। ওদের ওই ভাবে দৌড়ে আসতে একজন দৌড়ে এসে রঞ্জিতকে খবর দেয় নদীতে ভেসে আসা লোকের ব্যাপারে। সেই ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়ির মধ্যে যায় অনুপমা। নদীর পাশে পটে আঁকা ছবির মতন গ্রাম। একটা ছোট পাহাড়ের ওপরে একটা বাড়ি দেখিয়ে সেই ছেলেটা বলে ওই বাড়িতে নদীর থেকে উঠিয়ে আনা দেহকে রাখা হয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে তিনজনে পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে বাড়িতে ঢোকে। ছোট বাড়ির মধ্যে লোকজন উপচে পড়ছে।
অনুপমাদের দেখে বাড়ির কর্তা বেড়িয়ে আসতেই ওকে জিজ্ঞেস করে দেবায়নের ব্যাপারে। বাড়ির কর্তা ওদের নিয়ে ভেতরের ঘরের মধ্যে ঢুকতেই বিছানায় শুয়ে থাকা দেবায়নকে দেখে অনুপমা কেঁদে ফেলে। চেহারা সাদা হয়ে গেছে, বাম পা দুমড়ে গেছে, কপালে গভীর ক্ষতের দাগ। বাড়ির কর্তা দেবায়নের শরীর একটা মোটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে আর বিভিন্ন ক্ষতের জায়গায় পাহাড়ি জড়িবুটির প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে।
দেবায়নকে দেখেই অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলে। বারেবারে ওর গালে কপালে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “প্লিস একবার চোখ খোল সোনা, দেখ তোর পুচ্চি এসে গেছে, প্লিস একবারের জন্য চোখ খোল।”
বাড়ির কর্তা, রাজীব ওদের জানায়, “চারদিনের মতন মনে হয় এই নদীর জলে ভেসে এসেছিল। খুব শক্ত প্রাণ আর আপনার ভালোবাসা খুব প্রবল, নচেত কেউ ওই খাদের মধ্যে এই পাহাড়ি নদীতে পড়ে গিয়ে প্রানে বাঁচে না। এঁকে এখুনি কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমি যতদূর সম্ভব বাঁচাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে, হাত ভেঙ্গে গেছে, মাথায় গভীর চোট লেগেছে, মনে হয় শিরদাঁড়ায় চোট পেয়েছে। এক্সরে না করা পর্যন্ত ভেতরের ক্ষয় ক্ষতি কিছুই বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে গালে কপালে চুমু খেয়ে বারেবারে ডাক দেয়, কিন্তু সেই ডাক আর দেবায়নের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। দেবায়ন অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় ঘাড় কাত করে শুয়ে থাকে। অনুপমাকে ওই অবস্থায় দেখে পরাশর কি করবে কিছুই ভেবে পায় না। দেবায়নকে ফিরে পেয়ে অনুপমার বুক ভরে ওঠে, শেষ পর্যন্ত ওর পুচ্চু আবার ফিরে এসেছে।
কথাটা শেষ করে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়ে অনুপমা। শ্রেয়া আর পায়েল দৌড়ে এসে ওকে বাধা দিতে যায়, কিন্তু অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় দেবায়নের আততায়ীকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত আর বাড়ি ফিরবে না। অনুপমা নিজের সিদ্ধান্তে অটল, সবাই কিংকর্তব্যবিমুঢ়ের মতন ওর দিকে চেয়ে থাকে হাঁ করে। রূপক আর ধীমান এগিয়ে আসে ওর সাথে যাওয়ার জন্য।
অনুপমা রূপককে থামিয়ে দিয়ে বলে, “না রে রূপক, শ্রেয়াকে পায়েলকে সামলাতে তোর দরকার পড়বে। তুই চলে গেলে ওরা সবাই অথৈ জলে পড়ে যাবে।”
পরাশর তখন নিজের ব্যাগ কাঁধে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “তুই একা কেন যাবি, আমিও তোর সাথে যাব চল।”
অবাক চোখে অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুই আবার কেন এত কষ্ট করবি?”
