05-10-2020, 12:18 AM
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৮)
ধীমান শ্রেয়াকে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “কিরে দেবুকে করবি না আমাকে? চোখে যা রঙ লেগেছে সেই রঙ দেখে আর থাকতে পারছি না।”
আসলে গতরাতের প্রিয় বান্ধবীর সাথে খেলার রঙ এখন কাটেনি ঠিকভাবে। তাও শ্রেয়া ওর কানেকানে বলে, “তুই আমাকে করিস, আর ঋতুকে না হয় রূপক আর দেবায়নের সাথে ছেড়ে দেওয়া হবে।”
ধীমান একপাশে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে অন্যপাশে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ঠিক আছে সুন্দরীরা। তোরা আমার বাঁড়ার খেয়াল রাখিস আর ওই দুইজনে মিলে আমার প্রেমিকার খেয়াল রাখবে।” চোখ টিপে ঋতুপর্ণাকে বলে, “কি সোনা, এইবারে কারটা পেছনে আর কারটা সামনে?”
বাইরে আবার বৃষ্টি শুরু, একটু পরেই ওদের বেড়িয়ে পড়তে হবে। কথা ছিল, দেবায়ন আর রূপক সোজা এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে। গতরাতে দুইজনে মিলে আকন্ঠ বিষপানের মতন মদ খেয়ে মাতলামো করেছে। এমনকি মাতাল হয়ে রুপকের পশ্চাৎদেশে বেশ কয়েকটা লাত্থি ঝেড়ে দিয়েছে। এক প্রকার শাসিয়ে দিয়েছে, উটিতে রূপক একদম শ্রেয়াকে ছুঁতে পারবে না। সেই নিয়েও খাবার টেবিলে খানিকটা হাসাহাসি হয়ে যায়। ব্রেকফাস্ট টেবিলে ভাগ্যিস বাড়ির বড়রা অথবা অঙ্কন ছিল না। সকাল সকাল সোমেশ আর অঙ্কন খেয়ে দেয়ে নিজেদের কাজে বেড়িয়ে গেছে। পারমিতা সোফায় বসে ওদের এই হাসি মজা উপভোগ করছিল। এতদিনে শ্রেয়া আর অনুপমার মাঝে চলা উত্তপ্ত লাভার ফল্গু নদী যদিও জানত না, তাও ওদের একসাথে দেখে বেশ ভালো লাগে।
খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই বেড়াতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। শ্রেয়া একটা চাপা হালকা রঙের জিন্স আর হালকা গোলাপি রঙের টপ পরে, অনুপমার পরনে সাদা রঙের জিন্স আর আকাশী রঙের চাপা টপ, ঋতুপর্ণা একটা হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট আর চাপা টপ পরে তৈরি। তিন দেবী সারা শহর মাতাল করার মতন করে সেজে বেড়িয়ে পরে। একা ধীমান, ওদের তিনজনকে দেখে ঠিক কি করবে ভেবে পায় না।
পারমিতা ওদের বারবার সেই ছোটবেলার মতন পাখী পড়া করিয়ে দেয়, “বর্ষা কাল বেশি ভিজবি না, দক্ষিন ভারতে বৃষ্টি বেশি হয়। কেন যে তোদের উটি যেতে হত সেটাই বুঝে পেলাম না? দেবায়নকে বললে বিন্সারে অথবা দেরাদুনে রিসোরট বুক করা যেত না?”
অনুপমা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মা, আমরা আর কেউই আর সেই আগের মতন ছোট মেয়ে নই, সবাই বড় হয়ে গেছি। আর এইজন্যে উটি যাচ্ছি” গলা নামিয়ে কানেকানে বলে, “স্যুইট গুলো খুব সুন্দর আর বেশ বড় বড় তাই। ওর জানালা খুললেই জঙ্গল আর ছোট পাহাড়।”
বাড়ি থেকে চারজনে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে এয়ারপরটের দিকে। সামনের সিটে অনুপমা, পেছনে ঋতুপর্ণা, ধীমান আর শ্রেয়া। ঋতুপর্ণাকে একপ্রকার কোলের ওপরে টেনে বসিয়ে নেয় ধীমান। সিটের আড়ালে, টপের ভেতর থেকে হাত ঢুকিয়ে নরম পেটের ওপরে হাত রেখে চেপে ধরে। হাতের ওপরে হাত দিয়ে প্রেমিকের হাতের উত্তাপ নিজের শরীরের সাথে মাখিয়ে নেয় ঋতুপর্ণা।
শ্রেয়া মিচকি হেসে ধীমান আর ঋতুপর্ণাকে দেখে বলে, “ওরে পাগল, গতরাতের মাখামাখি এখন কাটেনি নাকি?”
অনুপমা লেকটাউন মোড়ে দেবায়নকে ফোন করে ডেকে নেয়। কথা মতন রূপক আর দেবায়ন ওদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল। যাওয়ার পথে ওদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ওদের যাত্রা শুরু হয়। ছয় বন্ধু বান্ধবী, উটিতে গিয়ে কি যে হবে সেটা ভেবেই ঋতুপর্ণা ধীমানকে জড়িয়ে ধরে।
গাড়ির সামনে বসে দেবায়ন আর অনুপমা। একটা সিটের মধ্যে অনুপমাকে এক প্রকার কোলের ওপরে বসিয়ে নিয়েছে। পাশে ড্রাউভার তাই ওদের মধ্যে বিশেষ কথাবার্তা হয় না। পেছনে পায়ে ক্রেপব্যান্ডেজ বেঁধে রূপক বসে, শ্রেয়া বারেবারে ওর পায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। ধীমান এক প্রকার ঋতুপর্ণাকে কোলের মধ্যে টেনে ধরে রেখেছে, যদি হাতছাড়া হয়ে যায় এর মধ্যেই?
