Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
পঞ্চবিংশ পর্ব (#02)

অনুপমার আর অফিসে গেল না, ড্রাইভারকে বলে সোজা গাড়ি নিয়ে চলে আসে দেবায়নের বাড়িতে। দেবশ্রী আগেই বাড়িতে পৌঁছে যায়। ছেলে না থাকলেই এই মেয়েটা এসে দেখা করে যায়, বসে গল্প করে, বাচ্চা মেয়ের মতন এটা খাবে ওটা খাবে আব্দার করে। দেবশ্রী যথাসম্ভব চেষ্টা করে হবু বৌমার শিশু সুলভ আব্দার গুলো পূরণ করতে।
বাড়িতে ঢুকে দেখে যে মামনি কাঁকড়া ধুতে ব্যাস্ত। অনুপমা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছোটো খুকির মতন আব্দার করে, “মামনি এবারে কাঁচা আমের সরবত খাওয়ালে না কিন্তু।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা কালকে না হয় বানিয়ে দেব। কাঁকড়ার সাথে কি খাবি, ফ্রাইড রাইস না শুধু ভাত?”
অনুপমা মামনির পেটে কাতুকুতু দিয়ে বলে, “তোমার মনে ছিল কাঁকড়ার কথা?”
দেবশ্রী হেসে ওঠে, “আরে বাবা ছাড় ছাড়, শয়তান মেয়ে কোথাকার।”
অনুপমা রোজকার মতন রান্নাঘরের স্ল্যাবের ওপরে পা তুলে বসে পরে হাতে একটা আম নিয়ে। দেবশ্রী ওকে আমটা কেটে দিতে চায়, কিন্তু অনুপমা আম খানা জলে ধুয়ে, টিপে টিপে নরম করে নিচের দিকে একটা ছোটো ফুটো করে চুষতে শুরু করে। ঠোঁটের কষ বেয়ে আমের রস নিচের দিকে বেয়ে পরে আর অনুপমা উলটো হাতে আবার সেই রস মুছে নেয়। সেই দেখে দেবশ্রী হেসে ফেলে।
আম চুষে খেতে খেতে অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুমি কি বলবে বলছিলে?”
দেবশ্রী খানিকক্ষণ চুপ থাকার পরে অনুপমার চোখের ওপরে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “যা জিজ্ঞেস করব সব ঠিকঠিক উত্তর দিবি?”
মামনির এই চোখ কোনদিন দেখেনি অনুপমা তাই একটু ভয় পেয়ে যায়, দুচোখে বিস্ময় আর হাজার প্রশ্ন নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে মামনি?”
বুকের ভেতরের ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। মামনি কি দেবায়নের রুমের মধ্যে কিছু পেয়েছে? এমন কিছু যাতে মামনির সন্দেহ হয়েছে। প্যান্টির বাক্স অথবা বাঙ্কের স্টেটমেন্ট অথবা অন্য কিছু। কি জানে মামনি?
দেবশ্রীর কাঁকড়ায় তেল নুন মাখাতে মাখাতে জিজ্ঞেস করে, “তোরা সূর্য আর মনিদিপাকে কি বলেছিস বা করেছিস?”
মাথায় বাজ পড়ার মতন চমকে ওঠে অনুপমা, এত দিন পরে সূর্য মনিদিপার প্রশ্ন কেন উঠছে? অনুপমার গলা শুকিয়ে কাঠ। হাতের সামনে মনিদিপা অথবা সূর্যকে পেলে ছিঁড়ে খাবে এমন মনের অবস্থা। ক্রোধ সামলে নিয়ে হাসি টেনে মামনির উত্তরে বলে, “কই কিছু করিনি তো? শুধু ওদের অনুরোধ করেছিলাম কোলকাতা ছেড়ে চলে যেতে।”
দেবশ্রী কাজ থামিয়ে ভুরু কুঁচকে অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শুধু অনুরোধ করেছিলিস, সত্যি বলছিস?”
ভেতরের রাগ লুকিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে অনুপমা, “হ্যাঁ মামনি সত্যি বলছি। কিন্তু এতদিন পরে এই সব প্রশ্ন করছ কেন?”
দেবশ্রী আবার কাঁকড়া মেরিনেট করতে মন দেয়, “আজকে সকালে মণি ফোন করেছিল।”
কথাটা শুনতেই গলা শুকিয়ে আসে অনুপমার। মনিদিপা কি সবকিছু মামনিকে বলে দিয়েছে, তাহলে দেবায়ন আর ওর রক্ষে নেই। কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি বলেছে?”
