03-10-2020, 01:06 AM
পঞ্চবিংশ পর্ব (#05)
বেশ কিছুক্ষণ জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকার পরে, রূপক ওকে ছেড়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পরে। অনুপমা হাত পা ছড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ চরম আবেগের অনুভূতি গায়ে মাখিয়ে নেয়, তারপরে গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে রূপকের দিকে মুখ করে শোয়। দুইজনে পাশাপাশি শুয়ে পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। অনুপমার সারা চেহারায় চরম পরিতৃপ্তির আলোক ছটা, সেই সাথে রূপকের ঠোঁটে পরিতৃপ্তির হাসি। অনুপমা জানু মাঝে, যোনির মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দুই নরনারীর মিশ্রিত তরল একটু বের করে রূপকের গালে লাগিয়ে দেয়।
রূপক হেসে উঠে বলে, “এই কুত্তা কি করছিস?”
অনুপমা খিল খিল করে হেসে বলে, “কেন রে কুত্তা, আমার ওইখানে চাটার সময়ে বেশ মন দিয়ে চাটছিলিস, এখন কেন ঘেন্না লাগছে রে তোর? আমাকে একা পেয়ে শেষ পর্যন্ত করেই ফেললি বল।”
অনুপমাকে জড়িয়ে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “উম্মম্ম ডারলিং, এই রকম একটা সেক্সি বান্ধবী থাকলে কেউ কি আর দুরে থাকতে পারে? অনেকদিনের ইচ্ছে তোকে ভালো করে আদর করার, সেটা অবশেষে পূরণ হল।”
তারপরে চোখ বড়বড় করে বলে, “একবার দেবায়নকে ফোন করলে কেমন হয়।”
ভুরু কুঁচকে হেসে ফেলে অনুপমা, “ধ্যাত, কেউ জানে না আমরা জলপাইগুড়ি এসেছি। আর পুচ্চু যদি জানতে পারে যে তুই আমাকে একা পেয়ে লাগিয়ে দিয়েছিস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবে না।”
রূপক ওর দিকে হাত বাড়িয়ে অনুপমার হাত মুঠির মধ্যে নিয়ে বলে, “জার্মানিতে দেবু আমার বউকে লাগাতে পারে তাহলে আমি কেন ওর বউকে লাগাতে পারবো না? ওর সামনেই তোকে একদিন আবার লাগাবো দেখিস।”
অনুপমা ওর গালের ওপরে চাটি মেরে বলে, “চার জন একসাথে থাকলে ভালো। নে, এবারে একটু রেস্ট নে। কাল ভোরের ফ্লাইটে বাড়ি ফিরতে হবে। আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখিস, আমরা জলপাইগুড়ি কি কারনে এসেছি কেউ যেন ঘুণাক্ষরে না জানতে পারে।”
রূপক প্রশ্ন করে, “দেবায়ন কেও বলবি না?”
অনুপমা হেসে বলে, “সময় মতন ওকে আমি সব জানাবো চিন্তা নেই।”
রূপক অনুপমার গাল টিপে হেসে বলে, “উম্মম সোনামণি, তুই আমার খেয়াল রাখিস আমি তোর খেয়াল রাখব।”
জেনে বুঝেও অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুই আমার কি খেয়াল রাখবি?”
রূপক ওর জানুমাঝে হাত দিয়ে যোনি বেদি চেপে ধরে বলে, “আমি তোর এখানের চুলকানির খেয়াল রাখব আর তুই আমার টাকার দিকে একটু খেয়াল রাখিস।”
অনুপমা তির্যক হেসে জবাব দেয়, “আমার চুলকানির কথা অত ভাবতে হবে না তোকে, তবে তোর এপ্রেসালের বিষয়ে দেবায়নের সাথে আলোচনা করব।”
শুধু মাত্র শারীরিক সুখের তাড়নায় অত সহজে বয়ে যাওয়ার পাত্রী নয় অনুপমা। শুধু মাত্র শারীরিক আনন্দের জন্য রূপকের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল, এই শরীরকে ব্যাবসা করতে নয়। অনুপমা পাশ ফিরে চুপচাপ চোখ বুজে পড়ে থাকে। সেই রাতে ওর আর ঘুম আসে না। কাম তাড়নায় সত্যি সত্যি রূপকের সাথে সঙ্গম শেষ পর্যন্ত করেই ফেলল। বুকের মধ্যে জেগে ওঠে কুণ্ঠাবোধ।
মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে পাশ ফিরে দেখে, রূপক বেহুঁশের মতন পড়ে রয়েছে। চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে নিজেকে আয়নায় দেখে। দুই ফর্সা স্তনের ওপরে আঙ্গুলের দাগ, বৃন্ত দুটোর চারপাশে দাঁতের আলতো দাগ। যোনি কেশ ওদের শরীরের মিশ্রিত তরলে ভিজে চ্যাটপ্যাট করছে। পেটের ওপরে নাভির চারপাশে খুব চুমু খেয়েছিল, সেই খানে একটু লালচে ছোপ পড়েছে। দুই মসৃণ ফর্সা জানুর ভেতরের ত্বকে নখের আলতো দাগ কাটা। সব মিলিয়ে অনুপমা নিজের শরীর দেখে চমকে যায়। ফোন নিয়ে বাথরুমের মেঝেতে বসে পড়ে, ফোন করবে কি করবে না ভাবতে থাকে। এই সময়ে কি ফোন পাবে ওর? বড় দোটানায় পড়ে যায় ওর হৃদয়।
পরের দিন ভোরের ফ্লাইট ধরে কোলকাতা ফিরে আসে দুইজনে। দুই বাড়ির কেউ জানতে পারল না জলপাইগুড়ি যাত্রার আসল কারন। পরের দিন থেকে অফিসে, অনুপমা আর রূপক স্বাভাবিক ভাবেই পরস্পরের সাথে ব্যাবহার করে। ওরা দুইজনে ছাড়া বাকি কেউ জানতে পারল না ওদের মধ্যে কি কি হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একা পেলে রূপক একটু রসিকতা করতে চেষ্টা করে সেই রাতের বিষয়ে, কিন্তু অনুপমা সেইসব আলোচনা এড়িয়ে যায়।
