06-10-2020, 04:50 PM
পর্ব ২৭ (#০৭)
রঞ্জিত জানায়, প্রথম কিছুটা খুব কষ্ট হবে তারপরে একবার হাঁটার ছন্দ পেয়ে গেলে তখন হাঁটতে আর কষ্ট হবে না। ঠিক তাই হল, শুরুতে চড়াই, আশেপাশে বিশেষ গাছ পালা নেই শুধু মাত্র উঁচু উঁচু পাইন গাছ ছাড়া। দুর উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওদের সামনে থেকে দৌড়ে এসে ওদের ঘায়েল করতে প্রস্তুত। একপাশে গভীর খাদের মধ্যে নিয়ে ভিলাঙ্গনা নদী কুলুকুলু শব্দে, মত্ত ছন্দে পাহাড় কেটে, পাথরের বাঁধা উপেক্ষা করে বয়ে চলেছে মোহনার পানে। তেহেরিতে গিয়ে এই নদী ভাগীরথীর সাথে মিশে নীচে নেমে যাবে গঙ্গা হিসাবে। চারাপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে সবাই ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।
যাত্রা শুরুর পূর্বে রঞ্জিত ওদের সবার হাতে একটা লাঠি দিয়ে দিয়েছিল, বলেছিল এই লাঠির ভর দিয়ে পাহাড়ে চড়তে বেশ সুবিধা হয়। প্রথমে সবাই লাঠি দেখে হাসাহাসি করেছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঠিটাই সর্বস্ব সম্বল বলে মনে হয় সবার। দলের একদম শুরুতে রঞ্জিত চলছে আর একদম শেষে মনীষা আর শান্তনু।
কিছদুর গিয়ে অনুপমার পা আর চলে না। এক হাত দেবায়নের কাঁধে ভর দিয়ে কোনরকমে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “উফফফ মাগো এই জায়গায় কেউ আসে নাকি?”
শ্রেয়া ওইদিকে রুপকের ওপরে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুমি বেড়ানোর আর জায়গা খুঁজে পেলে না?”
বাকি মেয়েদের চেয়ে ঋতুপর্ণা আর জারিনা বেশ উচ্ছল প্রানবন্ত, ওদের দেখে অনুপমা আর মনীষা বুকে বল পায়। অনুপমা জারিনাকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মেয়ে, এত নাচছিস কেন?”
জারিনা ওর কথা শুনে হেসে বলে, “অনুদি, সত্যি বলছি এইরকম জায়গায় আনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।”
অনুপমা হেসে বলে, “ওরে আমি আনিনি তোদের, এই সব প্ল্যান ওই রূপকের।”
শ্রেয়া হেসে বলে, “এক বার কোলকাতা ফিরি তারপরে দেখি কে কাকে ধন্যবাদ দেয়।”
পেছন থেকে শান্তনু চেঁচিয়ে বলে, “একবার খাটলিং পৌঁছে এই কথা বল। তখন ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাবে না।”
হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠে, একটু থেমে জল মুখের মধ্যে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু। এখন আর ওদের বিশেষ ঠাণ্ডা লাগছে না, অনেকেই জ্যাকেট খুলে দিয়েছে। ভোরের আলো সদ্য স্নান করিয়ে দেয় আশেপাশের সবুজে ঢাকা গাছ পালা ঝোপ ঝাড় কে। আরো একটু হেঁটে যাওয়ার পরে সামনে আসে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গল দেখে অনেকের ভয় করে, এই রকম জঙ্গল ওরা শুধু মাত্র সিনেমাতে দেখে ছিল। ওদের মনে হয় সত্যি সত্যি ওরা কোন রোমাঞ্চকর সিমেনার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
অনুপমার এখন আর ক্লান্তি লাগে না, অন্য মেয়েদের সাথে গল্প করতে করতে হেঁটে চলে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। মনীষা শান্তনুকে ছেড়ে ওদের কাছা কাছি চলে এসেছে। একদম শুরুর দিকে ঋতুপর্ণা আর জারিনা, তাদের পেছনে শ্রেয়া, পায়েল অনুপমা সঙ্গীতা আর মনীষা। অনুপমা একবার পেছনের দিকে দেখে। ধীমান, দেবায়ন আর রূপক একদম পেছনে, নিশ্চয় কোথাও বসে সিগারেট ফুঁকছে ওরা। শান্তনু এগিয়ে গিয়ে ওদের হাঁটতে বলে, বলে যে ধীমান দেবায়ন একটু মদ্য সেবন করে আসছে। সেই শুনে অনুপমা একটু রেগে যায়, ঘুরতে এসেও মদ খেতে হবে নাকি?
চেঁচিয়ে ডাক দেয় দেবায়নকে, “পুচ্চু তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
গাছ পালা ভর্তি জঙ্গলের মাঝে সরু পায়ে হাঁটা পথ, রীহ, গাঙ্গি ওইদিকে আরো অনেক ছোট ছোট গ্রাম আছে সেই গ্রামের বাসিন্দারা বাইরের জগত থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন থাকে, এই পথে যেতে যেতে ওদের মনে হয় যেন কোন স্বপ্ন পুরীর মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে ওরা। এক মাস আগেই বর্ষা শেষে গাছ পালা সব সবুজ পাতায় ঢাকা, পায়ের তলায় স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, চারপাশে ছোট ছোট জংলি ফুলের গাছ, লতাপাতা, কোথা থেকে কোন পাখীর ডাক শোনা যায়, একপাশে একটা ছোট নাম না জানা পাহাড়ি নদী গর্জন করতে করতে এগিয়ে চলেছে মোহনার পানে।
শ্রেয়া ওকে বলে, “ইসসস আমার না গান গাইতে ইচ্ছে করছে।”
মনীষা বলে, “গাও, কে বারন করেছে।”
শ্রেয়া গেয়ে ওঠে, “ইয়ে কাঁহা আআআআ গয়ে হম” অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তেরে সাথ চলতে চলতে….. তেরি বাহো মে ইয়ে জানম….. মেরি জিস্মোওও যা পিঘলতে…..”
অনুপমা গায়, “তু বদন মেয় তেরা ছায়া, তু না হ’ত মেয় কাঁহা হু….. ”
ঋতুপর্ণা সামনে থেকে চেঁচিয়ে বলে, “আরে আরে হল হল না, অমিতাভের কবিতা কেউ বলবে না নাকি?”
