04-10-2020, 10:35 AM
ষষ্টবিংশ পর্ব (#01)
পাহাড় বরাবর অনুপমাকে খুব টানে। বাবা, মা ভাইয়ের সাথে আল্পস থেকে হিমালয় নানা পাহাড়ি জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। শেষের বার দেবায়নের সাথে এই মুসৌরি এসে অন্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই বারের অভিজ্ঞতা বিগত সব অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে গেছে। আঁকা বাঁকা পথ ধরে নেমে চলেছে গাড়ি, ধীরে ধীরে আবহাওয়া গরম হতে শুরু করেছে। গাড়ি এসি কিন্তু অনুপমা ইচ্ছে করেই এসি না চালিয়ে শেষ বারের মতন প্রকৃতির ঠাণ্ডা হাওয়া শরীরে মাখিয়ে নিতে চেষ্টা করে। চুপচাপ দেবায়নের কাঁধে মাথা রেখে ওর হাত নিয়ে খেলা করে আর বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর চিন্তার তারে কিছুই বাঁধা নেই।
এই কয়দিন মুসৌরির নামকরা রিসোর্টে ছিল ওরা। মুসৌরি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা দিল্লী, দিল্লীতে একরাত কাটিয়ে তারপরের দিনের সকালের ফ্লাইটে কোলকাতা। অনুপমা রাস্তার খাবার একদম খেতে পারে না, তাই কণিকা ওদের জন্য রান্না করে খাবার প্যাক করে দিয়েছিল। ফিরে আসার দিন সকালে আরেকবার গাড়ি নিয়ে কণিকা আর দিলিপ বাবুর সাথে দেখা করতে যায়। কণিকা, দিলিপ বাবু আর প্রেমজিত, এই তিনজনের হাসি হাসি মুখ দেখে অনুপমার চোখের কোণে একচিলতে জল চলে আসে।
মুসউরিতে কণিকা আর দিলিপ বাবুকে দেখার পরে পাশের ছেলেটাকে একবিন্দুর জন্য চোখের আড়াল করতে নারাজ। কে জানে এই জীবন পথের কোন বাঁকে কি লুকিয়ে আছে। বড় ভালোবাসে দেবায়নকে, আর জানে যে ওর দেবায়ন ওকে ছেড়ে যাবে না, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা কি আর বলা যায়?
দেবায়ন ওর মনের কথা বুঝতে পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে তোর, এত চুপচাপ কে বসে আছিস?”
দেবায়নের বাজুর ওপরে নাক ঘষে বলে মিহি কণ্ঠে বলে, “কিছু না, এমনি বসে আছি। তোর কোলে মাথা রাখতে ভারী ভালো লাগছে তাই চুপচাপ বসে আছি।”
দেবায়ন ওর কপালে গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে, “সত্যি বলতে কি জানিস, আমি একা যদি আসতাম তাহলে হয়ত এত হৃদয় জিতে ফিরতাম না। কিছু না কিছু করে হোক হোটেল গুলো কিনতাম কিন্তু তোর জন্য আজকে যে মানুষ গুলোর ভালোবাসা আর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরছি সেইগুলো শুধু আমার পুচ্চি সোনার পক্ষেই সম্ভব।”
অনুপমা হেসে ওর গালে গাল ঘষে বলে বলে, “পাগল ছেলে, একহাতে কোনদিন তালি বাজে না। তুই আমার পরিপূরক তাই আমি সম্পূর্ণ।”
গালে গাল ঘষতে গিয়ে অনুভব করে যে দেবায়ন দাড়ি কাটেনি তাই কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “দাড়ি কাটতে পারিস না? গালের চামড়া উঠে গেল আমার।”
দেবায়ন ইচ্ছে করেই ওর গালে জোর করে গাল ঘষে বলে, “নে নে আরেকটু নে। তোর নরম গাল যা মাখন মনে হচ্ছে গালের ওপরে লেপে গেছে।” দুইহাতে ওকে জড়িয়ে পিষে ধরে বলে, “বড় ইচ্ছে করে তোকে আলুসিদ্ধের মতন চটকে মেখে পকেটে পুরে রেখে দেই।”
অনুপমা নাক কুঁচকে মিচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। তোর প্রেম শুধু মাত্র মুখের, কর্মে লবডঙ্কা। অইতো আমাকে না নিয়ে আসার প্লান ছিল তোর। আমি জেদ না করলে একাই আসতিস তাই না? আর হয়তো বা কস্তূরীর সাথে এমন কি মেহেকের সাথে রাত কাটিয়ে দিতিস।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “উম্মম্মম কস্তূরীর কথা জানি না তবে মেহেকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমার প্যান্ট ছোটো করে দিলি। শেষ কবে মেহেকের ফোন এসেছে? ঠিক ভাবে মান্ডি পৌঁছে গেছে?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে মেহেকের ফোন এসেছে, মেহেক ঠিক ভাবে মান্ডিতে ওর বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে গেছে। মেহেকের সাথে শুভমের কথাবার্তা হয়ে গেছে। মাস তিনেক পড়ে শুভম দেশে ফিরবে আর তারপরে ওরা সবাই দেশ ছেড়ে চলে যাবে। মেহেকের কথা শুনতে শুনতে দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে বলে মেহেক যাবার আগে একবার ওদের দেখা করার জন্য ডেকেছে।
অনুপমা ভাবতে বসে যে সূর্য মনিদিপার কথা অথবা ধৃতিমান নিবেদিতার কথা দেবায়নকে জানাবে কি না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত সূর্য আর মনিদিপার কথা দিয়ে শুরু করে। অনুপমা জানায় যে মনিদিপা মামনিকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছিল, সেই কথা শুনে অনুপমা প্রথমে রেগে যায় আর জলপাইগুড়ি যায়। মনিদিপা ফোন করেছিল সেটা শুনেই রেগে ওঠে দেবায়ন, পারলে এখুনি জলপাইগুড়ি গিয়ে ওদের খুন করে। অনুপমা ওকে শান্ত করে, মনিদিপার শারীরিক অবস্থা আর ওদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা জানায়। অনুপমার মুখে সব শুনে শেষ পর্যন্ত দেবায়ন ক্ষান্ত হয়। দেবায়ন একবার সূর্য আর মনিদিপার সাথে দেখা করার ইচ্ছে ব্যাক্ত করে কিন্তু অনুপমা ওকে চেনে তাই বারেবারে বলে দেয় যে দেখা করলেও ওদের সাথে আর যেন কোন দ্বন্দে না যায়। দেবায়ন হাসি মুখে জানায় যে অনুপমার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা ছাড়া ওর কাছে আর কোন গতি নেই।