দুই দিন পরে জার্মানি থেকে দেবায়ন ফিরে আসে। ফিরে আসার পরে শ্রেয়ার চাল চলন বদলে যায়, পরপর দুটো ডিলে সাক্ষর করার পরে নিজেকে অনেক বড় মনে করে নেয়। দেবায়ন মনে মনে হাসে কিন্তু কিছু বলে না। ওদের ফিরে আসার কিছুদিন পরে, জার্মানি থেকে দুই এয়ারলাইন্স কোম্পানির আইটি টিম ওদের অফিস, কাজ, ইত্যাদি তদারকি করতে ভারতে আসে। সুপর্ণা ম্যাডাম আর তাঁর টিম কাজের মধ্যে ডুবে যায়। আগামী তিন মাসের মধ্যে এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ডেলিভারি করতে হবে আর বছরের শেষে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট সারা অফিসে সাজসাজ রব। কিছু দিনের মধ্যেই অফিস রণক্ষেত্রে পরিনত হয়, প্রোজেক্ট ডেলিভারি যেন ওদের কাছে এক যুদ্ধের সাজ। অফিসের বেশির ভাগ লোক ওই দুই প্রোজেক্টে নিযুক্ত করা হয়।
যতবার ভাবে দেবায়নকে সব খুলে বলে দেবে, কিন্তু বলতে গেলেই মনে হত যেন ওর গলা শুকিয়ে এসেছে তাই সেই রাতের কথা দেবায়নকে আর জানানো হয়নি। এইবারে দেবায়ন অনুপমা আর রূপকের হাবভাবে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে না। রূপক মাঝে মাঝে অনুপমার দিকে হাতছানি দেয় কিন্তু অনুপমা সেই হাতছানিতে অত সহজে বয়ে যাওয়ার পাত্রী নয়। রূপক বুঝতে পারে, যে অনুপমা একজন লেলিহান অগ্নিশিখা, দূর থেকে আগুনের তাপ পোহানো ভালো, কাছে এলে হাত পুড়ে যেতে বেশি দেরি লাগবে না।
একদিন দুপুরে লাঞ্চের সময়ে ক্যাফেটেরিয়াতে দেবায়নকে না দেখতে পেয়ে ওর কেবিনে যায় অনুপমা। দরজা ঠেলে ঢুকে দেখে যে দেবায়ন কারুর সাথে ফোনে কথা বলছে। কথা বার্তা শুনে মনে হল ওর বাবার সাথেই কথা বলছে। অনুপমাকে দেখে ফোনে একটা কথা বলে রেখে দেয় দেবায়ন। দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে, চোখ লাল, মাথার চুল উস্কোখুস্কো, চেহারা দেখে মনে হল বেশ চিন্তামগ্ন।
অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে রে? কোন অসুবিধে?”
দেবায়ন ওর প্রশ্ন এড়িয়ে হেসে জবাব দেয়, “তারপরে তোর কি খবর? কেমন চলছে কাজ?”
ওর প্রশ্ন শুনে অনুপমা অবাক হয়ে যায়। রোজ দিন ছেলেটা অফিসে আসে তাও কি জানেনা যে অফিসে কি হচ্ছে? ওকে পালটে প্রশ্ন করে, “তুই নিজেই দেখতে পারিস তো কাজের কি হচ্ছে। তুই দেখিস না কেন?”
দেবায়ন বলে, “আরে বাবা, তুই আছিস দেখার জন্য সেই জন্য ওইদিকে আর মাথা ঘামাতে চাই না।”
অনুপমা বলে, “কি ব্যাপার বলতো, একটু ঝেড়ে কাশ। ওই রকম ঝড়ো কাকের মত কেন দেখাচ্ছে তোকে?”
দেবায়ন বড় শ্বাস নিয়ে জবাব দেয়, “আমাকে কিছুদিন পরে বের হতে হবে। পুনে, উটি আর ব্যাঙ্গালোর। গতবার কাকুর যাওয়াতে ঠিক ভাবে হোটেলের ডিল হয়নি।”
অনুপমার মন কিছুতেই মানতে চায় না, এই কয়েক সপ্তাহ হল জার্মানি থেকে ফিরেছে। আসার পর থেকে ঠিক ভাবে দুইজনে একসাথে বসতে পারেনি, একটু আদর খেতে পারেনি, বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি। এর মধ্যেই আবার যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় অনুপমার। দুই চোখ ছলছল করে ওঠে এক অব্যাক্ত বেদনায়। সত্যি, টাকা উপার্জনের দৌড়ে নিজের প্রেম প্রীতি ভালোবাসা হারাতে বসেছে।
অনুপমা উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি যেতে দেব না এবারে।”
ছলছল চোখ দেখে দেবায়নের মন গলে যায়। দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলে, “কি করতে পারি সোনা, বল। এই তিনটে হোটেলের ডিল না করতে পারলে খুব মুশকিলে পড়ে যাবো।”
অনুপমার ঠোঁট বেদনায় কেঁপে ওঠে, “আমি তোকে সত্যি নরকে নামিয়ে এনেছি।”
দেবায়ন ওর কপালে ঠোঁট চেপে আদর করে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “এই রকম কেন বলছিস তুই? তুই আমার সর্বস্ব, তুই আমার প্রাণশক্তি। তুই কাঁদলে আমি যাই কোথায় বলতে পারিস?”
অনুপমা বলে, “নিজের প্রাণশক্তি বলতে ছারিস না আর মাসের মধ্যে কুড়ি দিন আমার কাছেই থাকিস না। একবার ভেবে দেখিস না আমি কি ভাবে থাকি। এই কয়দিনে কয়বার আমাকে একটু আদর করেছিস? তোকে বলার জন্য কত কথা বুকের মধ্যে জমে আছে, কিন্তু তোর কাছে সেই সব শোনার মতন সময় নেই।”
কথা গুলো শুনে দেবায়নের হৃদয় ভেঙ্গে আসে, ওর গালে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, “ঠিক আছে পুচ্চিসোনা, কাঁদিস না। এইবারে তোকে সাথে নিয়েই যাবো। এই ডিল হয়ে গেলে অনেকদিনের জন্য বেড়ান বন্ধ।”
অনুপমা ওর জল ভরা চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “সত্যি বলছিস না আমার মন রাখার জন্য বলছিস যে আমাকে নিয়ে যাবি।”
দেবায়ন ওর মুখখানি আঁজলা করে ধরে চোখের মাঝে চোখ রেখে বলে, “সত্যি বলছি, এই বারে তোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। তবে আমাকে একটা কথা দিতে হবে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাস না যেন।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “মানে?”
