04-10-2020, 10:44 AM
ষষ্টবিংশ পর্ব (#০৩)
সারাটা রাস্তা অভিমানিনী অনুপমা একটাও কথা বলে না, কিন্তু তাতে কি হয়, দেবায়ন কি আর চুপ করে থাকার ছেলে! বারে বারে ক্লাচ ব্রেক কষে নিজের পিঠের ওপরে ঝাঁকিয়ে ফেলে দুষ্টু মিষ্টি পুচ্চি সোনাকে।
“ধ্যাত, কি যে করে না ছেলেটা” বলেই মাথায় একটা চাঁটি কষিয়ে বলে, “ঠিক ভাবে বাইক চালালে চালা, না হলে নেমে যাবো।”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “উফফফ মাইরি, শেষ পর্যন্ত বাইকের ব্রেকের চোটে তোর মুখ ফুটলো।”
অনুপমা আর থাকতে না পেরে পেছন থেকে দেবায়নের কোমর জড়িয়ে নিজের সুউন্নত কোমল স্তন যুগল ওর পিঠের ওপরে পিষে উত্তপ্ত করে বলে, “এই ফুলের বোকে নিয়ে আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস একটু বল না রে।”
দেবায়ন মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “আরে বাবা একটু দাঁড়া, একটু পরেই দেখতে পাবি।”
বাইপাস ছাড়িয়ে তেরো নম্বর ট্যাঙ্ক দিয়ে সল্টলেকে ঢুকতেই অনুপমার শরীরে চাপা উত্তেজনা দেখা দেয়। এই এলাকায় নিবেদিতার বাড়ি, তাহলে কি দেবায়ন ওকে নিবেদিতার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে নাকি? মনের মধ্যে সংশয় কিন্তু দেবায়ন উত্তর দিতে নারাজ। ওদের চেনাজানা আর কোন বন্ধুবান্ধবী এই এলাকায় থাকে না। এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে বাইক রাস্তার পর রাস্তা পার করে একটা দুইতলা বেশ সুন্দর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। অনুপমা এর আগে কোনোদিন নিবেদিতার বাড়িতে আসেনি। শুধু কয়েকবার বাবার পার্টি গুলোতে মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায়, তা ছাড়া নিবেদিতার সাথে কোন সম্পর্ক বিশেষ নেই। বেশ কয়েকদিন আগে জলপাইগুড়িতে গিয়ে ধৃতিমান আর নিবেদিতাকে একসাথে দেখেছিল। তার আগে কোনোদিন কথা পর্যন্ত বলেনি ওর সাথে।
অনুপমা শত প্রশ্ন নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়নের বাইকের আওয়াজ শুনেই একটা চাকর নীচে এসে দরজা খুলে দেয়। অনুপমা আরো অবাক হয়ে যায়, এরা কি আগে থেকেই ওদের প্রতীক্ষা করছিল? কার বাড়ি, কি পরিচয়, কিছুই জানা নেই? তবে হাতের চকোলেট আর ফুলের স্তবক দেখে ওর সন্দেহ শেষ পর্যন্ত দুর হয়ে যায়। নিশ্চয় এই চকোলেট অঙ্কুশের জন্য আর ফুলের স্তবকটা নিবেদিতার জন্য। দেবায়নের ওপরে রাগ করবে না খুশি হবে কিছুই বুঝে পায়না।
দেবায়ন অনুপমাকে ইঙ্গিতে বাড়ির দিকে যেতে অনুরোধ করে। ধীর পায়ে বসার ঘরে ঢুকে সন্দেহ দুর করে অনুপমা। অনুপমা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে, ওদের বাড়ির মতন অত বড় না হলেও বেশ বড় বসার ঘর। এক পাশের দেয়াল জুড়ে বিশাল কাপবোর্ড, তারমাঝে নিবেদিতার সাথে ছোট্ট অঙ্কুশের অনেক ছবি। অঙ্কুশকে কোনোদিন চাক্ষুষ দেখেনি অনুপমা তবে ছোট ছেলেটার মাথায় ঝাঁকড়া চুল, গাল দুটো টোপা টোপা, বেশ নাদুসনুদুস মায়ের আদরের ছেলে। ওকে দেখেই নিজের ভাইয়ের কথা মনে পড়ে যায় অনুপমার। ছোট বেলায় অঙ্কন অনেকটা এইরকম দেখতে ছিল। যত বড় হল তত বাঁদরামি বেড়ে গেলেও কোনোদিন দিদির আঁচল ছাড়েনি। ইসসস, ওর আঁচল, কোনোদিন শাড়ি পড়েনি অনুপমা।