পরাশর ওর কাঁধ চাপড়ে নিচু কণ্ঠে উত্তর দেয়, “তোর অত মাথা ব্যাথা নিতে হবে না। চল বেড়িয়ে পরি অনেকটা পথ আমাদের যেতে হবে। ঘুট্টু পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে যাবে।”
অনুপমা ওকে আর মানা করতে পারে না। গাড়িতে ওঠার আগে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে অনুপমা। পায়েল, অঙ্কন, শ্রেয়া সবার চোখে জল। জারিনা, সঙ্গীতা ঋতুপর্ণা চুপচাপ দাঁড়িয়ে। ওর বাবা, সোমেশ বাবু নির্বাক হয়ে গেছেন। অঙ্কন ছলছল চোখে দিদির দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, হয়ত দিদির সাথে এটাই শেষ দেখা।
গাড়ি ছাড়ার আগে অঙ্কন দৌড়ে এসে দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই কথা দে ফিরে আসবি।”
ভাইকে কি ভাবে সান্ত্বনা দেবে ভেবে পায় না অনুপমা। নিজেও জানে না যে পথে নেমেছে তাঁর শেষ কোথায়, তাও ভাইকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেয়, “আমি ফিরব, নিশ্চয় ফিরব আর দেবায়নকে সাথে নিয়েই ফিরব।”
আর বেশি দাঁড়ায় না অনুপমা, জানে বেশি দাঁড়ালে ওদের দেরি হয়ে যাবে। পরাশর আর অনুপমা, হৃষীকেশ থেকে আবার ঘনসিয়ালির রাস্তা ধরে। গাড়ি আবার হৃষীকেশ থেকে পাহাড়ি সঙ্কীর্ণ পথ ধরে উঠতে শুরু করে দেয়। এইবারে এই পাহাড় আর ওকে টানে না। চুপচাপ অঙ্ক কষতে শুরু করে অনুপমা। দেবায়নের নিরুদ্দেশের পেছনে কার হাত হতে পারে। ওর বাবা সোমেশ সেন, এত তাড়াতাড়ি রীহতে কি করে পৌছাল? বাবার ওপর থেকে সন্দেহ দুর করার জন্য অনুপমা মাকে ফোন করে।
পারমিতা মেয়ের গলা শুনেই উদ্বেগ জনিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুই কেমন আছিস? কি হয়েছে।”
সংক্ষেপে মাকে সব কথা জানিয়ে এটা জানাতে ভোলে না যেন ওর মামনিকে কিছু না জানানো হয়। পারমিতা জানায় দেবশ্রীকে এখুনি কিছুই জানাবে না কিন্তু কতদিন এই সংবাদ দেবশ্রীর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবে। অনুপমা জানায় ঘন সিয়ালি থেকে ফিরে এসে নিজেই মামনিকে জানাবে সম্পূর্ণ ঘটনা তারপরে যা হবার নিজেই মোকাবিলা করবে। জানে একবার এই খবর মামনির কানে পৌঁছালে মামনি মূর্ছা যাবে, কিন্তু কিছুই করার নেই। বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে, ওদের চলে যাওয়ার পরের দিন দেরাদুনের হোটেলের মালিকের সাথে কোন এক বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সোমেশ বেড়িয়ে পড়েন। যাওয়ার সময়ে বলে যান ফিরতে বেশ কয়েকদিন দেরি হবে। বাবা কি সত্যি দেরাদুনে গিয়েছিলেন না দেবায়নের পিছু নিয়েছিলেন? দেবায়ন বাবার অনেক ক্ষতি করেছে, চাকরি ছাড়তে হয়েছে, হয়তো বাবা এর মধ্যে জেনে ফেলেছে যে ওর মায়ের সাথে এক সময়ে দেবায়নের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। দেবায়নের নামে যদিও কোন কোম্পানি নেই তবুও দেবায়ন বাবার পথ থেকে সরে গেলে কোম্পানির সব কিছুর ওপরে বাবার এক ছত্র অধিপতি হবে। কিন্তু বাবার কাছে দেবায়ন সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, এমত অবস্থায় কি বাবা সত্যি দেবায়নকে নিজের পথ থেকে সরাতে চাইবে?