অনুপমা ঘাড় ঘুরিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “কাল রাতে কি করলি রে তোরা?”
রূপক হেসে উত্তর দেয়, “তোর নীচে কিছু লাগছে?”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে তাকায়, সত্যি লাগছে। জিন্স ভেদ করে প্রেমিকের উদ্ধত লিঙ্গ ওর পাছার খাঁজের মাঝে এক প্রকার আটকে, আর দেবায়ন কষে দুই হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে গাড়ির তালেতালে পাছার মাঝে লিঙ্গ ঘষে চলেছে। ড্রাইভার পাশে থাকা সত্ত্বেও, দেবায়নের নিষ্ঠুর হাত ওর পেটের ওপরে জামার ওপর দিয়েই ওর নরম পেট আদর করে চলেছে। পিঠের ওপরে ঘাড়ের কাছে প্রেমিকের উত্তপ্ত শ্বাসের ঢেউ ওকে পাগল করে তোলে। দেবায়নের হাতের ওপরে হাত রেখে বাহুপাশ আরো নিবিড় করে নেয় নিজের শরীরের চারপাশে। এই কঠিন বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ আলাদা, এই প্রসস্থ ছাতির মধ্যে মাথা রেখে যে নিরাপত্তার অনুভুতি পায় সেটার অনাবিল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে ক্ষণিকের জন্য মন মানতে চায় না।
দেবায়ন ওর ঘাড়ের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “কতকাল আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে।”
ঋতুপর্ণা পেছন থেকে উত্তর দেয়, “তুই শালা কাল রাতে কাট মেরে দিলি, না হলে কি মজা হত বলতো?”
ধীমান ঋতুপর্ণার মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “ইসসস….. কাল রাতে তোমার মনে এই ছিল?”
ঋতুপর্ণা লজ্জায় পড়ে বলে, “না না, কাল রাতে আমি তোমার সাথেই ছিলাম, এই সকাল থেকে মানে…..”
রূপক হাত বাড়িয়ে ঋতুপর্ণার ঊরু ছুঁয়ে বলে, “তাহলে প্লেনে আমার পাশে বসবে, ব্রেকফাস্ট করিয়ে দেব।”
শ্রেয়া চোখ পাকিয়ে বলে, “তোমার না পা মচকে গেছে? আবার প্লেনে কি করবে?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “আরে চিন্তা করছিস কেন, আসল পা একদম ঠিক আছে। গত রাতে বাঁড়া….. ইসসস না না….. আর না…..”
গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয় অনুপমা, দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে “কোইম্বাতুরে আমাদের নিতে কি মিস্টার পারিজাত আসবে?”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “না মিস্টার পারিজাত আসছে না, তবে দুটো গাড়ি পাঠিয়ে দেবে।”
ঋতুপর্ণা বলে, “দুটো গাড়ি কেন রে, একটাতে সহজেই আমরা চলে যাবো।”
দেবায়ন হেসে মাথা নাড়ায়, “না রে, গাড়িতে মজা করা যাবে না, সরি ডারলিং। যা করার সুইটে গিয়ে।”
শ্রেয়া হেসে উত্তর দেয়, “তোরা ঠিক থাকলেই হল, এইখানে যা শুরু করেছিস প্লেনের যাত্রীরা না ভির্মি খায়।”
বৃষ্টির জন্য প্লেন এক ঘন্টা লেট, দেবায়ন রাতেই ইন্টারনেটে ওয়েব চেকইন করে নিয়েছিল, তাই মনের মতন সিট পেতে কোন অসুবিধে হয়নি। কোলকাতা চেন্নাই, বোইং ড্রিম্লাইনার, চওড়া দেহের বিশাল প্লেন, আকাশে উঠলে মনে হয় ছোট একটা হোটেল চলছে। একসাথে সিট নয় কারুর, সবারই দুটো করে জানালা নিয়ে সিট। সিকিউরিটি চেক করে লাউঞ্জে বসে থাকা ছাড়া কোন গতি নেই ওদের। অনুপমার জন্য প্লেনে ওঠা একটা ছেলে খেলা, ইদানিং এদিক ওদিকে ব্যাবসার কাজে হোটেলের কাজে বেড়াতে হয় বলে দেবায়নের এই এয়ারপোর্ট এক রকম, কিন্তু ঋতুপর্ণা অতটা সম্ভ্রান্ত অথবা সচ্ছল বাড়ির মেয়ে নয় যে রোজদিন প্লেনে চাপবে। ওর জন্য এই প্লেনে চাপা দ্বিতীয় বার শ্রেয়ার জন্যেই প্রায় এক। অনুপমার অফিসে কাজ করার আগে কোনোদিন প্লেনে চাপেনি। ওদের এই চেকইন, সিকিউরিটি চেক ব্যাপার, কোলকাতা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ দেখে চোখ ধাধিয়ে যায়। কফি শপে বসে ছয়জনে গল্পে মেতে ওঠে।