দেবায়ন জবাব দেয়, “অনেক কিছু বিষয়ে সোজা আঙ্গুলে ঘী ওঠে না, সেই সব জায়গায় আঙুল বেঁকিয়ে ঘী তুলতে হয়।”
অনুপমা ওর হাতখানি বুকের কাছে চেপে ধরে, “আচ্ছা বাবা প্রমিস করছি যে তোর কাজের মধ্যে বাধা দেব না।”
সাথে যাবে এই শুনে অনুপমা বেশ খুশি হয়। দেবায়ন জানায় যে ওরা আগে মুম্বাই যাবে তারপরে পুনে। মুম্বাই যাওয়ার কথা শুনে মনের মধ্যে কৌতূহল জাগে। দেবায়ন হেসে জানিয়ে দেয় যে অচিরে ধীরে ধীরে সব কৌতুহল দুরে চলে যাবে।
পরের সপ্তাহে রবিবারে দুইজনে বেড়িয়ে পড়ে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে। চঞ্চল বুকের রক্ত, প্লেনের চাপার পর থেকেই আরও চঞ্চল হয়ে যায়। অদম্য জিজ্ঞাসা আর দমিয়ে রাখতে পারে না অনুপমা।
শেষ পর্যন্ত দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “একটু ঝেড়ে কাশ না রে বাবা। কেন আমরা প্রথমে মুম্বাই যাচ্ছি।”
দেবায়ন জবাব দেয়, “অনেক মার প্যাঁচ আছে রে পুচ্চি। এই হোটেলের ডিল তিনটে এত সহজে হবে না।”
অনুপমা বলে, “কিসের মার প্যাঁচ?”
দেবায়ন বলে, “গত বার কাকু গেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। আমি অবশ্য অনেক আগে থেকেই একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর লাগিয়েছিলাম ওই তিন হোটেলের মালিকের পেছনে। কিন্তু কাকু যখন গেছলেন ততদিনে ওর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি।”
অনুপমা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর, সেটা কেন? কি জানতে চাস তুই ওদের ব্যাপারে?”
দেবায়ন হেসে জানায়, “কে কখন কোথায় থাকে, কার সাথে শোয়, কার সাথে খায়, কোথায় যায় সব নাড়ি নক্ষত্রের খবর জানা দরকার।”
অনুপমা বলে, “কেন?”
দেবায়ন, “এই সব বড় হোটেলের মালিকেরা কখন ধোয়া তুলসি পাতা হয়না। ওদের ফাক খুঁজে আড় পেতে কোপ না মারলে ওরা মচকাবে না। আর যদি না মচকায় তাহলে আমার কাজ হাসিল হবে না।”
একটু দোনামনা করে তারপরে বলে, “অনেক সময়ে নারীর শরীর কাজে আসে না, সেইখানে মাথা খাটাতে হয়, আঙুল বেঁকাতে হয় আর ওদের কোণঠাসা করতে হয়।”
অনুপমা বলে, “মানে?”
দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “মুম্বাই পৌঁছালেই সব জানতে পারবি।”
দুপুরের পরেই ওরা দুইজনে মুম্বাই পৌঁছে যায়। মুম্বাইয়ের এক নামকরা পাঁচতারা হোটেলে ওদের সুইট ভাড়া করা ছিল। রুমের মধ্যে ঢুকেই অনুপমাকে দুই হাতে জড়িয়ে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। কোলকাতায় থাকলে, বাড়িতে অথবা অনুপমার বাড়িতে ঠিক একা পাওয়া যায় না। সেই বিরহ বেদনা দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে নিঙরে নিতে চায়। দুইজনে একসাথে স্নান সেরে, ধবধবে নরম বিছানায় গা ভাসিয়ে দেয়। প্রেমের রসে পরস্পরকে ভিজিয়ে দেয়।
দুপুরের খাওয়া সেরে সারাদিন দুইজনে গাড়িতে চড়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। মুম্বাইয়ের সব থেকে আকর্ষণীয়, জুহু বিচে বিকেলে এসে বসে। সূর্য বেশ কিছু আগেই পশ্চিমে ঢলে গেছে, পৌনে আটটা বাজে তাও আকাশে কমলা রঙের মাখামাখি। পেছনে সারি সারি নিওন বাতির মেলা, সারি সারি গাড়ি ধেয়ে চলেছে নিজেদের গন্তব্য স্থলে। গ্রীষ্মের গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সমুদ্রতটে প্রচুর লোকের ভিড়। জুহু বিচ যেন একটা মেলা। শিয়ালদা স্টেসানের চেয়ে মনে হয় তিন গুন লোক জড়ো হয়েছে বিচে। ওদের গাড়ি বিচের কিছু দুরেই দাঁড়ানো।
দেবায়নের ডান হাত নিজের দুই হাতে আঁকড়ে ধরে শরীরের সাথে শরীর মিশিয়ে হাঁটে। দুইজনে খালি পায়ে অনেকক্ষণ নোনা জলে ভেজা বালির ওপর দিয়ে পা ভিজিয়ে হাঁটে। এক যুগ পরে দুইজনের মনে হয় যেন পরস্পরকে আবার ফিরে পেয়েছে। আঙ্গুলের সাথে আঙুল পেঁচিয়ে যায়, অনুপমার বুক ভরে যায় শান্তিতে। দেবায়ন হাত ছাড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। চোখের তারা পরস্পরের মণির ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়। হটাত করে দুইজনের মনে হয় যেন চারপাশের কোলাহল কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। এই কমলা রঙের বিস্তীর্ণ আকাশের নিচে, এই নির্জন সমুদ্র সৈকতে ওরা দুই নরনারী ছাড়া আর কেউ নেই। অনুপমার হাত উঠে আসে দেবায়নের বুকের কাছে। দুই হাতে অনুপমার কোমর ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়। ঠোঁট নামিয়ে আনে ওই লাল গোলাপের পাপড়ির মতন নরম দুই কোয়ার ওপরে। ভালোবাসার চুম্বনে ঠোঁট মিলিয়ে হারিয়ে যায় দুইজনে। অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ, সময়ের চক্র যেন দুইজনের চারদিকে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। চোখ বুজে আসে আবেগে, সেই চুম্বনে কোন রুদ্রতা নেই, নেই কামনার লেলিহান অগ্নি শিখা, আছে শুধু হারিয়ে যাওয়ার ভালোবাসা।
ঠোঁট ছেড়ে দেবায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি সুরে প্রশ্ন করে, “আমার পাশে সবসময়ে এই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি তুই?”
