Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
 

চতুর্বিংশ পর্ব (#08)
দেবায়ন আসবে, অনুপমা বেশ খুশি। এক ঘন্টা আগেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায় গাড়ি নিয়ে। এয়ারপোর্ট থেকে দেবায়ন সোজা নিজের বাড়ি যাবে আর বাবা বাড়ি ফিরে আসবে। অনুপমার ইচ্ছে রাতে দেবায়নের সাথে কাটায়, কিন্তু মামনি থাকলে সেটা সম্ভব নয়। এক মাস পরে বাড়ি ফিরছে, তাই নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। রাস্তা থেকে একটা ফুলের তোড়া কেনে। এরাইভালে দাঁড়িয়ে বারেবারে ঘড়ি দেখে, সময় যেন আর কাটতে চায় না, ঘড়ির কাটা কেন যে বিকেল চারটায় এসে থামে না সেটাই চিন্তা করে। ওদিকে মামনি অফিসে হাফ-ডে করে বাড়ি ফিরে রান্না চাপিয়ে দিয়েছে।
কিছু পরে ব্যাগ হাতে দেবায়ন কে আর বাবাকে বেড়িয়ে আসতে দেখে অনুপমা লাফিয়ে ওঠে। পাশে বাবা তাই মনের উচ্ছ্বাস সামলে রেখে ফুলের তোড়া দেবায়নের হাতে তুলে দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। দেবায়ন ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নেয়। এতদিন পরে অতি পরিচিত হাতের ছোঁয়া, অতি পরিচিত গভীর কণ্ঠস্বর, সব মিলিয়ে মনে হয় গলে পড়ে যাবে অনুপমা।
অনুপমা মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছিস?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “কেমন দেখছিস?”
বুকের ওপরে চিমটি কেটে বলে, “একটু রোগা হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে।”
দেবায়ন ওর মাথার ওপরে নাক ঘষে ফিসফিসিয়ে বলে, “তুই ছিলিস না তাই রোগা হয়ে গেছি। এবারে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।”
দেবায়ন সামনে বসে আর মিস্টার সেনের সাথে গাড়ির অনুপমা পেছনে বসে। পথে যেতে যেতে বিগত এক মাসের হোটেলের গল্প করে। কখন ডালহৌসি, কখন বিন্সার, কখন সোলাং ভ্যালি। এবারে পুনে, ব্যাঙ্গালোর আর উটি যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এই তিন জায়গায় গিয়ে হোটেলের মালিকানা স্বতঃ কেনা হয়ে গেছে। ওদের মালি কিছু দিনের মধ্যে কোলকাতা আসবে কাগজ পত্র ঠিক করে, সই সাবুদ নিতে। দেবায়ন চায় নি, মিস্টার সেন পারমিতাকে নিয়ে হোটেলের কাজে আবার বের হয়, তাই হোটেলের মালিকদের কোলকাতা ডাকা হয়েছে। কয়েক মাস পরে আবার বের হতে হবে, ব্যাঙ্গালোর, পুনে আর উটির উদ্দেশ্যে। তবে এইবারে একটা ভালো কাজ হয়েছে, মানালিতে মিস্টার সেনের এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায়, তিনি নাগগার নামের একটা জায়গায় একটা রিসোর্ট বানাতে চায়, জায়গা তার আছে, আপেল বাগানের বেশ কিছু অংশে তিনি রিসোর্ট বানাতে চান। টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে মিস্টার সেন এবং সেই সাথে মালিকানা। এই হোটেলের কন্সট্রাকশন নিজের কোম্পানি দ্বারা করাবে। এই সব কথাবার্তায় সময় কেটে যায়। অনুপমা আর দেবায়নকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে, গাড়ি মিস্টার সেনকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
