02-10-2020, 10:14 PM
পঞ্চবিংশ পর্ব (#03)
রূপক খেতে ভুলে গিয়ে অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। হতবাক অনুপমার দুই চোখে যেন আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। রূপক ওর কাঁধ আলতো ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি রে কি হয়েছে? কাকে দেখছিস?”
অনুপমার চোখ অনুসরণ করে দেখে ওদের অদুরে এক দম্পতি বসে।
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রূপকের হাতের ছোঁয়ায় সম্বিৎ ফিরে আসার পরে ওকে বলে, “আমি যদি হঠাৎ করে কিছু করে বসি তাহলে কি তুই আমার পেছনে দাঁড়াবি?”
রূপক হাঁ করে চেয়ে প্রশ্ন করে, “মানে?”
কি বলবে অনুপমা, ওদের পরিচয় কি ভাবে দেবে রূপকের কাছে? একদিনের ব্যবধানে ওর জীবন যেন ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছে। একে গ্রীষ্ম কাল তায় গত রাত থেকেই শরীরের রক্ত গরম হয়ে আছে। এমত অবস্থায় চোখের সামনে বিশেষ করে ভদ্রলোককে দেখে মাথা ঠিক করে উঠতে পারে না। খাওয়া ভুলে হাতের মুঠি শক্ত হয়ে যায় অনুপমার।
গলা নামিয়ে রূপককে ওই দুই নর নারীর পরিচয় দেয়, “ওই যে ভদ্রলোক বসে আছেন, ওনার নাম মিস্টার ধৃতিমান দেবনাথ। মামনির আগের অফিসের দিল্লী অফিসের কলিগ। আমার সব থেকে অবাক লাগছে এই ভেবে যে এই ভদ্রলোক কবে কোলকাতা এসেছে আর কেনই বা মামনির সাথে দেখা করেনি?”
রূপক চেহারায় উৎসুক ভাব ফুটে ওঠে, “মিস্টার দেবনাথ কেন কাকিমাকে ফোন করবে?”
অনুপমা আসল কথা এড়িয়ে উত্তরে বলে, “মামনির অতি পরিচিত কলিগ, আমরা একসাথে মুসৌরি ঘুরতে গিয়েছিলাম।”
রূপক মাথা নাড়ায়, “আচ্ছা এটা ভাববার বিষয়, আর পাশের মহিলা কে?”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “পাশের ভদ্রমহিলা, মিস নিবেদিতা চৌধুরী, বাবার খুব পরিচিত বান্ধবী। কোলকাতায় একটা কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে তাঁর।”
রূপক বিশেষ কিছু বুঝতে পারল না এদের একসাথে দেখে অনুপমা কেন এত হতবাক হয়ে গেছে, কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে এটা বুঝতে পারল যে অনুপমা যা বলেছে তার চেয়ে বেশি কিছু হয়ত জানতে পারবে না। ওকে জিজ্ঞেস করে, “ছাড় ওদের, চল হোটেলে যাই। রাতের কোন ড্রেসপত্র আনা হয় নি। তুই রুমে যা আমি আমার আর তোর জন্য একটা কিছু কিনে নিয়ে আসি। রাতে কি একটু ড্রিঙ্ক করা যেতে পারে?”
অনুপমা ওদের দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে থাকে, রূপকের কথা ওর কানেই ঢোকে না। উলটে রূপককে বলে, “আমি একটু আসছি রে। প্লিস এখানে বস, আর যদি ডাকি, প্লিস তাহলে আসিস।”
রূপক প্রশ্ন করে, “এই দাঁড়া, কোথায় যাচ্ছিস?”
রূপকের কথা শেষ হওয়ার আগেই অনুপমা উঠে ওদের টেবিলের দিকে হাঁটা লাগায়। ওদের সামনে দাঁড়িয়ে কপট মিষ্টি হেসে বলে, “হাই, হোয়াট আ সারপ্রাইস? এই রকম ভাবে আমাদের দেখা হবে আবার ভাবতে পারিনি।”
ধৃতিমান নিবেদিতার পিঠ থেকে হাত নামিয়ে ধড়মড় করে সরে বসে। সামনে অনুপমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে যায় দুইজনেই। নিবেদিতা নিজেকে সামলে নেয়, আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে যে অনুপমার সাথে আর কে আছে। তারপরে স্বাভাবিক স্বরে ওকে প্রশ্ন করে, “তুমি এখানে এই সময়ে? কি ব্যাপার, একা না সাথে কেউ আছে?”
নিবেদিতার প্রশ্ন এড়িয়ে অনুপমা চেয়ার টেনে সামনে বসে ওদেরকে প্রশ্ন করে, “এখানে বসলে আশা করি আপত্তি নেই।” ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “আপনি কবে এলেন দিল্লী থেকে?”
নিবেদিতা ভাবতে পারেনি যে অনুপমা, ধৃতিমানকে চেনে। নিবেদিতা হাজার প্রশ্ন নিয়ে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা তীর্যক হেসে ধৃতিমানকে বলে, “কি হল মিস্টার দেবনাথ? কবে এসেছেন দিল্লী থেকে? মল্লিকা কোথায়, ক্লাস টেনের ফাইনাল হয়ে গেছে? তো কেমন রেজাল্ট হয়েছে?”
অনুপমার কথা শুনে আর নিবেদিতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ফলে ধৃতিমানের কান লাল হয়ে যায়। ধৃতিমান হাসতে চেষ্টা করে কিন্তু ওর হাসি মিলিয়ে যায় নিবেদিতার চাহনি দেখে।
নিবেদিতা, ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি একে চেন? কবে থেকে চেন? কি ভাবে চেন।”
উত্তরের জন্য ধৃতিমানকে হাতড়াতে দেখে তীর্যক ভাবে হেসে ওঠে অনুপমা, “একেবারে তুমি তে পৌঁছে গেছেন দেখছি, মিস্টার দেবনাথ।”
নিবেদিতা হিম শীতল কণ্ঠে অনুপমাকে বলে, “আপনি না তুমি সেটা তোমাকে দেখতে হবে না। তুমি এখানে কি করতে এসেছ?”
অনুপমা ভুরু নাচিয়ে হেসে বলে, “ধরে নেওয়া যাক যে তোমার পেছন পেছন ধাওয়া করে এসেছি।”
নিবেদিতা অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোমার বাবা জানেন তুমি এখানে?”
অনুপমা বলে, “মিস চৌধুরী, আমি কচি খুকি নই যে আমাকে কোথাও যেতে হলে বাবার অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।”
নিবেদিতার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। কোনদিন অনুপমা অথবা পারমিতাকে ঠিক দেখতে পারতো না, তাই কঠিন স্বরে প্রশ্ন করে, “কি চাই তোমার এখানে?”
অনুপমা, ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “নিবেদিতা ম্যাডাম, আমি শুধু মিস্টার দেবনাথের কাছ থেকে কিছু উত্তর চাই।”
নিবেদিতা, ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান হাতের মুঠি শক্ত করে চরম ক্রোধে গজগজ করতে করতে প্রশ্ন করে, “কি উত্তর চাই তোমার?”
অনুপমা শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “মামনি মানে, মিসেস বসাক কি জানেন যে আপনি কোলকাতা এসেছেন?”
ধৃতিমান মাথা নাড়ায়, “না, জানে না।”
অনুপমা সামনের দিকে ঝুঁকে ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “আপনি কবে কোলকাতা এসেছেন?”
ধৃতিমান গর্জে ওঠে, “তুমি কে যে আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো।” রাগে গজগজ করতে করতে ধৃতিমান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, সেই সাথে হতবাক নিবেদিতা উঠে দাঁড়ায়। ধৃতিমান নিবেদিতার উদ্দেশ্যে বলে, “তুমি কি রুমে যাবে না এখানেই থাকবে?”
