01-10-2020, 08:27 PM
পর্ব তেরো (#5)
আদি কিছু পরে পার্থ, মনিষ আর বাকিদের সাথে বেড়িয়ে এলো। ঋতুপর্ণা মহিলাদের থেকে একটু ফাঁকায় সরে এসে আদিকে কাছে ডাকে। মায়ের ডাক শুনে দৌড়ে আসে আদি। মায়ের মাথা ভর্তি লাল টকটকে আবির, নাকের ডগায় বেশ কিছু আবির, গালে সিঁদুর, মাকে লাল পাড় তসরের শাড়িতে সাক্ষাৎ নবঊঢ়ার মতন দেখাচ্ছে।
ছেলের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ছিলিস রে? এতক্ষন দেখা পাইনি কেন?”
আদি মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “একটু ওইদিকে গিয়েছিলাম।”
ঋতুপর্ণা আদির গা শুঁকে প্রশ্ন করে, “মদ খেয়েছিস?”
আদি মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “এই সামান্য, একটু খানি ব্যাস।”
ঋতুপর্ণা আঙ্গুল নাড়িয়ে সাবধান করে বলে, “ওই একটুতেই যেন থাকে।”
আদি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে বলে, “তোমাকে ত সিঁদুরে লাল করে দিয়েছে।” বলেই চোখ টিপে ফিসফিস করে বলে, “এইবারে কিন্তু আর দূরে সরে থাকতে পারবে না।”
রঞ্জিত শুধু ওর গাল হয়নি, দুপুর থেকেই ওর বুকের রক্তে ভীষণ হিল্লোল দেখা দিয়েছিল সেটা আদির অগোচর থেকে যায়। মনের আগল খুলে যায় ছেলের কথা শুনে। হৃদয় প্রায় গলার কাছে এসে চেঁচিয়ে ওঠে, এই সাজ, এই আবির সব তোর জন্যেই। মাথা একটু ঝিমঝিম, চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে যায় আদির দিকে তাকিয়ে। পুজো মন্ডপ না হলে দুইহাতে ছেলেকে জড়িয়ে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে নিত। যেভাবে ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে তাতে ওর হৃদয় গলে জল হয়ে যায়। বেশিক্ষণ ওই ভীষণ চাহনির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ঋতুপর্ণা।
চাপা হেসে আদির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে, “যা এইবারে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য তোদের ডাক পরবে।”
বয়স্ক উদ্যোক্তারা বিসর্জনের জন্য তাড়া দিতেই আদি, পার্থ মনিষ আর বাকি ছেলেরা মন্ডপে উঠে যায় প্রতিমা তোলার জন্য। বিসর্জন দিতে গঙ্গার ঘাটে যাবে, তার জন্য ট্রাকের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। বল দুগগা মাই কি জয়, ধ্বনিতে মন্ডপ মুখরিত করে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি নিল সবাই। মেয়েরা যাবে কি যাবে না সেই নিয়ে আলোচনা উঠল। ঋতুপর্ণা জানিয়ে দিল যেহেতু ওর ছেলে যাচ্ছে সুতরাং সেও বিসর্জনে যাবে।
আদিকে মন্ডপে উঠতে দেখে সুপর্ণাও আবির হাতে মন্ডপে উঠে গেল। ছেলেদের দিকে দেখে আদির গায়ে এক গাদা আবির লাগিয়ে হেসে বলল, “বিসর্জনে যাচ্ছও আর আবির মাখোনি? এটা কি।”
গায়ে মাথায় আবির লাগতেই সতর্ক হয়ে গেল আদি। মদ খেয়ে মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছে তাতে আবার আবিরের মাতাল করা একটা গন্ধ আর নধর দেহ বল্লরী নিয়ে সুপর্ণা ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। সুপর্ণা লাল রঙের ব্লাউজে ঢাকা সুগোল উন্নত স্তন জোড়ার আন্দোলন দেখে আদির রক্ত উত্তেজিত হয়ে ওঠে। লাল পাড় সাদা শাড়িটা যে ভাবে দেহের সাথে পেঁচিয়ে রেখেছে তাতে ঢাকার চেয়ে অনাবৃত অংশ বেশি। শাড়ির কুঁচি নাভির বেশ নিচে, থলথলে নরম পেটের অধিকাংশ উপচে বেড়িয়ে। ব্লাউজের সামনের দিকটাও বেশ গভীর। হাসির ফলে উন্নত সুগোল স্তনের আন্দোলনে আদির বুকের রক্তের সাথে সাথে আশেপাশের পুরুষের বুকের মধ্যেও হিল্লোল জেগে ওঠে।
আদিও পকেট থেকে আবির বের করে এক মুঠো আবির সুপর্ণার গালে মাথায় লাগিয়ে দিয়ে হেসে ওঠে, “একা কি শুধু আমি নাকি? আমিও তোমাকে মাখাতে জানি।”
সুপর্ণাকে আবির মাখানোর পরক্ষনেই ওর চোখ চলে গেল দুরে মায়ের দিকে। ঋতুপর্ণা ততক্ষনে অন্য মহিলাদের সাথে গল্পে ব্যাস্ত, সেই দেখে আদি আসস্থ হয়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সুপর্ণার আবির রঞ্জিত চেহারা দেখে মজা পায়।
সুপর্ণা ওর পাঞ্জাবির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একগাদা সবুজ লাল মেশানো আবির ঢেলে হেসে বলে, “এইবারে কোথায় যাবে।” কঠিন লোমশ বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে আবির মাখিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে বলে, “যা একটা বডি বানিয়েছ মাইরি।”
সুপর্ণার কথা শুনে আদি চোখ ছোটছোট করে গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, “আরো আছে সময় হলে জানতে পারবে।”
সুপর্ণা ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কানেকানে জিজ্ঞেস করে, “চুপিচুপি দেখাবে নাকি?”
আদিও মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “সব জিনিস কি আর সবার সামনে দেখানো যায় নাকি, একান্তে দেখাব।”
কথাটা বলার পরক্ষনেই আদি আবার একবার মায়ের দিকে দেখে নেয় ওর মা যদি দেখতে পায় তাহলে আর ওকে আস্ত রাখবে না। দুপুরের পরেই ওদের মধ্যে যা কথোপকথন হয়েছে তাতে আদির বুকের মাঝে শুধু মাত্র ঋতুপর্ণা। কিন্তু এইভাবে যদি কেউ আগ বাড়িয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিজেকে উজাড় করে আবির মাখায় তাহলে কোন পুরুষের সিংহ শুয়ে থাকবে।
ভিড়ের সাহায্যে সুপর্ণা আদির গায়ের ওপরে প্রায় ঢলে গিয়ে বাজুতে চিমটি কেটে বলে, “কাল কোথায় গিয়েছিলে গো তোমরা?”
প্রশ্ন শুনে আদির পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হয়ে যায়, একি মায়ের সাথে এইসব নিয়েও কি কথাবার্তা হয়ে গেছে নাকি? না না, মা একদম ভুল পথে পা দেবে না, নিশ্চয় অন্য কিছু বলেছে। আদি চোখ টিপে বলে, “ঠাকুর দেখলাম, তবে তুমি সাথে গেলে ভালো হত।”
সুপর্ণা ওর বাজুর সাথে স্তন চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে, “তোমাদের সাথে আর কে গিয়েছিল, প্লিস বল না?”