পরাশর ওকে জিজ্ঞেস করে, “এর পেছনে তোর কাকে সন্দেহ হয়।”
বুক ভরে শ্বাস নেয় অনুপমা, “সন্দেহ অনেক কিন্তু ঠিক ধরতে পারছি না কে হতে পারে।”
পরাশর ওকে বলে, “সব সন্দেহ ভাজনদের একটা তালিকা বানানো যাক, তারপরে খুনের উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে।”
অনুপমা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। ওকে খুন করার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি ছিল সেটা যদি সঠিক ভাবে জানা যায় তাহলে আততায়ীকে ধরা আমাদের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে।”
ওদের গাড়ি বারকোট পৌঁছাতেই অনুপমার ফোনে ইনসপেক্টর রোহণের ফোন আসে। ফোনে ইনসপেকটর জানায় নদীতে একটা মৃত দেহ পাওয়া গেছে। সেই শুনে অনুপমার বুক কেঁপে ওঠে, চরম আশঙ্কায় থরথর করে কাঁপতে শুরু করে অনুপমা। পরাশর জানতে চায় সেই মৃতদেহের পরনে কি ছিল। জামা কাপড়ের বিবরন আর দেহের বিবরন শুনে অনুপমা শ্বস্তির শ্বাস নেয়, বুঝে যায় ওই মৃত দেহ দেবায়নের নয়। তাও ইনস্পেক্টর ওদের নিউ তেহেরির হসপিটালে এসে মৃতদেহ শনাক্ত করতে অনুরোধ করে।
ঘনসিয়ালি থানায় গিয়ে সব থেকে আগে পুলিস ইন্সপেক্টিরের সাথে দেখা করে ওরা। তারপরে পুলিসের সাথে নিউ তেহেরির হসপিটালে গিয়ে মৃতদেহ সনাক্ত করে। অনুপমা আর মর্গে ঢুকতে চায় না, পরাশর শনাক্ত করে এসে জানায় ওই মৃতদেহ দেবায়নের নয়। ইনস্পেকটর রোহন জানায় এই দুইদিনে ওরা সেই ছেলের কোন সন্ধান পায়নি। অনুপমা জানায় নিজেই একবার রীহতে গিয়ে আবার দেবায়নের খোঁজ করবে। অনুপমা বদ্ধ পরিকর আগে দেবায়নের খোঁজ করবে তারপরে আততায়ীর খোঁজে যাবে। অনুপমা জানে এই অভিপ্রায় ইনস্পেকটরকে জানালে সে বাধা দেবে তাই আর তাকে কিছু না জানিয়েই পরাশরকে নিয়ে ঘুট্টুর উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে।
ঘুট্টূ পৌঁছে সব থেকে আগে গাইড রঞ্জিতের খোঁজ করে অনুপমা। রঞ্জিতকে জানায় দেবায়নকে খুঁজতে যেতে চায়।
সব শুনে রঞ্জিত ওকে বলে, “ম্যাডাম, স্যার কে খুঁজতে আমাদের কোন আপত্তি নেই তবে আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি। এই পাহাড়ি নদী আর ওই উঁচু খাদ থেকে কেউ পড়ে গেলে তার বাঁচার আশঙ্কা খুব কম। যদি বেঁচে থাকেন স্যার, তাহলে এতদিনে এই আশেপাশের গ্রামের কোন লোক ইতিমধ্যে খুঁজে বের করে নিত। কিন্তু এই চার পাঁচ দিনে আশেপাশের কোন গ্রামের কেউই স্যারকে দেখেনি। তবে আমি জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখছি একজন সন্দেহ জনক ব্যাক্তিকে কয়েকদিন আগে এই এলাকায় দেখা গিয়েছিল।”
অনুপমা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেই লোকের বিষয়ে কি কিছু জানতে পেরেছেন?”