এক মাসে পরে ছেলেকে দেখতে পেয়ে দেবশ্রী ভারী খুশি। এর আগে এতদিন বাইরে থাকেনি, হ্যাঁ ছেলে ছেড়ে একবার দিন পনেরোর জন্য দিল্লী যেতে হয়েছিল, কিন্তু দেবায়ন কখন মা ছাড়া অন্যের সাথে বাইরে যায় নি। মানালি থেকে মায়ের জন্য আনা শাল, অনুপমার জন্য আনা একটা ফারের জ্যাকেট, নিজের জন্য আর অঙ্কনের জন্য জ্যাকেট ইত্যাদি উপহার গুলো খুলে দেখায়। দেবশ্রী ভারী খুশি, ছেলেকে পেয়ে, সেই সাথে অনুপমা।
অনুপমা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে রাতে মামনির বাড়িতেই থেকে যাবে। এতদিন পরে কাছে পেয়েছে, তাই এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করতে নারাজ। সারাক্ষণ মন আনচান করে কখন একটু নিবিড় সান্নিধ্য পাবে ওই পেশিবহুল ছাতির ওপরে। ওর আলিঙ্গনে বদ্ধ হয়ে বুকের ওপরে মাথাটা রেখে ঘুমাতে পারবে। রাতের খাওয়ার পরে দেবশ্রী শুতে চলে যায়, অনুপমা আর দেবায়ন সোফায় বসে টিভি দেখে। দেবশ্রী একবার অনুরোধ করেছিল যাতে অনুপমা তাড়াতাড়ি শুতে আসে, মনে মনে জানতো যে অনুপমা দেবায়নের রুমেই রাত কাটাবে।
সোফায় বসে অনুপমার কোমরে হাত জড়িয়ে কাছে ডেকে নেয়। দুই পা মুড়ে, শরীর কুঁকড়ে দেবায়নের বাহু মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। মত্ত সর্পিণীর মতন বিশাল দেহ কাঠাম জড়িয়ে ধরে, নিজেকে উজাড় করে দেয়। দেবায়ন ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে, আকন্ঠ অধর সুধা পান করে। ফুলের মতন নরম দেহটাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায়। বহু দিন অভুক্ত ষাঁড়ের মতন ঝাঁপিয়ে পরে প্রেয়সীর কোমল দেহপল্লবের ওপরে, দুই হাতে পিষে নিঙরে একাকার করে দেয় কোমল দেহ। বুকের রক্ত মিলনেচ্ছুক, বেশি সময় নেয় না দুই কপোত কপোতী নিজেদের কে নিজেদের কাছে উজাড় করে মেলে ধরতে। সারা রাত ধরে ওদের মিলন খেলা চলে, কখন অনুপমা ওপরে, কখন দেবায়ন ওপরে, এইভাবে মিশে যায় প্রেমের খেলায়।
পরের দিন সকালে দুইজনে অফিসে হাজির। এই একমাসে অনেক কিছু বদলে গেছে। বেশ কয়েক জনের নতুন মুখ দেখতে পায়, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে নতুন কয়েকজন ছেলে নিযুক্ত হয়েছে, প্রোডাক্ট ডিজাইনিংয়ে বেশ কয়েকজন মেয়ে নিযুক্ত হয়েছে।
প্রথমেই রূপকের কেবিনের দরজা ঠেলে ঢুকে পরে দেবায়ন, “কি রে শালা কি ব্যাপার। বৌ নেই বাড়া হাতে কি করছিস?”
রূপক থতমত খেয়ে যায়, তারপরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে, “কি রে বাল, কোন হিল্লি দিল্লী করে বেড়াচ্ছিস?”
সেদিনের পর থেকে অনুপমার আর রূপকের মধ্যে একরকম ভাববাচ্যে কথাবার্তা। এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি দুইজনে। দেবায়নের পেছনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আড় চোখে রূপকের দিকে তাকায়, রূপক চোখ নামিয়ে দেয়।
দেবায়ন মজা করে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাল, বৌ নেই কয় জনকে লাগিয়েছিস? অফিসে অনেক নতুন ফুল দেখছি যে?”