ধৃতিমান আর নিবেদিতার কথা জানাতে দেবায়ন অনেকক্ষণ চুপ করে বসে অনুপমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। ওর মুখ দেখে অনুপমা ভাবনায় পড়ে যায়, এই নির্বাক চেহারা এক বিশাল ঝড়ের পূর্বাভাস। দেবায়ন জানায় যে নিবেদিতার ওপরে আলাদা নজর রাখবে আর ধৃতিমানের আসল উদ্দেশ্য জানতে চেষ্টা করবে।
এরপরে অফিসের কথা, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কথা, কবে থেকে এই প্রোজেক্টে টাকা আসতে শুরু করবে ইত্যাদি। দেবায়নের কাছে অনুপমা জানতে পারে যে দুটো প্রোজেক্ট প্রফিট শেয়ারিং হিসাবে। যেদিন ওদের সফটওয়্যার ওই এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে বসানো হবে তাঁর পরের দিন থেকেই ওদের একাউন্টে টাকা আসতে শুরু করবে।
বিকেলের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যায়। রাতে অনুপমা বাবাকে ফোনে সব জানিয়ে দেয়। একরাত দিল্লী কাটিয়ে ওরা তারপরের দিন কোলকাতা ফিরে এলো। মিস্টার সেন, মেয়ের আর দেবায়নের কাজে ভারী খুশি। দেবায়ন আর অনুপমার মুখে সম্পূর্ণ বিবরন শুনে অবাক হয়ে যান। হেসে বলেন যে কন্যে উপযুক্ত পাত্র খুঁজেছে নিজের জন্য। পারমিতা প্রথমে একটু সংশয় ব্যাক্ত করলেও সব কিছু শুনে আর বুঝে ওঠার পড়ে কিছু বলে না। কৃতজ্ঞ চাহনি নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে, দেবায়ন তার কথা রেখেছে।
সেদিন রাতে পায়েলকে দেখে বড় খুশি। ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, পায়েল অধীর অপেক্ষায় ছিল কখন অনুপমা বাড়ি ফিরবে আর ওর সাথে মন খুলে গল্প করবে। সারা রাত দুইজনে চোখের পাতা এক করেনা, পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন, পায়েলের সাথে অনুপমার কত সমকামী খেলা, অনুপমার জন্মদিনের কথা, যেখানে সবাই সবার সাথে সঙ্গমে মত্ত হয়েছিল। অঙ্কনের কথা বলতেই দুইজনে চুপ করে যায়। ভাইয়ের কথা শুনতে অনুপমার একটু লজ্জা লাগে আর পায়েল মুখ ফুটে ঠিক বলে উঠতে পারে না অঙ্কনের কথা। তাও ওদের প্রেমের কথা আর সেই সাথে এই কয়দিন কি ভাবে কাটিয়েছে সেই সব গল্প করে।
পায়েল অফিসে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। অনুপমা জানায় যে মায়ের সাথে আর দেবায়নের সাথে কথা বলার পরেই পায়েল কে অফিসে যেতে দিতে পারে। দেবায়ন মানা করে না, অনেকদিন পায়েলের দেখা নেই। পুরানো দুষ্টু মিষ্টি পায়েল ফিরে এসেছে শুনেই দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা ওকে ধমকে মেরে চুপ করিয়ে দেয়। মাকে জিজ্ঞেস করলে, পারমিতাও মেয়েকে বলে যে বাড়িতে থেকে থেকে পায়েলের এক ঘেয়ে লেগে গেছে তাই ওকে অফিসে জয়েন করিয়ে নিতে।
পরীক্ষার পরে প্রথম যেদিন পায়েল অফিসে জয়েন করবে সেদিন পায়লেকে বেশ আধুনিকা সাজে সাজায়। পায়েলের ইচ্ছে ছিল সাধারন একটা সালোয়ার কামিজ পরে যাওয়ার, কিন্তু অনুপমার ইচ্ছেতে ওকে একটা সাদা চাপা জিন্স আর টকটকে লাল রঙের শার্ট পড়তে হয়। ঠোঁটে গাড় বাদামি রঙ, চোখের কোলে কাজল, মেখে পায়েল যেন সারা কোলকাতা মাতিয়ে দিতে বেড়িয়েছে।
অফিসে পৌঁছান মাত্রই দেবায়ন আর রূপক ওকে দেখে পাগল। সারাদিন পায়েলকে নিয়েই দেবায়ন আর রূপক মেতে থাকে। ওদের এই আতিসহ্যেয় পায়েল হাফিয়ে ওঠে। অনুপমা চেয়েও ওকে দেবায়ন আর রূপকের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে না। একবার পায়েলকে দেবায়ন নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে তারপরে লাঞ্চের পরে রূপক ওকে নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে।
অনুপমা, পায়েলকে মনীষার সাথে কাজে লাগিয়ে দেয়। ওকে মনীষার সাথে এইচ.আর এর এডমিনিস্ট্রেসান শিখতে বলে। রোজ লাঞ্চের সময়ে সব বন্ধুরা একসাথে মিলেই লাঞ্চ খায়। কোনদিন শ্রেয়ার কেবিনে কোনদিন অনুপমার কেবিনে দেবায়ন অথবা রূপকের কেবিন একেবারে মাছের বাজারের মতন, এদিকে ল্যাপটপ, ওদিকে কাগজ পত্র, একদিকে প্রিন্টার একদিকে আবার প্রেমিকার ফটো টেবিলে থাকতেই হবে। এই ছেলে দুটোর যেন নিজের প্রেম জাহির করা একটা স্বভাব। লাঞ্চের সময়ে বেশ হসি ঠাট্টা হয়। বিশেষ করে দেবায়ন আর রূপক মাঝে মাঝে পায়েলের পেছনে পড়ে যায়, না হলে মনীষা আছেই। অফিসে মেয়েদের সংখ্যা কম নয়, মাঝে মাঝে কে কি পোশাক পরে এসেছে অথবা কার পোশাকের ভেতর থেকে কোন অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে সেই সব নিয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়ে যায় রূপক আর দেবায়নের মাঝে। অনুপমা তিতিবিরক্ত হয়ে শ্রেয়া আর পায়েল কে নিয়ে মাঝে মাঝেই ওদের ছেড়ে উঠে আসে। ধুত্তোর! ছেলে দুটো কোম্পানি চালাবে না সেই কলেজের মতন এর তার ব্রা প্যান্টির রঙ দেখে বেড়াবে!
এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট সমাপ্তির দিকে আর জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কাজ দ্রুত গতিতে সমাপনের দিকে। শ্রেয়ার তত্বাবধনে কাজ খুব সুস্থ ভাবে এগিয়ে চলছে। একদিকে দুই কোম্পানির আই.টি সাথে আলোচনা করা, অন্যদিকে সুপর্ণা ম্যাডামের সাথে বসে টেকনিকাল ব্যাপারে আলোচনা করা, অতি নিপুণ হস্তে কাজ করে চলেছে। কাজের বিষয়ে শ্রেয়ার কোন ফাঁকি নেই কিন্তু সেই পুরানো শ্রেয়া হারিয়ে যাওয়াতে অনুপমার বড় ব্যাথা লাগে। লাঞ্চের সময়ে মাঝে মাঝে শ্রেয়া হারিয়ে যায় নিজের কাজের মধ্যে। ঠিক কি কাজে হারিয়ে যায় না ওর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে সেটা বুজে উঠতে পারে না অনুপমা। ওদের সামনে রূপকের সাথে ভালোই ব্যাবহার করে, কিন্তু অনুপমার শ্যেন দৃষ্টিতে বুঝতে পারে যে শ্রেয়া আর রূপকের মাঝে আগের যে বাঁধন ছিল সেটা অনেক কমে এসেছে। আজকাল রূপক কাজের চাপে দেরি করে বাড়ি ফেরে। আগে শ্রেয়া ওর জন্য অপেক্ষা করতো। কিন্তু ইদানিং শ্রেয়া আর অপেক্ষা করে না। ট্যাক্সি ধরে না হয় মনীষা আর শান্তনুর সাথে বাড়ি ফিরে যায়। দেবায়ন আর অনুপমার সাথে সেই আগের হৃদ্যতা যেন ধীরে ধীরে কমে এসেছে। কারন জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যায়, হেসে জানায় যে শুধু কাজের চাপে ব্যাস্ত থাকে। শত চেষ্টা করেও শ্রেয়ার পেট থেকে ওরা কেউ কোন কথা বের করতে পারে না। তবে অনুপমা একটা আঁচ করতে পেরেছিল যে হয়ত শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কিছু একটা অভসন্ধি ফাঁদছে।
এদিকে বর্ষা কাল এসে যায়, কিছুদিনের মধ্যে এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ডিপ্লয় করতে আবার শ্রেয়া জার্মানি যাবে এবারে সাথে কয়েক জন টেকনিকাল লোকজন যাবে। শ্রেয়া এই প্রোজেক্ট ডেলিভারি আর জার্মানি যাওয়ার জন্য বেশ ব্যাস্ত।
সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, বিশেষ কোন কাজ না থাকায় কিছুতেই একা মন বসাতে পারে না। একবার পায়েলকে ফোন করেছিল কিন্তু সে মনীষার সাথে ব্যাস্ত। দেবায়নের ফোন কয়েকবার বেজে গেল উঠাল না দেখে চিন্তায় পরে গেল। এই দুপুরে কি হল ছেলেটার। দেবায়নের কেবিনে ঢুকে দেখে যে কোন টেলিফোন বিল নিয়ে সে ব্যাস্ত। জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন বলে যে এইগুলো শ্রেয়ার গত চার মাসের মোবাইল বিল আর তার কল রেকর্ডস।
একটা চেয়ার টেনে পাশে বসে বিল দেখতে দেখতে প্রশ্ন করে করে, “কিছু পেলি নাকি?”
দেবায়ন উত্তরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে ঠিক আঁচ করতে পারছি না। বড় ঘাঘু মাল দুইজনে।”
অনুপমা বলে, “কেন? কি পেয়েছিস?”
দেবায়ন ওকে বিলগুলো হাতে ধরিয়ে বলে, “দ্যাখ একবার। প্রায় প্রত্যেক দিন রাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কথা হয়, একনয় শ্রেয়া কল করে অথবা ইন্দ্রনীল কল করে। কিন্তু কোন কল দশ থেকে বারো সেকেন্ডের বেশি নয়। যদি ওদের মধ্যে কথাবার্তা, আলাপ আলোচনা, প্রেম প্রীতি চলে তাহলে এই কল গুলো নিশ্চয় দশ বারো সেকেন্ডের হবে না, তার চেয়ে বেশি হবে।”
অনুপমা খানিক মাথা চুলকে বলে, “ওরে পাগল, এখন ইন্টারনেটের যুগ। ওরা ফোনে কেন কথা বলতে যাবে? স্কাইপ আছে, সোজাসুজি ভিডিও চ্যাট করতে পারে ওরা।”
দেবায়ন বলে, “হুম, সেটা পারে। তুই কি শ্রেয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিস এই বিষয়ে?”
অনুপমা বলে, “আমি আর করিনি তবে পায়েল কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি। এখন সত্যি মনে হচ্ছে ওকে কোম্পানিতে না নিলেই হয়ত ভালো হত। এত গভীর জলের মাছ যে হাতের নাগালেই আসছে না। তবে এইটুকু বলতে পারি যে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কোন অভসন্ধি আঁটছে। কি করা যায় বলতো?”
দেবায়ন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “বড় চিন্তায় পরে গেলাম। শ্রেয়াকে নাড়ানো মহা মুশকিল। ওকে নাড়াতে সাহস পাচ্ছি না কারন ওকে নাড়ালেই রূপক হয়ত ক্ষেপে যেতে পারে। রূপক এই কোম্পানির রুটি জোগাড় করে, দৈনন্দিন টাকা কামায় রূপকের এই ছোটো ছোটো প্রোজেক্ট গুলো। আবার ওইদিকে ইন্দ্রনীলকে ঘাঁটানো বিপ্পজনক। অনিমেশ আঙ্কেলের সাথে মিস্টার হেরজোগের বেশ মেলামেশা। এই দুটো বড় প্রোজেক্ট ওর হাত ধরেই এসেছে, তার ওপরে মিস্টার হেরজোগ আমাদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে টাকা ঢেলেছে।”
খানিকক্ষণ মাথা চুলকে উৎসাহিত হয়ে বলে, “একটা উপায় আছে।”
অনুপমা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে, “কি উপায়?”
দেবায়ন বলে, “শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিতে পারলে কেমন হয়?”
অনুপমা বলে, “সেটা কি ভাবে করতে চাস?”
