02-10-2020, 03:02 PM
চতুর্বিংশ পর্ব (#07)
ওদের আওয়াজ পেয়ে পারমিতা নিচে নেমে আসে।
পারমিতা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন কাটালি?”
অনুপমা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দারুন।”
পারমিতা বলে, “শ্রেয়া ড্রিঙ্ক করে একদম বুঁদ হয়ে গেছে দেখছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ, অনেকদিন পরে ড্রিঙ্ক করেছে তাই আর হুঁশ নেই।”
নিজের রুমে ঢুকে অনুপমা দেখে যে, পায়েল নেই। প্রথমে একটু অবাক হয়ে যায়, তারপরে মা’কে জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা।
পারমিতা অঙ্কনের রুমের দিকে দেখিয়ে মিচকি হেসে বলে, “আমি রুমে ঢুকে যাওয়ার পরে পায়েল চুপিচুপি তোর ভাইয়ের রুমে গেছে।”
অনুপমা চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জানতে আর কিছু বলো নি?”
পারমিতা হেসে ফেলে মেয়ের কথা শুনে, “আশা করি এই বাড়িতে সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেছে। এই বাড়ির হবু বৌমা তো, এই টুকু ছাড় পেতেই পারে।”
মায়ের এই উদার রুপ দেখে খুব ভালো লাগে, পারমিতার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, “তুমি সত্যি অনেক বদলে গেছ।”
পারমিতা মেয়ের গাল টিপে বলে, “আর আদিখ্যেতা দেখাস না, যা রুমে যা। তোর ফোন না পেয়ে হ্যান্ডসাম ফোন করেছিল আমাকে।”
অনুপমার মাথায় হাত, “ইসসসস…… একদম ভুলে গেছি। এখুনি ফোন করছি ওকে।”
পারমিতা বলে, “এখন রাত তিনটে বাজে এখন আর করতে হবে না। তোর বাবা বিন্সার ফিরে এসেছে সেটা জানাতে ফোন করেছিল। কাল সকালে ওরা দেরাদুন যাবে।”
অনুপমা, “আচ্ছা, ওকে গুড নাইট।”
তারপরে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে অনুপমা। পায়েল নেই, একটু খালি খালি মনে হয় রুম, তাও ভালো লাগে এই ভেবে যে পায়েল নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে।
সকালে খাবার টেবিলে সবার সাথে দেখা। পায়েল কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি, নিচে নেমে শ্রেয়া আর রূপক কে দেখে অবাক হয়ে যায়। শ্রেয়া জানায় যে গত রাতে ওরা সবাই মিলে ডিস্কো গিয়েছিল, পায়েল অনুপমার দিকে তাকিয়ে একবার দেখে। এমন ভাব যেন কেন ওকে বলা হয় নি। পায়েলের খোশ মেজাজ দেখে সবার বেশ ভালো লাগে। খাবার টেবিলে সবাই বসে, একথা সে কথার পরে অনুপমার দিকে রূপক চোখ টিপে ইশারা করে জার্মানির কথা বলার জন্য।
স্যান্ডউইচের ওপরে মেয়নিজ মাখাতে মাখাতে শ্রেয়া রূপককে জিজ্ঞেস করে, “তোমার ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে? আগামী সপ্তাহে আমরা যাচ্ছি।”
রূপক অনুপমার দিকে তাকায়, আর অনুপমা সেই প্রশ্নের উত্তরে বলে, “তুই কাল রাতে কি করেছিস তোর মনে আছে?”
শ্রেয়া হাজার প্রশ্ন নিয়ে অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা বলে, “গত রাতে তুই আর রূপক বেশ জড়াজড়ি করে নেচেছিস।”
শ্রেয়া রূপককে একটু কাঁধের ঠ্যালা দিয়ে বলে, “সত্যি এর চেয়ে বেশি কিছু করনি তো?”
রূপক কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না। অনুপমা ওকে বলে, “তোর পাসপোর্ট কাল মনীষাকে দিয়ে দিস। ইতিমধ্যে এয়ার বার্লিনের থেকে ইনভিটেসান চলে আসার কথা। ওটা চলে এসে ভিসা পেতে অসুবিধে হবে না।”
জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা বিয়ে কবে করছিস?”
রূপক আর শ্রেয়া দুইজনে ওর প্রশ্নে অবাক হয়ে যায়। অনুপমা হেসে বলে, “এত অবাক হওয়ার কি আছে। একদিন বিয়ে করবি, সেটাই জানতে চাইছি কবে করবি।”
রূপক, “আমাদের বিয়ে আর……”
অনুপমা ওকে চোখ টিপে চুপ করতে বলে আর শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা হানিমুনে কোথায় যেতে চাস?”
শ্রেয়া রূপকের হাত খানা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, “যেখানে নিয়ে যেতে চাইবে সেখানে যেতে রাজি আমি।”
অনুপমা দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলে, “লুক্রেন, সুইস আল্পস না মরিশাস না রোম? কোথায় যেতে চাস?”
শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কেন কেন, তুই কি আমাদের হানিমুন ফাইন্যান্স করবি নাকি?”