ধৃতিমানকে এই ভাবে রেগে ফুঁসতে দেখে নিবেদিতা অবাক হয়ে যায়, অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কি করে মিস্টার দেবনাথকে চেন?”
তির্যক হেসে উত্তর দেয় অনুপমা, “তোমার এত কাছের লোক মিস্টার দেবনাথ, যে হাসতে হাসতে খাওয়ার টেবিলে গড়িয়ে পড়ছিলে। আর কাকে চেনে আর কাকে চেনে না সেটা বলেনি তোমাকে? মিস্টার দেবনাথ কে প্রশ্ন করলে আশা করি সব উত্তর পেয়ে যাবে।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরে অনুপমা, ওইখান থেকে সরে যাওয়ার আগে নিবেদিতার উদ্দেশ্যে বলে, “আর হ্যাঁ তোমার ভালোর জন্য বলছি, মিস্টার দেবনাথের সাথে জড়িয়ে পড়ার আগে একটু বাজিয়ে নেবে। কি জানি ভবিষ্যতে কি করে বসে!”
এই কালকের মেয়ে তাকে শেখাচ্ছে কি ভাবে মানুষ চিনতে হয়? নিবেদিতা রক্ত চক্ষু মেলে অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজের টেবিলে ফিরে আসে। পুরোটা সময় রূপক ওদের পর্যবেক্ষণ করছিল, একবার ভেবেছিল কাছে যায় কিন্তু অনুপমার ব্যাক্তিগত মামলায় নিজেকে জড়াতে চায়নি।
অনুপমা কাছে আসতেই রূপক জিজ্ঞেস করে, “কি হল?”
অনুপমা বলে, “চল যাই, ডিনার একপ্রকার হয়ে গেছে। আমি রুমে যাচ্ছি, তুই পারলে প্লিস আমার জন্য একটা ড্রেসিং গাউন অথবা নাইট শার্ট নিয়ে আসিস।”
রূপক আবার জিজ্ঞেস করে, “তোকে দেখে ঠিক সুবিধের মনে হচ্ছে না। কি হয়েছে বলবি ত? এখান থেকে ওদের চেহারা দেখে বুঝতে পারছিলাম যে আবহাওয়া বেশ গরম।”
সত্যি আবহাওয়া বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে নিবেদিতা আর ধৃতিমানকে লক্ষ্য করে, দুই জনের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত কথোপকথন চলছে। রূপকের হাত ধরে অনুপমা বেড়িয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। রূপককে কেনাকাটার জন্য বাজারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। মনের মধ্যে শত চিন্তা ভর করে আসে, বুকের রক্ত আকুলি বিকুলি এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়, এই দুই দিনের মধ্যে কত কিছু ঘটনা ঘটে গেল আর কত কিছুর মধ্যে জড়িয়ে পড়ল। না জড়ালেই পারত কিন্তু তাও জড়িয়েছে নিজেকে। কিঞ্চিত আশঙ্কা মনের মধ্যে ভর করে আসে, কেউ ওর সাথে রাতে কিছু করবে না তো? দেবায়ন না থাকলেও কি হয়েছে, রূপক সাথে আছে তো।
পাশাপাশি দুটো রুম বুক করা হয়েছিল রাতে থাকার জন্য। রূপক মজা করে বলেছিল যে একটা রুম বুক করলেই ভালো। কি কার্ড দিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকে মনে হয় যেন শরীর ছেড়ে দিয়েছে। সারাদিনের ঝামেলা, ক্লেদ, ক্লান্তি ধুয়ে ফেলতে হবে। সেই কোন সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে, তারপরে মনিদিপার বাড়িতে একচোট ঝক্কি ঝামেলা, এই রেস্টুরেন্টে এসেও আরেক ঝামেলা। ঝামেলা যেন অনুপমার সঙ্গী সাথী।
রাতে থাকার জন্য আসেনি, তাই জামা কাপড় বলতে কিছুই নেই সাথে। ল্যাপটপ আনেনি ভেবেছিল রাতের মধ্যে ফিরে যাবে বাড়িতে। এখন কোন বাড়িতে ফোন করা হয়নি, মা মামনি দুইজনেই চিন্তায় থাকবে। একে একে দুই বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে কাজের চাপের জন্য জলপাইগুড়িতে থেকে যেতে হয়েছে। কাজের কথা শুনে কেউ বিশেষ উচ্চবাচ্চা করেনা। ফোনে খবরাখবর নেওয়ার পরে শরীর এলিয়ে দেয় নরম সাদা বিছানার ওপরে।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুম, শরীর অবশ হয়ে আসে ঠাণ্ডায়, একটু ঘুম ঘুম পায়। অনুপমা মাথা ঝাকা দিয়ে উঠে শার্ট আর জিন্স খুলে ফেলে। বাথরুমে ঢুকে পরনের শেষ আচ্ছাদন টুকু খুলে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে। ঠাণ্ডা জলের সাথে সারা দিনের ক্লেদ ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায়। অনেকক্ষণ ধরে স্নান করার পরে বুকের ওপরে তোয়ালে জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ব্যাগে চিরুনি আর সামান্য প্রসাধনির জিনিস আছে তাতে কি আর মিস অনুপমা সেনের মন ভরে? ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে একবার দেখে, ধুপ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। সামনে বিশাল এলসিডি টিভি, কি দেখবে কি দেখবে, এই ভেবে শেষ পর্যন্ত একটা নাম না জানা সাউথ ইন্ডিয়ান চ্যানেল খুলে বসে পরে। ওদের সঙ্গীতের তাল লয় বড় মধুর, বুলি না বুঝুক কিন্তু তাল লয় আর বাজনা শুনে মন ভরায়। ক্লান্তি আর ঠাণ্ডা হাওয়ার আবেশে চোখ বুজে আসে।
এমন সময়ে দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে। আশঙ্কা জেগে ওঠে মনের মধ্যে, একা পেয়ে ধৃতিমান অথবা নিবেদিতা ওর রুমে এলো না ত? ওরা কি এই হোটেলেই উঠেছে, এটা জলপাইগুড়ির সেরা হোটেল, নিবেদিতা এখানে উঠতেই পারে, সেই সাথে ধৃতিমান। একটা ভুল হয়ে গেল যে ডেস্কে জিজ্ঞেস করা হয়নি ওদের ব্যাপারে।
কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে, “কে?”
ওদিকে রূপকের গলার আওয়াজ পেয়ে স্বস্তির শ্বাস নেয়, “ওরে মেয়ে খোল দরজা।”
দরজা খুলে দাঁড়াতেই রূপকের চোখ আটকে যায় অনুপমার নধর কমনীয় দেহপল্লবের ওপরে। বুকের কাছে গিঁট দিয়ে বাঁধা সাদা তোয়ালে নেমে এসেছে ঠিক পাছার নিচ পর্যন্ত। দুই স্তন ফুলে উঠেছে সামনের দিকে, নিচে ব্রা পরা নেই তাই যেন দুই স্তন আরও ঠেলে সামনের দিকে বেড়িয়ে এসেছে। স্নানের পরে চেহারায় এক অন্য ধরনের চমক এসেছে, সারা শরীর চকচক করছে রুমের মৃদু আলোয়। রূপকের সামনে যেন এক জলপরী দাঁড়িয়ে, ওর অদ্ভুত সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় রূপক।
রূপকের চোখের ভাষা পড়ে লজ্জায় মাথা অবনত হয়ে যায় অনুপমার। নিজেকে সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “এই ছেলে কি এনেছিস আমার জন্য?”
রূপক ওকে দেখে চোখ টিপে বলে, “বাল এনেছি। তোকে মাল একদম দারুন দেখাচ্ছে। আমাকে ছাড়াই স্নান সেরে ফেললি?”