রঞ্জিত ওদের নিয়ে একজনের বাড়িতে যায়। টালির ছাউনি দেওয়া পাহাড়ের এক গ্রাম্য বাড়ি। ওদের এত রাতে দেখে এক বৃদ্ধ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে। রঞ্জিত ওই এলাকার লোক, সেই ওই বৃদ্ধের সাথে পাহাড়ি ভাষায় কথাবার্তা বলে অনুপমাদের জানায়, এই বৃদ্ধ ভদ্রলোক কয়েকদিন আগে এক পাঞ্জাবী লোককে একা একা এইখানে ঘোরাফেরা করতে দেখেছিল। তারপরে অবশ্য সেই পাঞ্জাবী লোকের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সেই পাঞ্জাবী ভদ্রলোক এক একা একটা ব্যাগ তাঁবু ইত্যাদি নিয়ে একাই এইদিকে ঘুরতে এসেছিল বলে ওই বৃদ্ধকে জানায়। সোজা রাস্তা ছেড়ে গ্রামের পথ আর জঙ্গলের পথ ধরে রীহের দিকে যাত্রা করে। বৃদ্ধ জঙ্গলের মধ্যে ছাগল চড়াতে গিয়ে সেই পাঞ্জাবী লোকের দেখা পায়। আরো জিজ্ঞাসাবাদ করে ওরা জানতে পারে যে কয়েকদিন পরে, অর্থাৎ যেদিন এই দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর আগের দিন পর্যন্ত ওই পাঞ্জাবী লোকটাকে জঙ্গলের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। সেই লোকের উচ্চতা মাঝারি, দেহের গঠন মাঝারি, বয়স আন্দাজ পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাসের মাঝামাঝি। বৃদ্ধ এক উল্লেখযোগ্য তথ্য ওদের দেয়। দাড়ি গোঁফ থাকা সত্ত্বেও সেই পাঞ্জাবীটা ঘনঘন সিগারেট টানছিল। সাধারনত এত পাঞ্জাবীরা সিগারেট খায় না। সেই শুনে অনুপমা পরাশরের দৃঢ় বিশ্বাস হয়, আসলে বেশ ভুষা বদলে নকল দাড়ি গোঁফ লাগিয়ে পাঞ্জাবী সেজে আততায়ী এই জায়গায় দেবায়নের অপেক্ষা করেছিল। বৃদ্ধ ওদের এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে পারল না।
সেই রাতে রঞ্জিতের অনুরোধে পরাশর আর অনুপমা ওর বাড়িতে রাত কাটায়। রঞ্জিত জানায় ওর পক্ষে যতদূর সম্ভব সাহায্য সে করবে।
রাতের বেলা পরাশর ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর কাকে সন্দেহ হয়? কে দেবায়নের সব থেকে বড় শত্রু?”
অনুপমা কিছুক্ষণ ভাবতে বসে, এমন প্রচুর গোপন বিষয় আছে যা গোপন থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই পরাশরকে সব কিছু জানানো উচিত হবে না। বিশেষ করে বর্তমানে অনুপমার সন্দেহ নিজের বাবার ওপরে প্রবল। দেবায়ন বাবার সব থেকে বড় পথের কাঁটা হতে পারে, দ্বিতীয় সূর্য, নিজের আর স্ত্রী মনিদিপার অপমানের বদলা নিতে দেবায়নকে মারতে পিছপা হবে না। তৃতীয় ধৃতিমান, দেবায়ন এক সময়ে একও অপদস্থ করেছিল তার বদলা নিতে ধৃতিমান নিশ্চয় মুখিয়ে থাকবে। চতুর্থ, ইন্দ্রনীল আর অনিমেশ আঙ্কেল, যে ভাবে ওদের হাত থেকে রূপক আর দেবায়ন সব কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে তাতে তারাও দেবায়নের ওপরে প্রতিশোধ নেওয়ার ফাঁক খুঁজবে। পঞ্চম, পুনের হোটেলের মালিক রজত পানিক্কর, এক রকম ব্ল্যাকমেইল করেই ওর কাছ থেকে হোটেল হাতিয়ে নিয়ে পথে বসিয়ে দিয়েছে দেবায়ন। বাবাকে ছাড়া বাকি সবার নাম আর উদ্দেশ্য পরাশরকে জানায়। অনুপমা বলতে শুরু করে আর একটা পরাশর একটা প্যাডের মধ্যে সব কিছু লিখতে শুরু করে।