অনুপমা বলে, “প্লেনের বিজনেস ক্লাসের ভাড়া দিতে পারি।”
শ্রেয়া বলে, “সেটাও অনেক। যাই হোক, তোর মাথায় অন্য কিছু একটা চলছে।”
ধরা পরে গেছে অনুপমা, তাই হেসে বলে, “অফিসে অনেক কাজের চাপ।”
শ্রেয়া বলে, “হ্যাঁ অনেক কাজের চাপ, আমার শ্বাস নেওয়ার সময় নেই।”
অনুপমা বলে, “সবার কাঁধে অনেক কাজের চাপ। তোকে অনেকদিন পরে কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে দেখে বড় ভালো লাগছে। তুই এক কাজ কর, তুই আর ইন্দ্রনীল আগে জার্মানি চলে যা।”
শ্রেয়া অবাক চোখে প্রশ্ন করে, “মানে?”
অনুপমা বলে, “দ্যাখ, আগে তুই ওখানে গিয়ে প্রোডাক্ট নিয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু কর। ডিলের ব্যাপারে দীপঙ্করদা সব কাগজ তৈরি করে পৌঁছে যাবে আর টেকনিকালের জন্য সুপর্ণা ম্যাডাম পৌঁছে যাবে। তুই ততদিন ওখানে একটু ঘুরে বেড়িয়ে নিতে পারবি। ডিল ফাইনাল করতে তোর সাইন চাই, সব কিছু ফাইনাল করে সবাইকে নিয়ে ফিরে আসিস।”
শ্রেয়া রূপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এই প্রোজেক্টে তুমি নেই?”
রূপক মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “না সোনা, এই প্রোজেক্ট আমার নয়। এটার জন্য যে পরিমানে অভিজ্ঞতা দরকার সেটা আমার নেই। এই প্রোজেক্ট সুপর্ণা ম্যাডামের অধীনে হবে।”
শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “তুমি যাবে কি যাবে না, ঠিক করে বল।”
রূপক আমতা আমতা করে বলে, “না ডার্লিং, আমি যেতে পারছি না।”
শ্রেয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “তাহলে আমি যাচ্ছি না, প্রোডাক্টের জন্য আমি নিরঞ্জনকে পাঠিয়ে দেব, আর ডিল সাইন করার জন্য অনু চলে যাবে।”
অনুপমা হেসে ফেলে শ্রেয়ার অবস্থা দেখে, “এই পাগলি মেয়ে, মাত্র সাত দিন। শোন এক কথা, এই প্রোজেক্টের ওপরে আমাদের অনেক কিছু নির্ভর করছে, তুই এই কয়দিন ডুবে ছিলিস ডিজাইনিংয়ে, তুই ওদের আইটি ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলেছিস। এই সময়ে তুই না গেলে পুরো ডিজাইন কেঁচিয়ে যাবে আর শেষ পর্যন্ত আমাদের হাত থেকে প্রোজেক্ট চলে যাবে। তুই কি চাস যে আমরা শুধু ওয়েবসাইট নিয়ে পরে থাকি?”
শ্রেয়া চুপচাপ একবার অনুপমার দিকে তাকায় একবার রূপকের দিকে তাকায়। অনুপমা বলে, “কি ভাবছিস? তোকে আমি চারশো ইউরো এক্সট্রা দেবো, মন খুলে শপিং করিস।”
কেনাকাটার আর টাকার অঙ্ক শুনে শ্রেয়ার চোখ চকচক করে ওঠে, মাথা নেড়ে খুশি হয়ে জানিয়ে দেয় যে যেতে রাজি আছে। রূপক বুঝিয়ে বলে যে কাজের চাপের জন্য যেতে পারবে না। শ্রেয়া জানিয়ে দেয় যে একাই যাবে। এত ছোটো বয়সে, এত বড় কাজের দায়িত্ত পেয়ে শ্রেয়া খুশি, নিজেকে বেশ বড় বড় মনে হয়।
কিছুদিনের মধ্যে এয়ার বার্লিনের কাছ থেকে আমন্ত্রন পত্র চলে আসে আর সবার ভিজা তৈরি হয়ে যায় সময় মতন। শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল কয়েক দিন পরে ফ্রাঙ্কফুর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আর তার কিছুদিন পরে সব কাগজ পত্র তৈরি করে দীপঙ্করদা আর সুপর্ণা ম্যাডাম ফ্রাঙ্কফারটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শ্রেয়া চলে যাওয়ার পরে অফিসে বেশ ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় অনুপমার। দেবায়ন নেই, শ্রেয়া নেই, পায়েল কোনদিন আসে, কোনদিন আসেনা। অনুপমা পায়েলকে অফিসে আসতে বিশেষ জোর করে না, কারন এই বছর ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। বেশ কয়েক দিন কেটে যায় এই ভাবে।
সেদিন বিকেলে অনুপমা, কোম্পানির ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখছিল। একাউন্টে অতিরিক্ত দুই কোটি টাকা দেখতে পেয়ে ভাবতে বসে যে কোথা থেকে এলো এতো টাকা, অঙ্ক মেলে না কিছুতেই। ওদিকে দেবায়নের আসতে এখন দিন তিনেক দেরি। ডালহৌসি গেছে বাবার সাথে, আবার ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে আরো কিছু কাজ বাকি পড়েছিল, সেই সব সারতে সারতে রাত হয়ে যায়। ফোন করে মামনিকে বলে দেয় যে রাতে খেতে যেতে পারবে না। মন পড়ে থাকে দেবায়নের কাছে, তিন দিন পরে ফিরবে, তিন দিন যেন তিন বছর মনে হয়। হৃদয় বাগ মানে না, মিলনের কথা চিন্তা করলেই শরীর চনমন হয়ে ওঠে। কঠিন বাহুপাশে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রান ছটফট করে ওঠে। ভাবতে ভাবতেই সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে, জানু মাঝে শিরশির শুরু হয়ে যায়। কফি কাপে চুমুক দিয়ে ওদের পুরানো ছবি খুলে বসে পড়ে।
রাত আটটা বাজে, ব্যাগ গুছিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করে বলে গাড়ি বের করতে। কেবিন থেকে বেড়িয়ে দেখে অফিস খালি, সার্ভার অপারেশান টিমের কিছু ছেলেরা শুধু রয়েছে। করিডোরের এক কোনায় রুপকের কেবিনে তখন লাইট জ্বালা দেখে থমকে দাঁড়ায়। এত রাতে এখন বাড়ি যায়নি ছেলেটা, কি করছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে যে রূপকের হাতে একটা গ্লাস আর ল্যাপটপ খুলে বসে।
অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, বাড়ি যাবি না?”