অনুপমা ওর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে খুলে দেখে যে রূপক ওর জন্য একটা পাতলা স্লিপ এনেছে আর নিজের জন্য কিছুই আনেনি। অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “কি রে তুই কিছু আনিস নি কেন?”
রূপক রুমের মধ্যে ঢুকে টেবিলের ওপরে হুইস্কির বোতল রেখে বলে, “কি আনব আমার জন্য? আমি এখন ভালো করে স্নান সেরে ন্যাংটো হয়ে বিছানায় পরে থাকব। এই রুমে কেউ কি দেখতে আসছে নাকি আমাকে?”
হেসে ওঠে অনুপমা, ওর হাসির কলতান রুমের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয় আর সেই সাথে রূপকের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে এই সুন্দরীকে আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলার। অনুপমা হেসে বলে, “যা তাহলে নিজের রুমে, গিয়ে যা খুশি করবি কর। নিজের জন্য হুইস্কি আর আমার জন্য কিছু আনিস নি?”
রূপক বলে, “আমি ভাবছিলাম একসাথেই হুইস্কি খাবো।”
অনুপমা বলে, “হুইস্কি! অনেকদিন খাইনি আচ্ছা তাই হবে। তুই তাহলে স্নান সেরে নে আমি ততক্ষণে কিছু কাবাব, সোডা আর বরফের অর্ডার দিয়ে দেই।”
রূপক ওর সামনে এসে, সদ্য স্নাত অনুপমার শরীরের মিষ্টি মাদকতা ঘ্রান নাকে টেনে বলে, “আমি আগেই বলেছিলাম একটা রুম নিতে, তুই শুনলি না।”
অনুপমা ওর গালে আলতো চাপড় মেরে বলে, “ধ্যাত শয়তান ছেলে কোথাকার, যা নিজের রুমে আর স্নান সেরে আয়।”
রূপক ওর কথায় কান না দিয়ে সেখানেই জামা খুলে ফেলে। অনুপমা মানা করার আগেই প্যান্ট খুলে শুধু মাত্র জাঙ্গিয়া পরে বাথরুমে ঢুকে পরে। ওর বলিষ্ঠ শরীর দেখে আর নিজের উন্মিলিত অঙ্গ দেখে বুকের রক্ত চঞ্চল অয়ে ওঠে। আসন্ন রাতের কথা ভাবতেই শরীরে কাঁটা দেয় অনুপমার, সত্যি কি রূপক ওর সাথে কিছু করবে। কে জানে কি হবে রাতে? ভাবতে ভাবতেই তলপেট চিনচিন করে আর জানুসন্ধি শিরশির করে ওঠে, নারী অঙ্গ ভিজে ওঠে সেই সাথে। কিঞ্চিত উত্তেজনার উদয় হয় মনের ভেতরে, বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকায়, বহুদিন আগে একবার সঙ্গমে রত হয়েছিল রূপকের সাথে সেই শেষ, তারপরে দেবায়ন ছাড়া আর কারো লিঙ্গ ওর যোনির ভেতরে প্রবেশ করেনি। এই নিভৃতে অনুপমাকে একা পেয়ে রূপক যদি কিছু করে বসে তাহলে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে সেই সাগরে। চার পাঁচ দিন হয়েছে দেবায়ন গেছে, কিন্তু শরীরের ভেতর যেন খালি হয়ে গেছে।
কিছু পরে স্নান সেরে কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে বেড়িয়ে আসে রূপক। পেশিবহুল ছাতি দেখে অনুপমার চোখ চকচক করে ওঠে। দুইজনের চোখে অব্যাক্ত কামনার আভাস কিন্তু কেউ কোন কথা বলে না। পরস্পরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে দুইজনে। অনুপমা নিজের লজ্জা লুকিয়ে বিছানার ওপরে উঠে সাদা চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়। ওই পেশিবহুল ছাতি আর দুই বাহু যেন ওকে প্রচন্ড ভাবে ডাক দেয়। আপনা থেকেই হাত নেমে আসে তলপেটের ওপরে। রূপকের চোখ থেকেথেকে অনুপমার কমনীয় দেহপল্লবের ওপরে ঘুরে বেড়ায়।
কিছুপরে রুম সার্ভিস এসে গ্লাস, কাবাব ইত্যাদি রেখে চলে যায়। রূপক একটা কাউচ টেনে বিছানার পাশে বসে গ্লাসে ড্রিঙ্ক বানায়। সামনের টিভির দিকে মন দিতে চায় অনুপমা।
“এই নে তোর ড্রিঙ্ক, সোডা দিয়েছি আর দেব কিনা একবার চেক করে নে।”
রূপক ওর দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলে।
রূপকের হাত থেকে গ্লাস নেওয়ার সময়ে দুইজনের আঙুল ঠেকে যায় আর রূপকের মনে হয় যেন বিদুতে ছোঁয়া খেয়েছে। অনুপমা ওর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে চুপচাপ একটা চুমুক দিয়ে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে একদম ঠিক আছে ড্রিঙ্ক। বেশ কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না। এ যেন একটা ঝড়ের পূর্বাভাসের মতন সারা জগত শান্ত হয়ে গেছে। ঝড় ঠিক কোন দিক থেকে ধেয়ে আসবে ঠিক মতন অনুধাবন করতে পারে না অনুপমা। ওকি গলে পড়বে আগে না রূপক ওর দিকে হাত বাড়াবে, সেই চিন্তায় আর সেই উত্তেজনায় দুই জানু গলতে শুরু করে দেয়।
অনেকক্ষণ পরে নীরবতা কাটানোর জন্য রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি দেখছিস রে?”
অনুপমা চ্যানেল বদলে ন্যাট জিও চালিয়ে বলে, “সাউথ ইন্ডিয়ান গান শুনছিলাম। তোর ভালো না লাগলে এই বন বাদাড়, বাঘ সিংহ দেখতে পারি।”
রূপক হেসে বলে, “সামনে এত সুন্দরী একজন বসে থাকতে ওই সব দেখে কি হবে।”
অনুপমার চোখের মণি ওর চোখের ওপরে স্থির হয়ে যায়, “তুই কি সেই জন্য হুইস্কি এনেছিস?”
রূপক হেসে দেয়, “না রে মেয়ে। আমাকে একটুও বিশ্বাস নেই তোর?”
কাকে বিশ্বাস করবে, নিজেই যে ধরা দিতে চাইছে অনুপমা। তাও মনের ভাব লুকিয়ে বলে, “আজকাল শ্রেয়াকে রোজ দিচ্ছিস নাকি? যে এই কয়দিন না পেয়েই তোর থলে ভরে গেছে?”
রূপক মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, “কোথায় আর হয়। আমার চেয়ে ওর যেন কাজ দশ গুন বেড়ে গেছে। শনি রবিবার যদিও বা একটু বেড়াতে বের হই তাহলে সেই বাইরে বাইরে কাটাতে হয়। একটু একা না পেলে কি আর ঠিক জায়গায় মাল ঢালা যায়?”
অনুপমা বলে, “বিয়ে সেরে ফেলতে অসুবিধে কোথায় তোদের?”
রূপক বলে, “কি যে বলসি না তুই। এখন পর্যন্ত ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারলাম না আর বিয়ে।”
অনুপমা বলে, “কিসের অসুবিধে তোদের?”
লজ্জায় পড়ে যায় রূপক, টাকার কথা কি আর মুখ ফুটে বলবে অনুপমার কাছে, “যদি সত্যি ঠিক ভাবে দেখা যায় তাহলে আমরা সবাই তোর তাকায় খাচ্ছি পড়ছি। আমি জানি না কেননা আমি কোনদিন ব্যালেন্স শীট দেখিনা তাও এই এক বছরে এমন কিছু আয় নিশ্চয় হয়নি যে আমাদের আয়ের টাকা আমরা খাচ্ছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “ছাড় না ওই সব কথা। সবাই মিলেই তো কোম্পানি শুরু করেছি, রোদ বৃষ্টি ঝড় বসন্ত, যা হবে একসাথেই কাটাতে হবে তাই না।”
রূপক বলে, “হ্যাঁ সত্যি কথা, কিন্তু শ্রেয়াকে কে বোঝায় সেটা।”
কথা শুনে একটু দ্বিধায় পড়ে যায় অনুপমা, প্রশ্ন করে, “কেন কি হয়েছে শ্রেয়ার?”