শান্তনু গেয়ে ওঠে, “ইয়ে রাত হ্যায় ইয়া তুমহারি জুলফে খুলি হুয়ি হ্যায়…..”
মনীষা হেসে বলে, “ডার্লিং এটা আমার চুল…..”
সবাই হেসে ফেলে। গান গাইতে গাইতে জঙ্গল পার করতে করতে ওদের রীহ পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে যায়। পাহাড়ের কোলে একটা সমতল খাদের পাশে অবস্থিত পটে আঁকা ছবির মতন ছোট গ্রাম রীহ, বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই গ্রামে ছোট একটা রেস্ট হাউস আর বেশ কয়েকটা বাড়ি ঘর আছে। ওদের জন্য আগে থেকেই ওদের গাইড জায়গা ঠিক করে রেখেছিল। মাল বাহকেরা ওদের অনেক আগেই ওইখানে পৌঁছে গিয়েছিল। ওরা সবাই এইখানকার বাসিন্দা, রোজদিন এই পাহাড়ি রাস্তায় যাতায়াত করে, ঘুট্টু থেকে রীহ, দশ কিলোমিটার পথ অনুপমাদের ছয় ঘন্টা লেগে যায়, কিন্তু মাল নিয়ে ছেলেগুলো অনায়াসে তিন ঘন্টায় সেই পথ পাড় করে উপস্থিত। মাল বাহক ছেলেরা তাঁবু খাটিয়ে দিয়েছে, একজন ওদের জন্য রান্নাও শুরু করে দিয়েছে। সবার আলাদা আলাদা ছোট ছোট তাঁবু, গোল করে বাঁধা হয়েছে, মাঝখানে খালি জায়গা। একপাশে টয়লেট করার তাঁবু, একপাশে রান্না করার তাঁবু, অন্যপাশে মাল বাহকদের জন্য তাঁবু খাটান হয়ে গেছে।
ছয় ঘন্টা হেঁটে অনেকের পায়ের অবস্থা খুব খারাপ। ওদের একটু দূরে দুটো দল তাঁবু গেড়েছে। রঞ্জিত খোঁজ নিয়ে ওদের জানায়, একটা জার্মানি ফ্রান্সের দল, যারা ওডেন’স কল যাবে, আর দ্বিতীয় একটা পাঞ্জাবী দল যারা মাসার তাল যাবে। বিদেশী দলটার সরঞ্জাম অনেক বেশি, কারন ওডেন’স কল নাকি রীতিমত মাউন্টেনিয়ারিং করে উঠতে হয়। ওডেন’স কল হয়ে ওরা কেদারনাথ যাবে, অনেক দিনের পরিকল্পনা।
তাঁবুর মাঝখানের খালি জায়গায় পৌঁছেই অনুপমা সবুজ ঘাসে ঢাকা মাটির ওপরে সটান শুয়ে পড়ে, ওর পাশে দেবায়ন শুয়ে পরে। দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে প্রেমাবেগে বলে, “ইসসস জীবনটা এইভাবে কেটে গেলে বড় ভালো হত।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে গালে ছোট চুমু খেয়ে বলে, “কি করতিস এইখানে?”
দুরের ছোট ছোট বাড়ি দেখিয়ে বলে, “ওর একটার মধ্যে আমাদের একটা বাড়ি হত, তুই ওই খেতে কাজ করতিস আমি তোর জন্য ঘরে বসে রান্না করতাম।”
দেবায়ন হেসে ওর বাম হাতের অনামিকা দেখিয়ে বলে, “আর এটার কি হত?”
অনুপমা স্মিত হেসে বলে, “তুই পাশে থাকলে এই হীরের আংটি জলে ফেলে দিতে পারি।” বলেই ওর গলা জড়িয়ে গালে একটা চুমু খায়।
ওদের ওইভাবে জড়াজড়ি করে ঘাসে শুয়ে থাকতে দেখে ঋতুপর্ণা আর শ্রেয়া কাছে এসে ফেরিওয়ালার মতন একটা সুর টেনে বলে, “চাই….. নাকি কন্ডোম চাইইইই….. দশ টাকায় তিনটে কন্ডোম….. বেশ ভালো কন্ডোম, ঢুকলে পরে মনে হবে না…..”
দেবায়ন ঋতুপর্ণার হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে বলে, “রাতে চলে আসিস কন্ডোম ছাড়াই ঢুকিয়ে দেব…..”
গরম জলে হাত মুখ ধুয়ে সবাই খেতে বসে যায়। আলুসিদ্ধ আর খিচুড়ি রান্না করেছিল সঙ্গে আসা রান্নার লোক। সবাই বেশ ক্লান্ত, খেয়েদেয়েই সবাই ঘুমিয়ে পরে। তাঁবুতে ঢুকে অনুপমা দেবায়ন কে জড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রা দেবীর কোলে ঢলে পড়ে।
ছেলেরা অনেক আগেই উঠে গিয়েছিল। অনুপমা উঠে দেখে পাশে দেবায়ন নেই, বাইরে ওদের হাসির আওয়াজ শোনা যায়। চোখ ডলতে ডলতে বাইরে বেড়িয়ে দেখে মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় অনেক শুকনো কাঠ জড় করা হয়েছে, রাত বাড়লে ওই কাঠে আগুন জ্বালিয়ে বনফায়ার করা হবে। বেশ মজা হবে। বিকেলে যখন সবাই ওঠে ততক্ষণে সূর্য পাটে বসার সময় হয়ে গেছে। চারপাশের ঘন জঙ্গল থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আরো কত রকমের পোকা মাকরের গুনগুন শব্দ, একপাশ থেকে ভেসে আসা একটানা নদীর কুলুকুলু ধ্বনি, পরিবেশ টাকে মোহাচ্ছন করে দেয়।
রঞ্জিত জানায়, দুটো মাল বাহি ছেলের বাড়ি এই গ্রামেই তাই বাকি মাল বাহি ছেলেরা আজ রাতে ওর বাড়িতে থেকে যাবে। আগামী কাল সকালে রীহ থেকে গাঙ্গি যাওয়া হবে।
চা খাবার দাবার খেতে খেতে সন্ধ্যে নেমে যায়। শুকনো কাঠে আগুন জ্বালিয়ে বনফায়ার জ্বালানো হয়। চারপাশে গোল করে সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে গল্পে মেতে ওঠে। রূপক ধীমান ইতিমধ্যে মদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে। মেয়েরা জানিয়ে দেয় ওর মদ খাবে না, তবে শ্রেয়া আর অনুপমার একটু রাম নিতে আপত্তি নেই।
কি করা যায়, কি করা যায়, ঋতুপর্ণা বলল, “একটা খেলা খেললে কেমন হয়?”