রূপকের কান লাল হয়ে যায় কথা শুনে, আমতা আমতা করে বলে, “ধুর বাল, আমি নিজের কাজেই ব্যাস্ত থাকি তাই এদিক ওদিক আর দেখা হয় না।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে যে, দিন তিনেকের মধ্যে শ্রেয়া ফিরে আসবে। এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ওরা পেয়ে গেছে, সেই সাথে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের সাথে কথাবার্তা হয়েছে। দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবার আগে রুপককে বলে যে রাতে তিনজনে মিলে ডিস্কো যাবে। অনেকদিন পরে মোহময়ী, কল্লোলিনী কোলকাতার নিশার সৌন্দর্য আহরণ করতে চায়। অনুপমার বুক থমথম করে ওঠে, কিছুতেই রূপকের সাথে স্বাভাবিক হতে পারছে না।
নিজের কেবিনে ঢুকে, অনুপমাকে আবার জড়িয়ে ধরে। অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, “এই কি করছিস, ছাড় শালা কুত্তা। এটা অফিস।”
দেবায়ন হেসে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “আমার অফিস, আমার বৌ। যা ইচ্ছে তাই করব, যেখানে ইচ্ছে প্রেম করব।”
এমন সময়ে হঠাৎ রূপক এসে কেবিনের দরজা খুলে ঢুকে পরে। ভাবতে পারেনি যে দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে থাকবে, তাই বলে, “তোরা প্রেম করে নে, একটু পরে আসছি তাহলে।”
অনুপমা মাথা নিচু করে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে, ওদিকে দেবায়ন ওকে টেনে ধরে বুকের সাথে মিলিয়ে রূপকের উদ্দেশ্যে বলে, “বাল তুই যখন ওর জন্মদিনের রাতে ওর সাথে করেছিলিস তখন এত লজ্জা পেতিস না। আজকে কি হল?”
কান লাল হয়ে যায় রূপকের, অনুপমার গলা শুকিয়ে যায়। অনুপমার ফ্যাকাসে চেহারা দেবায়নের চোখ এড়াতে পারে না। ওর থুতনি নাড়িয়ে রূপকের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, “তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে? আসার পর থেকে দেখছি তোরা বেশ ছাড়াছাড়া।”
রূপক আমতা আমতা করে বলে, “না না কিছুই হয়নি।”
অনুপমা কি করবে ভেবে পায় না, দেবায়ন ওকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। নিজেকে কোনরকম ছাড়িয়ে গলা নিচু করে বলে, “তুই কাজ কর, আমি এখন আসছি। লাঞ্চের সময়ে কথা হবে।”
অনুপমার চুপচাপ হাভভাবে সন্দেহ হয় দেবায়নের, “কি ব্যাপার পুচ্চি সোনা, তোর আর রূপকের চেহারায় রঙ নেই কেন?”
চোখে চোখ রেখে অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে বলে, “দুইজনে মিলে আমার পেছনে দুষ্টুমি করিস নি তো?”
অনুপমা রূপকের দিকে তাকাতে পারছে না, রূপক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। দেবায়ন বুঝতে পারে আসল ঘটনা আর ওদের চেহারা দেখে হেসে ফেলে, “বাল, এতে এতো চোর পুলিশ খেলার কি আছে।”
রূপকের দিকে চোখ নাচিয়ে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে, কেমন লাগলো আমার পুচ্চিকে?”
কান লাল হয়ে যায় অনুপমার, কোনোরকমে দেবায়নের বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যেতে চেষ্টা করে। রূপকের গলা শুকিয়ে যায়, কিন্তু হাসি টেনে বলে, “কই কিছু হয়নি তো।”
দেবায়ন হেসে বলে, “ধুর বাল, আমি কি বলেছি যে কিছু হয়েছে? তোর আর অনুর চেহারা বলছে যে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু ঠিক জায়গায় মাল পড়েনি তাই দুইজনে দুইজনকে এড়িয়ে যাচ্ছিস।”
অনুপমা অবাক হয়ে যায় দেবায়নের পর্যবেক্ষণ শক্তি দেখে, এই দেবায়ন তো একমাস আগে কোলকাতা ছাড়েনি? তাহলে ওর আলিঙ্গনে যে দেবায়ন বদ্ধ, সেই কি তার পুচ্চু সোনা না অন্য কেউ?