মিষ্টি এক কণ্ঠস্বরে অনুপমা ঘুরে তাকায়, “কেমন আছো? আমি ভেবেছিলাম তোমরা লাঞ্চে আসবে।”
নিবেদিতা দেখতে বেশ সুন্দরী, পরনে একটা ঢিলে প্যান্ট আর শার্ট। ততক্ষণে বাইক পার্ক করে দেবায়ন বসার ঘরে ঢুকে পড়েছে। অনুপমা স্মিত হেসে নিবেদিতার হাতে ফুলের স্তবক ধরিয়ে দিয়ে বলে, “ভালো আছি।” দেবায়ন মৃদু মাথা দোলায় নিবেদিতাকে দেখে।
ওদের এই কুশল সম্ভাষণ দেখে অনুপমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। দেবায়ন যা ছেলে, মেয়ে দেখেলেই খোঁড়া হয়ে যায়, লাগাতে পারলেই হল। আর যদি নিবেদিতার মতন সুন্দরী আর শিক্ষিতা হলে কথাই নেই।
নিবেদিতা অনুপমার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলে, “তোমাদের অনেক আগেই আমার ডাকা উচিত ছিল।”
অনুপমা মাথা দোলায়, সত্যি হ্যাঁ। ছোটবেলা থেকে ওদের এই কন্সট্রাকশান কোম্পানি নাকি একপ্রকার নিবেদিতার রক্ষণাবেক্ষণে ছিল তাও কেন বাবা এই মহিলাকে নিজের বাড়িতে কোনোদিন নিয়ে আসেনি। শুধু কি মায়ের জন্য? না এর পেছনে আরো কিছু লুকিয়ে আছে, যেটা হয়ত ওর পুচ্চু জানে কিন্তু ওকে কিছুতেই বলছে না। দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই। আজকাল অফিসে বসে চারদিকে ঘোরাফেরা করে দিনে দিনে অনেক বদলে গেছে ওর পুচ্চুসোনা।
অনুপমা স্মিত হেসে উত্তরে বলে, “এই’ত চলে এলাম। কিন্তু তোমার ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি না যে? কোথায় গেল?”
নিবেদিতা হেসে উত্তর দেয়, “দাদুর সাথে সামনের পার্কে খেলতে গেছে একটু পরেই চলে আসবে। তোমার কথা বল। অনেক বড় হয়ে গেছ, নিজে একটা কোম্পানি সামলাচ্ছ। তার ওপরে আবার এদিক ওদিকের দেখা শোনা।”
অনুপমা হেসে বলে, “না না, আমি কিছুই দেখি না। বাইরের কাজ দেবায়ন দেখে, মারকেটিংয়ের জন্য দিপঙ্করদা আছে আর…..”
নিবেদিতা হেসে বলে, “আমি সব জানি। তোমার কোম্পানিতে কে আছে, কে কি করে সেই সব আমি জানি।”
নিবেদিতাকে ঠিক কি বলে সম্বোধন করবে সেটা বুঝে উঠতে পারে না অনুপমা। কাকি না মাসি না শুধু নিবেদিতা? নিবেদিতা ওর চেয়ে বয়সে বড়, এইভাবে নাম ধরে ডাকতে কেমন যেন গলায় আটকে যায়। একটা কাজের মেয়ে ততক্ষণে ওদের জন্য ঠাণ্ডা পানীয় আর বেশ কিছু মিষ্টি ফল তার সাথে প্যাস্ট্রি, একটা বড় কেক ইত্যাদি নিয়ে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে চলে যায়। খাবারের পরিমান দেখে অনুপমার চক্ষু চড়ক গাছ। স্বল্পাহারী অনুপমা, তায় আবার অফিসে বসে বসে ইদানিং মোটা হয়ে যাচ্ছে বলে পায়েলের কাছে নালিশ জানায়, এত খাবার খাবে কি করে?