সব শুনে পরাশর ওকে বলে, “এক বার ওই ছেলেটাকে পেলে বড় ভালো হত কিন্তু যখন ছেলেটাকে পাওয়া যাচ্ছে না তখন আমাদের মনে হয় রীহের ওই জঙ্গলে একবার যাওয়া উচিত। এক রাতে নিশ্চয় ওই আততায়ী রীহ থেকে ঘুট্টু হেঁটে আসেনি। এই রাস্তা ওর অজানা সুতরাং যতদূর মনে হয় এই কয়দিন ওই আততায়ী ওই জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়েছিল।”
অনুপমা মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। তবে আমাদের আসল উদ্দেশ্য দেবায়নকে খুঁজে পাওয়া। আগে আমরা দেবায়নকে খুঁজতে নামবো ওই খাদের মধ্যে তারপরে আততায়ীকে খুঁজবো।”
পরের দিন সূর্যের আলো ফোটা মাত্রই ওরা রীহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এইবারে দশ কিলোমিটার যেতে ওদের আর ছয় ঘন্টা লাগলো না। অনুপমার বুকে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করে দেয়, ওর শরীরে নতুন রক্তের সঞ্চার হয়, দেবায়নকে খোঁজার এক নতুন সাহস আর শক্তি নিয়ে দুপুরের আগেই রীহ পৌঁছে যায় ওরা। সাথে দুইজন পোর্টার নিয়ে গিয়েছিল।
রঞ্জিতের সাথে খাদের কিনারায় এসে পুনরায় ওই জায়গাটা তদারকি করে দেখে। প্রথম দিনে যযে পায়ের ছাপ গুলো ওরা দেখেছিল এতদিনে বহু পায়ের ছাপের ফলে সেই ছাপ গুলো মাটিতে মিশে গেছে। তাও কিছুটা আন্দাজ করে যেদিকে আগে আততায়ীর পায়ের ছাপ গিয়েছিল সেদিকে ওরা হাঁটতে শুরু করে দেয়। বেশ কিছুটা দুর গিয়ে আন্দাজ মতন আততায়ীর পায়ের ছাপ অনুসরন করে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এদিক ওদিক ভালো ভাবে দেখতে দেখতে পরাশর আর অনুপমা এগিয়ে চলে, পেছনে রঞ্জিত আর দুটো ছেলে। ঘন জঙ্গল, উঁচু উঁচু দেবদারু পাইন ইত্যাদি গাছে ভরা, ভিজে মাটি নরম পাতা আর ঘাসে ঢাকা। বেশ কিছদুর গিয়ে একটা খালি জায়গা দেখে ওরা থেমে যায়। ঘন জঙ্গলের মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা সদ্য পরিষ্কার করে তাঁবু খাটানোর আর থাকার চিহ্ন দেখতে পায়। অনুপমার সন্দেহ দুর হয়ে যায়, এই জায়গায় নিশ্চয় ওই আততায়ী বেশ কয়েকদিন থেকেছে। সঙ্গে সঙ্গে রঞ্জিত পরাশর আর অনুপমা চারপাশে তথ্য প্রমান যোগাড় করার জন্য লেগে পড়ে। খুঁজে খুঁজে একটা খালি সিগারেট প্যাকেট পায়, বেশ কিছু প্লাস্টিকের ব্যাগ, বেশ কিছু বিস্কুটের প্যাকেট ম্যাগির প্যাকেট জলের বোতল ইত্যাদি খুঁজে পায়। রঞ্জিত সব কিছু একটা প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে জড় করে অনুপমার হাতে তুলে দেয়। আরো বেশ কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুঁজে নদীর দিকে চলে আসে। রঞ্জিত জানায় বৃদ্ধের বিবরনের কোন পাঞ্জাবী লোককে নিচের দিকে নামতে দেখেনি সুতরাং ধরে নেওয়া যায় ওই আততায়ী রীহ ছাড়িয়ে উপরের দিকে হয়ত উঠে গেছে নয়ত আরো গভীর জঙ্গলের পথ ধরে অন্যপাশ দিয়ে নেমে গেছে।
ওইখানে আরো বেশ কিছখন খোঁজাখুঁজি করার পরে তিনজনে তাঁবুতে ফিরে আসে। পরাশর ব্যাগের মধ্যে থেকে সিগারেট প্যাকেট বের করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোর জানাশোনার মধ্যে কেউ কি এই সিগারেট খায়?”
