04-10-2020, 10:48 PM
পর্ব ১১
১১ (খ)
“ড্রইং এর মাস্টার!” ফোনে ওপাশে বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেলে রাজীব। “এ তো বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেন তেন মাস্টার এর কাছে তো আমরা তুলিকে দিতে পারি না শেখার জন্য!”
“হ্যাঁ,” শান্তা জানতো, এমনটাই উত্তর দেবে রাজীব। খুব একটা চমকাল না সে। সকাল বেলা তুলিকে কলেজে দিয়ে বাসায় এসে আয়নার সামনে বসেছিল ও। রূপচর্চার মাঝ দিয়েই ফোনটা এসেছে রাজীব এর। ফোন দিয়েই জানতে চেয়েছে রাজীব - কেমন আছে তার মহারানী! লাজুক হাসি দিয়ে নিজের কথা বলেছে শান্তা। একবার ভেবেছিলো রাজীব বোধহয় আজ আসবে। কিন্তু কাজে আটকে আছে নাগর। দুঃখ চেয়েছে ওর জন্য। তারপরই তুলির কথাটা তুলেছে শান্তা।
“আমায় একদিন সময় দাও তুমি, একজনের কথা মাথায় আসছে বটে - তবে একটু জেনে নেই ব্যাপারটা,” রাজীব জানায় ওকে। “তুমি চিন্তা কর না শান্তা, আমি সামলে নিবো। তোমাকে আর ভাবতে হবে না।”
“একটু জলদী কর না,” শান্তা তাগদা দেয়। “সামনের মাসেই কিন্তু ওর পরীক্ষা আছে… কি যে করি আমি!”
“তোমায় আর একদম ভাবতে হবে না শান্তা,” রাজীব আশ্বস্ত করে ওকে আবার। “আমি সামলে নেবো।”
ফোনটা হাসি মুখে নামিয়ে রাখে শান্তা। গত রাতে ঠিক এমনটাই ভেবেছিলো ও। রাজীব ওকে চিন্তা করতে বারণ করবে। ফয়সালের মত সব ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে না একদমই। ধিরে ধিরে ফয়সালের উপর বিরক্তিটা বাড়ছে শান্তার। এখন মনে হচ্ছে তার - ফয়সাল পরকীয়ায় লিপ্ত হয়ে ভালোই হয়েছে। রাজীব এর মতন এত যত্নবান, কর্তব্যশীল এক পুরুষ এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ হয়েছে ওর।
রাতের বেলা ফয়সাল একটু দেরি করেই ফিরে সেদিন। শান্তা ভেবেছিলো ফয়সাল বোধহয় তুলির আর্ট এর কথা একদম ভুলেই গেছে। ওকে অবাক করে দিয়ে ঘুমাতে যাবার আগে জানতে চাইলো ফয়সাল রাতে, “তুলির আর্ট এর কি করলে?”
“আর্ট!” একটু ভেবাচেকা খেয়ে যায় শান্তা। তারপর নিজেকে সামলে নেয়। “কলেজে এক ভাবীর সঙ্গে কথা বলেছি। উনিও ভাবছে। কদিনের মধ্যেই দেখা যাবে,”
“হম, ওদের সঙ্গেই কথা বল। ওরা ভালো বুঝবে,” ফয়সাল মাথা দোলায়। “ওদের ছেলেমেয়েকে কই ভর্তি করিয়েছে জানো, ওখানে তুলিকে ভর্তি করে দাও। ঝামেলা শেষ...”
“তোমার কাছে এটা ঝামেলা?” জিজ্ঞাসা না করে পারলো না শান্তা। ওর প্রশ্নের উত্তর দিলো না ফয়সাল। একপাশে ঘুরে শুয়ে পড়লো। শান্তা আর গেলো না ওর বিছানায়। নিজের বালিশটা তুলে নিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে পা বাড়াল। একটা বার জানতেও চাইলো না ফয়সাল, কই যাচ্ছে শান্তা!
