04-10-2020, 10:47 AM
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৪)
নিবেদিতা ওকে ডেকে বলে, “ছেলেদের নীচেই ছেড়ে দাও চল আমার সাথে একটু উপরে চল।”
অগত্যা অনুপমা কি করে, শেষ পর্যন্ত দেবায়ন, অঙ্কুশদের নীচে বসার ঘরে ছেড়ে দিয়ে নিবেদিতার পেছন পেছন উপরে চলে আসে। ওদের মতন ডুপ্লেক্স বাড়ি, নীচে রান্না ঘর, খাওয়ার ঘর, লবি স্টাডি আর একটা অতিথিদের ঘর, উপরের সব শোয়ার ঘর। উপরে ওঠার সময়ে নিবেদিতা জানায়, যেহেতু তার বাবার একটু চলাফেরা করার অসুবিধে আছে তাই বাবা নীচেই থাকেন। ছেলেকে নিয়ে নিবেদিতা উপরে থাকে। ছেলের ঘর আলাদা। নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানার উপরে অনুপমাকে বসিয়ে দিয়ে আলমারি খোলে নিবেদিতা।
আলমারি থেকে একটা দামী জিন্স আর জ্যাকেট বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা আমার বাড়িতে আসার উপহার।”
অনুপমা আশ্চর্য চকিত হয়ে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিনে কিছুই করেনি আর হঠাৎ এত আন্তরিকতার অর্থ কি? অনুপমা মানা করে, “না না, এই সব আমি নিতে পারব না।”
নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “কেন নিতে পারবে না? আমি কি পর? ছোটবেলা থেকে তোমাদের জানি, শুধু এই কয় বছরে সেই মতন ভাবে তোমাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি এই যা।” একটু থেমে বলে, “তুমি সত্যি বড় ভাগ্যবান, অনুপমা। দেবায়নের মতন একজন কে পাশে পেয়েছ।” বলে স্মিত হাসে।
নিবেদিতা কতটা দেবায়নকে চেনে? অনন্যার মতন না ওর মায়ের মতন করে চেনে? বড় প্রশ্ন, আজকাল কোথায় কি লুকিয়ে করে আসে জানা যায় না।
দেবায়নের জন্য একটা দামী স্যুটের পিস বের করে হাতে ধরিয়ে বলে, “এটা দেবায়নের”, আরো একটা একটা স্যুটের পিস ওকে হাতে দিয়ে বলে, “এটা অঙ্কনের জন্য।” তারপরে একটা বেশ সুন্দর ডিজাইনার সালোয়ার কামিজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা পায়েলের জন্য।”
অনুপমা অবাক চোখে একবার জিনিসের দিকে দেখে একবার নিবেদিতার স্মিত হাসিহাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে। পায়েলের কথাও এর অজানা নয়। অর্থাৎ নিবেদিত ওদের পরিবারের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। একবার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত কি ভাবে এত কথা জানতে পারল।
শেষ পর্যন্ত কৌতুহল দমিয়ে না রেখে অনুপমা প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুমি এত সব আমাদের জন্য কিনতে গেলে কেন?”
নিবেদিতা উত্তর দেয়, “কিছু না এমনি কিনেছি। বন্ধুদের কি উপহার দিতে মানা আছে নাকি?”
কিন্তু অনুপমা ওর জন্য কিছুই আনেনি যে। সব দেবায়নের দোষ, যদি আগে থেকে ছেলেটা সব জানত তাহলে ওকে কেন বলল না। অবশ্য ওকে বললে কোনোদিন এই বাড়িতে পা রাখত না অনুপমা।
অনুপমা উপহারের পরিমান দেখে বিস্মিত হয়ে যায়, প্রত্যেকটাই বেশ দামী আর দারুন সুন্দর। নিবেদিতাকে মজার ছলে বলে, “এই দেখো, এতগুলো জিনিস কি করে নিয়ে যাবো বলো তো? এসেছি বাইকে, তার ওপরে আবার বৃষ্টি বাদলার দিন।”
নিবেদিতা হেসে ফেলে, “তুমি আর বল না বুঝলে। আমি গাড়ি করে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব খানে। নাও চল এবারে নীচে যাওয়া যাক। তোমাদের জন্য ক্র্যাব আনিয়েছিলাম, ওইটাকে ম্যারিনেট করে রেখেছি। একটু গ্রিল করতে হবে সেই সাথে ফ্রেঞ্চ ব্রেড। তুমি ক্যাভিয়ার খাও?”
অনুপমা হাঁ করে বেশ খানিকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে প্রশ্ন করে, “তুমি করেছে কি? আমাদের আজকে শেষ খাওয়া খাওয়াবে নাকি? আর সত্যি বলতে ক্যাভিয়ার আমার কেমন যেন খেতে লাগে, তবে ভদকায় আপত্তি নেই।” বলেই হেসে ফেলে।
নিবেদিতা মাথা দোলায়, “আচ্ছা, চল নীচে চল। রেড ওয়াইন দিয়ে ক্র্যাবটা ভালোই লাগবে। ক্যাভিয়ার খেতে হবে না। আমারো বিশেষ ভালো লাগে না, কিন্তু তুমি আসবে জেনেই ওই সব আনা।”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “মাত্র তিনজনে খাবে আর তার জন্য ক্যাভিয়ার? তুমি না সত্যি…..”
নিবেদিতা উত্তরে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে হেসে বলে, “আমরা কি বান্ধবী হতে পারি?”
বাড়ির সব থেকে বড় অনুপমা, মায়ের আদর সম্প্রতি পেয়েছে, তবে ওর কোনোদিন মনে হয়নি ওর একটা বড় দিদি হোক তাও নিবেদিতাকে দেখে মনে হল একটা দিদি থাকলে মনে হয় ভালো হত। কিন্তু মনের গভীরে একটা সংশয় দেখা দেয়। হঠাৎ করে এত অন্তরিকতা, এত হৃদ্যতা। পুচ্চুকে জিজ্ঞেস করতেই হবে এর অর্থ। নিশ্চয় এর পেছনে গুঢ় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা কিছুতেই ওর চোখের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে না। একবার বাবার নাম ধরে ডাকতে গিয়েও ডাকেনি। তবে কি? হতেও পারে নাও হতে পারে। জলপাইগুড়িতে সচক্ষে ধৃতিমানের সাথে রেস্টুরেন্টে বেশ আন্তরিক মুহূর্তে দেখা পেয়েছিল। বাবার সাথে হলে হঠাৎ আবার ধৃতিমানের সাথে হৃদ্যতা কেন বাড়াতে যাবে?