দেবায়ন হেসে রূপককে কাছে ডেকে ফিসফিস করে বলে, “আমরা চারজনে মিলে কোথাও বেড়াতে যাবো। মনের সুখে যেটা অধরা রেখেছিস সেটা পূরণ করে নিস।”
বিকেলের মধ্যে, ডিস্কো-থেকে গিয়ে মদ উড়িয়ে, নেচেকুঁদে মন হালকা করে নেয় দেবায়ন। মনের মধ্যে প্রথমে একটু খচখচ করে উঠেছিল ঠিক, কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে, অনুপমা ছাড়া কত মেয়েদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে, এমন কি অনুপমার মায়ের সাথেও। সেই অনুপমা যদি কিঞ্চিত ভুলবশত ওর বন্ধুর সাথে শারীরিক মিলন করে ফেলে তারজন্যে ওর মনে কিছু করার নেই। রূপক আর অনুপমাও শেষ পর্যন্ত পরস্পরের কাছে স্বাভাবিক হয়ে যায়।
কয়েক দিন পরে ফিরে আসে শ্রেয়া। যে শ্রেয়া কোলকাতা ছেড়েছিল আর বার্লিন জার্মানি থেকে যে শ্রেয়া ফিরে আসে, দুই জনের মধ্যে অনেক তফাৎ লক্ষ্য করা যায়। অনুপমা বুঝতে পারে যে শ্রেয়া কোলকাতা ছেড়েছিল, সে কাজ না করে ফল খেতে বেশি ভালবাসত, সারাদিন শুধু ল্যাপটপে চ্যাটিং করতে ভালবাসত আর ল্যাপটপে সিনেমা দেখত। যে শ্রেয়া ফিরে এসেছে, সে বেশ পরিপক্ক, কাজের ভার নিজের কাঁধে নিতে শিখেছে। একটা ডিলে সই করে এই কদিনে নিজেকে সত্যিকারের ডাইরেক্টর হিসাবে ভাবতে শিখেছে। অনুপমার কেবিনে বসলে অথবা লাঞ্চে একসাথে বসলে সেই পুরানো শ্রেয়াকে দেখা যায় না হলে, অফিসে বাকি সবার কাছে এক নতুন শ্রেয়া। কাজে বুঁদ, প্রোডাক্ট ডিজাইনিং নিয়ে বেশ তৎপর, এমন কি আজকাল আয় ব্যায়ের, একাউন্ট স্টেটমেন্ট মাঝে মাঝে চেয়ে দেখে, মাঝে মাঝে একাউন্টসে গিয়ে বসে কথাবার্তা বলে। শ্রেয়ার এই রুপ দেখে অনুপমার বেশ ভালো লাগে সেই সাথে একটু খটকাও লাগে, কেন শ্রেয়া একাউন্টস নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছে?
একদিন লাঞ্চের সময়ে চারজনে একসাথে বসে সেসময়ে অনুপমা শ্রেয়াকে প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার তোর? আজকাল দেখছি তুই বেশ একাউন্টস দেখছিস?”
শ্রেয়া হেসে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “লেজার বুক দেখা কি আমার জন্য মানা? আমিও একজন ডাইরেক্টর।”
শ্রেয়ার চোখের চমক অনুপমার চোখ এড়ায় না, ওর চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “জার্মানি বেড়িয়ে এলি, আমাদের জন্য কিছু নিয়ে এলি না।”
শ্রেয়া কপট দুঃখ প্রকাশ করে বলে, “ইসসসস একদম ভুলে গেছি, শুধু মাত্র রূপকের কথা মনে ছিল তাই ওর জন্য আনা হয়েছে।”
অনুপমা বলে, “আমাদের ভুলে গেলি না ওখানে গিয়ে অনেক কিছু হয়েছে যেটা লুকাতে চাইছিস?”