সবাই জিজ্ঞেস করে, “কি?” ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “ট্রুথ ওর ডেয়ার।”
দেবায়ন বলে, “খেলতে পারি তবে যা বলা হবে সেটা যেন কেউ না না করে আর যা জিজ্ঞেস করা হবে তার যেন সঠিক উত্তর পাওয়া যায়।” সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করে ওঠে, বেশ মজা হবে।
ধীমান বাকিদের মানে, প্রবাল, অঙ্কন শান্তনু মনীষা এদের বলে, “দেখ ভাই আমরা সবাই বন্ধু আর খুব খোলামেলা। এইখানে সঙ্কোচ করলে কিন্তু চলবে না।”
মনীষা আর জারিনা একটু দোনামনা করার পরে সম্মতি জানায়।
সঙ্গীতাকে প্রবাল এক প্রকার পেঁচিয়ে ধরে। অনেকক্ষণ পরে প্রবাল মুখ খোলে, “ঠিক কি করতে হবে এই খেলায়?” সঙ্গীতা ওকে খেলার নিয়ম কানুন বুঝিয়ে দেয়। প্রবাল স্মিত হেসে মেনে যায়।
দেবায়ন মনীষাকে দেখে বলে, “তুমি টিম লিডারের বউ সুতরাং তোমার থেকেই শুরু করা যাক।” মনীষা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলে দেবায়ন ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বল, ট্রুথ ওর ডেয়ার?”
মনীষা উত্তর দেয়, “ট্রুথ।”
রূপক হাঁ হাঁ করে হেসে ওঠে, “ওকে ম্যাডাম, শুনেছিলাম তোমার ব্রেডে গতকাল জ্যাম লাগানো ছিল সেটা কি এখন লাগানো চলছে না হয়ে গেছে?”
মনীষা মুখ কাঁচুমাচু করে মিচকি হেসে বলে, “লাগানো শেষ হয়ে গেছে।”
দেবায়ন শান্তনুর কাঁধ চাপড়ে বলে, “ব্যাস তাহলে পাঁচদিনের কাজ আজ রাতে পূরণ করে নিও।”
ওর পাশে শান্তনু বসে, রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “ট্রুথ ওর ডেয়ার?”
শান্তনু বলে, “ডেয়ার।”
ধীমান ওকে বলে, “আচ্ছা বেশ, তোমার সুপারম্যান পছন্দ না অরন্যদেব পছন্দ? যাকে পছন্দ সেই মতন কাপড় পর।”
শান্তনু হেসে বলে, “আরে বাবা এটা কলেজে অনেকবার হয়ে গেছে অন্য কিছু দাও।”
মনীষা হাঁ হাঁ করে ওঠে, “কলেজে হয়েছে তো কি হয়েছে। তোমাকে করতে হবে এটাই নিয়ম।”
উত্তর থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ওরা সবাই পাশের সঙ্গীর কোলে সেঁধিয়ে যায়। দেবায়ন একপ্রকার অনুপমাকে কোলের মধ্যে বসিয়ে নিয়েছে। হাতে মদের গেলাসের সাথে সাথে সঙ্গে আনা মাংসের কাবাব খেতে খেতে সবাই হেসে ফেলে মনীষার কথা শুনে।
অগত্যা শান্তনু উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “অরন্যদেব করতে পারি।” সবাই হেসে বলে তাই কর। শান্তনু প্যান্ট খুলে, জ্যাকেট খুলে জামা আর জাঙ্গিয়া পরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। ঠাণ্ডায় ওর লিঙ্গের অবস্থা খারাপ, সেটা আর নিজের জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়না।
সেই দেখে ধীমান হেসে মনীষাকে বলে, “ম্যাডাম, ওর যে বাঁড়া নেই আজ রাতে কি করে কাটাবে?” আবার হাসির কলতান ওঠে।
তার পাশে ধীমান আর ঋতুপর্ণা। এইবারে মনীষা ঋতুপর্ণাকে জিজ্ঞেস করে, “ট্রুথ ওর ডেয়ার।” ঋতুপর্ণা উত্তরে ট্রুথ বলে। শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে ওকে জিজ্ঞেস করে, “প্রথম বার তোর পেছনে কে ঢুকিয়েছিল?”
ঋতুপর্ণা লজ্জায় পড়ে ধীমানের দিকে তাকায়। ধীমান ভুরু কুঁচকে ওকে বলে, “আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে কি হবে ডার্লিং, উত্তর দাও।”
ঋতুপর্ণা মাথা চুলকে মুখ কাঁচুমাচু করে উত্তর দেয়, “নার্সিং পড়ার সময়ে একটা বয় ফ্রেন্ড ছিল, সঞ্জীব।”
সবাই হিহি করে হেসে ওঠে। ধীমান চোখ বড় বড় করে বলে, “ওই ছোট্ট বাঁড়া শেষ পর্যন্ত তোমার পেছনে ঢুকিয়েছিল?”
ঋতুপর্ণা ওকে মারতে মারতে বলে, “উত্তর দিয়ে দিয়েছি ব্যাস আর নয়।”
এরপরে ধীমানের পালা, ধীমান সঙ্গে সঙ্গে ডেয়ার করতে রাজি হয়ে যায়। খেলা এইভাবে চলতে থাকে একের পর এক। প্রবালকে বলা হয়, সঙ্গীতার যোনি রসের ভিস্কোসিটি কত। জারিনাকে বলা হয়, পরাশরের লিঙ্গের ভলিউম মেপে জানাও। পায়েল বুঝতে পারে অঙ্কনকে ওরা সবাই বেশ ফাঁদে ফেলবে। এইভাবে এক এক করে সবাইকে বেশ বেকায়দায় ফেলে খেলা ঘুরে চলে।
খেলা চলতে চলতে অন্ধকার চিরে একটা ছেলের আবির্ভাব হয়। ভুত দেখার মতন সবাই চমকে ওঠে। ছেলেটা মনে হয় ওদের পোর্টার দলের কেউ, জ্যাকেট পরা, মাথায় টুপি।
দেবায়নকে এসে বলে, “বাবু কিছু টাকা চাই।”
দেবায়ন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কে?”