একা শুতে ভালোই লাগছে শান্তার আজকাল। মুহূর্তেই ঘুমিয়ে পড়ে আজ ও। কিন্তু ঘুমটা গভীর হবার আগেই ঝাঁকি খেয়ে উঠে বসে। খানিকটা ভড়কেই যায় শান্তা। ফয়সাল দাড়িয়ে আছে ওর পাশে। ওর কাধ ধরে ঝাকাচ্ছে। এত রাতে কি হয়েছে ওর? শান্তার চোখটা চট করে পড়ে পাশের বিছানার উপর। নাহ, তুলি ঠিকই আছে। ঘুমুচ্ছে নিঃশব্দে। ফয়সালের ফিস ফিস শুনতে পায় শান্তা। “এই উঠো - আমাকে হাস্পাতালে যেতে হবে...”
“কেন?” ভ্রূ কুঁচকায় শান্তা। ওর চোখ থেকে তখনো ঘুম কাটে নি। মাথাটা কেমন ফাঁপা মনে হচ্ছে। ফয়সাল ততক্ষনে বেড়িয়ে যাচ্ছে ঘর থেকে। অন্ধকারেই শান্তা লক্ষ্য করলো ইতিমধ্যেই ফয়সাল প্যান্ট শার্ট পড়ে ফেলেছে। ও বিছানা থেকে নেমে এলো। মাথাটা ঘুরে উঠলো ওর। কোন মতে বিছানার কিনারাটা আকড়ে ধরে নিজেকে সামলালো শান্তা। ফয়সালের পিছু নিয়ে বেড়িয়ে এলো বসার ঘরে। “কি হয়েছে সেটা তো বলবে! এই রাতে তুমি কই যাচ্ছ!”
“ভোর হয়ে যাচ্ছে,” ফয়সাল শার্ট এর হাতা গটাতে গটাতে বলে। “সাড়ে তিনটে বাজে… হায়দার সাহেব অসুস্থ - ফোন এসেছিলো। তাকে রাতের বেলাই হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে...”
“এখন কেন যেতে হবে তোমায়? সকালে যাও!” শান্তা বুঝতে পারছে না কি করবে ও। ফয়সাল একবার ওর দিকে তাকায় - মুহূর্তেই চোখ ফিরিয়ে নেয়।
“সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না… তুমি এসব বুঝবে না, আমি গেলাম...”
শান্তা দাড়িয়ে থাকে বিস্ময় নিয়ে চোখে। দরজা খুলে এই শেষ রাতে - বেড়িয়ে যায় ফয়সাল। কোথায় যাচ্ছে ও! কোন হাসপাতালে? তার কিছুই জানা নেই শান্তার। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ও। নিজেকে অসহায় আর নির্বোধ মনে হচ্ছে শান্তার কাছে। একই সাথে ভয়ও হচ্ছে ওর ফয়সালের জন্য।
দরজা লাগিয়ে শান্তা বসার ঘরেই বসে থাকে কপাল চেপে ধরে। কি করবে ও? ফয়সাল বলল হায়দার আলী অসুস্থ - তা কেমন অসুস্থ সে? লোকটিকে কখনো দেখে নি শান্তা। দূর সম্পর্কের আত্মীয় নাকি ফয়সালের। কেমন আত্মীয়, আজ অব্দি সেটাও খোলাসা করে নি ফয়সাল। তার সাথেই তো খুলনার ব্যাবসায় নেমেছে আজকাল। খুলনার ব্যাবসার কথা মনে পড়তেই শান্তার মাথায় এলো সেই মেয়েটির তখা। আচ্ছা- হায়দার আলী নয় - যদি ওই মেয়েটি ডেকে থাকে ফয়সালকে? হয়তো কোন বিপদে পড়েছে মেয়েটি নিজেই। তাই তাকে উদ্ধার করতে ছুটে যাচ্ছে ফয়সাল! এই ভাবনাটা শান্তার মনকে আরও গুড়িয়ে দেয়। ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নিঃশব্দে………
রিয়ান খান