দেবায়ন ওর মুখ আঁজলা করে ধরে নিয়ে বলে, “কেন থাকব না, নিশ্চয় থাকব।”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে হাত রেখে, ওর তালুর উষ্ণতা গালে মাখিয়ে বলে, “তুই এই যে ঘুরে বেড়াস, মাঝে মাঝে ভয় হয়। এত কিছু পেয়ে যাওয়ার পরে হটাত যদি……”
কথাটা শেষ করতে পারে না অনুপমা, বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে ওর, চোখের কোনে জল চিকচিক করে ওঠে।
দেবায়ন বুঝতে পারে ওর অব্যাক্ত ক্রন্দনের কারন। অনুপমার মাথা বুকের কাছে চেপে ধরে বলে, “আরে পাগলি তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোকে ছেড়ে যেতে পারি। তুই আছিস বলেই আমি আছি। এই যে দেবায়ন তোর সামনে দাঁড়িয়ে এটা তোর জন্য দাঁড়িয়ে। তোকে যদি না পেতাম তাহলে আমি এতক্ষণে কোলকাতার কোন এক এঁদো কোম্পানিতে কেরানীর চাকরি করতাম। এই যে আজকে আমার মা আমাকে এত ভালোবাসে, তোর জন্য ভালোবাসে, নাহলে দিন দিন আমাদের মাঝে ব্যবধান বেড়ে যেত আর একদিন হয়ত দুইজনে দুইদিকে হারিয়ে যেতাম।”
এই এক কথা অনুপমার পক্ষেও প্রযোজ্য। ওর আলিঙ্গনে বদ্ধ যে ছেলেটা, তার জন্য নিজের বাবা মাকে কুড়ি বছর পরে ফিরে পেয়েছে। ওর বাড়িটা এক প্রকার সরাইখানার মতন ছিল, কেউ কারুর খোঁজ খবর বিশেষ রাখত না, সবাই যেন নিজের মধ্যে মত্ত। কোন এক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় দেবায়ন যেন সব কিছু ঠিক করে দিয়েছে। কুড়ি দিন হয়ে গেছে, জলপাইগুড়ির কথা কিছুই জানানো হয়নি, না মনিদিপা সূর্যের কথা, না নিবেদিতা ধৃতিমানের কথা না রূপকের সাথে সেই রাতের কথা। এই কয়দিনে বহুবার চেষ্টা করেছিল দেবায়নকে খুলে বলার, কিন্তু যেই বলতে যায় ওমনি ওর গলা শুকিয়ে আসে, জিব জড়িয়ে আসে। দেবায়ন অনায়াসে যেখানে যা করেছে ঠিক তারপরের দিন ওর কাছে এসে বলেছে। এমন কি মায়ের সাথে সেক্স করার পরেও ওকে এসে বলেছে। সেই কথা জেনে বুক ফেটে গেছিল কিন্তু ভালোবাসায় চিড় ধরেনি। আজ রাতে ওকে মনের কথা খুলে বলতেই হবে না হলে মরমে মরে যাবে অনুপমা।
দেবায়ন ওকে বলে, “চল এবারে রুমে যাই। কিছু কাজ বাকি আছে।”
হোটেলে ঢুকেই রিসেপশনিস্ট জানায় যে এক মহিলা ওদের জন্য কফিশপে অপেক্ষা করছে। মহিলার কথা শুনেই অনুপমার মনে প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ করে মহিলার সাথে দেখা? কেন? দেবায়নের মুখের দিকে তাকাতেই, দেবায়ন মিচকি হেসে ওকে চুপ থাকতে বলে। জানিয়ে দেয় যে অচিরে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কফিশপে ঢুকে এদিক ওদিক দেখতেই একটা পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের সুন্দরী মেয়ে ওদের দেখে হাত নাড়ায়। মেয়েটির পরনে গাঢ় নীল রঙের হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট, ছোটো হাতার গোলাপি টপ। টপের সামনের দিক বেশ উঁচু হয়ে ওদের দিকে উঁচিয়ে, মনে হল যেন দুই ভারী স্তন এখুনি পরিধান ফাটিয়ে বেড়িয়ে পড়বে। দুই পায়ে হাল্কা কালো রঙের ফিনফিনে স্টকিংস। মেয়েটির ত্বক উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের হলেও দেহের গঠন বেশ নধর আর লাস্যময়ী। প্রকৃতি দেবতা বেশ ভালো ভাবেই সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়েছে মেয়েটাকে ওদের সামনে। ঠিক যেই অঙ্গে যত টুকু প্রয়োজন তাঁর থেকে কিছুটা অধিক দিয়েই পাঠিয়েছে যাতে শরীর নিয়ে ভালোই খেলতে পারে। মেয়েটা অনুপমার মতন অত লম্বা না হলেও ভালো উচ্চতা।
মেয়েটার ঠোঁটের হাসি দেখেই অনুপমার মাথা গরম হয়ে যায়। ও না আসলে কি দেবায়ন এর সাথে রাত কাটাত? দেবায়ন এখন কি চায়? এই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে ত্রিকোণ যৌনখেলায় মেতে উঠতে চায় নাকি? ও ভেবে এসেছিল, দেবায়নের সাথে নিভৃতে একাকী প্রেম করবে আর বুকের মাঝে জমে থাকা কথা গুলো উজাগর করবে।
বেশ কিছুক্ষণ জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকার পরে, রূপক ওকে ছেড়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পরে। অনুপমা হাত পা ছড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ চরম আবেগের অনুভূতি গায়ে মাখিয়ে নেয়, তারপরে গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে রূপকের দিকে মুখ করে শোয়। দুইজনে পাশাপাশি শুয়ে পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে। অনুপমার সারা চেহারায় চরম পরিতৃপ্তির আলোক ছটা, সেই সাথে রূপকের ঠোঁটে পরিতৃপ্তির হাসি। অনুপমা জানু মাঝে, যোনির মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দুই নরনারীর মিশ্রিত তরল একটু বের করে রূপকের গালে লাগিয়ে দেয়।
রূপক হেসে উঠে বলে, “এই কুত্তা কি করছিস?”