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি নিয়েই প্লেন কোলকাতার মাটি ছাড়ে। সবাই নিজেদের সঙ্গী নিয়েই বসে।
দেবায়নের হাত খানি নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলা শুরু করে দেয় অনুপমা। অনেকদিন পরে আবার একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। সেই অনেকদিন আগে হোটেলের কাজে একবার বেড়াতে হয়েছিল, উটি, ব্যাঙ্গালোর আর পুনে তারপরে দেবায়নের সাথে আর বেড়াতে যাওয়া হয়নি। প্লেন মাটি ছেড়ে ওঠার পরে অনুপমা, দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ উটি কেন, কোলকাতার কাছে পিঠে কোন রিসোর্ট বুক করে নিলেই হতো।”
দেবায়ন ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই হবে তাই উটি।”
অনুপমা ওর কথার মানে বুঝতে দেরি হয়না, কিঞ্চিত অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ভাবলাম একটু মজা হবে আর কি না?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আরে মজা হবে সব হবে, তার ,মধ্যে কিছু কাজ এই আর কি। ব্যাস। আসলে, চেইন হোটেলের জন্য একটা ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার বানাতে হবে সেটার এখন পর্যন্ত কিছুই করা হল না। রূপক শ্রেয়া সাথে আছে, সুতরাং ডিজানিং আর প্রোডাক্ট নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। মিস্টার পারিজাতের সাথে খুলে আলোচনা করা যাবে। দ্বিতীয়, উটিতে একটা বাজেট হোটেল নির্মাণ করতে চাই। এই রিসোর্ট ফাইভ স্টার রিসোর্ট, অকুপেন্সি একটু কম কিন্তু বাজেট হোটেল হলে টাকা মোটামুটি চলে আসবে। মিস্টার পারিজাতের সাথে ওই ব্যাপারে একবার কথাবার্তা হয়ে গেলে পরের বার নিবেদিতাকে নিয়ে আসব কন্সট্রাক্সনের জন্য।”
অনুপমা মুখ ভার করে জানালার বাইরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বলে, “মাথায় ওই চিন্তা ছাড়া আর কোন চিন্তা আসে না।”
অভিমানী প্রেয়সীর টলটল চোখ দেখে দেবায়নের বুকের মাঝে ব্যাথা দেখা দেয়। কাছে টেনে নরম গোলাপি গালে নাক ঘষে বলে, “এই সোনা, এর মধ্যে রেগে গেলি কেন? আরে বাবা, মজা করব, দারু খাবো, নাচব গাইব, তারমধ্যে একটু সময়ের জন্য ছুটি দিস ব্যাস আমি আমার কাজ সেরে নেব।”
অনুপমা তেড়ে উঠে যায় সিট ছেড়ে, সামনের সিটে ধীমান বসেছিল, ওর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, “এই ছেলে এইখানে এসে বস আমি ওর পাশে বসব না।”
দেবায়ন দেখল এ যে ভারী বিপদ, এইভাবে প্রেয়সী ক্ষেপে গেলে মহা মুশুকিল, সারা ছুটির মজা কেঁচিয়ে যাবে। ধীমানের মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “সিট ছেড়ে উঠলে কিন্তু মেরে ফেলে দেব।”
অনুপমা চাপা কণ্ঠে ধীমানকে বলে, “তুই আসবি না আমি উঠে যাবো।”
নিরুপায় ধীমান একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে, দুইজনেই ওর সহপাঠী দুইজনেই ওর বন্ধু, কাকে ছেড়ে কার কথা রাখবে। শেষ পর্যন্ত ধীমান শ্রেয়াকে বলে, “এই মেয়ে তুই আমার সিটে এসে বসতে পারিস?”
ঋতুপর্ণা হেসে ফেলে, “দেখ দুইজনের কথা রেখেছে ধীমান এইবারে যেখানে বসার সেইখানে বসে পড়। একটু পরেই চেন্নাই এসে যাবে তারপরে মারামারি কাটাকাটি সব হবে।”
অনুপমার কোমর পেঁচিয়ে ধরে দেবায়ন ওকে নিজের কোলে বসিয়ে বলে, “এত ঝাঁজ দেখাচ্ছিস কেন? দেখ সোনা একটু ভাব একটু মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করে দেখ। তুই এদিকে ওদিকে দানছত্র খুলেছিস, সূর্যকে ইতিমধ্যে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিস ওর দোকানের জন্য, তারপরে আবার অনন্যাকে কথা দিয়ে এসেছিস যে সত্যজিতের পত্রিকার খুলতে টাকা দিবি। এরপরে এমন অনেকে আসবে, তুই টাকা দিয়ে সাহায্য করবি…..”