একটা বড় ব্যাগের মধ্যে নিবেদিতা উপহার গুলো গুছিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। নিবেদিতার পেছন পেছন নীচে নেমে এসে দেখে দেবায়ন আর অঙ্কুশ টিভিতে ভিডিও গেম খুলে বসে গেছে। ওকে নীচে নামতে দেখে দেবায়ন একবার ওদের দিকে তাকায়। নিবেদিতা রান্না ঘরে ঢুকে যায়। কাজের মেয়ে ততক্ষণে সবজি কাটাকাটি সেরে ফেলেছে।
অনুপমা হাতের জিনিসপত্রের ব্যাগ দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “এইগুলো তোর, নিয়ে যা।”
দেবায়ন হাসে, “আমাকে দিয়েছে নাকি যে আমি নেব? ওইগুলো তোর জন্যে আনা হয়েছে।”
ওর পাশে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “আসার পর থেকে ঘাপটি মেরে পড়ে আছিস। ব্যাপারটা কি একটু খোলসা করে বলতো? তোর ওই মিচকি হাসি দেখে মনে হচ্ছে তুই অনেক কিছুই জানিস কিন্তু বলছিস না আমাকে।”
দেবায়ন ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “কিছু না রে।”
চোখ টিপে মিচকি হেসে ওকে প্রশ্ন করে, “নিবেদিতার সাথেও কিছু হয়েছে নাকি রে তোর? একটু ঝেড়ে কাশ বাছাধন। না হলে কিন্তু আর আমাকে ছুঁতে দেব না।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “কি যে বলিস না। নিবেদিতা ভালো মেয়ে, খুব ভালো মেয়ে।” গলা নামিয়ে ওকে উত্যক্ত করে ফিসফিস করে বলে, “যা ফিগার মাইরি আর যা সুন্দরী ভেবেছিলাম লাগাবো কিন্তু না…..”
সঙ্গে সঙ্গে অনুপমা ওর বুকের ওপরে এক চাঁটি বসিয়ে দিয়ে চাপা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ফুটো থাকলেই হলো তাই না শয়তান।”
ওকে আলতো জড়িয়ে ধরে দেবায়ন উত্তর দেয়, “বর্তমানে একটাতেই খুশি আছি।”
ইসসস স্থান কাল একদম দেখে না পুচ্চু। সামনে অঙ্কুশ বসে, ওইপাশে নিবেদিতা হয়ত রান্নাঘর থেকে ওদের দেখে ফেলেছে। এইভাবে সর্ব সমক্ষে ওকে যে কোনোদিন জড়িয়ে ধরেনি সেটা নয় তবে সেই সব ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। হয়ত কোন মলে অথবা পার্কে অথবা বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে কিন্তু একজনের বাড়িতে এসে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে। লজ্জা বড় লজ্জা।
আলতো করে ওর হাত ছাড়িয়ে বলে, “ওইদিকে তোর জন্য ক্যাভিয়ার আর ক্র্যাব আনা হয়েছে।”
দেবায়নের চোখ কপালে উঠে যায়, “সত্যি বলছি এর বিষয়ে আমার অজানা। আর সত্যি বলছি এই উপহারের বিষয়ে আমার অজানা ছিল।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “তার মানে আগে থেকে এই লাঞ্চের ইনভিটেশান ছিল। তুই আমাকে বলিসনি কেন তাহলে? দেখ একদম খালি হাতে এসে গেছি। বাড়িতে একটা ছোট ছেলে তার জন্যেও কিছুই আনা হয়নি।”
দেবায়ন মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “আসলে কি জানিস একটু ধন্ধে ছিলাম। হয়ত আগে তোকে বললে তুই মানা করে দিতিস। আমি চাইছিলাম তোকে এই পরিবাররে সাথে মিশাতে।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কারন কি জানতে পারি কি?”
ততক্ষণে রান্না ঘর থেকে নিবেদিতা ওকে ডাক দেয়, “অনুপমা একটু এদিকে আসবে?”
রান্না ঘরে ঢুকে দেখে এক এলাহি ব্যাপার সাজিয়ে বসে নিবেদিতা। একেবারে বিদেশী কুইজিন সাজানো। বেশ বড় লাল অস্ট্রেলিয়ান ক্রাব, রেড ওয়াইন আর বিভিন্ন হার্বস দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা। গ্রিলে ঢুকিয়ে দিল, তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। নিবেদিতা ওকে বলে শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে। নিজের বাড়িতে রান্না ঘরে কোনোদিন ঢোকেনি, তবে মামনির কাছে গেলেই রান্নাঘরে ঢুকে পরে। মামনির ওপরে ওর সব জোর খাটে। কচি মেয়ে হয়ে যায় মামনিকে পেলে। রান্নাঘরের স্লাবে বসে ছোট্ট মেয়ের মতন পা দোলাতে দোলাতে গল্পে মেতে ওঠে বৌমা আর শ্বাশুরি। ওর জন্য আপেল, পেয়ারা কলা ইত্যদি কেটে কেটে দেয় আর খেতে খেতে পা দুলিয়ে গল্পে মাতে। অফিসে কি কি হল, কার সাথে কি হল। মাঝে মাঝেই দেবায়নের নামে নালিশ ইত্যাদি।
ওইদিকে বাইরে ঝড় শুরু হতেই অনুপমা একটু চিন্তায় পড়ে যায়। পায়েলের জন্য গাড়িটা অফিসেই ছেড়ে এসেছে। ঝড় বৃষ্টি হবে সেটা যে একদম বুঝতে পারেনি তা নয়। তবে অনেকদিন পরে পুচ্চুর সাথে খোলা বাইকে বসে কোলকাতার বৃষ্টিতে ভেজার মজাই আলাদা। আজকাল মাসের মধ্যে কুড়ি পঁচিশ দিন বাইরে কাটায়, কাছে আর তাহকে কতক্ষণ। ওর চিন্তামগ্ন চেহারা দেখে নিবেদিতা অভয় দিয়ে বলে, বেশি ঝড় হলে ওর গাড়ি ওকে ছেড়ে আসবে। হেসে মাথা নাড়ায় অনুপমা। আসার পর থেকে যে পরিমান আন্তরিকতা দেখিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই হয়ত শেষ পর্যন্ত বললেই ফেলল, এত ঝড় বৃষ্টি নিয়ে আর বাড়ি ফিরে কাজ নেই রাতে ওর বাড়িতেই থেকে যেতে।
রাত নটা’র আগে কোনোদিন খায় না অনুপমা, তবে দশটার মধ্যে ওদের খাওয়াদাওয়া শেষ হয়ে যায়। সকাল সকাল সবাইকে উঠতে হয়। যখন কলেজ ছিল তখন না হয় দেরি করে ঘুম থেকে উঠত কিন্তু এখন অফিস থাকে।