রূপক বুঝতে পারে কথাটা বলে ভুল করেছে, ওদের নিজেদের ভেতরের কথা অনুপমাকে জানিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না তাই কথা ঘুরিয়ে বলে, “আচ্ছা তুই বলছিলিস যে গত কোয়ার্টারে আয় বেশি হয়েছে। এয়ার বার্লিন এসে গেছে, আর এবারে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স এসে যাবে। কিন্তু আসল ইউরো কবে থেকে আসবে?”
অনুপমা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “সেই সব ঠিক জানিনা, দেবায়ন জানে আর দীপঙ্করদা জানে। ব্যাবসার ব্যাপারে, টাকা পয়সার ব্যাপারে দীপঙ্করদা আর দেবায়ন আলোচনা করে। আমি শুধু ব্যালেন্স সিট দেখি আর একাউন্ট দেখি, তাতেই আমার শান্তি।”
রূপক হেসে বলে, “ছেলেটা একটা বট গাছ, সবার পেছনে বিশাল খুঁটির মতন সবসময়ে আছে। আচ্ছা এই যে মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যায়, যায় কোথায়?”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “বাবার সাথে এদিক ওদিক কাজের জন্য ঘুরতে যায় এই আর কি।”
অনুপমার ধীরে ধীরে চুমুক দেয়, একটা গ্লাস শেষ করতেই বেশ সময় লেগে যায়। ওদিকে রূপকের দুই গ্লাস শেষ, তৃতীয় গ্লাস শুরু করে বিছানার ওপরে উঠে বসে। অনুপমা একটু সরে তফাতে আধাশোয়া হয়ে ওর দিকে দেখে। রূপক বিছানার পেছন দিকে হেলান দিয়ে সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসে পরে। তোয়ালে ফুঁড়ে ঋজু পুরুষাঙ্গ উপরের দিকে একটা ছোটো পাহাড়ের মতন আকার ধারন করেছে ইতিমধ্যে। সেই ছোটো পাহাড়ের দিকে চোখ পড়তেই ঠোঁট চেপে ধরে অনুপমা, জানু ঘষে নিজের তলপেটের শিরশিরানি দমন করতে চেষ্টা চালায়। সুরার নেশা রক্তে লেগে কামনার আগুন ধীরে ধীরে জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।
রূপক ওর সারা অঙ্গে একবার চোখ বুলিয়ে চোখ টিপে বলে, “কি রে গরম হয়ে গেলি নাকি?”
অনুপমা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “তুই শুতে যাবি না?”
রূপক বলে, “হ্যাঁ যাবো এই গ্লাস শেষ করে নেই তারপরে। তুই আর নিবি না?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় এই একটাই ওর শেষ। ক্লান্তির পরে ঠাণ্ডা জলে স্নান, তারপরে মদের নেশা, ওর শরীর অবশ হয়ে এসেছে ইতিমধ্যে। চোখের সামনে রুপকের ঋজু কাঠামো, চওড়া ছাতি আর পায়ের মাঝে তোয়ালের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষাঙ্গের দেখা পেয়ে আরও যেন অবশ হয়ে যায় ওর শরীর। স্তনের বৃন্ত দুটো ফুলে উঠেছে তোয়ালের নিচে, দুই পায়ের মাঝে কেমন যেন সুড়সুড়ি করছে।
রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে ভাবছি একটা নতুন কিছু করব, মানে এই ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কিছু।”
অনুপমা বলে, “কি প্লান আছে?”
রূপক বলে, “কিছু সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। জানি না কতটা কি আসবে, কিন্তু নতুন কিছু না হলে সেরকম কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে না।”
অনুপমা বলে, “ঠিক আছে, একটা রোডম্যাপ তৈরি কর। দেবায়ন এলে, পরের বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করা যাবে।”
রূপক ওর পাশে সরে এসে বলে, “হ্যাঁ রে তুই কিন্তু বলেছিলিস যে আমাদের শেয়ার বাড়িয়ে দিবি, সেটা মনে আছে তো?”
অনুপমা বলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, সব মনে আছে। এক বছর হলো না, আর এখুনি শেয়ার নিয়ে পড়ে আছিস।”
নেশা ঘোরে রূপক শেষ পর্যন্ত বলে ফেলে, “শ্রেয়া জানিস, ইদানীং খুব টাকা টাকা নিয়ে মেতে উঠেছে।”
অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে চোখের প্রশ্ন করে। উত্তরে রূপক বলে, “জানিস তো যে শুরু থেকেই বারো পারসেন্টে রাজি ছিল না। অনেক বলে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলাম। গতবার ফ্রাংকফুর্ট থেকে আসার পরে কাজ শুরু করে নিজে, তারপর থেকে আমার কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করেছে, দেবায়ন কে বলে শেয়ার বাড়ানোর জন্য। কি করি বলতো?”
অনুপমা ওকে বুঝিয়ে বলে, “দ্যাখ, রূপক, তোদের কাছে কোম্পানির অবস্থা অজানা নেই। পঞ্চাশজন কর্মীর মাইনে দিতে মাসে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা লাগে, তার ওপরে অফিসের ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, লাঞ্চের বিল, সব মিলিয়ে প্রতি মাসে পঞ্চাশ লাখ টাকা জলের মতন বেড়িয়ে যায়। আসে কত? কোন মাসে সাত লাখ এলো কি এলো না, শুধু মাত্র লাস্ট কোয়ার্টারে বিশ লাখ এসেছিল। এই কোয়ার্টারে খরচ বেশি। দুই মাসের ব্যাবধানে চারজন লোক জার্মানি গেছে, ওখানে থেকেছে, ওদের খরচ। কোম্পানি শুরু করেছিলাম কুড়ি কোটি দিয়ে, সেই টাকা দিনে দিনে শেষ হয়ে আসছে। একটা মোটা টাকা তুলে রাখা হয়েছিল ভবিষ্যতের জন্য কিন্তু দুই তিন মাস পরে সেই টাকায় হাত দিতে হবে, না হলে মাইনে দিতে পারব না।”
রূপক চিন্তায় পড়ে যায় ওর কথা শুনে, তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর মাথায় খুব টেনশান তাই না?”
অনুপমা চোখ বুজে গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে বলে, “অনেক টেন্সান, একবছরের আগেই বারো কোটি টাকা উধাও হয়ে গেল আর সেখানে আয় হল মোটে তিন কোটি, নেট প্রফিট কিছু নেই। সবাই ভাবে দেবায়ন খালি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর মাস শেষ হলে টাকা নেয়। আসলে ওই টাকার খোঁজে ঘুরে বেড়ায় বাবার সাথে, ও যদি বসে যায় তাহলে কাউকে মাইনে পেতে হবে না। এত গুলো লোক আমাদের মুখ চেয়ে বসে, মাঝে মাঝে এই সব চিন্তা করলে রাতে ঘুম আসেনা।”
দেবায়নের কথা আর কোম্পানির কথা বলতে বলতে মন আনমনা হয়ে যায় আর সেই সাথে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে। গ্লাস নামিয়ে রেখে আড়ামোড়া ভেঙ্গে অনুপমা বলে, “আমার না খুব ক্লান্তি লাগছে।”
রূপক খেতে ভুলে গিয়ে অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। হতবাক অনুপমার দুই চোখে যেন আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। রূপক ওর কাঁধ আলতো ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি রে কি হয়েছে? কাকে দেখছিস?”