রঞ্জিত ওদের সঙ্গে ছিল না, অনেক আগেই খেয়ে দেয়ে নিজের তাঁবুতে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছে। পোর্টার দের কারুর নামধাম ওদের জানা নেই। তাও ছেলেটাকে দেখে ওদের দলের পোর্টার বলেই মনে হয় দেবায়নের। ছেলেতা উত্তরে বলে ওদের দলের রাজু পোর্টার। মদ খাওয়ার জন্য একটু টাকা চায়।
দেবায়ন পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে গেলে ছেলেটা বলে, “না বাবু, মানে আপনাকে একটু আমার সাথে আসতে হবে। মানে ওইদিকে আমাদের পোর্টার দলের সর্দার দাঁড়িয়ে আছে, ওর হাতে টাকা দিলে ভালো।”
দেবায়ন অনুপমাকে কোল থেকে নামিয়ে বলে, “এই শোন আমি ওদের টাকা দিয়ে আসছি, ব্যাস এই যাবো আর আসব।”
অনুপমা ওর হাত ধরে বলে, “তাড়াতাড়ি আসিস, তুই না থাকলে একদম ভালো লাগে না।”
ওর কপালে চুমু খেয়ে দেবায়ন চলে যায়। ট্রুথ আর ডেয়ার খেলা আবার শুরু হয়ে যায়। খেলা চলতে থাকে কিন্তু অনুপমার মন পড়ে থাকে দেবায়নের জন্য। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে এখন আসার আর নাম নেই। কোথায় গেল ছেলেটা, বলে গেল এখুনি আসছি। বাকিরা এখন খেলায় মত্ত, কিন্তু অনুপমা বারেবারে দেবায়নের যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে দেখে। নদীর কুলুকুলু ধ্বনি, পাহাড় থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওর মনের গভীরের উৎকণ্ঠা আরো চাগিয়ে দেয়। বারেবারে বাম হাতের অনামিকার জ্বলজ্বলে আংটির দিকে তাকায় আর পেছন ঘুরে যেদিকে দেবায়ন গেছে সেদিকে চেয়ে থাকে। সামনে আগুন জ্বলছে, সবাই বেশ মজা গল্প করছে কিন্তু অনুপমার মন আর কিছুতেই মানে না। পোর্টারদের টাকা দিতে এত দেরি লাগে নাকি?
শ্রেয়া ওর পাশে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মন খারাপ লাগছে নাকি?”
অনুপমা ম্লান হেসে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে এতক্ষণ হয়ে গেল এখন আসছে না।”
আরো কিছুক্ষণ কেটে যায়। দেবায়ন গেছে প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল, এত দেরি করা উচিত নয়। শুধু মাত্র টাকা দেবে আর চলে আসবে। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রূপক আর ধীমানকে বলে, “এই প্লিস তোরা একটু দেখে আয় না দেবু কোথায় গেছে।”
রূপক হেসে ওর কথা উড়িয়ে দিয়ে বলে, “আরে বাবা এই নির্জন স্থানে আর কি হবে। শালা ওই পোর্টার দের সাথে হয়ত দেশী গিলতে বসে গেছে চলে আসবে।”
অনুপমা কাতর কণ্ঠে ওকে অনুরোধ করে, “প্লিস, একবার, এক ঘন্টা হয়ে গেল।”
ধীমান কিছু একটা বলতে যায়, ঋতুপর্ণা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তোমাদের একবার যেতে কি হয়েছে? গিয়ে দেখো না দেবায়ন কোথায় গেল।”
পরাশর প্রবাল উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আচ্ছা আচ্ছা আমরা যাচ্ছি।”
পরাশর চলে গেল, ধীমান রূপক চলে গেল। ওদের খেলা ভেঙ্গে গেল। অনুপমা প্রবল উৎকণ্ঠায় উঠে দাঁড়িয়ে যেদিকে ওরা গেছে সেদিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। একপাশে পায়েল অন্য পাশে শ্রেয়া ওকে প্রবোধ দেয়, এই ত চলে আসবে এত চিন্তা করছিস কেন? কিন্তু অনুপমার মন আর মানে না। বারেবারে আঙ্গুলের আংটি ঘষে দেখে আর বুকের মধ্যে চেপে ধরে। হঠাৎ করে এক দমক ঠাণ্ডা হাওয়া ওকে এসে কাঁপিয়ে দেয়।
অঙ্কন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দিদির সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “দিদিভাই দিদিভাই, দেবায়নদাকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
শ্রেয়ার ভাবে অঙ্কন মজা করছে তাই জিজ্ঞেস করে, “কি উল্টোপাল্টা বলছিস তুই। কেন বেচারির সাথে এই সময়ে মজা করছিস?”
অনুপমা ওই কথা শুনে কেঁপে ওঠে, হটাত করে ওর বুক ফাঁকা হয়ে যায়। অঙ্কন হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের বলে, “দিদিভাই ওদিকে চল…..” বলে দুর নদীর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়।
আপনা হতেই অনুপমার হাত মুঠি হয়ে যায়, ওর চোখ জোড়া ভরে ওঠে, গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। পুচ্চুকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? কি বলতে চাইছে ভাই? না, মদ খেয়ে কিছু হয়ে গেল না তো? যদি অঙ্কন মজার ছলে বলে থাকে তাহলে ওকে মেরে ফেলবে।
ধীমান এমন সময়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ওদের কাছে আসতেই অনুপমা কাঁপতে কাঁপতে ওকে জিজ্ঞেস করে, “দেবুকে পেলি?”
ধীমান মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “না রে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।”
শ্রেয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, “রূপক আর শান্তনু কোথায়?”