সন্ধ্যের পরেই নিবেদিতা ওদের খেতে দিয়ে দেয়। খাওয়ার সময়ে বসে নিবেদিতা আর অনুপমা কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছে সেই নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে। এই কর্ম সুত্রে দেবায়ন এদিকে ওদিকে একটু আধটু বেড়িয়েছে, কিন্তু অনুপমা আর নিবেদিতার মতন বিদেশ ভ্রমন করেনি। পিসা, লিওন থেকে নরওয়ে সুইডেনের গল্প, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে গিজার পিরামিডের গল্প।
সেই সাথে অঙ্কুশ যোগদান করে ওদের বলে, “জানো, ইজিপ্টে গিয়ে উঠের পিঠে চেপে মাম্মার কি ভয় করেছিল। আমি কিন্তু একটুও ভয় পাইনি।”
ঠিক একদম অঙ্কনের মতন, জন্তু জানোয়ারদের একটুও ভয় পায়না। ছোটবেলায় মায়ের কাছে আবদার করেছিল কুকুর পুষবে কিন্তু অনুপমার একদম ইচ্ছে ছিল না বাড়িতে কোন জন্তু জানোয়ার আসুক। এমা, কুকুর বেড়াল ওর পায়ের কাছে ঘোরাফেরা করবে, আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে ওর বিছানায়, ছিছি।
খাওয়া দাওয়া পর্বের মাঝে ওর কাছে পায়েলের ফোন আসে। ফোন তুলেই আশঙ্কাজনক কণ্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে তুই আর দেবায়ন কোথায় আছিস?”
অনুপমা ওর আতঙ্কে ভরা কণ্ঠ শুনে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে? এমন কাঁপছিস কেন?”
পায়েল ওকে বলে, “তাড়াতাড়ি বেলভিউতে চলে আয়। রুপকের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।”
সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সব স্নায়ু সতর্ক হয়ে যায়। খাওয়া থামিয়ে দেবায়নের দিকে ছলছল আশঙ্কাজনক চেহারা নিয়ে বলে, “রুপকের এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
দেবায়ন আঁতকে ওঠে, “কি করে কখন হল?”
পায়েল সেই সমন্ধে কিছুই জানায় নি শুধু মাত্র ওদের বেলভিউতে যেতে বলেছে। নিবেদিতার অত সাজানো খাবার আর খাওয়া হল না। অবশ্য সেটা নিবেদিতাও বুঝতে পারে। ওই দিকে বাইরে ঝড়ের সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এইভাবে বাইকে করে যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। নিবেদিতা দেবায়নের হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে ওদের তাড়াতাড়ি হসপিটালে রওনা হবার জন্য বলে। নিবেদিতাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবে অনুপমা বুঝতে পারে না।
বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পরেই বোর্ড মিটিং আর তার আগেই রুপকের দুর্ঘটনা। হঠাৎ করে চারদিক কেমন যেন গুলিয়ে যায় অনুপমার। শক্ত হাতে বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ি ছুটিয়ে দেয় দেবায়ন। বাইপাস ধরে সল্টলেক থেকে পার্ক স্ট্রিট যেতে বেশি সময় যদিও লাগে না কিন্তু বৃষ্টির দিনে কোলকাতার রাস্তা গাড়ি চালানোর পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। পাকা ঝাঁ চকচকে রাস্তা আর গ্রাম্য মাটির রাস্তার মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। তাও এপাশ ওপাশ থেকে গাড়ি গুলোকে কোনোরকমে পেছনে ফেলে দুরন্ত গতিতে দেবায়ন গাড়ি চালায়।
অনুপমা ততক্ষণে বাবাকে ফোন করে জানতে পারে যে রুপক বিকেলে অফিসে পরে বাড়িতে ফিরছিল। সাথে শ্রেয়া ছিল না, কাজের জন্য অফিসে ছিল। শ্রেয়াকে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে অপেক্ষা করেছিল, কিন্তু শ্রেয়া ইচ্ছে করেই ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি যাওয়ার পথে একটা স্করপিও ওর বাইকের পেছনে ধাক্কা মারে যার ফলে, পেছনের চাকা গাড়ির নীচে চলে যায়। রাস্তায় জল থাকার ফলে রুপক বাইক থেকে পড়ে যায়। বিশেষ চিন্তার কোন কারন নেই, মাথায় হেলমেট ছিল তাই রক্ষে আর পরনে রেইনকোট ছিল তাই বেশি লাগেনি। তবে ডান পায়ের হাড়ে একটু চিড় দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা যদিও সামান্য তবুও দেবায়ন আর অনুপমার মনে সন্দেহ হয়। হঠাৎ বোর্ড মিটিংয়ের আগেই রুপকের এক্সিডেন্ট? কি ব্যাপার? এর পেছনে কি শ্রেয়ার হাত আছে? ইন্দ্রনীলের সাথে কি শ্রেয়া কোন চক্রান্ত করছে? কিন্তু তাই বলে ওর এতদিনের ভালোবাসার ওপরে নিশ্চয় আঘাত হানবে না। কি জানি শ্রেয়ার মতিগতি ইদানিং খুব সন্দেহজনক। অফিসে রুপকের চেয়ে বেশি ইন্দ্রনীলের সাথে কাটায়।
হন্তদন্ত হয়ে নার্সিং হোমে ঢুকে দেখে ওর বাবা, শ্রেয়ার দাদা, রুপকের বাড়ির লোকজন উপস্থিত। ইন্দ্রনীলকে দেখে অনুপমা একটু আশ্চর্য হয়। ইন্দ্রনীল ওদের দেখে একটু তফাতে সরে যায়। এইভাবে চোরা চাহনি নিয়ে তাকান ঠিক ভালো মনে মেনে নিতে পারেনা অনুপমা। দেবায়ন ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে শ্রেয়া আগে পায়েলকে ফোন করেছিল, তাই পায়েল ওদের ফোন করে।
দেবায়নকে সাথে নিয়েই রুপকের সাথে দেখা করতে যায়। বেডের ওপরে শুয়ে রুপক, পায়ে হাতে ব্যান্ডেজ। শ্রেয়ার চোখ জোড়া ছলছল, রুপকের হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে পাশে বসে।
ওদের দেখতে পেয়েই শ্রেয়া চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন এসেছিস? রুপক মরে গেছে না বেঁচে আছে সেটা দেখতে এসেছিস?”