অনুপমার চোখ অনুসরণ করে দেখে ওদের অদুরে এক দম্পতি বসে।
অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। রূপকের হাতের ছোঁয়ায় সম্বিৎ ফিরে আসার পরে ওকে বলে, “আমি যদি হঠাৎ করে কিছু করে বসি তাহলে কি তুই আমার পেছনে দাঁড়াবি?”
রূপক হাঁ করে চেয়ে প্রশ্ন করে, “মানে?”
কি বলবে অনুপমা, ওদের পরিচয় কি ভাবে দেবে রূপকের কাছে? একদিনের ব্যবধানে ওর জীবন যেন ঘটনাবহুল হয়ে উঠেছে। একে গ্রীষ্ম কাল তায় গত রাত থেকেই শরীরের রক্ত গরম হয়ে আছে। এমত অবস্থায় চোখের সামনে বিশেষ করে ভদ্রলোককে দেখে মাথা ঠিক করে উঠতে পারে না। খাওয়া ভুলে হাতের মুঠি শক্ত হয়ে যায় অনুপমার।
গলা নামিয়ে রূপককে ওই দুই নর নারীর পরিচয় দেয়, “ওই যে ভদ্রলোক বসে আছেন, ওনার নাম মিস্টার ধৃতিমান দেবনাথ। মামনির আগের অফিসের দিল্লী অফিসের কলিগ। আমার সব থেকে অবাক লাগছে এই ভেবে যে এই ভদ্রলোক কবে কোলকাতা এসেছে আর কেনই বা মামনির সাথে দেখা করেনি?”
রূপক চেহারায় উৎসুক ভাব ফুটে ওঠে, “মিস্টার দেবনাথ কেন কাকিমাকে ফোন করবে?”
অনুপমা আসল কথা এড়িয়ে উত্তরে বলে, “মামনির অতি পরিচিত কলিগ, আমরা একসাথে মুসৌরি ঘুরতে গিয়েছিলাম।”
রূপক মাথা নাড়ায়, “আচ্ছা এটা ভাববার বিষয়, আর পাশের মহিলা কে?”
অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “পাশের ভদ্রমহিলা, মিস নিবেদিতা চৌধুরী, বাবার খুব পরিচিত বান্ধবী। কোলকাতায় একটা কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে তাঁর।”
রূপক বিশেষ কিছু বুঝতে পারল না এদের একসাথে দেখে অনুপমা কেন এত হতবাক হয়ে গেছে, কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে এটা বুঝতে পারল যে অনুপমা যা বলেছে তার চেয়ে বেশি কিছু হয়ত জানতে পারবে না। ওকে জিজ্ঞেস করে, “ছাড় ওদের, চল হোটেলে যাই। রাতের কোন ড্রেসপত্র আনা হয় নি। তুই রুমে যা আমি আমার আর তোর জন্য একটা কিছু কিনে নিয়ে আসি। রাতে কি একটু ড্রিঙ্ক করা যেতে পারে?”
অনুপমা ওদের দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে থাকে, রূপকের কথা ওর কানেই ঢোকে না। উলটে রূপককে বলে, “আমি একটু আসছি রে। প্লিস এখানে বস, আর যদি ডাকি, প্লিস তাহলে আসিস।”
রূপক প্রশ্ন করে, “এই দাঁড়া, কোথায় যাচ্ছিস?”
রূপকের কথা শেষ হওয়ার আগেই অনুপমা উঠে ওদের টেবিলের দিকে হাঁটা লাগায়। ওদের সামনে দাঁড়িয়ে কপট মিষ্টি হেসে বলে, “হাই, হোয়াট আ সারপ্রাইস? এই রকম ভাবে আমাদের দেখা হবে আবার ভাবতে পারিনি।”
ধৃতিমান নিবেদিতার পিঠ থেকে হাত নামিয়ে ধড়মড় করে সরে বসে। সামনে অনুপমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে যায় দুইজনেই। নিবেদিতা নিজেকে সামলে নেয়, আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে যে অনুপমার সাথে আর কে আছে। তারপরে স্বাভাবিক স্বরে ওকে প্রশ্ন করে, “তুমি এখানে এই সময়ে? কি ব্যাপার, একা না সাথে কেউ আছে?”
নিবেদিতার প্রশ্ন এড়িয়ে অনুপমা চেয়ার টেনে সামনে বসে ওদেরকে প্রশ্ন করে, “এখানে বসলে আশা করি আপত্তি নেই।” ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “আপনি কবে এলেন দিল্লী থেকে?”
নিবেদিতা ভাবতে পারেনি যে অনুপমা, ধৃতিমানকে চেনে। নিবেদিতা হাজার প্রশ্ন নিয়ে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা তীর্যক হেসে ধৃতিমানকে বলে, “কি হল মিস্টার দেবনাথ? কবে এসেছেন দিল্লী থেকে? মল্লিকা কোথায়, ক্লাস টেনের ফাইনাল হয়ে গেছে? তো কেমন রেজাল্ট হয়েছে?”
অনুপমার কথা শুনে আর নিবেদিতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ফলে ধৃতিমানের কান লাল হয়ে যায়। ধৃতিমান হাসতে চেষ্টা করে কিন্তু ওর হাসি মিলিয়ে যায় নিবেদিতার চাহনি দেখে।
নিবেদিতা, ধৃতিমানকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি একে চেন? কবে থেকে চেন? কি ভাবে চেন।”
উত্তরের জন্য ধৃতিমানকে হাতড়াতে দেখে তীর্যক ভাবে হেসে ওঠে অনুপমা, “একেবারে তুমি তে পৌঁছে গেছেন দেখছি, মিস্টার দেবনাথ।”
নিবেদিতা হিম শীতল কণ্ঠে অনুপমাকে বলে, “আপনি না তুমি সেটা তোমাকে দেখতে হবে না। তুমি এখানে কি করতে এসেছ?”
অনুপমা ভুরু নাচিয়ে হেসে বলে, “ধরে নেওয়া যাক যে তোমার পেছন পেছন ধাওয়া করে এসেছি।”
নিবেদিতা অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোমার বাবা জানেন তুমি এখানে?”
অনুপমা বলে, “মিস চৌধুরী, আমি কচি খুকি নই যে আমাকে কোথাও যেতে হলে বাবার অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।”
নিবেদিতার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। কোনদিন অনুপমা অথবা পারমিতাকে ঠিক দেখতে পারতো না, তাই কঠিন স্বরে প্রশ্ন করে, “কি চাই তোমার এখানে?”
অনুপমা, ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “নিবেদিতা ম্যাডাম, আমি শুধু মিস্টার দেবনাথের কাছ থেকে কিছু উত্তর চাই।”
নিবেদিতা, ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান হাতের মুঠি শক্ত করে চরম ক্রোধে গজগজ করতে করতে প্রশ্ন করে, “কি উত্তর চাই তোমার?”
অনুপমা শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “মামনি মানে, মিসেস বসাক কি জানেন যে আপনি কোলকাতা এসেছেন?”
ধৃতিমান মাথা নাড়ায়, “না, জানে না।”
অনুপমা সামনের দিকে ঝুঁকে ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “আপনি কবে কোলকাতা এসেছেন?”
ধৃতিমান গর্জে ওঠে, “তুমি কে যে আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো।” রাগে গজগজ করতে করতে ধৃতিমান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, সেই সাথে হতবাক নিবেদিতা উঠে দাঁড়ায়। ধৃতিমান নিবেদিতার উদ্দেশ্যে বলে, “তুমি কি রুমে যাবে না এখানেই থাকবে?”
ধৃতিমানকে এই ভাবে রেগে ফুঁসতে দেখে নিবেদিতা অবাক হয়ে যায়, অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কি করে মিস্টার দেবনাথকে চেন?”