আদি বুঝতে পারল যে সুপর্ণা ওকে খুঁচিয়ে মায়ের ব্যাপারে জানতে ইচ্ছুক তাই ইয়ার্কির ছলে উত্তর দিল, “গিয়েছিল একজন ব্যাস এইটুকু বলব।” চোখ টিপে কুনুই দিয়ে সুপর্ণার কোমল স্তনের মাঝে আলতো গুঁতো দিয়ে বলে, “ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় খুলে বলব।”
আদি আরো একবারে ভিড়ের মধ্যে তাকিয়ে মাকে খোঁজার চেষ্টা চালায়। ভিড়ের মধ্যে ঋতুপর্ণা হারিয়ে গেছে। অনেক মহিলারা বিসর্জনের যাওয়ার জন্য তৈরি, তবে প্রতিমার ট্রাকে সবার জায়গা হবে না বলে অন্য একটা ম্যাটাডোর তৎক্ষণাৎ ভাড়া করে আনা হয়েছে।
ছেলেরা প্রতিমা তুলে ধরতেই সবার মুখে দুর্গা ঠাকুরের জয় জয় কার আর মহিলাদের উলুধ্বনি। প্রায় জনা দশেক ছেলে মিলে একত্রে দুর্গার প্রতিমা ট্রাকে উঠিয়ে দিল। ট্রাকে উঠানোর পরে ছেলে মেয়েদের সেই প্রতিমা ঘিরে নাচ শুরু হয়ে গেল। পুরুষের মধ্যেই অনেকে আদির সাথে একটু একটু মদ খেয়েছিল, সময়ের সাথে আর ঢাকের তালে তাদের নাচ দ্বিগুন গতি নিল। কে কার গায়ের ওপরে ঢলে পরে তার ঠিক ঠিকানা নেই। নাচের তালে সুপর্ণা এবং আরো বেশ কয়েকজন মহিলা পিছিয়ে থাকল না। বেশ কিছু মেয়েরা, বউয়েরা নাচের মধ্যে নেমে পড়ল।
ঋতুপর্ণা চুপচাপ হাসি হাসি মুখে ওদের নাচ দুর থেকেই উপভোগ করতে লাগলো। ছেলেকে উদ্দাম নাচতে দেখে বেশ ভালো লাগলো সেই সাথে ভালো লাগলো বিকেলের কথা ভেবে। এই উদ্দাম উচ্ছল ছেলেটাকেই আশ্রয় করে ওর বাকি জীবন কাটতে চলেছে। এই কয়দিনে ওদের মাঝের সম্পর্ক একদম বদলে গেছে। ইচ্ছে করেই আজকে দশমীর দিনে ছেলের কথা ভেবেই এই শাড়ি, এই গয়না পড়েছিল। অন্য মহিলারা কেউই ওর মতন সেজে নয়, সবার চোখ বারেবারে ওর আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বেড়ায়। ছেলেকে দেখে আর ওর উদ্দাম নাচ দেখে আর ঢাকের তালে তালে মাঝে মাঝে নিজেরও খুব নাচতে ইচ্ছে করে, কিন্তু চঞ্চল মন শান্ত করে বয়স্ক মহিলাদের সাথে একদিকে দাঁড়িয়ে ছেলের নাচ দেখে। মাঝে মাঝে সুপর্ণা যে আদির গায়ে নাচতে নাচতে ঢলে পড়ছে সেটা ওর দৃষ্টি অগোচর হয় না। সুপর্ণা কি আদির কানেকানে ফিসফিস করে কিছু বলল নাকি? হয়ত ওর চোখের ভুল।
বেশকিছুক্ষন নাচের পরে প্রতিমা নিয়ে নদীর দিকে যাত্রা শুরু হল। বড় ট্রাকে প্রতিমার সাথে ঢাকি, কাঁসা বাদকের সাথে সাথে আদি, মনিষ পার্থ, সোসাইটির বয়স্ক বেশ কয়েকজন কর্তা ব্যাক্তি। পেছনের একটা ম্যাটাডোরে মহিলারা উঠে পড়েছে সেই সাথে। মণিমালা আস্তে চেয়েছিল কিন্তু সুপর্ণা ভিড়ের অজুহাত দেখিয়ে বারন করে দিয়েছে। গঙ্গার পাড়ে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে এলো। গঙ্গার পাড় লোকে লোকারণ্য, তিল ধারনের জায়গা টুকু অবশিষ্ট নেই। প্রচুর লোক সমাগম সেই সাথে প্রতিমা বিসর্জনের দৌড়, জলের মধ্যে পুলিস লঞ্চের ঘোরাফেরা, ঘাটে পুলিস মানুষে ছয়লাপ। অনেক কষ্টে ট্রাক থেকে দেবী প্রতিমা নামিয়ে এনে নদীর ঘাটে আনা হল। নদীর ঘাটেও বিসর্জনের আগে এক চোট ছেলেরা নেচে নিল ওইদিকে ভিড়ের জন্য পুলিসে তাড়া মারে, বয়স্করা তাড়া দেয়, কিন্তু তাতে আদিরা, পার্থরা দমবার পাত্র নয়। উদ্যোক্তারা বললে যে নৌকা করে মাঝ নদীতে গিয়ে বিসর্জন দিতে। আদি, মনিষ পার্থ সেদিকে কান দিল না, ওরা নিজেরাই মায়ের প্রতিমা জলে নামিয়ে বিসর্জন দেবে।
বাকি মহিলাদের সাথে ঘাটে নেমে ঋতুপর্ণা অথৈ জন সমুদ্রের মাঝে পরে গেল। ভিড় বাঁচিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে, একদিকে একটু খালি জায়গা পেয়ে সেদিকে দাঁড়িয়ে গেল। গঙ্গা থেকে ভেসে আসা ঠাণ্ডা জলো বাতাসে ওর হৃদয় ভরিয়ে দিল। ঠিক গতরাতে এইভাবেই হারিয়ে গিয়েছিল ছেলের সাথে, সেখানেও গঙ্গার তীরে একাকী দুই নর নারী হাতে হাত রেখে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল তারপরে রাতের বেলা একাকী নির্জন রিসোর্টের রুমের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল ওর মাতৃস্বত্বা। সেই ঠাণ্ডা বাতাস ওর হৃদয়ের গভীরে গত রাতের প্রেমিকা স্বত্বা চাগিয়ে তোলে। প্রতিমা কাঁধে বাকি ছেলেদের সাথে আদিও জলে নেমে পড়েছে। একটু একটু করে হাঁটু পর্যন্ত জলের মধ্যে আদি নেমে গেছে। মাথাটা হটাত করে ঝিমঝিম করে ওঠে ঋতুপর্ণার। চারপাশের শোরগোলে আর দুর্গার প্রতিমা দেখে কেমন যেন হারিয়ে যায়। এত শুধু মাটির প্রতিমার বিসর্জন, আসল ঠাকুর সবসময়ে ওদের মাঝেই বিচরন করে। বুকের অন্দরে লুকিয়ে থাকা প্রেমিকা সেই প্রতিমা বিসর্জন দেখে আগল খুলে বেড়িয়ে পড়ল। মৃদু কেঁপে উঠল ঋতুপর্ণার সর্বাঙ্গ, না ঠাণ্ডা বাতাসে নয়, নিজের মাতৃস্বত্বা কে বিসর্জন দিয়ে প্রেমিকা স্বত্বাকে জাগিয়ে নেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত দেখা দিয়েছে ওর হৃদয়ের গভীরে। এক এক করে অনেক প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেল, আদি আর বাকিরা এখন হাঁটু জল থেকে নেমে গিয়েছে কোমর জলে। ঢাকের বাদ্যি প্রবল হয়ে উঠল চারপাশে, কাঁসার ঘন্টা, উলুধ্বনি সব কিছুতেই কেমন যেন মোহাচ্ছন্ন হয়ে উঠল ঋতুপর্ণা।