দেবায়ন আর অনুপমা দুইজনে অবাক হয়ে যায় ওর কথা শুনে। কি বলছে শ্রেয়া? অনুপমা ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কি যা তা বলছিস?”
শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওই তোর দেবায়ন আমার রুপককে এক্সিডেন্ট করিয়েছে।”
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। এখুনি ঠাস করে একটা চড়ে শ্রেয়ার দাঁত গুলো ফেলে দিতে ইচ্ছে করে ওর। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখে দরজায় ইন্দ্রনীল ওর বাবা আর বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে। শ্রেয়াকে এক কোনার দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, “মাথা ঠাণ্ডা কর তুই। সামান্য একটা এক্সিডেন্টে এত মাথা খারাপ করলে কি হয়? পুচ্চু এই কাজ কেন করতে যাবে? পুচ্চু আর রুপক ভালো বন্ধু, তুই আমার ভালো বান্ধবী।”
শ্রেয়া চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ জানা আছে তুই আমার কত ভালো বান্ধবী। আমি শেয়ার বাড়াতে চেয়েছিলাম তাই রুপককে তোরা মেরে ফেলতে চেয়েছিলিস তাই না?”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে মুঠি শক্ত করে ধরে বলে, “দ্যাখ শ্রেয়া, এটা হসপিটাল না হলে এক চড়ে তোর দাঁত ভেঙ্গে দিতাম আমি।” মাথা ঝাঁকিয়ে আক্ষেপের সুরে বলে, “বাবার কথা অনেক আগেই আমার শোনা উচিত ছিল।”
শ্রেয়া দাঁতে দাঁত পিষে ছলছল চোখে ওকে বলে, “হ্যাঁ, এখন আমাদের কোম্পানি থেকে সরাতে পারলে নিজেদের লাভ। বাইরের প্রোজেক্ট গুলো এসে গেছে এবারে আর আমাদের কেন দরকার পরবে বল। রুপকের মাথা কাজে লাগিয়ে নিজের কোম্পানি দাঁড় করালি আর এখন যখন কাজ শেষ হয়ে গেল তখন সরিয়ে দেওয়ার মতলব করলি।” কিছুক্ষণ থেমে ওকে বলে, “এই বোর্ড মিটিংয়ে আমি রেজিগনেশান দেব আমার শেয়ারের টাকা তৈরি রাখিস।”
রাগে দুঃখে অনুপমার শরীর কেঁপে ওঠে। আশে পাশে লোকজন না থাকলে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিত শ্রেয়ার গালে।
দেবায়ন এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনে যাচ্ছিল। অনুপমার কথা শেষ হতেই ওর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে, “শোন শ্রেয়া, আমি যদি সত্যি চাইতাম রুপককে সরাতে তাহলে ওই পা ভেঙ্গে পড়ে থাকত না। তোকে ওর চিতা জ্বালাতে হতো। আর তুই কোন মুখে শেয়ারের কথা বলছিস রে? এই একটা বছর শুধু গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিস আর কিছুই করিসনি। গত কয়েক মাস একটু গা হাত পা নাড়িয়েছিস শুধু। যদি রুপক বলে তবেই শেয়ার পাবি।”
শ্রেয়া একবার আশেপাশে দেখে দেবায়নের দিকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তোকে পুলিসে দেইনি তোর ভাগ্য ভালো।”
আর থাকতে পারে না অনুপমা, শেষ পর্যন্ত ওর হাত উঠে যায়। থাপ্পরটা মারতে গিয়েও মারামারিতে যায় না, দাঁতে দাঁত পিষে ওর দিকে রক্ত চক্ষু হেনে বলে, “তোর টাকা এই কোম্পানিতে নেই, সুতরাং তুই একটা পয়সাও পাবি না।”
শ্রেয়া চোয়াল শক্ত করে উত্তর দেয়, “কোম্পানি আইন আমার জানা আছে অনু। আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না। আমার পাওনা বাবদ দশ কোটি টাকা তৈরি রাখিস। পরশুদিন বোর্ড মিটিং আমার পাওনা আমাকে মিটিয়ে দিস।”
দেবায়ন তেড়ে যায় ওর দিকে, “তুই আমাদের আইন দেখাবি?”