তির্যক হেসে উত্তর দেয় অনুপমা, “তোমার এত কাছের লোক মিস্টার দেবনাথ, যে হাসতে হাসতে খাওয়ার টেবিলে গড়িয়ে পড়ছিলে। আর কাকে চেনে আর কাকে চেনে না সেটা বলেনি তোমাকে? মিস্টার দেবনাথ কে প্রশ্ন করলে আশা করি সব উত্তর পেয়ে যাবে।”
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরে অনুপমা, ওইখান থেকে সরে যাওয়ার আগে নিবেদিতার উদ্দেশ্যে বলে, “আর হ্যাঁ তোমার ভালোর জন্য বলছি, মিস্টার দেবনাথের সাথে জড়িয়ে পড়ার আগে একটু বাজিয়ে নেবে। কি জানি ভবিষ্যতে কি করে বসে!”
এই কালকের মেয়ে তাকে শেখাচ্ছে কি ভাবে মানুষ চিনতে হয়? নিবেদিতা রক্ত চক্ষু মেলে অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজের টেবিলে ফিরে আসে। পুরোটা সময় রূপক ওদের পর্যবেক্ষণ করছিল, একবার ভেবেছিল কাছে যায় কিন্তু অনুপমার ব্যাক্তিগত মামলায় নিজেকে জড়াতে চায়নি।
অনুপমা কাছে আসতেই রূপক জিজ্ঞেস করে, “কি হল?”
অনুপমা বলে, “চল যাই, ডিনার একপ্রকার হয়ে গেছে। আমি রুমে যাচ্ছি, তুই পারলে প্লিস আমার জন্য একটা ড্রেসিং গাউন অথবা নাইট শার্ট নিয়ে আসিস।”
রূপক আবার জিজ্ঞেস করে, “তোকে দেখে ঠিক সুবিধের মনে হচ্ছে না। কি হয়েছে বলবি ত? এখান থেকে ওদের চেহারা দেখে বুঝতে পারছিলাম যে আবহাওয়া বেশ গরম।”
সত্যি আবহাওয়া বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে নিবেদিতা আর ধৃতিমানকে লক্ষ্য করে, দুই জনের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত কথোপকথন চলছে। রূপকের হাত ধরে অনুপমা বেড়িয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। রূপককে কেনাকাটার জন্য বাজারে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। মনের মধ্যে শত চিন্তা ভর করে আসে, বুকের রক্ত আকুলি বিকুলি এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়, এই দুই দিনের মধ্যে কত কিছু ঘটনা ঘটে গেল আর কত কিছুর মধ্যে জড়িয়ে পড়ল। না জড়ালেই পারত কিন্তু তাও জড়িয়েছে নিজেকে। কিঞ্চিত আশঙ্কা মনের মধ্যে ভর করে আসে, কেউ ওর সাথে রাতে কিছু করবে না তো? দেবায়ন না থাকলেও কি হয়েছে, রূপক সাথে আছে তো।
পাশাপাশি দুটো রুম বুক করা হয়েছিল রাতে থাকার জন্য। রূপক মজা করে বলেছিল যে একটা রুম বুক করলেই ভালো। কি কার্ড দিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকে মনে হয় যেন শরীর ছেড়ে দিয়েছে। সারাদিনের ঝামেলা, ক্লেদ, ক্লান্তি ধুয়ে ফেলতে হবে। সেই কোন সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে, তারপরে মনিদিপার বাড়িতে একচোট ঝক্কি ঝামেলা, এই রেস্টুরেন্টে এসেও আরেক ঝামেলা। ঝামেলা যেন অনুপমার সঙ্গী সাথী।
রাতে থাকার জন্য আসেনি, তাই জামা কাপড় বলতে কিছুই নেই সাথে। ল্যাপটপ আনেনি ভেবেছিল রাতের মধ্যে ফিরে যাবে বাড়িতে। এখন কোন বাড়িতে ফোন করা হয়নি, মা মামনি দুইজনেই চিন্তায় থাকবে। একে একে দুই বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে কাজের চাপের জন্য জলপাইগুড়িতে থেকে যেতে হয়েছে। কাজের কথা শুনে কেউ বিশেষ উচ্চবাচ্চা করেনা। ফোনে খবরাখবর নেওয়ার পরে শরীর এলিয়ে দেয় নরম সাদা বিছানার ওপরে।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুম, শরীর অবশ হয়ে আসে ঠাণ্ডায়, একটু ঘুম ঘুম পায়। অনুপমা মাথা ঝাকা দিয়ে উঠে শার্ট আর জিন্স খুলে ফেলে। বাথরুমে ঢুকে পরনের শেষ আচ্ছাদন টুকু খুলে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে। ঠাণ্ডা জলের সাথে সারা দিনের ক্লেদ ক্লান্তি ধুয়ে মুছে যায়। অনেকক্ষণ ধরে স্নান করার পরে বুকের ওপরে তোয়ালে জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ব্যাগে চিরুনি আর সামান্য প্রসাধনির জিনিস আছে তাতে কি আর মিস অনুপমা সেনের মন ভরে? ড্রেসিং টেবিলে নিজেকে একবার দেখে, ধুপ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। সামনে বিশাল এলসিডি টিভি, কি দেখবে কি দেখবে, এই ভেবে শেষ পর্যন্ত একটা নাম না জানা সাউথ ইন্ডিয়ান চ্যানেল খুলে বসে পরে। ওদের সঙ্গীতের তাল লয় বড় মধুর, বুলি না বুঝুক কিন্তু তাল লয় আর বাজনা শুনে মন ভরায়। ক্লান্তি আর ঠাণ্ডা হাওয়ার আবেশে চোখ বুজে আসে।
এমন সময়ে দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে। আশঙ্কা জেগে ওঠে মনের মধ্যে, একা পেয়ে ধৃতিমান অথবা নিবেদিতা ওর রুমে এলো না ত? ওরা কি এই হোটেলেই উঠেছে, এটা জলপাইগুড়ির সেরা হোটেল, নিবেদিতা এখানে উঠতেই পারে, সেই সাথে ধৃতিমান। একটা ভুল হয়ে গেল যে ডেস্কে জিজ্ঞেস করা হয়নি ওদের ব্যাপারে।
কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে, “কে?”
ওদিকে রূপকের গলার আওয়াজ পেয়ে স্বস্তির শ্বাস নেয়, “ওরে মেয়ে খোল দরজা।”
দরজা খুলে দাঁড়াতেই রূপকের চোখ আটকে যায় অনুপমার নধর কমনীয় দেহপল্লবের ওপরে। বুকের কাছে গিঁট দিয়ে বাঁধা সাদা তোয়ালে নেমে এসেছে ঠিক পাছার নিচ পর্যন্ত। দুই স্তন ফুলে উঠেছে সামনের দিকে, নিচে ব্রা পরা নেই তাই যেন দুই স্তন আরও ঠেলে সামনের দিকে বেড়িয়ে এসেছে। স্নানের পরে চেহারায় এক অন্য ধরনের চমক এসেছে, সারা শরীর চকচক করছে রুমের মৃদু আলোয়। রূপকের সামনে যেন এক জলপরী দাঁড়িয়ে, ওর অদ্ভুত সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় রূপক।
রূপকের চোখের ভাষা পড়ে লজ্জায় মাথা অবনত হয়ে যায় অনুপমার। নিজেকে সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “এই ছেলে কি এনেছিস আমার জন্য?”
রূপক ওকে দেখে চোখ টিপে বলে, “বাল এনেছি। তোকে মাল একদম দারুন দেখাচ্ছে। আমাকে ছাড়াই স্নান সেরে ফেললি?”