কোমর জলে দাঁড়িয়ে ওর অনন্ত প্রেমিক, ওর হৃদয়ের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ প্রতিমা কাঁধে তুলে এক পাক ঘুরছে। সেই দেখে ঋতুপর্ণার হাত দুটো মুঠো হয়ে শক্ত হয়ে যায়। হৃদয়ের গভীর থেকে আওয়াজ আসে, “আদিত্য সান্যাল, আমার পরম সৌভাগ্য যে তুই আমার কোলে ছেলে হয়ে জন্মেছিস। সারা জীবন ধরে, পাপ অথবা পুন্য যা কিছু অর্জন করেছিলাম সেই সবের ফলে তোকে নিজের কোলে পেয়েছি। তোর প্রখর রোদের তাপে নিজেকে হারিয়ে দিয়ে তোর উপযুক্ত পাত্রী হওয়ার চেষ্টা করব।”
প্রতিমা নিয়ে দ্বিতীয় পাক দিতে শুরু করে দিয়েছে ছেলেরা। ঋতুপর্ণার চোখের মণি শুধু মাত্র ওর ছেলের দিকেই নিবদ্ধ, কানের মধ্যে আর কোন শব্দ প্রবেশ করে না শুধু মাত্র নদীর কুলুকুলু ধ্বনি ছাড়া আর আদির সেই ছোটো মিষ্টি ডাকনাম “কুচ্চি সোনা তোতা পাখী” ছাড়া। আদির দ্বিতীয় পাকের সাথে সাথে ওর বুকের পাঁজর বলে ওঠে, “ওরে আমার দুষ্টু মিষ্টি দস্যি ছেলে, আমি তোর সাহস তোর শক্তি হয়ে থাকব। মিষ্ট বচনে তোকে সন্তুষ্ট রাখতে সর্বদা সচেষ্ট হব এবং আমার যতদূর সাধ্য সেই অনুযায়ী তোর দেখার সকল ভার মাথা পেতে গ্রহন করে নেব। আমার ভরন পোষণ সবকিছু তোর হাতে তুলে দিতে রাজি, তুই আমাকে যে ভাবে রাখবি আমি সেইভাবেই থাকব।”
“বল দুগগা মাই কি জয়, আসছে বছর আবার হবে” আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তৃতীয় পাকের জন্য তৈরি আদি আর বাকি ছেলেরা। ঋতুপর্ণার হৃদয় আদির সাথে সাথে পাক খায়, এক এক পাকে ওর মাতৃ স্বত্বা হারিয়ে প্রেমিকা, দয়িতা, সুন্দরী রমণীর সাজে সেজে ওঠে, জেগে ওঠে এতদিনের লুক্কায়িত ঋতুপর্ণা। “হে আদিত্য, আমার পুত্র, আমার প্রেমিক, আমার প্রান, আমি সর্বদা কায় মনবাক্যে তোর সেবা তোর নির্দেশ পালন করে চলবো। তোর প্রতি আমার অচল ভক্তি, অচল প্রেম অচল ভালোবাসা আমাকে পরিপূর্ণ নারীর গৌরব প্রদান করুক। হোক না আমাদের ভালোবাসা অবৈধ কিন্তু বাইরের কেউ না জানলেই হোক। তুই শুধু আমার থাকবি আর আমি শুধু তোর হয়েই থাকব।”
ঋতুপর্ণার চোখের মণি মন্ত্র মুগ্ধের মতন শুধু মাত্র ছেলেকেই দেখে চলেছে। আদির সর্বাঙ্গ জলে ভিজে গেছে সেদিকে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই, দুই হাতের পেশি শক্ত হয়ে ফুলে উঠেছে। বাকিদের সাথে প্রবল উতসাহে চতুর্থ পাকের জন্য তৈরি হয়ে গেল আদি, মনিষ পার্থ আর বাকি ছেলেরা। ঋতুপর্ণার হৃদয় চতুর্থ বারের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠল। “হে আমার প্রাণপুরুষ, তোর দাসী হয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেব। তোর জন্যে নিজেকে সাজিয়ে ঢেলে উজাড় করে তোর সুখে নিজের সুখ, তোর আনন্দে নিজের আনন্দ খুঁজতে চেষ্টা করব। আমাদের এই সম্পর্ক শ্রেষ্ঠ করতে সচেষ্ট হব। পবিত্র বসনে ভূষণে সজ্জিত হয়ে তোর সাথে রতিক্রীড়ায় লিপ্ত হয়ে তোকে সরবাঙ্গিক ভাবে সুখি করতে চেষ্টা করব।” বুকের পাঁজর এই কথা গুলো বলা মাত্রই কেঁপে উঠল ঋতুপর্ণার সর্বাঙ্গ। বুক ভরে শ্বাস নিল ঋতুপর্ণা, শেষ বাধা যেটা ছিল সেটাও শেষ পর্যন্ত নিজের হৃদয় থেকে কাটিয়ে দিল।
চতুর্থ পাক শেষে আদি প্রতিমা নিয়ে পঞ্চম পাকের প্রস্তুতি নিল। ঋতুপর্ণা চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে এলো, বুকের মধ্যে অসীম চাওয়া অসীম পাওয়াটা কেমন যেন ভীষণ ভাবে জেগে উঠল। নদীর ঠাণ্ডা বাতাস এখন আর ঠাণ্ডা নয়, ভীষণ আগুন জ্বলে উঠেছে ওর হৃদয়ে। সঙ্গমের কথা চিন্তা করতেই সব আগল খুলে মেলে ধরে ঋতুপর্ণার প্রেমাদ্র হৃদয়। পঞ্চম পাকের সাথে সাথে হৃদয় বলে ওঠে, “আমি সাহসিকতার সাথে তোর সকল দুঃখ তোর সকল সুখের সম্মুখীন হব এবং তুই যাতে সন্তুষ্ট থাকবি তাতেই আমি সন্তুষ্ট হয়ে থাকব। তোর সুখেই আমার সুখ তোর দুঃখেই আমার কান্না, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শুধু তোর প্রানের সহচরী হয়েই জীবন ব্যাতিত করব।”