অনুপমা সমস্বরে বলে ওঠে, “একটা টাকাও দেবো না তোকে। কি করতে পারিস আমি দেখে নেব।” তারপরে দেবায়নের হাত ধরে ওর ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায় অনুপমা।
বাইরে দাঁড়িয়ে লোকজনের সাথে ইন্দ্রনীল দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের কথাবার্তা নিশ্চয় ইন্দ্রনীল শুনেছে। বাবাকে সাথে নিয়ে ওরা নার্সিং হোম থেকে বেড়িয়ে পরে। ততক্ষণে বৃষ্টি বেশ কিছুটা ধরে গেছে, তাই অনুপমা ওর বাবার সাথে গাড়ি করে বাড়ি ফেরে আর নিবেদিতার গাড়ি ফেরত দেওয়ার জন্য দেবায়ন বেড়িয়ে পরে। যাওয়ার আগে অনুপমা ওকে রাতের বেলা ফোন করার কথা বলে দেয়।
মাথা কাজ করছে না কিছুতেই। হটাত করে রুপকের এক্সিডেন্ট হল কি করে? বাইকের অবস্থা নাকি বেশ সঙ্গীন কিন্তু সেই তুলনায় রুপকের এমন কিছু আঘাত লাগেনি। হতে পারে ভাগ্যের জোরে রুপক বেঁচে গেছে। পুচ্চুকে ফাঁসানোর জন্য কে আক্রমন করতে পারে রুপককে? শ্রেয়া না ইন্দ্রনীল? শ্রেয়ার কথাবার্তা শুনে মনে হয় অনেক গভীর জলের মাছ এই মেয়ে। বাবা ওকে সাবধান করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই সময়ে বান্ধবী প্রীতি দেখিয়ে সেই সব উপেক্ষা করে দিয়েছিল। তখন যদি একবার বাবার কথা শুনতো, তাহলে এই দিন দেখতে হত না ওদের।
নিবেদিতা ওকে ডেকে বলে, “ছেলেদের নীচেই ছেড়ে দাও চল আমার সাথে একটু উপরে চল।”
অগত্যা অনুপমা কি করে, শেষ পর্যন্ত দেবায়ন, অঙ্কুশদের নীচে বসার ঘরে ছেড়ে দিয়ে নিবেদিতার পেছন পেছন উপরে চলে আসে। ওদের মতন ডুপ্লেক্স বাড়ি, নীচে রান্না ঘর, খাওয়ার ঘর, লবি স্টাডি আর একটা অতিথিদের ঘর, উপরের সব শোয়ার ঘর। উপরে ওঠার সময়ে নিবেদিতা জানায়, যেহেতু তার বাবার একটু চলাফেরা করার অসুবিধে আছে তাই বাবা নীচেই থাকেন। ছেলেকে নিয়ে নিবেদিতা উপরে থাকে। ছেলের ঘর আলাদা। নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানার উপরে অনুপমাকে বসিয়ে দিয়ে আলমারি খোলে নিবেদিতা।
আলমারি থেকে একটা দামী জিন্স আর জ্যাকেট বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা আমার বাড়িতে আসার উপহার।”
অনুপমা আশ্চর্য চকিত হয়ে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিনে কিছুই করেনি আর হঠাৎ এত আন্তরিকতার অর্থ কি? অনুপমা মানা করে, “না না, এই সব আমি নিতে পারব না।”
নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “কেন নিতে পারবে না? আমি কি পর? ছোটবেলা থেকে তোমাদের জানি, শুধু এই কয় বছরে সেই মতন ভাবে তোমাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি এই যা।” একটু থেমে বলে, “তুমি সত্যি বড় ভাগ্যবান, অনুপমা। দেবায়নের মতন একজন কে পাশে পেয়েছ।” বলে স্মিত হাসে।
নিবেদিতা কতটা দেবায়নকে চেনে? অনন্যার মতন না ওর মায়ের মতন করে চেনে? বড় প্রশ্ন, আজকাল কোথায় কি লুকিয়ে করে আসে জানা যায় না।
দেবায়নের জন্য একটা দামী স্যুটের পিস বের করে হাতে ধরিয়ে বলে, “এটা দেবায়নের”, আরো একটা একটা স্যুটের পিস ওকে হাতে দিয়ে বলে, “এটা অঙ্কনের জন্য।” তারপরে একটা বেশ সুন্দর ডিজাইনার সালোয়ার কামিজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা পায়েলের জন্য।”
অনুপমা অবাক চোখে একবার জিনিসের দিকে দেখে একবার নিবেদিতার স্মিত হাসিহাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে। পায়েলের কথাও এর অজানা নয়। অর্থাৎ নিবেদিত ওদের পরিবারের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। একবার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত কি ভাবে এত কথা জানতে পারল।
শেষ পর্যন্ত কৌতুহল দমিয়ে না রেখে অনুপমা প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুমি এত সব আমাদের জন্য কিনতে গেলে কেন?”
নিবেদিতা উত্তর দেয়, “কিছু না এমনি কিনেছি। বন্ধুদের কি উপহার দিতে মানা আছে নাকি?”
কিন্তু অনুপমা ওর জন্য কিছুই আনেনি যে। সব দেবায়নের দোষ, যদি আগে থেকে ছেলেটা সব জানত তাহলে ওকে কেন বলল না। অবশ্য ওকে বললে কোনোদিন এই বাড়িতে পা রাখত না অনুপমা।
অনুপমা উপহারের পরিমান দেখে বিস্মিত হয়ে যায়, প্রত্যেকটাই বেশ দামী আর দারুন সুন্দর। নিবেদিতাকে মজার ছলে বলে, “এই দেখো, এতগুলো জিনিস কি করে নিয়ে যাবো বলো তো? এসেছি বাইকে, তার ওপরে আবার বৃষ্টি বাদলার দিন।”
নিবেদিতা হেসে ফেলে, “তুমি আর বল না বুঝলে। আমি গাড়ি করে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব খানে। নাও চল এবারে নীচে যাওয়া যাক। তোমাদের জন্য ক্র্যাব আনিয়েছিলাম, ওইটাকে ম্যারিনেট করে রেখেছি। একটু গ্রিল করতে হবে সেই সাথে ফ্রেঞ্চ ব্রেড। তুমি ক্যাভিয়ার খাও?”
অনুপমা হাঁ করে বেশ খানিকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে প্রশ্ন করে, “তুমি করেছে কি? আমাদের আজকে শেষ খাওয়া খাওয়াবে নাকি? আর সত্যি বলতে ক্যাভিয়ার আমার কেমন যেন খেতে লাগে, তবে ভদকায় আপত্তি নেই।” বলেই হেসে ফেলে।
নিবেদিতা মাথা দোলায়, “আচ্ছা, চল নীচে চল। রেড ওয়াইন দিয়ে ক্র্যাবটা ভালোই লাগবে। ক্যাভিয়ার খেতে হবে না। আমারো বিশেষ ভালো লাগে না, কিন্তু তুমি আসবে জেনেই ওই সব আনা।”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “মাত্র তিনজনে খাবে আর তার জন্য ক্যাভিয়ার? তুমি না সত্যি…..”
নিবেদিতা উত্তরে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে হেসে বলে, “আমরা কি বান্ধবী হতে পারি?”
বাড়ির সব থেকে বড় অনুপমা, মায়ের আদর সম্প্রতি পেয়েছে, তবে ওর কোনোদিন মনে হয়নি ওর একটা বড় দিদি হোক তাও নিবেদিতাকে দেখে মনে হল একটা দিদি থাকলে মনে হয় ভালো হত। কিন্তু মনের গভীরে একটা সংশয় দেখা দেয়। হঠাৎ করে এত অন্তরিকতা, এত হৃদ্যতা। পুচ্চুকে জিজ্ঞেস করতেই হবে এর অর্থ। নিশ্চয় এর পেছনে গুঢ় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা কিছুতেই ওর চোখের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে না। একবার বাবার নাম ধরে ডাকতে গিয়েও ডাকেনি। তবে কি? হতেও পারে নাও হতে পারে। জলপাইগুড়িতে সচক্ষে ধৃতিমানের সাথে রেস্টুরেন্টে বেশ আন্তরিক মুহূর্তে দেখা পেয়েছিল। বাবার সাথে হলে হঠাৎ আবার ধৃতিমানের সাথে হৃদ্যতা কেন বাড়াতে যাবে?