অনুপমা খাবারের পরিমান দেখে আঁতকে উঠে বলে, “একি করেছ তুমি? একে দেখো মোটা হয়ে যাচ্ছি আর তুমি একদিনে আমাকে খাইয়ে মেরে ফেলবে নাকি?”
দেবায়ন মিচকি হাসে ওর দিকে তাকিয়ে। অনুপমা ওকে বলে, “কি রে কিছু বল?”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না, এর মধ্যে আমি নেই। তোমরা দুইজনে ঠিক করে নাও কি করবে।”
নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “দেখো অনুপমা, আমি কিন্তু লাঞ্চে ডেকেছিলাম, তোমার দেবায়ন যদি না নিয়ে আসে তাহলে কি করতে পারি বল। কিন্তু ডিনার এইখানে সেরে যেতেই হবে।”
অনুপমা আকাশ থেকে পড়ে, “ডিনার? না না, মাকে বলা নেই চিন্তা করবে।”
নিবেদিতা হেস ফেলে, “আচ্ছা আমি না হয়, সোমে… তোমার বাবাকে ফোন করে দিচ্ছি।”
তৎক্ষণাৎ অনুপমার কান খাড়া হয়ে যায়, বাবার নাম ধরতে গিয়েও ধরল না নিবেদিতা। একদম ঘাসে মুখ দিয়ে চলার মেয়ে নয়, মাথায় বেশ বুদ্ধি রাখে। যদিও অনেক কিছুই ওর অজানা আর সংশয়ের উত্তর পাওয়ার মতন সুত্র ওর হাতে নেই তাও নিবেদিতার আতিথিয়তায় বেশ অবাক হয়ে যায়।
নিবেদিতা শেষ পর্যন্ত ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, যে অনুপমা আর দেবায়ন রাতের খাওয়া দাওয়া সেরেই বাড়ি ফিরবে। অগত্যা অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায়। ছেলেটা একটা কথাও বলছে না, চুপচাপ খবরের কাগজ মুখস্ত করছে আর মাঝে ওদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নেয়। কি হল, ওর? সবাইকে সন্দেহ করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুচ্চু? হতেই পারে না, কেউ যদি ওর পায়ের তলায় নিজের গলা কেটেও বলে দেবায়ন প্রতারক তাতেও অনুপমা বিশ্বাস করবে না। এই ছেল্টার জন্য, ওর প্রানের বান্ধবী পায়েলকে ফিরে পেয়েছে, এই ছেলেটার জন্য বাবা অনেকটা সোজা হয়েছে, মায়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক আবার সেতুবন্ধ হয়েছে। কি চলছে এই ছেলেটার মনে? বলবে না, আজকাল অনেক কথাই সহজে বলে না। এদিক ওদিক করে এড়িয়ে যায় তবে পরে নিজের মুখেই বলে।
অঙ্কুশ আর নিবেদিতার বাবা বেশ কিছু পরে ঘরে ঢোকে। নিবেদিতার বাবাকে দেখে দুইজনেই উঠে দাঁড়িয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। অনুপমা অঙ্কুশকে কাছে ডেকে হাতে চকোলেট ধরিয়ে দেয়। লাজুক ছেলে মায়ের দিকে একবার তাকায় তারপরে হেসে ওর হাত থেকে চকোলেট নিয়ে এক পাশে বসে। দেবায়ন আর অঙ্কুশ বন্ধুত্ত পাতিয়ে নেয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। অঙ্কুশকে চোখের সামনে দেখে অনুপমা হেসে ফেলে, একদম ছোট বেলায় অঙ্কন যেমন লাজুক ছিল ঠিক তেমন।
ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?”