দেবী প্রতিমা নিয়ে আদি ষষ্ট পাকের জন্য তৈরি, ওইদিকে নদীর ঘাটে ঋতুপর্ণা কোমল হৃদয়ে ষষ্ট বারের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে তৈরি। “আমি সুখের সাথেই সমস্ত ঋতুতে তোর দেখাশুনা করে যাবো। তুই যেখানে আমাকে নিয়ে যাবি আমি সেখানেই তোর ছায়া হয়ে তোর পাশে পাশে থাকব। আমাকে বঞ্চিত করিস না রে সোনা, তুই ছাড়া এই জীবনে আমার আর কেউ নেই। আমি কখনই তোকে বঞ্চনা করব না আর এক সন্মান আমিও তোর থেকে আশা করি।”
ঋতুপর্ণা শেষ পাকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়। এই পাকের পরে প্রতিমার সাথে সাথে মাতৃহৃদয়ের বন্ধনের সাথে সাথে প্রেমিকা হৃদয় একাত্ম হয়ে যাবে। এরপর থেকে ও শুধু মাত্র আদির প্রেমিকা, আদির অঙ্কিতা আদির দোসর। হৃদয়ের সকল ধমনী সপ্তম পাকের সাথে সাথে পাক খেয়ে উঠল, চোখ চেপে বন্ধ করে ইষ্ট নাম নিল ঋতুপর্ণা। পাপ পুন্য, সমাজ সংসার, নিষিদ্ধ অবৈধ সবকিছুর উরধে ওর হৃদয় ভাসছে। চোখের সামনে শুধু মাত্র আদির চেহারা আর নদীর জল ছাড়া আর কিছুই নেই। বুক ভরে শ্বাস নিতেই ওর বুকের মধ্যে শান্ত আগুনের সাথে সাথে অনাবিল প্রেমের জোয়ার দেখা দিল। বুকের প্রত্যেকটা ধমনী, সর্বাঙ্গের সকল শিরা উপশিরা, সর্বাঙ্গের সকল রোমকূপ একসাথে উন্মিলিত হয়ে উঠল, “হে আদিত্য, আজ থেকে আমি শুধু তোমার। তোমার পুন্যে আমার পুন্য, তোমার ধর্মে আমার ধর্ম। আমি তোমার ছায়া হিসাবে, তোমার যথার্থ সহচরী হিসাবে তোমার রাজ্ঞী হিসাবে তোমার সকল কার্যে পূর্ণ সহায়তা করব। ধর্ম অর্থ কাম সম্পাদনে তোমার ইচ্ছেকেই আমি কায়মনোবাক্যে অনুসরন করব। আজ থেকে তোমাকে আমার হিয়ার অভ্যন্তরে স্থান দিয়ে দিলাম, এই দেহ এই মন এই প্রান শুধু তোমাকেই সমর্পণ করলাম।”
প্রবল হর্ষ ধ্বনির সাথে সাথে দেবী প্রতিমা জলের মধ্যে নিক্ষেপ করে দিল আদি। সেই সাথে তলিয়ে গেল ঋতুপর্ণার অতীতের সব স্বত্বা। জেগে উঠল এক নতুন ঋতুপর্ণা, চোখের কোলে এক বিন্দু আনন্দ অশ্রু ওকে ভাসিয়ে দিল। নিস্পলক নয়নে আদির দিকে তাকিয়ে দেখল ঋতুপর্ণা। ওর দয়িত, ওর ছেলে প্রতিমার সাথে সাথে গঙ্গার জলে ডুব দিল। আদির সর্বাঙ্গ ভিজে, লোমশ ছাতির সাথে লেপটে গেছে সাদা পাঞ্জাবি, মাথা থেকে জল চুইয়ে পড়ছে। ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল একবার। ছেলের চোখের সাথে চোখ মেলাতেই কেমন যেন অবশ হয়ে এলো ঋতুপর্ণার কোমল নধর মদালসা দেহ বল্লরী। নিজের বুকের আগুনে শিক্ত বলিষ্ঠ দেহটাকে বেঁধে ফেলে উষ্ণতা দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠল। ছেলের বলিষ্ঠ বাহুপাশে নিজেকে বেঁধে নিরাপত্তা আর ভালোবাসার আগুনে নিজেদের জ্বালিয়ে নিতে আকুল হয়ে উঠল ওর তৃষ্ণার্ত হিয়া। জল থেকে উঠে আসা মূর্তিময় বলিষ্ঠ সুপুরুষ ওর ছেলে নয়, ওর হৃদয়ের কর্তা।
আদিকে ঠাণ্ডা জল থেকে উঠে আসতে দেখে প্রেমিকার হৃদয় হুহু করে ধেয়ে যায়। ইসস ছেলেটা ভিজে কাকের মতন হয়ে গেছে, ঠাণ্ডা লেগে যাবে ত।
গঙ্গার ঠাণ্ডা জলে ভিজে ছেলের কাঁপুনি দেখে ঋতুপর্ণা ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়, “আদি, বাবা এইদিকে আয়।”
অত ভিড়ের মধ্যে আদি মাকে খুঁজে পায় না, মায়ের ডাক ওর কানে পৌঁছায় না। জল থেকে মনিষ, শ্যামল, পার্থের সাথে উঠে আসতেই একজন ছেলে ওদের একপাশে ডেকে নিয়ে হাতের মধ্যে মদের গেলাস ধরিয়ে দিয়ে গলায় ঢালতে বলে। বলে একটু মদ খেলে গা গরম হয়ে যাবে। ঠাণ্ডা জল থেকে উঠে প্রচন্ড ঠাণ্ডা লাগছিল আদির, এতক্ষন প্রতিমার সাথে থাকার ফলে ঠাণ্ডাটা সেই ভাবে অনুভব করতে পারেনি। মাথা ঝাঁকিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে একবার মাকে খোঁজার চেষ্টা করল, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে মায়ের দেখা কোথাও পেল না। ছেলেটার হাত থেকে গেলাস নিয়ে পরপর দুই গেলাস মদ গলায় ঢেলে নিল আদি। গলা দিয়ে জ্বলন্ত লাভার মতন মদের স্রোত টের পেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর গরম হয়ে গেল, সেই সাথে দেহটা একটু টলে উঠল। মাথা চেপে ধরে একটু জল মুছে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো।
ভিড় ঠেলে ঋতুপর্ণা প্রবল চেষ্টা করে আদির দিকে যেতে। ছেলেটা জল থেকে উঠে ঠাণ্ডায় কাঁপছে কিন্তু ভিড়ের ধাক্কা ধাক্কির ফলে কিছুতেই কাছে যেতে পারছে না। ভীষণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে ঋতুপর্ণার হৃদয়, গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে ইচ্ছে করে, দৌড়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এই ভিড় কিছুতেই ওকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না।
হটাত করে ওর চোখ পরে গেল সুপর্ণার দিকে। আদির দিকে গামছা হাতে পা বাড়িয়ে দিয়েছে। থমকে গেল ঋতুপর্ণা, সুপর্ণা কখন গামছা নিয়ে এসেছে?