দেবশ্রী বলে, “খুব কাঁদছিল মেয়েটা, বারেবারে আমার কাছে ক্ষমা চাইছিল আর বলছিল যে দেবু যাতে ওদের সর্বনাশ না করে।”
চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, রাগে কান লাল হয়ে যায় তাও কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করে, “আর কি বলেছে মামনি?”
দেবশ্রী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “এ ছাড়া বেশি কথা বলেনি আর বলেছে আমি যেন দেবায়নকে এই বিষয়ে কোন কথা না জানাই, তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম যে তোরা কি করেছিলি বা বলেছিলি ওদের। তোরা সত্যি বলতো কি করেছিস ওদের সাথে?”
অনুপমা বুঝতে পারে যে মনিদিপা ওর কথা রেখে দেবশ্রীকে কিছু জানায়নি, একটা স্বস্তির শ্বাস নেয় আর সেইসাথে রাগে গায়ের রক্ত গরম হয়ে যায়। কেন মনিদিপা এতদিন পরে ফোন করেছে? ওকি মামনিকে জানাতে চায় যে ওর সাথে দেবায়ন আর অনুপমা কি কি করেছে?
অনুপমা হাসি টেনে বলে, “না গো কিছুই করিনি ওর সাথে। তুমি ভালো করেই চেন সূর্য আর মনিদিপাকে, ওরা সব বানিয়ে বলছে তোমার কাছে।”
দেবশ্রী স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে, “হ্যাঁ তা জানি যে ওরা কেমন। যাক শুনে শান্তি পেলাম যে তোরা ওদের কিছু করিস নি। কিন্তু দেবুর সর্বনাশের কি কথা বলছিল ও?”
অনুপমা আম খাওয়া ছেড়ে মামনিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ছাড়ো ওদের কথা। সব মিথ্যে কথা বলছে।”
খাওয়ার সময় কেটে যায় একথা সেকথায়, কিন্তু অনুপমার মনে ভিড় করে থাকে মনিদিপার ফোনের কথা? আবার কি ওরা দুইজনে কিছু বদ মতলব আঁটছে মামনিকে ফাঁসানোর জন্য। দেবায়ন নেই, দেবায়ন থাকলে না হয় একটা পরামর্শ নেওয়া যেত। কিন্তু দেবায়নের মাথা গরম, দেবায়নের জন্য অপেক্ষা করলে হয়ত রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে বসবে। সাপ যখন আবার ফনা তুলেছে, ফোঁস করার আগেই এবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে না হলে ভবিষ্যতে ফোঁস করার সাহস পেয়ে যাবে। কি করা যায়, সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরার সময়ে রূপককে ফোন করে সব জানায়। আরো জানায় যে আগামীকাল সকালে জলপাইগুড়ি যেতে চায় সূর্য আর মনিদিপার সাথে দেখা করতে। কিন্তু জানে না ওদের ঠিকানা অথবা ফোন নাম্বার। শেষ পর্যন্ত ঋতুপর্ণার আশ্রয় নিতে হয় অনুপমাকে। ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয় যে ওর বড়দা ওদের জন্য বাগডোগরা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবে। কথা হয় যে ঋতুপর্ণার দাদা মনিদিপার বাড়ি চেনে, সেই চিনিয়ে দেবে আর সাথেই থাকবে।
সকালের ফ্লাইট ধরে রূপক আর অনুপমা জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মনের মধ্যে অজানা আশঙ্কা, কি হবে কি হবে। যদিও ওদের কাছে ওই রাতের সব ঘটনার ভিডিও করা আছে, তাও এক অজানা আশঙ্কায় বুক দুরদুরু করে কেঁপে ওঠে।
রূপক ওর হাতের ওপরে চাপ দিয়ে মনে বল জুগিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছিস এত? আমি আছিতোসব ঠিক করে দেব।”
অনুপম হেসে বলে, “তোর আর দেবায়নের এক কথা সব ঠিক করে দেব। মারামারি খুনোখুনি ছাড়া আর কি ভাবে জানিস ঠিক করতে?”
রূপক হেসে ফেলে, কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, “আরো একটা উপায় জানি কি করে অবস্থার সামাল দিতে হয়।”
অনুপমা না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবে?”