রূপক খুব মনোযোগ সহকারে প্রোগ্রামিংয়ে ব্যাস্ত ছিল, হঠাৎ অনুপমার গলা পেয়ে থতমত খেয়ে যায়। মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, “না মানে এই যাচ্ছি।”
রূপকের চেহারা বেশ ক্লান্ত, মাথার চুল উস্কখুস্ক দেখে অনুপমার মন কেমন করে ওঠে। শ্রেয়া থাকলে হয়ত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিত অথবা ওকে সান্ত্বনা দিত। এদিকে দেবায়ন নেই যে ওকে শান্ত করে ওদিকে শ্রেয়া নেই যে রূপককে শান্ত করে।
অনুপমা কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রূপকের পেছনে দাঁড়িয়ে বলে, “তোকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে, কি হয়েছে?”
রূপক হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “কিছু না, এমনি। এই কাজের চাপ আর কি।”
অনুপমা ওর মাথার চুলে আঙুল ডুবিয়ে টিপে দিতে দিতে বলে, “অফিসে হুইস্কি খাচ্ছিস?”
রূপক হেসে ফেলে, “এখন আমার সময়, অফিস ছুটির পরেই খাচ্ছি। যাই হোক তোর এত দেরি কেন?”
অনুপমা ওর গ্লাস থেকে একটা চুমুক দিয়ে বলে, “কিছু না, একটু কাজ বাকি ছিল, তাই দেরি হয়ে গেল।”
রূপক ল্যাপটপ ছেড়ে, গ্লাসে আরও একটু হুইস্কি ঢেলে নেয়। অনুপমার পাতলা নরম আঙুল ওর মাথার চুলের মধ্যে বিলি কেটে আরাম দেয়। আরামে রূপকের চোখ বুজে আসে। অনুপমা ঝুঁকে পরে রূপকের কাঁধের ওপরে, দুই হাতে দিয়ে ওর কাঁধের পেশি টিপতে শুরু করে। আরামে শরীর এলিয়ে চেয়ার হেলান দিয়ে বসে রূপক। কাঁধে মালিশের মাঝে মাঝে হুইস্কির গ্লাসে আরও দুটো চুমুক দেয় অনুপমা। রক্তে নেশা লাগতেই, রক্ত চনমন করে ওঠে অনুপমার। অনুপমা রূপকের পিঠের ওপরে ঝুঁকে পরে, কাঁধে মাথায় ওর রেশমি চুলে ঢেকে যায়। রূপক মাথা পেছনে হেলিয়ে দেয় আর অনুপমার মুখ ওর মুখের সামনে এসে যায়। চোখের সাথে চোখের তারা নিবদ্ধ হয়ে যায় হঠাৎ করে।
অনুপমা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “কাকে ভাবছিস তুই?”
রূপক হাত উঁচু করে অনুপমার গলা জড়িয়ে নিজের মুখের ওপরে টেনে নামিয়ে দিয়ে বলে, “এখন অন্য কারুর কথা চিন্তা করছি না।”
রূপকের নাকে ভেসে আসে অনুপমার শরীরের মনমাতানো গন্ধ। রক্তে লাগে ঢেউ, ঠোঁট খুলে আলতো করে অনুপমার থুতনিতে একটা ছোটো চুমু খায়।
ভেজা ঠোঁটের পরশে অনুপমার শুকনো শরীর চনমনে হয়ে ওঠে। নরম স্তন চেপে ধরে রূপকের ঘাড়ের ওপরে। রূপক হাত পেছনে নিয়ে এসে অনুপমার কোমর জড়িয়ে ধরে। অনুপমা ঝুঁকে পরে ওর কপালে, নাকের ওপরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
রূপক ওর হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বলে, “বড় একা লাগছে একটু জড়িয়ে ধরবি?”