আদি কিছু পরে পার্থ, মনিষ আর বাকিদের সাথে বেড়িয়ে এলো। ঋতুপর্ণা মহিলাদের থেকে একটু ফাঁকায় সরে এসে আদিকে কাছে ডাকে। মায়ের ডাক শুনে দৌড়ে আসে আদি। মায়ের মাথা ভর্তি লাল টকটকে আবির, নাকের ডগায় বেশ কিছু আবির, গালে সিঁদুর, মাকে লাল পাড় তসরের শাড়িতে সাক্ষাৎ নবঊঢ়ার মতন দেখাচ্ছে।
ছেলের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ছিলিস রে? এতক্ষন দেখা পাইনি কেন?”
আদি মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “একটু ওইদিকে গিয়েছিলাম।”
ঋতুপর্ণা আদির গা শুঁকে প্রশ্ন করে, “মদ খেয়েছিস?”
আদি মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “এই সামান্য, একটু খানি ব্যাস।”
ঋতুপর্ণা আঙ্গুল নাড়িয়ে সাবধান করে বলে, “ওই একটুতেই যেন থাকে।”
আদি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে বলে, “তোমাকে ত সিঁদুরে লাল করে দিয়েছে।” বলেই চোখ টিপে ফিসফিস করে বলে, “এইবারে কিন্তু আর দূরে সরে থাকতে পারবে না।”
রঞ্জিত শুধু ওর গাল হয়নি, দুপুর থেকেই ওর বুকের রক্তে ভীষণ হিল্লোল দেখা দিয়েছিল সেটা আদির অগোচর থেকে যায়। মনের আগল খুলে যায় ছেলের কথা শুনে। হৃদয় প্রায় গলার কাছে এসে চেঁচিয়ে ওঠে, এই সাজ, এই আবির সব তোর জন্যেই। মাথা একটু ঝিমঝিম, চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে যায় আদির দিকে তাকিয়ে। পুজো মন্ডপ না হলে দুইহাতে ছেলেকে জড়িয়ে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে নিত। যেভাবে ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে তাতে ওর হৃদয় গলে জল হয়ে যায়। বেশিক্ষণ ওই ভীষণ চাহনির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ঋতুপর্ণা।
চাপা হেসে আদির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে, “যা এইবারে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য তোদের ডাক পরবে।”
বয়স্ক উদ্যোক্তারা বিসর্জনের জন্য তাড়া দিতেই আদি, পার্থ মনিষ আর বাকি ছেলেরা মন্ডপে উঠে যায় প্রতিমা তোলার জন্য। বিসর্জন দিতে গঙ্গার ঘাটে যাবে, তার জন্য ট্রাকের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। বল দুগগা মাই কি জয়, ধ্বনিতে মন্ডপ মুখরিত করে প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি নিল সবাই। মেয়েরা যাবে কি যাবে না সেই নিয়ে আলোচনা উঠল। ঋতুপর্ণা জানিয়ে দিল যেহেতু ওর ছেলে যাচ্ছে সুতরাং সেও বিসর্জনে যাবে।
আদিকে মন্ডপে উঠতে দেখে সুপর্ণাও আবির হাতে মন্ডপে উঠে গেল। ছেলেদের দিকে দেখে আদির গায়ে এক গাদা আবির লাগিয়ে হেসে বলল, “বিসর্জনে যাচ্ছও আর আবির মাখোনি? এটা কি।”
গায়ে মাথায় আবির লাগতেই সতর্ক হয়ে গেল আদি। মদ খেয়ে মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছে তাতে আবার আবিরের মাতাল করা একটা গন্ধ আর নধর দেহ বল্লরী নিয়ে সুপর্ণা ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। সুপর্ণা লাল রঙের ব্লাউজে ঢাকা সুগোল উন্নত স্তন জোড়ার আন্দোলন দেখে আদির রক্ত উত্তেজিত হয়ে ওঠে। লাল পাড় সাদা শাড়িটা যে ভাবে দেহের সাথে পেঁচিয়ে রেখেছে তাতে ঢাকার চেয়ে অনাবৃত অংশ বেশি। শাড়ির কুঁচি নাভির বেশ নিচে, থলথলে নরম পেটের অধিকাংশ উপচে বেড়িয়ে। ব্লাউজের সামনের দিকটাও বেশ গভীর। হাসির ফলে উন্নত সুগোল স্তনের আন্দোলনে আদির বুকের রক্তের সাথে সাথে আশেপাশের পুরুষের বুকের মধ্যেও হিল্লোল জেগে ওঠে।
আদিও পকেট থেকে আবির বের করে এক মুঠো আবির সুপর্ণার গালে মাথায় লাগিয়ে দিয়ে হেসে ওঠে, “একা কি শুধু আমি নাকি? আমিও তোমাকে মাখাতে জানি।”
সুপর্ণাকে আবির মাখানোর পরক্ষনেই ওর চোখ চলে গেল দুরে মায়ের দিকে। ঋতুপর্ণা ততক্ষনে অন্য মহিলাদের সাথে গল্পে ব্যাস্ত, সেই দেখে আদি আসস্থ হয়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সুপর্ণার আবির রঞ্জিত চেহারা দেখে মজা পায়।
সুপর্ণা ওর পাঞ্জাবির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একগাদা সবুজ লাল মেশানো আবির ঢেলে হেসে বলে, “এইবারে কোথায় যাবে।” কঠিন লোমশ বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে আবির মাখিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে বলে, “যা একটা বডি বানিয়েছ মাইরি।”
সুপর্ণার কথা শুনে আদি চোখ ছোটছোট করে গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, “আরো আছে সময় হলে জানতে পারবে।”
সুপর্ণা ওর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কানেকানে জিজ্ঞেস করে, “চুপিচুপি দেখাবে নাকি?”
আদিও মুচকি হেসে উত্তর দেয়, “সব জিনিস কি আর সবার সামনে দেখানো যায় নাকি, একান্তে দেখাব।”
কথাটা বলার পরক্ষনেই আদি আবার একবার মায়ের দিকে দেখে নেয় ওর মা যদি দেখতে পায় তাহলে আর ওকে আস্ত রাখবে না। দুপুরের পরেই ওদের মধ্যে যা কথোপকথন হয়েছে তাতে আদির বুকের মাঝে শুধু মাত্র ঋতুপর্ণা। কিন্তু এইভাবে যদি কেউ আগ বাড়িয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিজেকে উজাড় করে আবির মাখায় তাহলে কোন পুরুষের সিংহ শুয়ে থাকবে।
ভিড়ের সাহায্যে সুপর্ণা আদির গায়ের ওপরে প্রায় ঢলে গিয়ে বাজুতে চিমটি কেটে বলে, “কাল কোথায় গিয়েছিলে গো তোমরা?”
প্রশ্ন শুনে আদির পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হয়ে যায়, একি মায়ের সাথে এইসব নিয়েও কি কথাবার্তা হয়ে গেছে নাকি? না না, মা একদম ভুল পথে পা দেবে না, নিশ্চয় অন্য কিছু বলেছে। আদি চোখ টিপে বলে, “ঠাকুর দেখলাম, তবে তুমি সাথে গেলে ভালো হত।”
সুপর্ণা ওর বাজুর সাথে স্তন চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে, “তোমাদের সাথে আর কে গিয়েছিল, প্লিস বল না?”