অনুপমা খিল খিল করে হেসে বলে, “কেন রে কুত্তা, আমার ওইখানে চাটার সময়ে বেশ মন দিয়ে চাটছিলিস, এখন কেন ঘেন্না লাগছে রে তোর? আমাকে একা পেয়ে শেষ পর্যন্ত করেই ফেললি বল।”
অনুপমাকে জড়িয়ে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “উম্মম্ম ডারলিং, এই রকম একটা সেক্সি বান্ধবী থাকলে কেউ কি আর দুরে থাকতে পারে? অনেকদিনের ইচ্ছে তোকে ভালো করে আদর করার, সেটা অবশেষে পূরণ হল।”
তারপরে চোখ বড়বড় করে বলে, “একবার দেবায়নকে ফোন করলে কেমন হয়।”
ভুরু কুঁচকে হেসে ফেলে অনুপমা, “ধ্যাত, কেউ জানে না আমরা জলপাইগুড়ি এসেছি। আর পুচ্চু যদি জানতে পারে যে তুই আমাকে একা পেয়ে লাগিয়ে দিয়েছিস তাহলে তোকে আর আস্ত রাখবে না।”
রূপক ওর দিকে হাত বাড়িয়ে অনুপমার হাত মুঠির মধ্যে নিয়ে বলে, “জার্মানিতে দেবু আমার বউকে লাগাতে পারে তাহলে আমি কেন ওর বউকে লাগাতে পারবো না? ওর সামনেই তোকে একদিন আবার লাগাবো দেখিস।”
অনুপমা ওর গালের ওপরে চাটি মেরে বলে, “চার জন একসাথে থাকলে ভালো। নে, এবারে একটু রেস্ট নে। কাল ভোরের ফ্লাইটে বাড়ি ফিরতে হবে। আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখিস, আমরা জলপাইগুড়ি কি কারনে এসেছি কেউ যেন ঘুণাক্ষরে না জানতে পারে।”
রূপক প্রশ্ন করে, “দেবায়ন কেও বলবি না?”
অনুপমা হেসে বলে, “সময় মতন ওকে আমি সব জানাবো চিন্তা নেই।”
রূপক অনুপমার গাল টিপে হেসে বলে, “উম্মম সোনামণি, তুই আমার খেয়াল রাখিস আমি তোর খেয়াল রাখব।”
জেনে বুঝেও অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুই আমার কি খেয়াল রাখবি?”
রূপক ওর জানুমাঝে হাত দিয়ে যোনি বেদি চেপে ধরে বলে, “আমি তোর এখানের চুলকানির খেয়াল রাখব আর তুই আমার টাকার দিকে একটু খেয়াল রাখিস।”
অনুপমা তির্যক হেসে জবাব দেয়, “আমার চুলকানির কথা অত ভাবতে হবে না তোকে, তবে তোর এপ্রেসালের বিষয়ে দেবায়নের সাথে আলোচনা করব।”
শুধু মাত্র শারীরিক সুখের তাড়নায় অত সহজে বয়ে যাওয়ার পাত্রী নয় অনুপমা। শুধু মাত্র শারীরিক আনন্দের জন্য রূপকের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল, এই শরীরকে ব্যাবসা করতে নয়। অনুপমা পাশ ফিরে চুপচাপ চোখ বুজে পড়ে থাকে। সেই রাতে ওর আর ঘুম আসে না। কাম তাড়নায় সত্যি সত্যি রূপকের সাথে সঙ্গম শেষ পর্যন্ত করেই ফেলল। বুকের মধ্যে জেগে ওঠে কুণ্ঠাবোধ।
মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে উঠে পাশ ফিরে দেখে, রূপক বেহুঁশের মতন পড়ে রয়েছে। চুপচাপ বাথরুমে ঢুকে নিজেকে আয়নায় দেখে। দুই ফর্সা স্তনের ওপরে আঙ্গুলের দাগ, বৃন্ত দুটোর চারপাশে দাঁতের আলতো দাগ। যোনি কেশ ওদের শরীরের মিশ্রিত তরলে ভিজে চ্যাটপ্যাট করছে। পেটের ওপরে নাভির চারপাশে খুব চুমু খেয়েছিল, সেই খানে একটু লালচে ছোপ পড়েছে। দুই মসৃণ ফর্সা জানুর ভেতরের ত্বকে নখের আলতো দাগ কাটা। সব মিলিয়ে অনুপমা নিজের শরীর দেখে চমকে যায়। ফোন নিয়ে বাথরুমের মেঝেতে বসে পড়ে, ফোন করবে কি করবে না ভাবতে থাকে। এই সময়ে কি ফোন পাবে ওর? বড় দোটানায় পড়ে যায় ওর হৃদয়।
পরের দিন ভোরের ফ্লাইট ধরে কোলকাতা ফিরে আসে দুইজনে। দুই বাড়ির কেউ জানতে পারল না জলপাইগুড়ি যাত্রার আসল কারন। পরের দিন থেকে অফিসে, অনুপমা আর রূপক স্বাভাবিক ভাবেই পরস্পরের সাথে ব্যাবহার করে। ওরা দুইজনে ছাড়া বাকি কেউ জানতে পারল না ওদের মধ্যে কি কি হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে একা পেলে রূপক একটু রসিকতা করতে চেষ্টা করে সেই রাতের বিষয়ে, কিন্তু অনুপমা সেইসব আলোচনা এড়িয়ে যায়।
দুই দিন পরে জার্মানি থেকে দেবায়ন ফিরে আসে। ফিরে আসার পরে শ্রেয়ার চাল চলন বদলে যায়, পরপর দুটো ডিলে সাক্ষর করার পরে নিজেকে অনেক বড় মনে করে নেয়। দেবায়ন মনে মনে হাসে কিন্তু কিছু বলে না। ওদের ফিরে আসার কিছুদিন পরে, জার্মানি থেকে দুই এয়ারলাইন্স কোম্পানির আইটি টিম ওদের অফিস, কাজ, ইত্যাদি তদারকি করতে ভারতে আসে। সুপর্ণা ম্যাডাম আর তাঁর টিম কাজের মধ্যে ডুবে যায়। আগামী তিন মাসের মধ্যে এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ডেলিভারি করতে হবে আর বছরের শেষে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট সারা অফিসে সাজসাজ রব। কিছু দিনের মধ্যেই অফিস রণক্ষেত্রে পরিনত হয়, প্রোজেক্ট ডেলিভারি যেন ওদের কাছে এক যুদ্ধের সাজ। অফিসের বেশির ভাগ লোক ওই দুই প্রোজেক্টে নিযুক্ত করা হয়।