অনুপমা ওর চোখে চোখ রেখে বলে, “তাতে কি হয়েছে, আছে তাই দিচ্ছি। তোকে না জানিয়ে কি দিয়েছি? সূর্যকে আর.টি.জি.এস আমি তোকে জিজ্ঞেস করার পরেই করেছি আর অনন্যাদির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ও আমার সাথে আর কথা বলেনি তাই আমিও আর বলিনি। যাই হোক আসল কথা হচ্ছে তুই আমাকে ভুলে গেছিস।”
দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় অনুপমার টলটল চোখ দেখে। ওই চোখে জল, না না। অনুপমার মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে নরম করে বলে, “ঠিক আছে, উটিতে শুধু আমরা আর কিছু না।”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে হাত রেখে গালে চেপে ধরে বলে, “সত্যি?” দেবায়ন মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
অনুপমা ওর নাকের ওপরে নাক ঘষে মিষ্টি কণ্ঠে বলে, “আর আমার পাশ থেকে কোথাও যাবি না বুঝলি। এইকটা দিন শুধু সবাই মিলে মজা করব, খাবোদাবো ঘুরবো বেড়াবো।”
অনুপমার নজর এড়িয়ে দেবায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কিন্তু ধরা পড়ে যায়। ওর চোখের থেকে আড়াল করে নিঃশ্বাস নেওয়া অসম্ভব। শেষ পর্যন্ত মিষ্টি হেসে অনুপমা ওকে বলে, “ঠিক আছেরে বাবা, করিস তুই।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “তুই ডারলিং, মনের কথা ঠিক বুঝে যাস।”
এতদিন শ্রেয়ার ঝামেলায় নিবেদিতার কথা একদম মনে ছিল না, কিন্তু কিছু আগে দেবায়নের মুখ থেকে নিবেদিতার নাম শুনেই ওর কথা মনে পরে যায়। নিবেদিতার সাথে দেবায়নের কি সম্পর্ক, ওদের হৃদ্যতা কতটা গভীর, এর পেছনে কি কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা দেবায়ন ওর কাছ থেকে লুকিয়ে গেছে? জানতে ইচ্ছে করে তাই দেবায়নকে প্রশ্ন করে অনুপমা, “আচ্ছা আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?”
দেবায়ন মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
অনুপমা ওর চোখে চোখ রেখে ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করে, “নিবেদিতার রহস্য কি? কেন হঠাৎ এতদিন পরে আমাকে নিয়ে নিবেদিতার বাড়িতে গেলি? ওর আর তোর মাঝে কি চলছে অথবা কি ঘটেছে যেটা আমি জানি না।”
বুক ভরে শ্বাস নেয় দেবায়ন, চোখ দেখে মনে হল এইবারে একটু বেকায়দায় পড়ে গেছে। অনুপমার ওই চোখের দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না তাও না তাকালে ওর মিথ্যে ধরা পড়ে যাবে। একটু থেমে একটু চিন্তা করে উত্তর দেয়, “সত্যি বলতে নিবেদিতা আর আমি বেশ ভালো বন্ধু।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কত ভালো বন্ধু, শ্রেয়ার মতন না পায়েলের মতন।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “না না, ওইরকম ভাবছিস কেন। সঙ্গীতার মতন ভালো বন্ধু আমরা।”
অনুপমা স্মিত হেসে প্রশ্ন করে, “সত্যি বলছিস? অত সুন্দরী নিবেদিতাকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছিস বলতে চাস?”
দেবায়ন ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “এই তোকে ছুঁয়ে বলছি। নিবেদিতা আর আমার মধ্যে শুধু ভালো বন্ধুত্তের সম্পর্ক ব্যাস আর কিছু না। আমাদের কোম্পানির সিস্টার কোম্পানির মালিকানা ওর হাতে, ওর কোম্পানির হাত ধরে আমাদের হাতে অনেক টাকা আসে তাই ওর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতেই হয়। এই যে হোটেল গুলোর এক্সপানশন হবে, তার জন্য সব কাজ ওই কোম্পানি দিয়ে করানো হবে। আমাদের টাকা ঘুরে ফিরে আমাদের পকেটে আর এর মাঝ থেকে ইনভেস্টরের টাকাও আমাদের পকেটে।”
না, ওর পুচ্চুর চোখ মিথ্যে বলছে না। নিবেদিতার সাথে দেবায়নের শুধুমাত্র একটা ভালো সম্পর্ক সেটা ওর চোখ দেখেই মনে হল না হলে এতক্ষণে নিশ্চয় ওর কাছে খুলে বলে দিত ঠিক যেমন ফ্রাঙ্কফুর্টে গিয়ে শ্রেয়ার সাথে হয়েছিল অথবা র্যাডিসন ফোর্টে গিয়ে অনন্যার সাথে হয়েছিল। পরেরদিন ওর কাছে এসে সব বলে দিয়েছিল ওর পুচ্চু। অনুপমা হেসে বলে, “দেখ সোনা, অত কি ঘুরছে সেটা জানি না অথবা জানতে চাই না। যার উত্তর খুঁজছিলাম সেটা পেয়ে গেছি।”
এরপরে চেন্নাই নামা পর্যন্ত ওদের বিভিন্ন গল্পে কেটে যায়। চেন্নাই একঘন্টার ট্রানজিট সময়, এর মাঝে সবাই নিজের নিজের বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় ঠিক মতন চেন্নাই পৌঁছে গেছে। ওইখান থেকে আবার একটা প্লেনে চেপে সোজা কোইম্বাতুর। কোইম্বাতুর ছোট শহর তবে বেশ সচ্ছল শহর। ওদের জন্য দুটো গাড়ি কোইম্বাতুর এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিল। মেয়েরা একটা গাড়িতে উঠে পরে আর ছেলেরা অন্য গাড়িতে। কোইম্বাতুর থেকে উটি যেতে ঘন্টা তিনেক সময় লাগবে বলে ড্রাইভার জানায়। তবে বর্ষার জন্য পাহাড়ি রাস্তায় একটু সময় বেশি লাগতে পারে।
ধীমান শ্রেয়াকে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “কিরে দেবুকে করবি না আমাকে? চোখে যা রঙ লেগেছে সেই রঙ দেখে আর থাকতে পারছি না।”
আসলে গতরাতের প্রিয় বান্ধবীর সাথে খেলার রঙ এখন কাটেনি ঠিকভাবে। তাও শ্রেয়া ওর কানেকানে বলে, “তুই আমাকে করিস, আর ঋতুকে না হয় রূপক আর দেবায়নের সাথে ছেড়ে দেওয়া হবে।”
ধীমান একপাশে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে অন্যপাশে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ঠিক আছে সুন্দরীরা। তোরা আমার বাঁড়ার খেয়াল রাখিস আর ওই দুইজনে মিলে আমার প্রেমিকার খেয়াল রাখবে।” চোখ টিপে ঋতুপর্ণাকে বলে, “কি সোনা, এইবারে কারটা পেছনে আর কারটা সামনে?”