অনুপমা ওর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে খুলে দেখে যে রূপক ওর জন্য একটা পাতলা স্লিপ এনেছে আর নিজের জন্য কিছুই আনেনি। অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “কি রে তুই কিছু আনিস নি কেন?”
রূপক রুমের মধ্যে ঢুকে টেবিলের ওপরে হুইস্কির বোতল রেখে বলে, “কি আনব আমার জন্য? আমি এখন ভালো করে স্নান সেরে ন্যাংটো হয়ে বিছানায় পরে থাকব। এই রুমে কেউ কি দেখতে আসছে নাকি আমাকে?”
হেসে ওঠে অনুপমা, ওর হাসির কলতান রুমের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয় আর সেই সাথে রূপকের মন চঞ্চল হয়ে ওঠে এই সুন্দরীকে আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলার। অনুপমা হেসে বলে, “যা তাহলে নিজের রুমে, গিয়ে যা খুশি করবি কর। নিজের জন্য হুইস্কি আর আমার জন্য কিছু আনিস নি?”
রূপক বলে, “আমি ভাবছিলাম একসাথেই হুইস্কি খাবো।”
অনুপমা বলে, “হুইস্কি! অনেকদিন খাইনি আচ্ছা তাই হবে। তুই তাহলে স্নান সেরে নে আমি ততক্ষণে কিছু কাবাব, সোডা আর বরফের অর্ডার দিয়ে দেই।”
রূপক ওর সামনে এসে, সদ্য স্নাত অনুপমার শরীরের মিষ্টি মাদকতা ঘ্রান নাকে টেনে বলে, “আমি আগেই বলেছিলাম একটা রুম নিতে, তুই শুনলি না।”
অনুপমা ওর গালে আলতো চাপড় মেরে বলে, “ধ্যাত শয়তান ছেলে কোথাকার, যা নিজের রুমে আর স্নান সেরে আয়।”
রূপক ওর কথায় কান না দিয়ে সেখানেই জামা খুলে ফেলে। অনুপমা মানা করার আগেই প্যান্ট খুলে শুধু মাত্র জাঙ্গিয়া পরে বাথরুমে ঢুকে পরে। ওর বলিষ্ঠ শরীর দেখে আর নিজের উন্মিলিত অঙ্গ দেখে বুকের রক্ত চঞ্চল অয়ে ওঠে। আসন্ন রাতের কথা ভাবতেই শরীরে কাঁটা দেয় অনুপমার, সত্যি কি রূপক ওর সাথে কিছু করবে। কে জানে কি হবে রাতে? ভাবতে ভাবতেই তলপেট চিনচিন করে আর জানুসন্ধি শিরশির করে ওঠে, নারী অঙ্গ ভিজে ওঠে সেই সাথে। কিঞ্চিত উত্তেজনার উদয় হয় মনের ভেতরে, বাথরুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকায়, বহুদিন আগে একবার সঙ্গমে রত হয়েছিল রূপকের সাথে সেই শেষ, তারপরে দেবায়ন ছাড়া আর কারো লিঙ্গ ওর যোনির ভেতরে প্রবেশ করেনি। এই নিভৃতে অনুপমাকে একা পেয়ে রূপক যদি কিছু করে বসে তাহলে নিজেকে ভাসিয়ে দেবে সেই সাগরে। চার পাঁচ দিন হয়েছে দেবায়ন গেছে, কিন্তু শরীরের ভেতর যেন খালি হয়ে গেছে।
কিছু পরে স্নান সেরে কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে বেড়িয়ে আসে রূপক। পেশিবহুল ছাতি দেখে অনুপমার চোখ চকচক করে ওঠে। দুইজনের চোখে অব্যাক্ত কামনার আভাস কিন্তু কেউ কোন কথা বলে না। পরস্পরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে দুইজনে। অনুপমা নিজের লজ্জা লুকিয়ে বিছানার ওপরে উঠে সাদা চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়। ওই পেশিবহুল ছাতি আর দুই বাহু যেন ওকে প্রচন্ড ভাবে ডাক দেয়। আপনা থেকেই হাত নেমে আসে তলপেটের ওপরে। রূপকের চোখ থেকেথেকে অনুপমার কমনীয় দেহপল্লবের ওপরে ঘুরে বেড়ায়।
কিছুপরে রুম সার্ভিস এসে গ্লাস, কাবাব ইত্যাদি রেখে চলে যায়। রূপক একটা কাউচ টেনে বিছানার পাশে বসে গ্লাসে ড্রিঙ্ক বানায়। সামনের টিভির দিকে মন দিতে চায় অনুপমা।
“এই নে তোর ড্রিঙ্ক, সোডা দিয়েছি আর দেব কিনা একবার চেক করে নে।”
রূপক ওর দিকে গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলে।
রূপকের হাত থেকে গ্লাস নেওয়ার সময়ে দুইজনের আঙুল ঠেকে যায় আর রূপকের মনে হয় যেন বিদুতে ছোঁয়া খেয়েছে। অনুপমা ওর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে চুপচাপ একটা চুমুক দিয়ে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে একদম ঠিক আছে ড্রিঙ্ক। বেশ কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলে না। এ যেন একটা ঝড়ের পূর্বাভাসের মতন সারা জগত শান্ত হয়ে গেছে। ঝড় ঠিক কোন দিক থেকে ধেয়ে আসবে ঠিক মতন অনুধাবন করতে পারে না অনুপমা। ওকি গলে পড়বে আগে না রূপক ওর দিকে হাত বাড়াবে, সেই চিন্তায় আর সেই উত্তেজনায় দুই জানু গলতে শুরু করে দেয়।
অনেকক্ষণ পরে নীরবতা কাটানোর জন্য রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি দেখছিস রে?”
অনুপমা চ্যানেল বদলে ন্যাট জিও চালিয়ে বলে, “সাউথ ইন্ডিয়ান গান শুনছিলাম। তোর ভালো না লাগলে এই বন বাদাড়, বাঘ সিংহ দেখতে পারি।”
রূপক হেসে বলে, “সামনে এত সুন্দরী একজন বসে থাকতে ওই সব দেখে কি হবে।”
অনুপমার চোখের মণি ওর চোখের ওপরে স্থির হয়ে যায়, “তুই কি সেই জন্য হুইস্কি এনেছিস?”
রূপক হেসে দেয়, “না রে মেয়ে। আমাকে একটুও বিশ্বাস নেই তোর?”
কাকে বিশ্বাস করবে, নিজেই যে ধরা দিতে চাইছে অনুপমা। তাও মনের ভাব লুকিয়ে বলে, “আজকাল শ্রেয়াকে রোজ দিচ্ছিস নাকি? যে এই কয়দিন না পেয়েই তোর থলে ভরে গেছে?”
রূপক মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, “কোথায় আর হয়। আমার চেয়ে ওর যেন কাজ দশ গুন বেড়ে গেছে। শনি রবিবার যদিও বা একটু বেড়াতে বের হই তাহলে সেই বাইরে বাইরে কাটাতে হয়। একটু একা না পেলে কি আর ঠিক জায়গায় মাল ঢালা যায়?”
অনুপমা বলে, “বিয়ে সেরে ফেলতে অসুবিধে কোথায় তোদের?”
রূপক বলে, “কি যে বলসি না তুই। এখন পর্যন্ত ঠিক ভাবে দাঁড়াতে পারলাম না আর বিয়ে।”
অনুপমা বলে, “কিসের অসুবিধে তোদের?”