মাথা চুলকায় দেবায়ন ভেবে উঠতে পারে না কি ভাবে ফাটল ধরাবে, “ইন্দ্রনীল জানে শ্রেয়া রূপকের গার্ল, ফ্রেন্ড সুতরাং সেইখানে গুড়ে বালি। উলটে যদি আমাদের হাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কিছু তথ্য প্রমাণ চলে আসে তাহলে সেই দেখিয়ে রূপকের মনে চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে। আর সত্যি যদি শ্রেয়া রূপককে এখন ভালোবাসে, তাহলে এই সব ছেড়ে দেবে, আর রূপকের কাছে ফিরে আসবে। আর যদি ওর মাথায় অন্য কিছু চলে, তাহলে অনায়াসে আমরা রূপককে দিয়ে শ্রেয়াকে আমাদের কোম্পানি থেকে বের করে দিতে পারি।”
অনুপমা একটু চিন্তা করে। ওর মনে পড়ে যায় জলপাইগুড়ির রাতের কথা। রূপক ওকে জানিয়েছিল যে শ্রেয়া ইদানিং খুব টাকা নিয়ে মেতে উঠেছে। হতে পারে যে ইন্দ্রনীল ওকে কোন স্বপ্ন দেখিয়েছে আর শ্রেয়া সেই আলেয়া ধরার জন্য ছুটছে ইন্দ্রনীলের পেছনে। এবারে যদি নিজেই ওদের সাথে জার্মানি যায় তাহলে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের ওপরে নজর রাখতে পারবে।
অনুপমা ভেবে চিনতে বলে, “এবারে ভাবছি আমি ওদের সাথে জার্মানি যাবো।”
দেবায়ন হেসে বলে, “তুই কি গোয়েন্দা হতে চাস নাকি?”
অনুপমা চোখ টিপে বলে, “তাহলে কস্তূরীকে ডেকে নিলে হয়।”
দেবায়ন বলে, “ধুর শালা এখানে শুধু খরচ হয়ে যাবে, আসলে কোন আয় হবে না তাই কস্তূরীকে কাজে নামাতে চাই না। আমি ভাবছি যেমন চলছে চলতে দে, যেদিন গলা পর্যন্ত জল উঠে আসবে সেদিন ওকে চেপে ধরব। এখন পর্যন্ত সবকিছু শান্তিতে চলছে। এবার থেকে পায়েলকে বলেদিস ওর পেছনে যেন বেশি মাথা না ঘামায়।”
এমন সময়ে পায়েল এসে ওদের ঘরে ঢোকে। অফিস জয়েন করার পর থেকে পায়েল অনেক বদলে গেছে, অনেক হাসিখুশি খোলামেলা হয়ে উঠেছে। দেবায়ন দুষ্টু চাহনি নিয়ে পায়েলের দিকে তাকায়। পায়েল একটা হাঁটু পর্যন্ত নীল জিন্স আর চাপা শার্ট পড়ে এসেছিল, ওর নধর গোলগাল পাছার দুলুনি দেখেই দেবায়ন অস্থির হয়ে যায়।
দেবায়নের চোখের চাহনি দেখে অনুপমা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলে, “তুই আর শুধরাবি না তাই না?”
দেবায়ন একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, “আমার শালা কি রোজ খেজুরের রস চুষছে?”
পায়েল লাজুক হেসে অনুপমার দিকে তাকায়।
অনুপমা ওকে একটা চাঁটি মেরে বলে, “আমার ভাইয়ের বৌ, একদম ওর দিকে নজর দিবি না!”
দেবায়ন প্যান্টের সামনের দিকটা একটু ঠিকঠাক করে বলে, “তোর ভাইয়ের বউকে আমি লাগাতেই পারি আর ভাইয়ের বৌ হবার আগেই লাগিয়েছি যখন আমার শালী ছিল।”
পায়েল একটু লজ্জা পেয়ে রেগে গিয়ে দেবায়ন কে দুম দুম বেশ কয়েকটা কিল মেরে বলে, “এই তুই একটু থামবি? আমার কিছু কথা ছিল।”
দেবায়ন চোখ টিপে মিচকি হেসে বলে, “তুই আমার কোলে বসলে আমি তোর সব কথা শুনতে রাজি।”
অনুপমা ওর কান ধরে টেনে বলে, “শয়তান এটা অফিস। এটা আমার তোর বাড়ি নয়। কোলে বসাবে? ছেলের শখ দেখো!”
পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই এই ছ্যাঁচোর টার কাছে আসতে গেলি কেন? চল আমার কেবিনে।” দেবায়নের কান টেনে বলে, “এই শালা কুত্তাটা একা একা ডান্ডা নাড়াক। কাল রাতে আর আমার কাছে আসতে চেয়েছিস কি কেটে হাতে ধরিয়ে দেব।”
যেহেতু দুই বাড়ির মধ্যে সবার জানা, তাই মাঝে মাঝে অনুপমা দেবায়নের বাড়িতে রাতে থেকে যায়, না হলে দেবায়ন অনুপমার বাড়িতে রাতে থেকে যায়।
দেবায়ন দুই সুন্দরী রমণীর হাতে নির্যাতিত হয়ে হেসে বলে, “তোদের মার খেতেও মিষ্টি লাগে। আচ্ছা বল কি বলার জন্যে এসেছিলিস?”
পায়েল ঠোঁট বেঁকিয়ে মিচকি এসে বলে, “আমি তোর কাছে আসিনি আমি অনুর খোঁজে এসেছিলাম।”
অনুপমা পায়েল কে নিয়ে দেবায়নের রুম থেকে বেড়িয়ে ওকে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে?”
পায়েল খিল খিল করে হেসে বলে, “বিশেষ কিছু হয়নি রে। তোর ভাইয়ের সাথে একটা পার্টিতে যাওয়ার আছে তাই বলছিলাম যে কখন বাড়ি যাবি?”
অনুপমা বড় বড় চোখ করে বলে, “হুম, সেখান থেকে কখন ফেরা হচ্ছে?”
পায়েল ফিসফিস করে বলে, “কাকিমাকে সামলে নিস হয়ত রাতে নাও ফিরতে পারি।”
অনুপমা ওর গাল টিপে হেসে বলে, “ওরে শয়তান, মেয়ে কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
পায়েল বলে, “বেশি দুরে নয়, ওর এক বন্ধুর জন্মদিন তাই যাচ্ছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে, “জন্মদিন কি রকম জন্মদিন যে রাত কাটাতে হবে?”
পায়েল বুঝে যায় অনুপমার প্রশ্নের মানে তাই মিচকি হেসে বলে, “তুই পাগল নাকি? অইসব কিছুই হবে না অন্তত তোর ভাই আমার সাথে থাকলে কারুর জো নেই আমার ধারে কাছে আসে।”
অনুপমা ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “ওকে যাচ্ছিস যা, পারলে রাতেই ফিরে আসিস নাহলে একটা ফোন করে দিস।”
পায়েল বলে, “ঠিক আছে ফোন করে দেব।”
পায়েল ওর সিটে চলে যায় এমন সময়ে শ্রেয়া নিজের কেবিন থেকে বেড়িয়ে ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দেয়, “একটু শুনিস তো?”