যতবার ভাবে দেবায়নকে সব খুলে বলে দেবে, কিন্তু বলতে গেলেই মনে হত যেন ওর গলা শুকিয়ে এসেছে তাই সেই রাতের কথা দেবায়নকে আর জানানো হয়নি। এইবারে দেবায়ন অনুপমা আর রূপকের হাবভাবে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে না। রূপক মাঝে মাঝে অনুপমার দিকে হাতছানি দেয় কিন্তু অনুপমা সেই হাতছানিতে অত সহজে বয়ে যাওয়ার পাত্রী নয়। রূপক বুঝতে পারে, যে অনুপমা একজন লেলিহান অগ্নিশিখা, দূর থেকে আগুনের তাপ পোহানো ভালো, কাছে এলে হাত পুড়ে যেতে বেশি দেরি লাগবে না।
একদিন দুপুরে লাঞ্চের সময়ে ক্যাফেটেরিয়াতে দেবায়নকে না দেখতে পেয়ে ওর কেবিনে যায় অনুপমা। দরজা ঠেলে ঢুকে দেখে যে দেবায়ন কারুর সাথে ফোনে কথা বলছে। কথা বার্তা শুনে মনে হল ওর বাবার সাথেই কথা বলছে। অনুপমাকে দেখে ফোনে একটা কথা বলে রেখে দেয় দেবায়ন। দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে, চোখ লাল, মাথার চুল উস্কোখুস্কো, চেহারা দেখে মনে হল বেশ চিন্তামগ্ন।
অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে রে? কোন অসুবিধে?”
দেবায়ন ওর প্রশ্ন এড়িয়ে হেসে জবাব দেয়, “তারপরে তোর কি খবর? কেমন চলছে কাজ?”
ওর প্রশ্ন শুনে অনুপমা অবাক হয়ে যায়। রোজ দিন ছেলেটা অফিসে আসে তাও কি জানেনা যে অফিসে কি হচ্ছে? ওকে পালটে প্রশ্ন করে, “তুই নিজেই দেখতে পারিস তো কাজের কি হচ্ছে। তুই দেখিস না কেন?”
দেবায়ন বলে, “আরে বাবা, তুই আছিস দেখার জন্য সেই জন্য ওইদিকে আর মাথা ঘামাতে চাই না।”
অনুপমা বলে, “কি ব্যাপার বলতো, একটু ঝেড়ে কাশ। ওই রকম ঝড়ো কাকের মত কেন দেখাচ্ছে তোকে?”
দেবায়ন বড় শ্বাস নিয়ে জবাব দেয়, “আমাকে কিছুদিন পরে বের হতে হবে। পুনে, উটি আর ব্যাঙ্গালোর। গতবার কাকুর যাওয়াতে ঠিক ভাবে হোটেলের ডিল হয়নি।”
অনুপমার মন কিছুতেই মানতে চায় না, এই কয়েক সপ্তাহ হল জার্মানি থেকে ফিরেছে। আসার পর থেকে ঠিক ভাবে দুইজনে একসাথে বসতে পারেনি, একটু আদর খেতে পারেনি, বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি। এর মধ্যেই আবার যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় অনুপমার। দুই চোখ ছলছল করে ওঠে এক অব্যাক্ত বেদনায়। সত্যি, টাকা উপার্জনের দৌড়ে নিজের প্রেম প্রীতি ভালোবাসা হারাতে বসেছে।
অনুপমা উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি যেতে দেব না এবারে।”
ছলছল চোখ দেখে দেবায়নের মন গলে যায়। দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বলে, “কি করতে পারি সোনা, বল। এই তিনটে হোটেলের ডিল না করতে পারলে খুব মুশকিলে পড়ে যাবো।”
অনুপমার ঠোঁট বেদনায় কেঁপে ওঠে, “আমি তোকে সত্যি নরকে নামিয়ে এনেছি।”
দেবায়ন ওর কপালে ঠোঁট চেপে আদর করে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “এই রকম কেন বলছিস তুই? তুই আমার সর্বস্ব, তুই আমার প্রাণশক্তি। তুই কাঁদলে আমি যাই কোথায় বলতে পারিস?”
অনুপমা বলে, “নিজের প্রাণশক্তি বলতে ছারিস না আর মাসের মধ্যে কুড়ি দিন আমার কাছেই থাকিস না। একবার ভেবে দেখিস না আমি কি ভাবে থাকি। এই কয়দিনে কয়বার আমাকে একটু আদর করেছিস? তোকে বলার জন্য কত কথা বুকের মধ্যে জমে আছে, কিন্তু তোর কাছে সেই সব শোনার মতন সময় নেই।”
কথা গুলো শুনে দেবায়নের হৃদয় ভেঙ্গে আসে, ওর গালে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, “ঠিক আছে পুচ্চিসোনা, কাঁদিস না। এইবারে তোকে সাথে নিয়েই যাবো। এই ডিল হয়ে গেলে অনেকদিনের জন্য বেড়ান বন্ধ।”
অনুপমা ওর জল ভরা চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “সত্যি বলছিস না আমার মন রাখার জন্য বলছিস যে আমাকে নিয়ে যাবি।”
দেবায়ন ওর মুখখানি আঁজলা করে ধরে চোখের মাঝে চোখ রেখে বলে, “সত্যি বলছি, এই বারে তোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। তবে আমাকে একটা কথা দিতে হবে আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটাস না যেন।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “মানে?”