আদি বুঝতে পারল যে সুপর্ণা ওকে খুঁচিয়ে মায়ের ব্যাপারে জানতে ইচ্ছুক তাই ইয়ার্কির ছলে উত্তর দিল, “গিয়েছিল একজন ব্যাস এইটুকু বলব।” চোখ টিপে কুনুই দিয়ে সুপর্ণার কোমল স্তনের মাঝে আলতো গুঁতো দিয়ে বলে, “ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় খুলে বলব।”
আদি আরো একবারে ভিড়ের মধ্যে তাকিয়ে মাকে খোঁজার চেষ্টা চালায়। ভিড়ের মধ্যে ঋতুপর্ণা হারিয়ে গেছে। অনেক মহিলারা বিসর্জনের যাওয়ার জন্য তৈরি, তবে প্রতিমার ট্রাকে সবার জায়গা হবে না বলে অন্য একটা ম্যাটাডোর তৎক্ষণাৎ ভাড়া করে আনা হয়েছে।
ছেলেরা প্রতিমা তুলে ধরতেই সবার মুখে দুর্গা ঠাকুরের জয় জয় কার আর মহিলাদের উলুধ্বনি। প্রায় জনা দশেক ছেলে মিলে একত্রে দুর্গার প্রতিমা ট্রাকে উঠিয়ে দিল। ট্রাকে উঠানোর পরে ছেলে মেয়েদের সেই প্রতিমা ঘিরে নাচ শুরু হয়ে গেল। পুরুষের মধ্যেই অনেকে আদির সাথে একটু একটু মদ খেয়েছিল, সময়ের সাথে আর ঢাকের তালে তাদের নাচ দ্বিগুন গতি নিল। কে কার গায়ের ওপরে ঢলে পরে তার ঠিক ঠিকানা নেই। নাচের তালে সুপর্ণা এবং আরো বেশ কয়েকজন মহিলা পিছিয়ে থাকল না। বেশ কিছু মেয়েরা, বউয়েরা নাচের মধ্যে নেমে পড়ল।
ঋতুপর্ণা চুপচাপ হাসি হাসি মুখে ওদের নাচ দুর থেকেই উপভোগ করতে লাগলো। ছেলেকে উদ্দাম নাচতে দেখে বেশ ভালো লাগলো সেই সাথে ভালো লাগলো বিকেলের কথা ভেবে। এই উদ্দাম উচ্ছল ছেলেটাকেই আশ্রয় করে ওর বাকি জীবন কাটতে চলেছে। এই কয়দিনে ওদের মাঝের সম্পর্ক একদম বদলে গেছে। ইচ্ছে করেই আজকে দশমীর দিনে ছেলের কথা ভেবেই এই শাড়ি, এই গয়না পড়েছিল। অন্য মহিলারা কেউই ওর মতন সেজে নয়, সবার চোখ বারেবারে ওর আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বেড়ায়। ছেলেকে দেখে আর ওর উদ্দাম নাচ দেখে আর ঢাকের তালে তালে মাঝে মাঝে নিজেরও খুব নাচতে ইচ্ছে করে, কিন্তু চঞ্চল মন শান্ত করে বয়স্ক মহিলাদের সাথে একদিকে দাঁড়িয়ে ছেলের নাচ দেখে। মাঝে মাঝে সুপর্ণা যে আদির গায়ে নাচতে নাচতে ঢলে পড়ছে সেটা ওর দৃষ্টি অগোচর হয় না। সুপর্ণা কি আদির কানেকানে ফিসফিস করে কিছু বলল নাকি? হয়ত ওর চোখের ভুল।
বেশকিছুক্ষন নাচের পরে প্রতিমা নিয়ে নদীর দিকে যাত্রা শুরু হল। বড় ট্রাকে প্রতিমার সাথে ঢাকি, কাঁসা বাদকের সাথে সাথে আদি, মনিষ পার্থ, সোসাইটির বয়স্ক বেশ কয়েকজন কর্তা ব্যাক্তি। পেছনের একটা ম্যাটাডোরে মহিলারা উঠে পড়েছে সেই সাথে। মণিমালা আস্তে চেয়েছিল কিন্তু সুপর্ণা ভিড়ের অজুহাত দেখিয়ে বারন করে দিয়েছে। গঙ্গার পাড়ে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে এলো। গঙ্গার পাড় লোকে লোকারণ্য, তিল ধারনের জায়গা টুকু অবশিষ্ট নেই। প্রচুর লোক সমাগম সেই সাথে প্রতিমা বিসর্জনের দৌড়, জলের মধ্যে পুলিস লঞ্চের ঘোরাফেরা, ঘাটে পুলিস মানুষে ছয়লাপ। অনেক কষ্টে ট্রাক থেকে দেবী প্রতিমা নামিয়ে এনে নদীর ঘাটে আনা হল। নদীর ঘাটেও বিসর্জনের আগে এক চোট ছেলেরা নেচে নিল ওইদিকে ভিড়ের জন্য পুলিসে তাড়া মারে, বয়স্করা তাড়া দেয়, কিন্তু তাতে আদিরা, পার্থরা দমবার পাত্র নয়। উদ্যোক্তারা বললে যে নৌকা করে মাঝ নদীতে গিয়ে বিসর্জন দিতে। আদি, মনিষ পার্থ সেদিকে কান দিল না, ওরা নিজেরাই মায়ের প্রতিমা জলে নামিয়ে বিসর্জন দেবে।
বাকি মহিলাদের সাথে ঘাটে নেমে ঋতুপর্ণা অথৈ জন সমুদ্রের মাঝে পরে গেল। ভিড় বাঁচিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে, একদিকে একটু খালি জায়গা পেয়ে সেদিকে দাঁড়িয়ে গেল। গঙ্গা থেকে ভেসে আসা ঠাণ্ডা জলো বাতাসে ওর হৃদয় ভরিয়ে দিল। ঠিক গতরাতে এইভাবেই হারিয়ে গিয়েছিল ছেলের সাথে, সেখানেও গঙ্গার তীরে একাকী দুই নর নারী হাতে হাত রেখে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল তারপরে রাতের বেলা একাকী নির্জন রিসোর্টের রুমের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল ওর মাতৃস্বত্বা। সেই ঠাণ্ডা বাতাস ওর হৃদয়ের গভীরে গত রাতের প্রেমিকা স্বত্বা চাগিয়ে তোলে। প্রতিমা কাঁধে বাকি ছেলেদের সাথে আদিও জলে নেমে পড়েছে। একটু একটু করে হাঁটু পর্যন্ত জলের মধ্যে আদি নেমে গেছে। মাথাটা হটাত করে ঝিমঝিম করে ওঠে ঋতুপর্ণার। চারপাশের শোরগোলে আর দুর্গার প্রতিমা দেখে কেমন যেন হারিয়ে যায়। এত শুধু মাটির প্রতিমার বিসর্জন, আসল ঠাকুর সবসময়ে ওদের মাঝেই বিচরন করে। বুকের অন্দরে লুকিয়ে থাকা প্রেমিকা সেই প্রতিমা বিসর্জন দেখে আগল খুলে বেড়িয়ে পড়ল। মৃদু কেঁপে উঠল ঋতুপর্ণার সর্বাঙ্গ, না ঠাণ্ডা বাতাসে নয়, নিজের মাতৃস্বত্বা কে বিসর্জন দিয়ে প্রেমিকা স্বত্বাকে জাগিয়ে নেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত দেখা দিয়েছে ওর হৃদয়ের গভীরে। এক এক করে অনেক প্রতিমা বিসর্জন হয়ে গেল, আদি আর বাকিরা এখন হাঁটু জল থেকে নেমে গিয়েছে কোমর জলে। ঢাকের বাদ্যি প্রবল হয়ে উঠল চারপাশে, কাঁসার ঘন্টা, উলুধ্বনি সব কিছুতেই কেমন যেন মোহাচ্ছন্ন হয়ে উঠল ঋতুপর্ণা।
কোমর জলে দাঁড়িয়ে ওর অনন্ত প্রেমিক, ওর হৃদয়ের কাঙ্ক্ষিত পুরুষ প্রতিমা কাঁধে তুলে এক পাক ঘুরছে। সেই দেখে ঋতুপর্ণার হাত দুটো মুঠো হয়ে শক্ত হয়ে যায়। হৃদয়ের গভীর থেকে আওয়াজ আসে, “আদিত্য সান্যাল, আমার পরম সৌভাগ্য যে তুই আমার কোলে ছেলে হয়ে জন্মেছিস। সারা জীবন ধরে, পাপ অথবা পুন্য যা কিছু অর্জন করেছিলাম সেই সবের ফলে তোকে নিজের কোলে পেয়েছি। তোর প্রখর রোদের তাপে নিজেকে হারিয়ে দিয়ে তোর উপযুক্ত পাত্রী হওয়ার চেষ্টা করব।”
প্রতিমা নিয়ে দ্বিতীয় পাক দিতে শুরু করে দিয়েছে ছেলেরা। ঋতুপর্ণার চোখের মণি শুধু মাত্র ওর ছেলের দিকেই নিবদ্ধ, কানের মধ্যে আর কোন শব্দ প্রবেশ করে না শুধু মাত্র নদীর কুলুকুলু ধ্বনি ছাড়া আর আদির সেই ছোটো মিষ্টি ডাকনাম “কুচ্চি সোনা তোতা পাখী” ছাড়া। আদির দ্বিতীয় পাকের সাথে সাথে ওর বুকের পাঁজর বলে ওঠে, “ওরে আমার দুষ্টু মিষ্টি দস্যি ছেলে, আমি তোর সাহস তোর শক্তি হয়ে থাকব। মিষ্ট বচনে তোকে সন্তুষ্ট রাখতে সর্বদা সচেষ্ট হব এবং আমার যতদূর সাধ্য সেই অনুযায়ী তোর দেখার সকল ভার মাথা পেতে গ্রহন করে নেব। আমার ভরন পোষণ সবকিছু তোর হাতে তুলে দিতে রাজি, তুই আমাকে যে ভাবে রাখবি আমি সেইভাবেই থাকব।”
“বল দুগগা মাই কি জয়, আসছে বছর আবার হবে” আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তৃতীয় পাকের জন্য তৈরি আদি আর বাকি ছেলেরা। ঋতুপর্ণার হৃদয় আদির সাথে সাথে পাক খায়, এক এক পাকে ওর মাতৃ স্বত্বা হারিয়ে প্রেমিকা, দয়িতা, সুন্দরী রমণীর সাজে সেজে ওঠে, জেগে ওঠে এতদিনের লুক্কায়িত ঋতুপর্ণা। “হে আদিত্য, আমার পুত্র, আমার প্রেমিক, আমার প্রান, আমি সর্বদা কায় মনবাক্যে তোর সেবা তোর নির্দেশ পালন করে চলবো। তোর প্রতি আমার অচল ভক্তি, অচল প্রেম অচল ভালোবাসা আমাকে পরিপূর্ণ নারীর গৌরব প্রদান করুক। হোক না আমাদের ভালোবাসা অবৈধ কিন্তু বাইরের কেউ না জানলেই হোক। তুই শুধু আমার থাকবি আর আমি শুধু তোর হয়েই থাকব।”
ঋতুপর্ণার চোখের মণি মন্ত্র মুগ্ধের মতন শুধু মাত্র ছেলেকেই দেখে চলেছে। আদির সর্বাঙ্গ জলে ভিজে গেছে সেদিকে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই, দুই হাতের পেশি শক্ত হয়ে ফুলে উঠেছে। বাকিদের সাথে প্রবল উতসাহে চতুর্থ পাকের জন্য তৈরি হয়ে গেল আদি, মনিষ পার্থ আর বাকি ছেলেরা। ঋতুপর্ণার হৃদয় চতুর্থ বারের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠল। “হে আমার প্রাণপুরুষ, তোর দাসী হয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দেব। তোর জন্যে নিজেকে সাজিয়ে ঢেলে উজাড় করে তোর সুখে নিজের সুখ, তোর আনন্দে নিজের আনন্দ খুঁজতে চেষ্টা করব। আমাদের এই সম্পর্ক শ্রেষ্ঠ করতে সচেষ্ট হব। পবিত্র বসনে ভূষণে সজ্জিত হয়ে তোর সাথে রতিক্রীড়ায় লিপ্ত হয়ে তোকে সরবাঙ্গিক ভাবে সুখি করতে চেষ্টা করব।” বুকের পাঁজর এই কথা গুলো বলা মাত্রই কেঁপে উঠল ঋতুপর্ণার সর্বাঙ্গ। বুক ভরে শ্বাস নিল ঋতুপর্ণা, শেষ বাধা যেটা ছিল সেটাও শেষ পর্যন্ত নিজের হৃদয় থেকে কাটিয়ে দিল।
চতুর্থ পাক শেষে আদি প্রতিমা নিয়ে পঞ্চম পাকের প্রস্তুতি নিল। ঋতুপর্ণা চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে এলো, বুকের মধ্যে অসীম চাওয়া অসীম পাওয়াটা কেমন যেন ভীষণ ভাবে জেগে উঠল। নদীর ঠাণ্ডা বাতাস এখন আর ঠাণ্ডা নয়, ভীষণ আগুন জ্বলে উঠেছে ওর হৃদয়ে। সঙ্গমের কথা চিন্তা করতেই সব আগল খুলে মেলে ধরে ঋতুপর্ণার প্রেমাদ্র হৃদয়। পঞ্চম পাকের সাথে সাথে হৃদয় বলে ওঠে, “আমি সাহসিকতার সাথে তোর সকল দুঃখ তোর সকল সুখের সম্মুখীন হব এবং তুই যাতে সন্তুষ্ট থাকবি তাতেই আমি সন্তুষ্ট হয়ে থাকব। তোর সুখেই আমার সুখ তোর দুঃখেই আমার কান্না, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত শুধু তোর প্রানের সহচরী হয়েই জীবন ব্যাতিত করব।”