পাহাড় বরাবর অনুপমাকে খুব টানে। বাবা, মা ভাইয়ের সাথে আল্পস থেকে হিমালয় নানা পাহাড়ি জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। শেষের বার দেবায়নের সাথে এই মুসৌরি এসে অন্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই বারের অভিজ্ঞতা বিগত সব অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে গেছে। আঁকা বাঁকা পথ ধরে নেমে চলেছে গাড়ি, ধীরে ধীরে আবহাওয়া গরম হতে শুরু করেছে। গাড়ি এসি কিন্তু অনুপমা ইচ্ছে করেই এসি না চালিয়ে শেষ বারের মতন প্রকৃতির ঠাণ্ডা হাওয়া শরীরে মাখিয়ে নিতে চেষ্টা করে। চুপচাপ দেবায়নের কাঁধে মাথা রেখে ওর হাত নিয়ে খেলা করে আর বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর চিন্তার তারে কিছুই বাঁধা নেই।
এই কয়দিন মুসৌরির নামকরা রিসোর্টে ছিল ওরা। মুসৌরি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা দিল্লী, দিল্লীতে একরাত কাটিয়ে তারপরের দিনের সকালের ফ্লাইটে কোলকাতা। অনুপমা রাস্তার খাবার একদম খেতে পারে না, তাই কণিকা ওদের জন্য রান্না করে খাবার প্যাক করে দিয়েছিল। ফিরে আসার দিন সকালে আরেকবার গাড়ি নিয়ে কণিকা আর দিলিপ বাবুর সাথে দেখা করতে যায়। কণিকা, দিলিপ বাবু আর প্রেমজিত, এই তিনজনের হাসি হাসি মুখ দেখে অনুপমার চোখের কোণে একচিলতে জল চলে আসে।
মুসউরিতে কণিকা আর দিলিপ বাবুকে দেখার পরে পাশের ছেলেটাকে একবিন্দুর জন্য চোখের আড়াল করতে নারাজ। কে জানে এই জীবন পথের কোন বাঁকে কি লুকিয়ে আছে। বড় ভালোবাসে দেবায়নকে, আর জানে যে ওর দেবায়ন ওকে ছেড়ে যাবে না, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা কি আর বলা যায়?
দেবায়ন ওর মনের কথা বুঝতে পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে তোর, এত চুপচাপ কে বসে আছিস?”
দেবায়নের বাজুর ওপরে নাক ঘষে বলে মিহি কণ্ঠে বলে, “কিছু না, এমনি বসে আছি। তোর কোলে মাথা রাখতে ভারী ভালো লাগছে তাই চুপচাপ বসে আছি।”
দেবায়ন ওর কপালে গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে, “সত্যি বলতে কি জানিস, আমি একা যদি আসতাম তাহলে হয়ত এত হৃদয় জিতে ফিরতাম না। কিছু না কিছু করে হোক হোটেল গুলো কিনতাম কিন্তু তোর জন্য আজকে যে মানুষ গুলোর ভালোবাসা আর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরছি সেইগুলো শুধু আমার পুচ্চি সোনার পক্ষেই সম্ভব।”
অনুপমা হেসে ওর গালে গাল ঘষে বলে বলে, “পাগল ছেলে, একহাতে কোনদিন তালি বাজে না। তুই আমার পরিপূরক তাই আমি সম্পূর্ণ।”
গালে গাল ঘষতে গিয়ে অনুভব করে যে দেবায়ন দাড়ি কাটেনি তাই কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “দাড়ি কাটতে পারিস না? গালের চামড়া উঠে গেল আমার।”
দেবায়ন ইচ্ছে করেই ওর গালে জোর করে গাল ঘষে বলে, “নে নে আরেকটু নে। তোর নরম গাল যা মাখন মনে হচ্ছে গালের ওপরে লেপে গেছে।” দুইহাতে ওকে জড়িয়ে পিষে ধরে বলে, “বড় ইচ্ছে করে তোকে আলুসিদ্ধের মতন চটকে মেখে পকেটে পুরে রেখে দেই।”
অনুপমা নাক কুঁচকে মিচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। তোর প্রেম শুধু মাত্র মুখের, কর্মে লবডঙ্কা। অইতো আমাকে না নিয়ে আসার প্লান ছিল তোর। আমি জেদ না করলে একাই আসতিস তাই না? আর হয়তো বা কস্তূরীর সাথে এমন কি মেহেকের সাথে রাত কাটিয়ে দিতিস।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “উম্মম্মম কস্তূরীর কথা জানি না তবে মেহেকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমার প্যান্ট ছোটো করে দিলি। শেষ কবে মেহেকের ফোন এসেছে? ঠিক ভাবে মান্ডি পৌঁছে গেছে?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে মেহেকের ফোন এসেছে, মেহেক ঠিক ভাবে মান্ডিতে ওর বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে গেছে। মেহেকের সাথে শুভমের কথাবার্তা হয়ে গেছে। মাস তিনেক পড়ে শুভম দেশে ফিরবে আর তারপরে ওরা সবাই দেশ ছেড়ে চলে যাবে। মেহেকের কথা শুনতে শুনতে দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে বলে মেহেক যাবার আগে একবার ওদের দেখা করার জন্য ডেকেছে।
অনুপমা ভাবতে বসে যে সূর্য মনিদিপার কথা অথবা ধৃতিমান নিবেদিতার কথা দেবায়নকে জানাবে কি না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত সূর্য আর মনিদিপার কথা দিয়ে শুরু করে। অনুপমা জানায় যে মনিদিপা মামনিকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছিল, সেই কথা শুনে অনুপমা প্রথমে রেগে যায় আর জলপাইগুড়ি যায়। মনিদিপা ফোন করেছিল সেটা শুনেই রেগে ওঠে দেবায়ন, পারলে এখুনি জলপাইগুড়ি গিয়ে ওদের খুন করে। অনুপমা ওকে শান্ত করে, মনিদিপার শারীরিক অবস্থা আর ওদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা জানায়। অনুপমার মুখে সব শুনে শেষ পর্যন্ত দেবায়ন ক্ষান্ত হয়। দেবায়ন একবার সূর্য আর মনিদিপার সাথে দেখা করার ইচ্ছে ব্যাক্ত করে কিন্তু অনুপমা ওকে চেনে তাই বারেবারে বলে দেয় যে দেখা করলেও ওদের সাথে আর যেন কোন দ্বন্দে না যায়। দেবায়ন হাসি মুখে জানায় যে অনুপমার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা ছাড়া ওর কাছে আর কোন গতি নেই।