বেশ দামী সিগারেট প্যাকেট দেখে অনুপমা স্মিত হেসে বলে, “তুই নিজেই এই সিগারেট খাস…..”
পরাশর হেসে ফেলে, “বেশ বলেছিস। সাধারন অথচ দামী সিগারেট। ধরে নেওয়া যেতে পারে আততায়ী বড়লোক, রুচিবোধ সম্পন্ন ব্যাক্তি। আমাদের সন্দেহের তালিকা অনুযায়ী কে কে এই সিগারেট ব্যাবহার করতে পারে?”
অনুপমা একটু ভেবে বলে, “সবাই এই সিগারেট ব্যাবহার করতে পারে। যদিও আমি রজত পানিক্করের সাথে আমাদের বিশেষ পরিচয় হয়নি তবে আমাদের সামনে সে কখন সিগারেট ধরায়নি। অনিমেশ, ধৃতিমান সূর্য সবাই এই সিগারেট খেতে পারে।”
মনে মনে অঙ্ক কষে, ওর বাবা সাধারণত চুরুট খায়, তবে মাঝে মধ্যে সিগারেট খায়। বাবার নাম এখন পর্যন্ত পরাশরকে জানানো হয়নি।
পরাশর জিজ্ঞেস করে, “এর পরের কি করনীয় আমাদের?”
অনুপমা বলে, “কাল রঞ্জিতকে বলে আমি নিজেই ওই খাদের মধ্যে রেপ্লিং করে নামবো আর নদীর কিনারা ধরে নিচের দিকে খুঁজতে খুঁজতে যাবো।”
পরাশর ওকে বলে, “খুব বিপদজনক হয়ে যাবে ব্যাপারটা।”
দুঃখিত, ভারাক্রান্ত মনে অনুপমা ওকে বলে, “বিপদ বলে আমার জীবনে আর কিছু নেই। যখন দেবায়ন আমার পাশেই নেই তখন আর বেঁচে থেকে কি লাভ।”
বলতে বলতে ওর গলা ধরে আসে। বারেবারে হাতের আংটি গালে ঘষে বুকের মধ্যে চেপে ধরে দেবায়নের পরশ খুঁজতে চেষ্টা করে।
সারা রাত অনুপমা ঘুমাতে পারে না, পরাশর অনেকক্ষণ জেগে বসে ওকে পাহাড় দিয়েছিল কিন্তু শেষ রাতের দিকে পরাশরের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। শেষ রাতের দিকে অনুপমা তাঁবুর বাইরে দাঁড়িয়ে দুর পাহাড়ের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। হয়ত ওই দূরে পাহাড়ে কোথাও ওর পুচ্চু লুকিয়ে আছে, হয়ত ওর সাথে লুকোচুরির খেলা খেলে যাচ্ছে। একবার যদি ছেলেটাকে ধরতে পারে তাহলে খুব বকুনি দেবে। কখন যে মাটিতে বসে বসে ওর চোখ লেগে গিয়েছিল সেটা আর টের পায়না। ঘুম ভাঙ্গে সকালের পাখীর ডাকে। পুবের আকাশের সূর্যের লালিমার ছটা সোজা ওর চেহারায় এসে পড়তেই চোখ খুলে যায়। সামনে বিস্তীর্ণ বনভূমি, একপাশে নদী।
পরাশর তৈরি হয়ে ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, “রাতে ঘুমোসনি নিশ্চয়। একা একা এইখানে বসে কি করছিলি?”