অনুপমার চোখ আধাবোজা হয়ে দুই হাত মেলে ওকে আহ্বান জানায়, “চলে আয়।”
রূপক দাঁড়িয়ে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে। অনেকদিনের অভুক্ত শরীর অনুপমার, কঠিন বাহুপাশে নিজেকে এলিয়ে দিতে বড় ভালো লাগে। রূপক দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে অনুপমাকে, ঘাড় গুঁজে দেয় অনুপমার ঘাড়ে, নরম গালের ওপরে কর্কশ গাল থেকে কামাগ্নির স্ফুলিঙ্গ ঠিকরে বের হয়। রূপকের হাত ধীরে ধীরে অনুপমার পিঠের ওপরে আদর করে বেড়ায়। অনুপমা দুই হাতে রূপককে জড়িয়ে তৃষ্ণার্ত শরীরের তেষ্টা মেটাতে উন্মুখ হয়ে ওঠে। রূপকের ঠোঁট অনুপমার গাল ছুঁয়ে, ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়। আবেগে দুই চোখ বন্ধ হয়ে যায় অনুপমার, ঠোঁট খুলে উষ্ণ শ্বাসে রূপকের মুখমন্ডল ভরিয়ে দেয়। দুই হাতে আঁজলা করে ধরে অনুপমার মুখ আর ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট মিলিয়ে অধর সুধা আকণ্ঠ পান করে। দুই বিরহ কাতর নরনারীর শরীরে নেশার আগুনের সাথে সাথে মিলনের আগুন জ্বলে ওঠে।
রূপকের হাত দেহের মাঝে নেমে এসে জামার ওপরে দিয়েই অনুপমার এক পীনোন্নত স্তন মুঠোর মধ্যে নিয়ে আলতো চাপ দিয়ে আদর করতে শুরু করে দেয়। অনুপমার শরীর জ্বলে ওঠে, চনমন করে ওঠে সারা গায়ের রক্ত। বুক উঁচু করে রূপকের হাতের মধ্যে নিজের স্তন ঠেলে দেয়। রূপকের এক হাত নেমে আসে, জিন্সে ঢাকা পাছার ওপরে। অনুপমার এক স্তন ওর হাতের মুঠোয় অন্য স্তনের ওপরে রূপকের মুখ। এক হাতে নরম পাছা টিপে আদর করে দেয়। অনুপমার শ্বাসে লাগে কামনার আগুন, মাথা পেছনে হেলিয়ে সুখের সাগরে ভেসে যেতে প্রস্তুত। জানুসন্ধি মাঝে তিরতির করে রস বইতে শুরু করে দিয়েছে।
অনুপমার হাত নেমে আসে রূপকের প্যান্টের সামনে, কঠিন লিঙ্গের ওপরে। কঠিন লিঙ্গের ওপরে হাত ছোঁয়াতেই শরীর কেঁপে ওঠে অনুপমার। রূপক ওকে ঠেলে টেবিলের ওপরে বসিয়ে দেয়। দুই জানু মেলে দিয়ে জানু মাঝে দাঁড়িয়ে পরে রূপক। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলে উন্মাদের মতন পরস্পরকে চুম্বন করতে থাকে। সেই সাথে রূপকের হাত নেমে আসে জিন্সে ঢাকা জানুসন্ধির ওপরে। জিন্সের ওপর দিয়েই অনুপমার যোনিদেশে হাত চেপে ধরে।
যোনি বেদীর ওপরে হাতের চাপ অনুভব করতেই কেঁপে ওঠে তৃষ্ণার্ত রমণী। পরনের প্যান্টি যোনি রসে ভিজে, যোনি বেদীর ওপরে লেপটে গেছে। হঠাৎ করেই নেশা ঘোর কেটে যায়, রূপকের লিঙ্গের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
রূপকের হাত চেপে ধরে মাথা নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে রূপকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “না রূপক, আমাদের করা উচিত নয়।”
রূপক বুঝতে পারে নেশার ঝোঁকে কি করতে চলেছিল। বিদ্যুৎস্পর্শ করার মতন এক ঝটকায় অনুপমাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “সরি অনুপমা, সরি। মদের ঝোঁকে…… সত্যি বলছি আমি দুঃখিত। প্লিজ কিছু মনে করিস না।”
অনুপমার চোখ মুখ লাল, মাথার চুল অবিন্যাস্ত, পরনের প্যান্টি ভিজে উঠেছে তাও নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। রূপকের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। দুইজনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
অনুপমা ল্যাপটপের ব্যাগ উঠিয়ে, কেবিনের দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকে পরে নিজেকে ঠিক করার জন্য। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করে, যা করতে যাচ্ছিল, সেটা কি ঠিক না ভুল? এটা কি দেবায়নের সাথে প্রতারণা? দেবায়ন ওর পেছনে অনেকের সাথে যৌন সঙ্গম করেছে, এবং পরে বলেছে। অনুপমা সব মেনে নিয়েছে, কিন্তু ওর যদি পা ফস্কাত তাহলে কি দেবায়ন মেনে নিতে পারত? জানে না এর উত্তর।
অফিস থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে রূপকের কেবিনে টোকা মেরে নিচু কণ্ঠে বলে, “বেশি হুইস্কি খাস না আর তারাতারিও বাড়ি ফিরিস। বাইক চালাতে না পারলে একটা ফোন করে দিস, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব।”
দরজা খুলে দেখল না যে, রূপক মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে।
এর পরের বেশ কয়েকদিন দুইজনের মধ্যে কোন কথা নেই, সামনে এলেই পরস্পরকে এড়িয়ে যায়। এই আচরন অবশ্য কারুর চোখে ঠিক ধরা পরে না। অফিসের বাকি কর্মীরা উচ্চ পদস্থদের ব্যাপারে বিশেষ নাক গলায় না। অনুপমা এই ঘটনা দেবায়নের কাছ থেকে লুকিয়ে যায়।
ওদের আওয়াজ পেয়ে পারমিতা নিচে নেমে আসে।
পারমিতা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন কাটালি?”