ধৃতিমান আর নিবেদিতার কথা জানাতে দেবায়ন অনেকক্ষণ চুপ করে বসে অনুপমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। ওর মুখ দেখে অনুপমা ভাবনায় পড়ে যায়, এই নির্বাক চেহারা এক বিশাল ঝড়ের পূর্বাভাস। দেবায়ন জানায় যে নিবেদিতার ওপরে আলাদা নজর রাখবে আর ধৃতিমানের আসল উদ্দেশ্য জানতে চেষ্টা করবে।
এরপরে অফিসের কথা, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কথা, কবে থেকে এই প্রোজেক্টে টাকা আসতে শুরু করবে ইত্যাদি। দেবায়নের কাছে অনুপমা জানতে পারে যে দুটো প্রোজেক্ট প্রফিট শেয়ারিং হিসাবে। যেদিন ওদের সফটওয়্যার ওই এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে বসানো হবে তাঁর পরের দিন থেকেই ওদের একাউন্টে টাকা আসতে শুরু করবে।
বিকেলের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যায়। রাতে অনুপমা বাবাকে ফোনে সব জানিয়ে দেয়। একরাত দিল্লী কাটিয়ে ওরা তারপরের দিন কোলকাতা ফিরে এলো। মিস্টার সেন, মেয়ের আর দেবায়নের কাজে ভারী খুশি। দেবায়ন আর অনুপমার মুখে সম্পূর্ণ বিবরন শুনে অবাক হয়ে যান। হেসে বলেন যে কন্যে উপযুক্ত পাত্র খুঁজেছে নিজের জন্য। পারমিতা প্রথমে একটু সংশয় ব্যাক্ত করলেও সব কিছু শুনে আর বুঝে ওঠার পড়ে কিছু বলে না। কৃতজ্ঞ চাহনি নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে, দেবায়ন তার কথা রেখেছে।
সেদিন রাতে পায়েলকে দেখে বড় খুশি। ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, পায়েল অধীর অপেক্ষায় ছিল কখন অনুপমা বাড়ি ফিরবে আর ওর সাথে মন খুলে গল্প করবে। সারা রাত দুইজনে চোখের পাতা এক করেনা, পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন, পায়েলের সাথে অনুপমার কত সমকামী খেলা, অনুপমার জন্মদিনের কথা, যেখানে সবাই সবার সাথে সঙ্গমে মত্ত হয়েছিল। অঙ্কনের কথা বলতেই দুইজনে চুপ করে যায়। ভাইয়ের কথা শুনতে অনুপমার একটু লজ্জা লাগে আর পায়েল মুখ ফুটে ঠিক বলে উঠতে পারে না অঙ্কনের কথা। তাও ওদের প্রেমের কথা আর সেই সাথে এই কয়দিন কি ভাবে কাটিয়েছে সেই সব গল্প করে।
পায়েল অফিসে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। অনুপমা জানায় যে মায়ের সাথে আর দেবায়নের সাথে কথা বলার পরেই পায়েল কে অফিসে যেতে দিতে পারে। দেবায়ন মানা করে না, অনেকদিন পায়েলের দেখা নেই। পুরানো দুষ্টু মিষ্টি পায়েল ফিরে এসেছে শুনেই দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা ওকে ধমকে মেরে চুপ করিয়ে দেয়। মাকে জিজ্ঞেস করলে, পারমিতাও মেয়েকে বলে যে বাড়িতে থেকে থেকে পায়েলের এক ঘেয়ে লেগে গেছে তাই ওকে অফিসে জয়েন করিয়ে নিতে।
পরীক্ষার পরে প্রথম যেদিন পায়েল অফিসে জয়েন করবে সেদিন পায়লেকে বেশ আধুনিকা সাজে সাজায়। পায়েলের ইচ্ছে ছিল সাধারন একটা সালোয়ার কামিজ পরে যাওয়ার, কিন্তু অনুপমার ইচ্ছেতে ওকে একটা সাদা চাপা জিন্স আর টকটকে লাল রঙের শার্ট পড়তে হয়। ঠোঁটে গাড় বাদামি রঙ, চোখের কোলে কাজল, মেখে পায়েল যেন সারা কোলকাতা মাতিয়ে দিতে বেড়িয়েছে।
অফিসে পৌঁছান মাত্রই দেবায়ন আর রূপক ওকে দেখে পাগল। সারাদিন পায়েলকে নিয়েই দেবায়ন আর রূপক মেতে থাকে। ওদের এই আতিসহ্যেয় পায়েল হাফিয়ে ওঠে। অনুপমা চেয়েও ওকে দেবায়ন আর রূপকের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে না। একবার পায়েলকে দেবায়ন নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে তারপরে লাঞ্চের পরে রূপক ওকে নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে।
অনুপমা, পায়েলকে মনীষার সাথে কাজে লাগিয়ে দেয়। ওকে মনীষার সাথে এইচ.আর এর এডমিনিস্ট্রেসান শিখতে বলে। রোজ লাঞ্চের সময়ে সব বন্ধুরা একসাথে মিলেই লাঞ্চ খায়। কোনদিন শ্রেয়ার কেবিনে কোনদিন অনুপমার কেবিনে দেবায়ন অথবা রূপকের কেবিন একেবারে মাছের বাজারের মতন, এদিকে ল্যাপটপ, ওদিকে কাগজ পত্র, একদিকে প্রিন্টার একদিকে আবার প্রেমিকার ফটো টেবিলে থাকতেই হবে। এই ছেলে দুটোর যেন নিজের প্রেম জাহির করা একটা স্বভাব। লাঞ্চের সময়ে বেশ হসি ঠাট্টা হয়। বিশেষ করে দেবায়ন আর রূপক মাঝে মাঝে পায়েলের পেছনে পড়ে যায়, না হলে মনীষা আছেই। অফিসে মেয়েদের সংখ্যা কম নয়, মাঝে মাঝে কে কি পোশাক পরে এসেছে অথবা কার পোশাকের ভেতর থেকে কোন অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে সেই সব নিয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়ে যায় রূপক আর দেবায়নের মাঝে। অনুপমা তিতিবিরক্ত হয়ে শ্রেয়া আর পায়েল কে নিয়ে মাঝে মাঝেই ওদের ছেড়ে উঠে আসে। ধুত্তোর! ছেলে দুটো কোম্পানি চালাবে না সেই কলেজের মতন এর তার ব্রা প্যান্টির রঙ দেখে বেড়াবে!
এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট সমাপ্তির দিকে আর জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কাজ দ্রুত গতিতে সমাপনের দিকে। শ্রেয়ার তত্বাবধনে কাজ খুব সুস্থ ভাবে এগিয়ে চলছে। একদিকে দুই কোম্পানির আই.টি সাথে আলোচনা করা, অন্যদিকে সুপর্ণা ম্যাডামের সাথে বসে টেকনিকাল ব্যাপারে আলোচনা করা, অতি নিপুণ হস্তে কাজ করে চলেছে। কাজের বিষয়ে শ্রেয়ার কোন ফাঁকি নেই কিন্তু সেই পুরানো শ্রেয়া হারিয়ে যাওয়াতে অনুপমার বড় ব্যাথা লাগে। লাঞ্চের সময়ে মাঝে মাঝে শ্রেয়া হারিয়ে যায় নিজের কাজের মধ্যে। ঠিক কি কাজে হারিয়ে যায় না ওর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে সেটা বুজে উঠতে পারে না অনুপমা। ওদের সামনে রূপকের সাথে ভালোই ব্যাবহার করে, কিন্তু অনুপমার শ্যেন দৃষ্টিতে বুঝতে পারে যে শ্রেয়া আর রূপকের মাঝে আগের যে বাঁধন ছিল সেটা অনেক কমে এসেছে। আজকাল রূপক কাজের চাপে দেরি করে বাড়ি ফেরে। আগে শ্রেয়া ওর জন্য অপেক্ষা করতো। কিন্তু ইদানিং শ্রেয়া আর অপেক্ষা করে না। ট্যাক্সি ধরে না হয় মনীষা আর শান্তনুর সাথে বাড়ি ফিরে যায়। দেবায়ন আর অনুপমার সাথে সেই আগের হৃদ্যতা যেন ধীরে ধীরে কমে এসেছে। কারন জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যায়, হেসে জানায় যে শুধু কাজের চাপে ব্যাস্ত থাকে। শত চেষ্টা করেও শ্রেয়ার পেট থেকে ওরা কেউ কোন কথা বের করতে পারে না। তবে অনুপমা একটা আঁচ করতে পেরেছিল যে হয়ত শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কিছু একটা অভসন্ধি ফাঁদছে।
এদিকে বর্ষা কাল এসে যায়, কিছুদিনের মধ্যে এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ডিপ্লয় করতে আবার শ্রেয়া জার্মানি যাবে এবারে সাথে কয়েক জন টেকনিকাল লোকজন যাবে। শ্রেয়া এই প্রোজেক্ট ডেলিভারি আর জার্মানি যাওয়ার জন্য বেশ ব্যাস্ত।
সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, বিশেষ কোন কাজ না থাকায় কিছুতেই একা মন বসাতে পারে না। একবার পায়েলকে ফোন করেছিল কিন্তু সে মনীষার সাথে ব্যাস্ত। দেবায়নের ফোন কয়েকবার বেজে গেল উঠাল না দেখে চিন্তায় পরে গেল। এই দুপুরে কি হল ছেলেটার। দেবায়নের কেবিনে ঢুকে দেখে যে কোন টেলিফোন বিল নিয়ে সে ব্যাস্ত। জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন বলে যে এইগুলো শ্রেয়ার গত চার মাসের মোবাইল বিল আর তার কল রেকর্ডস।
একটা চেয়ার টেনে পাশে বসে বিল দেখতে দেখতে প্রশ্ন করে করে, “কিছু পেলি নাকি?”
দেবায়ন উত্তরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে ঠিক আঁচ করতে পারছি না। বড় ঘাঘু মাল দুইজনে।”
অনুপমা বলে, “কেন? কি পেয়েছিস?”
দেবায়ন ওকে বিলগুলো হাতে ধরিয়ে বলে, “দ্যাখ একবার। প্রায় প্রত্যেক দিন রাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কথা হয়, একনয় শ্রেয়া কল করে অথবা ইন্দ্রনীল কল করে। কিন্তু কোন কল দশ থেকে বারো সেকেন্ডের বেশি নয়। যদি ওদের মধ্যে কথাবার্তা, আলাপ আলোচনা, প্রেম প্রীতি চলে তাহলে এই কল গুলো নিশ্চয় দশ বারো সেকেন্ডের হবে না, তার চেয়ে বেশি হবে।”
অনুপমা খানিক মাথা চুলকে বলে, “ওরে পাগল, এখন ইন্টারনেটের যুগ। ওরা ফোনে কেন কথা বলতে যাবে? স্কাইপ আছে, সোজাসুজি ভিডিও চ্যাট করতে পারে ওরা।”
দেবায়ন বলে, “হুম, সেটা পারে। তুই কি শ্রেয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিস এই বিষয়ে?”
অনুপমা বলে, “আমি আর করিনি তবে পায়েল কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি। এখন সত্যি মনে হচ্ছে ওকে কোম্পানিতে না নিলেই হয়ত ভালো হত। এত গভীর জলের মাছ যে হাতের নাগালেই আসছে না। তবে এইটুকু বলতে পারি যে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কোন অভসন্ধি আঁটছে। কি করা যায় বলতো?”
দেবায়ন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “বড় চিন্তায় পরে গেলাম। শ্রেয়াকে নাড়ানো মহা মুশকিল। ওকে নাড়াতে সাহস পাচ্ছি না কারন ওকে নাড়ালেই রূপক হয়ত ক্ষেপে যেতে পারে। রূপক এই কোম্পানির রুটি জোগাড় করে, দৈনন্দিন টাকা কামায় রূপকের এই ছোটো ছোটো প্রোজেক্ট গুলো। আবার ওইদিকে ইন্দ্রনীলকে ঘাঁটানো বিপ্পজনক। অনিমেশ আঙ্কেলের সাথে মিস্টার হেরজোগের বেশ মেলামেশা। এই দুটো বড় প্রোজেক্ট ওর হাত ধরেই এসেছে, তার ওপরে মিস্টার হেরজোগ আমাদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে টাকা ঢেলেছে।”
খানিকক্ষণ মাথা চুলকে উৎসাহিত হয়ে বলে, “একটা উপায় আছে।”
অনুপমা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে, “কি উপায়?”
দেবায়ন বলে, “শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিতে পারলে কেমন হয়?”
অনুপমা বলে, “সেটা কি ভাবে করতে চাস?”