অনুপমা ম্লান হেসে বলে, “অপেক্ষা করা ছাড়া আর কি করার আছে আমার বল।”
এমন সময়ে রঞ্জিত দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ওকে বলে, “ম্যাডাম একটা খবর পাওয়া গেছে।”
চাপা উত্তেজনায় অনুপমার বুকের ধুকপুকানি থেমে যায়। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “কি খবর।”
রঞ্জিত ওকে বলে, “ঘুট্টুর নিচের দিকের এক গ্রামের একজন গত রাতে নদীতে একজন ছেলেকে ভেসে যেতে দেখে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছে। এই মাত্র আমাকে একজন খবর দিল। যতদূর মনে হয় দেবায়ন হতে পারে।”
অনুপমার ওই শুনে রঞ্জিত আর পরাশর কে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পরে গ্রামের দিকে। ওর পা আর মাটিতে পরে না, হাঁটার বদলে দৌড়াতে শুরু করে অনুপমা। কি অবস্থায় দেখবে, কি রকম আছে, বেঁচে আছে না শেষ দেখা দেখতে পাবে সেই আশঙ্কায় ওর হৃদপিণ্ড বারেবারে লাফিয়ে উঠে গলায় চলে আসে।
রীহ থেকে ঘুট্টূ প্রায় ওরা দৌড়াতে দৌড়াতে আসে। ওদের ওই ভাবে দৌড়ে আসতে একজন দৌড়ে এসে রঞ্জিতকে খবর দেয় নদীতে ভেসে আসা লোকের ব্যাপারে। সেই ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়ির মধ্যে যায় অনুপমা। নদীর পাশে পটে আঁকা ছবির মতন গ্রাম। একটা ছোট পাহাড়ের ওপরে একটা বাড়ি দেখিয়ে সেই ছেলেটা বলে ওই বাড়িতে নদীর থেকে উঠিয়ে আনা দেহকে রাখা হয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে তিনজনে পাহাড়ের সিঁড়ি বেয়ে বাড়িতে ঢোকে। ছোট বাড়ির মধ্যে লোকজন উপচে পড়ছে।
অনুপমাদের দেখে বাড়ির কর্তা বেড়িয়ে আসতেই ওকে জিজ্ঞেস করে দেবায়নের ব্যাপারে। বাড়ির কর্তা ওদের নিয়ে ভেতরের ঘরের মধ্যে ঢুকতেই বিছানায় শুয়ে থাকা দেবায়নকে দেখে অনুপমা কেঁদে ফেলে। চেহারা সাদা হয়ে গেছে, বাম পা দুমড়ে গেছে, কপালে গভীর ক্ষতের দাগ। বাড়ির কর্তা দেবায়নের শরীর একটা মোটা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে আর বিভিন্ন ক্ষতের জায়গায় পাহাড়ি জড়িবুটির প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে।
দেবায়নকে দেখেই অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলে। বারেবারে ওর গালে কপালে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “প্লিস একবার চোখ খোল সোনা, দেখ তোর পুচ্চি এসে গেছে, প্লিস একবারের জন্য চোখ খোল।”
বাড়ির কর্তা, রাজীব ওদের জানায়, “চারদিনের মতন মনে হয় এই নদীর জলে ভেসে এসেছিল। খুব শক্ত প্রাণ আর আপনার ভালোবাসা খুব প্রবল, নচেত কেউ ওই খাদের মধ্যে এই পাহাড়ি নদীতে পড়ে গিয়ে প্রানে বাঁচে না। এঁকে এখুনি কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। আমি যতদূর সম্ভব বাঁচাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে, হাত ভেঙ্গে গেছে, মাথায় গভীর চোট লেগেছে, মনে হয় শিরদাঁড়ায় চোট পেয়েছে। এক্সরে না করা পর্যন্ত ভেতরের ক্ষয় ক্ষতি কিছুই বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।”
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে গালে কপালে চুমু খেয়ে বারেবারে ডাক দেয়, কিন্তু সেই ডাক আর দেবায়নের কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। দেবায়ন অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় ঘাড় কাত করে শুয়ে থাকে। অনুপমাকে ওই অবস্থায় দেখে পরাশর কি করবে কিছুই ভেবে পায় না। দেবায়নকে ফিরে পেয়ে অনুপমার বুক ভরে ওঠে, শেষ পর্যন্ত ওর পুচ্চু আবার ফিরে এসেছে।