ধীমান ওদের উত্তর দেয়, খাদের কিনারায়, নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ওরা। খাদের কথা শুনে অনুপমার মাথা ঘুরে যায়, শরীর টলতে শুরু করে দেয়। না, এটা হতে পারে না। মাথার ওপরে আকাশ বনবন করে পাক খেতে শুরু করে, ধীমানের চেহারা, শ্রেয়া পায়েলের চেহারা ধীরে ধীরে কেমন আবছা হয়ে যায় অনুপমার চোখের সামনে। টলতে টলতে পরে যাওয়ার আগেই ধীমান ওকে ধরে ফেলে।
রঞ্জিত জানায়, প্রথম কিছুটা খুব কষ্ট হবে তারপরে একবার হাঁটার ছন্দ পেয়ে গেলে তখন হাঁটতে আর কষ্ট হবে না। ঠিক তাই হল, শুরুতে চড়াই, আশেপাশে বিশেষ গাছ পালা নেই শুধু মাত্র উঁচু উঁচু পাইন গাছ ছাড়া। দুর উত্তরের কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওদের সামনে থেকে দৌড়ে এসে ওদের ঘায়েল করতে প্রস্তুত। একপাশে গভীর খাদের মধ্যে নিয়ে ভিলাঙ্গনা নদী কুলুকুলু শব্দে, মত্ত ছন্দে পাহাড় কেটে, পাথরের বাঁধা উপেক্ষা করে বয়ে চলেছে মোহনার পানে। তেহেরিতে গিয়ে এই নদী ভাগীরথীর সাথে মিশে নীচে নেমে যাবে গঙ্গা হিসাবে। চারাপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে সবাই ধীর পায়ে এগিয়ে যায়।
যাত্রা শুরুর পূর্বে রঞ্জিত ওদের সবার হাতে একটা লাঠি দিয়ে দিয়েছিল, বলেছিল এই লাঠির ভর দিয়ে পাহাড়ে চড়তে বেশ সুবিধা হয়। প্রথমে সবাই লাঠি দেখে হাসাহাসি করেছিল কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঠিটাই সর্বস্ব সম্বল বলে মনে হয় সবার। দলের একদম শুরুতে রঞ্জিত চলছে আর একদম শেষে মনীষা আর শান্তনু।
কিছদুর গিয়ে অনুপমার পা আর চলে না। এক হাত দেবায়নের কাঁধে ভর দিয়ে কোনরকমে হাঁটতে হাঁটতে বলে, “উফফফ মাগো এই জায়গায় কেউ আসে নাকি?”
শ্রেয়া ওইদিকে রুপকের ওপরে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুমি বেড়ানোর আর জায়গা খুঁজে পেলে না?”
বাকি মেয়েদের চেয়ে ঋতুপর্ণা আর জারিনা বেশ উচ্ছল প্রানবন্ত, ওদের দেখে অনুপমা আর মনীষা বুকে বল পায়। অনুপমা জারিনাকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মেয়ে, এত নাচছিস কেন?”
জারিনা ওর কথা শুনে হেসে বলে, “অনুদি, সত্যি বলছি এইরকম জায়গায় আনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।”
অনুপমা হেসে বলে, “ওরে আমি আনিনি তোদের, এই সব প্ল্যান ওই রূপকের।”
শ্রেয়া হেসে বলে, “এক বার কোলকাতা ফিরি তারপরে দেখি কে কাকে ধন্যবাদ দেয়।”
পেছন থেকে শান্তনু চেঁচিয়ে বলে, “একবার খাটলিং পৌঁছে এই কথা বল। তখন ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাবে না।”
হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠে, একটু থেমে জল মুখের মধ্যে নিয়ে আবার হাঁটা শুরু। এখন আর ওদের বিশেষ ঠাণ্ডা লাগছে না, অনেকেই জ্যাকেট খুলে দিয়েছে। ভোরের আলো সদ্য স্নান করিয়ে দেয় আশেপাশের সবুজে ঢাকা গাছ পালা ঝোপ ঝাড় কে। আরো একটু হেঁটে যাওয়ার পরে সামনে আসে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গল দেখে অনেকের ভয় করে, এই রকম জঙ্গল ওরা শুধু মাত্র সিনেমাতে দেখে ছিল। ওদের মনে হয় সত্যি সত্যি ওরা কোন রোমাঞ্চকর সিমেনার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।
অনুপমার এখন আর ক্লান্তি লাগে না, অন্য মেয়েদের সাথে গল্প করতে করতে হেঁটে চলে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। মনীষা শান্তনুকে ছেড়ে ওদের কাছা কাছি চলে এসেছে। একদম শুরুর দিকে ঋতুপর্ণা আর জারিনা, তাদের পেছনে শ্রেয়া, পায়েল অনুপমা সঙ্গীতা আর মনীষা। অনুপমা একবার পেছনের দিকে দেখে। ধীমান, দেবায়ন আর রূপক একদম পেছনে, নিশ্চয় কোথাও বসে সিগারেট ফুঁকছে ওরা। শান্তনু এগিয়ে গিয়ে ওদের হাঁটতে বলে, বলে যে ধীমান দেবায়ন একটু মদ্য সেবন করে আসছে। সেই শুনে অনুপমা একটু রেগে যায়, ঘুরতে এসেও মদ খেতে হবে নাকি?
চেঁচিয়ে ডাক দেয় দেবায়নকে, “পুচ্চু তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
গাছ পালা ভর্তি জঙ্গলের মাঝে সরু পায়ে হাঁটা পথ, রীহ, গাঙ্গি ওইদিকে আরো অনেক ছোট ছোট গ্রাম আছে সেই গ্রামের বাসিন্দারা বাইরের জগত থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন থাকে, এই পথে যেতে যেতে ওদের মনে হয় যেন কোন স্বপ্ন পুরীর মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে ওরা। এক মাস আগেই বর্ষা শেষে গাছ পালা সব সবুজ পাতায় ঢাকা, পায়ের তলায় স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, চারপাশে ছোট ছোট জংলি ফুলের গাছ, লতাপাতা, কোথা থেকে কোন পাখীর ডাক শোনা যায়, একপাশে একটা ছোট নাম না জানা পাহাড়ি নদী গর্জন করতে করতে এগিয়ে চলেছে মোহনার পানে।
শ্রেয়া ওকে বলে, “ইসসস আমার না গান গাইতে ইচ্ছে করছে।”
মনীষা বলে, “গাও, কে বারন করেছে।”
শ্রেয়া গেয়ে ওঠে, “ইয়ে কাঁহা আআআআ গয়ে হম” অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তেরে সাথ চলতে চলতে….. তেরি বাহো মে ইয়ে জানম….. মেরি জিস্মোওও যা পিঘলতে…..”
অনুপমা গায়, “তু বদন মেয় তেরা ছায়া, তু না হ’ত মেয় কাঁহা হু….. ”
ঋতুপর্ণা সামনে থেকে চেঁচিয়ে বলে, “আরে আরে হল হল না, অমিতাভের কবিতা কেউ বলবে না নাকি?”
শান্তনু গেয়ে ওঠে, “ইয়ে রাত হ্যায় ইয়া তুমহারি জুলফে খুলি হুয়ি হ্যায়…..”