অঙ্কুশ জবাব দেয়, “ক্লাস ফোরে।”
সারাটা রাস্তা অভিমানিনী অনুপমা একটাও কথা বলে না, কিন্তু তাতে কি হয়, দেবায়ন কি আর চুপ করে থাকার ছেলে! বারে বারে ক্লাচ ব্রেক কষে নিজের পিঠের ওপরে ঝাঁকিয়ে ফেলে দুষ্টু মিষ্টি পুচ্চি সোনাকে।
“ধ্যাত, কি যে করে না ছেলেটা” বলেই মাথায় একটা চাঁটি কষিয়ে বলে, “ঠিক ভাবে বাইক চালালে চালা, না হলে নেমে যাবো।”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “উফফফ মাইরি, শেষ পর্যন্ত বাইকের ব্রেকের চোটে তোর মুখ ফুটলো।”
অনুপমা আর থাকতে না পেরে পেছন থেকে দেবায়নের কোমর জড়িয়ে নিজের সুউন্নত কোমল স্তন যুগল ওর পিঠের ওপরে পিষে উত্তপ্ত করে বলে, “এই ফুলের বোকে নিয়ে আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস একটু বল না রে।”
দেবায়ন মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “আরে বাবা একটু দাঁড়া, একটু পরেই দেখতে পাবি।”
বাইপাস ছাড়িয়ে তেরো নম্বর ট্যাঙ্ক দিয়ে সল্টলেকে ঢুকতেই অনুপমার শরীরে চাপা উত্তেজনা দেখা দেয়। এই এলাকায় নিবেদিতার বাড়ি, তাহলে কি দেবায়ন ওকে নিবেদিতার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে নাকি? মনের মধ্যে সংশয় কিন্তু দেবায়ন উত্তর দিতে নারাজ। ওদের চেনাজানা আর কোন বন্ধুবান্ধবী এই এলাকায় থাকে না। এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে বাইক রাস্তার পর রাস্তা পার করে একটা দুইতলা বেশ সুন্দর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। অনুপমা এর আগে কোনোদিন নিবেদিতার বাড়িতে আসেনি। শুধু কয়েকবার বাবার পার্টি গুলোতে মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায়, তা ছাড়া নিবেদিতার সাথে কোন সম্পর্ক বিশেষ নেই। বেশ কয়েকদিন আগে জলপাইগুড়িতে গিয়ে ধৃতিমান আর নিবেদিতাকে একসাথে দেখেছিল। তার আগে কোনোদিন কথা পর্যন্ত বলেনি ওর সাথে।
অনুপমা শত প্রশ্ন নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়নের বাইকের আওয়াজ শুনেই একটা চাকর নীচে এসে দরজা খুলে দেয়। অনুপমা আরো অবাক হয়ে যায়, এরা কি আগে থেকেই ওদের প্রতীক্ষা করছিল? কার বাড়ি, কি পরিচয়, কিছুই জানা নেই? তবে হাতের চকোলেট আর ফুলের স্তবক দেখে ওর সন্দেহ শেষ পর্যন্ত দুর হয়ে যায়। নিশ্চয় এই চকোলেট অঙ্কুশের জন্য আর ফুলের স্তবকটা নিবেদিতার জন্য। দেবায়নের ওপরে রাগ করবে না খুশি হবে কিছুই বুঝে পায়না।
দেবায়ন অনুপমাকে ইঙ্গিতে বাড়ির দিকে যেতে অনুরোধ করে। ধীর পায়ে বসার ঘরে ঢুকে সন্দেহ দুর করে অনুপমা। অনুপমা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে, ওদের বাড়ির মতন অত বড় না হলেও বেশ বড় বসার ঘর। এক পাশের দেয়াল জুড়ে বিশাল কাপবোর্ড, তারমাঝে নিবেদিতার সাথে ছোট্ট অঙ্কুশের অনেক ছবি। অঙ্কুশকে কোনোদিন চাক্ষুষ দেখেনি অনুপমা তবে ছোট ছেলেটার মাথায় ঝাঁকড়া চুল, গাল দুটো টোপা টোপা, বেশ নাদুসনুদুস মায়ের আদরের ছেলে। ওকে দেখেই নিজের ভাইয়ের কথা মনে পড়ে যায় অনুপমার। ছোট বেলায় অঙ্কন অনেকটা এইরকম দেখতে ছিল। যত বড় হল তত বাঁদরামি বেড়ে গেলেও কোনোদিন দিদির আঁচল ছাড়েনি। ইসসস, ওর আঁচল, কোনোদিন শাড়ি পড়েনি অনুপমা।