একটা বড় ব্যাগের মধ্যে নিবেদিতা উপহার গুলো গুছিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। নিবেদিতার পেছন পেছন নীচে নেমে এসে দেখে দেবায়ন আর অঙ্কুশ টিভিতে ভিডিও গেম খুলে বসে গেছে। ওকে নীচে নামতে দেখে দেবায়ন একবার ওদের দিকে তাকায়। নিবেদিতা রান্না ঘরে ঢুকে যায়। কাজের মেয়ে ততক্ষণে সবজি কাটাকাটি সেরে ফেলেছে।
অনুপমা হাতের জিনিসপত্রের ব্যাগ দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “এইগুলো তোর, নিয়ে যা।”
দেবায়ন হাসে, “আমাকে দিয়েছে নাকি যে আমি নেব? ওইগুলো তোর জন্যে আনা হয়েছে।”
ওর পাশে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “আসার পর থেকে ঘাপটি মেরে পড়ে আছিস। ব্যাপারটা কি একটু খোলসা করে বলতো? তোর ওই মিচকি হাসি দেখে মনে হচ্ছে তুই অনেক কিছুই জানিস কিন্তু বলছিস না আমাকে।”
দেবায়ন ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “কিছু না রে।”
চোখ টিপে মিচকি হেসে ওকে প্রশ্ন করে, “নিবেদিতার সাথেও কিছু হয়েছে নাকি রে তোর? একটু ঝেড়ে কাশ বাছাধন। না হলে কিন্তু আর আমাকে ছুঁতে দেব না।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “কি যে বলিস না। নিবেদিতা ভালো মেয়ে, খুব ভালো মেয়ে।” গলা নামিয়ে ওকে উত্যক্ত করে ফিসফিস করে বলে, “যা ফিগার মাইরি আর যা সুন্দরী ভেবেছিলাম লাগাবো কিন্তু না…..”
সঙ্গে সঙ্গে অনুপমা ওর বুকের ওপরে এক চাঁটি বসিয়ে দিয়ে চাপা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ফুটো থাকলেই হলো তাই না শয়তান।”
ওকে আলতো জড়িয়ে ধরে দেবায়ন উত্তর দেয়, “বর্তমানে একটাতেই খুশি আছি।”
ইসসস স্থান কাল একদম দেখে না পুচ্চু। সামনে অঙ্কুশ বসে, ওইপাশে নিবেদিতা হয়ত রান্নাঘর থেকে ওদের দেখে ফেলেছে। এইভাবে সর্ব সমক্ষে ওকে যে কোনোদিন জড়িয়ে ধরেনি সেটা নয় তবে সেই সব ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। হয়ত কোন মলে অথবা পার্কে অথবা বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে কিন্তু একজনের বাড়িতে এসে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে। লজ্জা বড় লজ্জা।
আলতো করে ওর হাত ছাড়িয়ে বলে, “ওইদিকে তোর জন্য ক্যাভিয়ার আর ক্র্যাব আনা হয়েছে।”
দেবায়নের চোখ কপালে উঠে যায়, “সত্যি বলছি এর বিষয়ে আমার অজানা। আর সত্যি বলছি এই উপহারের বিষয়ে আমার অজানা ছিল।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “তার মানে আগে থেকে এই লাঞ্চের ইনভিটেশান ছিল। তুই আমাকে বলিসনি কেন তাহলে? দেখ একদম খালি হাতে এসে গেছি। বাড়িতে একটা ছোট ছেলে তার জন্যেও কিছুই আনা হয়নি।”
দেবায়ন মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “আসলে কি জানিস একটু ধন্ধে ছিলাম। হয়ত আগে তোকে বললে তুই মানা করে দিতিস। আমি চাইছিলাম তোকে এই পরিবাররে সাথে মিশাতে।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কারন কি জানতে পারি কি?”
ততক্ষণে রান্না ঘর থেকে নিবেদিতা ওকে ডাক দেয়, “অনুপমা একটু এদিকে আসবে?”
রান্না ঘরে ঢুকে দেখে এক এলাহি ব্যাপার সাজিয়ে বসে নিবেদিতা। একেবারে বিদেশী কুইজিন সাজানো। বেশ বড় লাল অস্ট্রেলিয়ান ক্রাব, রেড ওয়াইন আর বিভিন্ন হার্বস দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা। গ্রিলে ঢুকিয়ে দিল, তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। নিবেদিতা ওকে বলে শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে। নিজের বাড়িতে রান্না ঘরে কোনোদিন ঢোকেনি, তবে মামনির কাছে গেলেই রান্নাঘরে ঢুকে পরে। মামনির ওপরে ওর সব জোর খাটে। কচি মেয়ে হয়ে যায় মামনিকে পেলে। রান্নাঘরের স্লাবে বসে ছোট্ট মেয়ের মতন পা দোলাতে দোলাতে গল্পে মেতে ওঠে বৌমা আর শ্বাশুরি। ওর জন্য আপেল, পেয়ারা কলা ইত্যদি কেটে কেটে দেয় আর খেতে খেতে পা দুলিয়ে গল্পে মাতে। অফিসে কি কি হল, কার সাথে কি হল। মাঝে মাঝেই দেবায়নের নামে নালিশ ইত্যাদি।
ওইদিকে বাইরে ঝড় শুরু হতেই অনুপমা একটু চিন্তায় পড়ে যায়। পায়েলের জন্য গাড়িটা অফিসেই ছেড়ে এসেছে। ঝড় বৃষ্টি হবে সেটা যে একদম বুঝতে পারেনি তা নয়। তবে অনেকদিন পরে পুচ্চুর সাথে খোলা বাইকে বসে কোলকাতার বৃষ্টিতে ভেজার মজাই আলাদা। আজকাল মাসের মধ্যে কুড়ি পঁচিশ দিন বাইরে কাটায়, কাছে আর তাহকে কতক্ষণ। ওর চিন্তামগ্ন চেহারা দেখে নিবেদিতা অভয় দিয়ে বলে, বেশি ঝড় হলে ওর গাড়ি ওকে ছেড়ে আসবে। হেসে মাথা নাড়ায় অনুপমা। আসার পর থেকে যে পরিমান আন্তরিকতা দেখিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই হয়ত শেষ পর্যন্ত বললেই ফেলল, এত ঝড় বৃষ্টি নিয়ে আর বাড়ি ফিরে কাজ নেই রাতে ওর বাড়িতেই থেকে যেতে।
রাত নটা’র আগে কোনোদিন খায় না অনুপমা, তবে দশটার মধ্যে ওদের খাওয়াদাওয়া শেষ হয়ে যায়। সকাল সকাল সবাইকে উঠতে হয়। যখন কলেজ ছিল তখন না হয় দেরি করে ঘুম থেকে উঠত কিন্তু এখন অফিস থাকে।