অনুপমা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “দারুন।”
পারমিতা বলে, “শ্রেয়া ড্রিঙ্ক করে একদম বুঁদ হয়ে গেছে দেখছি।”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ, অনেকদিন পরে ড্রিঙ্ক করেছে তাই আর হুঁশ নেই।”
নিজের রুমে ঢুকে অনুপমা দেখে যে, পায়েল নেই। প্রথমে একটু অবাক হয়ে যায়, তারপরে মা’কে জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা।
পারমিতা অঙ্কনের রুমের দিকে দেখিয়ে মিচকি হেসে বলে, “আমি রুমে ঢুকে যাওয়ার পরে পায়েল চুপিচুপি তোর ভাইয়ের রুমে গেছে।”
অনুপমা চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জানতে আর কিছু বলো নি?”
পারমিতা হেসে ফেলে মেয়ের কথা শুনে, “আশা করি এই বাড়িতে সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেছে। এই বাড়ির হবু বৌমা তো, এই টুকু ছাড় পেতেই পারে।”
মায়ের এই উদার রুপ দেখে খুব ভালো লাগে, পারমিতার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, “তুমি সত্যি অনেক বদলে গেছ।”
পারমিতা মেয়ের গাল টিপে বলে, “আর আদিখ্যেতা দেখাস না, যা রুমে যা। তোর ফোন না পেয়ে হ্যান্ডসাম ফোন করেছিল আমাকে।”
অনুপমার মাথায় হাত, “ইসসসস…… একদম ভুলে গেছি। এখুনি ফোন করছি ওকে।”
পারমিতা বলে, “এখন রাত তিনটে বাজে এখন আর করতে হবে না। তোর বাবা বিন্সার ফিরে এসেছে সেটা জানাতে ফোন করেছিল। কাল সকালে ওরা দেরাদুন যাবে।”
অনুপমা, “আচ্ছা, ওকে গুড নাইট।”
তারপরে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে অনুপমা। পায়েল নেই, একটু খালি খালি মনে হয় রুম, তাও ভালো লাগে এই ভেবে যে পায়েল নিজের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করছে।
সকালে খাবার টেবিলে সবার সাথে দেখা। পায়েল কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি, নিচে নেমে শ্রেয়া আর রূপক কে দেখে অবাক হয়ে যায়। শ্রেয়া জানায় যে গত রাতে ওরা সবাই মিলে ডিস্কো গিয়েছিল, পায়েল অনুপমার দিকে তাকিয়ে একবার দেখে। এমন ভাব যেন কেন ওকে বলা হয় নি। পায়েলের খোশ মেজাজ দেখে সবার বেশ ভালো লাগে। খাবার টেবিলে সবাই বসে, একথা সে কথার পরে অনুপমার দিকে রূপক চোখ টিপে ইশারা করে জার্মানির কথা বলার জন্য।
স্যান্ডউইচের ওপরে মেয়নিজ মাখাতে মাখাতে শ্রেয়া রূপককে জিজ্ঞেস করে, “তোমার ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে? আগামী সপ্তাহে আমরা যাচ্ছি।”
রূপক অনুপমার দিকে তাকায়, আর অনুপমা সেই প্রশ্নের উত্তরে বলে, “তুই কাল রাতে কি করেছিস তোর মনে আছে?”
শ্রেয়া হাজার প্রশ্ন নিয়ে অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা বলে, “গত রাতে তুই আর রূপক বেশ জড়াজড়ি করে নেচেছিস।”
শ্রেয়া রূপককে একটু কাঁধের ঠ্যালা দিয়ে বলে, “সত্যি এর চেয়ে বেশি কিছু করনি তো?”
রূপক কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না। অনুপমা ওকে বলে, “তোর পাসপোর্ট কাল মনীষাকে দিয়ে দিস। ইতিমধ্যে এয়ার বার্লিনের থেকে ইনভিটেসান চলে আসার কথা। ওটা চলে এসে ভিসা পেতে অসুবিধে হবে না।”
জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা বিয়ে কবে করছিস?”
রূপক আর শ্রেয়া দুইজনে ওর প্রশ্নে অবাক হয়ে যায়। অনুপমা হেসে বলে, “এত অবাক হওয়ার কি আছে। একদিন বিয়ে করবি, সেটাই জানতে চাইছি কবে করবি।”
রূপক, “আমাদের বিয়ে আর……”
অনুপমা ওকে চোখ টিপে চুপ করতে বলে আর শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা হানিমুনে কোথায় যেতে চাস?”
শ্রেয়া রূপকের হাত খানা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, “যেখানে নিয়ে যেতে চাইবে সেখানে যেতে রাজি আমি।”
অনুপমা দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলে, “লুক্রেন, সুইস আল্পস না মরিশাস না রোম? কোথায় যেতে চাস?”
শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কেন কেন, তুই কি আমাদের হানিমুন ফাইন্যান্স করবি নাকি?”