বাইরে আবার বৃষ্টি শুরু, একটু পরেই ওদের বেড়িয়ে পড়তে হবে। কথা ছিল, দেবায়ন আর রূপক সোজা এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে। গতরাতে দুইজনে মিলে আকন্ঠ বিষপানের মতন মদ খেয়ে মাতলামো করেছে। এমনকি মাতাল হয়ে রুপকের পশ্চাৎদেশে বেশ কয়েকটা লাত্থি ঝেড়ে দিয়েছে। এক প্রকার শাসিয়ে দিয়েছে, উটিতে রূপক একদম শ্রেয়াকে ছুঁতে পারবে না। সেই নিয়েও খাবার টেবিলে খানিকটা হাসাহাসি হয়ে যায়। ব্রেকফাস্ট টেবিলে ভাগ্যিস বাড়ির বড়রা অথবা অঙ্কন ছিল না। সকাল সকাল সোমেশ আর অঙ্কন খেয়ে দেয়ে নিজেদের কাজে বেড়িয়ে গেছে। পারমিতা সোফায় বসে ওদের এই হাসি মজা উপভোগ করছিল। এতদিনে শ্রেয়া আর অনুপমার মাঝে চলা উত্তপ্ত লাভার ফল্গু নদী যদিও জানত না, তাও ওদের একসাথে দেখে বেশ ভালো লাগে।
খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই বেড়াতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। শ্রেয়া একটা চাপা হালকা রঙের জিন্স আর হালকা গোলাপি রঙের টপ পরে, অনুপমার পরনে সাদা রঙের জিন্স আর আকাশী রঙের চাপা টপ, ঋতুপর্ণা একটা হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট আর চাপা টপ পরে তৈরি। তিন দেবী সারা শহর মাতাল করার মতন করে সেজে বেড়িয়ে পরে। একা ধীমান, ওদের তিনজনকে দেখে ঠিক কি করবে ভেবে পায় না।
পারমিতা ওদের বারবার সেই ছোটবেলার মতন পাখী পড়া করিয়ে দেয়, “বর্ষা কাল বেশি ভিজবি না, দক্ষিন ভারতে বৃষ্টি বেশি হয়। কেন যে তোদের উটি যেতে হত সেটাই বুঝে পেলাম না? দেবায়নকে বললে বিন্সারে অথবা দেরাদুনে রিসোরট বুক করা যেত না?”
অনুপমা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মা, আমরা আর কেউই আর সেই আগের মতন ছোট মেয়ে নই, সবাই বড় হয়ে গেছি। আর এইজন্যে উটি যাচ্ছি” গলা নামিয়ে কানেকানে বলে, “স্যুইট গুলো খুব সুন্দর আর বেশ বড় বড় তাই। ওর জানালা খুললেই জঙ্গল আর ছোট পাহাড়।”
বাড়ি থেকে চারজনে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে এয়ারপরটের দিকে। সামনের সিটে অনুপমা, পেছনে ঋতুপর্ণা, ধীমান আর শ্রেয়া। ঋতুপর্ণাকে একপ্রকার কোলের ওপরে টেনে বসিয়ে নেয় ধীমান। সিটের আড়ালে, টপের ভেতর থেকে হাত ঢুকিয়ে নরম পেটের ওপরে হাত রেখে চেপে ধরে। হাতের ওপরে হাত দিয়ে প্রেমিকের হাতের উত্তাপ নিজের শরীরের সাথে মাখিয়ে নেয় ঋতুপর্ণা।
শ্রেয়া মিচকি হেসে ধীমান আর ঋতুপর্ণাকে দেখে বলে, “ওরে পাগল, গতরাতের মাখামাখি এখন কাটেনি নাকি?”
অনুপমা লেকটাউন মোড়ে দেবায়নকে ফোন করে ডেকে নেয়। কথা মতন রূপক আর দেবায়ন ওদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল। যাওয়ার পথে ওদের গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে ওদের যাত্রা শুরু হয়। ছয় বন্ধু বান্ধবী, উটিতে গিয়ে কি যে হবে সেটা ভেবেই ঋতুপর্ণা ধীমানকে জড়িয়ে ধরে।
গাড়ির সামনে বসে দেবায়ন আর অনুপমা। একটা সিটের মধ্যে অনুপমাকে এক প্রকার কোলের ওপরে বসিয়ে নিয়েছে। পাশে ড্রাউভার তাই ওদের মধ্যে বিশেষ কথাবার্তা হয় না। পেছনে পায়ে ক্রেপব্যান্ডেজ বেঁধে রূপক বসে, শ্রেয়া বারেবারে ওর পায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। ধীমান এক প্রকার ঋতুপর্ণাকে কোলের মধ্যে টেনে ধরে রেখেছে, যদি হাতছাড়া হয়ে যায় এর মধ্যেই?