দেবায়ন জবাব দেয়, “অনেক কিছু বিষয়ে সোজা আঙ্গুলে ঘী ওঠে না, সেই সব জায়গায় আঙুল বেঁকিয়ে ঘী তুলতে হয়।”
অনুপমা ওর হাতখানি বুকের কাছে চেপে ধরে, “আচ্ছা বাবা প্রমিস করছি যে তোর কাজের মধ্যে বাধা দেব না।”
সাথে যাবে এই শুনে অনুপমা বেশ খুশি হয়। দেবায়ন জানায় যে ওরা আগে মুম্বাই যাবে তারপরে পুনে। মুম্বাই যাওয়ার কথা শুনে মনের মধ্যে কৌতূহল জাগে। দেবায়ন হেসে জানিয়ে দেয় যে অচিরে ধীরে ধীরে সব কৌতুহল দুরে চলে যাবে।
পরের সপ্তাহে রবিবারে দুইজনে বেড়িয়ে পড়ে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে। চঞ্চল বুকের রক্ত, প্লেনের চাপার পর থেকেই আরও চঞ্চল হয়ে যায়। অদম্য জিজ্ঞাসা আর দমিয়ে রাখতে পারে না অনুপমা।
শেষ পর্যন্ত দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “একটু ঝেড়ে কাশ না রে বাবা। কেন আমরা প্রথমে মুম্বাই যাচ্ছি।”
দেবায়ন জবাব দেয়, “অনেক মার প্যাঁচ আছে রে পুচ্চি। এই হোটেলের ডিল তিনটে এত সহজে হবে না।”
অনুপমা বলে, “কিসের মার প্যাঁচ?”
দেবায়ন বলে, “গত বার কাকু গেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। আমি অবশ্য অনেক আগে থেকেই একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর লাগিয়েছিলাম ওই তিন হোটেলের মালিকের পেছনে। কিন্তু কাকু যখন গেছলেন ততদিনে ওর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি।”
অনুপমা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর, সেটা কেন? কি জানতে চাস তুই ওদের ব্যাপারে?”
দেবায়ন হেসে জানায়, “কে কখন কোথায় থাকে, কার সাথে শোয়, কার সাথে খায়, কোথায় যায় সব নাড়ি নক্ষত্রের খবর জানা দরকার।”
অনুপমা বলে, “কেন?”
দেবায়ন, “এই সব বড় হোটেলের মালিকেরা কখন ধোয়া তুলসি পাতা হয়না। ওদের ফাক খুঁজে আড় পেতে কোপ না মারলে ওরা মচকাবে না। আর যদি না মচকায় তাহলে আমার কাজ হাসিল হবে না।”
একটু দোনামনা করে তারপরে বলে, “অনেক সময়ে নারীর শরীর কাজে আসে না, সেইখানে মাথা খাটাতে হয়, আঙুল বেঁকাতে হয় আর ওদের কোণঠাসা করতে হয়।”
অনুপমা বলে, “মানে?”
দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “মুম্বাই পৌঁছালেই সব জানতে পারবি।”
দুপুরের পরেই ওরা দুইজনে মুম্বাই পৌঁছে যায়। মুম্বাইয়ের এক নামকরা পাঁচতারা হোটেলে ওদের সুইট ভাড়া করা ছিল। রুমের মধ্যে ঢুকেই অনুপমাকে দুই হাতে জড়িয়ে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। কোলকাতায় থাকলে, বাড়িতে অথবা অনুপমার বাড়িতে ঠিক একা পাওয়া যায় না। সেই বিরহ বেদনা দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে নিঙরে নিতে চায়। দুইজনে একসাথে স্নান সেরে, ধবধবে নরম বিছানায় গা ভাসিয়ে দেয়। প্রেমের রসে পরস্পরকে ভিজিয়ে দেয়।
দুপুরের খাওয়া সেরে সারাদিন দুইজনে গাড়িতে চড়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। মুম্বাইয়ের সব থেকে আকর্ষণীয়, জুহু বিচে বিকেলে এসে বসে। সূর্য বেশ কিছু আগেই পশ্চিমে ঢলে গেছে, পৌনে আটটা বাজে তাও আকাশে কমলা রঙের মাখামাখি। পেছনে সারি সারি নিওন বাতির মেলা, সারি সারি গাড়ি ধেয়ে চলেছে নিজেদের গন্তব্য স্থলে। গ্রীষ্মের গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সমুদ্রতটে প্রচুর লোকের ভিড়। জুহু বিচ যেন একটা মেলা। শিয়ালদা স্টেসানের চেয়ে মনে হয় তিন গুন লোক জড়ো হয়েছে বিচে। ওদের গাড়ি বিচের কিছু দুরেই দাঁড়ানো।
দেবায়নের ডান হাত নিজের দুই হাতে আঁকড়ে ধরে শরীরের সাথে শরীর মিশিয়ে হাঁটে। দুইজনে খালি পায়ে অনেকক্ষণ নোনা জলে ভেজা বালির ওপর দিয়ে পা ভিজিয়ে হাঁটে। এক যুগ পরে দুইজনের মনে হয় যেন পরস্পরকে আবার ফিরে পেয়েছে। আঙ্গুলের সাথে আঙুল পেঁচিয়ে যায়, অনুপমার বুক ভরে যায় শান্তিতে। দেবায়ন হাত ছাড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। চোখের তারা পরস্পরের মণির ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়। হটাত করে দুইজনের মনে হয় যেন চারপাশের কোলাহল কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। এই কমলা রঙের বিস্তীর্ণ আকাশের নিচে, এই নির্জন সমুদ্র সৈকতে ওরা দুই নরনারী ছাড়া আর কেউ নেই। অনুপমার হাত উঠে আসে দেবায়নের বুকের কাছে। দুই হাতে অনুপমার কোমর ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়। ঠোঁট নামিয়ে আনে ওই লাল গোলাপের পাপড়ির মতন নরম দুই কোয়ার ওপরে। ভালোবাসার চুম্বনে ঠোঁট মিলিয়ে হারিয়ে যায় দুইজনে। অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ, সময়ের চক্র যেন দুইজনের চারদিকে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। চোখ বুজে আসে আবেগে, সেই চুম্বনে কোন রুদ্রতা নেই, নেই কামনার লেলিহান অগ্নি শিখা, আছে শুধু হারিয়ে যাওয়ার ভালোবাসা।
ঠোঁট ছেড়ে দেবায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি সুরে প্রশ্ন করে, “আমার পাশে সবসময়ে এই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি তুই?”