অনুপমা বলে, “প্লেনের বিজনেস ক্লাসের ভাড়া দিতে পারি।”
শ্রেয়া বলে, “সেটাও অনেক। যাই হোক, তোর মাথায় অন্য কিছু একটা চলছে।”
ধরা পরে গেছে অনুপমা, তাই হেসে বলে, “অফিসে অনেক কাজের চাপ।”
শ্রেয়া বলে, “হ্যাঁ অনেক কাজের চাপ, আমার শ্বাস নেওয়ার সময় নেই।”
অনুপমা বলে, “সবার কাঁধে অনেক কাজের চাপ। তোকে অনেকদিন পরে কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে দেখে বড় ভালো লাগছে। তুই এক কাজ কর, তুই আর ইন্দ্রনীল আগে জার্মানি চলে যা।”
শ্রেয়া অবাক চোখে প্রশ্ন করে, “মানে?”
অনুপমা বলে, “দ্যাখ, আগে তুই ওখানে গিয়ে প্রোডাক্ট নিয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু কর। ডিলের ব্যাপারে দীপঙ্করদা সব কাগজ তৈরি করে পৌঁছে যাবে আর টেকনিকালের জন্য সুপর্ণা ম্যাডাম পৌঁছে যাবে। তুই ততদিন ওখানে একটু ঘুরে বেড়িয়ে নিতে পারবি। ডিল ফাইনাল করতে তোর সাইন চাই, সব কিছু ফাইনাল করে সবাইকে নিয়ে ফিরে আসিস।”
শ্রেয়া রূপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এই প্রোজেক্টে তুমি নেই?”
রূপক মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “না সোনা, এই প্রোজেক্ট আমার নয়। এটার জন্য যে পরিমানে অভিজ্ঞতা দরকার সেটা আমার নেই। এই প্রোজেক্ট সুপর্ণা ম্যাডামের অধীনে হবে।”
শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “তুমি যাবে কি যাবে না, ঠিক করে বল।”
রূপক আমতা আমতা করে বলে, “না ডার্লিং, আমি যেতে পারছি না।”
শ্রেয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “তাহলে আমি যাচ্ছি না, প্রোডাক্টের জন্য আমি নিরঞ্জনকে পাঠিয়ে দেব, আর ডিল সাইন করার জন্য অনু চলে যাবে।”
অনুপমা হেসে ফেলে শ্রেয়ার অবস্থা দেখে, “এই পাগলি মেয়ে, মাত্র সাত দিন। শোন এক কথা, এই প্রোজেক্টের ওপরে আমাদের অনেক কিছু নির্ভর করছে, তুই এই কয়দিন ডুবে ছিলিস ডিজাইনিংয়ে, তুই ওদের আইটি ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলেছিস। এই সময়ে তুই না গেলে পুরো ডিজাইন কেঁচিয়ে যাবে আর শেষ পর্যন্ত আমাদের হাত থেকে প্রোজেক্ট চলে যাবে। তুই কি চাস যে আমরা শুধু ওয়েবসাইট নিয়ে পরে থাকি?”
শ্রেয়া চুপচাপ একবার অনুপমার দিকে তাকায় একবার রূপকের দিকে তাকায়। অনুপমা বলে, “কি ভাবছিস? তোকে আমি চারশো ইউরো এক্সট্রা দেবো, মন খুলে শপিং করিস।”
কেনাকাটার আর টাকার অঙ্ক শুনে শ্রেয়ার চোখ চকচক করে ওঠে, মাথা নেড়ে খুশি হয়ে জানিয়ে দেয় যে যেতে রাজি আছে। রূপক বুঝিয়ে বলে যে কাজের চাপের জন্য যেতে পারবে না। শ্রেয়া জানিয়ে দেয় যে একাই যাবে। এত ছোটো বয়সে, এত বড় কাজের দায়িত্ত পেয়ে শ্রেয়া খুশি, নিজেকে বেশ বড় বড় মনে হয়।
কিছুদিনের মধ্যে এয়ার বার্লিনের কাছ থেকে আমন্ত্রন পত্র চলে আসে আর সবার ভিজা তৈরি হয়ে যায় সময় মতন। শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল কয়েক দিন পরে ফ্রাঙ্কফুর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আর তার কিছুদিন পরে সব কাগজ পত্র তৈরি করে দীপঙ্করদা আর সুপর্ণা ম্যাডাম ফ্রাঙ্কফারটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শ্রেয়া চলে যাওয়ার পরে অফিসে বেশ ফাঁকা ফাঁকা মনে হয় অনুপমার। দেবায়ন নেই, শ্রেয়া নেই, পায়েল কোনদিন আসে, কোনদিন আসেনা। অনুপমা পায়েলকে অফিসে আসতে বিশেষ জোর করে না, কারন এই বছর ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। বেশ কয়েক দিন কেটে যায় এই ভাবে।
সেদিন বিকেলে অনুপমা, কোম্পানির ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখছিল। একাউন্টে অতিরিক্ত দুই কোটি টাকা দেখতে পেয়ে ভাবতে বসে যে কোথা থেকে এলো এতো টাকা, অঙ্ক মেলে না কিছুতেই। ওদিকে দেবায়নের আসতে এখন দিন তিনেক দেরি। ডালহৌসি গেছে বাবার সাথে, আবার ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে আরো কিছু কাজ বাকি পড়েছিল, সেই সব সারতে সারতে রাত হয়ে যায়। ফোন করে মামনিকে বলে দেয় যে রাতে খেতে যেতে পারবে না। মন পড়ে থাকে দেবায়নের কাছে, তিন দিন পরে ফিরবে, তিন দিন যেন তিন বছর মনে হয়। হৃদয় বাগ মানে না, মিলনের কথা চিন্তা করলেই শরীর চনমন হয়ে ওঠে। কঠিন বাহুপাশে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রান ছটফট করে ওঠে। ভাবতে ভাবতেই সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে, জানু মাঝে শিরশির শুরু হয়ে যায়। কফি কাপে চুমুক দিয়ে ওদের পুরানো ছবি খুলে বসে পড়ে।
রাত আটটা বাজে, ব্যাগ গুছিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করে বলে গাড়ি বের করতে। কেবিন থেকে বেড়িয়ে দেখে অফিস খালি, সার্ভার অপারেশান টিমের কিছু ছেলেরা শুধু রয়েছে। করিডোরের এক কোনায় রুপকের কেবিনে তখন লাইট জ্বালা দেখে থমকে দাঁড়ায়। এত রাতে এখন বাড়ি যায়নি ছেলেটা, কি করছে। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে যে রূপকের হাতে একটা গ্লাস আর ল্যাপটপ খুলে বসে।
অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, বাড়ি যাবি না?”