শ্রেয়া হাসিতে ফেটে পড়ে, “কি যে বলসি না তুই। যাঃ, শুধু কাজ করে গেছি ওই কয়দিনে।”
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেন দীপঙ্করদা বলছিল যে তুই নাকি ইন্দ্রনীলের সাথে বার্লিন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, হেগ গেছিলিস?”
শ্রেয়া বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “হ্যাঁ গিয়েছিলাম ওই সব জায়গায়। এয়ার বার্লিনের বেশ কয়েকটা অফিসে যেতে হয়েছিল, প্রোডাক্টের জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে যেতে হয়েছিল আমাকে।”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “ঠিক আছে বুঝতে পারছি, তুই এখন বেশ ব্যাস্ত মানুষ। আর যাই হোক, আমাদের ভুলে গেলেও চলবে কিন্তু দেখিস এই দৌড়ে যেন রূপককে ভুলে যাস না?”
শ্রেয়া, রূপকের হাত খানা নিজের হাতের মুঠির মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে, “দশ খানা নয়, পাঁচ খানা নয় আমার এই একখানা সোনামণি, এর কথা কি করে ভুলে যাব।”
শ্রেয়ার এই রুপ বদলের কথা দেবায়নকে জানায়। অনুপমার তীক্ষ্ণ চোখে কিছুই এড়াতে পারে না, ওর দৃষ্টি সবসময়ে শ্রেয়ার ওপরে নিবদ্ধ। অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছে শ্রেয়া, যেন অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। সত্যি কি জানে যে ওদের দুটো কন্সট্রাকশন কোম্পানি আছে, জানে কি যে ওদের ছয় খানা হোটেল আছে? জানলে হয়ত একবার দেবায়ন অথবা ওকে প্রশ্ন করত, কিন্তু করেনি যখন তখন হয়ত জানে না এই সব বিষয়ে। শ্রেয়া ফিরে আসার পরেও শ্রেয়ার মতিগতি দেখে অনুপমা, ওকে অথবা রূপককে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বলেনি।
মার্চে অঙ্কনের হাইয়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা আর তারপরে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্সের পরীক্ষা। পায়েলের কলেজের ফাইনাল জুলাইয়ে। অনুপমার কথা অনুযায়ী, পায়েল অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, বাড়িতে বসে পড়াশুনায় মনোযোগ দিয়েছে। প্রতিদিন অফিস ফেরত, দেবায়ন দেখা করে যায়। ধীরে ধীরে অনেক সহজ হয়ে উঠেছে পায়েল। দেবায়নের সাথে হেসে কথা বলে, অঙ্কনের পরীক্ষার সময়ে ওর সাথে প্রত্যেক দিন কলেজে গেছে। সব মিলিয়ে আগের পায়েল খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছে। আজকাল দেবায়নের সাথে খোশমেজাজে গল্প করে, রাতে বসে দুই বান্ধবী অনেকক্ষণ ধরে কলেজের গল্প করে। মাঝে মাঝে ছাড় পেলেই অঙ্কনের রুমে রাত কাটিয়ে আসে। ঢিলে চুড়িদার ছেড়ে চাপা সালোয়ার কামিজ, অথবা জিন্স টি শার্ট, বাড়িতে থাকলে হাফ প্যান্ট না হলে স্কার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। অনুপমা সব লক্ষ্য করে, মাঝে মাঝেই অঙ্কন ওর প্রেমিকাকে নিভৃতে একা পেলে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, এদিক ওদিকে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়।
অঙ্কন যাদবপুরে ইলেক্ট্রনিক্স টেলিকমিউনিকেশান পায়। বাড়ির সবাই খুশি। সেই খুশিতে একটা বড় পার্টি দেওয়া হয়, পার্টিতে অঙ্কনের বন্ধু বান্ধবী ছাড়াও অনুপমার বন্ধু বান্ধবীদের কেও আমন্ত্রন জানানো হয়। অনেকদিন পরে সঙ্গীতা আর প্রবালের সাথে দেখা হয়, ঋতুপর্ণা আর ধিমানকেও নিমন্ত্রন জানায়, পরাশর আর জারিনাও আসে সেই পার্টিতে। পুরানো পায়েলকে দেখে সবাই আনন্দিত। পায়েল নিজের পুরানো রুপ ফিরে পায়, কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য অঙ্কনের কাছ ছাড়ে না। সেই দৃশ্য দেখে দেবায়ন আর অনুপমার বেশ ভালো লাগে।
এক বিকেলে অনুপমা দেবায়নকে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে, আমার একাউন্টে দুই কোটি টাকা কেউ জমা দিয়েছে। কি ব্যাপার, কোথা থেকে এসেছে ওই টাকা?”