রূপক বলে, “দেবায়ন যেমন ভাবে মনিদিপাকে চড়িয়ে খেলিয়ে ছিপে তুলেছিল ঠিক সেইরকম ভাবে আমিও তুলতে জানি।”
কথা শুনে অনুপমার গাল লাল হয়ে যায়, “ধ্যাত শয়তান ছেলে।”
রূপকের উষ্ণ হাতের চাপে মনে বল পায় অনুপমা।
বেশ বেলার দিকে ফ্লাইট বাগডোগরা পৌঁছায়। ঋতুপর্ণার দাদা, গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঋতুপর্ণা বিস্তারে ওর দাদাকে জানায়নি, শুধু এইটুকু জানিয়েছে যে যদি ওদের কোন সাহায্য লাগে তাহলে যেন সাহায্য করে। মনিদিপার বাড়ি যাওয়ার পথে ঋতুপর্ণার দাদা রূপককে প্রশ্ন করে আসার কারন। রূপক কথা ঘুরিয়ে বলে একাজ সেকাজের কথা বলতে শুরু করে দেয়। সূর্যের বাড়ির কিছু দুরে গাড়ি থামিয়ে ঋতুপর্ণার দাদা বাড়ি দেখিয়ে দেয়। ওদের ফোন নাম্বার দিয়ে বলে যে কোন কিছুর অসুবিধে হলে যেন ডাকে। এই পাড়া ওর চেনা, কোন গন্ডগোল হলে এক ডাকে লোক জড়ো করে নিতে পারবে। অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে অত কিছুর হয়তো দরকার পড়বে না।
রূপক আর অনুপমা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। দুইতলা বাড়ি, ঋতুপর্ণার দাদা বলেছে যে একতলার একটা ছোটো কামরা নিয়ে থাকে সূর্য আর মনিদিপা। কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে সেই আশঙ্কায় অনুপমার দুক দুরুদুরু করে ওঠে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দরজার কড়া নাড়িয়ে অপেক্ষা করে। মাথার ওপরে কাঠফাটা রোদ যেন ঝলসে দেয় কোমল অনুপমাকে। এক অজানা আশঙ্কায় রোদে দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামতে শুরু করে দেয়।
কিছুপরে এক মহিলা দরজা খুলে ওদেরকে জিজ্ঞেস করে কে এসেছে। মহিলাকে দেখে প্রথমে ঠিক চিনতে পারে না অনুপমা, অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে মনিদিপার দিকে, একি হয়ে গেছে মনিদিপার শরীর। রোগা হয়ে গেছে, গলার কন্ঠি বেড়িয়ে এসেছে, দুই টানা টানা চোখ কোঠোরাগত, টোপা টোপা লালচে গালে সেই লালিমা নেই, পরনে একটা রঙ ওঠা কম দামি সুতির মাক্সি। পেটের দিকে নজর যেতেই বুঝতে পারল যে মনিদিপা গর্ভবতী। মনিদিপার চোখ জোড়া ছলকে ওঠে, ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে, ওদের হঠাৎ করে সামনে দেখে আতঙ্কে চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
অনুপমা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে মনিদিপার শুকনো চেহারা আর গর্ভবতী দেখে কি বলতে এসেছে সেটা ভুলে যায়। রূপকের হাতের ছোঁয়া পেতে সম্বিৎ ফিরে আসে অনুপমার।
মনিদিপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “আচমকা কি মনে করে?”
অনুপমা মৃদু হেসে বলে, “কিছু না, এমনিই তোমাদের দেখতে এলাম।”
মনিদিপা একবার রূপকের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে, ভেতরে ডাকবে কি ডাকবে না এই ভাবে। অনুপমার তীক্ষ্ণ চাহনি ওর মনের দ্বিধা এড়াতে পারে না, নিজেই মনিদিপাকে বলে, “এতো দূর থেকে এসেছি একবার ভেতরে ডাকবে না?”
দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় মনিদিপা। অনুপমা ঘরে ঢুকে চারদিক তাকিয়ে দেখে। ঘরটা এত ছোটো যে কেউ যদি আড়মোড়া ভাঙ্গে তাহলে হাত গিয়ে দেয়ালে ঠেকবে। মাথার ওপরে একটা সিলিং ফ্যান ঘুরছে নয় যেন কাঁদছে। এক পাশে একটা ছোটো রান্নাঘর, এত ছোটো যে একজন দাঁড়ালে দ্বিতীয় জনের দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। বিছানার চাদর রঙ ওঠা কিন্তু পরিষ্কার, খাটের তলায় যাবতীয় আসবাব পত্রে ভর্তি। ছয় বাই ছয়ের খাটটা ঘরের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে। একপাশে একটা ছোটো ফ্রিজ আর তাঁর ওপরে একটা ছোটো টিভি। ঘরের আনাচে কানাচে দীনতার ছাপ কিন্তু বেশ ছিমছাম পরিষ্কার করে রাখা। মনিদিপাকে দেখে মনে হল যেন শুয়ে ছিল, মাথার চুল অবিন্যাস্ত। অনুপমাকে খাটের ওপরে বসতে বলে মনিদিপা। রূপক, তীক্ষ্ণ চোখ একভাবে চেয়ে থাকে মনিদিপার দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে কি চায় এই মহিলা আর তার স্বামী।
অনুপমা মনিদিপাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কাল মামনিকে, মানে দেবায়নের মাকে ফোন করেছিলে?”
মনিদিপা উত্তরে কি বলবে ভেবে পায় না, “না মানে বউদিকে এমনি ফোন করেছিলাম।”
অনুপমা শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “হঠাৎ এতোদিন পরে কি মনে করে?”
রূপক, মনিদিপার চোখে চোখ রেখে কঠোর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “কোন বদ মতলব নিশ্চয় নয়। ওই দিনের সব ঘটনা কিন্তু ক্যামেরা বন্দি, সেটা নিশ্চয় খেয়াল আছে। তোমাদের মনে কি আছে কি নেই বলা মুশকিল।”
মনিদিপার গলা কেঁপে ওঠে ওই হিম শীতল গম্ভির কণ্ঠস্বর শুনে, “এতদিন পরেও আমাদের সর্বনাশ করতে চাও। মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা না মারলে কি তোমাদের প্রাণে জল আসবে না?”
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে, “বড় কষ্টে আছি তাই ক্ষমা চেয়ে ফোন করেছিলাম যাতে আমাদের কষ্টের কিছু লাঘব হয়।”
অনুপমা রূপককে মৃদু ধমক দিয়ে শান্ত করিয়ে মনিদিপার হাত ধরে পাশে বসিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “কাঁদছো কেন? কেঁদো না।”
মনিদিপা ডুকরে কেঁদে ওঠে, “কি করব বলো? মা সমান বৌদির সাথে আমরা যা করেছি তাতে ভগবান আমাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না।” পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে কেঁদে বলে, “কোলকাতা ছেড়ে চলে আসার পরে আমি গর্ভবতী হয়েছিলাম কিন্তু সেই বাচ্চাটা পাঁচ মাসেই পেটের মধ্যে মারা যায়। আমি দিনরাত ঠাকুরকে ডাকতাম কিন্তু পাপের বোঝা আমাদের ঘাড় থেকে মনে হয় আর নামবে না, যদি না বৌদি আমাদের ক্ষমা করে।”
মনিদিপার চোখের জলে অনুপমার মন ভিজে যায়। রূপককে একটু বাইরে যেতে বলে, মনিদিপাকে জিজ্ঞেস করে, “বর্তমানে কত মাস চলছে তোমার?”