রূপক খুব মনোযোগ সহকারে প্রোগ্রামিংয়ে ব্যাস্ত ছিল, হঠাৎ অনুপমার গলা পেয়ে থতমত খেয়ে যায়। মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, “না মানে এই যাচ্ছি।”
রূপকের চেহারা বেশ ক্লান্ত, মাথার চুল উস্কখুস্ক দেখে অনুপমার মন কেমন করে ওঠে। শ্রেয়া থাকলে হয়ত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিত অথবা ওকে সান্ত্বনা দিত। এদিকে দেবায়ন নেই যে ওকে শান্ত করে ওদিকে শ্রেয়া নেই যে রূপককে শান্ত করে।
অনুপমা কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রূপকের পেছনে দাঁড়িয়ে বলে, “তোকে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে, কি হয়েছে?”
রূপক হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “কিছু না, এমনি। এই কাজের চাপ আর কি।”
অনুপমা ওর মাথার চুলে আঙুল ডুবিয়ে টিপে দিতে দিতে বলে, “অফিসে হুইস্কি খাচ্ছিস?”
রূপক হেসে ফেলে, “এখন আমার সময়, অফিস ছুটির পরেই খাচ্ছি। যাই হোক তোর এত দেরি কেন?”
অনুপমা ওর গ্লাস থেকে একটা চুমুক দিয়ে বলে, “কিছু না, একটু কাজ বাকি ছিল, তাই দেরি হয়ে গেল।”
রূপক ল্যাপটপ ছেড়ে, গ্লাসে আরও একটু হুইস্কি ঢেলে নেয়। অনুপমার পাতলা নরম আঙুল ওর মাথার চুলের মধ্যে বিলি কেটে আরাম দেয়। আরামে রূপকের চোখ বুজে আসে। অনুপমা ঝুঁকে পরে রূপকের কাঁধের ওপরে, দুই হাতে দিয়ে ওর কাঁধের পেশি টিপতে শুরু করে। আরামে শরীর এলিয়ে চেয়ার হেলান দিয়ে বসে রূপক। কাঁধে মালিশের মাঝে মাঝে হুইস্কির গ্লাসে আরও দুটো চুমুক দেয় অনুপমা। রক্তে নেশা লাগতেই, রক্ত চনমন করে ওঠে অনুপমার। অনুপমা রূপকের পিঠের ওপরে ঝুঁকে পরে, কাঁধে মাথায় ওর রেশমি চুলে ঢেকে যায়। রূপক মাথা পেছনে হেলিয়ে দেয় আর অনুপমার মুখ ওর মুখের সামনে এসে যায়। চোখের সাথে চোখের তারা নিবদ্ধ হয়ে যায় হঠাৎ করে।
অনুপমা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “কাকে ভাবছিস তুই?”
রূপক হাত উঁচু করে অনুপমার গলা জড়িয়ে নিজের মুখের ওপরে টেনে নামিয়ে দিয়ে বলে, “এখন অন্য কারুর কথা চিন্তা করছি না।”
রূপকের নাকে ভেসে আসে অনুপমার শরীরের মনমাতানো গন্ধ। রক্তে লাগে ঢেউ, ঠোঁট খুলে আলতো করে অনুপমার থুতনিতে একটা ছোটো চুমু খায়।
ভেজা ঠোঁটের পরশে অনুপমার শুকনো শরীর চনমনে হয়ে ওঠে। নরম স্তন চেপে ধরে রূপকের ঘাড়ের ওপরে। রূপক হাত পেছনে নিয়ে এসে অনুপমার কোমর জড়িয়ে ধরে। অনুপমা ঝুঁকে পরে ওর কপালে, নাকের ওপরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
রূপক ওর হাত ধরে সামনে নিয়ে এসে বলে, “বড় একা লাগছে একটু জড়িয়ে ধরবি?”