দেবায়ন বলে, “আরে বাবা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওই টাকার কথা। ওই টাকা নিবেদিতা ম্যাডাম দিয়েছে।”
অনুপমা অবাক হয়ে যায় নিবেদিতার কথা শুনে, “নিবেদিতা দিয়েছে মানে?” মুখ হাঁ হয়ে যায় অনুপমার, কি ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারে না।
দেবায়ন হেসে বলে, “ওই টা কন্সট্রাকশনের কাঁচা টাকা। পেছনের তারিখে একটা সফটওয়্যার ডিল দেখাতে হবে ওর কোম্পানির সাথে, তাহলেই ওই টাকা সাদা হয়ে যাবে।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুই ঠিক কি করছিস একটু খুলে বলবি? এই যে বাবার সাথে ঘুরে বেড়াস, এই দুটো কন্সট্রাকশন কোম্পানি এর ওপরে ছয়খানা হোটেল ডিল করছিস, এত সব টাকা কোথা থেকে আসছে?”
দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “তোর সফটওয়্যার কোম্পানিতে কিছু আঁচ লাগবে না সেটা কোথা দিচ্ছি।”
অভিমান হয় অনুপমার, কি লুকাতে চায় দেবায়ন, “সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আমাকে জানাতে দোষ আছে কি?”
দেবায়ন বুঝতে পারে যে প্রেয়সী একটু অভিমান করেছে, সবকিছু খুলে না বলা পর্যন্ত মানিনীর মান ভাঙ্গানো সম্ভব নয় তাই বলতে শুরু করে, “পুচ্চিসোনা, টাকায় টাকা বাড়ে। এই যে মাখন, দই নাড়াতে নাড়াতে অবশেষে দইয়ের ওপরে মাখন ভেসে ওঠে। ঠিক তেমনি টাকা, এদিক থেকে ওদিকে না নাড়ালে টাকা বাড়ে না। কখন এই কস্ট্রাক্সান কোম্পানি থেকে ওই কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে টাকা নিয়ে যেতে হয়। দেখাতে হয় এই কোম্পানি ওকে কাজের অফার দিয়েছে। হোটেলের টাকা কন্সট্রাকশনে ঢুকাতে হয় কখন, দেখাতে হয় যে হোটেলের কন্সট্রাক্সান আমাদের কন্সট্রাকশন কোম্পানি করেছে। এই ভাবে সফটওয়ারে কাজ করাতে হয়। ভুয়ো কাজ দেখিয়ে টাকা ঘুরিয়ে কাঁচা টাকাকে সাদা করাতে হয়, কোনসময়ে কাজ দেখিয়ে নেট প্রফিট কম করিয়ে দেখাতে হয়। এই ভাবে টাকা ঘুরাতে ঘুরাতে, এর লেজার থেকে ওর লেজারে টাকা ঘুরে বেড়ায়। সফটওয়ারে টাকা দেরিতে আসে, কন্সট্রাকশনে তাড়াতাড়ি আসে, হোটেলে মন্দ আয় হয় না। মাঝে মাঝে হোটেলের আয় কম দেখাতে হয়, কেননা হোটেলে অনেক রকমের ট্যাক্স, সেই সব বাঁচানোর জন্য হোটেলের আয় কম দেখাতে হয় আর সেই খানে দেখাতে হয় যে সফটওয়ারে খরচ অথবা এটা ওটা কন্সট্রাকশনে খরচ। কন্সট্রাকশনে প্রচুর কাঁচা টাকা, এদিক ওদিক থেকে চলেই আসে। বুঝেছিস কিছু?”