অনুপমা ঘাড় ঘুরিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “কাল রাতে কি করলি রে তোরা?”
রূপক হেসে উত্তর দেয়, “তোর নীচে কিছু লাগছে?”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে তাকায়, সত্যি লাগছে। জিন্স ভেদ করে প্রেমিকের উদ্ধত লিঙ্গ ওর পাছার খাঁজের মাঝে এক প্রকার আটকে, আর দেবায়ন কষে দুই হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে গাড়ির তালেতালে পাছার মাঝে লিঙ্গ ঘষে চলেছে। ড্রাইভার পাশে থাকা সত্ত্বেও, দেবায়নের নিষ্ঠুর হাত ওর পেটের ওপরে জামার ওপর দিয়েই ওর নরম পেট আদর করে চলেছে। পিঠের ওপরে ঘাড়ের কাছে প্রেমিকের উত্তপ্ত শ্বাসের ঢেউ ওকে পাগল করে তোলে। দেবায়নের হাতের ওপরে হাত রেখে বাহুপাশ আরো নিবিড় করে নেয় নিজের শরীরের চারপাশে। এই কঠিন বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ আলাদা, এই প্রসস্থ ছাতির মধ্যে মাথা রেখে যে নিরাপত্তার অনুভুতি পায় সেটার অনাবিল আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে ক্ষণিকের জন্য মন মানতে চায় না।
দেবায়ন ওর ঘাড়ের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “কতকাল আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে।”
ঋতুপর্ণা পেছন থেকে উত্তর দেয়, “তুই শালা কাল রাতে কাট মেরে দিলি, না হলে কি মজা হত বলতো?”
ধীমান ঋতুপর্ণার মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “ইসসস….. কাল রাতে তোমার মনে এই ছিল?”
ঋতুপর্ণা লজ্জায় পড়ে বলে, “না না, কাল রাতে আমি তোমার সাথেই ছিলাম, এই সকাল থেকে মানে…..”
রূপক হাত বাড়িয়ে ঋতুপর্ণার ঊরু ছুঁয়ে বলে, “তাহলে প্লেনে আমার পাশে বসবে, ব্রেকফাস্ট করিয়ে দেব।”
শ্রেয়া চোখ পাকিয়ে বলে, “তোমার না পা মচকে গেছে? আবার প্লেনে কি করবে?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “আরে চিন্তা করছিস কেন, আসল পা একদম ঠিক আছে। গত রাতে বাঁড়া….. ইসসস না না….. আর না…..”
গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয় অনুপমা, দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে “কোইম্বাতুরে আমাদের নিতে কি মিস্টার পারিজাত আসবে?”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “না মিস্টার পারিজাত আসছে না, তবে দুটো গাড়ি পাঠিয়ে দেবে।”
ঋতুপর্ণা বলে, “দুটো গাড়ি কেন রে, একটাতে সহজেই আমরা চলে যাবো।”
দেবায়ন হেসে মাথা নাড়ায়, “না রে, গাড়িতে মজা করা যাবে না, সরি ডারলিং। যা করার সুইটে গিয়ে।”
শ্রেয়া হেসে উত্তর দেয়, “তোরা ঠিক থাকলেই হল, এইখানে যা শুরু করেছিস প্লেনের যাত্রীরা না ভির্মি খায়।”
বৃষ্টির জন্য প্লেন এক ঘন্টা লেট, দেবায়ন রাতেই ইন্টারনেটে ওয়েব চেকইন করে নিয়েছিল, তাই মনের মতন সিট পেতে কোন অসুবিধে হয়নি। কোলকাতা চেন্নাই, বোইং ড্রিম্লাইনার, চওড়া দেহের বিশাল প্লেন, আকাশে উঠলে মনে হয় ছোট একটা হোটেল চলছে। একসাথে সিট নয় কারুর, সবারই দুটো করে জানালা নিয়ে সিট। সিকিউরিটি চেক করে লাউঞ্জে বসে থাকা ছাড়া কোন গতি নেই ওদের। অনুপমার জন্য প্লেনে ওঠা একটা ছেলে খেলা, ইদানিং এদিক ওদিকে ব্যাবসার কাজে হোটেলের কাজে বেড়াতে হয় বলে দেবায়নের এই এয়ারপোর্ট এক রকম, কিন্তু ঋতুপর্ণা অতটা সম্ভ্রান্ত অথবা সচ্ছল বাড়ির মেয়ে নয় যে রোজদিন প্লেনে চাপবে। ওর জন্য এই প্লেনে চাপা দ্বিতীয় বার শ্রেয়ার জন্যেই প্রায় এক। অনুপমার অফিসে কাজ করার আগে কোনোদিন প্লেনে চাপেনি। ওদের এই চেকইন, সিকিউরিটি চেক ব্যাপার, কোলকাতা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ দেখে চোখ ধাধিয়ে যায়। কফি শপে বসে ছয়জনে গল্পে মেতে ওঠে।