অনুপমার চোখ আধাবোজা হয়ে দুই হাত মেলে ওকে আহ্বান জানায়, “চলে আয়।”
রূপক দাঁড়িয়ে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে। অনেকদিনের অভুক্ত শরীর অনুপমার, কঠিন বাহুপাশে নিজেকে এলিয়ে দিতে বড় ভালো লাগে। রূপক দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে অনুপমাকে, ঘাড় গুঁজে দেয় অনুপমার ঘাড়ে, নরম গালের ওপরে কর্কশ গাল থেকে কামাগ্নির স্ফুলিঙ্গ ঠিকরে বের হয়। রূপকের হাত ধীরে ধীরে অনুপমার পিঠের ওপরে আদর করে বেড়ায়। অনুপমা দুই হাতে রূপককে জড়িয়ে তৃষ্ণার্ত শরীরের তেষ্টা মেটাতে উন্মুখ হয়ে ওঠে। রূপকের ঠোঁট অনুপমার গাল ছুঁয়ে, ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়। আবেগে দুই চোখ বন্ধ হয়ে যায় অনুপমার, ঠোঁট খুলে উষ্ণ শ্বাসে রূপকের মুখমন্ডল ভরিয়ে দেয়। দুই হাতে আঁজলা করে ধরে অনুপমার মুখ আর ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট মিলিয়ে অধর সুধা আকণ্ঠ পান করে। দুই বিরহ কাতর নরনারীর শরীরে নেশার আগুনের সাথে সাথে মিলনের আগুন জ্বলে ওঠে।
রূপকের হাত দেহের মাঝে নেমে এসে জামার ওপরে দিয়েই অনুপমার এক পীনোন্নত স্তন মুঠোর মধ্যে নিয়ে আলতো চাপ দিয়ে আদর করতে শুরু করে দেয়। অনুপমার শরীর জ্বলে ওঠে, চনমন করে ওঠে সারা গায়ের রক্ত। বুক উঁচু করে রূপকের হাতের মধ্যে নিজের স্তন ঠেলে দেয়। রূপকের এক হাত নেমে আসে, জিন্সে ঢাকা পাছার ওপরে। অনুপমার এক স্তন ওর হাতের মুঠোয় অন্য স্তনের ওপরে রূপকের মুখ। এক হাতে নরম পাছা টিপে আদর করে দেয়। অনুপমার শ্বাসে লাগে কামনার আগুন, মাথা পেছনে হেলিয়ে সুখের সাগরে ভেসে যেতে প্রস্তুত। জানুসন্ধি মাঝে তিরতির করে রস বইতে শুরু করে দিয়েছে।
অনুপমার হাত নেমে আসে রূপকের প্যান্টের সামনে, কঠিন লিঙ্গের ওপরে। কঠিন লিঙ্গের ওপরে হাত ছোঁয়াতেই শরীর কেঁপে ওঠে অনুপমার। রূপক ওকে ঠেলে টেবিলের ওপরে বসিয়ে দেয়। দুই জানু মেলে দিয়ে জানু মাঝে দাঁড়িয়ে পরে রূপক। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলে উন্মাদের মতন পরস্পরকে চুম্বন করতে থাকে। সেই সাথে রূপকের হাত নেমে আসে জিন্সে ঢাকা জানুসন্ধির ওপরে। জিন্সের ওপর দিয়েই অনুপমার যোনিদেশে হাত চেপে ধরে।
যোনি বেদীর ওপরে হাতের চাপ অনুভব করতেই কেঁপে ওঠে তৃষ্ণার্ত রমণী। পরনের প্যান্টি যোনি রসে ভিজে, যোনি বেদীর ওপরে লেপটে গেছে। হঠাৎ করেই নেশা ঘোর কেটে যায়, রূপকের লিঙ্গের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
রূপকের হাত চেপে ধরে মাথা নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে রূপকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “না রূপক, আমাদের করা উচিত নয়।”
রূপক বুঝতে পারে নেশার ঝোঁকে কি করতে চলেছিল। বিদ্যুৎস্পর্শ করার মতন এক ঝটকায় অনুপমাকে ছেড়ে দাঁড়ায়। মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “সরি অনুপমা, সরি। মদের ঝোঁকে…… সত্যি বলছি আমি দুঃখিত। প্লিজ কিছু মনে করিস না।”
অনুপমার চোখ মুখ লাল, মাথার চুল অবিন্যাস্ত, পরনের প্যান্টি ভিজে উঠেছে তাও নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। রূপকের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। দুইজনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
অনুপমা ল্যাপটপের ব্যাগ উঠিয়ে, কেবিনের দরজা খুলে বাথরুমে ঢুকে পরে নিজেকে ঠিক করার জন্য। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করে, যা করতে যাচ্ছিল, সেটা কি ঠিক না ভুল? এটা কি দেবায়নের সাথে প্রতারণা? দেবায়ন ওর পেছনে অনেকের সাথে যৌন সঙ্গম করেছে, এবং পরে বলেছে। অনুপমা সব মেনে নিয়েছে, কিন্তু ওর যদি পা ফস্কাত তাহলে কি দেবায়ন মেনে নিতে পারত? জানে না এর উত্তর।
অফিস থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে রূপকের কেবিনে টোকা মেরে নিচু কণ্ঠে বলে, “বেশি হুইস্কি খাস না আর তারাতারিও বাড়ি ফিরিস। বাইক চালাতে না পারলে একটা ফোন করে দিস, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেব।”
দরজা খুলে দেখল না যে, রূপক মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে।
এর পরের বেশ কয়েকদিন দুইজনের মধ্যে কোন কথা নেই, সামনে এলেই পরস্পরকে এড়িয়ে যায়। এই আচরন অবশ্য কারুর চোখে ঠিক ধরা পরে না। অফিসের বাকি কর্মীরা উচ্চ পদস্থদের ব্যাপারে বিশেষ নাক গলায় না। অনুপমা এই ঘটনা দেবায়নের কাছ থেকে লুকিয়ে যায়।