সন্ধ্যের পরেই নিবেদিতা ওদের খেতে দিয়ে দেয়। খাওয়ার সময়ে বসে নিবেদিতা আর অনুপমা কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছে সেই নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে। এই কর্ম সুত্রে দেবায়ন এদিকে ওদিকে একটু আধটু বেড়িয়েছে, কিন্তু অনুপমা আর নিবেদিতার মতন বিদেশ ভ্রমন করেনি। পিসা, লিওন থেকে নরওয়ে সুইডেনের গল্প, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে গিজার পিরামিডের গল্প।
সেই সাথে অঙ্কুশ যোগদান করে ওদের বলে, “জানো, ইজিপ্টে গিয়ে উঠের পিঠে চেপে মাম্মার কি ভয় করেছিল। আমি কিন্তু একটুও ভয় পাইনি।”
ঠিক একদম অঙ্কনের মতন, জন্তু জানোয়ারদের একটুও ভয় পায়না। ছোটবেলায় মায়ের কাছে আবদার করেছিল কুকুর পুষবে কিন্তু অনুপমার একদম ইচ্ছে ছিল না বাড়িতে কোন জন্তু জানোয়ার আসুক। এমা, কুকুর বেড়াল ওর পায়ের কাছে ঘোরাফেরা করবে, আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে ওর বিছানায়, ছিছি।
খাওয়া দাওয়া পর্বের মাঝে ওর কাছে পায়েলের ফোন আসে। ফোন তুলেই আশঙ্কাজনক কণ্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে তুই আর দেবায়ন কোথায় আছিস?”
অনুপমা ওর আতঙ্কে ভরা কণ্ঠ শুনে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে? এমন কাঁপছিস কেন?”
পায়েল ওকে বলে, “তাড়াতাড়ি বেলভিউতে চলে আয়। রুপকের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।”
সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সব স্নায়ু সতর্ক হয়ে যায়। খাওয়া থামিয়ে দেবায়নের দিকে ছলছল আশঙ্কাজনক চেহারা নিয়ে বলে, “রুপকের এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
দেবায়ন আঁতকে ওঠে, “কি করে কখন হল?”
পায়েল সেই সমন্ধে কিছুই জানায় নি শুধু মাত্র ওদের বেলভিউতে যেতে বলেছে। নিবেদিতার অত সাজানো খাবার আর খাওয়া হল না। অবশ্য সেটা নিবেদিতাও বুঝতে পারে। ওই দিকে বাইরে ঝড়ের সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এইভাবে বাইকে করে যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। নিবেদিতা দেবায়নের হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে ওদের তাড়াতাড়ি হসপিটালে রওনা হবার জন্য বলে। নিবেদিতাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবে অনুপমা বুঝতে পারে না।
বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পরেই বোর্ড মিটিং আর তার আগেই রুপকের দুর্ঘটনা। হঠাৎ করে চারদিক কেমন যেন গুলিয়ে যায় অনুপমার। শক্ত হাতে বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ি ছুটিয়ে দেয় দেবায়ন। বাইপাস ধরে সল্টলেক থেকে পার্ক স্ট্রিট যেতে বেশি সময় যদিও লাগে না কিন্তু বৃষ্টির দিনে কোলকাতার রাস্তা গাড়ি চালানোর পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। পাকা ঝাঁ চকচকে রাস্তা আর গ্রাম্য মাটির রাস্তার মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। তাও এপাশ ওপাশ থেকে গাড়ি গুলোকে কোনোরকমে পেছনে ফেলে দুরন্ত গতিতে দেবায়ন গাড়ি চালায়।
অনুপমা ততক্ষণে বাবাকে ফোন করে জানতে পারে যে রুপক বিকেলে অফিসে পরে বাড়িতে ফিরছিল। সাথে শ্রেয়া ছিল না, কাজের জন্য অফিসে ছিল। শ্রেয়াকে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে অপেক্ষা করেছিল, কিন্তু শ্রেয়া ইচ্ছে করেই ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি যাওয়ার পথে একটা স্করপিও ওর বাইকের পেছনে ধাক্কা মারে যার ফলে, পেছনের চাকা গাড়ির নীচে চলে যায়। রাস্তায় জল থাকার ফলে রুপক বাইক থেকে পড়ে যায়। বিশেষ চিন্তার কোন কারন নেই, মাথায় হেলমেট ছিল তাই রক্ষে আর পরনে রেইনকোট ছিল তাই বেশি লাগেনি। তবে ডান পায়ের হাড়ে একটু চিড় দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা যদিও সামান্য তবুও দেবায়ন আর অনুপমার মনে সন্দেহ হয়। হঠাৎ বোর্ড মিটিংয়ের আগেই রুপকের এক্সিডেন্ট? কি ব্যাপার? এর পেছনে কি শ্রেয়ার হাত আছে? ইন্দ্রনীলের সাথে কি শ্রেয়া কোন চক্রান্ত করছে? কিন্তু তাই বলে ওর এতদিনের ভালোবাসার ওপরে নিশ্চয় আঘাত হানবে না। কি জানি শ্রেয়ার মতিগতি ইদানিং খুব সন্দেহজনক। অফিসে রুপকের চেয়ে বেশি ইন্দ্রনীলের সাথে কাটায়।
হন্তদন্ত হয়ে নার্সিং হোমে ঢুকে দেখে ওর বাবা, শ্রেয়ার দাদা, রুপকের বাড়ির লোকজন উপস্থিত। ইন্দ্রনীলকে দেখে অনুপমা একটু আশ্চর্য হয়। ইন্দ্রনীল ওদের দেখে একটু তফাতে সরে যায়। এইভাবে চোরা চাহনি নিয়ে তাকান ঠিক ভালো মনে মেনে নিতে পারেনা অনুপমা। দেবায়ন ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে শ্রেয়া আগে পায়েলকে ফোন করেছিল, তাই পায়েল ওদের ফোন করে।
দেবায়নকে সাথে নিয়েই রুপকের সাথে দেখা করতে যায়। বেডের ওপরে শুয়ে রুপক, পায়ে হাতে ব্যান্ডেজ। শ্রেয়ার চোখ জোড়া ছলছল, রুপকের হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে পাশে বসে।
ওদের দেখতে পেয়েই শ্রেয়া চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন এসেছিস? রুপক মরে গেছে না বেঁচে আছে সেটা দেখতে এসেছিস?”