মনীষা হেসে বলে, “ডার্লিং এটা আমার চুল…..”
সবাই হেসে ফেলে। গান গাইতে গাইতে জঙ্গল পার করতে করতে ওদের রীহ পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে যায়। পাহাড়ের কোলে একটা সমতল খাদের পাশে অবস্থিত পটে আঁকা ছবির মতন ছোট গ্রাম রীহ, বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই গ্রামে ছোট একটা রেস্ট হাউস আর বেশ কয়েকটা বাড়ি ঘর আছে। ওদের জন্য আগে থেকেই ওদের গাইড জায়গা ঠিক করে রেখেছিল। মাল বাহকেরা ওদের অনেক আগেই ওইখানে পৌঁছে গিয়েছিল। ওরা সবাই এইখানকার বাসিন্দা, রোজদিন এই পাহাড়ি রাস্তায় যাতায়াত করে, ঘুট্টু থেকে রীহ, দশ কিলোমিটার পথ অনুপমাদের ছয় ঘন্টা লেগে যায়, কিন্তু মাল নিয়ে ছেলেগুলো অনায়াসে তিন ঘন্টায় সেই পথ পাড় করে উপস্থিত। মাল বাহক ছেলেরা তাঁবু খাটিয়ে দিয়েছে, একজন ওদের জন্য রান্নাও শুরু করে দিয়েছে। সবার আলাদা আলাদা ছোট ছোট তাঁবু, গোল করে বাঁধা হয়েছে, মাঝখানে খালি জায়গা। একপাশে টয়লেট করার তাঁবু, একপাশে রান্না করার তাঁবু, অন্যপাশে মাল বাহকদের জন্য তাঁবু খাটান হয়ে গেছে।
ছয় ঘন্টা হেঁটে অনেকের পায়ের অবস্থা খুব খারাপ। ওদের একটু দূরে দুটো দল তাঁবু গেড়েছে। রঞ্জিত খোঁজ নিয়ে ওদের জানায়, একটা জার্মানি ফ্রান্সের দল, যারা ওডেন’স কল যাবে, আর দ্বিতীয় একটা পাঞ্জাবী দল যারা মাসার তাল যাবে। বিদেশী দলটার সরঞ্জাম অনেক বেশি, কারন ওডেন’স কল নাকি রীতিমত মাউন্টেনিয়ারিং করে উঠতে হয়। ওডেন’স কল হয়ে ওরা কেদারনাথ যাবে, অনেক দিনের পরিকল্পনা।
তাঁবুর মাঝখানের খালি জায়গায় পৌঁছেই অনুপমা সবুজ ঘাসে ঢাকা মাটির ওপরে সটান শুয়ে পড়ে, ওর পাশে দেবায়ন শুয়ে পরে। দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে প্রেমাবেগে বলে, “ইসসস জীবনটা এইভাবে কেটে গেলে বড় ভালো হত।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে গালে ছোট চুমু খেয়ে বলে, “কি করতিস এইখানে?”
দুরের ছোট ছোট বাড়ি দেখিয়ে বলে, “ওর একটার মধ্যে আমাদের একটা বাড়ি হত, তুই ওই খেতে কাজ করতিস আমি তোর জন্য ঘরে বসে রান্না করতাম।”
দেবায়ন হেসে ওর বাম হাতের অনামিকা দেখিয়ে বলে, “আর এটার কি হত?”
অনুপমা স্মিত হেসে বলে, “তুই পাশে থাকলে এই হীরের আংটি জলে ফেলে দিতে পারি।” বলেই ওর গলা জড়িয়ে গালে একটা চুমু খায়।
ওদের ওইভাবে জড়াজড়ি করে ঘাসে শুয়ে থাকতে দেখে ঋতুপর্ণা আর শ্রেয়া কাছে এসে ফেরিওয়ালার মতন একটা সুর টেনে বলে, “চাই….. নাকি কন্ডোম চাইইইই….. দশ টাকায় তিনটে কন্ডোম….. বেশ ভালো কন্ডোম, ঢুকলে পরে মনে হবে না…..”
দেবায়ন ঋতুপর্ণার হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে বলে, “রাতে চলে আসিস কন্ডোম ছাড়াই ঢুকিয়ে দেব…..”
গরম জলে হাত মুখ ধুয়ে সবাই খেতে বসে যায়। আলুসিদ্ধ আর খিচুড়ি রান্না করেছিল সঙ্গে আসা রান্নার লোক। সবাই বেশ ক্লান্ত, খেয়েদেয়েই সবাই ঘুমিয়ে পরে। তাঁবুতে ঢুকে অনুপমা দেবায়ন কে জড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রা দেবীর কোলে ঢলে পড়ে।
ছেলেরা অনেক আগেই উঠে গিয়েছিল। অনুপমা উঠে দেখে পাশে দেবায়ন নেই, বাইরে ওদের হাসির আওয়াজ শোনা যায়। চোখ ডলতে ডলতে বাইরে বেড়িয়ে দেখে মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় অনেক শুকনো কাঠ জড় করা হয়েছে, রাত বাড়লে ওই কাঠে আগুন জ্বালিয়ে বনফায়ার করা হবে। বেশ মজা হবে। বিকেলে যখন সবাই ওঠে ততক্ষণে সূর্য পাটে বসার সময় হয়ে গেছে। চারপাশের ঘন জঙ্গল থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আরো কত রকমের পোকা মাকরের গুনগুন শব্দ, একপাশ থেকে ভেসে আসা একটানা নদীর কুলুকুলু ধ্বনি, পরিবেশ টাকে মোহাচ্ছন করে দেয়।
রঞ্জিত জানায়, দুটো মাল বাহি ছেলের বাড়ি এই গ্রামেই তাই বাকি মাল বাহি ছেলেরা আজ রাতে ওর বাড়িতে থেকে যাবে। আগামী কাল সকালে রীহ থেকে গাঙ্গি যাওয়া হবে।
চা খাবার দাবার খেতে খেতে সন্ধ্যে নেমে যায়। শুকনো কাঠে আগুন জ্বালিয়ে বনফায়ার জ্বালানো হয়। চারপাশে গোল করে সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে গল্পে মেতে ওঠে। রূপক ধীমান ইতিমধ্যে মদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে। মেয়েরা জানিয়ে দেয় ওর মদ খাবে না, তবে শ্রেয়া আর অনুপমার একটু রাম নিতে আপত্তি নেই।
কি করা যায়, কি করা যায়, ঋতুপর্ণা বলল, “একটা খেলা খেললে কেমন হয়?”