মনিদিপা চোখের জল মুছে পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, “পাঁচ মাস চলছে।”
তারপরে অনুপমা ওদের কথা জিজ্ঞেস করাতে মনিদিপা এক এক করে সব খুলে বলে। কোলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে এসে সূর্য প্রথমে কোন কাজ পায়নি। বেশ কয়েক মাস বাপের বাড়িতে বসে ছিল কিন্তু কতদিন আর বসে খাওয়া যায়। বাবা নেই, গত হয়েছেন, দাদার ঘাড়ে বসে খেতে সূর্যের ভালো লাগে না। এই ছোটো ঘরে উঠে আসে ওরা আর ওর সব গয়না বিক্রি করে ঘর ভাড়ার টাকা আর খাওয়ার টাকা জোগাড় করে। তারপরে একটা কাঠের কারখানায় ক্যাশিয়ারের কাজ পায়। যা পায় তাতে কষ্টেশিষ্টে দুইজনের চলে যায়। প্রথম বাচ্চার সময়ে টাকার অভাবে ভালো ডাক্তার দেখাতে পারেনি, সরকারি হাসপাতালে দেখিয়েছিল কিন্তু কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হত। একটা প্রাইভেট ডাক্তার বলেছিল যে মনিদিপাকে খুব সাবধানে রাখতে আর নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে দিতে কিন্তু সেই সময়ে ওদের কাছে কানা কড়িটাও ছিল না যে নার্সিং হোমে ভর্তি করাবে। দাদার কাছ থেকে ওষুধের খরচা পেয়েছিল কিন্তু নার্সিংহোমে ভর্তি করার মতন পয়সা জুগিয়ে উঠতে পারেনি। কথা গুলো শুনতে শুনতে অনুপমার দুই চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে আসে।
গত বারের সময়ে বেশ কিছু ধার দেনা হয়ে গেছে ওদের তাই এইবারে অবস্থা আরও সঙ্গিন। এই বাচ্চাটা ওরা ঠিক চায়নি কিন্তু হঠাৎ করে এসে গেছে। মা হওয়ার ইচ্ছে সব মেয়েদের থাকে তাই এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু ঠিক ভাবে সব হবে সেই ভেবে কুল কিনারা পায় না। ঠিক মতন খাওয়ার পয়সা নেই, ডাক্তারের পয়সা কোথা থেকে দেবে?
অনুপমা মনিদিপার গলায় হাত দিয়ে দেখে যে কণ্ঠহাড় দেখা যাচ্ছে, খুব শীর্ণকায় হয়ে গেছে একসময়ের সুন্দরী মনিদিপা। ও ভেবে এসেছিল যে মনিদিপা আর সূর্যকে শাসিয়ে যাবে মামনিকে ফোন করার জন্য কিন্তু এখানে এসে পরিস্থিতি দেখে মাথার মধ্যে সব অঙ্ক গুবলেট হয়ে যায়। ঘর বাড়ির পরিস্থিতি আর মনিদিপার অবস্থা দেখে বুক ফেটে এক অব্যাক্ত কান্না বেড়িয়ে আসে। কি করবে অনুপমা, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মনিদিপার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়।
ব্যাগে চার হাজার টাকা ছিল, সেটা বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা রাখো এখন আর তোমার বরের ব্যাঙ্ক একাউন্ট নাম্বার বল। আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি এখুনি।”
চার হাজার টাকা হাতে নিয়ে মনিদিপা অনুপমার হাত ধরে ভেঙ্গে পরে কান্নায়, “তুমি সত্যি দেবী।”
অনুপমা ওর চোখের জল মুছিয়ে বলে, “আমি তোমাদের যথাযথ সাহায্য করতে পারি কিন্তু একটা শর্তে?”
মনিদিপা কান্না ভুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি শর্ত আবার?”
অনুপমা বড় শ্বাস নিয়ে বলে, “তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে মামনিকে কোনদিন ফোন করবে না, সেই প্রতিজ্ঞা কিন্তু তোমরা রাখনি, মণি।”
মনিদিপা হাতের টাকা ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমাদের সর্বনাশ না করলে যেন তোমার প্রাণে শান্তি আসবে না?!”