মাথা চুলকায় দেবায়ন ভেবে উঠতে পারে না কি ভাবে ফাটল ধরাবে, “ইন্দ্রনীল জানে শ্রেয়া রূপকের গার্ল, ফ্রেন্ড সুতরাং সেইখানে গুড়ে বালি। উলটে যদি আমাদের হাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কিছু তথ্য প্রমাণ চলে আসে তাহলে সেই দেখিয়ে রূপকের মনে চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে। আর সত্যি যদি শ্রেয়া রূপককে এখন ভালোবাসে, তাহলে এই সব ছেড়ে দেবে, আর রূপকের কাছে ফিরে আসবে। আর যদি ওর মাথায় অন্য কিছু চলে, তাহলে অনায়াসে আমরা রূপককে দিয়ে শ্রেয়াকে আমাদের কোম্পানি থেকে বের করে দিতে পারি।”
অনুপমা একটু চিন্তা করে। ওর মনে পড়ে যায় জলপাইগুড়ির রাতের কথা। রূপক ওকে জানিয়েছিল যে শ্রেয়া ইদানিং খুব টাকা নিয়ে মেতে উঠেছে। হতে পারে যে ইন্দ্রনীল ওকে কোন স্বপ্ন দেখিয়েছে আর শ্রেয়া সেই আলেয়া ধরার জন্য ছুটছে ইন্দ্রনীলের পেছনে। এবারে যদি নিজেই ওদের সাথে জার্মানি যায় তাহলে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের ওপরে নজর রাখতে পারবে।
অনুপমা ভেবে চিনতে বলে, “এবারে ভাবছি আমি ওদের সাথে জার্মানি যাবো।”
দেবায়ন হেসে বলে, “তুই কি গোয়েন্দা হতে চাস নাকি?”
অনুপমা চোখ টিপে বলে, “তাহলে কস্তূরীকে ডেকে নিলে হয়।”
দেবায়ন বলে, “ধুর শালা এখানে শুধু খরচ হয়ে যাবে, আসলে কোন আয় হবে না তাই কস্তূরীকে কাজে নামাতে চাই না। আমি ভাবছি যেমন চলছে চলতে দে, যেদিন গলা পর্যন্ত জল উঠে আসবে সেদিন ওকে চেপে ধরব। এখন পর্যন্ত সবকিছু শান্তিতে চলছে। এবার থেকে পায়েলকে বলেদিস ওর পেছনে যেন বেশি মাথা না ঘামায়।”
এমন সময়ে পায়েল এসে ওদের ঘরে ঢোকে। অফিস জয়েন করার পর থেকে পায়েল অনেক বদলে গেছে, অনেক হাসিখুশি খোলামেলা হয়ে উঠেছে। দেবায়ন দুষ্টু চাহনি নিয়ে পায়েলের দিকে তাকায়। পায়েল একটা হাঁটু পর্যন্ত নীল জিন্স আর চাপা শার্ট পড়ে এসেছিল, ওর নধর গোলগাল পাছার দুলুনি দেখেই দেবায়ন অস্থির হয়ে যায়।
দেবায়নের চোখের চাহনি দেখে অনুপমা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলে, “তুই আর শুধরাবি না তাই না?”
দেবায়ন একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, “আমার শালা কি রোজ খেজুরের রস চুষছে?”
পায়েল লাজুক হেসে অনুপমার দিকে তাকায়।
অনুপমা ওকে একটা চাঁটি মেরে বলে, “আমার ভাইয়ের বৌ, একদম ওর দিকে নজর দিবি না!”
দেবায়ন প্যান্টের সামনের দিকটা একটু ঠিকঠাক করে বলে, “তোর ভাইয়ের বউকে আমি লাগাতেই পারি আর ভাইয়ের বৌ হবার আগেই লাগিয়েছি যখন আমার শালী ছিল।”
পায়েল একটু লজ্জা পেয়ে রেগে গিয়ে দেবায়ন কে দুম দুম বেশ কয়েকটা কিল মেরে বলে, “এই তুই একটু থামবি? আমার কিছু কথা ছিল।”
দেবায়ন চোখ টিপে মিচকি হেসে বলে, “তুই আমার কোলে বসলে আমি তোর সব কথা শুনতে রাজি।”
অনুপমা ওর কান ধরে টেনে বলে, “শয়তান এটা অফিস। এটা আমার তোর বাড়ি নয়। কোলে বসাবে? ছেলের শখ দেখো!”
পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই এই ছ্যাঁচোর টার কাছে আসতে গেলি কেন? চল আমার কেবিনে।” দেবায়নের কান টেনে বলে, “এই শালা কুত্তাটা একা একা ডান্ডা নাড়াক। কাল রাতে আর আমার কাছে আসতে চেয়েছিস কি কেটে হাতে ধরিয়ে দেব।”
যেহেতু দুই বাড়ির মধ্যে সবার জানা, তাই মাঝে মাঝে অনুপমা দেবায়নের বাড়িতে রাতে থেকে যায়, না হলে দেবায়ন অনুপমার বাড়িতে রাতে থেকে যায়।
দেবায়ন দুই সুন্দরী রমণীর হাতে নির্যাতিত হয়ে হেসে বলে, “তোদের মার খেতেও মিষ্টি লাগে। আচ্ছা বল কি বলার জন্যে এসেছিলিস?”
পায়েল ঠোঁট বেঁকিয়ে মিচকি এসে বলে, “আমি তোর কাছে আসিনি আমি অনুর খোঁজে এসেছিলাম।”
অনুপমা পায়েল কে নিয়ে দেবায়নের রুম থেকে বেড়িয়ে ওকে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে?”
পায়েল খিল খিল করে হেসে বলে, “বিশেষ কিছু হয়নি রে। তোর ভাইয়ের সাথে একটা পার্টিতে যাওয়ার আছে তাই বলছিলাম যে কখন বাড়ি যাবি?”
অনুপমা বড় বড় চোখ করে বলে, “হুম, সেখান থেকে কখন ফেরা হচ্ছে?”
পায়েল ফিসফিস করে বলে, “কাকিমাকে সামলে নিস হয়ত রাতে নাও ফিরতে পারি।”
অনুপমা ওর গাল টিপে হেসে বলে, “ওরে শয়তান, মেয়ে কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”
পায়েল বলে, “বেশি দুরে নয়, ওর এক বন্ধুর জন্মদিন তাই যাচ্ছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে, “জন্মদিন কি রকম জন্মদিন যে রাত কাটাতে হবে?”
পায়েল বুঝে যায় অনুপমার প্রশ্নের মানে তাই মিচকি হেসে বলে, “তুই পাগল নাকি? অইসব কিছুই হবে না অন্তত তোর ভাই আমার সাথে থাকলে কারুর জো নেই আমার ধারে কাছে আসে।”
অনুপমা ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “ওকে যাচ্ছিস যা, পারলে রাতেই ফিরে আসিস নাহলে একটা ফোন করে দিস।”
পায়েল বলে, “ঠিক আছে ফোন করে দেব।”
পায়েল ওর সিটে চলে যায় এমন সময়ে শ্রেয়া নিজের কেবিন থেকে বেড়িয়ে ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দেয়, “একটু শুনিস তো?”