সবাই জিজ্ঞেস করে, “কি?” ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “ট্রুথ ওর ডেয়ার।”
দেবায়ন বলে, “খেলতে পারি তবে যা বলা হবে সেটা যেন কেউ না না করে আর যা জিজ্ঞেস করা হবে তার যেন সঠিক উত্তর পাওয়া যায়।” সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ করে ওঠে, বেশ মজা হবে।
ধীমান বাকিদের মানে, প্রবাল, অঙ্কন শান্তনু মনীষা এদের বলে, “দেখ ভাই আমরা সবাই বন্ধু আর খুব খোলামেলা। এইখানে সঙ্কোচ করলে কিন্তু চলবে না।”
মনীষা আর জারিনা একটু দোনামনা করার পরে সম্মতি জানায়।
সঙ্গীতাকে প্রবাল এক প্রকার পেঁচিয়ে ধরে। অনেকক্ষণ পরে প্রবাল মুখ খোলে, “ঠিক কি করতে হবে এই খেলায়?” সঙ্গীতা ওকে খেলার নিয়ম কানুন বুঝিয়ে দেয়। প্রবাল স্মিত হেসে মেনে যায়।
দেবায়ন মনীষাকে দেখে বলে, “তুমি টিম লিডারের বউ সুতরাং তোমার থেকেই শুরু করা যাক।” মনীষা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলে দেবায়ন ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বল, ট্রুথ ওর ডেয়ার?”
মনীষা উত্তর দেয়, “ট্রুথ।”
রূপক হাঁ হাঁ করে হেসে ওঠে, “ওকে ম্যাডাম, শুনেছিলাম তোমার ব্রেডে গতকাল জ্যাম লাগানো ছিল সেটা কি এখন লাগানো চলছে না হয়ে গেছে?”
মনীষা মুখ কাঁচুমাচু করে মিচকি হেসে বলে, “লাগানো শেষ হয়ে গেছে।”
দেবায়ন শান্তনুর কাঁধ চাপড়ে বলে, “ব্যাস তাহলে পাঁচদিনের কাজ আজ রাতে পূরণ করে নিও।”
ওর পাশে শান্তনু বসে, রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “ট্রুথ ওর ডেয়ার?”
শান্তনু বলে, “ডেয়ার।”
ধীমান ওকে বলে, “আচ্ছা বেশ, তোমার সুপারম্যান পছন্দ না অরন্যদেব পছন্দ? যাকে পছন্দ সেই মতন কাপড় পর।”
শান্তনু হেসে বলে, “আরে বাবা এটা কলেজে অনেকবার হয়ে গেছে অন্য কিছু দাও।”
মনীষা হাঁ হাঁ করে ওঠে, “কলেজে হয়েছে তো কি হয়েছে। তোমাকে করতে হবে এটাই নিয়ম।”
উত্তর থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় ওরা সবাই পাশের সঙ্গীর কোলে সেঁধিয়ে যায়। দেবায়ন একপ্রকার অনুপমাকে কোলের মধ্যে বসিয়ে নিয়েছে। হাতে মদের গেলাসের সাথে সাথে সঙ্গে আনা মাংসের কাবাব খেতে খেতে সবাই হেসে ফেলে মনীষার কথা শুনে।
অগত্যা শান্তনু উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “অরন্যদেব করতে পারি।” সবাই হেসে বলে তাই কর। শান্তনু প্যান্ট খুলে, জ্যাকেট খুলে জামা আর জাঙ্গিয়া পরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। ঠাণ্ডায় ওর লিঙ্গের অবস্থা খারাপ, সেটা আর নিজের জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়না।
সেই দেখে ধীমান হেসে মনীষাকে বলে, “ম্যাডাম, ওর যে বাঁড়া নেই আজ রাতে কি করে কাটাবে?” আবার হাসির কলতান ওঠে।
তার পাশে ধীমান আর ঋতুপর্ণা। এইবারে মনীষা ঋতুপর্ণাকে জিজ্ঞেস করে, “ট্রুথ ওর ডেয়ার।” ঋতুপর্ণা উত্তরে ট্রুথ বলে। শ্রেয়া সঙ্গে সঙ্গে ওকে জিজ্ঞেস করে, “প্রথম বার তোর পেছনে কে ঢুকিয়েছিল?”
ঋতুপর্ণা লজ্জায় পড়ে ধীমানের দিকে তাকায়। ধীমান ভুরু কুঁচকে ওকে বলে, “আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে কি হবে ডার্লিং, উত্তর দাও।”
ঋতুপর্ণা মাথা চুলকে মুখ কাঁচুমাচু করে উত্তর দেয়, “নার্সিং পড়ার সময়ে একটা বয় ফ্রেন্ড ছিল, সঞ্জীব।”
সবাই হিহি করে হেসে ওঠে। ধীমান চোখ বড় বড় করে বলে, “ওই ছোট্ট বাঁড়া শেষ পর্যন্ত তোমার পেছনে ঢুকিয়েছিল?”
ঋতুপর্ণা ওকে মারতে মারতে বলে, “উত্তর দিয়ে দিয়েছি ব্যাস আর নয়।”
এরপরে ধীমানের পালা, ধীমান সঙ্গে সঙ্গে ডেয়ার করতে রাজি হয়ে যায়। খেলা এইভাবে চলতে থাকে একের পর এক। প্রবালকে বলা হয়, সঙ্গীতার যোনি রসের ভিস্কোসিটি কত। জারিনাকে বলা হয়, পরাশরের লিঙ্গের ভলিউম মেপে জানাও। পায়েল বুঝতে পারে অঙ্কনকে ওরা সবাই বেশ ফাঁদে ফেলবে। এইভাবে এক এক করে সবাইকে বেশ বেকায়দায় ফেলে খেলা ঘুরে চলে।
খেলা চলতে চলতে অন্ধকার চিরে একটা ছেলের আবির্ভাব হয়। ভুত দেখার মতন সবাই চমকে ওঠে। ছেলেটা মনে হয় ওদের পোর্টার দলের কেউ, জ্যাকেট পরা, মাথায় টুপি।
দেবায়নকে এসে বলে, “বাবু কিছু টাকা চাই।”
দেবায়ন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কে?”