লজ্জায় পড়ে যায় রূপক, টাকার কথা কি আর মুখ ফুটে বলবে অনুপমার কাছে, “যদি সত্যি ঠিক ভাবে দেখা যায় তাহলে আমরা সবাই তোর তাকায় খাচ্ছি পড়ছি। আমি জানি না কেননা আমি কোনদিন ব্যালেন্স শীট দেখিনা তাও এই এক বছরে এমন কিছু আয় নিশ্চয় হয়নি যে আমাদের আয়ের টাকা আমরা খাচ্ছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “ছাড় না ওই সব কথা। সবাই মিলেই তো কোম্পানি শুরু করেছি, রোদ বৃষ্টি ঝড় বসন্ত, যা হবে একসাথেই কাটাতে হবে তাই না।”
রূপক বলে, “হ্যাঁ সত্যি কথা, কিন্তু শ্রেয়াকে কে বোঝায় সেটা।”
কথা শুনে একটু দ্বিধায় পড়ে যায় অনুপমা, প্রশ্ন করে, “কেন কি হয়েছে শ্রেয়ার?”
রূপক বুঝতে পারে কথাটা বলে ভুল করেছে, ওদের নিজেদের ভেতরের কথা অনুপমাকে জানিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না তাই কথা ঘুরিয়ে বলে, “আচ্ছা তুই বলছিলিস যে গত কোয়ার্টারে আয় বেশি হয়েছে। এয়ার বার্লিন এসে গেছে, আর এবারে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স এসে যাবে। কিন্তু আসল ইউরো কবে থেকে আসবে?”
অনুপমা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “সেই সব ঠিক জানিনা, দেবায়ন জানে আর দীপঙ্করদা জানে। ব্যাবসার ব্যাপারে, টাকা পয়সার ব্যাপারে দীপঙ্করদা আর দেবায়ন আলোচনা করে। আমি শুধু ব্যালেন্স সিট দেখি আর একাউন্ট দেখি, তাতেই আমার শান্তি।”
রূপক হেসে বলে, “ছেলেটা একটা বট গাছ, সবার পেছনে বিশাল খুঁটির মতন সবসময়ে আছে। আচ্ছা এই যে মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যায়, যায় কোথায়?”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “বাবার সাথে এদিক ওদিক কাজের জন্য ঘুরতে যায় এই আর কি।”
অনুপমার ধীরে ধীরে চুমুক দেয়, একটা গ্লাস শেষ করতেই বেশ সময় লেগে যায়। ওদিকে রূপকের দুই গ্লাস শেষ, তৃতীয় গ্লাস শুরু করে বিছানার ওপরে উঠে বসে। অনুপমা একটু সরে তফাতে আধাশোয়া হয়ে ওর দিকে দেখে। রূপক বিছানার পেছন দিকে হেলান দিয়ে সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসে পরে। তোয়ালে ফুঁড়ে ঋজু পুরুষাঙ্গ উপরের দিকে একটা ছোটো পাহাড়ের মতন আকার ধারন করেছে ইতিমধ্যে। সেই ছোটো পাহাড়ের দিকে চোখ পড়তেই ঠোঁট চেপে ধরে অনুপমা, জানু ঘষে নিজের তলপেটের শিরশিরানি দমন করতে চেষ্টা চালায়। সুরার নেশা রক্তে লেগে কামনার আগুন ধীরে ধীরে জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।
রূপক ওর সারা অঙ্গে একবার চোখ বুলিয়ে চোখ টিপে বলে, “কি রে গরম হয়ে গেলি নাকি?”
অনুপমা গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “তুই শুতে যাবি না?”
রূপক বলে, “হ্যাঁ যাবো এই গ্লাস শেষ করে নেই তারপরে। তুই আর নিবি না?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় এই একটাই ওর শেষ। ক্লান্তির পরে ঠাণ্ডা জলে স্নান, তারপরে মদের নেশা, ওর শরীর অবশ হয়ে এসেছে ইতিমধ্যে। চোখের সামনে রুপকের ঋজু কাঠামো, চওড়া ছাতি আর পায়ের মাঝে তোয়ালের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষাঙ্গের দেখা পেয়ে আরও যেন অবশ হয়ে যায় ওর শরীর। স্তনের বৃন্ত দুটো ফুলে উঠেছে তোয়ালের নিচে, দুই পায়ের মাঝে কেমন যেন সুড়সুড়ি করছে।
রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে ভাবছি একটা নতুন কিছু করব, মানে এই ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কিছু।”
অনুপমা বলে, “কি প্লান আছে?”
রূপক বলে, “কিছু সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট। জানি না কতটা কি আসবে, কিন্তু নতুন কিছু না হলে সেরকম কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে না।”
অনুপমা বলে, “ঠিক আছে, একটা রোডম্যাপ তৈরি কর। দেবায়ন এলে, পরের বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করা যাবে।”
রূপক ওর পাশে সরে এসে বলে, “হ্যাঁ রে তুই কিন্তু বলেছিলিস যে আমাদের শেয়ার বাড়িয়ে দিবি, সেটা মনে আছে তো?”
অনুপমা বলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, সব মনে আছে। এক বছর হলো না, আর এখুনি শেয়ার নিয়ে পড়ে আছিস।”
নেশা ঘোরে রূপক শেষ পর্যন্ত বলে ফেলে, “শ্রেয়া জানিস, ইদানীং খুব টাকা টাকা নিয়ে মেতে উঠেছে।”
অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে চোখের প্রশ্ন করে। উত্তরে রূপক বলে, “জানিস তো যে শুরু থেকেই বারো পারসেন্টে রাজি ছিল না। অনেক বলে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলাম। গতবার ফ্রাংকফুর্ট থেকে আসার পরে কাজ শুরু করে নিজে, তারপর থেকে আমার কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করেছে, দেবায়ন কে বলে শেয়ার বাড়ানোর জন্য। কি করি বলতো?”
অনুপমা ওকে বুঝিয়ে বলে, “দ্যাখ, রূপক, তোদের কাছে কোম্পানির অবস্থা অজানা নেই। পঞ্চাশজন কর্মীর মাইনে দিতে মাসে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা লাগে, তার ওপরে অফিসের ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল, লাঞ্চের বিল, সব মিলিয়ে প্রতি মাসে পঞ্চাশ লাখ টাকা জলের মতন বেড়িয়ে যায়। আসে কত? কোন মাসে সাত লাখ এলো কি এলো না, শুধু মাত্র লাস্ট কোয়ার্টারে বিশ লাখ এসেছিল। এই কোয়ার্টারে খরচ বেশি। দুই মাসের ব্যাবধানে চারজন লোক জার্মানি গেছে, ওখানে থেকেছে, ওদের খরচ। কোম্পানি শুরু করেছিলাম কুড়ি কোটি দিয়ে, সেই টাকা দিনে দিনে শেষ হয়ে আসছে। একটা মোটা টাকা তুলে রাখা হয়েছিল ভবিষ্যতের জন্য কিন্তু দুই তিন মাস পরে সেই টাকায় হাত দিতে হবে, না হলে মাইনে দিতে পারব না।”
রূপক চিন্তায় পড়ে যায় ওর কথা শুনে, তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, “তোর মাথায় খুব টেনশান তাই না?”
অনুপমা চোখ বুজে গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে বলে, “অনেক টেন্সান, একবছরের আগেই বারো কোটি টাকা উধাও হয়ে গেল আর সেখানে আয় হল মোটে তিন কোটি, নেট প্রফিট কিছু নেই। সবাই ভাবে দেবায়ন খালি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর মাস শেষ হলে টাকা নেয়। আসলে ওই টাকার খোঁজে ঘুরে বেড়ায় বাবার সাথে, ও যদি বসে যায় তাহলে কাউকে মাইনে পেতে হবে না। এত গুলো লোক আমাদের মুখ চেয়ে বসে, মাঝে মাঝে এই সব চিন্তা করলে রাতে ঘুম আসেনা।”
দেবায়নের কথা আর কোম্পানির কথা বলতে বলতে মন আনমনা হয়ে যায় আর সেই সাথে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে। গ্লাস নামিয়ে রেখে আড়ামোড়া ভেঙ্গে অনুপমা বলে, “আমার না খুব ক্লান্তি লাগছে।”