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি নিয়েই প্লেন কোলকাতার মাটি ছাড়ে। সবাই নিজেদের সঙ্গী নিয়েই বসে।
দেবায়নের হাত খানি নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে আঙ্গুল গুলো নিয়ে খেলা শুরু করে দেয় অনুপমা। অনেকদিন পরে আবার একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। সেই অনেকদিন আগে হোটেলের কাজে একবার বেড়াতে হয়েছিল, উটি, ব্যাঙ্গালোর আর পুনে তারপরে দেবায়নের সাথে আর বেড়াতে যাওয়া হয়নি। প্লেন মাটি ছেড়ে ওঠার পরে অনুপমা, দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ উটি কেন, কোলকাতার কাছে পিঠে কোন রিসোর্ট বুক করে নিলেই হতো।”
দেবায়ন ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই হবে তাই উটি।”
অনুপমা ওর কথার মানে বুঝতে দেরি হয়না, কিঞ্চিত অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ভাবলাম একটু মজা হবে আর কি না?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আরে মজা হবে সব হবে, তার ,মধ্যে কিছু কাজ এই আর কি। ব্যাস। আসলে, চেইন হোটেলের জন্য একটা ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার বানাতে হবে সেটার এখন পর্যন্ত কিছুই করা হল না। রূপক শ্রেয়া সাথে আছে, সুতরাং ডিজানিং আর প্রোডাক্ট নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। মিস্টার পারিজাতের সাথে খুলে আলোচনা করা যাবে। দ্বিতীয়, উটিতে একটা বাজেট হোটেল নির্মাণ করতে চাই। এই রিসোর্ট ফাইভ স্টার রিসোর্ট, অকুপেন্সি একটু কম কিন্তু বাজেট হোটেল হলে টাকা মোটামুটি চলে আসবে। মিস্টার পারিজাতের সাথে ওই ব্যাপারে একবার কথাবার্তা হয়ে গেলে পরের বার নিবেদিতাকে নিয়ে আসব কন্সট্রাক্সনের জন্য।”
অনুপমা মুখ ভার করে জানালার বাইরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বলে, “মাথায় ওই চিন্তা ছাড়া আর কোন চিন্তা আসে না।”
অভিমানী প্রেয়সীর টলটল চোখ দেখে দেবায়নের বুকের মাঝে ব্যাথা দেখা দেয়। কাছে টেনে নরম গোলাপি গালে নাক ঘষে বলে, “এই সোনা, এর মধ্যে রেগে গেলি কেন? আরে বাবা, মজা করব, দারু খাবো, নাচব গাইব, তারমধ্যে একটু সময়ের জন্য ছুটি দিস ব্যাস আমি আমার কাজ সেরে নেব।”
অনুপমা তেড়ে উঠে যায় সিট ছেড়ে, সামনের সিটে ধীমান বসেছিল, ওর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, “এই ছেলে এইখানে এসে বস আমি ওর পাশে বসব না।”
দেবায়ন দেখল এ যে ভারী বিপদ, এইভাবে প্রেয়সী ক্ষেপে গেলে মহা মুশুকিল, সারা ছুটির মজা কেঁচিয়ে যাবে। ধীমানের মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “সিট ছেড়ে উঠলে কিন্তু মেরে ফেলে দেব।”
অনুপমা চাপা কণ্ঠে ধীমানকে বলে, “তুই আসবি না আমি উঠে যাবো।”
নিরুপায় ধীমান একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে, দুইজনেই ওর সহপাঠী দুইজনেই ওর বন্ধু, কাকে ছেড়ে কার কথা রাখবে। শেষ পর্যন্ত ধীমান শ্রেয়াকে বলে, “এই মেয়ে তুই আমার সিটে এসে বসতে পারিস?”
ঋতুপর্ণা হেসে ফেলে, “দেখ দুইজনের কথা রেখেছে ধীমান এইবারে যেখানে বসার সেইখানে বসে পড়। একটু পরেই চেন্নাই এসে যাবে তারপরে মারামারি কাটাকাটি সব হবে।”
অনুপমার কোমর পেঁচিয়ে ধরে দেবায়ন ওকে নিজের কোলে বসিয়ে বলে, “এত ঝাঁজ দেখাচ্ছিস কেন? দেখ সোনা একটু ভাব একটু মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করে দেখ। তুই এদিকে ওদিকে দানছত্র খুলেছিস, সূর্যকে ইতিমধ্যে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিস ওর দোকানের জন্য, তারপরে আবার অনন্যাকে কথা দিয়ে এসেছিস যে সত্যজিতের পত্রিকার খুলতে টাকা দিবি। এরপরে এমন অনেকে আসবে, তুই টাকা দিয়ে সাহায্য করবি…..”