রঞ্জিত ওদের সঙ্গে ছিল না, অনেক আগেই খেয়ে দেয়ে নিজের তাঁবুতে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছে। পোর্টার দের কারুর নামধাম ওদের জানা নেই। তাও ছেলেটাকে দেখে ওদের দলের পোর্টার বলেই মনে হয় দেবায়নের। ছেলেতা উত্তরে বলে ওদের দলের রাজু পোর্টার। মদ খাওয়ার জন্য একটু টাকা চায়।
দেবায়ন পকেট থেকে টাকা বের করে দিতে গেলে ছেলেটা বলে, “না বাবু, মানে আপনাকে একটু আমার সাথে আসতে হবে। মানে ওইদিকে আমাদের পোর্টার দলের সর্দার দাঁড়িয়ে আছে, ওর হাতে টাকা দিলে ভালো।”
দেবায়ন অনুপমাকে কোল থেকে নামিয়ে বলে, “এই শোন আমি ওদের টাকা দিয়ে আসছি, ব্যাস এই যাবো আর আসব।”
অনুপমা ওর হাত ধরে বলে, “তাড়াতাড়ি আসিস, তুই না থাকলে একদম ভালো লাগে না।”
ওর কপালে চুমু খেয়ে দেবায়ন চলে যায়। ট্রুথ আর ডেয়ার খেলা আবার শুরু হয়ে যায়। খেলা চলতে থাকে কিন্তু অনুপমার মন পড়ে থাকে দেবায়নের জন্য। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে এখন আসার আর নাম নেই। কোথায় গেল ছেলেটা, বলে গেল এখুনি আসছি। বাকিরা এখন খেলায় মত্ত, কিন্তু অনুপমা বারেবারে দেবায়নের যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে দেখে। নদীর কুলুকুলু ধ্বনি, পাহাড় থেকে ভেসে আসা কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ওর মনের গভীরের উৎকণ্ঠা আরো চাগিয়ে দেয়। বারেবারে বাম হাতের অনামিকার জ্বলজ্বলে আংটির দিকে তাকায় আর পেছন ঘুরে যেদিকে দেবায়ন গেছে সেদিকে চেয়ে থাকে। সামনে আগুন জ্বলছে, সবাই বেশ মজা গল্প করছে কিন্তু অনুপমার মন আর কিছুতেই মানে না। পোর্টারদের টাকা দিতে এত দেরি লাগে নাকি?
শ্রেয়া ওর পাশে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি রে মন খারাপ লাগছে নাকি?”
অনুপমা ম্লান হেসে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে এতক্ষণ হয়ে গেল এখন আসছে না।”
আরো কিছুক্ষণ কেটে যায়। দেবায়ন গেছে প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল, এত দেরি করা উচিত নয়। শুধু মাত্র টাকা দেবে আর চলে আসবে। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে রূপক আর ধীমানকে বলে, “এই প্লিস তোরা একটু দেখে আয় না দেবু কোথায় গেছে।”
রূপক হেসে ওর কথা উড়িয়ে দিয়ে বলে, “আরে বাবা এই নির্জন স্থানে আর কি হবে। শালা ওই পোর্টার দের সাথে হয়ত দেশী গিলতে বসে গেছে চলে আসবে।”
অনুপমা কাতর কণ্ঠে ওকে অনুরোধ করে, “প্লিস, একবার, এক ঘন্টা হয়ে গেল।”
ধীমান কিছু একটা বলতে যায়, ঋতুপর্ণা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তোমাদের একবার যেতে কি হয়েছে? গিয়ে দেখো না দেবায়ন কোথায় গেল।”
পরাশর প্রবাল উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আচ্ছা আচ্ছা আমরা যাচ্ছি।”
পরাশর চলে গেল, ধীমান রূপক চলে গেল। ওদের খেলা ভেঙ্গে গেল। অনুপমা প্রবল উৎকণ্ঠায় উঠে দাঁড়িয়ে যেদিকে ওরা গেছে সেদিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। একপাশে পায়েল অন্য পাশে শ্রেয়া ওকে প্রবোধ দেয়, এই ত চলে আসবে এত চিন্তা করছিস কেন? কিন্তু অনুপমার মন আর মানে না। বারেবারে আঙ্গুলের আংটি ঘষে দেখে আর বুকের মধ্যে চেপে ধরে। হঠাৎ করে এক দমক ঠাণ্ডা হাওয়া ওকে এসে কাঁপিয়ে দেয়।
অঙ্কন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দিদির সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “দিদিভাই দিদিভাই, দেবায়নদাকে পাওয়া যাচ্ছে না।”
শ্রেয়ার ভাবে অঙ্কন মজা করছে তাই জিজ্ঞেস করে, “কি উল্টোপাল্টা বলছিস তুই। কেন বেচারির সাথে এই সময়ে মজা করছিস?”
অনুপমা ওই কথা শুনে কেঁপে ওঠে, হটাত করে ওর বুক ফাঁকা হয়ে যায়। অঙ্কন হাঁপাতে হাঁপাতে ওদের বলে, “দিদিভাই ওদিকে চল…..” বলে দুর নদীর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়।
আপনা হতেই অনুপমার হাত মুঠি হয়ে যায়, ওর চোখ জোড়া ভরে ওঠে, গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। পুচ্চুকে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? কি বলতে চাইছে ভাই? না, মদ খেয়ে কিছু হয়ে গেল না তো? যদি অঙ্কন মজার ছলে বলে থাকে তাহলে ওকে মেরে ফেলবে।
ধীমান এমন সময়ে দৌড়াতে দৌড়াতে ওদের কাছে আসতেই অনুপমা কাঁপতে কাঁপতে ওকে জিজ্ঞেস করে, “দেবুকে পেলি?”
ধীমান মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “না রে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।”
শ্রেয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, “রূপক আর শান্তনু কোথায়?”
ধীমান ওদের উত্তর দেয়, খাদের কিনারায়, নদীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ওরা। খাদের কথা শুনে অনুপমার মাথা ঘুরে যায়, শরীর টলতে শুরু করে দেয়। না, এটা হতে পারে না। মাথার ওপরে আকাশ বনবন করে পাক খেতে শুরু করে, ধীমানের চেহারা, শ্রেয়া পায়েলের চেহারা ধীরে ধীরে কেমন আবছা হয়ে যায় অনুপমার চোখের সামনে। টলতে টলতে পরে যাওয়ার আগেই ধীমান ওকে ধরে ফেলে।