অনুপমা মাথা ঠাণ্ডা রেখে ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, “আমার কথা পুরো না শুনে কেন বাজে বকছ, মণি? দয়া করে আগে আমার কথা পুরো শোনো তারপরে বোলো।”
চুপ করে বসে পরে মনিদিপা। অনুপমা বলে, “সূর্যকে বল কিছু একটার দোকান দিক আমি টাকা দেব তোমাদের। কত টাকা লাগবে এক লাখ, দুই লাখ না পাঁচ লাখ? যা লাগবে বল আমি দিতে রাজি।”
মনিদিপা হাঁ করে চেয়ে থাকে অনুপমার মুখের দিকে, এই মেয়ের বুকে কে বাস করে? সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা দেবীকে যেন সামনে দেখছে।
এমন সময়ে ধরাম করে দরজা খুলে সূর্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে, পেছনে রক্ত চক্ষু রূপক।
সূর্য অনুপমাকে দেখে চেঁচিয়ে ওঠে, “এতদিন পরে দলবল নিয়ে আমাদের সর্বনাশ করতে এসেছ? বেড়িয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। আমি আমার মৃত বাচ্চার কসম খেয়ে বলছি যেদিন দেবায়ন কে হাতের সামনে পাবো সেদিন মেরে ফেলব……”
অনুপমা সূর্যকে রুদ্ররুপে দেখে থতমত খেয়ে যায়। মনিদিপা অস্ফুট চিৎকার করে সূর্যকে চুপ করতে বলে, “ওগো….. তুমি কিছু বোলো না গো। ওরা আমাদের সর্বনাশ করতে আসেনি।” হাতের টাকার তোড়া দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমাদের ভালোই করতে এসেছে ওরা। দয়া করে তুমি একটু ঠাণ্ডা হও।”
অনুপমা রূপকের দিকে তাকায়। রূপক গর্জে ওঠে সূর্যের ওপরে, কলার ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে, “আগে কথা শুনে তবে কথা বলবে না হলে মেরে এখানে এই মেঝের নিচে পুঁতে চলে যাবো কাকপক্ষী টের পাবে না।”
অনুপমা রূপককে ধমক দিয়ে সূর্যকে ছেড়ে দিতে বলে। রূপক সূর্যকে ধরে বসিয়ে দেয় খাটের ওপরে।
রূপক সূর্যের নাকের সামনে আঙুল নাড়িয়ে বলে, “আমরা ভেবেছিলাম যে তোমরা চুপচাপ থাকবে কিন্তু কাকিমাকে ফোন করে খুব ভুল করেছ। ভাগ্য ভালো যে দেবায়ন আসেনি। আমরা ওকে না জানিয়ে এখানে এসেছি। যদি ও জানতে পারে তাহলে এখানে এসে তোমাদের কচুকাটা করবে।”
অনুপমা এবারে রূপকের ওপরে রেগে গিয়ে বলে, “তুই একটু চুপ থাকবি? আমি ওদের সাথে কথা বলছি, আমাকে বলতে দে।”
অনুপমা সূর্যকে বুঝিয়ে বলার পরে সূর্য ক্ষান্ত হয়, “দেখো, আমি এখানে এসেছিলাম অন্য এক মনোভাব নিয়ে কিন্তু এখানে এসে তোমাদের অবস্থা দেখার পরে আর মনিদিপার এই অবস্থা দেখার পরে আমি ভাবনায় পরে গেলাম। তুমি এখানে কিছু একটার দোকান দিতে পারো, তাতে আমি সাহায্য করব চিন্তা নেই।” তারপরে হেসে মনিদিপার গালে হাত বুলিয়ে, “এত সুন্দরী বৌটার কি অবস্থা করেছ? আর ওই যে আসছে তাকে নিয়ে ভালো ভাবে থাকো।”
মনিদিপা ওকে সব কিছু খুলে বলে আরও বলে যে অনুপমা ওদের টাকা দেবে দোকান করতে। সব কিছু শুনে হতবাক হয়ে সূর্য, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি ভেবেই না দেবশ্রী বৌদিকে ব্লাকমেল করেছে আর নিজেদের কামনা চরিতার্থ করেছে। সূর্য ক্ষান্ত হয় নিজের ভুল বুঝে। অনুপমা ওর কাছ থেকে ব্যাঙ্কের একাউন্ট নাম্বার নিয়ে পাঁচ লাখ টাকার একটা আর টি জি এস করে বলে টাকা আসতে দিন চারেক লাগবে ততদিনের জন্য এই চার হাজার তাকায় চালায় আর বউকে যেন ভালো ডাক্তার দেখায়। সব কিছু দেখেশুনে সূর্যের চেহারা লজ্জায় আর নিজের প্রতি ঘৃণায় কুঁকড়ে যায়। বারেবারে অনুপমার কাছে বিগত দিনের কার্যকলাপের জন্য ক্ষমা চায়।
বিকেল হয়ে মনিদিপা আর সূর্যের বাড়ি থেকে বের হতে। একদিকে দুপুরে কিছু খায় নি, তাই প্লেনে ওঠার আগে একটা বড় রেস্টুরেন্টে ঢোকে দুজনে। আকাশের সূর্য পশ্চিমে ঢলে গেছে, সন্ধ্যের ফ্লাইট মনে হয় ধরতে পারবে না। এদিকে বাড়িতে আসল ঘটনা কিছুই বলে আসা হয়নি। অনুপমা জানত যদি মামনিকে বলে তাহলে মামনি ওকে খুব বকবে আর মাকে বলাও যায় না এইসব কথা। কাজের আছিলায় দুইজনে বেড়িয়ে এসেছে।
খেতে খেতে রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “আজ তাহলে আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না।”
অনুপমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, “না আজ মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যেতে হবে। বড্ড দেরি হয়ে গেল সরি।”
রূপক চোখ টিপে হেসে বলে, “শালী আধি ঘর ওয়ালি, রাতে একসাথে থাকতে না পারি একটু ছোঁয়া পেতেই পারি।”
অনুপমার গাল লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “ধ্যাত শয়তান ছেলে, তুই আলাদা রুমে থাকবি আর আমি আলাদা রুমে থাকবো।”
রূপক ওকে আরও উত্যক্ত করে বলে, “সে না হয় থাকলাম কিন্তু…… এই গরমে তুই যে বেশ গরম হয়ে থাকবি। ঠাণ্ডা কে করবে তোকে?”
অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “সেটা আর তোর চিন্তা করতে হবে না।”
রূপক একথা সেকথা বলতে বলতে বলে, “আমার কি মনে হয় জানিস, সূর্য ঠিক ভাবে মেনে নিতে পারেনি আমাদের এখানে আসাটা।”
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে তাকায় ওর দিকে। রূপক উত্তরে বলে, “যে ভাবে তোর আর মনিদিপার দিকে তাকিয়ে ছিল, আমার মনে হয় টাকা পাওয়ার পরেও ওর মনে শঙ্কা থেকে যাবে যে দেবায়ন ওদের কিছু করতে পারে।
অনুপমা প্রশ্ন করে, “তাহলে কি করা উচিত আমাদের?”
রূপক বলে, “দুই দানছত্র না খুলে একটু শাসিয়ে এলেই পারতিস। এখন টাকা পেয়ে ওদের লোভ বেড়ে যেতে পারে।”
অনুপমা হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “মণিকে ওই অবস্থায় দেখে সত্যি খুব খারাপ লেগেছে। না না, ওরা ওই রকম কিছু করবে না। আমার মনে হয় না যে সূর্যের আর সেই সাহস আছে যে কোলকাতা গিয়ে আমাদের কোন ক্ষতি করবে।”
রূপক বলে, “কিন্তু কাকিমাকে ফোন করতেই পারে অথবা দেবায়নকে। তখন কি করবি?”
অনুপমা বলে, “আমি দেবায়ন কে আগে থেকেই সব বুঝিয়ে বলে দেব। যদি কোনদিন সেই রকম কিছু হয় তাহলে ভেবে দেখা যাবে।”
এমন সময়ে অনুপমার চোখ পরে কয়েকটা টেবিল দুরে বসা এক দম্পতির দিকে। ভদ্রলোককে বেশ চেনা চেনা মনে হল, পাশে বসা মহিলা ওর দিকে পেছন করে বসে। মহিলাটি একটা চাপা হাতকাটা কামিজ আর জিন্স পরে, দেহের গঠন বেশ সুন্দর এবং ফর্সা। পরনের কাপড় বেশ দামী। পেছন থেকে মহিলাকে দেখেও বেশ চেনা চেনা মনে হল অনুপমার। একবার চেহারা দেখতে পারলে হয়। অনুপমা এক ভাবে তাকিয়ে থাকে ওই টেবিলের দিকে। মহিলা আর পাশের ভদ্রলোক বেশ খোশমেজাজে গল্প করছে, হাবভাব হাসি গল্প দেখে মনে হল দুইজনে পরস্পকে বেশ ভালো ভাবেই চেনে। লোকটার বাম হাত মাঝে মাঝেই মহিলার পিঠের ওপরে আদর করছে। মহিলাটি গল্প করতে করতে লোক টির কাঁধের ওপরে মাথা রেখে দিয়েছে। মুখের একপাশ দেখে থমকে যায় অনুপমা, পাশের ভদ্রলোক ওয়েটার কে ডাকে কিছু একটা অর্ডার দেওয়ার জন্য। অনুপমা ভদ্রলোকের চেহারা দেখে আকাশ থেকে পড়ে। এইভাবে ওদের কে এখানে দেখতে পাবে স্বপ্নেও আশা করেনি, বিশেষ করে পাশের ভদ্রলোককে।
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 02-10-2020, 10:08 PM



Users browsing this thread: