06-10-2020, 01:22 PM
(This post was last modified: 06-10-2020, 01:22 PM by riank55. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ১১
১১ (গ)
সকাল হতেই রাজীবকে ফোন করে ঘটনাটা জানায় শান্তা। সব শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থাকে রাজীব ওপাশে। তারপর ওকে শান্ত হতে বলে, কান্না থামাতে হবে। “দেখো শান্তা,” রাজীব আদুরে গলায় বুঝায় তাকে। “যেহেতু ফয়সাল বলেছে হায়দার আলীর সঙ্গে তার ব্যাবসা আছে - সুতরাং ভদ্রলোক অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়াটা দোষ এর কিছু নয়। কিন্তু আসলেই কি ভদ্রলোক হাস্পাতালে?”
“সেটা কেমন করে জানব বল?” দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্তা।
“আমিও তাই ভাবছি,” রাজীব চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে। “আচ্ছা - ফয়সাল কি সঙ্গে করে ওই ব্রিফকেসটা নিয়ে গেছে?”
“নাহ, যায় নি তো। ও তো খালি হাতেই বের হল,” শান্তা উত্তর করে।
“আচ্ছা তুমি আজকের দিনটা দেখো, ফয়সাল কখন ফিরে আসে...” রাজীব জানায় তাকে। “আমি খোজ নেবার চেষ্টা করছি ফয়সালের ব্যাপারটা।”
“আমার আর কিছু ভালো লাগছে না রাজীব,” শান্তা গুঙিয়ে উঠে। “ফয়সাল এমন কেন করছে!”
“তুমি ভেব না একদম, আমি দেখছি...”
ফোন রেখে শান্তা ঘরের কাজে মন দেয়। বসে থাকলে তো আর চলবে না। তুলির কলেজ আছে, সকালের নাস্তা বানাতে হবে - আরও কতো কিছু! ফয়সাল কখন ফিরে আসবে কে জানে! শান্তা ভাবে একবার ফোন দিয়ে জানতে চাইবে সে। কিন্তু মুহূর্তেই নাকচ করে দেয় সেটা। ফয়সালকে ফোন দিলে আরও চটে উঠে ফয়সাল।
ফয়সাল বাসায় ফিরে বিকেল বেলা। দিনটা মনমরা ভাবেই কেটেছে শান্তার। দরজা খুলে দিতে টের পেয়েছে ফয়সালও বিধ্বস্ত। ভেতরে ঢুকেই সোফাতে গা এলিয়ে বসেছে ফয়সাল। তারপর এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি চেয়েছে। ফ্রিজ থেকে পানি এনে গ্লাসে ঢেলে বাড়িয়ে দিতে দিতে সাহস করে জানতে চাইলো অবশেষে শান্তা; “কি হয়েছে উনার?”
“হার্ট এটাক...” ফয়সাল উত্তর দেয়। “এখন বিপদ মুক্ত…… আমায় আবার খুলনা যেতে হবে। হায়দার সাহেবেরই যাওয়ার কথা ছিল… বেশ অনেকদিন ছুটি নিতে হবে। ওদিকের কাজ গুলো সামলাতে হবে...”
“কবে যাবে?” জানতে চায় শান্তা।
“কাল পরশু, দেখি, কাল অফিস থেকে ছুটি নিতে পারি নাকি...” ফয়সাল উঠে দাড়ায়।
“হায়দার সাহেবকে কোন হাস্পাতালে নেয়া হয়েছে?” হঠাৎ করেই জানতে চায় শান্তা। ফয়সাল প্রায় শোবার ঘরের দরজায় পৌঁছে গিয়েছিলো। থমকে দাড়িয়ে ফিরে তাকায় ধিরে ধিরে।
“সেটা দিয়ে তোমার কি?” ভ্রূ কুচকে ফেলেছে ফয়সাল। ঢোক গিলে শান্তা। চেহারায় তাচ্ছিল্যের একটা ভাব ফুটিয়ে তুলে।
“জানতে চাইলাম আর কি… মাকে যেমন ল্যাব এইডে নেয়া হয়েছিলো...”
“ওহ...” এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে ফয়সাল। তারপর বলে, “শঙ্কর মেডিকেল কলেজে,”
এটা কোথায় জানা নেই শান্তার। কিন্তু আর জিজ্ঞাসা করার সাহস হল না তার। এমনিতেই বুকের ভেতরে ওর তড়পার শুরু হয়ে গিয়েছিলো - ফয়সাল যেভাবে জানতে চেয়েছে সেটা দিয়ে তোমার কি! তাতে গলা একদম শুকিয়ে গেছে শান্তার।
ফয়সাল যখন গোসল করছে, তখন শান্তা চট করে রাজীবকে ফোন করে খবরটা জানিয়ে দেয়। রাজীব ওকে স্বাভাবিক থাকতে পরামর্শ দেয়।
#
কাল-পরশুর কথা বললেও বেশ কয়েকটি দিন কেটে যায় ফয়সালের। এই কয়েকটি দিনে প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতালে গিয়েছে ফয়সাল। শান্তা রাজীব এর কাছ থেকে জানতে পেরেছে শঙ্কর মেডিকেল কলেজে সত্যিকার অর্থেই ভর্তি হয়েছে হায়দার আলী নামে এক ভদ্রলোক।
রাজীব এও বলেছে; “একটা কেবিন নিয়েছে ওরা বুঝলে! ওখানে সেই মেয়েটাও আছে।”
“তুমি কি করে জানলে? দেখেছো?” শান্তা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে প্রেমিককে।
“আমি লোক লাগিয়েছি, তোমায় পরে খুলে বলবো...” রাজীব রহস্যময়ী কণ্ঠে বলেছে তাকে। “ছবিও দেখাতে পারবো। হার্ড এভিডেন্স লাগবে বুঝলে! সেটাই আমি যোগার করছি।”
“যা ভালো মনে হয় কর,” শান্তা আর ভাবতে চায় না। “কিন্তু তুলির আর্ট মাস্টারের খোজ পেলে?”
“হ্যাঁ পেয়েছি, কাল তো শনি বার পরশু দিন তুলিকে কলেজে দিয়ে আবার এখানে চলে আসো তো,” রাজীব বলে শান্তাকে। “মাস্টারটা পছন্দ হতে হবে তোমাকে নাকি! ওদিন ডেকে আনব নি...”
“তোমার ওখানে!” ঢোক গিলে শান্তা। “ফয়সাল...”
“ফয়সালকে ছাড় তো,” রাজীব খানিকটা বিরক্ত হয় যেন। “রোজ রোজ হাসপাতালে গিয়ে বুড়োটাকে দেখার ছুতোয় ফয়সাল মেয়েটার সঙ্গে প্রেম করে বেড়াচ্ছে আর তুমি এখনো তাকে নিয়ে পড়ে আছো!”
“না মানে বলছি যে ফয়সাল তো খুলনা যাবে বলেছিল, কাল পরশু...”
“তাহলে তো বেশ হল,” রাজীব বলে তাকে। “ফয়সাল যদি খুলনা যায় তাহলে তো আর কোন চিন্তাই থাকে না তোমার...”
“আচ্ছা ঠিক আছে আসবো।” শান্তা বড় করে দম নেয়।
“আর একটা ব্যাপার খেয়াল রেখ,” রাজীব হুশিয়ার করে তাকে। “ফয়সাল যাবার বেলায় ব্রিফকেসটা নেয় নাকি...”
রিয়ান খান