দেবী প্রতিমা নিয়ে আদি ষষ্ট পাকের জন্য তৈরি, ওইদিকে নদীর ঘাটে ঋতুপর্ণা কোমল হৃদয়ে ষষ্ট বারের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে তৈরি। “আমি সুখের সাথেই সমস্ত ঋতুতে তোর দেখাশুনা করে যাবো। তুই যেখানে আমাকে নিয়ে যাবি আমি সেখানেই তোর ছায়া হয়ে তোর পাশে পাশে থাকব। আমাকে বঞ্চিত করিস না রে সোনা, তুই ছাড়া এই জীবনে আমার আর কেউ নেই। আমি কখনই তোকে বঞ্চনা করব না আর এক সন্মান আমিও তোর থেকে আশা করি।”
ঋতুপর্ণা শেষ পাকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়। এই পাকের পরে প্রতিমার সাথে সাথে মাতৃহৃদয়ের বন্ধনের সাথে সাথে প্রেমিকা হৃদয় একাত্ম হয়ে যাবে। এরপর থেকে ও শুধু মাত্র আদির প্রেমিকা, আদির অঙ্কিতা আদির দোসর। হৃদয়ের সকল ধমনী সপ্তম পাকের সাথে সাথে পাক খেয়ে উঠল, চোখ চেপে বন্ধ করে ইষ্ট নাম নিল ঋতুপর্ণা। পাপ পুন্য, সমাজ সংসার, নিষিদ্ধ অবৈধ সবকিছুর উরধে ওর হৃদয় ভাসছে। চোখের সামনে শুধু মাত্র আদির চেহারা আর নদীর জল ছাড়া আর কিছুই নেই। বুক ভরে শ্বাস নিতেই ওর বুকের মধ্যে শান্ত আগুনের সাথে সাথে অনাবিল প্রেমের জোয়ার দেখা দিল। বুকের প্রত্যেকটা ধমনী, সর্বাঙ্গের সকল শিরা উপশিরা, সর্বাঙ্গের সকল রোমকূপ একসাথে উন্মিলিত হয়ে উঠল, “হে আদিত্য, আজ থেকে আমি শুধু তোমার। তোমার পুন্যে আমার পুন্য, তোমার ধর্মে আমার ধর্ম। আমি তোমার ছায়া হিসাবে, তোমার যথার্থ সহচরী হিসাবে তোমার রাজ্ঞী হিসাবে তোমার সকল কার্যে পূর্ণ সহায়তা করব। ধর্ম অর্থ কাম সম্পাদনে তোমার ইচ্ছেকেই আমি কায়মনোবাক্যে অনুসরন করব। আজ থেকে তোমাকে আমার হিয়ার অভ্যন্তরে স্থান দিয়ে দিলাম, এই দেহ এই মন এই প্রান শুধু তোমাকেই সমর্পণ করলাম।”
প্রবল হর্ষ ধ্বনির সাথে সাথে দেবী প্রতিমা জলের মধ্যে নিক্ষেপ করে দিল আদি। সেই সাথে তলিয়ে গেল ঋতুপর্ণার অতীতের সব স্বত্বা। জেগে উঠল এক নতুন ঋতুপর্ণা, চোখের কোলে এক বিন্দু আনন্দ অশ্রু ওকে ভাসিয়ে দিল। নিস্পলক নয়নে আদির দিকে তাকিয়ে দেখল ঋতুপর্ণা। ওর দয়িত, ওর ছেলে প্রতিমার সাথে সাথে গঙ্গার জলে ডুব দিল। আদির সর্বাঙ্গ ভিজে, লোমশ ছাতির সাথে লেপটে গেছে সাদা পাঞ্জাবি, মাথা থেকে জল চুইয়ে পড়ছে। ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল একবার। ছেলের চোখের সাথে চোখ মেলাতেই কেমন যেন অবশ হয়ে এলো ঋতুপর্ণার কোমল নধর মদালসা দেহ বল্লরী। নিজের বুকের আগুনে শিক্ত বলিষ্ঠ দেহটাকে বেঁধে ফেলে উষ্ণতা দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠল। ছেলের বলিষ্ঠ বাহুপাশে নিজেকে বেঁধে নিরাপত্তা আর ভালোবাসার আগুনে নিজেদের জ্বালিয়ে নিতে আকুল হয়ে উঠল ওর তৃষ্ণার্ত হিয়া। জল থেকে উঠে আসা মূর্তিময় বলিষ্ঠ সুপুরুষ ওর ছেলে নয়, ওর হৃদয়ের কর্তা।
আদিকে ঠাণ্ডা জল থেকে উঠে আসতে দেখে প্রেমিকার হৃদয় হুহু করে ধেয়ে যায়। ইসস ছেলেটা ভিজে কাকের মতন হয়ে গেছে, ঠাণ্ডা লেগে যাবে ত।
গঙ্গার ঠাণ্ডা জলে ভিজে ছেলের কাঁপুনি দেখে ঋতুপর্ণা ভিড় ঠেলে এগিয়ে যায়, “আদি, বাবা এইদিকে আয়।”
অত ভিড়ের মধ্যে আদি মাকে খুঁজে পায় না, মায়ের ডাক ওর কানে পৌঁছায় না। জল থেকে মনিষ, শ্যামল, পার্থের সাথে উঠে আসতেই একজন ছেলে ওদের একপাশে ডেকে নিয়ে হাতের মধ্যে মদের গেলাস ধরিয়ে দিয়ে গলায় ঢালতে বলে। বলে একটু মদ খেলে গা গরম হয়ে যাবে। ঠাণ্ডা জল থেকে উঠে প্রচন্ড ঠাণ্ডা লাগছিল আদির, এতক্ষন প্রতিমার সাথে থাকার ফলে ঠাণ্ডাটা সেই ভাবে অনুভব করতে পারেনি। মাথা ঝাঁকিয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে একবার মাকে খোঁজার চেষ্টা করল, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে মায়ের দেখা কোথাও পেল না। ছেলেটার হাত থেকে গেলাস নিয়ে পরপর দুই গেলাস মদ গলায় ঢেলে নিল আদি। গলা দিয়ে জ্বলন্ত লাভার মতন মদের স্রোত টের পেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই শরীর গরম হয়ে গেল, সেই সাথে দেহটা একটু টলে উঠল। মাথা চেপে ধরে একটু জল মুছে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো।
ভিড় ঠেলে ঋতুপর্ণা প্রবল চেষ্টা করে আদির দিকে যেতে। ছেলেটা জল থেকে উঠে ঠাণ্ডায় কাঁপছে কিন্তু ভিড়ের ধাক্কা ধাক্কির ফলে কিছুতেই কাছে যেতে পারছে না। ভীষণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে ঋতুপর্ণার হৃদয়, গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে ইচ্ছে করে, দৌড়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এই ভিড় কিছুতেই ওকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না।
হটাত করে ওর চোখ পরে গেল সুপর্ণার দিকে। আদির দিকে গামছা হাতে পা বাড়িয়ে দিয়েছে। থমকে গেল ঋতুপর্ণা, সুপর্ণা কখন গামছা নিয়ে এসেছে?