অনুপমা ওর চোখে চোখ রেখে বলে, “তাতে কি হয়েছে, আছে তাই দিচ্ছি। তোকে না জানিয়ে কি দিয়েছি? সূর্যকে আর.টি.জি.এস আমি তোকে জিজ্ঞেস করার পরেই করেছি আর অনন্যাদির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত ও আমার সাথে আর কথা বলেনি তাই আমিও আর বলিনি। যাই হোক আসল কথা হচ্ছে তুই আমাকে ভুলে গেছিস।”
দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় অনুপমার টলটল চোখ দেখে। ওই চোখে জল, না না। অনুপমার মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে নরম করে বলে, “ঠিক আছে, উটিতে শুধু আমরা আর কিছু না।”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে হাত রেখে গালে চেপে ধরে বলে, “সত্যি?” দেবায়ন মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
অনুপমা ওর নাকের ওপরে নাক ঘষে মিষ্টি কণ্ঠে বলে, “আর আমার পাশ থেকে কোথাও যাবি না বুঝলি। এইকটা দিন শুধু সবাই মিলে মজা করব, খাবোদাবো ঘুরবো বেড়াবো।”
অনুপমার নজর এড়িয়ে দেবায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কিন্তু ধরা পড়ে যায়। ওর চোখের থেকে আড়াল করে নিঃশ্বাস নেওয়া অসম্ভব। শেষ পর্যন্ত মিষ্টি হেসে অনুপমা ওকে বলে, “ঠিক আছেরে বাবা, করিস তুই।”
দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “তুই ডারলিং, মনের কথা ঠিক বুঝে যাস।”
এতদিন শ্রেয়ার ঝামেলায় নিবেদিতার কথা একদম মনে ছিল না, কিন্তু কিছু আগে দেবায়নের মুখ থেকে নিবেদিতার নাম শুনেই ওর কথা মনে পরে যায়। নিবেদিতার সাথে দেবায়নের কি সম্পর্ক, ওদের হৃদ্যতা কতটা গভীর, এর পেছনে কি কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা দেবায়ন ওর কাছ থেকে লুকিয়ে গেছে? জানতে ইচ্ছে করে তাই দেবায়নকে প্রশ্ন করে অনুপমা, “আচ্ছা আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?”
দেবায়ন মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”
অনুপমা ওর চোখে চোখ রেখে ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে শক্ত করে ধরে জিজ্ঞেস করে, “নিবেদিতার রহস্য কি? কেন হঠাৎ এতদিন পরে আমাকে নিয়ে নিবেদিতার বাড়িতে গেলি? ওর আর তোর মাঝে কি চলছে অথবা কি ঘটেছে যেটা আমি জানি না।”
বুক ভরে শ্বাস নেয় দেবায়ন, চোখ দেখে মনে হল এইবারে একটু বেকায়দায় পড়ে গেছে। অনুপমার ওই চোখের দিকে আর তাকানো যাচ্ছে না তাও না তাকালে ওর মিথ্যে ধরা পড়ে যাবে। একটু থেমে একটু চিন্তা করে উত্তর দেয়, “সত্যি বলতে নিবেদিতা আর আমি বেশ ভালো বন্ধু।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কত ভালো বন্ধু, শ্রেয়ার মতন না পায়েলের মতন।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “না না, ওইরকম ভাবছিস কেন। সঙ্গীতার মতন ভালো বন্ধু আমরা।”
অনুপমা স্মিত হেসে প্রশ্ন করে, “সত্যি বলছিস? অত সুন্দরী নিবেদিতাকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দিয়েছিস বলতে চাস?”
দেবায়ন ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “এই তোকে ছুঁয়ে বলছি। নিবেদিতা আর আমার মধ্যে শুধু ভালো বন্ধুত্তের সম্পর্ক ব্যাস আর কিছু না। আমাদের কোম্পানির সিস্টার কোম্পানির মালিকানা ওর হাতে, ওর কোম্পানির হাত ধরে আমাদের হাতে অনেক টাকা আসে তাই ওর সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতেই হয়। এই যে হোটেল গুলোর এক্সপানশন হবে, তার জন্য সব কাজ ওই কোম্পানি দিয়ে করানো হবে। আমাদের টাকা ঘুরে ফিরে আমাদের পকেটে আর এর মাঝ থেকে ইনভেস্টরের টাকাও আমাদের পকেটে।”
না, ওর পুচ্চুর চোখ মিথ্যে বলছে না। নিবেদিতার সাথে দেবায়নের শুধুমাত্র একটা ভালো সম্পর্ক সেটা ওর চোখ দেখেই মনে হল না হলে এতক্ষণে নিশ্চয় ওর কাছে খুলে বলে দিত ঠিক যেমন ফ্রাঙ্কফুর্টে গিয়ে শ্রেয়ার সাথে হয়েছিল অথবা র্যাডিসন ফোর্টে গিয়ে অনন্যার সাথে হয়েছিল। পরেরদিন ওর কাছে এসে সব বলে দিয়েছিল ওর পুচ্চু। অনুপমা হেসে বলে, “দেখ সোনা, অত কি ঘুরছে সেটা জানি না অথবা জানতে চাই না। যার উত্তর খুঁজছিলাম সেটা পেয়ে গেছি।”
এরপরে চেন্নাই নামা পর্যন্ত ওদের বিভিন্ন গল্পে কেটে যায়। চেন্নাই একঘন্টার ট্রানজিট সময়, এর মাঝে সবাই নিজের নিজের বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় ঠিক মতন চেন্নাই পৌঁছে গেছে। ওইখান থেকে আবার একটা প্লেনে চেপে সোজা কোইম্বাতুর। কোইম্বাতুর ছোট শহর তবে বেশ সচ্ছল শহর। ওদের জন্য দুটো গাড়ি কোইম্বাতুর এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিল। মেয়েরা একটা গাড়িতে উঠে পরে আর ছেলেরা অন্য গাড়িতে। কোইম্বাতুর থেকে উটি যেতে ঘন্টা তিনেক সময় লাগবে বলে ড্রাইভার জানায়। তবে বর্ষার জন্য পাহাড়ি রাস্তায় একটু সময় বেশি লাগতে পারে।