অনুপমা কতকটা বোঝে, কতকটা বুঝতে পারে না, শুধু দেবায়নের গলা দুইহাতে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই আছিস তো আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য, তাহলে আমার চিন্তা কোথায়?”
দেবায়ন বলে, “সেই জন্য বলি, টাকার চিন্তায় এত মাথা ঘামাস না। তুই সফটওয়্যার নিয়ে থাক। এখন এয়ার বার্লিন, এরপরে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স, তারপরে দ্যাখ ইউরোপে কেন, আফ্রিকায় পা রাখবে আমাদের কোম্পানি।”
চোখ বড় বড় করে দেখে দেবায়নের দিকে, “কি বলছিস তুই?”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ রে, শুধু জার্মানি নয়, মিস্টার হেরজগের সাথে আমার কথা হয়েছে। এই যে আমাদের কন্সট্রাকসানে এত টাকা ঢেলেছে আর তার উপযুক্ত মুনাফা পাচ্ছে তাতে বেশ খুশি মিস্টার হেরজোগ। সাউথ আফ্রিকায় একটা রিয়াল এস্টেটে টাকা লাগাতে চলেছে, সেখানে আমাদের কোম্পানি কাজ করবে।”
অনুপমা বিশ্বাস করতে পারে না দেবায়নের কথা, “কি বলিস? সাউথ আফ্রিকা?”
দেবায়ন মিচকি গালের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ ডারলিং সাউথ আফ্রিকা। তবে সোজাসুজি কাজ নয়, কাজ করবে আমাদের লোক ভিন্ন নামে। ওই প্রোজেক্টের আর্কিটেকচার, ডিজাইন, ইনটেরিওর সব আমাদের লোক করবে, বেনামে করবে আর বেনামে টাকা আসবে। ইউরোতে পেমেন্ট হবে, ডলারের চেয়ে বেশি আয় হবে তাতে।”
অনুপমা বলে, “আমাদের কোম্পানি বাইরে যাবে?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমাদের মানে নিবেদিতার কোম্পানির লোক বাইরে যাবে। ওই কোম্পানিতে টাকা আনাতে চাই আমি। কিছু কাজ আমাদের কোম্পানিতে আসবে, না হলে মিস্টার হেরজোগের সন্দেহ হয়ে যাবে। সেটা হলে আমি দেখাতে পারব যে আমাদের নিজের কোম্পানিতে বিশেষ কাজ হয়নি আয় হয়নি আর সেই সাথে মিস্টার হেরজোগ যে পরিমান লাভ এইবারে আশা করেছেন সেই পরিমান তাকে দেওয়া হবে না। আমাদের টাকা উপার্জন কিছু উপায়ে করতে হবেতোনাকি?”
অনুপমা মাথা চুলকিয়ে বলে, “এই সবের প্যাঁচ ঘোঁচ কিছুই বুঝতে পারছি না।”
অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে দেবায়ন দুষ্টু হেসে বলে, “পুচ্চি ডারলিং, তোকে এত মাথা ঘামাতে হবে না, তুই তোর সফটওয়্যার ফার্ম নিয়ে থাক।”
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 02-10-2020, 03:05 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)