মিষ্টি এক কণ্ঠস্বরে অনুপমা ঘুরে তাকায়, “কেমন আছো? আমি ভেবেছিলাম তোমরা লাঞ্চে আসবে।”
নিবেদিতা দেখতে বেশ সুন্দরী, পরনে একটা ঢিলে প্যান্ট আর শার্ট। ততক্ষণে বাইক পার্ক করে দেবায়ন বসার ঘরে ঢুকে পড়েছে। অনুপমা স্মিত হেসে নিবেদিতার হাতে ফুলের স্তবক ধরিয়ে দিয়ে বলে, “ভালো আছি।” দেবায়ন মৃদু মাথা দোলায় নিবেদিতাকে দেখে।
ওদের এই কুশল সম্ভাষণ দেখে অনুপমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। দেবায়ন যা ছেলে, মেয়ে দেখেলেই খোঁড়া হয়ে যায়, লাগাতে পারলেই হল। আর যদি নিবেদিতার মতন সুন্দরী আর শিক্ষিতা হলে কথাই নেই।
নিবেদিতা অনুপমার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলে, “তোমাদের অনেক আগেই আমার ডাকা উচিত ছিল।”
অনুপমা মাথা দোলায়, সত্যি হ্যাঁ। ছোটবেলা থেকে ওদের এই কন্সট্রাকশান কোম্পানি নাকি একপ্রকার নিবেদিতার রক্ষণাবেক্ষণে ছিল তাও কেন বাবা এই মহিলাকে নিজের বাড়িতে কোনোদিন নিয়ে আসেনি। শুধু কি মায়ের জন্য? না এর পেছনে আরো কিছু লুকিয়ে আছে, যেটা হয়ত ওর পুচ্চু জানে কিন্তু ওকে কিছুতেই বলছে না। দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই। আজকাল অফিসে বসে চারদিকে ঘোরাফেরা করে দিনে দিনে অনেক বদলে গেছে ওর পুচ্চুসোনা।
অনুপমা স্মিত হেসে উত্তরে বলে, “এই’ত চলে এলাম। কিন্তু তোমার ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি না যে? কোথায় গেল?”
নিবেদিতা হেসে উত্তর দেয়, “দাদুর সাথে সামনের পার্কে খেলতে গেছে একটু পরেই চলে আসবে। তোমার কথা বল। অনেক বড় হয়ে গেছ, নিজে একটা কোম্পানি সামলাচ্ছ। তার ওপরে আবার এদিক ওদিকের দেখা শোনা।”
অনুপমা হেসে বলে, “না না, আমি কিছুই দেখি না। বাইরের কাজ দেবায়ন দেখে, মারকেটিংয়ের জন্য দিপঙ্করদা আছে আর…..”
নিবেদিতা হেসে বলে, “আমি সব জানি। তোমার কোম্পানিতে কে আছে, কে কি করে সেই সব আমি জানি।”
নিবেদিতাকে ঠিক কি বলে সম্বোধন করবে সেটা বুঝে উঠতে পারে না অনুপমা। কাকি না মাসি না শুধু নিবেদিতা? নিবেদিতা ওর চেয়ে বয়সে বড়, এইভাবে নাম ধরে ডাকতে কেমন যেন গলায় আটকে যায়। একটা কাজের মেয়ে ততক্ষণে ওদের জন্য ঠাণ্ডা পানীয় আর বেশ কিছু মিষ্টি ফল তার সাথে প্যাস্ট্রি, একটা বড় কেক ইত্যাদি নিয়ে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে চলে যায়। খাবারের পরিমান দেখে অনুপমার চক্ষু চড়ক গাছ। স্বল্পাহারী অনুপমা, তায় আবার অফিসে বসে বসে ইদানিং মোটা হয়ে যাচ্ছে বলে পায়েলের কাছে নালিশ জানায়, এত খাবার খাবে কি করে?