দেবায়ন ওর মুখ আঁজলা করে ধরে নিয়ে বলে, “কেন থাকব না, নিশ্চয় থাকব।”
অনুপমা ওর হাতের ওপরে হাত রেখে, ওর তালুর উষ্ণতা গালে মাখিয়ে বলে, “তুই এই যে ঘুরে বেড়াস, মাঝে মাঝে ভয় হয়। এত কিছু পেয়ে যাওয়ার পরে হটাত যদি……”
কথাটা শেষ করতে পারে না অনুপমা, বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে ওর, চোখের কোনে জল চিকচিক করে ওঠে।
দেবায়ন বুঝতে পারে ওর অব্যাক্ত ক্রন্দনের কারন। অনুপমার মাথা বুকের কাছে চেপে ধরে বলে, “আরে পাগলি তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোকে ছেড়ে যেতে পারি। তুই আছিস বলেই আমি আছি। এই যে দেবায়ন তোর সামনে দাঁড়িয়ে এটা তোর জন্য দাঁড়িয়ে। তোকে যদি না পেতাম তাহলে আমি এতক্ষণে কোলকাতার কোন এক এঁদো কোম্পানিতে কেরানীর চাকরি করতাম। এই যে আজকে আমার মা আমাকে এত ভালোবাসে, তোর জন্য ভালোবাসে, নাহলে দিন দিন আমাদের মাঝে ব্যবধান বেড়ে যেত আর একদিন হয়ত দুইজনে দুইদিকে হারিয়ে যেতাম।”
এই এক কথা অনুপমার পক্ষেও প্রযোজ্য। ওর আলিঙ্গনে বদ্ধ যে ছেলেটা, তার জন্য নিজের বাবা মাকে কুড়ি বছর পরে ফিরে পেয়েছে। ওর বাড়িটা এক প্রকার সরাইখানার মতন ছিল, কেউ কারুর খোঁজ খবর বিশেষ রাখত না, সবাই যেন নিজের মধ্যে মত্ত। কোন এক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় দেবায়ন যেন সব কিছু ঠিক করে দিয়েছে। কুড়ি দিন হয়ে গেছে, জলপাইগুড়ির কথা কিছুই জানানো হয়নি, না মনিদিপা সূর্যের কথা, না নিবেদিতা ধৃতিমানের কথা না রূপকের সাথে সেই রাতের কথা। এই কয়দিনে বহুবার চেষ্টা করেছিল দেবায়নকে খুলে বলার, কিন্তু যেই বলতে যায় ওমনি ওর গলা শুকিয়ে আসে, জিব জড়িয়ে আসে। দেবায়ন অনায়াসে যেখানে যা করেছে ঠিক তারপরের দিন ওর কাছে এসে বলেছে। এমন কি মায়ের সাথে সেক্স করার পরেও ওকে এসে বলেছে। সেই কথা জেনে বুক ফেটে গেছিল কিন্তু ভালোবাসায় চিড় ধরেনি। আজ রাতে ওকে মনের কথা খুলে বলতেই হবে না হলে মরমে মরে যাবে অনুপমা।
দেবায়ন ওকে বলে, “চল এবারে রুমে যাই। কিছু কাজ বাকি আছে।”
হোটেলে ঢুকেই রিসেপশনিস্ট জানায় যে এক মহিলা ওদের জন্য কফিশপে অপেক্ষা করছে। মহিলার কথা শুনেই অনুপমার মনে প্রশ্ন জাগে, হঠাৎ করে মহিলার সাথে দেখা? কেন? দেবায়নের মুখের দিকে তাকাতেই, দেবায়ন মিচকি হেসে ওকে চুপ থাকতে বলে। জানিয়ে দেয় যে অচিরে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কফিশপে ঢুকে এদিক ওদিক দেখতেই একটা পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের সুন্দরী মেয়ে ওদের দেখে হাত নাড়ায়। মেয়েটির পরনে গাঢ় নীল রঙের হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট, ছোটো হাতার গোলাপি টপ। টপের সামনের দিক বেশ উঁচু হয়ে ওদের দিকে উঁচিয়ে, মনে হল যেন দুই ভারী স্তন এখুনি পরিধান ফাটিয়ে বেড়িয়ে পড়বে। দুই পায়ে হাল্কা কালো রঙের ফিনফিনে স্টকিংস। মেয়েটির ত্বক উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের হলেও দেহের গঠন বেশ নধর আর লাস্যময়ী। প্রকৃতি দেবতা বেশ ভালো ভাবেই সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়েছে মেয়েটাকে ওদের সামনে। ঠিক যেই অঙ্গে যত টুকু প্রয়োজন তাঁর থেকে কিছুটা অধিক দিয়েই পাঠিয়েছে যাতে শরীর নিয়ে ভালোই খেলতে পারে। মেয়েটা অনুপমার মতন অত লম্বা না হলেও ভালো উচ্চতা।
মেয়েটার ঠোঁটের হাসি দেখেই অনুপমার মাথা গরম হয়ে যায়। ও না আসলে কি দেবায়ন এর সাথে রাত কাটাত? দেবায়ন এখন কি চায়? এই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে ত্রিকোণ যৌনখেলায় মেতে উঠতে চায় নাকি? ও ভেবে এসেছিল, দেবায়নের সাথে নিভৃতে একাকী প্রেম করবে আর বুকের মাঝে জমে থাকা কথা গুলো উজাগর করবে।