দেবায়ন আর অনুপমা দুইজনে অবাক হয়ে যায় ওর কথা শুনে। কি বলছে শ্রেয়া? অনুপমা ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কি যা তা বলছিস?”
শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওই তোর দেবায়ন আমার রুপককে এক্সিডেন্ট করিয়েছে।”
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। এখুনি ঠাস করে একটা চড়ে শ্রেয়ার দাঁত গুলো ফেলে দিতে ইচ্ছে করে ওর। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখে দরজায় ইন্দ্রনীল ওর বাবা আর বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে। শ্রেয়াকে এক কোনার দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, “মাথা ঠাণ্ডা কর তুই। সামান্য একটা এক্সিডেন্টে এত মাথা খারাপ করলে কি হয়? পুচ্চু এই কাজ কেন করতে যাবে? পুচ্চু আর রুপক ভালো বন্ধু, তুই আমার ভালো বান্ধবী।”
শ্রেয়া চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ জানা আছে তুই আমার কত ভালো বান্ধবী। আমি শেয়ার বাড়াতে চেয়েছিলাম তাই রুপককে তোরা মেরে ফেলতে চেয়েছিলিস তাই না?”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে মুঠি শক্ত করে ধরে বলে, “দ্যাখ শ্রেয়া, এটা হসপিটাল না হলে এক চড়ে তোর দাঁত ভেঙ্গে দিতাম আমি।” মাথা ঝাঁকিয়ে আক্ষেপের সুরে বলে, “বাবার কথা অনেক আগেই আমার শোনা উচিত ছিল।”
শ্রেয়া দাঁতে দাঁত পিষে ছলছল চোখে ওকে বলে, “হ্যাঁ, এখন আমাদের কোম্পানি থেকে সরাতে পারলে নিজেদের লাভ। বাইরের প্রোজেক্ট গুলো এসে গেছে এবারে আর আমাদের কেন দরকার পরবে বল। রুপকের মাথা কাজে লাগিয়ে নিজের কোম্পানি দাঁড় করালি আর এখন যখন কাজ শেষ হয়ে গেল তখন সরিয়ে দেওয়ার মতলব করলি।” কিছুক্ষণ থেমে ওকে বলে, “এই বোর্ড মিটিংয়ে আমি রেজিগনেশান দেব আমার শেয়ারের টাকা তৈরি রাখিস।”
রাগে দুঃখে অনুপমার শরীর কেঁপে ওঠে। আশে পাশে লোকজন না থাকলে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিত শ্রেয়ার গালে।
দেবায়ন এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনে যাচ্ছিল। অনুপমার কথা শেষ হতেই ওর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে, “শোন শ্রেয়া, আমি যদি সত্যি চাইতাম রুপককে সরাতে তাহলে ওই পা ভেঙ্গে পড়ে থাকত না। তোকে ওর চিতা জ্বালাতে হতো। আর তুই কোন মুখে শেয়ারের কথা বলছিস রে? এই একটা বছর শুধু গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিস আর কিছুই করিসনি। গত কয়েক মাস একটু গা হাত পা নাড়িয়েছিস শুধু। যদি রুপক বলে তবেই শেয়ার পাবি।”
শ্রেয়া একবার আশেপাশে দেখে দেবায়নের দিকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তোকে পুলিসে দেইনি তোর ভাগ্য ভালো।”
আর থাকতে পারে না অনুপমা, শেষ পর্যন্ত ওর হাত উঠে যায়। থাপ্পরটা মারতে গিয়েও মারামারিতে যায় না, দাঁতে দাঁত পিষে ওর দিকে রক্ত চক্ষু হেনে বলে, “তোর টাকা এই কোম্পানিতে নেই, সুতরাং তুই একটা পয়সাও পাবি না।”
শ্রেয়া চোয়াল শক্ত করে উত্তর দেয়, “কোম্পানি আইন আমার জানা আছে অনু। আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না। আমার পাওনা বাবদ দশ কোটি টাকা তৈরি রাখিস। পরশুদিন বোর্ড মিটিং আমার পাওনা আমাকে মিটিয়ে দিস।”
দেবায়ন তেড়ে যায় ওর দিকে, “তুই আমাদের আইন দেখাবি?”
অনুপমা সমস্বরে বলে ওঠে, “একটা টাকাও দেবো না তোকে। কি করতে পারিস আমি দেখে নেব।” তারপরে দেবায়নের হাত ধরে ওর ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায় অনুপমা।
বাইরে দাঁড়িয়ে লোকজনের সাথে ইন্দ্রনীল দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের কথাবার্তা নিশ্চয় ইন্দ্রনীল শুনেছে। বাবাকে সাথে নিয়ে ওরা নার্সিং হোম থেকে বেড়িয়ে পরে। ততক্ষণে বৃষ্টি বেশ কিছুটা ধরে গেছে, তাই অনুপমা ওর বাবার সাথে গাড়ি করে বাড়ি ফেরে আর নিবেদিতার গাড়ি ফেরত দেওয়ার জন্য দেবায়ন বেড়িয়ে পরে। যাওয়ার আগে অনুপমা ওকে রাতের বেলা ফোন করার কথা বলে দেয়।
মাথা কাজ করছে না কিছুতেই। হটাত করে রুপকের এক্সিডেন্ট হল কি করে? বাইকের অবস্থা নাকি বেশ সঙ্গীন কিন্তু সেই তুলনায় রুপকের এমন কিছু আঘাত লাগেনি। হতে পারে ভাগ্যের জোরে রুপক বেঁচে গেছে। পুচ্চুকে ফাঁসানোর জন্য কে আক্রমন করতে পারে রুপককে? শ্রেয়া না ইন্দ্রনীল? শ্রেয়ার কথাবার্তা শুনে মনে হয় অনেক গভীর জলের মাছ এই মেয়ে। বাবা ওকে সাবধান করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই সময়ে বান্ধবী প্রীতি দেখিয়ে সেই সব উপেক্ষা করে দিয়েছিল। তখন যদি একবার বাবার কথা শুনতো, তাহলে এই দিন দেখতে হত না ওদের।