অনুপমা খাবারের পরিমান দেখে আঁতকে উঠে বলে, “একি করেছ তুমি? একে দেখো মোটা হয়ে যাচ্ছি আর তুমি একদিনে আমাকে খাইয়ে মেরে ফেলবে নাকি?”
দেবায়ন মিচকি হাসে ওর দিকে তাকিয়ে। অনুপমা ওকে বলে, “কি রে কিছু বল?”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না, এর মধ্যে আমি নেই। তোমরা দুইজনে ঠিক করে নাও কি করবে।”
নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “দেখো অনুপমা, আমি কিন্তু লাঞ্চে ডেকেছিলাম, তোমার দেবায়ন যদি না নিয়ে আসে তাহলে কি করতে পারি বল। কিন্তু ডিনার এইখানে সেরে যেতেই হবে।”
অনুপমা আকাশ থেকে পড়ে, “ডিনার? না না, মাকে বলা নেই চিন্তা করবে।”
নিবেদিতা হেস ফেলে, “আচ্ছা আমি না হয়, সোমে… তোমার বাবাকে ফোন করে দিচ্ছি।”
তৎক্ষণাৎ অনুপমার কান খাড়া হয়ে যায়, বাবার নাম ধরতে গিয়েও ধরল না নিবেদিতা। একদম ঘাসে মুখ দিয়ে চলার মেয়ে নয়, মাথায় বেশ বুদ্ধি রাখে। যদিও অনেক কিছুই ওর অজানা আর সংশয়ের উত্তর পাওয়ার মতন সুত্র ওর হাতে নেই তাও নিবেদিতার আতিথিয়তায় বেশ অবাক হয়ে যায়।
নিবেদিতা শেষ পর্যন্ত ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, যে অনুপমা আর দেবায়ন রাতের খাওয়া দাওয়া সেরেই বাড়ি ফিরবে। অগত্যা অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায়। ছেলেটা একটা কথাও বলছে না, চুপচাপ খবরের কাগজ মুখস্ত করছে আর মাঝে ওদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নেয়। কি হল, ওর? সবাইকে সন্দেহ করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুচ্চু? হতেই পারে না, কেউ যদি ওর পায়ের তলায় নিজের গলা কেটেও বলে দেবায়ন প্রতারক তাতেও অনুপমা বিশ্বাস করবে না। এই ছেল্টার জন্য, ওর প্রানের বান্ধবী পায়েলকে ফিরে পেয়েছে, এই ছেলেটার জন্য বাবা অনেকটা সোজা হয়েছে, মায়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক আবার সেতুবন্ধ হয়েছে। কি চলছে এই ছেলেটার মনে? বলবে না, আজকাল অনেক কথাই সহজে বলে না। এদিক ওদিক করে এড়িয়ে যায় তবে পরে নিজের মুখেই বলে।
অঙ্কুশ আর নিবেদিতার বাবা বেশ কিছু পরে ঘরে ঢোকে। নিবেদিতার বাবাকে দেখে দুইজনেই উঠে দাঁড়িয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। অনুপমা অঙ্কুশকে কাছে ডেকে হাতে চকোলেট ধরিয়ে দেয়। লাজুক ছেলে মায়ের দিকে একবার তাকায় তারপরে হেসে ওর হাত থেকে চকোলেট নিয়ে এক পাশে বসে। দেবায়ন আর অঙ্কুশ বন্ধুত্ত পাতিয়ে নেয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। অঙ্কুশকে চোখের সামনে দেখে অনুপমা হেসে ফেলে, একদম ছোট বেলায় অঙ্কন যেমন লাজুক ছিল ঠিক তেমন।
ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?”
অঙ্কুশ জবাব দেয়, “ক্লাস ফোরে।”